তোর আসক্তি পাগল করেছে আমায় ২ পর্ব-৩৭+৩৮

0
519

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৭.

এস.আর গ্রুপে আজকে প্রজেক্ট কম্পিলিট হওয়ার পর পরই তাদের সবাইকে রাতে পার্টিতে যাওয়ার ইনভাইটেশানও দিয়ে দেওয়া আছে, অ্যাকচুয়ালি প্রজেক্ট একদিন আগেই কম্পিলিট হয়ে গেছিলো আজ শুধু তার অফিসিয়াল অ্যানাউন্সমেন্ট করেছে। অফিসের প্রত্যেকেই সাঁঝ তার পার্টিতে ইনভাইট করে দিয়েছে। আজ এই অফিসে বেলাদের শেষ দিন দীর্ঘ কয়েকমাস একসাথে কাজ করে আজ তা সম্পূর্ন হয়েছে এরপরে যদি এই কোম্পানির থেকে তারা কোনো প্রজেক্ট সাইন করে তাহলেই আবারো একসাথে কাজ করতে পারবে। নিশান রুহি শান্তা বেদ সারা ওম বেলা নিজেদের সমস্ত জিনিস গুছিয়ে নিয়েছে এটা সারাদের অফিস হলেও সারা প্রত্যক্ষ ভাবে বেলার সাথে যুক্ত, জাকিয়া আর সারিফ তাদের সাথে হাতে হাতে গুছিয়ে দিচ্ছে।

-“পার্টিতে যাবেতো, আমি তোমাকে বাড়ি থেকে পিক করে নেবো আমরা একসাথে ওদের সাথে জয়েন করব। নিশান শান্তার পাশে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে।

-” ঠিক আছে, যেতে পারি তবে আমাকে যেনো রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা না করতে হয়। শান্তা নিশানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে ওঠে।

শান্তার কথা শুনে নিশান মাথা চুলকে হেসে ফেলে। যেদিন থেকে সাঁঝ তাদের সব কথা ধরে ফেলছে তাদের অনুভূতির ব্যাপারে সবার সামনে তুলে ধরেছে তারপর থেকেই শান্তা বেশিরভাগই নিশানের সাথে কথা বলতে লজ্জা পায় নিশানও এটা উপভোগ করে এতদিন তাদের মনের কথা লুকানো থাকলেও সেদিনের পর থেকে তারা জানে তারা একে অপরকে পছন্দ করে বলতে গেলে ভালোওবাসে তবে সব কথা কি মুখে বলে দিতে হয়।

শান্তা নিশান এই প্রেম ভালোবাসার ব্যাপারে সবার থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও রুহি সারিফ সারা বেদ ওম জাকিয়া এগিয়ে আছে ওম জাকিয়া ও কিছু কম নয় জাকিয়ার কথা বলতে গেলে সে এক প্রকার ওমের টানেই সুদূর অ্যাব্রর্ড থেকে এখানে চলে এসেছে। এর আগেই ফেস্টিভ্যালের সময়ে সবাই একসাথে কানাডা গেছিলো সেখান থেকেই ওম জাকিয়ার ইন্টু বিন্টু শুরু হয়েছিল যা এখনও চলে যাচ্ছে।

-“তোদের গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর বন্ধ করে কাজ কর আমাদের বেরোতে হবে আরোও অনেক কাজ আছে, পরেও ডুবে ডুবে প্রেম করতে পারবি। বেলা কিছুটা কটাক্ষ করে বলে ওঠে।

বেলার কথা শুনেই কারোর বুঝতে বাকি নেই বেলা তাদের উপর রেগে আছে যেমন কয়েকদিন আগেই তারা রেগেছিলো বেলার উপরে। তারা যে ডুবে ডুবে প্রেম মনে জমিয়ে রেখেছিলো সেটা সাঁঝ ফাঁস করে দিয়েছে সবার সামনে আর তারপর থেকেই বেলা কেমন গুম হয়ে আছে। সবাই একে অপরের দিকে বেলার দিকে ইশারা করছে।

