তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় ২ পর্ব-৩৩+৩৪

0
533

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৩.
বেলা নিশান বেদ ওম রুহি সারা শান্তা একসাথে স্কুল শেষে শপিং মলে ঢোকে তারা আজ একসাথে লাঞ্চ করবে সাথে শপিং ও করবে। তাই আজ একসাথে চলে এসেছে। বেলা সারা রুহি শান্তা ওম বেদ নিশান প্রথমেই লাঞ্চ করতে চলে সেকেন্ড ফ্লোরে থাকা রেস্টুরেন্টে। সবাই মিলে কর্নার এর বড় টেবিলে বসে পড়ে শান্তা সারা ওম বেদ নিশান রুহি বকবক করলেও বেলা চুপ করে ওদের কথা শুনে যাচ্ছে ওদের কিচিরমিচির আওয়াজে ওখানে থাকা বাকিরা একবার করে ঘুরে দেখে কিন্তু এতে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তারা তাদের মতো মেতে আছে। বেলা চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে আবারও ওদের কথা শুনতে লাগে সে যদি আগের বেলা থাকতো তাহলে এতক্ষণ সে নিজে এতক্ষণ চুপ করে থাকত না ওদের থেকেও বেশি কিচিরমিচির শুরু করে দিত ভেবেই বাঁকা হাসে।

বেলাদের অপর সাইটে টেবিলে সাঁঝ কয়েকজন লোকের সাথে বসে বিজনেস সংক্রান্ত কথা বলছে আর নিজেদের লাঞ্চ করছে বলা যায় এটা এক প্রকার বিজনেস মিটিং। কিছুটা চেঁচামেচির আওয়াজ শুনেই সাঁঝ বিরক্ত হয়ে কথা বলা থামিয়ে দিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই তার বিরক্তি ভরা মুখে হঠাৎ করে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে বিরক্তিতে কুঁচকে যাওয়া ভ্রুযুগল আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়, ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে মৃদু হাসি। সামনের টেবিলে বসা বেলার দিকে তাকিয়ে সাঁঝের দৃষ্টি আটকে যায়, সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বেলাকে তাকিয়ে দেখতে থাকে আজকে যেনো আরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে বেলাকে সেদিনের তুলনায় স্কুল ড্রেসে, দুই দিকে করে লম্বা লম্বা চুল গুলো কে বেঁধে রাখা সাদা শার্ট ব্লু টাই আর ব্লু স্কার্টে একদম বাচ্চা লাগছে। দুই হাতের উপর নিজের থুতনি রেখে তার পাশে থাকা বাকিদের কথা শুনছে চোখ বড় বড় করে। তবে সাঁঝ আশ্চর্য হয়ে যায় বেলার পাশে বসে থাকা সারাকে দেখে সাঁঝের মনে প্রশ্নের মেলা উঠে আসে সারা এখানে কি করছে সাঁঝের মনে পড়ে সারা বলেছিলো তার আজকে ফিরতে লেট হবে ফ্রেন্ডদের সাথে শপিংয়ে যাবে তার মানে তার বোন সারা আর বেলা ফ্রেন্ড এটা ভাবতেই সাঁঝের চোখ মুখ আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

