তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-২৪+২৫

0
381

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_২৪)

মিহা চুপ করে আছে কোনো কথা বলছে না।

– বোন আমার পাগলামী করিস না।জীবনটা এতটাও সহজ নয়। আর জীবনটা কোনো গল্পও নয় যে নিজের ইচ্ছামতো মোড় নেওয়াবি।
– তাহলে তোর জীবনটা কি ছিলো দিভাই। দাদাই তো মন থেকে একে অপরকে চেয়েছিলো তাই তো এত বাঁধা আসার পরেও তোরা এক হয়েছিস।

তুহা আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না। কিই বা বলবে কারোর মাদকতায় আচ্ছন্ন হবার পেছনে কারোর তো নিজের হাত থাকে না। ভালোবাসা,প্রনয় তো অদ্ভুত অনুভূতি কখন কার প্রতি হয়ে যায় বলা যায় না। আর চাইলেও এড়িয়ে যাওয়া যায়না।

– কিন্তু বোন এসব কিভাবে হলো। তুই তো মেহতাব দাকে পছন্দই করতিস না।
– জানি না দিভাই। তোর সাথে বিয়ের কথা চলাকালীন আমার মনের মাঝে একটা দোটানা দেখা যায় পরে উপলব্ধি করি এইসব কিছু।
– কিন্তু বাবা মানবে কী।
– জানি না।
– আর মেহতাব দা।
– দরকার নেয় আমি মানিয়ে নেবো।

তুহা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সিদ্ধান্ত নিলো বাবার সাথে কথা বলবে। তুহা নিজের প্ল্যান মতোই ওর বাবার ঘরে উপস্থিত হলো।
– বাবা কেমন আছো।
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো।
– আলহামদুলিল্লাহ। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– কি কথা।
– তুমি তো আমাদের সব ইচ্ছা রেখেছো। আর একটা ইচ্ছা রাখবে।
– কী।
– আমি চাই মিহা আর মেহতাব দার বিয়ে দিতে।

তুহার বাবা অনেকটাই অবাক হলেন।

– হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারন কী।
– মিহা ওনাকে ভালোবাসে। আর বাবা তুমিও তো মাকে প্রেম করেই বিয়ে করেছিলে তুমি নিশ্চয় চাইবেন না তোমার মেয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে না পেয়ে কষ্ট পাক।

তুহার কথার উপরে উনি কিছুই বলতে পারলেন না। চুপ করে থাকলেন কিছুক্ষন পরে কিছু একটা ভেবে বললো…
– কিন্তু মেহতাব কী রাজী হবে।
– সেটা না হয় মিহার উপরে ছেড়ে দাও।
– আমি আর কোনো ভুল করতে চাই না আমি চাই তোমার ভালো থাকো। কথার পরিনীতির পর আমার যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। তাই আমি তোমাদের সুখে বাঁধা দেবো না। তবে এই সবকিছুর জন্য আমাকে তোমার এখনোই দায়ী করতে পারবে না‌ আর একটা কথা মনে রেখো। তোমাদের পছন্দকে আমি সার্পোট করছি,সেই তোমরাই একদিন এসে যেন বলো, বাবা আমরা ভুল মানুষকে ভালোবাসেনি,একজন যোগ্য মানুষকেই পেয়েছি নিজের জীবনে।

তুহা মুগ্ধ হয়ে গেলো‌। ওর বাবা কি বোঝাতে চেয়েছেন সেটা ভালোই বুঝতে পারলো। মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। তুহা আরো কিছুক্ষন থেকে বাড়ি ফিরে আসলো। রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে তুহা ঘরে আসলো। মিহার বিষয়টা সবটাই ফারাবীকে জানালো। ফারাবী সবটাই শুনলো, কিন্তু কিছুই বললো না। অনেকক্ষন পর ফারাবী বললো…

– তাহু পাখি তোমার মনে হচ্ছে না তুমি আমার সাথে অন্যায় করছো।

তুহা ফারাবির এইরকম করুন কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো। ফারাবির দিকে তাকিয়ে বলল..
– কি বলছেন আপনি।
– ঠিক বলছি। সকলের জন্য তোমার কাছে সময় আছে শুধু আমি বাদে। কথা চলে যাবার পর থেকেই তোমার আমার মাঝে এক অদৃশ্য দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।তুমিই বলো আমি কী এই কষ্টের অধিকারী। এই সবই কি আমার প্রাপ্য।

