তোমার হাতটি ধরে পর্ব-১৫

0
863

#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_১৫
#Jechi_Jahan

আশিকরা ক্লাসে এসে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।কিন্তু শুধু আশিক আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।ওর এই তাকানো তে রাগটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

আশিক-নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছো,,,যে আমরা তোমাদের ক্লাসে কেনো এলাম।আসলে আমরা এখানে আসতাম না,,,কিন্তু আসতে হলো।

ক্লাসের একটা ছেলে-কেনো আসতে হলো???

আশিক-একটা নিউজ দেওয়ার জন্য।Big news,,,,,
(আমার দিকে তাকিয়ে)

লিনা-শিশির,,,এই ধামড়া হাতিটা তোর দিকে তাকিয়েই কেনো এসব কথা বলছে?(আমার কানে আস্তে করে বললো।)

আমি-আমি কি জানি।

লিনা-এ ব্যাটা নিশ্চয়ই কোনো খিছুড়ি পাকিয়েছে।

আমি-আচ্ছা আগে বলুক না কেনো এসেছে।

লিনা-ওকে,,,,

আশিক-ওকে তো আমার নিউজ টা শুনার আগে আমার তোমাদের কাছে একটা ছোট প্রশ্ন আছে।

একটা মেয়ে-কি প্রশ্ন ভাইয়া??

আশিক-আচ্ছা বলো তো,,,তোমাদের ক্লাসে মোট কয়জন বিবাহিত মেয়ে আছে??

মেয়েটা-ভাইয়া একটাও না।

আশিক-একটাও না,,,

মেয়েটা-জ্বি,,,

আশিক-বাট এটা তো তোমাদের ভুল ধারণা।

আমি-(আল্লাহ,,,আশিক কি কোনোভাবে জেনে গেছে,,,যে আমি বিবাহিত।)

মেয়েটা-কি ভুল ধারণা ভাইয়া???

আশিক-তোমাদের এখানে একজন বিবাহিত মেয়ে আছে।যে তোমাদের এতদিন মিথ্যা বলেছে।

লিনা-এ ব্যাটা কি তোর কথা বলছে শিশির???

আমি-বুঝতে পারছিনা।

অর্ণা-এই এত পেঁচাস নাতো,,,যা বলবি তাড়াতাড়ি বল।

আশিক-আরে আস্তেধীরে বলি।

আবির-ভাই,,,প্লিজ বল।কালকে থেকে বলছিস একটা নিউজ আছে কিন্তু বলার নাম নেই।

আশিক-এত তাড়া কিসের বুঝতে পারছি না।আমি একটু ওয়েট করছি যাতে ওই মেয়েটার ভয়ার্ত চেহারা টা দেখতে পারি।তাও মেয়েটার নাম বলার আগে।

ক্লাসের কিছু ছেলে মেয়ে-ভাইয়া বলেন না প্লিজ।

আশিক-উপপ,,,তোমরা না একটু ধৈর্য্য ও ধরতে পারোনা।যাই হোক,,,এত করে যখন বলছো তাহলে বলেই দি।এখানে যে মেয়েটা বিবাহিত সেই মেয়েটা হচ্ছে তোমাদের শিশির রহমান।ওই যে বেগুনি রঙের জামা পরা মেয়েটা।(আমার দিকে আঙ্গুল তুলে)

লিজা-কি???

আশিক-কি,,,অবাক হচ্ছিস???আসলে আমিও হয়েছিলাম যখন এটা শুনেছি।কেমন মেয়ে বল,,,এত বড় একটা কথা কাওকে বললো না।

আশিকের কথায় ক্লাসের সবাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।এখন নিজেকে কেমন জোকার মনে হচ্ছে।বুঝতে পারছিনা এভাবে তাকানোর কি আছে।বিবাহিত হওয়া টা কি কোনো দোষ।এবার আমাকে নিয়ে পুরো ক্লাসে কথা শুরু হলো।যে আমি বিবাহিত অথচ কেও জানেনা।আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে,ছলনাময়ী বলছে কারণ আমি কাওকে এ ব্যাপারে বলিনি।আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।

আশিক-তা শিশির চৌধুরী ওহ না শিশির রহমান।এবার সত্যিটা বলুন কেনো লুকিয়েছেন এটা??

