তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় পর্ব-১৪+১৫

0
2809

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_১৪
.. বেলার মনের মধ্যে চলছে তুমুল অশান্তি। অনেক প্রশ্নের উত্তর। যে প্রশ্ন গুলো জট পাকিয়ে আছে মাথার মধ্যে যেখান থেকে কিছুতেই বেরোতে পারছে না। বেলার যেনো সব কিছু তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আর সব থেকে বড় কথা ও আসতে আসতে আবার ও সাঁঝ এর প্রতি দুর্বল হতে শুরু করেছে। আবার ও সাঁঝ এর আসক্তির মাঝে ডুবে যাচ্ছে। একটু একটু করে আবার সাঁঝ এর মায়াতে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত সাঁঝ এর ভালোবাসা নামক অত্যাচার। তার কেয়ার। তার জন্য অতিরিক্ত চিন্তা। সব কিছু ব্যক্ত করছে যে সাঁঝ তাকে ভালোবাসে। সাঁঝ তার প্রতি আসক্ত। কিন্তু এটা কি করে হতে পারে সাঁঝ তো আমাকে ভালোবাসতে পারে না। সে তো দিশা কে ভালোবাসে। কিন্তু। হ্যাঁ এই সব কিছুর মাঝে একটা বড় কিন্তু চলে আসছে। যেটা আমি চেয়ে ও সলভ করতে পারছি না। না পারছি সাঁঝ এর থেকে দূরে সরে যেতে আর না পারছি আমি সাঁঝ এর প্রতি দুর্বল হতে থেকে আটকাতে। না না এটা ঠিক না। আমাকে সাঁঝ এর থেকে দূরে থাকতে। কোনো ভাবে আর আমি সাঁঝ এর আসক্তির মাঝে ডুবে যেতে পারি না কিছুতেই না।
.
–“এবার আমি এমন কিছু করব যে তুমি নিজেই আমার থেকে দূরে চলে যাবে মিস্টার সাঁঝ। বেলা বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

——————–

আজ জে কে মিউজিক অ্যান্ড ডান্স ইন্ডাস্ট্রি অফ একাডেমী লাইভ কনসার্ট প্রোগ্রাম। পাঁচ টা গ্রুপ এর সিঙ্গার আর ডান্সারদের নিয়ে হবে এই লাইভ কনসার্ট। তবে বেলাদের রেনবো ব্র্যান্ড হিসাবে পরিচিত। তারা কোনো গ্রুপ এর সঙ্গে যুক্ত নয়। তারা তাদের ইউনিভার্সিটি থেকে এখন যুক্ত আছে।
এটা একটা বড় লাইভ শো। এই কোম্পানির থেকে প্রোগ্রাম করা খুব বড় ব্যাপার।
আজ এখানে গেস্ট হিসাবে আসছে ন্যাশনাল ট্রেজার দিশা মির্জা। আরো একজন স্পেশাল গেস্ট আসছে যার নাম ও এখন প্রকাশিত হয়নি।
.
–“ইয়ার বেলা ।আজ আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এই একাডেমী তে পারফর্ম করার পর আমাদের ব্র্যান্ড এর কিছু সু গতি হবে। আর আমরা আমাদের অনাথ আশ্রম এর জন্য আরো ভালো কিছু করতে পারবো। বেদ বেশ উৎফুল্ল নিয়ে বলে ওঠে।
.
–“একদম তাই । এমনিতে ও আমাদের ব্র্যান্ড এর নাম বেশ। আর আজকের এই কনসার্টে আমাদের পপুলারিটি আরো বাড়বে। আর তার পর আমরা আমাদের বাচ্চাদের জন্য আরো ভালো কিছু করতে পারবো। ওম বলে ওঠে।
.
–” ইয়ার আজকে এখানে ওই মুখপুড়ি দিশা টা ও আসছে গেস্ট হিসাবে। রুহি বলে ওঠে।
.
–“হুম আরো একজন স্পেশাল গেস্ট আসছে। তার নাম এখনও প্রকাশিত নয়। নিশান বলে ওঠে।
.
–“সাঁঝ রওশন । বেলা সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–” হওও । তুই কি করে জানলি। রুহি বলে ওঠে,
.
–“ফোন করেছে ইডিয়ট। বেলা তার ফোনের দিকে ইশারা করে বলে ওঠে।
.
–“ওহ আমরা ভেবেছিলাম হয়তো সত্যি জিজ আসছে। সব কোটা গোমরামুখ করে বলে ওঠে।
.
. বেলা কোনো কথা না বলে রহস্যময় একটা হাসি দেয়। যার অর্থ কেউ বোঝে না। সব কোটা গ্রিন রুমে বসে রেডি হচ্ছে তাদের প্রোগ্রাম আরো এক ঘন্টা পরে শুরু হবে। বেলার ফোন হঠাৎ একটা নোটিফিকেশন আসে। বেলা ফোন ওপেন করতে স্তব্ধ হয়ে যায়। মুখে ফুটে ওঠে একটা তাচ্ছিল্য ভরা হাসি। একটা আননোন নাম্বার থেকে এসেছে মেসেজ টা। সেদিন এর রুমে সাঁঝ আর তানভী কিছু ক্লোজ ছবি। যেখানে তানভী পুরো উন্মুক্ত হয়ে সাঁঝ এর ওপর ঝুঁকে আছে । যার জন্য সাঁঝ এর মুখ এর প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে না। এটা দেখেই বেলার চোখ গুলো ছলছল করছে। বেলার মনে ভয়ানক ঝড় উঠে গেছে। হ্যাঁ সে একদম ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে সরে যাবে সাঁঝ এর জীবন থেকে। আবারও একই দৃশ্য দেখতে হল তাকে আগে এই জায়গা ছিল দিশা আর আজ তানভী। চোখের সামনে আবার ও সেই বিষাক্ত স্মৃতি টা ভেসে আসছে। বেলা কিছুতে নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। সেদিন ও এই একই অবস্থা হয়েছিলো বেলার।

——————-
স্মৃতি পট…

বেলার সাঁঝ এর প্রতি আসক্তি টা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এস আর গ্রুপে জয়েন করার পর সাঁঝ এর সাথে তার প্রায় কথা হয়। প্রায় সময়ে সে সাঁঝ কে তার বাইক করে ড্রপ করে। সে আস্তে আস্তে সাঁঝ এর সাথে অনেকটাই সহজ হতে শুরু করেছে প্রায় সময়ে দেখা যায় তাদের দুজন কে। একেই পাবলিক উত্তপ্ত হয়েছিলো বেলার সাঁঝ এর সাথে ফটো দেখে আর তার সাথে বেলার লেখা ক্যাপশন টা ও গদের উপর বিষফোড়ার মত কাজ করছে এখন। মিডিয়া পাবলিক ভেবে যাচ্ছে নিশ্চয়ই বেলার সাথে সাঁঝ এর কোনো রিলেশন আছে। নাহলে যে সাঁঝ রওশন সব মেয়ের থেকে দূরে থাকে সেই এখন একটা মেয়ের সাথে ঘুরে কেনো।
.