ফারাবীর কন্ঠে তীব্র আকুলতা। তুহার মনের মাঝে অনুশোচনা বোধ হলো সত্যি সবাইকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আসল মানুষটাকেই অবহেলা করে ফেলেছে।

– তা মিস্টার দূরত্ব কমানোর জন্য কি করতে পারি আমি।
– একটা গোটা দিন আমাকে দিতে হবে।
– আচ্ছা দেবো।

ফারাবি মৃদু হেসে তুহাকে জড়িয়ে ধরলো। কপালে এঁকে দিলো ভালোবাসার পরশ।

অন্য দিকে…

– আমি তোমাদের সুখে থাকতে দেবো না আমার সুখ কেড়ে নিয়ে তোমরা সুখে থাকবে এটা কিছুতেই হতে দেবো না। তৈরি হও নতুন ঝড়ের জন্য আমি ফিরছি তোমাদের জীবনে।

আশিক,কাব্য আর আতিফ কনফারেন্স কলে আছে।

– ভাই তোর বোন ওটা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি।(কাব্য)
– কেন রে ভাই তুই কী আমার বোনকে সহজ সরল ভেবেছিলিস নাকি।( আশিক)
– আরে ভাই বুঝিস নি আমাদের কাব্য যে খুশির উপরে ক্রাশ ছিলো আর সেই খুশিই ওকে নিজের বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছে এতে তো তোর খুশি হবার কথা তার খুশি হসনি।(আতিফ)
– এই একদম একইরকম কথা বলবি না ওইরকম মেয়ে জীবনে থাকলে জীবনটা তেজপাতা হয়ে যাবে।
– ভাই একটা সিক্রেট বলবো।(আতিফ)
– কী সিক্রেট।
– আমরা তিনজন একে অপরের শালা হবো দেখিস।
– মানে(আশিক+কাব্য)

আশিক আর কাব্য আতিফের কথার কিছুই বুঝতে পারলো না। আতিফ হেসে বলল…
– বাকিটা সময় মতো জানবি।

আতিফ ফোনটা কেটে দিলো।

– এই কাব্য ওর কথা কিছু বুঝতে পারলি।
– না,তুই।
-আমিও না।
-এই ব্যাটার মনে হয় মাথা গেছে।
-আমার ওহ তাই মনে হয়।
-হুম।

ওরা দুজন আরো কিছুক্ষন কথা বলে কল কেটে দিলো।

পরেরদিন,

– আমি তুহাকে নিয়ে কালকে গ্রামে যেতে চাই।

কেউই আপত্তি জানায় নি। পরেরদিন সকলকে বিদায় জানিয়ে তুহা আর ফারাবি বেড়িয়ে পড়লো।‌কয়েক ঘন্টা জার্নি করার পর ওরা পৌঁছে যায়..

গ্রামটা বড্ড সুন্দর। মনোরম পরিবেশ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়।‌

– গ্রামটা বড্ড সুন্দর।
– পছন্দ হয়েছে তোমার।
– খুব।
– চলো বাগানবাড়িতে।

তুহাকে নিয়ে ফারাবি বাগানবাড়িতে আসে। বাগানবাড়িতে কেউ না থাকলেও প্রতিদিনই পরিষ্কার করা হয়। এই বাড়ির দেখাশোনা করে একজন বৃদ্ধ মানুষ।

– বাবা তোমরা চলে এসেছো।
– কাকু কেমন আছেন।
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি।
– আলহামদুলিল্লাহ।
– এটা কি নতুন বউ নাকি।
– হুম।
– আসসালামু আলাইকুম।(তুহা)
– ওয়া আলাইকুমুস সালাম, সুখী হও মা।
– দোয়া করবেন কাকু।(তুহা)
– অবশ্যই। তোমরা রেস্ট নাও অনেকদূর থেকে এসেছি।

তুহা আর ফারাবি একটা ঘরে চলে গেলো। ঘরটাও সুন্দর করে গোছানো।

– এখুনি রাতের কাজটা সেরে নিই কি বলো।
– অসভ্য!

