তোমার হাতটি ধরে পর্ব-১৪

0
675

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_১৪
#Jechi_Jahan

আমি লিনাকে এতক্ষণ এত কথা বললাম আর ও আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।আমি রেগে গেলেও খানিক অবাক হলাম ওর ছলছল করা চোখ দেখে।আমি ওকে একটা ধাক্কা দিলাম।

আমি-কিরে,,,এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো??

লিনা-তুই এতদিন এতকিছু সহ্য করছিলি???(এটা বলে কেঁদেই ফেললো)

আমি-(এই গাধাটার কথা শুনে আমার মরতে ইচ্ছে করছে।এই কথাটার জন্য এমন সিরিয়াস হয়ে তাকিয়ে ছিলো যেনো কি না কি হয়ে গেছে।)তুই একটা গর্দভ।(রেগে)

লিনা-কি???(কেঁদে)

আমি-মানে তুই এই সামান্য ব্যাপার টার জন্য আমার দিকে এমন হ্যাবলার মত তাকিয়ে ছিলি,,,এটা আমার ভাবতেই অবাক লাগছে।

লিনা-আমি হ্যাবলার মত তাকিয়ে ছিলাম??(চোখের পানি মুছে)

আমি-নারে,,,আমার তো ছবি তোলা উচিত ছিলো। তুই কেমন করে তাকিয়ে ছিলি তোকে দেখাতাম।(রেগে)

লিনা-আচ্ছা সরি,,,

আমি-দূর,,(বলে অন্য দিকে ফিরে গেলাম)

লিনা-আচ্ছা বলনা।

আমি-কি বলবো???(রেগে)

লিনা-ছবিগুলো কে পাঠিয়েছে।

আমি- সেটাই তো জানিনা।

লিনা-তাহলে এবার কি করবি।

আমি-কি আর করবো,,,ওই ছেলেটাকে খুঁজবো।

লিনা-কিন্তু কোথায় খুঁজবি।

আমি-যেখানে ইচ্ছে সেখানে খুঁজবো।এ ব্যাটা আমার সংসার ভাঙ্গতে চাইছে।আরে সংসার কি আর মোবাইল নাকি যে ভাঙ্গলে আবার ঠিক করতে পারবো।

লিনা-আচ্ছা ওসব বাদ দে।

আমি-কি বাদ দিবো।আর সবচেয়ে বড় কথা ছেলেটা কিভাবে জানলো যে ওটা জোবানের অফিস।

লিনা-আচ্ছা ওসব না হয় বাদ দিলাম।কিন্তু আমার অবাক লাগছে ভাইয়ার কথা ভেবে।ভাইয়া তোর উপর একটু বিশ্বাস রাখতে পারলোনা।

আমি-তুই সেটা ভাবছিস আর আমি ভাবছি অন্যটা।

লিনা-কি???

আমি-উনি একবার আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারলোনা যে এগুলা সত্যি নাকি মিথ্যা।সত্যি মিথ্যা যাচাই না করেই উনি আমাকে কষ্ট দিয়ে দিলেন।

লিনা-এটা একটা ভুল বুঝাবুঝি।আর বলতে গেলে ভাইয়ার জায়গায় অন্য কেও থাকলে তোকে হয়তো বাইরেও বের হতে দিতোনা।পা ভেঙ্গে বাড়ীতে বসিয়ে রাখতো।বরং একদিক দিয়ে বেঁচে গেলি।

আমি-ওই ছেলেটাকে দিয়ে এগুলা কে পাঠায়???

লিনা-সেটা না হয় আমরা কালকে থেকে জানার চেষ্টা করি।

আমি-ঠিক বলেছিস,,,এখন এত টেনশনে থাকলে কালকে কি না কি করবো ভাবতে পারবোনা।

লিনা-এইতো বুঝতে পারছিস।

আমি-চল বাসায় যাই।(উঠে দাঁড়িয়ে)

লিনা-ওই এক মিনিট,,(আমাকে বসিয়ে)

আমি-কি??

লিনা-তুই পিল কেনো খাচ্ছিস???

