তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব-০১

0
1043

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_১

“নিজের শরীর দেখিয়ে ছেলেদের আকৃষ্ট করার ইচ্ছা জাগলো নাকি তুহা।”

আচমকা একরকম কথা শুনে তুহা হকচকিয়ে গিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ফারাবি দাঁড়িয়ে আছে। ফারাবির দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলো,নিজের পায়ের কাপড় অনেকটাই উপরে উঠে গেছে। তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে বসলো তুহা। শাড়ি পড়ে পায়ের উপরে পা তুলে বসার কারনে পায়ের কাপড় সরে গেছে। শাড়ি পড়ার অভিজ্ঞতা খুবই কম,আজকে বসন্ত উৎসব তাই,বন্ধুদের চাপে পড়ে পড়তে হয়েছে। এইরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে জানলে কখনোই শাড়ি পড়তো না তুহা।

তুহা শাড়িটা ঠিক করার পরেই ফারাবি নিজের স্থান ত্যাগ করলো। তার আগে তুহার দিকে একটা কঠিন লুক দিয়ে গেলো,যার অর্থ তুই আজকে শেষ তুহা।

তুহা হাসান। অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষ। বাবা মায়ের বড়ো সন্তান। একটা ছোট বোন আছে মিহা। ১১ এ পড়ে।
তুহা সবার কাছেই ছটফটে দুষ্টু স্বভাবের হলেও একজনের কাছে ভীতুর ডিম। আর সেটা হলো ফারাবি। ফারাবি তুহার কলেজের এসিস্ট্যান্ট টিচার হিসাবে জয়েন করেছে। তার পাশাপাশি তুহার সাথে ফারাবির একটা সম্পর্ক আছে,ফারাবি তুহার কাজিন।

ফারাবি চৌধুরী। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছে। বাবার বিজনেস জয়েন না করে কলেজে জয়েন করেছে যার কারনটা তুহার অজানা। ফারাবি আর তুহার সম্পর্ক টা সাপে-নেউল টাইপের। দুজন দুজনকে একটুও ছাড়ে না। ফারাবি দেশে ফিরে আসার পর থেকেই তুহাকে অপমান করার কোনো সুযোগ ছাড়ে না। তুহা কখনো মুখের উপরে বলে আবার কখনো ভয়ে চুপ করে যায়। ফারাবির রাগ খুবই ভয়ঙ্কর।

তুহাকে মুখ গোমড়া করে থাকতে দেখে খুশি বললো..
-কি হলো পেত্মীমার্কা মুখ করে আছিস কেন?

খুশির কথাতে তুহার রাগটা তরতর করে বেড়ে গেলো।
-শা/*লি,কু/*ত্তী তোর জন্য আজকে ওই ফারাবির কাছ থেকে আমাকে এতগুলো কথা শুনতো হলো।ওকে তো সামনে পেলে আমি খু*/ন করবো।

তুহার আচমকা আক্রমনে খুশি হতবাক হয়ে গেলো। তুহার রাগের কারনে বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে যার জন্য ফারাবির উপরে তুহা ক্ষেপে গেছে।

-বনু কি হয়েছে বলবি তো।

তুহা রাগ নিয়ে সবটা খুশিকে বললো। খুশি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে বললো..
-আমি বুঝি না তোর সাথে স্যারের কি শত্রুতা। সবসময় তোর পেছনেই পড়ে থাকে। তোরা কি আগে থেকে পূর্ব পরিচিত।

খুশির এমন কথা শুনে তুহা হকচকিয়ে গেল। কথাটা ঘোরানোর জন্য বললো..
– মেধা কোথায়।
– আছে কোথাও।হায় তো আসছে।

মেধা এসে দেখলো তার বেষ্টু জানু তুহা মুখ গোমড়া করে রেখেছে। তাই তুহার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো..
– কি হয়েছে তোর?

মেধার কথাতে পাত্তা না দিয়ে তুহা নিজের মতো ফোন টিপতে লাগল।তুহাকে চুপ করে থাকতে দেখে খুশি বললো..
– আরে বুঝিসনা কেন আমাদের ফারাবি স্যারের সাথে ঝগড়া হয়েছে ম্যাডামের।

খুশির কথা শুনে মেধা মাথা চাপড়ে বললো…
– এদের নিয়ে পারি না। আজকেও এরা দুজনে ঝগড়া করেছে।

– আমি আর উনি মোটেও ঝগড়া করিনি।আমার পায়ের কাপড় সরে গিয়েছিলো উনি সেটা বলেছেন। আর মেধা আমি বাড়ি যাবো,তুই কি যাবি।

– এখনি চলে যাবি।

– হুম।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

তুহা বাথরুমে যাবার জন্য পা বাড়ালো। হুট করেই কেউ একজন ওকে অন্ধকার ঘরে টেনে নিয়ে গেলো।
তুহা মনে মনে সাহস জুগিয়ে বললো..
-কে?

