তোর রঙে রাঙাবো পর্ব-১০

0
1868

#তোর_রঙে_রাঙাবো
#Part_10
#Writer_NOVA

পৃথিবী আজ নতুন রঙে সেজেছে।প্রায় চারদিন ঝড়-বৃষ্টির পর আজ সূর্যি মামার দেখা মিলেছে। চারিদিকে মিষ্টি রোদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে।মানুষজন ঘর থেকে বেরিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ছে।চারটা দিন ঘরে থাকতে থাকতে বিরক্ত তারা।ঝড়ের কারণে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা উপরে পরে আছে রাস্তার মধ্যে। সেগুলোই দল বেঁধে সরানোর কাজে লেগেছে এলাকার যুবকরা।

কফি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।চারিদিকে ঠান্ডা হিমেল হাওয়ায় বেশ ভালো লাগছে। বড় করে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগলাম।

আমিঃ এই ঝড়ে আর কারো ক্ষতি না হলেও উত্তরের মাঠের ঐপাড়ের বস্তি এলাকার মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ওদের তো আর আমাদের মতো দালানকোঠা নয়।কাগজের বা পলিথিনের তৈরি ঘরগুলো তো সামান্য বাতাসেই কোথায় উড়ে চলে গেছে কে জানে?বৃষ্টির দিন তো সবার জন্য আনন্দ দায়ক নয়।যারা এই চারটা দিন কষ্ট করেছে তারা জানে তাদের কাছে এই দূর্যোগটা কি ছিলো।আচ্ছা, সেদিনের মতো কি আজ রাতেও সেই দলটা আসবে? যে ওদের রাতের আঁধারে ত্রাণ দিয়ে যেতো।এবার যদি আসে তাহলে আমি নিশ্চয়ই আবার যাবো।আর তাদের মুখটা দেখবোই দেখবো।এমন ভালো মানুষগুলোকে চিনে রাখা দরকার।

মনে মনে হাজরটা কথা ভাবছিলাম।হুশ ফিরলো হকারের “পেপার” কথাটা শুনে। দরজার ফাঁক দিয়ে পেপার দিয়ে হকার নিশ্চয়ই অন্য দিকে চলে গেছে। ভাইয়ুর শরীরটা বেশি একটা ভালো না।গত পরশু সন্ধ্যার দিকে কোথা থেকে যে ভিজে এসেছে কে জানে?দুদিন ধরে বিছানার থেকে উঠতে পারে না। আজ সকালে দেখলাম জ্বরটা একটু কমেছে। রান্নার কাজটা আজ আমাকেই করতে হবে। নিচু হয়ে পেপারটা তুলে পড়তে আরম্ভ করলাম।হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে চোখ দুটো অটোমেটিক গোল গোল হয়ে গেলো।

আমিঃ “শহরের অন্যতম ধনী সোবহান চৌধুরীর ছোট ছেলে সোহান চৌধুরীর লাশ পাওয়া গেছে রাঙামাটির এক উপকূলীয় অঞ্চলে। গতকাল দুপুরে তার লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশের কাছে ইনফর্ম করে।পুলিশ লাশ উদ্ধার করে খোঁজ লাগাতে শুরু করে। একসময় জানতে পারে তার পরিচয়।পুলিশ জানিয়েছে তার মৃত্যু হয়েছে বুলেটের আঘাতে।” আল্লাহ আমি ঠিক দেখছি তো।একে আবার মারলো কে?তাও একটা, দুইটা নয় পাঁচটা গুলি করেছে। মাথায় ও হার্টের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে।

হাত থেকে কফির মগটা পরে গেল। মনে হচ্ছে আমার আশেপাশে সবকিছু ঘুরাচ্ছে। আমি ধপ করে ফ্লোরে বসে পরলাম।চোখ বন্ধ করে খাটের সাথে মাথা হেলান দিয়ে রাখলাম।মগ ভাঙার শব্দ পেয়ে ভাইয়ু পাশের রুম থেকে দৌড়ে এলো।

তাসিনঃ রাইপরী, কি হয়েছে তোর?তুই এভাবে আছিস কেন?মগ ভাঙলো কি করে? কিরে, আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?কি হয়েছে বল আমায়?