তুহা ফারাবিকে ঠেলে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নিতে নিতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। তুহা গাল ফুলিয়ে বসে আছে, এত দূরে নিয়ে এসে একাকে রেখে কোথায় বেড়িয়ে পড়েছে এর থেকে বিরক্তের আর কি হতে পারে।

ফারাবী হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে ঘরে এসেই বললো…
– তাহু পাখি তাড়াতাড়ি এইগুলো পরে নাও একটাও প্রশ্ন না করে।

তুহা গাল ফুলিয়ে ফারাবির কথামতো কাজ করলো। তুহাকে রেডি হতে দেখেই ফারাবী ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো…

– নিজের রূপের মায়ায় আজকে কি আমাকে ডুবিয়ে মারতে চাইছো তাহু পাখি।
– এখনো কী বেঁ/চে আছেন আপনি।

তুহার কথার মানে উপলব্ধি করে ফারাবীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ফারাবী বেশিকিছু না বলে তুহাকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।

তুহা কিছুই বুঝতে‌ পারছে না ফারাবী কি চাইছে।ফারাবী তুহাকে কিছূই বললো না একটা নদীর ধারে নিয়ে আসলো। একদম মনোরম পরিবেশ কোথাও কেউ নেয় শুধু তীরে একটা নৌকা দাঁড়িয়ে আছে,আর নৌকাটা কি সুন্দর করে সাজানো।

– কি সুন্দর করে সাজানো।
– তোমার জন্য মিসেস তুহা চৌধুরী।

তুহা আলতো হাসলো। ফারাবীর হাত ধরে নৌকাতে উঠে বসলো।

– তুহা কেমন লাগছে তোমার।

তুহা থমকালো,অনেকটাই অবাক হয়ে পড়লো। ফারাবী ওকে কখনোই তুহা বলে ডাকে না। আজকে হঠাৎ কি হলো।

তুহা ফারাবির হাত ধরে নৌকায় বসে আছে। আসতে আসতে সন্ধ্যা নামছে, একটা মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। তুহা কে নিয়ে ফারাবি নদীর ওইপারে নিয়ে আসলো। এই পারে একটা হাট বসেছে। নানারকমের জিনিস বিক্রি হচ্ছে।তুহা আর ফারাবি কেনাকাটা করে নৌকায় ফিরে আসলো।

– অনেক তো রাত হলো এখন বাড়ি চলূন।
– বাড়ি যাবো না একমিনিট।
– কেন।
– আকাশের দিকে তাকাও একবার।

তুহা আকাশের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো…

#চলবে…

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

( পর্ব_২৫)

ফারাবির কথা শুনে‌ তুহা আকাশের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো। আকাশে নানারকমের আতসবাজি ফাটছে। তুহা কারনটা কিছুই বুঝতে পারলো না। আজকে কী বিশেষ কিছু দিন না তো কিছুই তো মনে পড়ছে না। তুহা ফারাবির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই ফারাবী আলতো হেসে বলল…

– শুভ….

তুহার জানার আগ্রহটা বেড়ে যাচ্ছে, আজকে তো ওর জন্মদিন নয় তাহলে! ফারাবি কিছুই না বলে চুপ করে আছে, তুহা বিরক্ত হয়ে বলল…
– এই বলুন না।

ফারাবী তুহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে কিস দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো…
– শুভ বিবাহবার্ষিকী তাহু পাখি।

তুহা আকাশ থেকে পড়লো। আজকে ওদের বিবাহবার্ষিকী মানে।

– বুঝলে না তো।
– না।
– আজকে থেকে কয়েকবছর আগে এই দিনেই তোমার আর আমার বিয়ে হয় মিসেস ফারাবী চৌধুরী।

তুহা তো চমকের পর চমক খাচ্ছে। ফারাবী এতকিছু মনে রেখেছে। তুহার জিজ্ঞাসূ দৃষ্টি বুঝতে পেরে ফারাবী বললো…
– যাকে নিজের মন দিয়েছি। যার মাদকতায় আচ্ছন্ন হয়েছি তার সম্পর্কে এইসব তথ্য না রাখলে হয় বলো।