আমি-সে অনেক কথা,,,এখন চল।

লিনা-আমাকে এখন বল।

আমি-ফোনে বলবো,,,এখন কেও শুনে ফেললে মুশকিল হবে।

লিনা-ওকে,,,আচ্ছা তুই তো ভাইয়াকে বলে আছিসনি।এখন বাসায় গেলে যদি বকা খাস।

আমি-আসলে তো,,,আমি তো এটা ভেবে দেখিনি।

লিনা-আচ্ছা ওটা আমি সামলে নিবো,,,চল।

আমি-তুই কিভাবে সামলাবি।

লিনা-যখন সামলাবো তখন দেখিস।

এবার আমি আর লিনা রিকশা করে বাড়ী চলে আসি।বাড়ীতে এসে আমার টেনশন শুরু হয়ে যায়।লিনা যত বলুক ও সামলে নিবে কিন্তু আমার ভয় করছে।আমি আর না ভেবে জোবানকে ফোন দিলাম।রিং হচ্ছে কিন্তু উনি ফোন ধরছে না।আমার এবার মনে পড়লো উনি তো আমার ফোন ধরেনা।তবুও আমি হার মানলাম না অনবরত ফোন দিতেই লাগলাম।কিন্তু ব্যাটা এবার ফোন বন্ধ করে দিলো।

রাতেঃ-

জোবান বাড়ী এসে আমার সাথে কোনো কথাই বলছে না।আমি বারবার ওনার কাছে যাচ্ছি শুধু সকালের ব্যাপারটা বলার জন্য।কিন্তু উনি বারবার আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।খাবার টেবিলেও উনি ওনার মত খাবার খেয়ে যাচ্ছেন।খাবার খেয়ে উনি ওনার স্টাডি রুমে চলে গেলেন।আমিও আর দেরি না করে স্টাডি রুমে চলে গেলাম।ওখানেও সেই সেম কাহিনি উনি আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।উনি ওনার মতো টেবিলে বসে বসে ফাইল দেখছে।এবার আমার রাগ উঠে গেলো।আমি গিয়ে ওনার টেবিলের উপর থেকে ফাইল গুলো ফেলে দিলাম।

জোবান-সমস্যা কি তোমার??(রেগে)

আমি-আপনার সমস্যা কি??

জোবান-কি???

আমি-মানে তখন থেকে আমি আপনার সাথে একটু কথা বলার চেষ্টা করছি আর আপনি কিনা আমাকে ইগনোর করছেন।(রেগে)

জোবান-আমার ইগনোরে কি তোমার সমস্যা হচ্ছে।

আমি-তো হবে না,,,আপনি আমার স্বামী।আপনি আমাকে ইগনোর করলে আমার কষ্ট হয়।

জোবান-So what!!!

আমি-জোবান???

জোবান-ইয়েস,,,আমি তোমার স্বামী কিন্তু এটা তো তুমি আর মন থেকে মানোনা।সো আমি ইগনোর করলেও কি না করলেও কি।

আমি-জোবান আপনাকে আমার প্রয়োজন আর আপনি আমাকে ইগনোর করলে হবে।

জোবান-আমাকে তোমার প্রয়োজন???

আমি-হুম।

এটা বলার সাথে সাথে উনি আমাকে তুলে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।আমি কিছু বলবো তার আগেই আমার ঠোঁটের উপর ওনার ঠোঁট বসিয়ে দেয়।ওনার হঠাৎ এমন করার কারণ আমি বুঝতে পারিনি।আমি এবার ছটপট করতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর আমার ঠোঁট ছেড়ে আমাকে কোলে তুলে নেয়।উনি আমাকে কোলে নিয়ে আমাদের রুমে আসে।উনি আমাকে কোলে রেখেই পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

———————————-

লিনা ওর রুমে বসে বসে শুধু শিশিরের কথা ভাবছে।মেয়েটা এই কয়দিন এত কিছু সহ্য করলো।কিন্তু জোবান ভাইয়ের অফিসে এসব কে পাঠাবে।আর শিশিরের কাছের কারো সাথে তো ওর তেমন শত্রুতা নেই যে এমন টা করবে।আচ্ছা এটা বাইরের কেও করেনি তো।বাইরেরই বা কে,,,বাইরে তো ও শুধু ভার্সিটিতেই আসে।আচ্ছা ভার্সিটির কেও নয় তো।লিনা এসব ভাবছিলো হঠাৎ ওর মাথায় এলো আবিরের কথা।ও হুট করে আবিরকে ফোন দিলো।

আবির-হ্যালো।

লিনা-আপনি কই???

