তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-১০

0
434

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_১০)

ফারাবি তুহাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
– কিরে তুই নামবি নাকি। কিন্তু তুই তো।
– কি?
– আমি জানি তুই সাঁতার জানিস না। তা এত ঢেউতে নামবি কিভাবে। স্রোত তো তোকে তুলে নিয়ে চলে যাবে।

তুহা অপমানে মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। তখনি তুহা কে আরো একবার চমকে দিয়ে ফারাবি ওর হাতটা বাড়িয়ে দিলো। আর তুহার উদ্দেশ্য বললো…
-হাত ধরে নেমে আয়,আর সবসময় আমার হাত ধরে থাকবি নাহলে তোকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

তুহার খুব অভিমান হলো। একবার মনে হলো ফারাবির হাত ধরে কিছুতেই নামবে না। আবার সমুদ্রে নামার লোভটাও সামলাতে পারলো না। বাড়িয়ে দিলো নিজের দুটো হাত ফারাবির হাতে।ফারাবিও মুচকি হেসে ওকে নিয়ে পানিতে নেমে পড়লো। তুহার খুব আনন্দ হচ্ছে,ফারাবিও তুহা আগলে রাখছে সকল বিপদ থেকে।

তিশা সবটা দেখে মুচকি হাসলো। মনে‌মনে‌ কিছু একটা বলে আনন্দ করতে‌ ব্যস্ত‌ হয়ে পড়লো। সকলেই খুব আনন্দ করছে। একটা ঢেউ খুব জোরে আসলো, ছেলেরা তাল সামলে নিলেও মেয়েদের একটা অসুবিধা হয়ে যায়। ফারাবি তুহাকে আগলে নেয়। অয়ন তিশা কে আগলে নিলো। কাব্য কুহুকে। মেধা আর মনিকা নিজেরাই সামলে নিলো। মিহা সামলাতে পারছিলো না একটা বলিষ্ঠ হাত ওকে নিজের সাথে আগলে নিলো, মিহা সামনে তাকিয়ে দেখলো মেহতাব দাঁড়িয়ে আছে।

অনেক অনেক আনন্দ করার পর ওরা সকলেই উঠে আসে। তুহা তো ইতিমধ্যেই হাঁচি দিতে শুরু করে দিয়েছে। মেধা তুহাকে বললো…
– একটু ভিজতে না ভিজতেই তো হাঁচি চালু হয়ে গেলো ম্যাডামের।
– আমি কি করবো ঠান্ডা লেগে গেলে।
– এই এখানে না বকবক করে সবাই চল চেঞ্জ করে নে। (ফারাবি)

সকলেই রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়। তুহা হাঁচি দিতে দিতে শেষ। সবাই ফ্রেশ হয়ে এদিক ওদিক ঘুরতে যাবে কিন্তু তুহার ভালো লাগছে না কিছুই, তাই বললো‌ ওহ রুমে থাকবে।
– তুই একা থাকবি এটা কিভাবে হয়। (তিশা)
– আমার জন্য নিজেদের ঘোরাটা বাতিল করো না। যাও না আমাকে একটু রেস্ট নিতে দাও।

তুহার জোড়াজুড়িতে সকলেই রাজি হয়ে যায় যাবার জন্য। সকলেই ঘুরতে বের হয়ে যায় ওল্ড দীঘার উদ্দেশ্য। তুহা মন খারাপ করে বসে আছে। হঠাৎ করেই দরজা খোলার শব্দে পেছন ঘুরে দেখলো ফারাবি ঘরের ভেতরে আসছে।

– আপনি।
– হুম শরীর কেমন আছে এখন।
– আলহামদুলিল্লাহ ভালোই।
– মেডিসিনটা নিয়ে নে ভাল লাগবে।
– দরকার নেয় ঠিক হয়ে যাবো।
– সত্যি তো না মিথ্যা।
– হুম সত্যি।
– ঘুরতে যাবি।
– না, ওইজন্যই তো সবাইকে পাঠিয়ে দিলাম।
– আমার সাথে‌ যাবি চল।
– ভালো লাগছে না।
– আমার সাথে চল দেখবি মন ভালো‌হয়ে যাবে চল।
– আমি রেডি হয়ে নিই।
– ঠিক আছে তো।
– না একটু রেডি হয়ে যায়।

তুহা জামা চেঞ্জ করে এসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে লাগলো। ফারাবি পেছনে দাঁড়িয়ে ওর ওড়নাটা মাথায় তুলে দিলো। তুহা আয়নাতে দেখে চমকে উঠলো ওকে পুরোই নতুন বউ লাগছে আর ফারাবি আর ওকে একসাথে কি সুন্দর লাগছে।

– এই তুহা মাথার কাপড়টা এইভাবেই থাকুক আর কিছুই সাজতে হবে না তুই এমনিতেই খুব সুন্দর।

তুহা আকাশ থেকে পড়ছে। ফারাবি ওর প্রশংসা করছে ভাবতেই অবাক লাগছে।

– তাহু পাখি কবে তোকে নিজের করে পাবো বল না (বিরবির করে)

তুহা ফারাবির কথাটা বুঝতে না পেরে‌ বললো..
– কিছু কি বললেন।
– না কিছু না তুই আয় আবার আমাদের লেট হয়ে যাবে।

তুহা আর ফারাবি হোটেল থেকে‌ বের হয়ে। সমুদ্রের ধারে আসলো।
– এখানে নিয়ে আসলেন কেন?
– ওইদিকে দ্যাখ।

নদীতে ভাটা পড়ে গেছে। সমুদ্রের পানি অনেকটাই কমে গেছে বালি দেখা যাচ্ছে।
-তুহা বালি দিয়ে হাটবি।
-হুম।
-চল‌ তাহলে।

