তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-১১

0
443

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

( পর্ব_১১)

তুহা অতীতে ডুব মারলো…

তুহা সকালে সকলের সাথে ঘুরতে না গিয়ে নিজের ঘরেই ছিলো। ভালো লাগছিলো না তাই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ কারোর কথাবার্তা শুনে থমকে গেলো তুহা,, ফারাবি আর মনিকাকে বারান্দার দিকে আসতে দেখে রুমের ভেতরে ঢুকে যায়, কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও এড়িয়ে যেতে পারলো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো পর্দার আড়ালে।

ফারাবি আর মনিকার মাঝে কোনো কিছু একটা নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে । মনিকা ফারাবিকে বললো…
-প্লিজ ফারাবি আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা কর।আমি তোকে সত্যি খুব ভালোবাসি। আমি তোকে ছাড়া বাঁচবো না।
-তুইও আমার দিকটা একটু বোঝার চেষ্টা কর।
-দ্যাখ আমি কি দিক দিয়ে খারাপ।
– আমি বলছি না তুই খারাপ। তুই আমার থেকে আরো বেটার কাউকে পাবি।
– আমার চাই না আমার তোকেই চাই। আর তুই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সত্যি করে বলতো তুই আমাকে ভালোবাসিস না।

কিছুক্ষন চুপচাপ। তারপরে ফারাবির কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেলো…
-হ্যা আমিও তোকে ভালোবাসি কিন্তু…

আর কিছু বলার আগেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে ফারাবি আর মনিকা নিজের আলাপ আলোচনা থেকে বের হয়ে গেলো। তুহার মাথাটা বনবন করে ঘুরছে কেন জানো মেনে নিতে পারছে না ফারাবি অন্য কাউকে ভালোবাসে।

মিহার ডাকে তুহা অতীত থেকে বের হয়ে আসলো।

-এই দিভাই তোর কি হয়েছে বল তো।
-কিছুই হয়নি সর ভালো লাগছে না ঘুমাতে দে।

এভাবেই কেটে যায় একটা সপ্তাহ। সকলেই নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিজেদের জীবন নিয়ে সকলেই ব্যস্ত। সামনেই তুহা আর মেধার সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা। তাই ওদের পড়াশোনার চাপটা বেড়েই গেছে।

দেখতে দেখতে ওদের পরীক্ষার দিন আগিয়ে আসলো। কলেজের পরীক্ষা অন্য একটা কলেজে পড়েছে। ফারাবি জানিয়েছে ওহ ওদেরকে নিয়ে যাবে কিন্তু তুহা রাজি হয়নি। নিজেই চলে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে। তাই মেধাও রাজি হয়নি।

তুহা আর মেধা খুব টেনশান করছে হঠাৎ করেই কেউ একজন তুহার সামনে পানির বোতল ধরলো। তুহা সামনে তাকিয়ে দেখলো ফারাবি দাঁড়িয়ে আছে।

-দাদাই তুমি।
-হুম খবরদার একদম টেনশান করবি না। শান্ত মাথায় পরীক্ষা দিবি।
-হুম।
-আর তুহা তুই এত টেনশান করিস কেন?

তুহা কিছুই না বলে চুপচাপ বসে আছে।

-ওই শুনতে পাচ্ছিস না। কি বলছি চুপচাপ টেনশান না করে পরীক্ষা দিবি রেজাল্ট যদি খারাপ হয়তো তাহলে ..
-চিন্তা নেয় বাবাকে বলে বিয়ে করে নেবো।

আচমকা এইরকম কথাতে মেধা আর ফারাবি দুজনেই চমকে উঠলো।

-এই তুহা কি বলছিস এসব।
-হুম মেধা ঠিক বলছি। আমি আমার চিন্তা ভালো করেই করে নেবো। ওনাকে আমার চিন্তা করতে বারন করে দে।

ফারাবি তুহার এইরকম ব্যবহারে অবাক। ফারাবি আর কিছু না বলে মেধাকে বললো..
-ভালো‌করে পরীক্ষা দিস আমি গেলাম।

ফারাবি চলে যেতেই মেধা তুহাকে ধরলো।
-কি হয়েছে এইরকম ব্যবহার করছিস কেন।
-কিছুই হয়নি ভালো করে পরীক্ষাটা দিতে দে আমাকে।
-ওকে।

ফারাবি তুহার যাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো, হুট করেই তুহার এইরকম ব্যবহারের কিছুই বুঝতে পারলো না।

– কেন এইরকম করে কষ্ট দিচ্ছো তাহুপাখি। আমি যে শে/ষ হয়ে যাবো। আমি যে #তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন, তুমি ছাড়া আমি যে অচল হয়ে যাবো প্লিজ তাহুপাখি আর যায় করো আমার থেকে কখনোই দূরে যাবার চেষ্টা করো না।

তুহা আর মেধা ভালো ভাবেই পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আসলো। ওরা আসতেই খুশি ওদের কাছে আসে খুশি আর ওদের ডিপার্মেন্ট আলাদা হওয়াতে একসাথে পরীক্ষা পরেনি।

– কিরে তুহা আর মেধা কেমন পরীক্ষা হলো।
– দিয়েছি ভালোই দেখা যাক কি হয়।
– হুম।

ওরা কথাবলার এক পর্যায়ে খুশি বললো..
– তোরা বাড়ি ফিরবি কিভাবে?
– দেখি। তুই (মেধা)
– আমার সাথে তো দাদাভাই এসেছে।
– ওহ।
– হুম চল তোদের সাথে আলাপ করিয়ে দিই।