-“বেলা, বেবি । ওম ডেকে ওঠে।

-” কোনো রকম ব্যাটারিং করার দরকার নেই, পরে কথা বলবো এখন কাজ কর। বেলা সোজা উত্তর দিয়ে দেয়।

-“বেলা বেবি শোননা বলছিলাম কি, তুই কি রাগ করেছিস? সারা বলে ওঠে।

-” রাগ! কেনো? রাগ করার কথা ছিল বুঝি? বেলা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে ওঠে।

বাকিরা কেউ কিছু বলবে বা করবে তার আগেই দরজায় নক হতেই সবাই ঘুরে তাকায়, দেখে সাঁঝ পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে বেলা চোখ ছোটো ছোটো করে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে সাঁঝ ভিতরে এসে বেলার পাশে দাঁড়িয়ে যায় আর বাকিরাও ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে আর সারা সেতো তার ভাইয়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়েই তাকিয়ে আছে আগের রাতে সাঁঝের নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্যে সে এখনো রেগে আছে তবে সে বেলাকে ওই ব্যাপার নিয়ে কোনো কথা বলেনি।

-“তোমাদের কি সব জিনিষ প্যাকিং হয়ে গেছে? সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ হয়ে গেছে এবার আমরা বেরিয়ে যাবো। ওম বলে ওঠে।

-“ঠিক আছে তোমরা তাহলে যাও, আর হ্যাঁ ঠিক সময়ে কিন্তু পার্টিতে চলে আসবে আজকে পার্টির মেইন কিন্তু তোমরাও তাই দেরি করলে চলবে না, তাছাড়াও আজ তোমাদের সবার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে। সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

-” সারপ্রাইজ? বেলা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” হ্যাঁ সারপ্রাইজ, তোমার জিনিষ গুলো আকাশ দেখে নেবে, আর তোমরা সবাই চলে যাও বেলা আমার সাথে যাবে। সাঁঝ বলে ওঠে।

-“আমি তোমার সাথে যাবো মানে? বেলা জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-“আমার কাছে আপাততঃ কোনো ডিকশনারি নেই আর না এই মুহূর্তে আমি কোনো ডিকশনারি তাই মানে জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে জনাবা। সাঁঝ বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে বেলা চোখ পাকায় আর বাকিরা মিট মিট করে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় রুম থেকে যাক তারা এই যাত্রায় বেঁচে গেলো পরে বেলার মাথা ঠান্ডা করে বুঝিয়ে নেবে তারা। রুম থেকে সবাই বেরিয়ে যেতেই সাঁঝও বেলাকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়, বেলার মাথায় ঢোকে না সাঁঝ কি করতে চাইছে।

————-

রওশন ম্যানসনে জাঁকজমক আয়োজন হয়েছে চারদিকে আলোয় আলোকিত পুরো বাড়ি পার্টির মহলে সেজে উঠছে পুরো বাড়ির ডেকরেট পার্টি লুক দেওয়া হয়েছে। সন্ধে সাতটা ইতি মধ্যে সবাই উপস্থিত হতে শুরু করেছে, সাঁঝের অফিসের সমস্ত স্টাফ সাথে তার গভর্নমেন্ট অফিসের বড় বড় অফিসার আর সামাদ সাহেবের বিজনেস পার্টনার ও কিছু রিলেটিভ সবাই উপস্থিত আজ এই পার্টিতে, এটা প্রজেক্ট উপলক্ষে পার্টি হলেও এই পার্টির আরো একটা বৈশিষ্ট্যও আছে সাঁঝ তার বিয়ের ব্যাপার অ্যানাউন্সমেন্ট করবে তাই পার্টি কোনো সেলিব্রেশন পার্টি থেকে চেঞ্জ হয়ে পুরো গ্র্যান্ড পার্টির লুক হয়ে গেছে আর সেইজন্য এই প্রজেক্টে থাকা পার্টনার অফিসের স্টাফ ছাড়াও অনেকেই ইনভাইট আছে সাথে মিডিয়া ও প্রেসের লোকজনকে আজকে পার্টির স্পেশাল এন্ট্রি পারমিশন ও দেওয়া হয়েছে।

