তোর নেশায় মত্ত পর্ব-০৮

0
972

#তোর_নেশায়_মত্ত
#লেখনীতে- আবরার আহমেদ শুভ্র
পর্ব- ০৮

-মাহবুব, রুশাকে তো আমরা শুধুই ইউজ করছি। ও আমার মেয়ে হলেও ওর প্রতি আমার তেমন ইন্টারেস্ট লাগে না। ওর খেল খতম করে দাও না এখন।

-না, রোকেয়া। ওকে এখন বাঁচিয়ে রাখা আমাদের অত্যন্ত জরুরী।

-কিন্তু কেন?

-কারণ, এই মিহিয়াকে ওর মাধ্যমেই মারবো। তারপরে ওকে আইনের হাতে তুলে দিয়ে আমরা পালিয়ে যাবো। সবটা শান্ত হলেই আমরা এসে এডভোকেট জামালের মাধ্যমে এই সম্পত্তির মালিক হয়ে যাবো।

-কিন্তু আইনগতভাবে কি মানবে? না মানে ওকে দোষী সাব্যস্ত করবা কিভাবে?

-সেটা কোনো ব্যাপার না। শুধুই দেখতে থাকো।

-কিন্তু আমরা যে ওর বিয়ে ঠিক করলাম তার কি হবে?

-কিচ্ছু হবে না। দরকাল হলে রায়ানকেও একসুতোয় গেঁতে দেবো তাদের সাথে।

-ওকে, যেটা ভালো মনে করো।

এতোক্ষণ দড়জার আড়াল থেকে সবটাই শোনে নিলো রুশা। রুশা তাসনিম সে! যে রোকেয়ার মেয়ে বলে সকলের কাছে পরিচিত। এতোদিন ফ্রেন্ডসদের সাথে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে বলেই বাড়ীটা ফাঁকা ফাঁকা ছিলো। আজ মাত্রই এসে তার বাবা মায়ের সাথে দেখা করবে বলে এসেছিল তাদের রুমের কাছে। কিন্তু রুমে ঢুকবে এমনই একটা মুহুর্তেই তার বাবা মায়ের এহেন কথা শোনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো সে। যাদের কিনা সে বিশ্বাস করতো! আপন মা-বাবা ভাবতো তারাই আজ তার বিশ্বাসের মূল্য খুব ভালো করেই দিয়ে দিলো। শত হলেও তারা কিনা তার মা বাবা! কথাটা মনে হতেই তার মনে একরাশ ঘৃণার জন্ম নিলো তার মায়ের প্রতি। বাবা আপন না হলেও তো মা টা তার আপন। কিন্তু সম্পত্তির প্রতি এতোটা লোভ তাদের যে মিহিকে মেরে ওর মৃত্যুর কারণে তাকেই করিয়ে বেঁচে যেতে চাই তারা। ভাবতেই মুখের রং পাল্টে গেলো তার। রেগে গিয়ে রুমে ঢুকবে এমন মুহুর্তে আরেকটি কথা শোনে আরেকদফা চমকে গেলো সে।

-আমার না ওকে মারতে মন চাইছে না। আপন গর্ভের মেয়ে আমার সে। তুমি অন্য ব্যবস্থা করো প্লীজ।

-আরে ও তোমার নিজের মেয়ল নাকি যে দরদ উথলিয়ে পড়ছে?

-মানে! কি বলছো এসব মাহবুব? তুমি না বলেছিলে আমার মেয়ে হয়েছিল! তাহলে রুশা কে? আর আমার বাচ্চাটার কি হয়েছিল?

-তোমার বাচ্চাতো সেদিনই মারা গিয়েছিলো। আর মিহিয়ার ছোট ভাইটার সাথে আরেকটি মেয়ে জন্ম নিয়েছিলো। ডাক্তারকে টাকা খাওয়াই আমি ছেলেটাকে কিনে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওই নার্সটা সেখানে গণ্ডগোল বাঁধিয়ে দিলো। সে গিয়ে শাহানা আপার কোলে ছেলেটাকে দিয়ে দিলো। তবে, মেয়েটিকে সে দেখতে পাই নি কারণ তার নিয়ে যাওয়ার পরই ডাক্তার তাকে শাহেলার গর্ভ থেকে বের করেছিলো। তারপরে ডাক্তার কৌশলে তাকে দ্রুত আমার কাছে দিয়ে চলে গিয়েছিলো। জানো মেয়েটি কে ছিলো? মেয়েটি হলো রুশা। সেই মিহিয়ার ছোট ভাইয়ের যমযবোন। মানে মিহিয়ার আপন বোন সে। আর রুশাকে নিয়ে আসার সময় লোক লাগিয়ে টাইমবোম ফিট করে দিয়েছিলাম শাহানা আপার গাড়ীতে যাতে সকলেই মারা যায়। এবং তাই হলো! সকলে সেদিন মারা যায়। আর রুশাকে নিয়ে এবাড়ীতে চলে আসি আমরা। কারণ, আমাদের আপন বিদায় হয়েছিলো সেদিন। এখন শুধু রুশা আর মিহিয়ার পালা। দুটোকে মারতে পারলেই সব সম্পত্তির আমাদের হবে। হা হা হা।