. এদিকে বেলার পাগলামি টা ও দিন দিন বেড়ে চলেছে। সে এখন জানে সে খুব গভীর ভাবে সাঁঝ এর মাঝে ডুবে গেছে যেখান থেকে একমাত্র মৃত্যু তাকে টেনে বের করতে পারে। সে গভীর ভাবে ভালোবাসে সাঁঝ কে। চার মাস অতিক্রম করে ফেলেছে এস.আর গ্রুপ আর তার জীবনে সাঁঝ এর আগমন চারমাস আঠাশ দিন।
.
. আজ এস আর গ্রুপ এর থেকে তাদের একটা বড় লাইভ কনসার্ট আছে। এস আর গ্রুপ জয়েন করার পরে অনেক লাইভ প্রোগ্রাম করেছে। তবে আজকের টা সব থেকে বড় কনসার্ট। তাই প্রস্তুতির সাথে সাথে উত্তেজনাতে ভর পুর হয়ে আছে বেলা বেদ ওম রুহি নিশান।
.
–“বেলা আজকে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। নিশান বলে ওঠে।
.
–“একদম তাই আজ আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ এর দোর গোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছি বেদ বলে ওঠে।
.
–“ইয়ার বেলা তুই কবে প্রোপোজ করছিস সাঁঝ কে । রুহি বলে ওঠে।
.
–” আজকে প্রোগ্রাম এর পর। বেলা লজ্জা নিয়ে বলে ওঠে।
.
–” ওরে ওরে আমাদের বেলা লজ্জা পাচ্ছে। সবাই মিলে বেলা কে ক্ষ্যাপাতে থাকে।
.
. গ্রিন রুমে বসে সবাই যখন রেডি আর ভর উত্তেজনা নিয়ে মেতে আছে। তখন বেলার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। বেলা ফোন নিয়ে দেখতে তার পায়ের থেকে মাটি সরে যায়। কোনো কথা বলার মত অবস্থায় নেই আর। সব কিছু তার কাছে ছন্নছাড়া মনে হচ্ছে তার কাছে। তার হাত থেকে ফোন পড়ে যেতে সবাই মিলে অবাক হয়ে যায়। বেদ ফোন তুলে হাতে নিতেই তার মুখের ভাব ও পাল্টে যায় বাকিরা দেখতে তাদের অবস্থা ও এক হয়।
.
. মোবাইল এর স্ক্রিনে ভেসে আছে। দিশা আর সাঁঝ এর কিসিং সিন । যেটা তে সাঁঝ এর পিছনের অংশ দেখা যাচ্ছে আর তার সাথে মুখের একটু খানি। আর দিশা কে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সে দু হাত দিয়ে সাঁঝ এর কোট খামছে ধরে আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা পিছন থেকে তোলা। আর তার সাথে একটা ভিডিও ও আছে। যে টা তে সাঁঝ চোখ বন্ধ করে বসে আছে আর তার কোলে বসে আছে দিশা। সাঁঝ এর হাত দিশার কোমর জড়িয়ে আছে। আর দিশা তার মুখ নিয়ে সাঁঝ মুখের ওপর বুলিয়ে নিচ্ছে। এই মুহূর্তে সাঁঝ এর ড্রেস এর অবস্থা খুব করুন। শার্ট এর বোতাম গুলো অর্ধেক খোলা। আর দিশার শরীরে আছে শুধু একটা স্পোর্টস ব্রা। চুল গুলো সব আউলে আছে। তাদের এই মুহূর্তে খুব ক্লোজ লাগছে।
.
. এগুলো দেখেই সবাই অবাক হয়ে আছে একবার হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিন তো একবার বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বেলার অবস্থা খুব করুন। তার চোখ ছাপিয়ে পানি পড়ছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। ওদের সবাই কে আরো অবাক করে দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে বেদ এর হাত থেকে ফোন নিয়ে সাঁঝ কে মেসেজ টাইপ করে।
.
.সবাই বেলার এই স্টেপ দেখে আরো অবাক হয়ে গেছে। তারা একটাক বেলার দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা তার দিকে সবাই কে প্রশ্ন সূচক ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে ওঠে।
.
–“এটা আমি নিজে চোখে দেখেনি। আর এর সব কিছু পিছন থেকে নেওয়া হয়েছে। আমি সাঁঝ কে বিশ্বাস করি। তাই আজ আমি ওকে প্রোপোজ করব। বলে দেবো ওকে নিজের মনের কথা। বেলা দৃঢ় কন্ঠে বলে ওঠে। যদিও সে নিজেই জানে না তার কথা গুলো তার যুক্তি গুলো কত টা ঠিক। তার মনে ও অনেক ঝড় উঠেছে। তবুও নিজেকে শান্ত করে সাঁঝ এর সামনে নিজের মনের কথা খুলে বলার প্রচেষ্টা করছে।
.
. এদিকে বাকিরা সবাই চুপ করে আছে কোনো কথা বলছে না তারা ও চায় বেলা যেটা দেখেও দেখছে না সেটা যেনো ওর সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়।
.