দোলা মির্জা হাসি খুশি হয়ে চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে তিনিও তার কিছু রিলেটিভকে ইনভাইট করেছে সাঁঝের কথার পর থেকেই তিনি উৎফুল্ল হয়ে আছেন আজকেই হয়তো তার মেয়ের কপাল খুলতে চলেছে, আর দিশা সেই একজন মডেল তাই সেইরকম ড্রেসআপ দিয়েছে বিশেষ করে সাঁঝের জন্যে স্পেশাল ভাবে নিজের মেকআপ লুক নিয়েছে তাকে নিঃসন্দেহে দেখতে ভালো লাগছে। সামাদ সাহেব উপস্থিত সমস্ত গেস্টদের সাথে কথা বলে চলেছেন সারিফ সারা জাকিয়া এক পাশে দাঁড়িয়ে ওম নিশান বেদ রুহি শান্তা এদের অপেক্ষা করছে দোলা মির্জা আর দিশার এই আদেখলপনা দেখেই যেনো তার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই ওম বেদ নিশান রুহি শান্তা ওখানে উপস্থিত হয়ে যায় এতক্ষণ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ছয় জোড়া চোখ একে অপরের উপর আটকে যায় আর শান্তা ও নিশান ওদের ছয় জনের দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসতে থাকে। পার্টিতে সবাই উপস্থিত থাকলেও পার্টির মেইন সাঁঝ রওশন উপস্থিত নেই সাথে বেলাও। দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা আটটার ঘরে আসতেই আচমকা পুরো লাইট অফ হয়ে গিয়ে অন্ধকারে পরিপূর্ণ হয়ে যায় বেশ কিছু সেকেন্ড পরেই একটা স্পট লাইট জ্বলে ওঠে সাথে সাথে দেখা সাঁঝ রওশন, সবার এতক্ষণ এর প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সবার সামনেই চলে এসেছে আসতে আসতে পার্টির বাকি লাইট গুলোও জ্বলে ওঠে। সাঁঝকে দেখেই দিশা এগিয়ে যেতে নিলেই সারা হাত আটকে নেয়।

-“ভাইকে দেখেই ছুট লাগাতে হবে তাইনা, একদম শান্ত হয়ে দাঁড়াও ভুলে যেওনা এটা বিয়ের অ্যানাউন্সমেন্ট ছাড়াও প্রজেক্ট কম্পিলিটের সেলিব্রেশন পার্টি তাই নিজেকে সংযত করো। সারা দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন চোখে তাকিয়ে বলে ওঠে।

সারার কথা শুনে দিশা রেগে বোম হয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় আর বাকিরা মিট মিট করে হাসতে থাকে। সাঁঝ চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় তার থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে মিস্টার সামাদ রওশন সাথে দোলা মির্জা দিশা আর বাকিরা।

-“লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান আজকে আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি তার কারণ আমরা সবাই জানি রিসেন্ট এস.আর ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ অফ কোম্পানী চৌধুরী গ্রুপ অফ কোম্পানির সাথে প্রজেক্টে কাজ করে আর তার সফলতার জন্যে আজ এই পার্টি। সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

সাঁঝের বলার সাথে সাথে ওম বেদ নিশান শান্তা সারা রুহি সবার উপরেই এসে স্পট লাইট পড়ে ওখানে ওদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা সারিফ জাকিয়ার উপরেও স্পট লাইট পড়ে। সাঁঝ ওদের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে আবার বলতে শুরু করে,