অর্ণা-তুই বুঝতে পারছিস না কেনো লুকিয়েছে।

আশিক-না তো।

অর্ণা-ও বিবাহিত জানলে কোনো ছেলে তো ওর সাথে আর লাইন মারবেনা তাই।আসলে ও বড়লোকের ছেলেকে পটাতে চায় তাই বলেনি।

লিনা-আপনি এসব কি বলছেন???

অর্ণা-সত্যিই তো বললাম,,,তোমার বান্ধবী তো এই কারণেই কাওকে বলেনি।যে তিনি বিবাহিত,,,

এরকম আরো অনেক কথা অর্ণা ক্লাসে বলতে লাগলো।কথাগুলো যেনো আমার গায়ে কাঁটার মত বিঁধছে।অনেকক্ষণ শুনলেও এবার আর সহ্য করতে পারিনি।

আমি-You stop it,,,(রেগে)

আমার এমন কথায় অর্ণা সাথে সাথে চুপ হয়ে যায়।কিন্তু পরে আবার বলতে নিলে আমি ওদের সামনে দাঁড়িয়ে যাই।ফলে ওরা আবার চুপ করে থাকে।

আমি-আমি বিবাহিত হলে তোমাদের কোনো সমস্যা?

অর্ণা-না কোনো সমস্যা নেই,,,কিন্তু তুমি সবাইকে অনবরত মিথ্যা বলে এসেছো।

আমি-কি মিথ্যা বললাম আমি?

অর্ণা-এই যে তুমি বিবাহিত।

আমি-বুঝলাম না,,,সবাই এটা কেনো ভাবলো যে আমি বিবাহিত না।আরে আমিতো কাওকে এটাও বলিনি যে আমি অবিবাহিত।

অর্ণা-তাই বলে কাওকে বলবেনা যে তুমি বিবাহিত।

আমি-তোমরা কি চাও বলোতো,,,যে আমি সবার কাছে গিয়ে ঢোল বাজিয়ে বাজিয়ে বলি আমি বিবাহিত।

অর্ণা-আমরা এটা কখন বললাম।

আমি-তোমাদের ক্ষেপে যাওয়াই বলে দিচ্ছে।

অর্ণা-আশিক একে কিছু বল।

আমি-আশিক আবার কি বলবে।তুমি কি ভাবছো,,,ওর বলাতে আমি ভয় পেয়ে যাবো।

আশিক-চোরের মায়ের বড় গলা।মিথ্যাবাদী,,,মিথ্যা কথা বলে এখন এখানে সাধু সাজা হচ্ছে।

আমি-আচ্ছা আপনাদের সমস্যা কোথায় বলুন তো।যে আমি বিবাহিত,,,তো আমার কথা হচ্ছে আমি বিবাহিত বলে কি আপনাদের জ্বলছে।

আশিক-মানে?? (রেগে)

আমি-মানে হলো,,,আপনাদের কষ্ট হচ্ছে তাই না যে আমি বিবাহিত।

আশিক-আমাদের কেনো কষ্ট হবে?

আমি-এইযে আপনাদের থেকে বয়সে ছোট একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।অথচ আপনাদের এখনো বিয়ে হয়নি।

আশিক-কিহ,,,এই ফালতু জিনিসের জন্য আমরা কষ্ট পাবো।

আমি-তাহলে আপনারা আমার বিয়ে হয়েছে এটা জেনে এতো লাফাচ্ছেন কেনো।বিবাহিত হওয়া টা কি কোনো দোষ।নাকি বিবাহিত হয়ে পড়ালেখা করছি সেটা দোষ।

অর্ণা-কথা সেটা না,,,আমাদের কথা হলো এটা তুমি লুকানে কেনো???এটা কোনো লুকানোর বিষয় না।

