#তোর_রঙে_রাঙাবো
#Part_16(তীব্রর রহস্য সমাধান)
#Writer_NOVA
সময় এখন রাত ১টা।ব্রিজের কিনারে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট শেষ করছে তাসিন।অনেক দিন পর সিগারেট খাচ্ছে সে।পুষ্পর জন্য সে এটা ছেড়েই দিয়েছিলো।ডান হাত দিয়ে টপটপ করে রক্ত পরে এখন সেই স্থানটায় রক্ত শুকিয়েও গেছে।এই হাত দিয়ে সে তার পুষ্পকে থাপ্পড় মেরেছে।তাই ছুড়ি দিয়ে কেটে ঝাঝড়া করে ফেলেছে।বাম হাতে সিগারেট টানছে।আর শূন্যে ধোঁয়া উড়াচ্ছে।রাতের অন্ধকারটাও আজ তার জীবনের অন্ধকারের থেকে কম মনে হচ্ছে। চোখটাও আজ তার বৈঈমান হয়ে গেছে। যার কারণে চোখের পানি পরছে না। হাসিব এসে ওর পাশে দাঁড়ালো।
হাসিবঃ ভাই,শরীর খারাপ করবে।এতো সিগারেট একসাথে খেয়েন না।আপনার তো এতগুলো একসাথে খাওয়ার অভ্যাস নেই। আপনার হাতটাও তো ধরতে দিচ্ছেন না।ব্যান্ডজ না করলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।নিজের মাথা ঠান্ডা করুন।দেখবেন আল্লাহ সব ঠিক করে দিবে।ভাবী তার ভুল বুঝতে পারবে।শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন।এমনটা করে কি লাভ হবে?নিজে কষ্ট পাবেন।বিয়ের আগে অসুস্থ হয়ে পরবেন।আপনার কিছু হলে আপনার বোনের কি হবে?ওর জন্য হলেও তো আপনাকে ভালো থাকতে হবে।
তাসিনঃ আমি সত্যি খুব খারাপ হাসিব।আমি যদি খারাপ না হতাম তাহলে আজ পুষ্পকে এই হাত দিয়ে মারতে পারতাম না।পারতাম না ওর গাল ও গলা চেপে ধরতে।ওকে এতো কষ্ট দিতে পারতাম না।যে হাত দিয়ে ওকে আগলে রাখার কথা ছিলো সেই হাত দিয়ে আমি ওকে মেরেছি।ও কেন বললো আমাকে বিয়ে করবে না। আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।ও যদি এই কথাটা না বলতো তাহলে তো ওকে আমি মারতাম না।এই কথাটা শুনেই তো আমার ভীষণ রাগ হয়েছে। ওকে আমি কত ভালোবাসি ও জানে না।ওকে ছাড়া আমি যে বাঁচবো না। তাই তো জোর করে পরিবারের ভয় দেখিয়ে ওকে বিয়ে করার হুমকি দিয়েছি।আমি তো চাইনি ওকে আমার এই হিংস্র রূপ দেখাতে।
হাসিবঃ ভাই,আপনি তো বললেন ওকে কেউ ভিডিও পাঠিয়েছে। তাই ভাবী সেটা বিশ্বাস করে আপনাকে ভুল বুঝেছে।তাছাড়া আপনার নামে মিথ্যে কথা বলে আপনাকে তার চোখে খারাপ করেছে। তাই সে এমনটা করেছে। সত্যিটা জানলে তিনি তার ভুল বুঝতে পারবে।তাকে বোঝাতে হবে আমরা সবসময় চোখের সামনে যা দেখি তা সত্যি নয়।
তাসিনঃ ও তো আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতো এগুলো সত্যি কিনা?এর পেছনের কারণ কি?তা না করে ও আমাকে অবিশ্বাস করলো।আমার ভালোবাসাকে মিথ্যে প্রমাণ করলো।আমাকে নোংরা মানুষ বললো।খুনীর অপবাদ দিলো।কিন্তু একবারো জানতে চাইলো না আমি এমনটা কেন করলাম?ও জিজ্ঞেস করলে তো আমি সব সত্যি বলে দিতাম।তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনীয়তা কেন মনে করলো না?কেন মনে করলো না?
