তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম পর্ব-১৫

0
486

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৫

দোলা সিয়ার রুমে গিয়ে দেখে সে রুমে নেই। পরবর্তীতে চোখ করিডরে গেলে দেখে সিয়া সেখানে একা একা বসে আছে, হাতে চায়ের কাপ । দোলা তার দিকে এগিয়ে যায়। নিজের পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সিয়া পেছন ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে তার মা।

সিয়া;; আরে মা কখন এলে, বসো।

দোলা;; এখানে একা একা বসে কি করিস?

সিয়া;; না কিছু না এমনি বসে আছি।

দোলা;; কিছু হয়েছে?

সিয়া;; আরে না, এতোক্ষন বসে বসে নোটস বানাচ্ছিলাম রুমে আর ভালো লাগছিলো না তো তাই এখানে চা নিয়ে এসে বসলাম।

দোলা;; ওহহ।

সিয়া;; আচ্ছা তুমি কি যেনো একটা বেশ কিছুদিন যাবত বলতে চাইছো তবে বলছো না। কি কথা বলোত!

দোলা;; ___________

সিয়া;; ওই মা বলো না।

দোলা;; তুই অর্নীল কে খুব বেশি ভালোবাসিস তাই না!

সিয়া;; আব…. না মানে হঠাৎ এই কথা।

দোলা;; আমার মাথা পুরো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কি করবো, কি বলবো বুঝতে পারছি না।

সিয়া;; ব্যাপার টা খুলে বলো তো।

দোলা;; সিয়া শোন আমি তোকে মিথ্যা বলেছি। আমিও আর তোর নানুও।

সিয়া;; মানে?

দোলা;; তোর বাবা কোন হার্ট এটাকে মারা যান নি। তাকে খুন করা হয়েছিলো।

সিয়ার কপালে চিন্তার ভাজ এসে পরে।

সিয়া;; ক ক কি বলো এইসব?

দোলা;; নিজের চোখের সামনে তোর বাবার মৃত্যু দেখেছি। করার কিছুই ছিলো না। তোকে নিয়ে ভেগে এসে পরেছিলাম তোর নানুর কাছে।

সিয়া;; কে মেরেছে?

দোলা;; _________

সিয়া;; মা বলো না কেনো? (চিল্লিয়ে)

দোলা;; স সা সাগর চৌধুরী।

সিয়া;; কি?

দোলা;; অর্নীলের বাবা।

সিয়ার হাত থেকে ঠাস করে চায়ের কাপ টা নিচে পরে যায়। পরে যাওয়ার সাথে সাথে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ফাটা চোখে সিয়া তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে। সিয়ার বাবার খুন হয়েছে তাও কিনা অর্নীলের বাবার হাতে। সিয়ার মাথা এখন সত্যি ভনভন করে ঘোড়াচ্ছে। সিয়া তার চোখগুলো খিচে বন্ধ করে আবার ফট করেই মেলে তাকায়।

সিয়া;; মা, তুমি কি বলছো বুঝতে পারছো? অর্নীলের বাবা ক………

দোলা;; তুই বলতে চাচ্ছিস এখন কিনা আমি তাহলে মিথ্যা কথা বলছি তাও তোর মৃত বাবার নামে।

সিয়া;; আমি তা বলি নি, ভুল বুঝো না। কিন্তু আংকেল বাবা কে মারবে মানে কেনো?

দোলা;; প্রতিহিংসা, তার থেকে বেশি নাম-ডাক হওয়াতে।

সিয়া;; বাবা আংকেলের সাথে কাজ করতো?

দোলা;; হ্যাঁ, তারা এক সাথেই বিজন্যাস করতো।

সিয়া;; ত তুমি এ এতোদিন মি মিথ্যা বলে এসেছো আমাকে!

দোলা;; এছাড়া উপায় ছিলো না। ইভেন আমি নিজেই জানতাম না যে অর্নীলের বাবা সাগর।

সিয়া;; অর্নীল এইসব….

