#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_২৭_শেষ
#Jechi_Jahan
আমি পেটে ব্যাথা নিয়ে জেরিন আপুকে ডাকতে শুরু করি।কিছুক্ষণ পর জেরিন আপু দৌঁড়ে এসে আমাকে এ অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে যায়।আপু একা কি করবে বুঝতে পারছে না।আপু দৌঁড়ে আবার বাবার কাছে যায়।আর এদিকে আমি পেটে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে যাচ্ছি।জোবানকে যে পাশে চাইবো তার ও কোনো উপায় নেই।জোবান আজকে দুপুরেই একটা কল আসায় বেরিয়ে গেছে।এদিকে আপু আর একটা সারভেন্ট আবার রুমে এসে আমাকে ধরে নিচে নিয়ে আসে।বাবা সহ হতভম্ব হয়ে আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে আর হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
————-
জোবান-এভাবে ডাকার মানে কি???(রেগে)
তিশা-সরি।
জোবান-ওয়াট সরি!!!তুমি জানো,,,শিশিরের প্রেগন্যান্সির পর থেকে আমি রোজ দুপুরেই বাড়িতে আসতাম।কারণ হলো সকাল থেকে না পারি অন্তত দুপুর থেকে শিশিরের খেয়ালটা রাখি।আজ দুপুরে ওভাবে চলে আসায় শিশির কি ভাববে বলো তো।
তিশা-আমি সত্যি দুঃখিত জোবান।আসলে আমি না তোমাকে ডাকতাম না।কিন্তু আমার করা অপরাধ গুলো যেনো আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।আমি ক্ষমা চাওয়ার জন্য তোমাকে এখানে ডেকেছি।
জোবান-এই সামান্য কারণে তুমি,,,
আকিদ-এটা সামান্য কারণ নয় জোবান।এখানে তিশা যেমন অপরাধী তেমন আমিও অপরাধী।আমি তখন জানতাম তিশার সাথে তোমার রিলেশন ছিল।কিন্তু আমি তাও ওকে প্রপোজ করি আর এমন ভাবে করি যে ও দোটানায় পড়ে যায়।না পারছিল তোমাকে ছাড়তে আর না পারছিল আমাকে রিজেক্ট করতে।কিন্তু আমার পাগলামি দেখে ও নিজেও আমাকে ভালোবেসে ফেলে আর এ জন্য তোমাকেও ছেড়ে দেয়।
জোবান-তোমরা এসব কেনো তুলছো বলো তো।তিশার আমাকে ছেড়ে যাওয়া নিয়ে আমার চার বছর আগে আপসোস হয়েছিল।কিন্তু এখন আমার কোনো আপসোস হয়না বরং খুশি লাগে।যে তিশা যদি আমাকে না ছাড়তো তাহলে হয়তো আমি শিশিরকে পেতাম না।
তিশা-শিশির আসলেই খুব লাকি,,,নাহলে তোমাকে পায় কিভাবে।যাই হোক,,,জোবান আমি চার বছর আগের জন্য আর এতোদিন করা ভুলের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
জোবান-আমার তোমার উপর কোনো অভিযোগ নেই।তো তুমি এসব নিয়ে চিন্তা না করে নিজের সংসার এর দিকে নজর দিও।
তিশা-হুম,,,কিন্তু আজ আমরা এখানে একা ক্ষমা চাইতে আসিনি জোবান।আশিক ও এসেছে আমাদের সাথে।
জোবান-আশিক মানে তোমার ভাই।
তিশা-হুম তুমি দেখেছিলে।
জোবান-কত আগে দেখেছিলাম চেহারা টা ও ভুলে গেছি।
তিশা-হুম,,,ও আসছে তুমি আর একটু ওয়েট করো।
কিছুক্ষণ পরঃ-
আশিক-আপু আমি এসে গেছি।
তিশা-হুম,,,জোবান এই আশিক।
জোবান-তুমি আশিক,,, তুমি না শিশিরের সিনিয়র।
আশিক-আমি শিশিরের সিনিয়র+তিশার ছোট ভাই।
জোবান-তো তুমি আমার কাছে কি জন্য ক্ষমা চাইবে।
আশিক-আসলে আমি অন্যায় গুলো করেছি শিশিরের সাথে।ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ায় ও আমাকে ক্ষমা করেনি।এখন কোনো দিশদিশা না পেয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।
জোবান-কি করেছো তুমি শিশিরের সাথে???
