তোর উঠানে বিকাল ছায়া পর্ব-২০

0
868

#তোর_উঠানে_বিকাল_ছায়া🥀
২০তম খন্ড
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

–রুহি!
অনেকটা নিরাবতা কাটানোর পর আবির রুহির নামটা ধরে ডাকলো।
রুহি মুখটা আবিরের দিকে করে তাকালো শান্ত দৃষ্টিতে।
আবির রুহিকে তাকাতে দেখে শান্ত গলায় রুহির চোখে চোখ রেখে বলল,
–কখনো ছেড়ে যেও না।
যদি কখনো চলে যাও সে দিন হয়ত আবির নামের এই মানুষ টা এই পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দিয়ে চিরতরে অন্য দেশ পাড়ি দিবে।
আবিরের কথা শুনে রুহির বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।
আবিরের হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে বলল,
–কখনো না এমন হবে না আমি যাবো না কখনো ছেড়ে।
–ভালোবাসতে পারবা আমায়?
–খুব পারব।
অনেক বেশি পারব।
মেয়েটার কন্ঠ আটকে আসছে।
বার বার।
ভিশন কষ্ট হচ্ছে কথা বলতে
আবির বুঝতে পেরে রুহিকে জড়িয়ে নেয়।
আবিরের মনে হচ্ছে একটা সঠিক মানুষের হাত ধরেছে সে।
এ হাত হয়ত তাকে জীবনের সমস্ত সমস্যার মধ্যে টিকিয়ে রাখবে।
বাঁচিয়ে রাখবে সবার মাঝে।
প্রবন্ধ হবে জীবন।
,
,
ঘুমের মাঝেই মনে হচ্ছে একটা জোড়া ঠান্ডা হাত খুব ভাবে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে রুহিকে।
রুহির খুবই ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে।
ঘুমের মাঝেই লোকটার আরও কাছে এবং বুকের আরো মাঝে চলে যায় রুহি।
লোজটার শরীরের ঘ্রাণ টা রুহিকে একটা শান্তির ঘুম উপহার দিচ্ছে।
এলোমেলো চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিলো রুহির।
–পাগলি মেয়ে একটা।
লোকটা রুহিকে ভলো করে চাদরের নিচে নিয়ে এলো।
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই জেয়েটার শীত করছে
তাই লোকটা এসি টা বন্ধ করে দিলো।
এতেই রুহির শান্তি।
চুপচাপ ঘুমিয়ে রইলো কারোর হৃদমাঝারে।
,
,
বৃষ্টির প্রতিটি ফোটার সাথে ভালোবাসা গুলো বেশ গভীরতা তৈরি করছে।
বৃষ্টি কে ভালোবাসার প্রতিক বলা উচিত।
করন বৃষ্টি জানান দেয় প্রিয় মানুষ টা তোমার কতো বেশি প্রিয়।
বৃষ্টির দিনে ভালোবাসার অভাব হয় না।
বৃষ্টিতে ভিজে ভালোবাসার প্রকাশ করা সম্ভব।
মোট কথা বৃষ্টির দিনে ভালোবাসা হয় গভীর।
,
রাত কেটে সকাল হলো
সূর্য চোখের উপর পরতে রুহি নিজেকে আবিরের বুকের মাঝে আবিষ্কার করে।
মুখ তুলে মিচকি হাসি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।
গোসল করে বেরিয়ে দেখে আবির উঠে গেছে,
–আপনি এতো জলদি উঠে গেছেন।
–হুম নামাজ পড়বো।
–ওহ ঠিক আছে
আবির ফ্রেশ হয়ে আসে দু’জন এক সাথে নামাজ পড়ে নেয়।
–আমি খাবার তৈরি করতে যাই ছায়াকে দেখে আসি।
ও ত সারা রাত একা ছিল।
–আচ্ছা।
আমিও অফিস যাবো।
–ঠিক আছে আমি সব গুছিয়ে দিয়ে যাচ্ছি
রুহি সব গুছিয়ে দিয়ে বাইরে গেল।
রুহির যাবার দিকে আবির চেয়ে চুপ করে রইলো।
এমন করে তার জন্য কেউ কখনো সব ঠিক করে নি।
তমার থেকে আবির কখনো কিছু আসা করে নি।
সত্যি একটা খুব ভুল মানুষ কে ভালোবেসেছিল আবির।
,
রুহি খাবার রান্না করে টেবিলে রাখতে বলল সার্ভেন্ট দের।
তার পর ছায়ার খাবার নিয়ে উপরে এলো।
ছায়া কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।
রুহি গিয়ে ছায়াকে ডাক দিলো,
–ছায়া এই ছায়া।
–হু।
–উঠ বাবু খাবার খাবি ত
ছায়া আস্তে উঠতে চাইলে পেটে ব্যাথা অনুভব করলো।
–কিরে সমস্যা হচ্ছে।
–না চিন্তা করিস না একটু ব্যাথা আরকি।
–ওহ