তুহাকে আর মেধাকে খুশি একটা ছেলের সামনে দাঁড় করালো। ছেলেটাকে দেখে তো তুহা অবাক।

-আপনি!
– তুহা না তুমি।
– হুম।

খুশি আর মেধা তো অবাক। খুশি অবাক হয়ে বললো..
– তোরা একে অপরকে চিনিস।
– হুম। ফেসবুকে আলাপ হয়েছিলো,অনেকদিনের ফ্রেন্ড। (আশিক)
– এতকিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানি না।(খুশি)
– আরে খুশি আমি কিভাবে জানবো তুই ওনার বোন।
– সেটাই তো।
– হুম সেটা ঠিক দাদাভাই ওটা আমাদের ফ্রেন্ড মেধা।
– হাই।
– হ্যালো।

মেধার ফোনে একটা কল আসলো। মেধা কলটা রিসিভ করে তুহাকে নিয়ে ওখান থেকে চলে যায় ওদেরকে বিদায় জানিয়ে।

-কি হলো এইভাবে নিয়ে আসলি কেন?
-অনেকটা লেট হয়ে গেছে ভাবতে পারছিস আঙ্কেল তো আমাদের বারোটা বাজিয়ে দেবে।
-হুম।
-ওই টেনশান করিস না ওইদিকে দ্যাখ।

মেধার কথা শুনে তুহা তাকিয়ে দেখলো ফারাবি দাঁড়িয়ে আছে।

-উনি।
-হুম আমাদের জন্য এখনো আছে। চল
-আমি যাবো না।
-তুহা এখন ঝামেলা করিস না। আঙ্কেল কিন্তু।
-হুম।

তুহা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয়ে যায়। দেখতে দেখতে সবগুলো পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। প্রতিটা পরীক্ষাতেই ফারাবি ওদের নিতে এসেছিলো। তুহার মনের মাঝের চাপা অভিমানটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। তুহার ওহ ভালো লাগতো।

তুহা আর মিহা কাছে পার্কেই একটু ঘুরতে বের হয়েছিলো। মিহা তো এক বাচ্চা আর যদি কোনো বাচ্চাকে পাইতো তাহলে বাচ্চামো শুরু হয়ে গেলো। মিহা বাচ্চাদের সাথে খেলছে আর তুহা ওদের কান্ড দেখছে হঠাৎ করেই কেউ একজন ওর কাঁধে হাত রাখলো।

তুহা তাকিয়ে দেখলো মনিকা দাঁড়িয়ে আছে।
-আরে আপনি।
-হুম এই ঘুরতে এসেছিলাম ভালোই হলো তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলো।
-তাই।
-হুম,একটু‌ কথা বলতে পারি
-অবশ্যই।

মনিকা তুহার সাথে কথা বলতে লাগলো।
-তোমার কথা অনেক শুনেছি আন্টি (ফারাবির মা),কুহু,কথা এন্ড ফারাবির মুখে। ফারাবি তো তুমি বলতে পাগল।

তুহা তো অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে। ফারাবি ওর জন্য পাগল মানেটা কি।

-আমি ওর কথা শুনে বুঝতাম ওহ ঠিক কতটা ভালোবাসে তোমাকে।

তুহা তো একের পর এক শক খাচ্ছে। ফারাবি ওকে‌ ভালোবাসে কি শুনছে এসব।

-আসলে‌ কি বলতো ওর তো কোনো বোন ছিলো না তোমাকেই বোনের মতো ভালোবাসতো। আর তুমি তো‌ সবার থেকে কিউট সুইট একটা মেয়ে তোমাকে আমারই কি ভালো‌লাগে আর ফারাবি দাদা হয়ে‌ তোমাকে ভালোবাসবে না এটা কিভাবে হয়।

তুহার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। তবুও মুখের কোনো মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলে মনিকার সাথে কথা বলতে লাগলো।

– জানো আমি আর ফারাবি দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি। আর কালকেই বাপি ওদের বাড়িতে গিয়ে আমাদের বিয়ের কথা বলবে।‌আমি খুব হ্যাপি জানো।

তুহা এতক্ষন ধরে সবকিছু সহ্য করলেও আর পারলো না। মনিকার উদ্দেশ্য বললো..
– অভিনন্দন নতুন জীবনের জন্য। আর আমি এখন আসি সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাড়ি ফিরতে হবে।
– ওকে বাই বাই।

তুহা মনিকাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। তুহার রাগে গা জ্বলছে। ফারাবির সাথে মনিকার বিয়ে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

বলে না যখন বিপদ আসে সবদিক থেকেই আসে। ঠিক তেমনি তুহা আর ফারাবির জীবনেও। সকলেই একসাথে উঠে পড়ে‌ লেগেছে ওদের জীবনটা এলোমেলো করার জন্য।

রাত্রিবেলা…

তুহা ঘরেই ছিলো কিন্তু ঘুম আসছে না মনটা ভীষন ছটফট করছে। পানি খাবার জন্য উঠতে দেখলো‌ ঘরে পানি নেয় তাই পানি খাবার জন্য রান্নাঘরে যাবার সময় মা বাবার মধ্যে কথা কাটাকাটি শুনতে পাই।

– এসব কি বলছো তুমি এটা কি ঠিক হবে।
– আমি তুহার বাবা আমি যে সিদ্ধান্তটা নেবো সেটাই ওর জন্য ঠিক হবে।
– পাগলামি করো না ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দ্যাখো।
– আমি সব ভেবেই করছি।‌আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি তুহা…

একটা কথা শুনে তুহা আকাশ থেকে পড়লো…

#চলবে…