তোর অনুরাগে পর্ব-১৪

0
253

#তোর অনুরাগে
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
#পর্ব_১৪
______________

আকাশে ঘন কালো মেঘ জমা হয়েছে, যেকোন সময়ে বৃষ্টি নামবে। বলতে বলতেই বৃটি নেমে আসলো। মাহির তাড়াতাড়ি করে একটা ছাউনির নিচে দাঁড়ালো। বৃষ্টির পানি শরীরে লাগার জন্য মাহিরের শার্ট ভিজে গেছে, আর দেখতেই আরো কিউট লাগছে। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো মেয়ে মাহিরকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে,তারা দুজন একপাশে আসার জন্য উদ্ধৃত হতেই হুট করেই কোথা থেকে একটা মেয়ে মাহিরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো।

মাহির চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে পাশে তাকাতেই চমকে উঠলো। মারিয়া দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশে, পরনে স্কাই ব্লু রঙের একটা শাড়ি,চুলগুলো খোলা আছে, বৃষ্টির পানি ওর গায়েও পড়ায় পানিগুলো ঝাড়ছে,,মাহিরের চোখে মারিয়াকে অপরূপ সুন্দর লাগছে। মাহির তার দৃষ্টি সংযত করে বললোঃ তুমি এইভাবে আমার গা ঘেষে দাঁড়ালে কেন?

ওই পাশের মেয়েগুলো মাহির আর মারিয়ার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। মাহিরের কথা শুনে ওদের মুখে হাসি ফুটে উঠল।প্রথম মেয়েটাকে মারিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললোঃ এত গায়ে পড়া মেয়ে দেখিনা বাবা,, কি মেয়েরে বাবা অন্য‌ একটা ছেলের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।

দ্বিতীয় মেয়েটাঃ সত্যি রে এখন কার মেয়েরা সব নির্লজ্জ।দ্যাখ এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

মারিয়া রাগী একটা লুক নিয়ে ওদের দিকে তাকাতে গিয়েও তাকালো না। চুপচাপ ওখান থেকে সরে দাঁড়ালো। মাহির তো রেগে যাচ্ছে মেয়ে গুলোর কথা শুনে। মারিয়াকে চলে যেতে দেখেই মেয়েগুলো বাঁকা হাসলো। মারিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,,মনটা খারাপ হয়ে গেছে নিমেষেই।

হুট করেই মারিয়ার কোমড় ধরে ওকে কেউ টেনে নিলো। মারিয়া হকচকিয়ে গিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো মাহির। মারিয়া আর মাহির অনেকটাই কাছাকাছি। মাহিরের বুকের সাথে ওর হাত আর পিঠ লেগে আছে। মারিয়া পাশে তাকাতেই বুঝতে পারলো মাহিরের এমন ব্যবহারের কারন,,দুটো ছেলে মারিয়ার দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। মারিয়ার মুখে হাসি ফুটে উঠল। পেছনের মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলো তাদের মুখগুলো কালো হয়ে গেছে।

মাহিরঃ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো,একদম নড়াচড়া করবে না।

মারিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। কিছুক্ষন পরে বৃষ্টি থেমে যাবার কারনে, মাহির মারিয়াকে চলে যেতে বললো।

অন্যদিকে…

আদ্রিকার টেনশান বেড়েই যাচ্ছে। ক্রমাগত মনের ভেতরে ভয় জমতে শুরু করেছে। ইচ্ছা করছে পানির সাথে নিজের সমস্ত কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে নিতে। কিছু একটা হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছে আদ্রির।

আদ্রির ফোনে একটা ফোন আসে। আদ্রি ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা পুরুষ কন্ঠস্বর ভেসে আসলোঃ কি ভেবেছিলেন আমি মরে গেছি। এতটাও সহজ না আমাকে মারা‌ আমি আসছি তোমার জীবনটাকে নরকে পরিণত করার জন্য তৈরি থেকো। সিক্রেট অফিসার আদ্রি রায়জাদা।

