তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় ২ পর্ব-৩১+৩২

0
670

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩১.
খান বাড়ি চারদিকে আলোয় উজ্জ্বল হয়ে আছে পুরো বাড়ি সেজে উঠেছে আজ বাড়িতে অনুষ্ঠানে মেতে আছে এই বাড়ির নতুন বউ অর্থাৎ রিসা খানের জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছে,চারদিকে নিমন্ত্রীতদের সমাগম রিসা খান সেজে গুঁজে ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে সবার সাথে হেসে খেলে কথা বলে যাচ্ছে তার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বুরহান খান তার বিজনেস ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলছে, শান্তার বাবা মাও আছে এখানে সবার সাথে তারাও কথা বলে যাচ্ছে। তবে এত সব মানুষের মধ্যে কোথাও বেলাকে দেখা যাচ্ছেনা সাথে শান্তা কেও বলতে গেলে বাড়িতে এক প্রকার চাঁদের হাট বসেছে।

উপরে রুমে বসে আছে বেলা সাথে শান্তাও তবে শান্তা রেডি হয়ে বেলার কাছে বসে আছে বেলাকে রেডি করার জন্যে বেলা নিচে যাবেনা বলে নিজের রুমে বসে আছে তার মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা আবারো বিয়ে করেছে আর তারপর থেকেই তার জীবন নরকে পরিনত হয়েছে তার মায়ের জন্মদিন ও কখনো এত জাক জমক ভাবে পালন করা হয়নি আর হয়তো কখনো তার বাবা তার মায়ের জন্মদিনেও উপস্থিত থাকতে পারেনি কাজের জন্যে। তার জীবনের অত্যাচার পূর্ণ দিন গুলো আর আজকে দিন সব কিছুই তার কাছে বিষ মনে হচ্ছে তাই বেলা আজকে রুমে বসে আছে নিচে যায়নি আর না রেডি হয়েছে আর সে নিচে না গেলেও যে কারোর কিছু যাবে আসবেনা সেটাও জানে। তবে শান্তা রেডি হয়ে এসে বেলাকে রেডি হওয়ার জন্যে তাড়া দিচ্ছে বারবার বলার পরও বেলা না বলে দেওয়াতে শান্তাও জেদ করে বেলার পাশে বসে আছে সেও নিচে যাবেনা। বেলা শেষে কোনো উপায় না পেয়ে রেডি হয়ে শান্তার সাথে নিচে যায় শান্তা সারাটা ক্ষণ বেলার সাথে সাথে রয়েছে । বেলা সামনের দিকে তাকিয়ে তার বাবা আর শুধু নামে মাত্র মা হওয়া মহিলাটা কে দেখে যাচ্ছে ওদের হাসি খুশি দেখেই বেলার চোখের কোণে পানি জমে তার মায়ের কথা ভেবে। এরমধ্যে শান্তার মা শান্তা কে ডাকতে সে বেলাকে দাঁড়াতে বলে এগিয়ে যায়।

বেলা একা এক পাশে দাঁড়িয়ে থেকে এক ভাবে তার বাবা দিকে তাকিয়ে আছে হাসি খুশি মুখটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে মানুষটা আজকে কতটা খুশি তবে বেলা অনুভব করে কিছুক্ষণ থেকেই তাকে কেউ লক্ষ করছে তবে দৃষ্টিটা খুবই খারাপ তার এখানে দাঁড়িয়ে থাকতেও অস্বস্তি হচ্ছে বারবার যেনো চোখ দিয়ে তার শরীর মেপে নিচ্ছে চোখ ঘুরে বেড়াচ্ছে তার শরীরের উপরে সেটা বুঝতে বাকি নেই বেলার। শান্তাকে ডাকার চেষ্টা করেও পারেনা। বেলা সামনে দাঁড়ানো লোকটার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে বেলা তাকাতেই সে দাঁত বের করে বিশ্রী ভাবে হেসে ওঠে। বেলা মুখ ঘুরিয়ে নেয় সাথে সাথে কিছুক্ষণ পর দেখতে পায় লোকটা রিসা খানের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু কথা বলছে আর মাঝে মাঝে তার দিকে ইশারা করছে সেই লোকটার হাসির মতো শয়তানী হাসি লক্ষ করে বেলা তাকে নিয়েই যে তাদের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছে সেটা বুঝতে বাকি থাকেনা বেলার। এতদিনে রিসার আচরণ বেলার চেনা হয়ে গেছে সাথে রিসার মুখের ওই হাসি ও যখন তার উপরে অত্যাচার করে বা তার বাবা খারাপ ব্যবহার করায় তখনই তার মুখে এই হাসি দেখা বেলা কোনো কিছু খারাপ হওয়ার আশঙ্কা পেয়ে আর নিচে না দাঁড়িয়ে সোজা উপরে তার রুমের দিকে চলে যায়।