. লাইভ কনসার্ট এর পর বেলা অপেক্ষা করছে সাঁঝ এর জন্য। চারিদিকে বেলা খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। সাদা পর্দা দেয়া মাঝখানে পর্দা ও লাইটিং করা তার মাঝে একটা টেবিল তার ওপর গোলাপের পাপড়ি ও শ্যাম্পেন এর বোতল ও একটা গোলাপের বুকে। খুব সুন্দর করে ডেকরেট করেছে। পাশে এক জায়গা বনফায়ার এর ব্যবস্থা করেছে। বেলা পিছন মুড়ে দাঁড়িয়ে আছে তার পরনে খুব সুন্দর একটা হোয়াইট এভিনিং গাউন।
.
–“বেলা ।
.
. বেলা তার পিছন থেকে হঠাৎ সেই পুরুষালি কন্ঠ শুনতে। যে কন্ঠে তার শরীরে শিহরন জেগে যায়. বেলা পিছন ফিরতে দেখতে পায় সাঁঝ দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখে কিছুটা বিরক্তির ছাপ।
.
–” এইসব কি এখানে কেনো ডাকলে আমাকে। সাঁঝ বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে।
.
. বেলা কোনো কথা না বলে সাঁঝ এর দিকে এগিয়ে আসে। তার মনে প্রশ্ন থাকলেও সেগুলো কে সাইড করে নিজের মনের অভিব্যক্তি জানানোর উদ্যোগ নেই।
.
–” সাঁঝ ।বেলা মৃদু ভাবে বলে ওঠে। এই প্রথম সে তার মুখে সাঁঝ এর নাম নেই।
.
–” তোমাকে আমার কিছু বলার আছে। বেলা টেবিল থেকে গোলাপের বুকে টা নিয়ে সাঁঝ সামনে ধরে হাঁটু মুড়ে নিচে বসে।
.
. বেলা কিছু বলতে নিলেই সাঁঝ হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়।
.
–“বাই এনি চান্স তুমি আমাকে এখন তোমার ভালোবাসার কথা জানাতে চাইছো না তো। ওহ মাই গড। লাইক সিরিয়াসলি। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পর বেলার সামনে এসে সজোরে বেলার গালে একটা থাপ্পড় বসায়। বেলার হাতের থেকে গোলাপের বুকে টা নিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। বেলা থাপ্পড় টা সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে। অবাক হয়ে যায় সাঁঝ এর রূপ দেখে। আসতে আসতে উঠে দাঁড়ায় বেলা। করুন চোখে সাঁঝ এর দিকে তাকায়।
.
–“তোমার সাথে দুদিন ভালো করে কথা কি বলেছি। তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেললে। তুমি এখন কিসে পড় হ্যাঁ কিসে পড়। ক্লাস ইলেভেন আর এখনই প্রেমের জুয়ারে নিজের গা ভাসিয়ে দিয়েছ। বাচ্চা একটা মেয়ে নাক টিপলে দুধ বেরিয়ে আসবে আর এখনই এই সব। সাঁঝ বেলার মুখে শক্ত করে চেপে বলে ওঠে।
.
. বেলা কোনো কথা না বলে চুপ করে তাকিয়ে আছে সাঁঝ এর মুখের দিকে যেখানে এখন রাগ দেখতে পাচ্ছে।
.
–“নিজের পড়াশোনা নিয়ে ভাবো বুঝতে পেরেছ।এই সাঁঝ কে পাওয়া অত সহজ নয়। বলেই বেলা কে ধাক্কা মেরে চলে যায়।
.
. বেলা উল্টো দিকে ঘুরে পড়ে আছে। চোখের পানিতে বন্যা বয়ে যাচ্ছে। বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে পিছন ঘুরতে যেনো তার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। সামনে পড়ে থাকা ফুল গুলোর মত। ফুল গুলো পা দিয়ে পিষে গেছে।
.
.বেলা হাঁটু মুড়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার বুক ফেটে যাচ্ছে। তার ভালোবাসার পরিণতি দেখে। ভালোবাসে না বললেই পারতো। এই ভাবে তার দেয়া বুকে টা কে পা দিয়ে পিষে দিতে পারলো। কিছুক্ষণ পর বেদ নিশান রুহি ওম এসে বেলা কে জড়িয়ে নেয়। বেলা এবার উচ্চস্বরে কেঁদে ওঠে।
.
. পরের দিন বেলার জন্য সবাই মিলে এস আর গ্রুপ এর সাথে কনট্রাক ক্যানসেল করে। যেখানে তাদের বেলার কষ্ট সেখানে তারা কিছুতেই কাজ করতে চায় না বেদ নিশান ওম রুহি ওরা গিয়ে কনট্রাক ক্যানসেল করে আসে। বেলা যায়নি সে অনাথ আশ্রমে আছে। সে বেশির ভাগ এখানে কাটায়। পাঁচ বছর বয়সে নিজের বাবা মা কে হারিয়েছে। তার বাবা মা কার ব্লাস্টে মারা যায়। তারপরে তার মামা মামী তাদের বাড়িতে চলে আসে। বেলারা ও মোটামুটি বড়লোক বেলার বাবার ব্যবসা ছিল একটা। কিন্তু তার মামা মামী আসার পর তার জীবনের আরো অবনতি ঘটে। তার মা বাবার চলে যাওয়ার পর কষ্ট আরো বেড়ে যায়। তার মামী তার নিজের বাড়িতে তাকে দিয়ে কাজ করাতে থাকে দিন রাত কষ্ট দিত। তারপরে তার জীবনে আসে বেদ নিশান রুহি ওম এর মত বন্ধু যারা তাকে সব সময়ে তাকে আগলে রাখে। তারপর থেকে সে নিজের কাজ নিজে দেখা শুরু করে। এই অনাথ আশ্রম খোলে তার বাবার রেখে যাওয়া তার জন্য টাকা দিয়ে। বাকি সব কিছুত তার মামী নিয়ে রেখেছে।
.
. এইসব ভাবতে ভাবতে বেলা তার ফোনের টোন এর আওয়াজ এর ফলে ঘোর কেটে বেরিয়ে আসে। ফোন হাতে নিতেই দেখে সাঁঝ এর নম্বর থেকে কিছু মেসেজ এসেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন হাতে নিতেই চোখ ফেটে পানি আসে বেলার।
.