-“আমরা দুই কোম্পানি পার্টনারশিপে থাকলেও আমাদের অফিসের সমস্ত মেম্বার স্টাফ সবাই একত্রে আমাদের এই প্রজেক্টে আমাদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে গেছে তাই শুধু এই সাকসেস পার্টি দুটো কোম্পানির জন্যে নয় সাথে কোম্পানির স্তম্ভ প্রত্যেকটা মেম্বার স্টাফ সবারই এই সাকসেস তারা না থাকলে আমরা কিছুই না আমরা তো শুধু ইন্সট্রাকশন অর্ডার প্ল্যান করতে পারি আর তাছাড়া বাকি কাজ গুলোই তারা করে, তাই তারা ছাড়া এই কোম্পানি কিছুই নয়, আজকের এই সাকসেস কোম্পানির প্রত্যেকটা সদস্য মেম্বার সবাইর। সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনে সবাই হাততালি দিতে থাকে সবাইর মুখে হাসি তারা আজ প্রত্যেকই সন্তুষ্ট। সাঁঝ সবার দিকে তাকিয়ে নিয়ে আবারও বলে ওঠে,

-“আজকে এই পার্টি সাকসেস এর জন্যে হলেও আরো একটি বিশেষ কারণ আছে শুধু তাই নয় আজকের দিনটাও খুবই স্পেশাল , তাই এই গ্র্যান্ড পার্টির আয়োজন। জানি আমার কথা শোনার পরই আপনারা সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন আরো একটা কারণ শোনার জন্যে তবে বলতে গেলে আজকেই এই মুহূর্তে আমার এই অ্যানাউন্সমেন্ট সারপ্রাইজ ছিল আপনাদের সবার জন্যে।

সাঁঝের কথা শুনে পুরো পার্টিতে শোরগোল পড়ে যায় সবার মধ্যেই গুঞ্জন দেখা একে অপরের সাথে আলোচনা করতে লেগে যায়। তাহলে কি আজ সাঁঝ তার নিজের ব্যাপার কিছু বলতে চলেছে? তিনি কি তার লাভ লাইফ নিয়ে কিছু কথা বলবে? আরে আমি পার্টিতে আসার পরই শুনেছি আজকে নাকি সাঁঝ তার বিয়ের ব্যাপার অ্যানাউন্স করবে? সাঁঝ কি তাহলে তার ফিয়ন্সে বা গার্লফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে? পার্টিতে উপস্থিত সবার মুখেই এই কথা শোনা যাচ্ছে। সাঁঝ চারিদিকে একবার তাকিয়ে দেখে নেয় কেমন ভাবে একে অপরের সাথে আলোচনা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আর এদিকে দিশাতো সাঁঝের এই অ্যানাউন্সমেন্ট শুনেই খুশিতে গদগদ হয়ে গেছে সাথে সামাদ সাহেব ও দোলা মির্জা ও খুশি হয়ে গেছে সাঁঝযে এই ব্যাপার নিয়ে রাজি হয়ে গেছে এতেই তারা খুশি হয়ে গেছে। ওম নিশান ওরা সবাই সাঁঝের অ্যানাউন্সমেন্ট আর বেলার অনুপস্থিত দেখে ভ্রু কুঁচকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করছে কি বলতে চলেছে সাঁঝ ভাবতে থাকে।

-“জানি আপনারা উৎসুক হয়ে আছেন জানার জন্যে আর অনেকেই ইতি মধ্যে গেস করে ফেলেছেন আমি কি ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চলেছি এই মুহূর্তে, হ্যাঁ আমি আজকে আমার জীবনের একজন বিশেষ মানুষের সাথে পরিচয় করিতে দিতে চলেছি যে আমার এই জীবনে খুবই মূল্যবান শুধু তাই নয় আজকে দিনটাও আমার জন্যে আমাদের জন্যে খুবই স্পেশাল। আমার জীবনের এক টুকরো আলো ভালোবাসা ও আমার এই হৃদয়ের রানী। সাঁঝ মৃদু হেসে বলে ওঠে।