আবির-কোথায় আর,,,বাসায়।

লিনা-ওহ,,,আচ্ছা বেশ কিছুদিন আগে আমি আপনাকে জোবান ভাইয়ার কথা বলেছিলাম মনে আছে??মানে উনি কি করে,কোথায় থাকে আর শিশিরের কি হয় এইসব।

আবির-হুম,,,মনে আছে।কেনো বলো তো??

লিনা-আপনি কি এসব বাইরের কারোর সাথে শেয়ার করেছেন?

আবির-না,,,শুধু আমার বন্ধু বান্ধবীদের বলেছি।

লিনা-কেনো বললেন??(রেগে)

আবির-আরে এগুলা তো আর কোনো বড় সিকরেট কথা না।জোবান চাকরি করে,ওর বাড়ী এই এলাকায়,ও শিশিরের বয়ফ্রেন্ড এগুলা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করলে কি হবে।

লিনা-আমি বারবার বলেছিলাম কাওকে না বলতে।

আবির-আরে ওরা আমার ফ্রেন্ড।

লিনা-ওকে,,,আর কাওকে বলেননি তো?

আবির-না,,,আচ্ছা এই কথাটা হঠাৎ জিজ্ঞেস করছো।

লিনা-না এমনে,,আচ্ছা তো আপনার কথা মতো জোবান ভাইয়ের ব্যাপারে কথা গুলো শুধু আপনি, আশিক,অর্ণা আর লিজা জানে তাই তো??

আবির-হুম।

লিনা-ওকে বাই,,,

আবির-রেখে দিচ্ছো??

লিনা-কিছুক্ষণ পর আবার ফোন দিবো।

আবির-ওকে,,,বাই।

লিনা ফোনটা রেখে আবার ভাবতে লাগলো এগুলা কে করতে পারে।হঠাৎ ওর কি জানি মনে পড়ে যায় তাই ও তাড়াতাড়ি কাওকে ফোন দেয়।

—————————

জোবান আমাকে রুমে এনে খাটে শুইয়ে দেয়।আমি কিছু বলতেও পারছিনা জোবানকে।না ওনাকে কাছে টানতে পারছি আর না ওনাকে দূরে সরাতে পারছি।উনি ওনার টি-শার্টটা খুলে আমার কাছে আসলেন।এসে আমার গলায় কিস করতে লাগলেন।এসময়ে হঠাৎ ওনার ফোনটা বেজে ওঠে। উনি বিরক্তি ভঙ্গিতে উঠে ফোনটা রিসিভ করলো।

জোবান-হ্যালো।

লিনা-হ্যালো ভাইয়া,,,আমি লিনা।

জোবান-ও তুমি,,,সরি আমি নাম দেখিনি তাই।(আমার দিকে তাকিয়ে)

লিনা-কিছু হবেনা,,,

জোবান-হুম,,তা এতো রাতে ফোন দিলে??

লিনা-একটা কথা বলতে।

আমি জোবানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি। উনাকে কে ফোন করেছে আমি বুঝতে পারছিনা।বাট ওনার কথা বলার ভঙ্গিতে এতটুকু বুঝতে পারছি।যে যার সাথে কথা বলছে সে একটা মেয়ে।উনি একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে দেখে আমার কেনো জানিনা খুব একটা ভালো লাগলোনা।

জোবান-ওহ ওকে।(বলে ফোন রেখে দিলো)

আমি-কে ফোন দিয়েছে???

জোবান-আজকে অফিস থেকে কোথায় গিয়েছিলে?

আমি-হঠাৎ এই প্রশ্ন??