–“তোমাদের মত মেয়েদের কে আমি খুব ভালো করে চিনি। তোমরা টাকার জন্য নিজেকে ও বেঁচে দিতে পারো। বড়লোক ছেলেদের ফাঁসানো হচ্ছে তোমাদের কাজ। আমি তোমাকে অন্য রকম ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি ও এক। নিশ্চয়ই তোমার মায়ের ও এমন স্বভাব ছিল। তোমরা তো আসলে এমন। তোমাদের শিক্ষা এমন। কৌশলে বড়লোক ছেলেদের কে নিজের বসে করা। আচ্ছা এইসব না করে দেহ ব্যবসা শুরু করলেই তো পারো। দেখব না কি তোমার জন্য আমার কোনো ক্লাইন্ড কে। যাকে তুমি তোমার শরীর দিয়ে নিজের কাছে আটকে রাখতে পারো। আমার সাথে তোমার নাম জড়িয়ে আর কোনো কিছু না দেখি ব্ল্যাডি স্ল্যাট।”
.
. নিচে তার করা ফটো পোস্ট এর ক্যাপশন গুলো স্ক্রিন শট করে পাঠিয়েছে। আর তার সাথে একটা মিডিল ফিঙ্গার এর ইমোজি।
.
. বেলা সাঁঝ এর করা মেসেজ দেখে হতবিস্ময় হয়ে গেছে মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। চোখ ফেটে পানি আসছে। বুকের মধ্যে রক্তপাত শুরু হয়ে গেছে। বুক ফেটে কান্না আসতে চাইছে কিন্তু না সে আর কান্না করবে না। সাঁঝ তাঁকে এই ভাবে বলতে পারল। তার সম্পর্কে এই ভাবে তার মাকে নিয়ে কথা বললো তাকে স্ল্যাট এর সাথে তুলনা করলো। তার ভালোবাসা কে এই ভাবে অপমান করলো। না তার জন্য আর কাদবে না বেলা।
.
. যে ভালোবাসাতে নেশায় আসক্ত হয়ে গিয়েছিল যাকে ভালোবেসে ছিল সেই তাকে স্ল্যাট বলেছে তার মাকে ও তুলে ধরেছে। যার জন্য তার মনে ভালোবাসা অতিরিক্ত নেশা আসক্তি পাগলামি ভরা ছিল আজ থেকে সেখানে থাকবে এক রাশ ঘৃণা। শুধু ঘৃণা। আরো কিছুই না।

——————

–“বেলা বেলা । বেদ এর ধাক্কা দেয়ার জন্য পুরোনো বিষাক্ত স্মৃতি পট থেকে বেরিয়ে আসে বেলা।
.
–” আমাদের নাম অ্যানাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে। আমাদের স্টেজ যেতে হবে। বেদ বলে ওঠে।
.
–“ওকে । বলে বেলা উঠে দাঁড়ায়। তারপর কিছু মনে পড়তে আবার ও বলে ওঠে।
.
–” চেঞ্জ দ্য মিউজিক অ্যান্ড টেক দিস। বেলা বেদ এর হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে বলে ওঠে।
.
–” হোয়াট । কিন্তু কেনো এই মুহূর্তে মিউজিক কেনো চেঞ্জ করা হবে। আর নিউ মিউজিক মানে। বেদ হকচকিয়ে বলে ওঠে।
.
–“এতে সব কিছু দেয়া আছে এই মতো সব কিছু হবে। বলে বেলা বেরিয়ে যায় বেদ হতভম্ব করে দিয়ে।
.
–“তোমার ভালোবাসা না আমি ও দুমড়ে মুচড়ে মাটিতে মিশিয়ে দেবো তৈরী থাকো আজকের শো দেখার জন্য তুমি। বেলা নিজের মনে মনে বলে ওঠে।
.
.
.
. 💝💝💝
.
. চলবে…

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_১৫
..জে কে মিউজিক অ্যান্ড ডান্স গ্রুপ একাডেমী লাস্ট অ্যান্ড ফাইনাল কনট্রেসটেন্ট রেনবো ব্র্যান্ড। হোস্ট মাইকে অ্যানাউন্স করে দেয়।
.
. এদিকে সবাই চিৎকার শুরু করে দিয়েছে। বেলাদের ব্র্যান্ড এর প্রত্যেক এর নাম নিয়ে। আর স্টেজ এর সামনে বসে মুখে মিষ্টি হাসির রেস টেনে রেখেছে দিশা। খানিক পর স্টেজ এর লাইট অফ হয়ে যায়। জ্বলে ওঠে স্পট লাইট।
.
. 🎶 এ লোগ বাড়ে আজিব হে হামারে বেহায়াই কি বাতে হার গালি হার মাকান কারতি হে প্যাহেনকার সাফেদ নাকাব হামে ইউহি বাদনাম কারতে হে হাম সোচতে হে কিউ না এক কাম কারতে হে আজ ইস মেহেফিল মে ক্ষুদ কো সারে আম কারতে হে 🎶
.
. রুহি স্পট লাইট এর নিচে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক টা কথার তালে তালে নেচে ওঠে। স্টেজ এর সামনে তাকাতে রুহি হেসে ওঠে। তবুও নিজের এক্সপ্রেসন ঠিক রেখে নিজের পারফরম্যান্স করে যায়। লাইন গুলো শেষ করার পর সরে যায় রুহি। আর স্টেজ এর মাঝে আরো একটা স্পট লাইট পড়ে। সেখানে সাদা পর্দার প্রপস দিয়ে ঢাকা আছে। আসতে আসতে সেটা সরতে থাকে মিউজিক এর তালে তালে। প্রথমে হাত বের করে মুদ্রা দিতে থাকে গান শুরুর সাথে সাথে মাথার ঘোমটা ফেলে দেয়।
.
.আর সাথে সাথে পুরো হল তালি চিৎকার আর সিটি তে ভোরে যায়। চারিদিকে শুধু বেলা বেলা আর বেলা। এই চিৎকারে ভোরে যায়। স্টেজ এর সামনে বসে বসে কেউ এতক্ষণ অধীর আগ্রহে যে বেলার অপেক্ষায় ছিল এখন বেলা কে দেখে তার চোখ আটকে গেছে বেলার ওপর। দম যেনো আটকে আসছে।
.