-আহারে, আমার মেয়েটা কয়েকটা দিন পর তার মা বলা সৎমায়ের কাছেই প্রাণ দিবে ভাবতেই অবাক লাগে তাই না? হা হা হা।

দুজনেই বেদাঁড়ক হেসে চলছে। আর দড়জার ওপাশে রাগে- ঘৃণায় চোখেরজল ফেলছে রুশা। দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে এলো সে। সোজা বিছানার উপর উপুড় হয়ে পড়লো সে। মনে মনে আউড়াতে লাগল,

-মিস্টার মাহবুব আপনি আমার আপন বাবা হয়েও আমার মা, ভাই আর বোনের ক্ষতি করেছেন। শুধুমাত্রই সম্পত্তির লোভে। সাথে আপনার সো কল্ড ওয়াইফ মিসেস রোকেয়া বেগম। তাই না? ওকে লেটস্ স্টার্ট মাই গেম! এন্ড ফিনিশ বৌত অফ ইউ! মা ভাইয়া নেই, নো প্রবলেম। তবে আমার আপুনিকে আমি খুঁজে বের করবোই। আমরা দুবোন মিলেই তোদের মতোন ক্যারেক্টারলেস মানুষের সাজা দিবো। সি ইউ সোন।… ফ্রেশ হতে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।

টানা একঘণ্টা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে এলো সে। কাভার্ড থেকে একটা চুড়িদার পড়ে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে। যতসম্ভব তাকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। কেউ যেন ঘুণাক্ষরেও টেড় না পায় তার কাজকর্ম। এখন তাকে শুধু জানতে হবে তার আপুনি কোথায় সেটা। বাদ বাকি কাজ সেই করবে।

দুপুরবেলা হয়ে এলো প্রায়। রোকেয়া বেগম মনের সুখে টিভি দেখছেন। যেন কিছুই হয় নি এখন। রুশা গিয়ে তার পাশের ছোফায় আরাম করে বসল। রোখেন বেগম তাকে দেখে চমকে গেলেও স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-কখন এলে মামনি?

-এইতো কিছুক্ষণ আগে। টায়ার্ড লাগছিলো তাই তোমাদের সাথে দেখা না করে রুমে চলে গিয়েছিলাম।

-আচ্ছা বেশ। চলো খাবে। তোমার সাথে একজন নতুন আপু পরিচয় করিয়ে দেবো।

-কে সে?

-ওয়েট। আমি ডাকছি… বলে নিতুর রুমে গেলেন। তখন নিতু শোয়ে ছিলো। তার কাছে গিয়ে,

-নিতু মা? চলো, খাবে এখন। দুপুর হয়ে এলো যে!

-আচ্ছা আন্টি চলুন।…. দুজনেই বেড়িয়ে এলো ডাইনিং রুমে। সেখানে অবশ্য রুশা বসে ছিলো। রোকেয়া বেগম রুশার সাথে নিতুর পরিচয় করিয়ে দিলেন। বেশ কিছুক্ষণের মাঝেই তাদের আলাপচারীতা বেশ ভালোই জমে উঠলো।
________________

-মিহু কি হয়েছে! এমনভাবে রেগে আছিস কেন তুই?

রাতে আদ্রের কাছ থেকে সত্যটা শোনার শাহানা ইয়াসমিনের উপর খুব রাগ হয়েছিল তার। এতো কাছে থেকেও পরিচয় দিলেন না নিজের। তাই সে তার উপর অভিমান সাথে রাগ নিয়ে বসে আছে।

-একদম কথা বলবা না আমার সাথে। তুমি খুব পঁচা খালামনি।

মিহিয়ার মুখে খালামনি ডাক টা শোনে চমকে গেলেন শাহানা ইয়াসমিন। মিহি জানলো কেমনে যে সে তার খালামনি! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন তাকে,

-কি বলছিস মিহু? আমি….