হাসিবঃ ভাই, অনেক রাত হয়েছে। চলেন আপনাকে বাসায় দিয়ে আসি।বোন একা আছে।আপনি এখানে একা থাকলে আপনার বিপদ।এমনি আমাদের শত্রুর অভাব নেই।
তাসিনঃ আমি আজ এখানেই থাকবো। তুই চলে যা।ডেরায় ফিরে আমাকে কল করিস।নতুন প্ল্যান করতে হবে।আর রাইপরীর জন্য আমার কোন টেনশন নেই। ওকে পাহারা দেওয়ার জন্য আমি লোক পাঠিয়ে দিয়েছে।আমাকে একটু একা থাকতে দে।তুই গাড়ি নিয়ে চলে যা।আমি হেঁটে চলে যাবো।
হাসিবঃ কিন্তু ভাই—–
তাসিনঃ কোন কিন্তু নয়।যা বলছি তাই কর।
তাসিনের হুকুম পেয়ে হাসিব আর দেরী করলো না।একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।হাসিব যেতেই পেছন থেকে একজন রিভেলবার ঠেকালো তাসিনের মাথায়।তারপর জড়ালো গলায় বলে উঠলো।
—– ইউ আর আন্ডার এরেস্ট।
তাসিনঃ ইমতিয়াজ আহমাদ তীব্র। আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজন সক্রিয় সদস্য।একজন সৎ,আদর্শবান সিবিআই অফিসার।এম আই রাইট?
তীব্রঃ সুতীক্ষ্ম আই-কিউ তো ভালোই আছে।না দেখেও বলে দিতে পারলে আমি তীব্র। তাছাড়া পুরো পরিচয়ও দেখছি জানো।অবশ্য মাফিয়া জগতে টিকতে হলে তো এরকম আই-কিউ থাকতেই হবে।নয়তো পায়ের তলায় পিষে মরতে হবে।
তাসিনঃ তোমাকে আমি অনেক আগের থেকেই চিনি।তুমি আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে যেদিন কলেজে গিয়েছো।সেদিনই তোমার ব্যাকগ্রাউন্ডের পুরো তথ্য জোগাড় করে ফেলেছি।কিন্তু দুদিন পর কলেজে জয়েন করে আমাকে পেলে না।আমি কিন্তু এটাও জানি।সেদিন রাতে তুমি আমার বোনকে কোলে করে বাসায় পৌছে দিয়ে গেছো।কারণ বাসার সি সি টিভি ফুটেজে স্পষ্ট তোমার মুখ দেখেছি আমি।তারপর প্রথম দেখায় আমার বোনকে পছন্দ করে নিলে।আমি ভেবেছিলাম এটা তোমার কোন নতুন চাল।যাতে আমার বোনকে ব্যবহার করে তুমি আমার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারো।তাই বোনের পেছনের সিকিউরিটি গার্ড আরো টাইট করে দিলাম।বৃষ্টির দিন তোমাদের একসাথে চা খেতে দেখেও একটু খোটকা লেগেছিলো।কিন্তু পরে দেখলাম আসলে সত্যিই তুমি আমার বোনকে ভালোবাসো।
তীব্রঃ আমি জানতাম না রাই তোমার বোন।তবে এটা সত্যি আমি রাইকে ভালোবাসি।সেদিন শপিংমলে রজনীগন্ধা দিয়ে প্রপোজও করেছিলাম।কিন্তু তারপরে জানতে পারলাম ঐটা তোমার বোন।তুমি নিশ্চয়ই জানো সেদিন ঐ ছেলেগুলোর হাত থেকে আমিই তোমার বোনকে বাঁচিয়েছি।কিন্তু কেন তা জানো কি?
🌺🌺🌺
তীব্রর কথা শুনে তাসিন কপাল কুঁচকে সামনের দিকে ঘুরলো।তারপর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
তাসিনঃ কেন?