. বেলা স্টেজ এর সামনে আসতে তার চোখ পড়ে স্টেজ এর বসে থাকা ব্যাক্তির ওপরে যে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে নেশাময় চোখে। নীল দুটো গভীর চোখ আর নীল স্যুটে তাকে চোখ ধাধানো সুন্দর লাগছে। বেলা নিজের মুখে একটা বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তোলে। হ্যাঁ স্টেজ এর সামনে স্পেশাল গেস্ট এর আসনে বসে আছে সাঁঝ রওশন।
.
. সাঁঝ কে দেখে নিয়ে বেলা শুরু করে তার শুরু করে তার কথ্যক ডান্স এর জাদু। বেলার সাথে সাথে রুহি ও এসে যোগ দেয়। পুরো হল শুধু এখন বেলা আর রুহি তে মত্ত হয়ে আছে। আর এদিকে বসে বসে জলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
.
🎶সালামে ইস্ক মেরি জা জারা কবুল কারলো 🎶
.
. প্রত্যেক টা মুভমেন্ট এতটাই স্মুথলি কম্পোজ করেছে যে কেউ চোখ সরাতে পারছে না তাদের ওপর থেকে। আর সাঁঝ সে তো বেলার নাচে এত টাই বিভোর হয়ে আছে যে আশে পাশে কি হচ্ছে সেদিকে তার কোনো হুস নেই। বেলা তার পারফরম্যান্স এর সাথে সাথে কোনা চোখে সাঁঝ এর তন্ময় হয়ে তাকে দেখা তে বাঁকা হাসছে।।
.
. রুহি আর বেলার পারফরম্যান্স শেষ হতে স্টেজ লাইট অফ হয়ে যায়। এবার স্টেজে আসে নিশান আর সাথে বেলা। এবার টাইটানিক মুভি এর টাইটেল ট্র্যাক প্লে করছে বেদ ওম রুহি আর এর সাথে পারফরম্যান্স দিচ্ছে বেলা আর নিশান। এটা ও কথ্যক এ কম্পোজ করা।
.
. বেলা শুধু সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে। আর সাঁঝ যে মুগ্ধ হয়ে দেখছিল তার মুখের পরিবর্তন হচ্ছে আসতে আসতে। বেলার আর নিশান এর ডান্স স্টেপ দেখে। কারণ এই সং এর স্টেপ গুলো খুবই ক্লোজ করে কোরিওগ্রাফ ও করেছে। তাই এর জন্য নিশান কে বেলার শরীর স্পর্শ করতে হচ্ছে আর এর জন্য সাঁঝ এর মাথা আসতে আসতে আগুন হতে শুরু করেছে।
.
. এদিকে বেলা সাঁঝ এর ভাব মূর্তি দেখে বাঁকা হাসছে আর নিজে আরো বেশি বেশি করে সাঁঝ কে জ্বালানোর জন্য নিশান এর ক্লোজ হচ্ছে।
.
. নিশান বেলার ডান্স শেষ হতে লাইট অফ হয়ে যায়। আবার লাইট জলে উঠতে এবার বেলা বেদ ওম নিশান রুহি কে এক সাথে দেখা যায় বেলার কাঁধে ঝুলানো গিটার আর বাকি রা তাদের ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে।
.
.তেরে নাম আনপ্লাগড কভার সং মিউজিক টন প্লে করে বেলা আর তার সাথে বেদ ও বাকিরা তাদের ইন্সট্রুমেন্ট গিটার আর কিবোর্ড প্লে করতে থাকে।
.
. 🎶 তেরে ইস্ক নে সাথি~~য়া
মেরা হাল কেয়া কার দিয়া

তেরে ইস্ক নে সাথি~~য়া
মেরা হাল কেয়া কার দিয়া 🎶

🎶ন্যায়নো সে ইস্কো কি ধারো মে
হাম নে তুঝকো দেখা চান্দ সিতারো মে
ভিরহা কি আগ্নি মে পাল পাল টাপতি হে
আব তো সাঁসে তেরি মালা জাবতি হে

তেরে লিয়ে তেরে লিয়ে
তেরে লিয়ে
ইস দুনিয়া কা হার সিতাম হে
গাওয়ারা সানাম
হোওওওও
হার সিতাম হে গাওয়ারা সানাম 🎶
.
. গানের প্রত্যেক টা লাইন এর সাথে সাথে বেলার চোখের সামনে আসছে তার করা পাগলামি গুলো সাঁঝ এর জন্য। তার করা অপমান গুলো তার চোখের সামনে প্রতি টা দৃশ্য স্লাইড শো করছে। বেলার চোখের থেকে অবিরাম ধারায় বয়ে চলেছে পানি সাথে বেদ নিশান ওম রুহি প্রত্যেক এর। পুরো হল শান্ত হয়ে গেছে কোথাও কোনো আওয়াজ নেই পুরো হল শুধু বেলার গলার আওয়াজ মেতে আছে। বেলার গান গাওয়ার সময়ে তার চোখ পুরোটা সময়ে সাঁঝ এর ওপর নিবন্ধ ছিল।
.
. সাঁঝ বেলার গানের সাথে তার চোখ ও জ্বলতে শুরু করে তার চোখের কোণে ও পানি জমে যায়। কিন্তু সেটা বাইরে বের হতে দেয়। পানি টা কে চোখের মধ্যে আটকে রেখেছে। সে ও এক দৃষ্টিতে বেলার মুখের দিকে চেয়ে আছে। বেলার গাওয়া প্রত্যেক টা লাইন যে তার জন্য সেটা ও খুব ভালো করে জানে। সাথে সাথে তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে সেই গোল্ডেন দিন গুলো।
.
. 🎶জো ভেজি থি দুয়া ও জাকে আসমা সে ইউ টাকরা গ্যায়ি কে আগ্যায়ি হে লটকে সওদা 🎶
🎶কুছ তো হে তুজসে রাবতা 🎶
🎶প্যাহলা নেশা প্যাহলা খুমার 🎶
🎶জারা জারা ব্যাহেক তা হে ম্যাহেক তা হে 🎶
🎶জিনকে লিয়ে হাম রোতে হে বো কিসি ওর কি বাহো মে সোতে হে 🎶
🎶হামারি আধুরি কাহানি 🎶
.