-একদম না, তুমিই আমার খালামনি শাহানা ইয়াসমিন। আমার আম্মু শাহেলা ইয়াসমিনের একমাত্র বোন। সবটাই জানি আমি একদম সবটাই। হুহ! কথাই বলবো তোমার সাথে।

বেশ চমকে উঠলেন তিনি। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

-কেমনে জানলি তুই?

-আমি বলেছি।

পিছনে ফিরে আরেকদফা চমকালেন তিনি। কারণ, আদ্র মুচকি হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেলেন মিহিয়ার কথা শোনে,

-আম্মু আর আব্বু এখনও বেঁচে আছেন। এন্ড নাউ দে আর ইন প্যারিস! খালামনি, আই নো এভরিথিং! কারণ, মাহিন আমাকে সবটা বলেছে খালামনি, সাথে আদ্রও বলেছেন। মাহিনকে চেনো তো?

মাথা নাড়ালেন তিনি মানে চেনেন। অবাকের পর অবাক হচ্ছেন। যেন আজ তার অবাকই হওয়ার দিন। তবে, খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন তাদের,

-এতোকিছু জানলে কেমনে তোমরা?

-জেনেছি কোনো এক বিশেষ মাধ্যমে। তবে সময় হলেই জানিয়ে দেবো।

-হুম। আর মিহু মা রাগ করিস না আমার সাথে। আমি সবটাই জানতাম, এমনকি তোকেও চিনতাম তবুও কাছে আনতে পারি নি ওই বদমাশ লোকটার কারণে। আর তোদের না বলারও কিন্তু কিছু কারণ আছে। একটা কারণ এটাই যে, কিছু কিছু সময় দেয়ালেরও কান থাকে। তাই!

-কোনো কথা শোনবো না তোমার। তুমি খুব খারাপ! আমাকে একটা বারও বললে না তুমি।

-আচ্ছা মা, স্যরি। এই দেখ কান ধরলাম।

-ইশ, কান ধরতে হবে না। আমি তো এমনিতেই বলেছি।.. জড়িয়ে ধরলো শাহানা ইয়াসমিনকে। তিনিও জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।

-বউমাকে পেয়ে আমাকেই ভুলে গেলে?…. কপট রাগ দেখিয়ে বলল আদ্র।

আদ্রের কথায় অবাক হয়ে গেলো মিহিয়া। চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তার মুহুর্তেই লজ্জার আভা ফুটে উঠল মুখশ্রীতে। পরে আবার চোখ নামিয়ে নিলো সে। শাহানা ইয়াসমিনও বুঝতে পেরে বললেন,

-আমার বউমাকে ধরেছি বলে হিংসা হচ্ছে? আরও ধরবো দেখি কেমন লাগে আপনার!

-খালামনি.. বলতেই থামিয়ে দিলেন শাহানা ইয়াসমিন।

-নো খালামনি, এখন থেকে মা বলবি। আমার ছেলের বউ করবো বলে পণ করেছি আমার বোনের কাছে। আর আদ্রও তোকে খুব ভালোবাসে সো, তুই আমার বউমা। কি রাজি তো?

লজ্জা পেয়ে মাথা কাত করলো সে। তার পরে লজ্জা পেয়ে দৌঁড়ে চলেগেলো রুমে। শাহানা ইয়াসমিনও মুচকি হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন।
______________

-আমার এক্ষুনি তাকে চাই, এট এনি কস্ট। কারণ তো আমার প্রথম টার্গেটই হলো সে। না হলে তোকে মারতেও হাত কাঁপবে না আমার।

-বস কিন্তু….

-কোনো কিন্তু নয় মাহমুদ। কোনো কিন্তু নয়।… বলে রেগে চেঁচিয়ে উঠলো বস লোকটি।

-আ্ আচ্ছা।…. বলে ভয়ে ভয়ে স্থানটি ত্যাগ করো মাহমুদ নামক লোকটি।

-হা হা হা, নিহারিকা নিতু। ইউ উইল বি ফিনিশড্ টুমরও! হা হা হা।

বিকট কণ্ঠে হেসে উঠলেন লোকটি। যেন হিংস্র কোনো কিছুর অপেক্ষায় আছে সে।

#চলবে…..

[গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক বাস্তবের সাথে কেউ মেলাবেন না। ভুলত্রুটি মার্জনীয়। হ্যাপি রিডিং 😍]