আমি-আমার বলতে ইচ্ছে করেনি তাই আমি বলিনি।আর তাছাড়া এটা যখন আমি কাওকে বলিইনি তাহলে আপনারা কি করে জানলেন।

অর্ণা-শুনো,,,আমাদের তোমার ব্যাপারে জানার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।এটাতো আমাদের কালকে আশিক বললো।

আমি-ওহ,,,তার মানে আপনাদের আশিক এতদিন আমার উপর নজর দারি করছিলো।রাইট,,,

আশিক-বাহ,,কি বুদ্ধিমতি।

আমি-তার মানে আপনি সত্যি এতদিন আমার উপর নজর দারি করছিলেন।এই আপনার লজ্জা করেনা একটা মেয়ের উপর নজর দারি করতে।

আশিক-না করে না।

আমি-ওহ,,,এবার বুঝতে পেরেছি।এতদিন আমার উপর নজর দারি করছিলেন বলে আমাকে ইগনোর করছিলেন।তাই তো বলি হাতি হঠাৎ মাচি হয়ে গেলো কেনো??

লিজা-এই মুখ সামলে কথা বলো।

আমি-না আমি মুখ সামলে কথা বলবো না।আপনাদের বন্ধু এতদিন আমার উপর নজরদারি করেছে।না জানি আমার পেছন পেছন আমার জন্য আরো কি চক্রান্ত করেছে।শুনুন যদি আপনার জন্য আমার কোনো সমস্যা হয়,,,তাহলে আমি আপনাকে ছেড়ে কথা বলবোনা।

আশিক-ওকে।(বলে বাঁকা হাসলো)

আমি-আপনি আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করেন।আপনাদের মত ছেলেদের না আমার ভয় করে।সো আপনি আর আমার পেছনে ঘুরবেন না।যদি আর একবার এমন করেন তাহলে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা।

আশিক-ওকে এখন আমরা আসি।(বলে মুচকি হেসে ওরা চলে গেলো)

ওদের যাওয়ার পর আমি ওখানে বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে থাকি।ওদের এই অসম্পূর্ণ কাজটা আমাকে ভাবাচ্ছে।আমি বুঝতে পারছি না ওরা আমাকে আর কিছু বললো না কেনো।মানে ওরা যেমন মানুষ তাতে তো এত শান্ত হয়ে চলে যাওয়ার কথা না।

লিনা-কিরে,,,কি ভাবছিস?(আমার কাছে এসে)

আমি-এটা কি হলো??

লিনা-কি হলো??

আমি-এরা আমাকে আর কিছু না বলে এমনে এমনে চলে গেলো।

লিনা-তো তুই কি আরো কিছু শোনার অপেক্ষায় ছিলি।

আমি-না,,,তবে ওরা যা মানুষ এমনে এমনে ছেড়ে দিলো বিশ্বাস হচ্ছে না।

লিনা-তা তো কথা।কিন্তু তুই কি একটা কথা ভুলে যাচ্ছিস।

আমি-কি কথা??

লিনা-ওই ছেলেটাকে খুঁজার কথা।

আমি-ওহ শিট।

লিনা-হুম,,,তাড়াতাড়ি চল।এমনিতেও সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে।

আমি-হুম চল।(বেরিয়ে গেলাম)

আমি আর লিনা অনেকক্ষণ হলো গাড়ীতে বসে আছি।আসলে দুজনে ভাবছি ছেলেটাকে কিভাবে খুঁজবো আর কোথায় খুঁজবো।ওইযে বলে না “চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে”আমাদের ও হয়েছে সেই দশা।কালকে তো কত সময় ছিলো এসব ভাবার কিন্তু আমরা কালকে না ভেবে এখন ভাবছি।হঠাৎ আমার মনে হলো লিনাকে জোবানের অফিসে নিয়ে যাই।
ও তো কোনোদিনও জোবানের অফিসে যায়নি আর দেখেও নি।

আমি-ভাইয়া,,,জোবানের অফিসে নিয়ে যেতে পারবেন।

ড্রাইভার-ঠিক আছে ম্যাডাম।

লিনা-ভাইয়ার অফিসে কেনো??