সাঁঝের মনে পড়ে প্রথম দেখার দিনের কথা সেইদিন এই মেয়ে তার দৃষ্টি কেড়ে ছিল আর এই কয়েকদিনে তো তার মন হৃদয় সব জায়গায় তার অধিকার স্থাপত্য করে ফেলেছে যে মনে কেউ কোনো দিন জায়গা পাইনি সেখানে এই মেয়ে তার রাজত্ব গড়ে তুলেছে তার অজান্তেই। সাঁঝ এই কয়েকদিন কখনো বেলার কথা ভুলে যেতে পারিনি বরং বেলাকে ভোলার চেষ্টা করেও কখনো ভুলতে পারিনি আরো বেশি করে মনে পড়েছে তবে সাঁঝ নিজকে আটকে রেখেছিলো এই বুঝিয়ে সে মেয়েটা কে মাত্র একবার দেখেছে আর এতেই কিছু হয়না যদি কখনো আবার দেখা হয় তখন আর সাঁঝ এই মেয়েকে কিছুতেই ছেড়ে কথা বলবে না ততদিন সে নিজের মনের কথা বুঝতে চেষ্টা করুক। তাই সাঁঝ এতদিন বেলার ব্যাপারে কোনও খোঁজ খবর নেয়নি শুধু অপেক্ষায় ছিল বেলার সাথে তার দ্বিতীয় সাক্ষাতের যদি বেলা তার ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে আবারো তার সাথে বেলার দেখা হবে আর তারপর কখনই সে বেলাকে তার চোখের আড়াল করবে না। আর আজ ভাগ্য ক্রমে সাঁঝ বেলার দেখা পেয়ে গেলো তার সাথে আবারো বেলার দেখা হয়েই গেলো। সাঁঝ বেলাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে করতে নিজের লাঞ্চ ও মিটিং শেষ করে। মিটিং শেষে সবাই চলে গেলেও সাঁঝ আর আকাশ একইভাবে বসে থাকে, বেলাদের ততক্ষণে লাঞ্চ হয়ে গেছে এবার তারা উঠে বেরিয়ে যাচ্ছে। সাঁঝ ওদের একবার দেখে নিয়ে পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরে নেয় আকাশকে ইশারা করে এদিকে সামলে নিতে বলে সাঁঝ বেরিয়ে যায়।

সারা শান্তা রুহি ওম বেদ নিশান নিজেদের মতো শপিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আর বেলা তাদের পিছে পিছে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখছে সে কিছুই নিচ্ছে না বা পছন্দ করছেনা শুধুই দেখছে বেলা চারদিকে তাকিয়ে হাঁটার জন্যে বাকিদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে আর সাঁঝ ঠিক একদম বেলার পিছনে হাঁটছে বলতে গেলে বেলা যদি দাঁড়িয়ে যায় তাহলে তাদের ধাক্কা লাগবে এতটাই কাছাকাছি বেলা চারিদিকে তাকিয়ে থাকলেও সাঁঝ একভাবে বেলার দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা সামনের দিকে না তাকিয়ে হাঁটার জন্যে সামনের জনের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলেই পিছন দিকে থেকে সাঁঝ বেলার কোমর ধরে পড়ে যাওয়া থেকে আটকে নেয় চোখ রাঙিয়ে সামনের দিকে তাকাতে দেখতে পায় সামনের জন ইতি মধ্যে পাশ কেটে চলে গেছে। বেলা ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচার জন্যে হাত বাড়িয়ে সাঁঝের কোট আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয় বেলা এটাও দেখেনা সে কি বা কাকে আকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করছে। বেলা নিজের কোমরে কারোর শক্ত হাতের মজবুত স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে তবে এক মুহূর্তের জন্যে তার এই স্পর্শ খারাপ মনে হয়নি বরং সেই দিনের সেই স্পর্শকে মনে করিয়ে দেয় সেই একইরকম শিহরন অনুভব করে বেলা।

-“এখনও দেখি সেই একই রয়ে গেলে আজকে আবারো ধাক্কা খেলে তুমি কি ঠিক করে রেখেছ যে তুমি সামনে তাকিয়ে হাটবেনা। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে ফিচেল কন্ঠে বলে ওঠে।

হঠাৎ করে কানের কাছে এই কথা শুনতেই বেলা চোখ খুলে তাকায় তবে তার মুখের সামনে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে বেলার ভ্রু কুঁচকে যায় বেলা চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে দেখতে থাকে তার উপরে ঝুঁকে থাকা মুখের দিকে চেনা চেনা লাগছে কোথাও যেনো দেখেছে কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছেনা। বেলাকে নিজের দিকে এই ভাবে তাকাতে দেখে সাঁঝ বাঁকা হাসে তাকে যে কোথায় দেখেছে সেটা মনে করতে চাইছে সেটা বুঝতে পারে সাঁঝ।