তুহা আর ফারাবি পাথরের উপর দিয়ে বালিতে নেমে পড়লো। সূর্য তো‌ প্রায় ডুবো ডুবো হয়ে গেছে। সন্ধ্যা নামতে চলে দারুন লাগছে হাঁটতে।

-ভালো লাগছে তুহা।
-হুম খুব।
-আর মন খারাপ লাগছে।
– না।

তুহা আনন্দ করতে‌ ব্যস্ত আর ফারাবি তার তাহু পাখিকে দেখতে ব্যস্ত। বালিতে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ওরা ওল্ড দীঘায় পৌঁছে যায়।ওল্ড দীঘা নিউ দীঘার থেকে কয়েকগুণ বেশি জমালো জায়গা। প্রচুর দোকান,লোকজন।
-তুহা কিছু কিনবি।
-হুম।
-চল।

ফারাবি তুহাকে নিয়ে একটা দোকানের সামনে‌ আসলো… তুহার একটা ঝুমকো, হাতের চুড়ি,বালা পছন্দ হয়। তুহা আরো অনেককিছু কিনলো। সব কেনাকাটা শেষে বেচারি হাঁপিয়ে গেছে।

– এইটুকুতেই দম শেষ।
– আর পারছি না আমি।
– কিছু‌ খাবি।
– হুম।
– কি খাবি বল। ওই মাছ খাবি।
– ওয়াক থু, ওকে কে খাবে এমনিতেই মাছ খাই না। আর ওখানে তো সবকিছূ এক তেলে ভাজছে আমি খাবো না।
– অক্টোপাস খাবি,খুব টেস্ট কিন্তু।
– ছিঃ…

ফারাবিকে ঘুষি মারতে লাগলো,ফারাবি হাসছে ওর‌ পাগলামি দেখে।

– আইসক্রিম খাবি।
– হুম।

ওরা আইসক্রিম খাচ্ছে তখনি তিশার ফোন আসে।
-দাদাই তোমরা কোথায়।
-এই তো..
– এই মিথ্যা বলবে না আমি দেখতে পেয়েছি তোমাদের। আর তোমরা ঘুরবে একটু সাবধানে ঘুরবে না এখুনি তো‌ সবাই দেখে নিতো। আমরা একটু পর হোটেলে যাচ্ছি আমাদের আগে তোমরা চলে গিয়ো নাহলে সবাইকে অনেককিছু বলতে হবে আবার।
– হুম।

তিশা কলটা কেটে দিলো। তুহাকে ফারাবির দিকে তাকিয়ে ইশারায় প্রশ্ন করলো কে?

-কেউ না, বলছিলাম কি হোটেলে ফিরে যায় এবার।
-ওকে।

তুহা যেতে যাবে তার আগেই ফারাবি বললো…
-একমিনিট।
-কি?
-বলুন ফাটাবি।
-হুম

তুহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ফারাবিও হেসে দিলো‌ তুহার আনন্দে। ব/ন্দুক দিয়ে বলুন ফাটানোর জন্য তুহার হাতে ব/ন্দু/ক দেওয়া হয় কিন্তু তুহা ঠিক মতো লক্ষ্যভেদ করতে পারছে না। ফারাবি পেছন থেকে এসে তুহাকে জড়িয়ে নিয়ে বলুন ফাটায়। তুহা বেলুনের দিকে নয় ফারাবির কান্ডে শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্পর্শটা খুব চেনা লাগছে ওর কাছে।

ওল্ড দীঘা থেকে গাড়ি করে হোটেলে‌ ফিরে যায় ওরা দুজনে।

-তুহা জামাটা চেঞ্জ করে নে।
-কেন?
-পাগলির মতো বকিস না। সবাই যদি জানতে পারে তুই আমার সাথে একা বেড়িয়েছিলিস তাহলে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে আর সেটা কি ভালো‌হবে।
-হুম।

তুহাকে রুমে পৌঁছে দিয়ে ফারাবি চলে যায়। তুহা মনে মনে ভাবে…
-সবার সবকিছুতেই ছাড়,, শুধু মাত্র আমার আর ওনার সবকিছুতেই সবাই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় কেন?

আজকে ওদের ফিরে আসার দিন, ২ টো দিন খুব ভালো কেটেছে সবার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে সবটাই এলোমেলো হয়ে গেছে তুহার কাছে। জীবনটাই কিরকম একটা অগোছালো লাগছে। ট্রেনে সবাই হইচই করছে কিন্তু তুহার মুখে কোনো হাসি নেয়। ফারাবি ওর পাশে বসে বললো..
-কি হয়েছে।
-কিছু না।
-বললেই হবে মন খারাপ আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি।
-কেন এতটা বোঝেন আমাকে।

ফারাবি হকচকিয়ে যায় তুহার কথা শুনে। তুহা আবারো প্রশ্ন করে..
– কি হলো‌ বলুন, কেন এতটা খেয়াল রাখেন আমার। কেন এইসব করছেন আপনি। আমার ভালো‌লাগে না প্লিজ আমার বিষয়ে আর নাক গলাবেন না।

তুহা অন্যদিক মুখ ঘুরিয়ে বসে পড়ে বুকের ভেতরে অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে।

তুহা বাড়ি ফিরে এসে চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে,ক্লান্ত ভেবে ওর মা ওকে বিরক্ত করলো না। তুহার বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যাথা করছে, তুহা বিছানায় শুয়ে সকালের ঘটনাটা মনে করতে লাগলো…

সবাই শেষবারের মতো সমুদ্রের তীরে গেছে কিন্তু তুহার মন চাইনি যেতে তাই ওহ আর যায়নি হয়তো যায়নি বলেই সবকিছু জানতে পারলো।

#চলবে