আমি-তুই তো কোনোদিন জোবানের অফিস দেখিসনি তাই তোকে নিয়ে যাচ্ছি।

লিনা-আজকে না ছেলেটাকে খুঁজবি।

আমি-কোথায় আর খুঁজবো,,কালকেই খুজবো।

লিনা-যা তুই বলিস।

ড্রাইভার জোবানের অফিসের সামনে গাড়ী দাঁড় করালো।আমি আর লিনা গাড়ী থেকে নামলাম।আমরা যেই ভেতরে যাবো ওমনি দেখলাম একটা ছেলে অফিস থেকে বের হচ্ছে।আমি ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলাম এটা কালকের ওই ছেলেটা।

আমি-লিনা।

লিনা-হুম,,

আমি-ওইযে ওই ছেলেটা।

লিনা-ওইটা।(ছেলেটাকে দেখিয়ে)

আমি-হুম।

লিনা-তো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো যা।

আমি-ওই শুনো।(ছেলেটার পেছনে গিয়ে)

ছেলেটা-জ্বী আমাকে বলছে।আপনি??

আমি-হুম আমি।

ছেলেটা-ভালো আছেন???

আমি-ভালো আর থাকতে দিলে কই।

ছেলেটা-জ্বি???(ব্রু কুচকে)

আমি-আজকে কেনো এলে??

ছেলেটা-আজকেও আপনার স্বামীকে খাম দিতে এলাম।

আমি-কিহ???(অবাক হয়ে)

ছেলেটা-জ্বি,,,আজকেও পাঠিয়েছে লোকটা।

আমি-কোন লোক পাঠিয়েছে তোমাকে??

ছেলেটা-সরি,,,সেটা বলতে পারবোনা।

আমি-প্লিজ বলো,,,কে পাঠিয়েছে তোমাকে??

ছেলেটা-দেখুন আমার নাম বলা বারণ আছে।

আমি-প্লিজ বলো,,,আচ্ছা তুমি কি জানো এই খাম গুলোতে কি দেওয়া হয়???

ছেলেটা-না,,লোকটা দেয় আর আমি এনে দিই।

আমি-জানতে চাও এই খাম গুলোতে কি থাকে।

ছেলেটা-কি থাকে??

আমি-এই খাম গুলোতে আমার ছবি থাকে।তাও এই সেই ছবি না ইডিট করা ছবি।ছবি গুলোতে একটা ছেলেও আমার সাথে থাকে।কিন্তু এই ছবি গুলো একটাও সত্যি না।জানো আমার স্বামী এগুলা দেখে আমাকে অবিশ্বাস করে।উনি ভাবে আমি বিয়ের পরও রিলেশন করছি।দেখুন আমার ওনাকে বুঝাতে হবে যে এগুলা একটাও সত্যি না।যদি এমন চলতে থাকে তাহলে আমার সংসার বাঁচবে না।(বলে কেঁদে দিলাম)

ছেলেটা-ম্যাডাম আমি জানতাম না যে এই খামগুলো তে এসব থাকে।

আমি-এতে তোমার কোনো দোষ নেই।কিন্তু তুমি এখন আমাকে সাহায্য করতে পারবে।প্লিজ তুমি আমাকে এটা বলো যে এই খামগুলো তোমাকে কে দেয়?

ছেলেটা-একটা ছেলে।

আমি-আচ্ছা ছেলেরার নাম কি,কোথায় থাকে তুমি কি জানো??

ছেলেটা-কোথায় থাকে সেটা জানিনা,,,কি নাম জানি।

আমি-কি নাম ছেলেটার???

ছেলেটা-পুরো নাম তো বলেনি কিন্তু নিকনেম বলেছে।আর নিক নেম হলো আশিক।

আমি-আশিক???

ছেলেটা-জ্বি।

আমি-আচ্ছা তোমার নাম্বারটা দাও।প্রয়োজন হলে আমি তোমাকে কল দিবো।

ছেলেটা-০১৯******** এবার আসি।

আমি-হ্যাঁ।

লিনা-কিরে কি বলেছে।

আমি-ও আবার খাম দিতে এসেছিলো।

লিনা-কি??