তবে বেলা নিজের রুমে ঢুকতে না ঢুকতেই তার পিছনে কারোর আসার শব্দ পায় বেলা পিছনে তাকিয়ে দেখে নিচে থাকা সেই লোকটা এগিয়ে আসছে তার রুমের দিকে বেলা কিছু সময়ে ভয়ে থম মেরে গেলেও তাড়াতাড়ি করে রুমের দরজা বন্ধ করে দিতে যায় তবেই সেটা করতে পারেনা তার আগেই গায়ের জোরে দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে দরজায় ধাক্কা দেওয়ার ফলে বেলা আঘাত পেয়ে উল্টে ফ্লোরে পড়ে যায় আর সেই লোক রুমের মধ্যে ঢুকে বিশ্রী ভাবে হাসতে হাসতে রুমের মধ্যে ঢুকে গিয়ে দরজা আটকে দেয় তবে লক করেনা। বেলা ভয়ে পিছু সরতে থাকে সামনে থাকা লোকটা বেলার শরীরের উপরে চোখ রেখে নিজের ঠোঁটের উপর জীব বুলিয়ে নেয় তীব্র কামনার চোখে তাকিয়ে নিয়ে কাম ক্ষুধা চরিত্রার্থের জন্যে বেলার পা টেনে ধরে সামনে টেনে নিয়ে বেলার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক প্রকার ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায় দুজনের মধ্যে বেলা নিজেকে ছাড়াতে চেয়েও পারেনা লোকটার তার উপরে থেকে বেলার শরীর থেকে ড্রেসের উপরে থাকা লং শ্রাগ টেনে ছিড়ে ছুড়ে ফেলে দেয় এই টানা হেছড়ায় বেলার কাঁধের কাছে ছড়ে বেলার ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে স্পর্শ করায় বেলার শরীরের যেনো হাজার সাপের ছোবল বসিয়ে দিয়েছে নিচের অনুষ্ঠানের জন্যে উপরে বেলার চিৎকার কারোর কানে যায়না বেলা নিজের শরীরে এই স্পর্শ কোনো ভাবেই নিতে পারেনা তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু কোনা সে সামান্য এক মেয়ে তার উপরে থাকা এই অসুর লোকটার শক্তির কাছে কোনো কিছু নয় তার বাচ্চা শরীরটা উপরে জানোয়ার হিংস্র পশুর থাবা পড়ছে সেটা চেয়েও বেলা সরাতে পারছেনা নিজের উপর থেকে এই লোককে আর না পারছে এই লোকের থেকে বাঁচতে হয়তো আজই এই পশু তাকে শেষ করে ফেলবে। লোকটার হাত কাঁধের কাছে তার ড্রেসের উপরে যেতেই বেলা নিজের শরীরে সমস্ত শক্তি দিয়ে শেষ চেষ্টা করে লোকটার নিচে চাপা পড়ে থাকা তার দিয়ে আঘাত করে লোকটার নিম্নাংশে তবে সঠিক না লাগলেও লেগেছে যার জন্যে বেলার উপর থেকে পাশে পড়ে যায়। বেলা দ্রুত সরে পালাতে যায়। বেলার এমন কাজে আরো বেশি হিংস্র হয়ে এগিয়ে বেলার পা ধরে টেনে নিজের দিকে আনে এরই মধ্যে দরজা জোরে খুলে যায় আর বেলা চমকে বাঁচার আসায় দরজার দিকে তাকায়। দরজায় শান্তা দাঁড়িয়ে আছে।