সাঁঝের কথা শুনেই সবাই চিৎকার করে ওঠে, দিশাতো আনন্দে লাফিয়ে উঠেছে কথা গুলো শুনে শুধু দিশা নয় দোলা মির্জা সামাদ সাহেব ও শেষ পর্যন্ত দোলা মির্জার প্ল্যান সফল হতে চলেছে এই ভেবে তিনিও খুশিতে আত্মহারা হয়ে আছেন আর সাঁঝের শেষ কথা গুলো শুনেই ওমরা সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। দিশা সাঁঝের কথা শেষ হতে প্রায় এক প্রকার দৌড়ে সাঁঝের দিকে পা বাড়ায়, আর ঠিক তখনই সাঁঝ দূরের অন্ধকারের দিকে ইশারা করে সাথে সাথে সেখানে স্পট লাইট পড়ে আলোকিত হয়ে যায়। সেদিকে তাকিয়ে সবাই চিৎকার করে ওঠে, আর দোলা মির্জা সেই দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করেই কেমন যেনো হতভম্ব হয়ে যায় চোখে মুখে তার কেমন একটা বিস্ময় ফুটে উঠছে তিনি যেনো তার চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা সেই দিকে তাকিয়ে তিনি দু কদম পিছিয়ে যায়।

চলবে…?

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#সিজন_০২
#সাবিয়া_সাবু_সুলতানা
৩৮.
দূরে স্পট লাইটের আলোকিত হওয়ায় সেই দিকে সবাই উৎসুক নজরে তাকিয়ে থাকে সবাই পার্টির উপস্থিত সবার মুখ থেকে চিৎকার ভেসে ওঠে প্রেস মিডিয়ার লোকেরা তো তাদের ক্যামেরা থেকে ফটো আর ভিডিও নিতে শুরু করে দিয়েছে। ওম বেদ নিশান সারিফ রুহি জাকিয়া শান্তা সারা সবাই খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে সারা ভেবে পায়নি যে তার ভাই এমন ভাবে সবাইকে সারপ্রাইজ করে দেবে তার ভাই কিসের কথা বলেছিলো আর কেনো এতো শান্ত ছিল এবার বুঝতে পারে সারা, ওম আর বেদতো সিটি মেরে ওঠে।

দূরে স্পট লাইটে আর কেউ নয় বেলা দাঁড়িয়ে আছে। বেলা নিজেও কিছুটা নার্ভাস আর বিস্ময় নিয়ে মুখে হাসি টেনে সবার দিকে তাকিয়ে দেখছে সে নিজেও জানতো না আসলে সাঁঝ কি করতে চলেছে তবে একটু আগের সাঁঝের বলা কথা গুলো শুনেই বুঝতে পারে সাঁঝের উদ্দেশ্য। সাঁঝ বেলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বেলার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় আর এই দৃশ্য দেখেই সবাই চিয়ার করে ওঠে। সাঁঝ বেলার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আবারও আগের জায়গায় ফিরে এসে দাঁড়িয়ে যায় সবার দিকে মুখ করে।

সারা এবার পাশের দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দিশা মুখ কালো করে চোখে মুখে রাগ আর বিস্ময় নিয়ে সাঁঝবেলাকে দেখে যাচ্ছে শুধু দিশা নয় দোলা মির্জাতো রাগ ফুটছে শুধু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছেনা তবে দোলা মির্জার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে সে আগের থেকেই বেলাকে চেনে শুধু তাই নয় এর মধ্যেই কিছুটা রহস্য মনে হচ্ছে কেমন ভাবে চোখ মুখ করে রয়েছে যেনো তিনি এখানে বেলাকে নয় কোনো ভূত দেখে নিয়েছে তবে তার চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এইসবের মধ্যে সামাদ সাহেব পুরো যেনো স্ট্যাচু হয়ে গেছে কোনো প্রতিক্রিয়া যেনো বোঝা যাচ্ছে না তার। সাঁঝ বেলার হাত নিজের হাতের মধ্যে রেখে অন্য হাত বেলার কোমরে রেখে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকায়।

-“মিস খান আর আপনি কি রিলেশনে আছেন এটাই আমাদের বলতে চাইছেন?