আমি কোন কথা না বলে হাতে থাকা পেপারটা ভাইয়ুর দিকে বাড়িয়ে দিলাম।ভাইয়ু পেপারে থাকা খবরটা পড়ে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।আমি মোটেও সোহানের মৃত্যু চাইনি।এই খবরটা আমি আসলে নিতে পারছি না।

তাসিনঃ এই বিষয়টা নিয়ে নিয়ে তুই এতো আপসেট ও অসুস্থ হয়ে পরছিস?বাদ দে তো।যে পাপ করে তার এভাবেই শাস্তি হওয়া চাই। আমার বোনকে র্যাগিং করেছে।ওকে সামনে পেলে তো আমি খুন করতাম।যে এই কাজটা করেছে তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার কাজটা আসান করে দিয়েছে।

কথাগুলো বলার সময় ভাইয়ুর মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছিলো।সোহানের প্রতি ভাইয়ুর অনেক আক্রোশ আছে।সেটা অবশ্য আমাকে সেদিন সারা কলেজের সামনে অপমান করার জন্য। ভাইয়ু যদি পরেরদিন ওকে হাতের সামনে পেতো তাহলে সত্যি খুন করে ফেলতো।ভাইয়ু আমাকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিলো। তারপর আমার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে, মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো।

তাসিনঃ যে পাপ করবে তাকে তার ফল অবশ্যই পেতে হবে।সোহানের মতো ছেলেকে কেউ কারণ ছাড়া মারেনি।তুই ঐ শয়তানের কথা ভেবে নিজের শরীর খারাপ করিস না।যা গিয়ে মাথায় একটু পানি দিয়ে আয়।ভালো লাগবে।আজ তোকে কষ্ট করে রান্না করতে হবে না। আমি বাইরের থেকে পরোটা ও ভাজি কিনে নিয়ে আসছি।আমি আবারো বলছি, ঐ সোহানের কথা ভেবে যদি নিজের শরীর অসুস্থ করিস তাহলে তোর জন্য সেটা ভালো হবে না কিন্তু।

ভাইয়ু উঠে বাইরে চলে গেল। আমি এখনো ঠায় বসে আছি। বিষয়টা ঠিক হজম করতে পারছি না।সোহানকে কে মারলো?যারা ওর বন্ধুদের মেরেছিলো সেই ব্যাক্তিটা নয়তো?পুরো ঘটনাটা আমার কাছে বিশাল ধাঁধা মনে হচ্ছে। সবকিছু ধোঁয়াসা।

🌺🌺🌺

একসাথে রাতের খাবার খেয়ে বসে আছে পুরো মাফিয়া গ্যাং।হাসিব বসে আছে তাদের কিং-এর পাশে। ছেলেটার মুখে আজ উজ্জ্বল হাসি দেখা যাচ্ছে। হাসিব কিছু সময় পর পর ভ্রু কুঁচকে তার বসের দিকে তাকাচ্ছে।

হাসিবঃ ভাই,আপনাকে আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না।এই ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে সোহানকে রাঙামাটি গিয়ে মারার কি দরকার ছিলো?আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করলে তো ওকে নিজের ডেরায় দেখতে পেতেন। শুধু শুধু নিজের জীবন বাজি রেখে এসব কাজ করে আপনি কি আনন্দ পান?

ছেলেটা একগালে হেসে হাসিবের দিকে তাকালো। তারপর হাতে থাকা গান দুটোকে দুই হাতে ঘোরাতে ঘোরাতে হাসিবকে বললো,,

—- আমি আনকোমনভাবে কাজ করতে ভীষণ পছন্দ করি। আমি চাইলে অবশ্যই আর কিছু দিন অপেক্ষা করতে পারতাম।কিন্তু হুট করে সেদিন সকালে মনে হলো আমি কেন ওর অপেক্ষায় বসে থাকবো।মাফিয়া কিং কারো জন্য অপেক্ষা করে না।বরং সবাইকে অপেক্ষা করায়।তাই আমি গিয়ে ওকে সেই স্থানে নিজ হাতে উপরে শিফট করে দিয়ে আসবো।এতে যদি ওর বাপের ও ভাইয়ের টনক নড়ে। আমার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়েছে।তাকে সবার সামনে অপমান করেছে। আর আমি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো।বিষয়টা কিরকম হাস্যকর।

চোখ, মুখ কুঁচকে কথাগুলো বলে আবার গান ঘোরানোর কাজে লেগে পরলো ছেলেটি।হাসিব চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটা একবার হাসিবের দিকে তাকিয়ে আরেকবার বাকি গার্ডগুলোর দিকে কপাল কুঁচকে, চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালো।ছেলেটাকে এভাবে তাকাতে দেখে মুখে বিশাল বড় প্রশ্নসূচক চিহ্ন রেখে জিজ্ঞেস করলো।

হাসিবঃ কি হয়েছে ভাই?এনি প্রবলেম?