-“বেলা! এই কে আপনি আর এখানে কেনো? বেলা কে ছেড়ে দিন বলছি আপনি। শান্তা হকচকিয়ে উঠে বলে ওঠে।

বেলার অবস্থা এলোমেলো হয়ে আছে ড্রেস কাঁধের দিকে থেকে ছিড়ে গেছে চুল গুলো সব উষ্কোখুষ্কো হয়ে আছে গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে। বেলা শান্তার দিকে তাকিয়ে তাঁকে এখান থেকে বের করার জন্যে ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দেয় লোকটাও তার প্ল্যানে এইভাবে পানি ঢেলে দিয়ে শান্তা কে আসতে দেখে কিছুটা চমকে যায় তবে শান্তা পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় রিসা দাঁড়িয়ে আছে দুজনের চোখে চোখ পড়তেই ইশারা করে রিসা দ্রুতই সরে যায় আর এদিকে লোকটা বেলার পা টেনে ধরে এনে তার শরীরের উপরে বসিয়ে দিয়ে বেলা কে এমন ভাবে ধরে যাতে যে কেউ দেখলে এটা বোঝে যে বেলা লোকটা নয় বেলায় তাকে জোর করছে শান্তা এইসব হতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় কি হচ্ছে এইসব সে বারণ করলেও শোনে না আর বেলা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়েও পারেনা। এরমধ্যে ওখানে বুরহান খান আর শান্তার বাবা মাকে নিয়ে হাজির হয়ে যায় রিসা খান লোকটা রিসা কে দেখে বেলাকে এমন ভাবে নড়াতে থাকে যাতে বোঝে লোকটা বেলার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে।

-“কি হচ্ছে এখানে এইসব। এটাকি নষ্টামি করার জায়গা। এই বাড়িতে এইসব নোংরা কাজ চলবে না ছিঃ ছিঃ আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে বেলা তুমি এমন মেয়ে। রিসা বলে ওঠে।

-” আমি তোমাকে আগেও বলেছি তখন তুমি বিশ্বাস করোনি এখন নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছো তো তোমার নিজের মেয়ে কেমন। রিসা ভ্রুকুটি করে বলে ওঠে।

বেলার বাবা এগিয়ে গিয়ে বেলা কে টেনে দাঁড় করিয়ে কষে থাপ্পড় মারতে থাকে বেলা চেয়েও কিছু বলতে পারেনা বেলা তার বাবার প্রতি যা ভালোবাসা বেঁচে ছিল সেটাও এই ঘটনার পর শেষ হয়ে যায় বাস্তবে বেলা ভেবেছিল তার বাবা আগে যায় করুক না কেনো এখন হয়তো তার হয়ে কথা বলবে এই অবস্থায় তার বাবার সাহারা খুব করে জরুরি ছিল কিন্তু তার বাবা উলটো টা করলো তাই বেলা ও আর কোনো কথা বলেনি চুপ করে সব সহ্য করে গেছে বেলার বাবা তার মেয়ের গায়ের ক্ষত চিহ্ন ও লক্ষ করেননি এতটাই অন্ধ হয়ে গেছেন। শান্তা বেলার হয়ে কিছু বলতে গেলে তাকে বকে চুপ করিয়ে দেয় রিসা। রিসার কোথায় সবাই ভুল বোঝেন।