-” আপনারা কি এঙ্গেজমেন্ট করতে চলেছেন?

-” আপনারা কি এই প্রজেক্ট চলাকালীন সময়ে সম্পর্কে জড়িয়েছেন সেটাই কি এখন সবার সামনে আনতে চলেছেন?

-“স্যার বেলা খান চৌধুরী আর আপনি কি আজকে আমাদের সামনে আপনাদের সম্পর্কের কথা জানাতে চলেছেন?

-” আপনাদের কে এইভাবে দেখে মনে হচ্ছে আপনারা রিলেশনে আছেন তাহলে কি সেই নাম?

-” প্লিজ স্যার আমাদের আর অপেক্ষায় রাখবেন না আমাদের কে বলুন আপনার আর মিস বেলা খান চৌধুরীর মধ্যের সম্পর্কের নাম?

সাঁঝ আর বেলাকে এইভাবে দেখে মিডিয়া তো পাগল হয়ে গেছে একের পর এক প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেলেছে ইতি মধ্যে আর সাঁঝও যেনো আজকে সুযোগ দিয়েছে তাদের প্রশ্ন করার বা হয়তো তাদের সম্পর্ক নিয়ে কার কি মতামত সেটাই জানতে চাইছে তাই এতক্ষণ চুপ করে ছিল।

-“মিট মাই ওয়াইফ বেলা সাঁঝ রওশন। সাঁঝ সবার উৎসুক মুখ দেখে হঠাৎ করেই বলে ওঠে।

কি? ওয়াইফ মানে স্ত্রী? সাঁঝ বিয়ে করেছে? এটা কি করে সম্ভব? সাঁঝের বউ? আজকে তাহলে এটাই অ্যানাউন্সমেন্ট করতে চেয়েছিলো? বিয়ে কবে করলো ওরা? ওহ মাই গড সাঁঝ রওশন বিয়ে করে ফেলেছে। আমরা তো ভেবেছিলাম কোনো সম্পর্ক বা এঙ্গেজমেন্ট অ্যানাউন্সমেন্ট করবে কিন্তু এত বিয়ের অ্যানাউন্স করে দিয়েছে? পার্টিতে উপস্থিত সবার মধ্যেই চাপা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে সাঁঝের কথা শুনতেই।

দিশা তো যেনো সোজা আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়েছে এমন অবস্থা সাঁঝের কথা শুনে সাঁঝ বিয়ে করেছে এটাই যেনো তার বিশ্বাস হচ্ছেনা। দিশার থেকেও খারাপ অবস্থা দোলা মির্জার তিনি যেনো এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না এটা যেনো কোনো ভাবেই সম্ভব হওয়ার ছিলোনা সাঁঝ আর বেলার বিয়ে যেনো এক প্রকার অসম্ভব ব্যাপার তার কাছে তাহলে এর মধ্যে কোনো কারণ আছে তার এই প্রতিক্রিয়ার আর কি হতে পারে সেই কারন? সামাদ সাহেব এখনও সেইরকম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজ যেনো তার এই ছেলে চমক এর উপর চমক দিয়েই যাচ্ছে কোথায় তিনি ভেবেছিলেন তার ছেলে তার কথা মত দিশা কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে কিন্তু কোথায় কি সাঁঝ যে এইভাবে বাজি পাল্টে ফেলবে তিনি ধারণা করেননি সাঁঝের শান্ত থাকার পিছনে যে এইরকম একটা বিস্ফোরণ ঘটানো কারণ থাকতে সেটা তিনি ঘূনাক্ষরেও বুঝতে পারিনি।