ফোনটা কেটে দিলো। আদ্রির বুঝতে অসুবিধা হলো না ফোনের ওপারের মানুষটা নিরব। নিরব বেঁচে আছে,তারমানে আদ্রিকে ধরে ফেলেছে। এবার কি হবে।আদ্রির চোখে মুখে বিস্ময় ফুটে উঠল।

বিকালের দিকে বৃষ্টিপাত থেমে গেছে। আদ্রি আহসানের জন্য খাবার রেডি করছে,কলিং বেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলে চমকে উঠলো।

নূপুর, মাহিয়া,মারিয়া, অর্ক সবাই এসেছে। আদ্রি ওদের জড়িয়ে ধরলো। আহসানের মা ওদের দেখে আদ্রিকে আর কিছুই করতে দিলেন না।‌ওদের সাথে গল্প করার জন্য পাঠিয়ে দিলেন।

আদ্রি আহসানের ঘরে ওদের নিয়ে যাবে,অর্ক বারন করলো।‌

অর্কঃ বোনু তোর সাথে কিছু কথা আছে

অর্কের কথার মানে আদ্রি খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো। আদ্রি অর্কের কথা মতো আলাদা একটা ঘরে নিয়ে আসলো। আদ্রি সকলে একনজর দেখে নিলো,সকলের মুখেই বিস্ময়, হতাশা।

আদ্রিঃ বলো।

নুপূরঃ আদ্রি আমরা যে খবরটা পেলাম সেটা কি সত্যি। নিরব বেঁচে আছে?

আদ্রি মাথা নাড়লো‌ যার অর্থ হ্যা।সকলেই স্বাভাবিক, তবে মুখগুলো ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।

আদ্রি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললোঃ কেউ আমাদের সাথে প্রতারনা করছে,বেইমানি করছে।

আদ্রির রাগটা তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। অর্ক আদ্রিকে শান্ত হতে বললো, এটা ওর শশুড় বাড়ি এখানে সিনক্রিয়েট করা ঠিক হবে না। আদ্রি অর্কের কথা শুনে নিজেকে শান্ত রাখার অনেক চেষ্টা করছে।

মাহিয়াঃ আদ্রি সবকিছু আমাদের বল না হলে আমরা কিভাবে কি করবো।

আদ্রিঃ আমি অনেকদিন থেকেই আন্দাজ করেছিলাম কেউ একজন পেছন থেকে ছুঁড়ি মারার ব্যবস্থা করছে। কিন্তু সেটা যে নিরব সেটা বুঝতে পারি নি। যেদিন আমাদের বিয়ে হয় সেইদিন ও হুমকি দেওয়া কিছু মেসেজ আমার কাছে আসে। তাই আমি বিয়েতে না করে দিই,আমি চাই নি আমার জন্য আহসানের কোনো অসুবিধা হোক,, কিন্তু সেইদিনই আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। কিছুদিন পর আহসানের কার এক্সিডেন্ট করে,প্রথমে এটাকে নরমাল মনে হলেও আহসানের কাছে সবটা শুনে মোটেও নরমাল মনে হয়নি। কেউ একজন ইচ্ছা করে এইসব করাই আর সেই মানুষটা নিরব সেটা আজকে ওর ফোন আসাতেই বুঝে যায়।

সবকিছু শুনে সবাই চুপ করে যায়। আদ্রি কিছুটা সময় থেমে আবার বলতে শুরু করলঃ আমার পরিচয় কেউ ইচ্ছা করে নিরবকে দিয়েছে। নাহলে কখনোই নিরবের সাধ্য ছিলো না আদ্রিকা রায়হান কে আদ্রি রায়জাদা ভাবার।

সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে কে সত্যি টা জানালো নিরবকে।

অর্কঃ এবার প্ল্যান কি?