-“আনিস তুমি ঠিক আছো তো? ছিঃ বেলা ছিঃ এই বাচ্চা বয়সে থেকেও তোমার শরীরে এত খিদে যে তোমার থেকে এত বড় একজনের সাথে এইভাবে নোংরামি করতে গেছিলে আজকে বাড়ি ভর্তি লোকজনের মধ্যে নিজের রুমে একজনের সাথে জোর করে এমন নোংরামি করতে তোমার বাধেনি না জানি এর আগেও কার সাথে কি কি করেছ! তবু রক্ষার আমার ভাইয়ের ছেলে বলে এর জায়গা অন্য কেউ হলে তো আর মুখ দেখাতে পারতাম না কাউকে। রিসা বলে ওঠে।

রিসার বলা কথা গুলো শুনেই সবার মনে সন্দেহ ঢুকে যায় কেউ সত্যিই টা দেখতে চায়না রিসার কথা আর তারা রুমে ঢুকে যা দেখেছে সেটাই বিশ্বাস করে নেয় রিসার চিৎকার করে কথা বলায় অনুষ্ঠানে থাকা কিছু লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে থাকে। ঘৃণার নজরে দেখে বেলাকে।

-“আপনি এইসব কি বলে যাচ্ছেন বেলার নামে বেলা কিছুই করেনি ওই লোকটা তো বেলার সাথে জোর করছিলো। শান্তা বলে ওঠে।

-” তুমি চুপ কারো বেলাকে বাঁচানোর চেষ্টা বন্ধ করো বেলার সাথে থেকে তুমিও খারাপ হয়ে যাচ্ছো। রিসা এক প্রকার ধমক দিয়ে শান্তা কে চুপ করিয়ে দেয়।

আসলে রিসার আর আনিসের প্ল্যান এর মধ্যে পানি ঢেলে শান্তা রুমে চলে আসে সাথে সবটা ঘেঁটে যায়। রিসার আর আনিস মিলে প্ল্যান করেছিলো আনিস প্রথমে বেলার থেকে নিজের ক্ষুধা মিটিয়ে নেবে আর রিসা ওদের ওই অন্তরঙ্গ অবস্থায় এসে হাতেনাতে ধরবে এতে সাপ ও মরবে আর লাঠি ও ভাঙবে না কিন্তু ওদের প্ল্যানে পানি ঢেলে দিয়েছে শান্তা তাই প্ল্যান বদল করে আর এমন ঘটনা দেখায় যাতে সবাই বেলাকে ভুল বোঝে।

-“তুমি একদম চুপ করো শান্তা। রিসার কথা শুনে তিনিও শান্তা কে ধমক দেয়।

শান্তা সত্যি টা বলতে চাইলেও কেউ শুনলোই না সাথে কোনো কথা বিশ্বাস ও করলো না। বেলা একদম চুপ করে পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে এক তো এই বয়সে এত বড় একটা আঘাত সাথে তার বাবার এই খারাপ ব্যবহার সবটাই মিলিয়ে মনে দাগ কেটেছে তাই পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে বেলা। বেলার বাবা বেলা কে ওই অবস্থায় টানতে টানতে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনের থেকে বাইরে বের করে দেয় বলতে গেলে এক প্রকার বাড়ির থেকে তাড়িয়ে দেয় বেলাকে ।

-“আজ থেকে তোমার জন্যে এই বাড়ির দরজা বন্ধ আমার বাড়িতে কোনও নোংরা কাজ চলবে না আর আজ থেকে এই মুহূর্তে থেকে আমার আর কোনো মেয়ে নেই যে ছিল সে মরে গেছে আর তোমার জন্যে ও তোমার বাবা মারা গেছে কোনোদিন ও যেনো তোমার এই মুখটা আর না দেখি বেরিয়ে যাও এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে। বলেই ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে দেয় বুরহান খান।