আশিক এবার শুরু থেকে সব বলতে লাগলো।ওকে প্রথম দেখায় পছন্দ করা,ওই ছবি গুলো পাঠানো,তিশাকে জোবানের সাথে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এসব বলেই ও থামলো আর ক্ষমা চাইলো।
জোবান-তুমি তো তিশার থেকেও খারাপ।জানো তোমার ওই ছবিগুলোর জন্য আমি শিশিরকে কত কষ্ট দিয়েছি।ওর সাথে কথা বলতাম না,ওকে সময় দিতাম না বুঝতে পারছো ওকে কত কষ্ট দিয়েছি।
আশিক-তখন মাথায় এতকিছু আসেনি,,,যেটা ভালো বুঝেছি সেটাই করেছি।আই এম সরি।
জোবান-ঠিক আছে আমি এখন আসি।আর তোমাদের আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।কিন্তু একটা কথা আমাদের সাথে যেটা করেছো সেটা আর অন্য কারো সাথে করো না।(বলেই চলে গেলো)
—————
হাসপাতালে যেনো একটা খুশির রোল পড়ে গেছে।সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চাটাকে নিয়ে সবার খুশির যেন শেষ নেই।শিশির আজকে একটা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে।মেয়েকে জন্ম দেওয়ার পর পরই ও অজ্ঞান হয়ে গেছিলো।এই কিছুক্ষণ হলো ও চোখ খুলেছে।
শিরিন-আপু,,,(দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)
আমি-হুম শিরিন আয়।
শিরিন-বলছি বাবুকে তো তুমি কোলেই নাওনি।
আমি-পরে নিবো,,,এখন শরীল দুর্বল লাগছে।
শিরিন-হুম এখন এজটু বিশ্রাম নাও।
আমি-শিরিন,,,ওর বাবা এসেছে???
শিরিন-নারে আপু,,,আমরা সবাই ভাইয়াকে ফোন দিয়েছি কিন্তু ভাইয়া ফোনই ধরছে না।হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত আছে তুই চিন্তা করিসনা।
আমি-চিন্তা তো হচ্ছে রে,,,আমার প্রেগন্যান্সির পর থেকে কোনোদিন তো দুপুরে বের হয়না।আর আজকে তো একটা ফোন আসায় বেরিয়েছিল।
শিরিন-আরে কোনোদিন বের হয়না বলে কি আজ বের হবেনা নাকি।নিশ্চয়ই দরকারি ফোন ছিলো।
আমি-হয়তো।
শিরিন-তুই জানিস,,,বাবুকে নিয়ে সবাই এত খুশি যে কি বলবো।ওর দাদা তো ওকে কোলে নিয়েই বসে ছিল কাওকে দিচ্ছিলই না।
আমি-😊😊😊।
প্রায় রাতের দিকে জোবান তাড়াহুড়ো করে হাসপাতালে আসে।জোবানকে হাসপাতালে দেখে ওর বাবা গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরে।জোবান ও ওর বাবাকে ধরে হেসে দেয়।জোবান এবার ওর বাবার সাথে শিশিরের রুমের সামনে যায়।রুমের সামনে যেতে না যেতেই জেরিন আর শিরিন ওকে ঘিরে ধরে।
জেরিন-ভাইয়া তোমার কি বোধ বুদ্ধি নেই??
জোবান-কেনো কি হয়েছে???