তুহা কিছু না বলে ফারাবিকে জড়িয়ে ধরলো। ফারাবিও তার তাহু পাখিকে নিজের বুকে জড়িয়ে রাখলো।

পরেরদিন সকালেই কিছু বিশেষ কাজে ফারাবি আর তুহাকে চৌধুরী বাড়িতে ফিরতে হয়। তুহা ফারাবি বিনাবাক্যে বাড়িতে পৌঁছে শোনে। সাবিনা বেগম ব্রেন স্ট্রোক করেছেন। ডক্টর জানিয়েছেন ওনার শরীরের 80% অঙ্গ অক্ষম হয়ে যেতে পারে। চৌধুরী বাড়ির সকলেই ভেঙ্গে পড়েছে বিশেষ করে কাব্যের বাবা, একটা কারনে নিজের স্ত্রীর উপরে রাগ করে থাকলেও স্ত্রীকে তো উনি ভালোবাসতেন। তার এই পরিনতি মানতে পারছেন না।

১৫ দিন পর…

সাবিনা বেগমের শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটলেও ডক্টর কোনো ভরসা দিতে পারেননি। যেকোন সময়ে যা কিছু হতে পারে সবটাই ভাগ্যের উপরে নির্ভরশীল।

সবাই মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েছে ওনাকে। বাড়ির সদস্য চাইলেই তো আর অবহেলা করতে পারেন না। ভালোবাসা,মায়া বলে তো একটা জিনিস আছে। আজকে অনেকদিন পর সাবিনা বেগম অস্পষ্ট কথা বলেছেন…

কাব্য ও কথাকে দেখে প্রচন্ড পরিমানে কান্নাকাটি করেছেন।

– আমি তো এক মেয়ের জীবনে সুখ দিতে পারিনি। আমি চাই কুহুর বিয়ে দেখে যেতে।

কথাটা বলেই আবারো জ্ঞান হারান উনি। পরিবারের সকলে চিন্তিত হয়ে পড়লো কী করবে এখন। সাবিনা বেগমকে বাড়িতেই রাখা হয়েছে। ড্রইংরুমে বসে সবাই কথা বলছে। কাব্যের বাবা রাগ নিয়ে বললেন…
– এই মহিলা এখনো শুধরানোর নয়। ম/র/তে বসেছে তবুও এখনো জেদটা বজায় রেখে দিচ্ছে।
– আ রাগছিস কেন একদিন না একদিন তো কুহুর বিয়ে দিতেই হবে আর যখন ছোটের সেটাই ইচ্ছা এই ইচ্ছাটা পূরণ করা আমাদের দায়িত্ব।(ফারাবির বাবা)

কাব্য সবটাই শুনছিলো,, কিন্তু কীভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। বারবার বলতে গিয়েও আটকে যাচ্ছে,কাব্যের চোখ পড়লো তুহার দিকে‌। মনে মনে একটা ফন্দি এটে তুহার ফোনে মেসেজ করলো কিছু একটা। তারপর কাব্য তুহাকে ইশারা করে ফোন দেখতে বললো, তুহা কাব্যের ইশারা বুঝতে পেরে মেসেজ দেখে মুখের কোনো হাসি ফুটে উঠল…

তুহা সকলের দিকে একবার তাকিয়ে গলাটা একটু পরিষ্কার করে বললো…
– আমার একটা প্রস্তাব আছে।
– কী প্রস্তাব(কাব্যের বাবা)
– কাব্যের একটা বন্ধু আছে আতিফ।
– হ্যাঁ কি হয়েছে( ফারাবি)
– ওর জন্য ওহ মেয়ে দেখা চলছে, আমাদের কুহুর জন্য কথা বললে কেমন হয় একবার তো ট্রাই করাই যেতে পারে তাই না।

তুহার সাথে সকলেই সহমত হলো। তুহা সকলকে চমকে দিয়ে বললো..