শান্তা ছুটে উপরে তার রুমে চলে যায় ফোন নিয়ে ওম নিশান বেদ সারা রুহি কে জানিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি তাদের বাড়ি আসতে সাথে ইতি মধ্যে ঘটে যাওয়া সব ঘটনাও জানিয়ে দেয় তাদের। সাথে সেও বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়, বাইরে বেরিয়ে সামনের দিকে এসে দরজার দিকে এগিয়ে যায় বেলা এখনও সেই অবস্থায় মাটিতে বসে আছে পাথরের মত কোনো অনুভূতি যেনো কাজ করছেনা বেলার মধ্যে, শান্তা বেলার পাশে বসে তার উপরে ভর দিয়ে বেলা কে টেনে তুলে নিয়ে সামনে গেটের কাছে বসার জায়গায় এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ধরে বসে থাকে কিছুক্ষণের মধ্যে ওম নিশান বেদ সারা রুহি এসে পৌঁছে বেলাকে নিয়ে রাতের আঁধারে তার নানিমার কাছে মায়ানীড়ে নিয়ে যায় কারণ তারা জানে বেলার যাওয়ার এই একটা জায়গা আছে।

চলবে…?

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩২.

-“এই বাড়িতে নোংরামি কাজ চলবেনা ছিঃ ছিঃ বেলা তুমি এমন।

-” আজ থেকে এই বাড়ির দরজা তোমার জন্যে বন্ধ, আমার বাড়িতে কোনও নোংরামি চলবেনা।

বেলা ঘুমের মধ্যেই ছটফট করে যাচ্ছে চোখে মুখে স্পষ্ট যন্ত্রণার ছাপ মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে সে যন্ত্রণাময় কোনো স্বপ্ন দেখছে, বেলা ঘুমের মাঝেই চিৎকার করে উঠে বসে, শরীর ঘামে ভিজে গেছে কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ফোটা চোখে মুখে ছেয়ে আছে তীব্র কষ্টের ছাপ, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে বিন্দু বিন্দু অশ্রু কনা বড় বড় করে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্যে বক্ষস্থল ওঠানামা করছে, বেলা কিছুক্ষণ নিজেকে স্থির থাকার চেষ্টা করেও পারেনা তার কানে শুধু কথা গুলো বেজে যাচ্ছে “নোংরামি” বেলা দুই হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল খামছে ধরে হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুফিয়ে কান্না করে ওঠে পুরোনো সেই বিষাক্ত স্মৃতি আজকে আবারো হানা দিয়েছিলো তার চোখের পাতায় যেটা সে ভুলে যেতে চাচ্ছে তার জীবন থেকে মুছে ফেলতে চাইছে যে অধ্যায় সেটা বারবার ফিরে আসছে কোনো না কোনো ভাবে। কয়েক ঘণ্টা আগের কথা গুলো মনে করে আরো বেশি ফুফিয়ে কান্না করে ওঠে শান্তার সাথে বেলা কলে ছিল যখন শান্তা বুরহান খান আর বাকিদের সাথে কথা বলছিল বেলা কলে থেকে ওখানে হওয়া সব কথোপকথন শুনেছে বলা ভালো শান্তা তাকেই শুনিয়েছে বেলাকে যে ওরা সবাই মিলে এত এত অপমান করেছে তার যদি এক অংশ ফিরিয়ে দিতে পারে আর এইটা বেলা নিজে অবলোকন করে তাহলে একটু হলেও শান্তি পাবে। কিন্তু শান্তি হওয়ার জায়গায় উল্টে আরো বেশি করে বেলার পুরোনো ঘা তাজা হয়ে গেছে যে অভিশপ্ত দিন তার কেটে গেছে সেগুলোই আবারো যেনো তার সামনে কেউ তুলে ধরেছে। বেলা ওদের সবার কথোপকথন শোনার পর নিজেকে স্থির করে ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুয়ে গেছিলো কিন্তু বেলার অতীত এতটাই অভিশপ্ত ছিল যে ঘুমের মাঝেই সেই গুলো তার চোখের পাতায় দৃশ্যমান হয়েছে ঘুমের ওষুধও বেলাকে ঘুম দিতে পারিনি বেলাকে।