দোলা;; কিছুই জানে না।

দোলা এক এক করে সবকিছু খুলে বলে সিয়াকে।
সিয়া করিডর থেকে নিজের রুমে এসে বিছানার ওপর ধপ করে বসে পরে৷ মূহুর্তেই চোখ-নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে৷ নিজের ওরনা টা হাত দিয়ে খামছে ধরে। দোলা করিডর থেকে কাচের টুকরো গুলো তুলে নিয়ে এসে পরে। দোলা চলেই যেতো রুম থেকে কিন্তু আবার সিয়ার কাছে যায়। “সিয়া” বলে ডাক দিতেই সে মাথা তুলে তাকায়। দেখে সিয়ার চোখ থেকে আপনা আপনিই টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরছে। এটা দেখেই দোলার মন টা ভেঙে যায়। দোলা সিয়ার চোখের পানি গুলো মুছে দেয়। থেকে থেকে নাক টানছে সে। দোলা সিয়ার সামনে থেকে উঠে চলে যেতে ধরবে তখনই সিয়া তার মায়ের হাত ধরে ফেলে। দোলা পেছন ফিরে তাকায়। সিয়া টলমল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে…

সিয়া;; আমি অর্নীল কে ভালোবাসি, মা।

দোলার কিছুই বলার নেই এখন। যার ভয় ছিলো তাই হচ্ছে। দোলা তার হাত টা ছাড়িয়ে দিয়ে এসে পরে। সিয়া এবার হুহু করে কেদেই দেয়। অর্নীল কে এখন সে কি বলবে! অর্নীল তো কিছুই জানে না। যদি একবার সে জানে তাহলে কি হবে। তবে এটা সিওর যে অর্নীল কখনোই সিয়াকে ছেড়ে যাবে না। সিয়া এখন এক দ্বিধায় পরে গেলো। নিজের বাবার খুনির ছেলের সাথেই থাকবে নাকি দূরে এসে নিজেকে সবার থেকে গুটিয়ে নিবে। না, দোলা সিয়াকে অর্নীলের ব্যাপারে কিছুই বলে নি। সে না ই অর্নীলের কাছ থেকে সিয়াকে দূরে থাকতে বলেছে আর না ই ছেড়ে যেতে বলেছে। তবে এটা সিয়ার নিজের কাছেই কেমন আজগুবি লাগছে। যে তার বাবা কে খুন করলো তারই ছেলে কে ভালোবাসে৷ কেনো, কেনো সে আগে এইসব কিছু জানলো না! এই পর্যায়ে এসে থমকে দাঁড়ানো যেনো তার ভাগ্যে লিখাই ছিলো তাই তো এমন হয়েছে। সিয়ার কান্না যেনো থামছেই না, হাতের উল্টো পাশ দিয়ে বারবার চোখ গুলো মুছছে। নীরবতার মাঝে হুট করেই সিয়ার ফোন টা বেজে ওঠে। সিয়া চমকে গিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন টা নেয়। তুলে দেখে অর্নীল। বুক টা কেমন যেনো ধক করে ওঠে৷ ফোন পিক করবে কি করবে না তা নিয়ে ভাবতে লাগলো। আর হাতে ফোন নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তা কেটে যায়। তার কয়েক সেকেন্ড পর আবারও ফোন আসে। সিয়া এবার ফোন টা ভাবলেশহীন ভাবেই কানে ধরে৷

অর্নীল;; এই মেয়ে একবারে ফোন ধরা যায় না নাকি। কত্তো বলবো।

সিয়া;; হুম।

অর্নীল;; সিয়াজান!

সিয়া;; __________

অর্নীল;; সিয়া।

সিয়া;; হু হুমম।

অর্নীল;; আর ইউ ওকে, মানে কিছু কি হয়েছে? ঠিক আছো?

সিয়া;; হ্যাঁ

অর্নীল;; মোটেও না। কি হয়েছে বলো। কেউ কি কিছু বলেছে?

সিয়া;; আরে না কে কি বলবে।

অর্নীল;; তাহলে গলা এমন কেনো। কান্না করেছো কেনো?

সিয়া;; কান্না করি নি। আ আসলে আইসক্রিম খেয়েছিলাম তো তাই ঠান্ডা লেগে গিয়েছে, গলা ভেঙে গেছে আর কি তাই এমন লাগছে।

অর্নীল;; Siya, Don’t lie

সিয়া;; আচ্ছা বাদ দিন, আপনি কোথায়?

অর্নীল;; ক্লাবে এসেছি।

সিয়া;; আচ্ছা, অর্নীল আমি রাখি হ্যাঁ, আমার ঘুমাতে হবে। কাল কলেজ আছে।

অর্নীল;; কিন্তু সিয়া……

অর্নীলের কিছু বলার আগেই সিয়া ফোন রেখে দেয়। এক সময় কান্না করতে করতে ঘুমিয়েও পরে। ওদিকে দোলা একদম মন মরা হয়ে নিচে নেমে আসতেই শিউলি বেগমের সাথে দেখা হয়।

শিউলি;; কিরে কি হয়েছে, মুখ টা এমন শুকনো লাগছে কেনো?