আমি-হুম,,

লিনা-কে পাঠিয়েছে কিছু বলেছে??

আমি-আশিক নামের একটা ছেলে পাঠিয়েছে।

লিনা-আশিক???

আমি-আমি যেটা ভাবছি তুই ও কি সেটা ভাবছিস?

লিনা-হয়তো।

আমি-যাই হোক,,,এখন যেহেতু খাম এসেছে জোবান আবার আমাকে অবিশ্বাস করবে।তাই ওর আমাকে অবিশ্বাস করার আগেই আমার ওকে বোঝাতে হবে যে এগুলা মিথ্যা।

লিনা-কিভাবে।

আমি-জানিনা,,,আমি একটু আসছি।(বলে অফিসে ঢুকলাম)

আমি ভেতরে এসে সোজা জোবানের রুমে চলে গেলাম।জোবান রুমে একটা স্টাফ এর সাথে কথা বলছিলো।আমাকে রুমে দেখে রেগে তাকিয়ে ছিলো।আমি ইশারায় স্টাফ টাকে বাইরে বের করতে বললাম।

জোবান-আচ্ছা তুমি এখন যাও,,,আমরা এ ব্যাপারে পরে কথা বলবো।

স্টাফ-ওকে স্যার।(বলে চলে গেলো)

জোবান-কেনো এসেছো এখানে???(উঠে দাঁড়িয়ে)

আমি কিছু না বলে জোবানকে একটা ধাক্কা দিলাম।এতে জোবান একটু দূরে চলে গেলো।আমি পরপর দু তিনটা ধাক্কা দিলাম জোবানকে।জোবান এবার রেগে আমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে ফেললো।

জোবান-কি হয়েছে,,,ধাক্কা দিচ্ছো কেনো??

আমি-(কিছু না বলে কেঁদে দিলাম)

জোবান-ওই,,ন্যাকা কান্না কাঁদছো কেনো??

আমি-ন্যাকা কান্না কাঁদছি,,,জোবান আপনি কি আদো আমাকে কোনোদিন বুঝেছেন।আজ আমার কান্না আপনার কাছে ন্যাকা লাগছে।

জোবান-লাগছেনা তো ন্যাকা কান্নাকে ন্যাকা কান্নাই বলছি।

আমি-(কিছু না বলে টেবিলের উপর থেকে খামটা খুঁজতে লাগলাম।খামটা হলুদ রংয়ের ছিলো তাই আমার চিনতে অসুবিধা হয়নি।কারণ কালকেও হলুদ রংয়ের খাম ছিলো।খাম থেকে ছবি গুলো বের করে ওনার মুখের উপর ছুড়ে মারলাম।)এই ছবিগুলোর জন্য আপনি আমায় এতদিন কষ্ট দিয়েছিলেন।তাই না??

জোবান-(চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।)

আমি-জোবান মানুষ সত্য-মিথ্যা যাচাই করে আপনি কেনো এই চার মাস ধরে করলেন না।এই দুই তিন মাস আমি কিভাবে ছিলাম আপনি বলতে পারবেন।এতটা দিন আপনি আমায় কষ্ট দিয়ে এলেন।একটা বার কি আমায় জিজ্ঞেস করা যেতো না জোবান।যে শিশির,,,এই ছবিগুলো কি সত্য নাকি মিথ্যা।(কেঁদে)

জোবান-দেখো,,,

আমি-কি দেখবো,,,এই দু তিন মাস তো আপনার আমার জন্য সময়ই ছিলোনা।অফিস থেকে আসতেন,খাবার খেতেন,আর আমাকে বিছানায় নিয়ে যেতেন।এই দু তিন মাস শুধু এসবই হয়েছিল।