বেলা নিজের মাথার চুল টেনে ধরে পাগলের মত আচরণ করতে থাকে কাঁধে গলায় নক দিয়ে আচড় কাটতে থাকে বেলার সামনে যেনো সেইদিন টা উজ্জ্বল হয়ে আছে আনিসের স্পর্শ গুলো যেনো এখনও জীবন্ত ভাবছে বেলা একহাত মুখের মধ্যে দিয়ে কান্না আটকানো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে হঠাৎ করেই দুটো হাত এসে জড়িয়ে নেয় বেলাকে নিজের বুকের মধ্যে মিশিয়ে নেয়। বেলা তার অতি চেনা পরিচিত স্পর্শ পেতেই কান্না করে ওঠে চিৎকার করে এতক্ষণ নিজেকে আটকে রাখলেও আর পারেনা সামনের মানুষটাকে জড়িয়ে ধরে বুক ফাটা কান্না করতে থাকে নিজের মধ্যে জমানো যন্ত্রণা দুঃখ কষ্ট গুলো কান্না হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। বেলা বুকে মুখ গুঁজে চিৎকার করে কান্না করে যাচ্ছে আর সাঁঝ বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে, হ্যাঁ সামনের মানুষটা আর কেউ নয় সাঁঝ, শান্তার ফোন পেয়ে মাঝরাতেই চলে আসে বেলার কাছে। শান্তা জানতো আজ ওদের কথোপকথন শোনার পর বেলা আরো একবার ভেঙে পড়বে এই অবস্থায় তাঁকে সামলানো তাদের খুবই কষ্ট সাধ্য হলেও সাঁঝের জন্যে নয় সে খুব সহজেই বেলাকে শান্ত করতে পারে। এর আগেও বেলাকে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে সাহায্য করেছে বেলার জিন্দেগি হিসাবে তখন তারা কেউই জানতো না যে বেলার জিন্দেগি সাঁঝ রওশন এমনকি বেলাও জানতো না। সেদিন ওই ঘটনার পর বেলা একদম পাথরে পরিনত হয়ে গেছিলো চুপচাপ থাকতো তাকে দেখে মনে হতো একটা পুতুল ছাড়া আর কিছুই নয় তার ভিতরের সব অনুভূতি গুলো যেনো খান বাড়ির লোক আর আনিস শুষে নিয়েছিলো। সেই সময়ে ওম বেদ সারা রুহি নিশান প্রতিটা সময়ে বেলার খেয়াল রেখেছে তাকে আবারো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে গেছে। তারা দীর্ঘ সময়ে পর বেলাকে চুপচাপ পুতুল অবস্থায় থেকে ফিরিয়ে আনতে পারলেও তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারিনি এরপর থেকে বেলা আগের মত তাদের সাথে থাকলেও যেনো মনে হতো বেলা তাদের মাঝে নেই বেলার শরীর আছে কিন্তু তার মাঝে রুহ নেই, একদম চুপচাপ হয়েই আগের অবস্থায় ফিরেছিলো বেলা, তারা চেয়েও আবার সেই চঞ্চল বেলাকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি আর ঠিক সময়ে বেলার জীবনে জিন্দেগি অর্থাৎ সাঁঝের আগমন ঘটে সেই আসতে আসতে আবারো আগের বেলা সেই চঞ্চল বেলাকে ফিরিয়ে আনে সাঁঝের সংস্পর্শে থেকে একটু একটু করে বেলা আবারো সেই হাসি খুশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