জেরিন-কি হয়েছে মানে,,,আরে প্রথম বার বাবা হচ্ছো আর তুমি এত লেট করে এলে।তার উপর এত বার ফোন দিলাম ফোনটাও ধরছিলে না।
জোবান-আমি একটা কাজে গিয়েছিলাম আর ফোনটা সাইলেন্ট ছিলো তাই ধরতে পারিনি।কিছুক্ষণ আগে বাড়িতে গেলে সার্ভেন্ট বলে শিশিরের পেইন উঠায় তোরা নাকি ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিস।তাই আমি তাড়াহুড়ো করেই ওকে হাসপাতালে চলে এসেছি।
শিরিন-হয়েছে,,,এবার আপনি আপনার বউয়ের কাছে যান।আপনার বউ আপনার জন্য সেই তখন থেকে চিন্তা করছিলো।
জোবান-আমার ছেলে নাকি মেয়ে,,,
শান্ত-সেটা আপনি ভেতরে গেলেই দেখতে পারবেন এখন যান।(শিরিনের পাশে দাঁড়িয়ে)
জোবান-হুম।
জোবান শিশিরের কাছে গিয়ে দেখে ওকে ওর আব্বু খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।জোবান ধীরে ধীরে ওদের কাছে যেতেই শিশিরের বাবা ওখান থেকে উঠে চলে যায়।
জোবান-এখন কেমন আছো তুমি??
আমি-আপনার না জানলেও চলবে।
জোবান-সরি,,,একটা দরকারি কাজ ছিলো।
আমি-আমার থেকেও দরকারি ছিলো।
জোবান-আমি কোনোদিন তোমাকে ফেলে ওভাবে গেছি বলো।সত্যি দরকারি ফোন ছিলো।
আমি-কে ফোন দিয়েছিল যে যেতেই হলো।
জোবান-তিশা ফোন দিয়েছিল।
আমি-আপনি,,,
জোবান-আমার পুরো কথাটা শুনো,,,তিশা আর আশিক ওদের করা অপরাধের জন্য আমার কাছে ক্ষমা চাইতে চেয়েছিলো তাই ডেকেছে।
আমি-আশিক ও???
জোবান-হুম,,,তিশার থেকে ও বেশি অনুতপ্ত।
আমি-যাই হোক,,,আপনার কন্যাকে দেখবেন না??
জোবান-মেয়ে হয়েছে??(খুশি হয়ে)
আমি-ওই,,,(পাশের খাটে দেখিয়ে)
জোবান আর দেরি না করে উঠে নিজের মেয়েকে কোলে নিলো।মেয়ের দিকে তাকিয়ে ওর যেনো চোখই সরছে না।ও মেয়েকে কোলে নিয়ে শিশিরের পাশে বসলো।জোবানের চোখে পানি চিকচিক করছে।কারণ মেয়েটা জোবানের মায়ের মত দেখতে হয়েছে।জোবান মেয়ের কপালে একটা চুমু দেয়।
আমি-জানেন ওকে দেখে বাবা কি বলেছে।
জোবান-কি বলেছে??
আমি-ও নাকি দেখতে ওর দাদুর মতো হয়েছে।
জোবান-হুম।
আমি-কিভাবে??
জোবান-আমার মায়ের গায়ের রং ছিলো উজ্জ্বল শ্যমলা এখন ওর গায়ের রং ও উজ্জ্বল শ্যামলা।আর আমার মায়ের চেহারার সাথে ওর চেহারার খুব মিল।
আমি-হুম।
জোবান-ওর নাম চয়েস করেছো??
আমি-আপনি করুন।
জোবান-ওর নাম,,,,,,মারিয়া রহমান রাখবো।
আমি-সুন্দর।
জোবান-দেখতে হবেনা চয়েসটা কার???
আমি-হুম।
সেদিন এর কিছুদিন পরই শিশির আর মারিয়াকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।ওখানে ওদের মেয়ের আকিকা ও হয়।আকিকা তে সুমন,তিশা,আকিব,আশিকও আসে।তিশা আর আশিক সেদিনও ওদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়।মারিয়ার জন্মের পর ওর দাদা আর ইংল্যান্ড এ যায়নি এখন ওর দাদা ওদের সাথেই থাকে।বলতে গেলে জোবার আর শিশির এখন তাদের মেয়ে মারিয়া কে নিয়ে সুখেই আছে।
–সমাপ্ত,,,