তীব্রঃ কারণ আমি আগেই জানতে পেরেছিলাম তোমার বোন বিপদে।সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় একজন লোকের মুখে তোমার ও তোমার বোনের নাম শুনি।তাই দেয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে আমি সব কথা শুনছিলাম।মাথা টুপি দিয়ে ঢেকে রাখছিলাম।যাতে করে আমার চেহারা না দেখা যায়।সেই ছেলেটা পেছনের দিকে ঘুরে থাকার কারণে তার মুখ দেখতে পারি না।তার মুখে তোমার কথাগুলো শুনে আমি ভীষণ অবাক হয়ে যাই।তাছাড়া আমি আগের থেকে জানতে পারি রাইয়ের বিপদ।তাই ওর সাথে সাথেই ছিলাম।প্রপোজ করার কিছু সময় পর ওরা রাইকে পেয়ে যায়।আর আমি ফাইটিং করে রাইকে ওদের হাত থেকে বাঁচিয়ে নেই। তারপর তোমার ব্যাপারে খোঁজ লাগাই।খোঁজ লাগিয়ে আমি আরো অবাক হই।কারণ তোমাকে ধরতে আমি যেই ত্রাণ বিতরণ সংঘের সাথে যুক্ত ছিলাম। সেটা নাকি তুমি চালাও।অনেক ভালো কাজের রেকর্ড পেয়েছি আমি। কিন্তু তোমার খুনের দায়ে তোমাকে অবশ্যই সাজা পেতে হবে।তুমি নিজ থেকে সারেন্ডার করো।তাহলে আমি নিজে তোমাকে বের হতে হেল্প করবো।
তাসিনঃ আমার বিষয় ভালো তথ্য জোগাড় করেছো দেখছি।কিন্তু সরি অফিসার।আমি এখন ধরা দিচ্ছি না।আমার বহু কাজ বাকি আছে। সেগুলো সম্পন্ন হওয়ার পরই আমি ধরা দিবো।সো,টা টা।আল-বিদায়।
তাসিন কথাগুলো বলে একটা বাঁকা হাসি দিলো।তারপর চট করে ব্রিজের ওপর উঠে পানিতে লাফ দিলো।তীব্র কয়েকটা গুলি ছুড়লো।কিন্তু একটাও তাসিনের শরীরে লাগলো না।
তীব্রঃ ওহ্ শীট।পালিয়ে গেলো। একে ধরতে আমার যথেষ্ট নাকানিচুবানি খেতে হবে। তার মধ্যে আমার আবার সমোন্ধি বাবু।কিছু করলেই সারাজীবনের জন্য রাইকে হারাতে হবে।আর রাইকে ছাড়া তো আমি থাকতে পারবো না। একদিকে চাকরী আরেকদিকে প্রেমিকার ভাই।কি যে করবো আল্লাহ জানে?
মাথায় হালকা চাপড় মেরে নিজের বাসার দিকে রওনা দিলো তীব্র। আরেকটু সতর্ক হলে এতো দিনের কষ্টটা সাকসেস হতো।তাসিনকে ধরার জন্য সেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পোস্টিং হয়েছে তীব্র। পুরো মাফিয়া টিমকে এরেস্ট করা বর্তমানে ওর কর্তব্য।তাই ছদ্মবেশে এতোদিন তাসিনকে ফোলো করছিলো।আজ ধরেও ফেলতো।কিন্তু একটুর জন্য সব ফসকে গেলো।
এবার পুরো বিষয়টা আপনাদের ক্লিয়ার করে দেই।ইমতিয়াজ আহমাদ তীব্র। পেশায় একজন সিবিআই অফিসার। একজন নিষ্ঠাবান,বিচক্ষণ, সৎ অফিসার। যে কেস হ্যান্ডেল করেছে সেটাই সাকসেস হয়েছে। অনেক দিন ধরেই মাফিয়া কিং-এর নামে বেশ কয়েক ডজন কেস জমা হয়ে আছে।কিন্তু কেউ সলভ করতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম থেকে তীব্রকে নিয়ে আসে।তীব্র কেসটা হাতে নেওয়ার পরই বুঝতে পারে এটা কোন সাধারণ কেস নয়।কারণ আজ পর্যন্ত কেউ মাফিয়া কিং-এর নামও জানে না। সেখানে তাকে খুঁজে পাওয়া মানে ঘাসের মধ্যে সুচ খোঁজা।
তাই ছদ্মবেশে “আল্লাহর দান” ত্রাণ সংগঠনের একজন সেচ্ছাসেবী হয়ে যোগ দেয় তীব্র।সেখানেই কিছু ক্লু পায় তাসিনের নামে।কারণ সেই সংগঠনটা তাসিন চালাতো।আর তীব্র গিয়েছিলো সামান্য এক কর্মী হয়ে।তাসিন সেই মাফিয়া কিং কিনা তাতে সিউর হতে কলেজেও একজন সাধারণ স্টুডেন্ট হিসেবে যোগ দেয়। ২৪ ঘন্টা তাসিনকে ফোলো করে একসময় তীব্র ধরে ফেলে সেই মাফিয়া কিং আর অন্য কেউ নয় তাসিন।এর মধ্যে আবার রাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া শুরু করে। তাসিনের ব্যাকগ্রাউন্ডের রেকর্ড দেখে অবাক হয়ে যায় তীব্র। কারণ ওর সব কাজ ভালো উদ্দেশ্য। তবে খারাপ লোকদের মার্ডারের কারণে অনেকগুলো কেস রয়েছে ওর নামে।
#চলবে