জোবান-বাইরের সবাই শুনবে,,,

আমি-শুনলে শুনবে,,,আপনি তো শুনছেন না অন্তত ওদের শুনতে দিন।জানেন এই কয়েকদিন আপনার সাথে থেকে আমার কি মনে হয়েছিল।যে আমি আপনার বেড পার্টনার লাইফ পার্টনার না।জোবান আপনি তো ভুলেই গেলেন,,,আমিও রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ।তা কিসের ভিত্তিতে ভুললেন এই মিথ্যা ছবিগুলোর ভিত্তিতে।জোবান আপনি আমাকে ছবিগুলোর ব্যাপারে একটাবার জিজ্ঞেস করলে আজ এমন হতোনা।একটুও বিশ্বাস রাখতে পারলেন না আপনি আমার উপর।(বলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে যেই বের হতে যাবো ওমনি জোবান বলে)

জোবান-তো তুমি কি আমায় এখন ঘৃণা,,,,

আমি-ওয়েট,,,জোবান আমি এই কথাগুলো বলছি বলে এটা মোটেও ভাববেন না।যে আমি আপনাকে ঘৃণা করি,,,আমি আপনাকে ঘৃণা করিনা।জোবান,,,সত্যি বলতে আমি আপনাকে ভালবাসি।কিন্তু আপনি আমার সাথে এতদিন থেকেও এই মনের কথাটা বুঝলেন না।(বলে চলে এলাম)

লিনা-কিরে,,,কাঁদছিস কেনো???

আমি-আজ খুব হালকা লাগছে।

লিনা-মানে?

আমি-আজ আমার মনের সব অভিমান আমি ঝেড়ে ফেলেছি।

লিনা-কি বলছিস তুই??

আমি-আজ আমি আমার মনের সব কষ্ট জোবান কে বলে দিয়েছি।

লিনা-ভাইয়া ছবিগুলো বিশ্বাস করেছিলো??

আমি-জানিনা,,,কিন্তু আমার এই কথাগুলো শুনেও যদি উনি আমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে কিছু করার নেই।

লিনা-চল বাড়ী চল।

আমি-আজকে নিজের বাড়ী যেতে ইচ্ছে করছে।

লিনা-কি বলিস না বলিস।

আমি-হুম,,,তুই যাবি আমার সাথে??

লিনা-তুই যাচ্ছিস যাতে আমিও যাবো।

আমি-তো চল।

আমি আর লিনা রিকশা করে বাড়ীর পথে রওনা দিলাম।আজ এতদিন পর নিজের বাড়ী যাচ্ছি খুব খুশি লাগছে।আজ মন খুলে বাবা মায়ের সাথে কথা বলবো।বিয়ের দিন থেকে আজ পর্যন্ত মা বাবার সাথে তেমন ভালো করে কথাই বলিনি।অনেকক্ষণ পর আমরা আমাদের বাড়ী পৌঁছালাম।আমি আমার বাড়ীর সামনে এসে নেমে যাই।

লিনা-শুন,,,আমি তোকে রাতে কল করবো।

আমি-হুম।

লিনা-এই আশিক কি সেই আশিক এটা নিয়ে বিবেচনা করবো।

আমি-ঠিক আছে।

লিনা-শুন,,একদম মন খারাপ করিস না ওই বিষয় নিয়ে।সবার সাথে নরমাল ভাবে কথা বলবি।

আমি-আচ্ছা বাবা।

লিনা-শুন,,,আরেকটা কথা।এতদিন পর এসেছিস যখন কিছুদিন ভার্সিটিতে যাসনা আমিও যাবোনা।

আমি-ঠিক বলেছিস,,,এসেছি যখন কিছুদিন থেকে যাবো।

লিনা-পরে একসাথে ওখানে যাবে।

আমি-আচ্ছা সাবধানে যাস।

লিনা-হুম(বলে চলে গেলো)

আমি বাড়ীর সদর দরজার সামনে এসে কলিংবেল বাজালাম।প্রথম কলিংবেল এ কেও খুলেনি এবার রেগে কলিংবেলে পাঁচ বার চাপ দিলাম।এবার গিয়ে কে জানি দরজা খুলতে আসলো।যে দরজা খুললো সে আমাকে এই অসময়ে দেখে হা করে তাকিয়ে রইল।

বাবা-তুই???