-“আগের বারের মত এবারও আমি তোমাকে ধাক্কা লেগে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে নিলাম। বলেছিলাম না দেখে হাটবে তোমাকে ধরার জন্যে সব সময়ে আমি নাও থাকতে পারি। সাঁঝ বেলার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে কথা গুলো যাতে বেলা দ্রুত মনে করতে পারে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা তীক্ষ্ণ চোখে সাঁঝের মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে থাকে এই চোখ মুখে মাস্ক ঠিক এইভাবেই হ্যাঁ তার মনে পড়েছে সেদিন বিয়ে বাড়িতে দেখা হয়েছিলো তাহলে এই সেই লোক আর কথার ধরন দেখেই তো মনে হচ্ছে সেই লোক আর এই চোখ আর মুখের এই ভোল সব কিছুই তো সেই লোকের মতো কোনো পরিবর্তন নেই হ্যাঁ এই সেই লোক।

-“তাহলে কি আমি এটা ধরে নেবো যে তুমি আমার সামনে আসলেই শুধু ধাক্কা খাও? সাঁঝ ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে সাঁঝের কোটে ধরে থাকা নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়, বেলার প্রতিক্রিয়া দেখে সাঁঝ নিজেও বেলাকে ছেড়ে ঠিক করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বেলার দিকে তাকায় চোখে মুখে দুষ্টুমি ছেয়ে আছে বেলা একবার চোখ উঠিয়ে সাঁঝের মুখের দিকে তাকায় দেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সাথে বেলা চোখ সরিয়ে নেয় ।

-” ম্ মোটেও না আমি কেনো আপনার সাথে ধাক্কা খেতে যাব এটা শুধু একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল। বেলা তাড়াতাড়ি করে প্রতিবাদ করে বলে ওঠে।

-” হুম সেটা তো হবে সামনের দিকে না তাকিয়ে যদি চোখ চারিদিকে ঘুরতে থাকে তো। সাঁঝ বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা আর কিছুই বলে না সত্যিতো সে কি বলবে সেই তো চারদিকে তাকিয়ে হাটছিলো আর তাই জন্যেতো ধাক্কা খেলো আর এই লোকের কাছে আবারো কথা শুনলো তবে এই লোকের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতেও পারেনা কেমন যেনো একটা অদ্ভূত অনুভূতি আসে এই লোকের সামনে থাকলে এই নিয়ে মাত্র দুবার দেখা হয়েছে তাদের আগের দিনও ঠিক এমনি অনুভূতি হয়েছিলো তার আর আজকেও ঠিক সেই একই অনুভূতি অনুভব হচ্ছে বেলার।

-“বেলা রাইট! সাঁঝ বেলার ভাবনার মাঝে বলে ওঠে।

-” উম! হুম । বেলা কিছুটা থতমত খেয়ে বলে ওঠে।

-“এখানে এখন কি করছো মানে দেখেতো মনে হচ্ছে স্কুল থেকে এসেছ রাইট? সাঁঝ জেনেও জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” ফ্রেন্ডদের সাথে এসেছি লাঞ্চ আর শপিং করতে। বেলা বলে ওঠে ।

-“তো ফ্রেন্ডদেরকে কই দেখতে পাচ্ছিনা তোমার সাথে। সাঁঝ চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে কিছু না জানার ভান করে বলে ওঠে।

-“উম ও ওরা সামনেই আছে আমি চারিদিকে দেখতে গিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি।বেলা একবার তার আশেপাশে তাকিয়ে নিয়ে বলে ওঠে।

-” তো চলো ওরা যখন সামনে চলেই গেছে তখন আমার সাথেই চলো ওদের দেখতে পেলে নাহয় তখন ওদের সাথে যাবে। নাহলে আবার কোথায় ধাক্কা খাবে তখন তোমাকে ধরার কেউ হয়তো নাও থাকতে পারে। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

বেলা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায় এই লোক কথায় কথায় তাকে ধাক্কা খাওয়ার কথা বলে আরে বাবা সে নাহয় অন্য দিকে তাকিয়ে হাঁটার জন্যে ধাক্কা খেয়েছে তো কি হয়েছে তার জন্যে কি বারবার বলতে হবে। সাঁঝ বেলার প্রতিক্রিয়া দেখে নিঃশব্দে হেসে বেলার সাথে পা বাড়ায়।