ছেলেটা কিছু সময় ভেবে উত্তর দিলো।

— আমরা এখানে যারা যারা আছি, সবাই তো এতিম তাই না?মানে কারো বাবা-মা নেই।

হাসিবঃ হ্যাঁ,ভাই।আমাদের কারো বাবা-মা নেই। এটা তো আপনি জানেন।তাহলে হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করলেন?

—- আমি খবর পেয়েছি আমার দলে এমন একজন মানুষ আছে যে তার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে এসেছে।আমার মৃত্যু দেখা না পর্যন্ত সে আমার পিছু ছাড়বে না।যার কারণে শত্রুপক্ষের সাথে হাতও মিলিয়েছে। আমার সব খবরাখবর শত্রুদের হাতে তুলে দেয়। তার বাবাকে নাকি আমি মেরে ফেলেছি।সেই ছেলেটা কে তাহলে?

হাসিবঃ ভাই, এখানকার প্রত্যেকটা ছেলের পরিচয় ও যাবতীয় ডিটেলস আমার কাছে আছে।এমন কোন তথ্য তো আমি পাইনি।তাছাড়া সন্দেহজনক কিছুও নেই।আপনি কি আদোও সত্যি কিছু শুনেছেন?নাকি ভুল তথ্য দিয়ে আপনাকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।

—- না,আমার পাওয়া তথ্য ভুল হতে পারে না।কারণ আমি পুরো সিউর হয়ে বলছি।যদি আমাদের দলের কেউ শত্রুপক্ষের সাথে হাত না মিলাতো তাহলে গোডাউন থেকে সবার চোখের আড়ালে কিছুতেই ক্যাটনগুলো সরাতে পারতো না।আমার দলের লোক ছাড়া বাইরের একটা কাকপক্ষীও এর বিষয়ে জানতো না।আর সেখান থেকে খাদ্য সরানো তো মুখের কথা নয়।বাইরের কেউ রাস্তা জানবে কি করে যদি আমার লোক বলে না দেয়।আমার সেই ঘরের শত্রু বিভীষণটা কে হতে পারে?

হাসিবঃ সত্যি তো ভাই, বিষয়টা ভাববার মতো।আমি তো এতটা ভেবে দেখিনি।

—- আপাতত এই বিষয় নিয়ে না ভাবলেও চলবে।আগামীকালের পরিকল্পনা কতদূর গেলো সেটা বল।কালকে এই সময়ে সোবাহান চৌধুরীকে আমি আমার ডেরায় আমার সামনে দেখতে চাই। তার সাথে অনেক হিসাব-নিকাশ বাকি আছে।

হাসিবঃ আপনি কোন চিন্তা করবেন না।সবকিছু এই হাসিবের ওপর ছেড়ে দিন।সোবহান চৌধুরীকে যেখান থেকে পারি আমরা তুলে আনবোই আনবো।

—- কি ভেবেছে মিস্টার সোবহান চৌধুরী?আমার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবে?কিছুতেই না।আমার দিকে কেউ আঙুল তুললে আমি তার পুরো হাতটাই কেটে দেই।আর সে তো আমার গোডাউন থেকে খাদ্য সরানোর মতো দুঃসাহস করেছে। তাকে আমি ছেড়ে কিভাবে দেই বল?ওর মৃত্যুও ঘনিয়ে এসছে। তবে মরার আগে ওর থেকে অনেক ইনফারমেশন আমার নিতে হবে।যেগুলো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।

ছেলেটা বাঁকা হেসে দুই হাতে গান তুলে নিলো।তারপর ঝড়ের গতিতে শূন্যে কতগুলো ফাঁকা গুলি ছুড়লো।ভেতরে ভেতরে সবাই বেশ ভয় পেলেও নিজের স্থান থেকে একচুলও নড়লো না।ঠায় দাঁড়িয়ে সামনে দৃষ্টি দিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে রইলো।যেটা দেখে ছেলেটা মনে মনে বেশ খুশি হলেও তা মুখে প্রকাশ করলো না।

#চলবে

রি-চেইক দিতে অনেক কষ্ট লাগে😐।ভূল-ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে একটু কষ্ট করে সঠিকটা পড়ে নিয়েন🥰🥰।