সাঁঝ বেলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। বেলা এখনও চিৎকার করে কান্না করে যাচ্ছে সাঁঝের শার্ট ভিজে গেছে ইতি মধ্যে বেলার চোখের পানিতে পিঠে বেলার হাতে নখের আচড়ের দাগ বসে গেছে তবে এতে সাঁঝের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই সে চুপ করে বসে বেলার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে আর বেলার শান্ত হওয়ার অপেক্ষা করছে সাঁঝ বেলার কান্না থামাতে চাইছেনা সাঁঝ চাইছে আজ যাতে বেলা তার মনে মধ্যে জমে থেকে সমস্ত যন্ত্রণা দুঃখ কষ্ট কান্না রূপে বেরিয়ে আসুক বেশ কিছুক্ষণ পর বেলার কান্নার আওয়াজ ধীর হয়ে আসে এখন বেলা শুধু ফুফিয়ে কান্না করছে। বেলাকে সাঁঝ নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে বেলার মাথায় নিজের অধর ছুয়ে দেয় গভীর ভাবে বেলাকে নিজের থেকে আলতো সরিয়ে দুই হাত দিয়ে বেলার মুখ আজলা করে তুলে ধরে অধরের দ্বারা বেলার চোখের পানি শুষে নেয়, বেলা এখনও সাঁঝ কে দুই হাত দিয়ে আকড়ে ধরে আছে। বেলার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে রেখে অধর ছুয়ে দেয় বারবার বেলার নাক বরাবর। বেলা শান্ত হয়ে বসে থাকে সাঁঝের সাথে মিশে।

-“এখন ঠিক আছো তুমি? সাঁঝ মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” হুম । আলতো স্বরে মাথা হালকা নাড়িয়ে বলে ওঠে।

-“গুড, আজকে এই চোখের পানি যেনো তোমার চোখ থেকে পড়া শেষ বিন্দু হয়। এরপরে থেকে আমি যেনো তোমার চোখে একফোটা অশ্রুকনাও না দেখি আজকেই যেনো তোমার অতীতের সমস্ত অভিশপ্ত দিনের ইতি হয়। যে মানুষ গুলো তোমার কষ্টের কারণ চোখের এই অশ্রুবিন্দুর কারণ সেই মানুষগুলোর জন্যে নিজের মনে কখনই সমবেদনা যেনো না থাকে তাদের জন্যে তোমার মূল্যবান এই অশ্রুনা ঝরে পড়ে এগুলো বহু মূল্যবান আমার জন্যে। সাঁঝের শীতল কন্ঠে বলে ওঠে।

বেলা কোনো কথা না বলে সাঁঝের গলায় নিজের মুখ গুঁজে দেয় সাঁঝ পরম আদরে বেলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

-“তোমাকে শান্তা ফোন করেছিলো? বেলা মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে ।

-” হুম, আজকাল কথা এড়িয়ে যেতে ভালোই শিখেছ। সাঁঝ বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা কোনো কথা বলেনা তবে সাঁঝের পিঠে থাকা হাত দিয়ে খামচি দেয়, বেলার এই কাজে সাঁঝ কিছু বলেনা তবে নিঃশব্দে হেসে ওঠে।

-“আমাকে এত বছর দূরে রাখার কারণ কি ছিলো সাঁঝ? সেদিন এমন কি হয়েছিলো!! আর কেনই বা তোমায় অমন অবস্থায় আমাকে দেখতে হয়েছিলো সাঁঝ? আমার ভুল না ভাঙানোর কারণ কি আমি জানতে পারি? বেলা ধীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” অবশ্যই জানতে পারো সুইটহার্ট, তোমাকে আমি অবশ্যই সব ঘটনা বলবো কিন্তু তার জন্যে তোমাকে আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে যেদিন আমাদের প্রজেক্ট কম্পিলিট হয়ে যাবে সেদিনই তুমি সব কিছুই জানতে পারবে কেনো তোমাকে আমি দূরে রেখেছিলাম। এতদিন রাগ অভিমান নিয়ে অপেক্ষায় ছিলে আর না হয় কয়েকটা দিন ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষায় থাকো।

বেলা কোনো কথা না বলে সাঁঝের গলায় দাঁত বসিয়ে দেয়, বেলার কামড়ে সাঁঝের ব্যাথা লাগলেও কোনো প্রতিক্রিয়া করেনা আরো শক্ত করে বেলাকে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।