. আজ পুরো প্রোগ্রামে বেলা স্যাডেস্ট সং প্লে করেছে। আর পুরো হল শুধু বেলার কন্ঠের মধ্যে ডুবে গেছে। আর তাদের মধ্যে ও বেলার মত কারোর না কারোর জন্য স্মৃতি ঘুরতে থাকে। বেলার চোখের থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে আর মুখে রয়েছে মিষ্টি হাসি। সাঁঝ ও অপলক ভাবে তার বেলা কে দেখতে রয়েছে। বেলার কষ্ট গুলো তার এই গানের মধ্যে অনুভব করছে।
.
. গান শেষ এবার ওদের লাস্ট পারফরম্যান্স এর জন্য রেডি হয়ে গেছে স্টেজ পুরো গেট আপ চেঞ্জ হয়ে গেছে। এদিকে স্টেজ এর সামনে বসে দিশা ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ করতে থাকে। আর তার পর মুখে ফুটে ওঠে শয়তান হাসি।
.
. 🎶 লাভলি 🎶 মাশাল্লাহ্ 🎶দিলবার 🎶ও সাকি সাকি 🎶 রাম লীলা 🎶
.
. এই পাঁচটা সং এর ম্যাশআপ বেলি ডান্স হিপহপ হাউস ওল্ড হাউস মিলিয়ে স্টেপ করবে বেলা। মিউজিক চালু হতে স্পট লাইট জ্বলে ওঠে। আর তার সাথে বেলা এন্টার করে। লং স্কির্ট ও স্কিন টাইট ক্রপ টপ। চুল গুলো পনিটৈইল করা। এই ড্রেসে বেলা কে আরো বেশি আবেদনময়ী ও আকর্ষনীয় লাগছে। সাঁঝ বেলার এই ড্রেস আপ দেখে চোখ লাল করে বসে আছে। বেলার পেট পুরোই উন্মুক্ত যার তার ফোর্সা পেটে নাভির পাশে থাকা তিল টা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সাঁঝ হাত মুঠো করে বসে আছে। আর বেলা তার ডান্স মাঝে মাঝে সাঁঝ এর মুখের ভাব দেখে বাঁকা হাসছে।
.
. এদিকে দিশা শয়তানি হাসি হাসছে। বেলা সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে নিজেকে আরো বেশি এগিয়ে দিচ্ছে আরো বেশি ফেলেক্সিবেল ভাবে প্রত্যেক টা মুভমেন্ট করছে। তার বেলি ডান্স প্রত্যেক টা মুভমেন্ট তাক লাগিয়ে দেয়ার মত। আর এর জন্য আরো বেশি রেগে যাচ্ছে সাঁঝ।
.
. বেলা ঘুরে ঘুরে স্টেপ করার সময় হঠাৎ চোখ মুখ খিঁচে ফেলে মুখ থেকে হালকা মৃদু চিৎকার ভেসে আসে। বেলা চোখ চেপে বন্ধ করে নেয় দাঁতে দাঁত চেপে ধরে পা উচু করে তোলে। সাথে সাথে সবাই আতকে ওঠে ।বেলার পায়ের থেকে রক্ত পড়ছে। পায়ে ফুটে আছে পিন। বেলা পা থেকে হাত দিয়ে ফেলে দেয়। আর তারপর আরো উদ্দাম আর বেশি উন্মত্ত হয় তার ডান্স এর মধ্যে। পা যন্ত্রণা নিয়ে তার পারফরম্যান্স করতে থাকে। তার এই রুথবা দেখে সবাই তার প্রতি আকর্ষণ হয়। বেলা সবাই কে নিজের দিকে খিঁচে নেয়।
.
. এদিকে বেলার এই অবস্থা দেখে সাঁঝ এর বুকে রক্তপাত শুরু হয়। সাঁঝ মুখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট হয়। আর দিশা এবার যেনো পৈশাচিক আনন্দ পায়। বেলা সাঁঝ এর যন্ত্রণাকিল্স্ট মুখ দেখে মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তোলে।
.
. ডান্স শেষ হতেই বেলা ঢোলে পড়ে। সাথে সাথে বেদ ওম রুহি ব্যাক স্টেজ থেকে ছুটে আসে। বেলা কে বেদ তুলে নিয়ে যায় গ্রিন রুমে। এদিকে পুরো হইচই শুরু হয়ে যায়। সাঁঝ চোখ মুখ শক্ত করে উঠে যায়।
.
. গ্রিন রুমে আসতে বেলা কে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। তার পা নিয়ে ফার্স্ট এড করতে গেলে তখনই হন্তদন্ত হয়ে ঢোকে সাঁঝ। নিজের গায়ের থেকে কোট খুলে আগে বেলা কে পড়িয়ে দেয়। বেলা চোখে পানি আর মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে তাকাতে সাঁঝ ওদের সামনে দিয়ে বেলা কে কোলে তুলে নেয়। আর এদিকে সবাই অবাক হয়ে দেখছে সাঁঝ কে। সাঁঝ মুখে স্পষ্ট রাগ আর যন্ত্রণা ফুটে আছে।
.
–“তোমরা এসো। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। সাঁঝ ওম রুহি বেদ নিশান কে বলেই বেলা কে নিয়ে বেরিয়ে যায়।
.
. সাঁঝ কোনো কথা না বলে বেলা কে গাড়িতে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়ে ড্রাইভ করতে থাকে। না বেলার দিকে তাকিয়েছে না কোনো কথা বলেছে। চোখ পুরো লাল হয়ে আছে সাঁঝ এর মুখ শক্ত করে রেখেছে কপালের রগ গুলো ফুলে ফুলে আছে। জোরে ড্রাইভ করছে। বেলা ও কোনো কথা না বলে এক দৃষ্টিতে সাঁঝ এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে গলায় জড়িয়ে রেখেছে তার হাত দুটো। পায়ে বাধা সাঁঝ এর রুমাল।
.