দোলা;; কিছু না মা।

শিউলি;; ভুলিস না তুই সিয়ার মা হলে আমি তোর মা। বুঝি সব, কি হয়েছে? মা-মেয়ে ঝগড়া করেছিস?

দোলা;; সিয়াকে তার বাবার বিষয়ে সব বলে দিয়েছি।

শিউলি;; কি বলিস! সিয়া ঠিক আছে?

দোলা;; হয়তো। ও অর্নীল কে ভালোবাসে অনেক। এখন আমি কি বলবো ওকে। আর অর্নীল যে খারাপ তা না, ছেলেটা যথেষ্ট ভালো।

শিউলি;; তাই বলে তুই রহমানের সাথে এমন টা করতে পারিস না। সিয়া কে বল অর্নীল কে ভুলে যেতে। যে ব্যাক্তি সিয়ার বাবা কে খুন করেছে তাকে সিয়া নিজের শশুড় হিসেবে কীভাবে মেনে নিবে। আর সিয়া এখন সবই জানে। এটা সম্ভব না। সিয়া কে বল অর্নীল কে ভুলে যেতে। আর যাই হোক আমার মেয়ের জামাই এর খুনির সাথে আমি আত্নীয়তা করতে পারবো না। দোলা বুঝেছিস তুই?

দোলা;; হুমমম।

শিউলি বেগম সেখান থেকে এসে পরে৷ দোলা রুমে চলে যায়, ঘুম নেই চোখে এক ফোটা। সিয়া যদি অর্নীল কে ভুলতে না পারে তাহলে কি হবে। আর অর্নীলই কি এতো জলদি সিয়ার পিছু ছাড়বে। মনে হয় না।

আর অর্নীল ড্যাম সিওর যে সিয়ার কিছু না কিছু তো হয়েছেই। নয়তো সে এমন করতো না। অর্নীল এগুলোই ভাবছে আর একের পর এক এলকোহলের পেগ মেরে যাচ্ছে।




পরেরদিন সকালে~~

সিয়া দ্রুত পা ফেলে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে। দোলা কিছু বলতে যাবে কিন্তু সিয়া তার পাশ কাটিয়ে এসে পরে। কাউকে কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মুখ টা কেমন গোমড়া। সেটা শিউলি আর দোলা দুজনেই খেয়াল করে। শিউলি দোলা কে ইশারাতে শান্ত থাকতে বলে। এদিকে সিয়া তার বাড়ি থেকে বের হয়ে বাইরে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো। বেশ সময় চলে গিয়েছে তবুও কিচ্ছু পাচ্ছে না। বারবার নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। তখনই সিয়ার সামনে স্বশব্দে একটা গাড়ি থামে। সিয়া কিছুটা পিছিয়ে যায়। গাড়ির উইন্ড খুলে নিচে নেমে এলে সিয়া দেখে সায়ন।

সায়ন;; এই যে বেয়াইন! কেমন আছেন?

সিয়া;; জ্বি ভালো, আপনি?

সায়ন;; হ্যাঁ এইতো ভালো। তো কোথায় যাওয়া হচ্ছে কলেজ?

সিয়া;; হ্যাঁ।

সায়ন;; উঠে পরুন। আপনাকে দিয়ে আসি।

সিয়া;; না না আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি একাই যেতে পারবো।

সায়ন;; আমিও হস্পিটালে যাচ্ছি। আর আমার হস্পিটাল থেকে আপনার কলেজ বেশি একটা দূরে তো না। এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করার থেকে চলুন দিয়ে আসি।

সিয়া ভেবে দেখলো এমনিতেই ১০ মিনিট দেরি হয়ে গিয়েছে। তাই সে সাত পাঁচ না ভেবে এক সময় উঠেই পরে গাড়িতে। সায়ন গাড়ি নিয়ে চলে যায়। ড্রাইভ করতে করতে হঠাৎ বলে ওঠে…..

সায়ন;; তো এই বাসা আপনাদের?

সিয়া;; জ্বি।

সায়ন;; আন্টি আর নানু কেমন আছেন?

সিয়া;; সবাই ভালো৷

সায়ন;; আর আপনি?