হঠাৎ করেই দরজায় নক করার শব্দে বেলার ঘোর কেটে যায় বেরিয়ে আসে তার ভাবনার স্মৃতির পাতা থেকে এতক্ষণ সে কেবিনে বসে তার সাথে সাঁঝের দ্বিতীয় সাক্ষাৎয়ের কথা ভাবছিলো চোখের পাতায় উঁকি দিচ্ছিল সেই দিন যেদিনের পর থেকে তার জীবনের সাথে সাঁঝের নাম জুড়ে গেছিলো সেই দ্বিতীয় দেখার পর থেকেই তাদের দুজনের সমীকরণ আলাদা হয়ে গেছিলো অজানা অচেনা থেকে হঠাৎ করেই চেনা পরিচিত হয়ে উঠেছিলো তারা শুধু চেনা পরিচিত নয় তার থেকেও বেশি কিছু হয়ে উঠেছিলো সাঁঝ বেলার কাছে।

চলবে….?

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৪.

-“ভালোবাসি তোকে, বুঝতে পেরেছিস আমার কথা, কান খুলে শুনে রাখ ভালোবাসি আমি দ্বিতীয়বার আর তোকে এই ভাবে বলব না। রাগে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে বেদ ।

বেদের মুখের কথা শুনে সারা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায় এতক্ষণের ছটফট থামিয়ে তারা সারা শরীরের যেনো হটাৎ করেই কারেন্ট বয়ে যায়। নিজের কানকেও যেনো বিশ্বাস হচ্ছেনা সে ঠিক শুনেছে তো বেদ তাকে ভালোবাসি বলছে ভাবতেই শিহরিত হয়। সে এতদিন বেদের আচরণ দেখে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু ভেবেছিল আর এই কয়েকদিন এর বেদের আচরণ তাকে আরো বেশি কনফিউজড করে দিয়েছিলো কিন্তু আজ তার সব কনফিউশনের উত্তর সে পেয়ে গেছে তারমানে বেদ তাকে ভালোবাসে ফাইনালি গাধা টা মনের কথা বহিঃপ্রকাশ করেই দিলো। এতক্ষণের ব্যাথা ভুলে এক দৃষ্টিতে বেদের দিকে তাকিয়ে ইতি মধ্যে কয়েক দফা চোখে মুখের রং প্রতিক্রিয়া পাল্টেছে কিছু সেকেন্ড আগেই রাগ অবাক আর বিস্ময় থাকলেও এখন মুখে লেগে রয়েছে মুগ্ধতাও প্রশান্তির ছোঁয়া। বেদ যে তার তাকে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে বলতে গেলে বেদের আঙুলের নখ প্রায় তার কাঁধের মধ্যে ডুবে যাচ্ছে সেদিকে কোনো খেয়াল নেই ব্যাথা মালুম হয়না সারার সেতো বেদের ভালোবাসি কথাটা বলার সাথে সাথে ফ্রিজ হয়ে গেছে।

-“দেখ আমি অন্যদের মতো তোকে সারপ্রাইজ দিয়ে বা কোনো ফুলের গুচ্ছ দিয়ে রোমান্টিক ভাবে প্রোপোজ করতে পারবো না আমি সোজাসুজি ভাবে একদম স্বাভাবিক ভাবেই বলছি আর একবারই বলছি আমি তোকে ভালোবাসি তুই শুধু আমার কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখ। আমার কাছে থেকে এর থেকে ভালো কোনো প্রোপোজ আসা করবি না তুই জানিস আমি কেমন ছোটো থেকেই দেখে আসছিস তাই এমন ভাবেই তোকে আমায় মেনে নিতে হবে আর এই ভাবেই আমাকে তোর ভালোবাসতে হবে। বেদ সারাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে তেজি কন্ঠে বলে ওঠে।