– আমার আর একটা কথা আছে।
– কী?
– আমি চাই কুহুর সাথে কাব্যের বিয়েটাও হয়ে যাক।

কাব্য এইরকম প্রস্তাবে আকাশ থেকে পড়লো। তুহা উল্টে ওকে ফাঁসিয়ে দেবে এই ধারনা ছিলো না কোনো কালেই। কিন্তু এখন কিভাবে আটকাবে, সবার মুখ দেখে তো মনে হয় রাজি। কাব্যের সন্দেহই ঠিক হলো সকলেই রাজি হয়ে যায়। কাব্য তুহার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই তুহা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেলো।।

কাব্য আতিফকে ফোন করে জানিয়ে দিলো। আতিফ তো খুব খুশি,কুহুর একটা ছবিকে ঝুম করে তার উপরে চুমু দিয়ে বললো…
– এইবার আমার কোকিল কন্ঠী আমার খুব পাঁজরে আবদ্ধ হবে। পিচ্চি তুমি কী জানো আমি তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন হয়ে মাতাল হয়ে গেছি সব কষ্ট কিন্তু শুধে আসলে আদায় করবো।

কথাগুলো নিজের মনেই বলে হেসে উঠলো। কুহুকে আজকে নয় ৩ বছর আগে দেশের বাইরে যাবার আগে চৌধুরী বাড়িতে দেখে চোখ আটকে গিয়েছিলো, তারপরেই ভালোবাসা জন্মালো মনের মাঝে।

মিহা, কুহু,মেধা আর তুহা ভিডিও কলে কথা বলছে। কুহুর মনটা খারাপ হয়ে আছে এত কম বয়সে বিয়ে করে নেবে ভাবতেই পারছে না। আর বিয়ের কথা যখন উঠেছে তখন বিয়ে তো দিয়েই ছাড়বে সকলে মিলে।

মেধা কুহুর বিয়ের কথা শুনে বললো…
– কুহু আমার ছোট ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আর আমি ধামড়ী মেয়ে এখনো বসে আছি এইসব কী মানা যায়।

তুহা আর মিহা মেধাকে আর কুহুকে ক্ষ্যাপাতে লাগলো। তুহা কথা বলার মাঝে মিহার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটার মনে কি চলছে সেটাই বোঝার চেষ্টা করছে।

পরেরদিন ভোরে খবর আসে তিশার একটু রাজকন্যা হয়েছে। সকলেই খুব খুশি হয়ে যায় খবরটা পেয়ে। তুহা তো বেবি বলতে পাগল তিশার কাছে যাবে বলে ফারাবিকে পাগল করে দিচ্ছে।

– তাহু পাখি আমাদের একটা মিস্টি রাজকন্যা হবে।
– না রাজপুত্রর ঠিক আপনার মতো।
– না রাজকন্যা।
– আচ্ছা যেটা হবে তাতেই আমি খুশি।
– আমিও।

তুহা ফারাবিকে জড়িয়ে ধরে থাকলো। ফারাবি জানালো অফিস থেকে ফিরে ওকে নিয়ে যাবে তিশার আছে। তুহা তো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে খুশিতে।

তুহা আজকে একটা গ্রিন কালারের শাড়ি পড়েছে। ফারাবি মিস্টি হেসে তুহাকে নিয়ে বের হয়ে যায়।

– তাহু পাখি খুব এক্সাইটিং তাই না।
– হুম খুব খুব।

তুহা বেবিকে দেখে পুরোই বাচ্চা হয়ে যায়। বেবিটাকে কোলে তুলে চুমু দিয়ে দেয়।

– দিভাই আমি কিন্তু বাবুর নাম রাখবো।
– ওকে শালিজী তাই হবে।(তিশার বর)
– হুম।

মেহতাব ওহ তিশার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। তুহার সাথে দেখা করে কিছুক্ষণ কথা বললো,ফারাবির সাথে কথা বললো।

– তোমাদের খুশি দেখে আমি খুব খুশি।
– আর তোমার খুশি।
– মানে?
– বিয়ে করবে কবে।
– দেখি আল্লাহ তায়ালা কবে লিখে রেখেছে।
– তাই।
– হুম।
– আমি মেয়ে খুঁজে দেবো নাকি।
– আরে না‌ দরকার নেয়। যার সাথে লিখা আছে তার সাথেই হবে চিন্তার কিছু নেয়।
– সেটা তো অবশ্যই।

তুহা আর মেহতাব কথা বলে মেহতাব চলে গেলো। হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনে মেহতাব চমকে উঠলো…

#চলবে…