সিয়া;; আছি কোন রকম।

সায়ন;; চোখ মুখ কেমন লাল হয়ে আছে আপনার। কি হয়েছে?

সিয়া;; কিছু না এমনি।

সায়ন;; ডক্টর পাশে বসে আছে। অসুখের কথা বলতে পারেন।

সিয়া;; আরে না তেমন কিছু না। ঠিক আছি। আদিবা আপু আর বাকিরা সবাই কেমন আছে?

সায়ন;; হ্যাঁ সবাই বেশ ভালোই।

এভাবেই টুক টাক কথা বলতে বলতে একসময় সিয়ার কলেজের সামনে এসে পরে৷ সিয়া গাড়ি থেকে নেমে পরে। সায়ন কে বিদায় জানিয়ে এসে পরে। তবে কলেজের ভেতরে ঢুকতে গেলেই দেখে অর্নীল দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে এখনো সিয়াকে দেখেই নি। সিয়াও যেনো অর্নীলের চোখে না পরে তার জন্য মুখে নিজের নাস্ক টা পরে নিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে সেখান থেকে এসে পরে। যেই না একেবারে ক্লাস রুমের ভেতরে চলে যেতে ধরবে তার সাথে সাথেই অর্নীল সিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে এনে টেনে নিয়ে যেতে লাকে। সিয়া নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে৷ বারবার অর্নীল কে হাত ছাড়ার কথা বলছে কিন্তু অর্নীল তো হাত ছাড়ার পাত্র না। তাকে একদম কলেজ মাঠে নিয়ে যায়। আর এখন যেহেতু ক্লাস টাইম তাই সবাই যার যার ক্লাসরুমে। মাঠ টা পুরোই ফাকা৷ অর্নীল সিয়া কে টান দিয়ে নিজের সামনে এনে দাড় করিয়ে দেয়। সিয়া বিরক্তি মাখা মুখ করে আবার চলে যেতে ধরলে অর্নীল আবার তার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের সামনে আনে। আর এবার অর্নীল তার হাত ছাড়ে নি। শক্ত করে ধরেই রেখেছে।

অর্নীল;; কি হয়েছে হ্যাঁ? প্রব্লেম কি? সকালে এত্তো গুলো ফোন দিলাম, মেসেজ দিলাম। ফোন ধরো না রিপ্লাই নেই। এখন আবার আমাকে দেখে চলে যাচ্ছো লুকিয়ে। সমস্যা কি তোমার? ইগ্নোর কেনো করছো?

অর্নীল সিয়ার বেশ কাছে গিয়েই কথা টা বলে। সিয়া তার চোখ বন্ধ করে অন্য পাশে তাকিয়ে ছিলো। অর্নীলের কথায় গতকাল রাতে সিয়ার তার নানুর কথা গুলো মনে পরে যায়। কাল রাতে সিয়া নিচে নামতে ধরেছিলো আর তখনই সে শিউলি বেগমের বলা সব কথাই শুনে ফেলে।

অর্নীল;; সিয়া চুপ করে থাকলে কিন্তু এখনই এখানে কিছু একটা করে বসবো আমি।

সিয়া;; কারণ আমার এইসব কিছু আর ভালো লাগছে না।

অর্নীল;; ভালো লাগছে না মানে কি? কি ভালো লাগছে না?

সিয়া;; অর্নীল প্লিজ হাত টা ছাড়ুন এখন আমার ক্লাস আছে।

অর্নীল;; ক্লাস রে গুল্লি মারি। তোমার কি হয়েছে বলবা? এমন করছো কেনো?

সিয়া;; ওকে ফাইন, আমরা কলেজ টাইম শেষে ক্যান্টিনে বসে আস্তে ধীরে এই ব্যাপারে কথা বলি। এখন আমি কিছু বলবো না তো অযথা চিল্লিয়ে লাভ নেই। আমরা কলেজ শেষে কথা বলি। আর আপনি এখন দয়া করে আপনার অফিসে যান। কলেজ ক”টায় শেষ হয় তা তো জানেনই। এসে পরবেন, এখন নিজেও যান। আর আমাকেও যেতে দিন। অর্নীল হাত ছাড়ুন।

অর্নীল এক ঝটকায় সিয়ার হাত ছেড়ে দেয়। তারপর রেখে-মেগে সেখান থেকে এসে পরে। সিয়া কতোক্ষণ অর্নীলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেও ক্লাসে এসে পরে।





চলবে~~