রুহি ছায়াকে ধরে খাটের সাথে শুইয়ে দেয়।
তার পর বিছনায় পানি এবং পেস্ট এনে দেয় ছায়া ফ্রেশ হলে রুহি খাইয়ে দেয় ছায়াকে।
ছায়া খেয়ে নেয়।
খাবার শেষে রুহি নিচে চলে আসে।
আবির আর নয়লা বেগম কে খেতে দেয়।
আবির অফিসে গেলে রুহি ছায়ার কাছে চলে আসে।
–কিরে ব্যাথা আছে
–ব্যাথা ত আছে কি করব বলত কষ্ট হয় ভিশন।
–একটু সহ্য কর সব ঠিক হয়ে যাবে।
ছায়া চোখ বন্ধ করে আছে।
রুহি ছায়ার পায়ে ম্যাসাজ করে দিচ্ছে ছায়ার পায়ে পানির মতো নেমেছে।।
বেশ খানিকটা ফুলে গেছে।
–ছায়া তুই রাতে এসি বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলি।
–কই নাতো।
–না আমি ত চালিয়ে দিয়ে গেছিলাম তাহলে বন্ধ কে করলো।
–মনে নেই রাতে শীত করছিল মনে হলো তার পর পাশে যা পেলাম তাই জড়িয়ে নিলাম তার পর মনে নেই।
–ও হয়ত ঘুমের ঘের করেছিল।
সমস্যা নেই।
–রুহি একটা না কথা ছিল।
–বল,
–আমার না মনে হয় রাতে কেউ আমার রুমে আসে।
–কি যে বলিস চৌধুরী বাড়িতে কারোর ঢোকা সাহস আছে।
–রুহি সত্যি বলছি আমি না ওনাকে ফিল করি।
ওনার শরীরের সেই ঘ্রাণ টা।
–খুব বেশি ভালোবাসিস তাই তার অস্তিত্ব তোর সাথে মিশে আছে।
–নারে আমার মনে হয় সত্যি উনি আছে আমার কাছে এক দিন আসবে দেখিস।
রুহি মৃদু হেসে বলে,
–হুম আসবে সে ত তোর কাছেই আছে।
কোথাও যায় নি।
ছায়া চোখ বুঁজে নেয়।
চারিদিকে নির্ঝর কে ফিল করে ছায়া।
সত্যি নির্ঝর ছায়ার শরীরের ঘ্রাণ টুকুতেও মিশে আছে।
ছায়া যে নির্ঝর এর গ্রীষ্মের ক্লান্ত দুপুরে,
বিকাল ছায়ার মতো।
ছায়া হলো নির্ঝর এর প্রশান্তি।
,
,
,
সাদা সার্ট আর ব্লু জিন্স পরে কেউ বের হলো একটা বাড়ি থেকে।
পেছনে অনেক গুলো গার্ড।
চোখে সানগ্লাস পরে সামনের দিকে হাঁটছে।
ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে বেশ রেগে আছে।
ছেলেটা গাড়িতে করে সোজা একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে,
সেখানে কিছু গার্ড মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,
–ও পালালো কি করে।
ছেলেটার কথা শুনে সবাই মাথা নিচু করে আছে
–কি হলো কথার উত্তর নেই কেন ও পালালো কি করে (চিল্লিয়ে)
–স্যার আসলে জানি না কি করে কি হলো।
–জানো না মানে কি আমি যে জন্য আত্ম গোপন করে আছি সেই আদনানকে পালাগে দিলে কি করে বলো আমায়
বিকট এক চিৎকার দিয়ে কথাটা বলল আদনান।।
সবাই মাথা নিচু করে আছে,
–স্যার বুঝতে পারি নি এমনটা হবে।
–তোমরা কিছুই বুঝতে পারো না গিয়ে ওকে শহরের প্রতিটা কোনায় খোঁজ ২৪ ঘন্টার আগে ওকে আমার সামনে চাই।
–জি স্যার।
সবাই বেরিয়ে গেল,
–আরিফ,
–জি স্যার।
–ছায়ার দিকে খেয়াল রাখো।
আদনানের চলে যাওয়া মানে আমার ছায়ার উপর ভয়ের প্রভাব পরা৷
–জি স্যার।
–আদনান তোকে এবার আর ছাড়বো না।
চলবে,