আমি-আসসালামু আলাইকুম,,,হুম আমি।

বাবা-ওয়ালাইকুম আসসালাম,,,তুই এখানে??

আমি-বিয়ে দিয়েছো বলে কি আসতে পারবোনা।

বাবা-না,,,আমি এটা বলিনি।(বলে সরে গেলো)

আমি-শিরিন আর শান্ত কই??

বাবা-এসেই ওদের কথা,,,মায়ের কথা জিজ্ঞেস করছিস না যে।

আমি-কারণ আমি এখন সোজা মায়ের কাছে যাব।

বাবা-আচ্ছা দে,,,তোর লাকেজ দে।আরে তোর লাকেজ কই??

আমি-লাকেজ আনার কি দরকার এখানে তো আমার জামা কাপড় আছেই।

বাবা-আচ্ছা যা,,,তোর মায়ের কাছে যা।তোর মা ছাদে গাছে পানি দিচ্ছে আমি বাবা যাই(বলে যেতে নিলো)

আমি-বাবা,,,

বাবা-হুম,,

আমি-তোমার কি শরীল খারাপ???

বাবা-আরে না।

আমি-মিথ্যা কেনো বলছো।

বাবা-তুই এখনো বুঝে যাস আমার শরীল খারাপ হলে।

আমি-বিয়ে দিয়েছো বলে এতও পর ভেবো না।আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি।(বলে ছাদে চলে এলাম।)

আমি ছাদে এসে দেখি মা গাছে পানি দিচ্ছে।আমি এবার একটু দুষ্ট বুদ্ধি নিয়ে মায়ের পেছনে গিয়ে বাও বলে চিৎকার দিলাম।মা ভয় একটু লাফিয়ে উঠে।আমি তো এটা দেখে হাসতে শুরু করলাম।আসলে বিয়ের আগে বমি মায়ের সাথে এরকম করলাম।

মা-তুই???

আমি-হুম আমি।(মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে)

মা-তুই কখন এলি।

আমি-মাত্র।

মা-তো এসেই ছাদে চলে এলি।যা হাত মুখ ধুয়ে আয় তোকে খাবার দি।

আমি-আচ্ছা যাচ্ছি বকোনা তো।

মা-এই তুই যাবি নাকি আমি তোকে মারবো।

আমি আর কিছু না বলে নিজের রুমে এসে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম।মা খাবার দিলে আমি খেয়ে দেয়ে মায়ের সাথে গল্প জুরে দিই।এখানে এসে কিছুক্ষণ আগের কথা আমি যেনো ভুলেই গেছি।মায়ের সাথে গল্প করার সময় মা হুট করে বলে উঠে।

মা-ওই,,বিয়ের তো ছয় মাস হতে চললো।তা এখন একটা বাচ্চা নিলেই তো পারিস।

আমি-উপপ,,,এসব প্যাচাল রাখো তো।

মা-এটা প্যাচাল না,,,বিয়ে হয়েছে বাচ্চা কি নিবি না।

আমি-নিবো,,বাট এত তাড়াতাড়ি।

মা-একটা বাচ্চা হলে স্বামী স্ত্রীর মাঝে কোনো ক্রোধ থাকেনা।

আমি-আমি তো এখন বাচ্চা না নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

মা-কি??

আমি-কিছুনা।

বাড়ীতে এসে সারাদিন শুধু টৈ টৈ করলাম।ফোনটাও সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম।আর এদিকে যে একজন বারবার ফোন দিচ্ছে সেটা যেনো মাথাতেই নেই।রাতে যখন লিনার সাথে কথা বলার জন্য ফোন নিলাম তখন দেখলাম জোবানের অনেক গুলো কল।এতগুলো কল দেখে আমি একটু গাবড়ে গেলাম কিন্তু ওনাকে আর ফোন দিইনি।লিনার সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে গেলাম।যখন সকালে ঘুম থেকে উঠলাম তখন ভুত দেখার মতে চমকে উঠলাম।

-চলবে।