আদ্রি বাঁকা হাসলো। বাকিরাও আদ্রির হাসির দিকে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিলো। সবাই আহসানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়।

রাত্রিবেলা…

আদ্রি আহসানের বিছানা করছে,হুট করেই আহসান আদ্রিকে নিজের বুকের উপরে ফেললো। আদ্রি তো আচমকা হকচকিয়ে গেছে। আহসান আদ্রির মুখে ফুক দিলো হালকা করে, আদ্রি কেঁপে উঠলো আহসানের কান্ডে। আহসান আদ্রিকার কানের কাছে ফিসফিস করে বললোঃ আমার বউটা সবকিছুই করুক,তবে তার শরীরের দিকে খেয়াল রেখে। কোনো কিছু করতে গিয়ে তার শরীরের কোনোরকম ক্ষতি না হয়,, আর যদি হয় সেটা আমি কখনোই মানবো না।

আদ্রি অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে গেছে। আদ্রির বুঝতে পারছে না আহসান কি নিয়ে কথা বলছে।

আহসানঃ বউ উঠো। বুকে লাগছে।

আদ্রি তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেলো। কিন্তু আহসানের বলা বউ শব্দটা বুকটা ধ্বক করে উঠলো।

পরেরদিন…

হেড সিক্রেট অফিসারের সামনে বসে আছে আদ্রি। রাগে মুখটা লাল হয়ে আছে। চোখগুলো গাঁজাখোর দের মতো লাগছে,, আদ্রিকে এতটা বিধ্বংস দেখে চমকে উঠলো, জামাল হোসেন।

জামালঃ কি হয়েছে আদ্রি বেটা।

আদ্রি ওনাকে সবটা বললেন। আদ্রিকে জামাল হোসেন খুবই ভালোবাসেন।মেয়ের মতো স্নেহ করেন।‌

জামালঃ তোমার কি মনে হয় কে করেছে এই কাজটা।

আদ্রিঃ এটা তো ঠিক বলতে পারবো না। সবার উপরেই সন্দেহ হচ্ছে,,বাকিটা আপনাকেই সামলাতে হবে।

জামালঃ ওকে।

আদ্রি ওর সব প্ল্যান বললো। জামাল হোসেন হাসলেন। আদ্রিকে এমনি এমনি এতটা পছন্দ করেন, আদ্রির বুদ্ধির পরিচয় উনি বার বার পান।

আদ্রি জামাল হোসেন কে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন।‌ জামাল হোসেন আদ্রির কথা মতো কাজ করতে চলে গেলেন।

১সপ্তাহ পর….

আদ্রি আহসানের সাথে কথা বলছিলো, নীলির ছেলে হয়েছে। সকলেই খুব খুশি। আহসান আদ্রিকে খুশি হতে দেখে বললোঃ ও বউ নীলির তো ছেলে হয়ে গেলো আমাদের কবে হবে।

আদ্রি চোখ বড়ো বড়ো করে আহসানের দিকে তাকালো।

আদ্রিঃ তোমার শরীর ঠিক কাছে তো।

আহসান কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললোঃ আমার বউ আমাকে পাগল ভাবছে। এই দিনটাও দেখার ছিলো আমার।

আদ্রিঃ সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছো তুমি।

আহসানঃ বন্ধুদের বিয়ে হয়ে বাচ্চা হয়ে গেলো আর আমার বউ বলছে আমি পাগল হয়ে গেছি।

আদ্রিঃ বেশি নাটক করো না, এখনো কারোরই বিয়ে হয়নি পর্যন্ত।

আহসানঃ আমার তো হয়েছে।

আদ্রিঃ তাতে কি চুপচাপ থাকো,নাহলে মাথায় বাড়ি মারবো।

আহসান বিরবির করে বললোঃ কি গুন্ডী বউ রে বাবা।

আদ্রিঃ এই কি বললে।

আহসান ইনোসেন্ট ফেস করে বললোঃ কিছু না বউ।

আদ্রি আর কিছু বললো না। আহসানের এই বউ শব্দটা বুকটা এসে লাগে আদ্রির। আহসান আদ্রিকে সবসময় বউ বউ বলে। আদ্রির খুব ভালো লাগে।

আহসানঃ বউ অর্ক ফোন করেছে।

আদ্রি ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে কথাটা শুনে চমকে হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।

আহসানঃ কি হয়েছে বউ।

আদ্রি কিছু বলার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

#চলবে…