. বেলা শুধু সাঁঝ এর যন্ত্রণা ভরা মুখ টা দেখতে আছে। গলায় থেকে একটা হাত সরিয়ে এনে সাঁঝ এর ট্রিম করা দাড়িতে হাত রাখতে সাঁঝ জোরে ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে ফেলে। বেলা সাঁঝ এর বুকের সাথে ধাক্কা খায়। মুখ তুলে সাঁঝ এর দিকে তাকাতে সাঁঝ বেলার মুখ চেপে ধরে বেলার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। এতক্ষণ ধরে চেপে থাকা রাগ কষ্ট সব কিছু বেলার উপর দিতে থাকে। এক হাত বেলার গায়ে থাকা নিজের কোট সরিয়ে বেলার উন্মুক্ত পেটে শক্ত করে চেপে ধরে। এতে বেলা কিছুটা ব্যাথা পেলে ও কোনও নাড়াচাড়া করেনি। সেই চাই ছিল সাঁঝ যেনো তার এই রাগ এখন ঝেড়ে ফেলে।
.
. মিনিট দশেক পরে বেলার ওপর নিজের সমস্ত রাগ উগরে দিয়ে। বেলার চুলের মুঠী ধরে নিজের মুখের সামনে আনে সাঁঝ। চোখে মুখ আবার ও শক্ত হয়ে আসছে।
.
–“আমাকে জ্বালাতে পোড়াতে কি খুব ভালো লাগে তোমার হ্যাঁ। সাঁঝ দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
.
–” আমাকে জ্বালাতে গিয়ে দেখ যেনো তুমি নিজে এই আগুনে পুড়ে না যাও। বলে সাঁঝ আবারো বেলা কে বুকে চেপে ড্রাইভ করতে থাকে।
.
. বাড়িতে এসে সাঁঝ বেলা কে কোলে নিয়েই রুমে চলে আসে বেডে বসিয়ে দিয়ে নিজেই বেলার পায়ে মেডিসিন লাগাতে থাকে। বেলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে সাঁঝ কে। এটা সত্যি তার কেয়ার নাকি লোক দেখানো কিছু সে কি সত্যি বেলার জন্য কিছু ফিল করে। হ্যাঁ করে তার চোখ বলছে সে বেলা কে অতিরিক্ত ভালোবাসে। কিন্তু কি করে ভালোবাসে। যদি ভালোই বাসে তাহলে তাকে এত অপমান করলো কেনো কিসের জন্য। বেলার চোখের সামনে আজকের প্রোগ্রাম এর আগে তার কাছে আসা সেই ছবি গুলো এর এর আগের পুরোনো বিষাক্ত স্মৃতি গুলো ভেসে উঠছে তার চোখের সামনে। এবার বেলার কাছে তার অপমান গুলো বেশি লাগছে। তার অক্ষয় আর সাঁঝ এর চোখের ওই ভালোবাসা চোখে পড়ছে না। তার কাছে এখন এগুলো নাটক মনে হচ্ছে। বেলা হ্যাচকা মেরে নিজের পা সাঁঝ এর হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয়। এমন করাতে সাঁঝ বেলার দিকে তাকায়।
.
–“হোয়াট দ্য…। সাঁঝ কে পুরো বলতে না দিয়ে বেলা চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
–“আই ডোন্ট নিড ইউর হেল্প। আন্ডারস্টান্ড। বেলা চিৎকার বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ অবাক হয়ে তাকাতে বেলা আবার চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
–“আপনার এই লোক দেখানো ভালোবাসা দেখানোর কোনো দরকার নেই। আপনার করা অপমান গুলো কি খুব কম ছিল যে এত বছর পর ও আবার আমাকে কষ্ট দিতে আপনার জীবনে টেনে এনেছেন। এখন এগুলো করে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন আমার জন্য চিন্তা করেন। তাহলে ভুল ভাবছেন মিস্টার সাঁঝ রওশন আপনার করা অপমান গুলো আমার জীবনে পুরো দগদগে ঘা এর মত হয়ে আছে। আপনার এই সোকল্ড ভালোবাসা দিয়ে আগের করা অপমান গুলো মুছে ফেলতে পারবেন না। আমি আপনাকে ভালোবেসে ছিলাম আর আপনি কি করলেন আমাকে প্রসট্রিটিউট এর সাথে তুলনা করলেন আমাকে প্রসট্রিটিউট হওয়ার এডভাইস দিলেন। ছিঃ। ভালোবাসতে পারেন অন্তত অসম্মান টা না ও করতে পারতেন। এখন আপনাকে দেখলে আমার ঘৃণা লাগে ঘৃণা। আপনার প্রতি যে ভালোবাসা টা ছিল সেটা এখন ঘৃণাতে পরিনত হয়েছে। আপনাকে আমি ঘৃণা করি। আপনার স্পর্শে আমার দম আটকে আসে। জাস্ট হেট ইউ ।বেলা রাগে অভিমানে চিৎকার করে বলে ওঠে। চোখের থেকে গড়িয়ে পড়ছে অঝর ধারায় পানি।
.
. এদিকে বেলার কথা শুনে সাঁঝ এর মাথা পুরো হ্যং মেরে গেছে। সে বুঝতে পারছে না বেলা কি বলছে এইসব। বেলার কথা শুনে তার বুকে রক্তাক্ত হতে শুরু করেছে। সে তার বেলা কে প্রসট্রিটিউট এর সাথে তুলনা করেছিল। তাকে প্রসট্রিটিউট হওয়ার জন্য এডভাইস দিয়েছে। এটা কি করে সম্ভব। সাঁঝ এর মাথার ভিতরে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। সে এই কথা শুনে আতকে উঠছে। নিজের মাথায় দু হাত দিয়ে চেপে ধরে। বেলার পায়ের ধারে বসে। মাথা টা জোরে দু দিকে নাড়িয়ে নিয়ে বেলার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–“তুমি এইসব কি বলছো। তোমার মাথা ঠিক আছে তো। পাগল হয়ে গেছ নাকি কি সব বকে যাচ্ছ। আমি তোমাকে অপমান করেছি? কি করেছি আমি বল তুমি। কি বলেছি। সাঁঝ করুন ভাবে বলে ওঠে। তার গলার আওয়াজ ফুটে আছে যন্ত্রণা মাখা।
.
–” আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না। আপনাকে আমি আমার চোখের সামনে সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ আমাকে মুক্ত করে দিন। বলে উল্টো ঘুরে শুয়ে কান্না করতে থাকে।
.
. সাঁঝ বেলার কষ্ট যন্ত্রণা দেখে উঠে বারান্দায় চলে যায়। ফোন কানে নিয়ে বলে ওঠে।
.