জোবান-যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলো।

আমি-আপনি তো ওটার জন্যই এতক্ষণ রেগে ছিলেন।

জোবান-শিশির সোজাসুজি উত্তর দাও।

আমি-আমি (দূর,,,কি বলি এবার।লিনা নাকি এসব সামলে নিবে মাথা সামলিয়েছে।)

জোবান-বলো।

আমি-ভার্সিটিতে।

এটা বলার সাথে সাথে জোবান আমার গালে আস্তে করে একটা থাপ্পড় মেরে বসে।আমি ব্যাথা পাইনি তবুও গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।

জোবান-আমাকে সত্যি বলতে কি ভয় লাগে।

আমি-আপনি আমাকে থাপ্পড় মারলেন?

জোবান-বেশ করেছি থাপ্পড় মেরেছি।লিনার সাথে ঘুরতে গিয়েছো এটা বললেই তো হয়।

আমি-(এমা,,,আমি আর লিনা আবার কবে ঘুরতে গেলাম)না না আমরা কই ঘুরতে গেলাম।

জোবান-চুপ,,,আমাকে লিনা মাত্র ফোন দিয়ে বলেছে।

আমি-কি বলেছে ও।

জোবান-জানিনা।(বলে নিচে থেকে টি-শার্ট টা পরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো)

আমি-(উনি যাওয়ায় আমার যেনো শ্বাস ফিরে এল)
আল্লাহ আজকেও বাঁচিয়ে দিলে,,,ধন্যবাদ।

আমি এবার কোনো রকম চিন্তা না করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম।সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি জোবান উবু হয়ে আমার পাশে শুয়ে আছে।আমি ওনাকে উপেক্ষা করে ফ্রেশ হয়ে ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে গেলাম।আজকে আমি জোবানের কিনে দেওয়া বেগুনি রঙের জর্জেট একটা লং কুর্তি পরলাম।ড্রেসটা জোবান খুব পছন্দ করে কিনেছে।
আমি আর দেরি না করে নাস্তা করে ভার্সিটির জন্য রওনা দিলাম।ভার্সিটিতে এসে দেখি লিনা কালকের মতো বসে বসে ফোন টিপছে।

আমি-ওই।(লিনার সামনে গিয়ে)

লিনা-ওহ তুই,,,,আরে বাহ তোকে তো আজ খুব সুন্দর লাগছে।কয়জন ছেলেকে ঘায়েল করবি আজকে।

আমি-আপাতত জোবানকে।

লিনা-বাহ বাহ,,,আচ্ছা কালকে বকেছে???

আমি-থাপ্পড়ও মেরেছে।

লিনা-কি,,,কিন্তু আমি যা বললাম তাতে তো থাপ্পড় মারার কথা নয়।

আমি-তোর সাথে কথা বলে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো।আমি অফিস থেকে কোথায় গিয়েছি।

লিনা-ওহ…তা তুই কি বললি।

আমি-বলেছিলাম ভার্সিটিতে।

লিনা-তো থাপ্পড় তো খাবিই।

আমি-আচ্ছা তুই কি বলেছিস।

লিনা-এই যে আমি তোকে ফোন দিয়ে অফিস থেকে বের হতে বলেছি।আর তুই ও আমার কথায় অফিস থেকে বের হয়েছিলি।তারপর আমি তোকে তোর জামাইর অফিস থেকে ড্রপ করে ঘুরতে গেছিলাম।তাড়াতাড়ির কারণে তুই ভাইয়াকে বলতে পারিসনি।

আমি-মাথার এক্সকিউজ।

লিনা-আরে তখন আমার মাথায় আর কোনো এক্সকিউজ আসছিলো না।

আমি-যাই হোক,,,চল ক্লাসে যাই।

আমি আর লিনা ক্লাসে গিয়ে বসে পড়ি।বেশ কিছুক্ষণ পরে জানা যায় যে আজ নাকি ক্লাস হবেনা।এটা শুনে আমরা সবাই যখন অসহায় মুখ নিয়ে বের হতে যাবো।ঠিক তখনই আশিক আর ওর বন্ধু বান্ধবীরা ক্লাসের ভেতর আসে।ক্লাসে এসে আশিক আমার দিকে বাঁকা হেসে তাকিয়ে থাকে।

-চলবে।