-“রসকসহীন ছেলের থেকে এর বেশি আর কি আশা করা যায়। সারা মুখ বাঁকা করে বলে ওঠে।

-” আমার কাছে এটাই শুনতে চেয়েছিলিতো, নে শুনিয়ে দিলাম তারমানে বুঝতেই পারছিস আজ থেকে তুই কিন্তু আমার সিল মারা হয়ে গেলি এতদিন যে নাটক করে গেছিস সেটা যেনো আজকেই এই মুহূর্ত থেকে ইতি হয়ে যায়, তোকে যেনো আর কারোর সাথে হেসে হেসে কথা বলতে না দেখি নাহলে কি হতে পারে সেটা তুই খুব ভালো করে জানিস। বেদ শীতল কন্ঠে ওয়ার্নিং দেওয়ার মতো করে বলে ওঠে।

-“আর হ্যাঁ আমি রসকসহীন ছেলে আপাততঃ এইরকম থাকতে চাই এখন এর থেকে বেশি কিছু নয় অফিসিয়ালি একবার আমার হয়ে যা তখন বুঝিয়ে দেবো আমি কেমন, ওকে বেবি! কথাটা যেনো মাথায় থাকে। বেদ বলে উঠে সারার গালে আলতো কামড় দিয়ে সারাকে ছেড়ে চলে যায়।

সারা এখনও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেদের বলা কথা গুলো ভেবেই সে একটা শুকনো ঢক গেলে। বেদ যে তার করা কাহিনি ধরে ফেলেছে সেটা আর বুঝতে বাকি নেই সারার, আসলেই সারা বেদের তার প্রতি এই এক্সট্রা কেয়ার চাল চলন সব কিছুই বন্ধুত্বের থেকেও বেশি অনুভব করে বেদ যে তাকে বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু মনে করে সেটা বুঝতে পারে সারা আর তাই সেটা কি জানার জন্যে কয়েকদিন থেকেই শুরু করে তার মিশন আর কেনো বা শুরু করবেনা সারা যতো বেদের মনের কথা জানতে বুঝতে চেষ্টা করত বেদ ততই যেনো আরো বেশি রহস্যময় হয়ে উঠত আর তাইতো বেদের মুখের থেকে আসল কথা বের করার জন্যে এই পরিকল্পনা অফিসের একজন স্টাফের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো যদিও সেটা কাজ নিয়েই আলোচনা করছিলো কিন্তু সেটাতো আর বেদ জানেনা,আর আজকে তো সারা সারিফের বন্ধু ম্যাক্সের সাথে কথা বলছিল আর সেখানে কথা বলার মাঝে ম্যাক্স সারার হাতটা ধরে ছিল ব্যস এতেই বেদের বুকে আগুন লেগে গেছিলো আর তার মনের ভিতরে জমে থাকা কথা গুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটলো আর আজ সে সফল তবে বেদের থেকে এইরকম কিছু আশা করলেও ঠিক এইভাবে আশা করেনি কিন্তু কি করার এই ছেলে এইরকম।

————-

-“স্যার আপনি ঠিক যেমনটা বলেছিলেন তেমনি কাজ হয়ে গেছে। আকাশ সাঁঝের সামনে দাঁড়িয়ে ফাইল এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।

-“গুড জব আকাশ। সাঁঝ বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

-“স্যার সেই দিনের সমস্ত ঘটনার সব রেকর্ড আমাদের হাতে চলে এসেছে প্রমাণ সহ, আর ওদিকে ওদের প্ল্যানও রেডি তবে স্যার মিসেস মির্জা আর মিস্টার মেহতা এদের মধ্যেও আরো একটা রহস্য আছে। আকাশ তাচ্ছিল্য করে বলে ওঠে।

সাঁঝ আকাশের কথা শুনে মাথা তুলে আকাশের দিকে কোনা চোখে তাকায়, সাঁঝের তাকানো দেখে আকাশ বুঝতে পারে সাঁঝ কেনো তার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছে আর কি জানতে চাইছে তার থেকে তাই আকাশ নিজের হাতের থাকা আরও একটা ফাইল নিয়ে এগিয়ে দেয় সাঁঝের দিকে সাঁঝ একবার তেরছা নজরে তাকিয়ে হাত থেকে ফাইল নিয়ে নেয়। আকাশ বাঁকা হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে সাঁঝ আকাশের মুখের দিকে তাকিয়ে ফাইল চেক করতে থাকে তবে একটার পর একটা পেইজ চেক করতে করতে সাঁঝের চোখে মুখের প্রতিক্রিয়া পাল্টাতে শুরু করে ঠোঁটের কোণে ফুটে ওঠে বাঁকা হাসি। আকাশও তার স্যারের মুখের হাসি দেখেই বুঝে যায় কি চলছে আর কি হতে চলেছে সামনে।