–” আজকের ঘটনার পুরো রেজাল্ট আমার চাই। এর পিছনে কে আছে সেটা খুঁজে বের করো।
.
. সাঁঝ ফোন কান থেকে নামিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মনের মধ্যে এখন তুমুল ঝড় উঠেছে। বেলার কথা গুলো তার কানে বাজছে। কি বলছিল বেলা ওই সব। প্রসট্রিটিউট? সাঁঝ এর মাথায় এখন হাজারো চিন্তা প্রশ্নের জট পাকিয়ে গেছে। সে কিছু থেকে কিছু উদ্ধার করতে পারছে না। কি করেছে সে। বেলা যে বারবার বলছে। বেলার তাকে বলা কথা টা মাথায় আসতে তার বুকের মধ্যে যেনো কেউ তীব্র গতিতে আঘাত করে চলেছে। তার বেলা তাকে ঘৃণা করে। এটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না। এত দিন তো সে শুধু বেলার করা পাগলামি গুলো স্মৃতি হিসাবে চোখের সামনে সাজিয়ে রেখে বেঁচে এসেছে। তাহলে? হ্যাঁ এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে যেটা আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমি বেলার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। কিন্তু সেটা ওর মাঝে আটকে আছে। আমাকে আমার বেলা কে কষ্টের থেকে বের করতে হবে। সাঁঝ নিজের মনে ভেবে ওঠে।
.
. রুমে এসে দেখে বেলা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। বেলার পাশে বসে বেলা কে ঠিক শুইয়ে দেয়। এক দৃষ্টিতে বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কান্না করার ফলে চোখ মুখ পুরো ফুলে লাল হয়ে আছে। মুখে চোখের পানির দাগ ফুটে আছে। সাঁঝ বেলার পাশে শুয়ে। বেলা কে বুকের ওপর নিয়ে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। বেলা ও ঘুমের মধ্যে সাঁঝ কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সাঁঝ এর বুকে মুখ ঘসতে থাকে। বেলার এমন করাতে সাঁঝ এর মাথায় রক্ত উঠে যায়। নিজেকে খুব কষ্টে সংযত করে। শেষে বেলার ঘাড়ে মুখ গুঁজে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।

——————

–“বেলা তুই ঠিক আছিস এখন। বেদ চিন্তিত হয়ে বলে ওঠে।
.
–” হুম আমি কাল যা ভয় পেয়ে গেছিলাম তোর পায়ের অবস্থা দেখে। রুহি বলে ওঠে।
.
–“আরে ইয়ার আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না যে স্টেজ এর মাঝে পিন কোথায় থেকে আসলো। নিশান বলে ওঠে।
.
–” আরে আমরা যখন ছিলাম স্টেজ তখন তো কিছুই ছিল না। তাহলে? ওম বলে ওঠে।
.
. এরা সকাল সকাল রওশন ম্যানসনে চলে এসেছে বেলা কে দেখতে। বেলা সোফায় চুপ চাপ বসে আছে। বেদরা আসতে সাঁঝ নিজে বেলা কে কোলে করে এনে বসিয়ে দিয়ে গেছে।
.
–” আরে মিষ্টি ভাবি কি করে কি হল এই সব। সারা বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বেলা কে দেখে বলে ওঠে।
.
. সারা কাল তাদের সাথে ছিল না। বাইরে ছিল তাই এইসব কিছুই জানে না।
.
–” আরে এই সব কিছুই না। এসো বসো। বেলা সারা কে বলে ওঠে।
.
–“কিছু না মানে তোমার পায়ে ব্যান্ডেজ কেনো। সারা বলে ওঠে।
.
–“ওহহো ।কিছুই না বেবি। একটু খানি কেটে গেছে। বেলা সারার গাল টেনে দিয়ে বলে ওঠে।
.
–“ইয়ার সারা।
.
. কারোর গলা শুনে সবাই পিছনে তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে ল্যাগেজ টানতে টানতে আসছে। মাথা ঝুকিয়ে নিজের পায়ের সাথে বেঁধে যাওয়া ট্রলির লেস ছাড়তে ব্যস্ত। এদিকে ওম নিশান বেদ রুহি বেলা অবাক হয়ে দেখছে মেয়েটার দিকে।
.
–” আরে জাকিয়া বেবি ।তুই ওগুলো ছাড়। ওগুলো কেউ নিয়ে আসবে। এখন তুই এদিকে আয়। সারা বলে ওঠে।
.
. মেয়েটা মাথা উচু করে তোলার সাথে আগে চুল গুলো সরে গিয়ে মুখটা দৃশ্য মান হয়। আর এদিকে ওম এর চোখ থমকে যায়। হার্ট জোরে জোরে বিট করতে থাকে। মেয়েটা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। পরনে একটা অফ সোল্ডার ওয়ান পিস। যেটা হাঁটু পর্যন্ত সীমিত। মুখে লেগে আছে একটা মায়া মায়া ভাব। চোখ গুলো বড় বড় করে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। ওম এর কাছাকাছি আসতে মেয়েটা ও দাঁড়িয়ে যায়। মুখে ফুটে একটা উত্তেজিত হাসি। যেনো হঠাৎ করে কোনো চাওয়া পূর্ণ হয়ে গেছে। ওম ও তাকিয়ে আছে। এখন দুজনের দৃষ্টি একে অপরের দিকে নিবন্ধ।
.
. ওখানে থাকা বাকিরা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকাতে আছে। তাদের দুজনের ভাব মূর্তি লক্ষ করছে সবাই চোখ বড় বড় করে সাঁঝ ও সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই ওদের এই দৃশ্য দেখছে অবাক হয়ে।
.
–“ও.. ম। বলেই আসতে আসতে ঢোলে পড়ে ওম এর গায়ে। আর এদিকে ওম ও ওকে ধরে নেয়।
.
.ওদের এই দৃশ্য দেখে চোখ বড় বড় করে একে অপরের দিকে তাকায়।
.
–” প্রেমের ঘন্টা বেজে গেলো। সবাই এক সাথে বলে ওঠে।
.
.
.
. 💝💝💝
.
. চলবে….
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন রি-চেক করা হয়নি। সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।