তবে সাঁঝ তো মাত্রই একটা সামান্য বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বাকি তো এখনও বড় বড় বিস্ফোরণ ঘটানো বাকি আছে সামান্য এই ঘটনা শুনেই যদি সবার প্রতিক্রিয়া এই হয় তাহলে বাকি গুলো শুনলে কি হবে সবাই কি আর ঠিক থাকবে এটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

সারা সবার মাঝেই থেকে সরে এসে দিশা দোলা আর তার বাবার পাশে এসে দাঁড়িয়ে যারা এখন পর পর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একভাবে সাঁঝবেলার দিকে তাকিয়ে আছে।

-“অসময়ে বর্ষা কাল হরিণে চাঁটে বাঘের গাল। সারা ওদের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ জোরে বলে ওঠে।

সারার কথা শুনে তিনজনে ঘুরে সারার মুখের দিকে তাকায় ভ্রু কুঁচকে সারা ওদের তাকানো দেখে বাঁকা হাসে। সারা ওদের দিকে তাকিয়ে আবারো বলে ওঠে,

-” এই প্রবাদটা নিশ্চয়ই শুনা আছে আহারে কত কি আশা ছিল ঠিক সময়ে এসে অসময়ে বর্ষা কালের মত সব কিছুই ভেস্তে গেলো না আর নিজেদের বাঘ মনে করে সব কিছুই নিজের করায়ত্বে নেওয়ার চেষ্টা ঠিক ওই যে হরিণ এসে গাল চেঁটে দিলো কি কষ্ট না?

-” ওফ ফো আমারই ভুল কষ্ট কেনো হবে দেখেতো মনে হচ্ছে রাগ হচ্ছে আচ্ছা মনে মনে আগুন জ্বলছে না! আচ্ছা এই আগুনে কিছু খাবার তৈরী করা যাবে? সারা বিদ্রুপ করে ওঠে।

সারার কথা শুনে আগুনে ঘি পড়ার মত করে ফুঁসে ওঠে দোলা মির্জা আর দিশা আর সামাদ সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে তার মেয়ের দিকে। সারা ওদের তাকানো কে কেয়ার না করে মুখ বাঁকা করে বলে ওঠে,

-“দেখবে আর জ্বলবে লুচির মত ফুলবে। এইতো সবে শুরু।

সারা ওদের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আবারো ওম বেদ নিশান শান্তা রুহি জাকিয়া সারিফ সবার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে সাঁঝবেলাকে দেখতে থাকে।

-” বিয়ে কি করে হতে পারে ওদের এটা কি করে সম্ভব? না না এটা কিছুতেই হতে পারেনা ওদের বিয়ে হতেই পারেনা, কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। দোলা মির্জা নিজের মনে বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে।

-” এই মেয়ে কোথায় থেকে আবার ফিরে এলো সাঁঝের জীবনে আর বিয়ে এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে এটার তো কোনো সম্ভাবনা থাকার কথা নয় বেলার তো এতদিন শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাহলে কিভাবে ফিরে এলো সাঁঝের জীবনে? দোলা মির্জা একভাবে নিজের মনে কথা বলতে থাকে।

দোলা মির্জা তার শকুনের দৃষ্টি দিয়ে বেলার দিকে দেখতে থাকে কিভাবে সাঁঝের সাথে দাঁড়িয়ে আছে যেনো তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেনা তার সব প্ল্যানে পণ্ড করে দিয়েছে এটা ভাবতেই যেনো তার সারা শরীরে রাগের অগ্নিসংযোগ ঘটছে। আর দিশা তো কাঁদো কাঁদো চেহারা নিয়ে বেলা সাঁঝ কে দেখে যাচ্ছে কিভাবে দুইজন একে অপরের সাথে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওখানে তো তার থাকার কথা ছিল কিন্তু এই মেয়ে কোথায় থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসার মত তার জায়গা নিয়ে নিলো?

চলবে…?

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন..। নিজেদের মতামত জানাবেন ।