-” আকাশ সব প্ল্যান রেডি করো সময় হয়ে গেছে। সাঁঝ বাঁকা হেসে বলে ওঠে ।

-” ইয়েস স্যার। বলে আকাশ রুমের বাইরে চলে যায়।

ব্যস সময় হয়ে এসেছে এবার সব রহস্য থেকে পর্দা উঠতে চলেছে আর আমিও দেখি কিভাবে কি করে চাল উল্টো করে নিজেদের পিঠ বাঁচিয়ে নিতে পারো সাঁঝ রওশনের শিকার থেকে কিভাবে পালিয়ে বাঁচতে পারিস এতদিনের সমস্ত হিসেব নিকেশ মিটিয়ে নেবো। সাঁঝ বাঁকা হেসে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে।

—————-

খান বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শান্তা চোখে মুখে ফুটে আছে রাগ ও বিরক্তির ছাপ বারবার রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখছে আর একবার নিজের হাতের ঘড়ির দিকে দেখছে। বেশ কিছুক্ষণ পর শান্তার সামনে এসে বাইক থামে শান্তা রাগী চোখে তাকাতেই দেখে নিশান মাথায় থেকে হেলমেট খুলে এক হাতে ধরে আরেক হাত দিয়ে কান ধরে ইশারায় স্যরি বলছে কিন্তু এতে কি! শান্তার রাগ এখনও কমেনি সে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন এতক্ষণ তাকে এইভাবে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে আর এখন এসে স্যরি চাইছে এতই সহজ নাকি স্যরি চাওয়া। শান্তা মুখ ফিরিয়ে নেয় সাথে সাথে নিশানের দিকে থেকে।

-“শান্ত, কেনো তুমি অশান্ত হয়ে উঠছ না তুমি না শান্ত। নিশান শান্তাকে মানানোর জন্যে বলে ওঠে।

নিশানের কথা শুনে উদ্দেশ্য বুঝতে বাকি থাকেনা শান্তার ও যে কথার জালে ভুলিয়ে নিতে চাইছে সেটা বুঝতে বাকি থাকেনা আর।

-” আরে বাবা রাস্তায় জ্যাম ছিল সত্যি বলছি তাইতো দেরি হয়েছে নাহলে আমি কি দেরি করতাম। নিশান আবারও বলে ওঠে।

-” ওই মিস জগড়ুটে বলছিতো স্যরিরে বাবা এইবার তো বাইকে উঠবে আমাদের কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে। ওখানে যেতে দেরি হলে আবার বেলাও ঝাড়বে। নিশান বলে ওঠে।

শান্তা এখনও চুপ হয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখে কোনো কথা বলেনা তাঁকে যেমন এতক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো এখন তেমনি নিজেও কিছুক্ষণ এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকুক তারপর সে যাবে এখন দেখুক এইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন মজা লাগে। নিশানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভাঙিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। নিশান শান্তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তাকে কেমন মুখ ভ্যাঙায় এটা দেখেই নিঃশব্দে হাসে নিশান ।

-“টুসুন বেবি তুমি কি নিজের থেকে বাইকে উঠবে নাকি আমি নেমে কোলে তুলে উঠাবো। বাঁকা হেসে বলে ওঠে নিশান ।

নিশানের কথা শুনে শান্তা কটমট করে তাকায় নিশানের দিকে নিশান বাঁকা হেসে ইশারায় বাইকে বসতে বলে শান্তাকে। রেগে তেড়ে যায় নিশানের দিকে দুম দুম করে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয়। নিশান হেসে শান্তার হাত ধরে বাইকে বসিয়ে শান্তার হাত নিজের কোমরে জড়িয়ে নিয়ে বাইক স্টার্ট করে বেরিয়ে যায়।

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।