ওপাশ থেকে কোনো কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেলো না। তুহাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ওপাশের মানুষটা তুহার কোমড়ে নিজের হাত ছোঁয়ালো। তুহা শিউরে উঠল। হুট করেই ব্যক্তিটা তুহার কোমড় ধরে তার অনেকটা কাছে নিয়ে এসে গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে ঠোঁটের উষ্ণ গরম স্পর্শ দিতে লাগলো। তুহা বারবার মানুষটার স্পর্শে কেঁপে উঠছে। স্পর্শটা ওর খুব চেনা। মানুষটা নিজের নাক দিয়ে তুহার গলায় ঘাড়ে ঘষতে লাগলো। তুহা কেঁপে কেঁপে উঠছে। মানুষটা তুহার কানের কাছে এসে মৃদু স্বরে বললো..

– আমাকে পাগল করার জন্য আর কত কি করবে তাহু পাখি। আমি যে তোমাতেই মাতাল হয়ে যাচ্ছি।দিনকে দিন #তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছি।পারবে তো সামলাতে।

মানুষটার মৃদু স্বর, গরম নিঃশ্বাস তুহাকে পাগল করে দিচ্ছে। তুহা নিজের শাড়িটা শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।

– আমাকে নিজের মাদকতায় আচ্ছন্ন করার জন্য শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে। তার জন্য তৈরি হও তাহু পাখি।

তুহার কপালে আলতো করে চুমু হয়ে মানুষটা চলে গেলো। তুহা তার কাছে কাউকে না অনুভব করে পিটপিট করে চোখ খুললো।তুহা রীতিমত হাঁপাচ্ছে।ভয়ের সাথে আলাদা একরকমের অনুভূতি হচ্ছে। এই অনুভূতিটার নাম কি? সামনের মানুষটা কে? সেটা তুহা জানে না তবে এটা জানে,এমন কেউ একজন যে ওকে পাগলের মতো চাই। তুহাকে নিজের জীবন দিয়ে সবসময় আগলে রাখে।সব বিপদ থেকে রক্ষা করে। হয়তো তাই তুহা মানুষটাকে কিছু বলতে পারে না।

তুহা মেধাকে আর খুশিকে কিছু না বলেই চলে যায়। বাড়ি ফিরে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।ঝরনার নীচে দাঁড়িয়ে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো..

-কেন আমাকে নিজের এতটা কাছে জড়িয়ে নিচ্ছেন। কেন আমাকে নিজের বাঁধনে জড়াচ্ছেন। কেন আমাকে আপনাতেই মত্ত করছেন আমি আর পারছি না আর লুকোচুরি না করে সামনে আসুন।সামনে আসুন প্লিজ।

তুহা আস্তে আস্তে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো। চোখে সূর্যের আলো পড়ায় তুহার ঘুম ভেঙে যায়। শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করছে,মাথা ভারি হয়ে গেছে। ও এখানে আসলো‌ কিভাবে ও তো ওয়াশরুমে ছিলো। তুহা কিছুই মনে করতে পারছে না। তখনি ওর মা তহুরা হাসান ভেতরে প্রবেশ করলো..

– তুহা মামনি তুই ওয়াশরুমে কিভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলি। আর কখনই বা বাড়িতে আসলি।মেধা ফোন না করলে তো আমি জানতেই পারতাম না।

তুহা আমতা আমতা করছে কি বলবে। তখনি সেখানে মেধা চলে আসে।

-মামনি কি করছো।
-এই তো বল।
-আমার না খুব খিদে পেয়েছে কিছু খেতে দাও না প্লিজ।
– আচ্ছা তূই বস আমি গেলাম।

তুহার মা ঘরের বাইরে চলে যায়। মেধা তুহার পাশে বসে বললো..

-তুহা রানি তোর কি হয়েছে কাউকে কি না বলে চলে আসলি কতটা চিন্তা করছিলাম জানিস।

তুহা চুপ করে আছে কিছুই বলছে না।

-তুই আর দাদাই যতই ঝামেলা করিস না কেন। তোদের মাঝে আলাদা একটা সম্পর্ক আছে।
-মানে?
– মানে দেখ না আমরা কেউ খেয়াল না করলেও দাদাই ঠিক খেয়াল করেছে তোর দিকে।
-ও।

তুহা আর মেধা খালাতো বোন।‌আর ফারাবি ওদের মামাতো ভাই। তুহার বাবা ফারাবির বাবাকে পছন্দ করেন না। ওদের মাঝে সম্পর্ক নেয় বললেই চলে। তুহার বাবা ওই বাড়িতে যান না, আর ওনারা আসলেও এই বাড়িতে থাকেন না তুহার বাবা।

– তুহা আমি বুঝিনা আঙ্কেল মামাইকে অপছন্দ করেন কেন?
– সেটা তো আমিও জানি না।‌ সবটাই কেমন রহস্যময়।

#চলবে…

বিঃ দ্রঃ-ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।