তোর রঙে রাঙাবো পর্ব-১৫

0
2052

#তোর_রঙে_রাঙাবো
#Part_15
#Writer_NOVA

একটা চড়ের শব্দে নদীর পাড়ের পরিবেশটা স্তব্ধ হয়ে গেলো।নিরব পরিবেশ থাকায় বেশ ভালোই বোঝা গেছে চড়ের শব্দটা।গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাসিন।ওর সামনে অগ্নিমূর্তি হয়ে রাগে ফুঁসছে পুষ্প।তাসিনকে চড়টা পুষ্পই মেরেছে। তাসিন এই মুহুর্তে তব্দা খেয়ে আছে।ওর চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না কাজটা পুষ্প করেছে।তাসিনকে ইমিডিয়েটলি নদীর পাড়ে আসতে বলেছে পুষ্প।জুরুরি কথা আছে।তাই তাসিন সব ফেলে রেখে ছুটে চলে এসেছে। কিন্তু এখানে এসে যে এত বড় একটা উপহার পাবে তা কল্পনাও ভাবেনি।

তাসিনঃ পুষ্প জান কি হয়েছে তোমার?তুমি আমায় মারলে কেন?আমি কি কোন ভুল করেছি?

পুষ্পঃ নাহ্ তুই ভুল করবি কেন?ভুল তো করেছি আমি।তোকে বিশ্বাস করা আমার সব থেকে বড় ভুল।তুই আমাকে ধোকা দিয়েছিস।ছিঃ তাসিন ছিঃ। তোমাকে আমি ঠিক কতটা ভালোবাসতাম তা বোঝাতে পারবো না।তোর_রঙে_রাঙাবো বলে নিজেকে সাজিয়েছিলাম।কিন্তু তুই এত খারাপ মানুষ জানলে কখনি তোকে নিজের মনটা দিতাম না।বল,এভাবে আর কত মেয়ের সাথে খেলেছিস।

তাসিনঃ তুমি আমার সাথে তুই-তুকারি কেন করছো?কি ভুল হয়েছে আমার বলবে তো?আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি।তোমাকে কিছুতেই ঠকায়নি।

পুষ্পঃ তুই আর ভালো সাজার চেষ্টা করিস না।তোর ভালো মানুষির আড়ালে ঐ কুৎসিত রূপটা আমি জেনে গেছি।কত মানুষ মেরেছিস বল?মাফিয়া কিং কে? সেটাও বলিস।টাকার জন্য আর কত নিচে নামবি তুই। আমি কি তোর কাছে টাকা চেয়েছিলাম।কেন তুই খারাপ পথ বেছে নিলি কেন?

তাসিনঃ পুষ্প জান, আমার কথাটা শুনো।তুমি ভুল ভাবছো।হ্যাঁ,এটা সত্যি আমি একজন মাফিয়া।কিন্তু আমি কোন খারাপ কাজে মাফিয়াগিরি করি না।আমি খারাপ পথের টাকা ভালো কাজে লাগাই।আমার টাকার কোন অভাব নেই যে সেগুলো নিজের জন্য ব্যয় করবো।তোমাকে কেউ ভুল বুঝিয়েছে।আমি খারাপ মানুষদের মারি।কোন ভালো মানুষ কে নয়।যে সমাজে সবার চোখে ভালো সেজে গরীবের রক্ত চুষে খায় তাদের শাস্তি দেই।

পুষ্পঃ থামুন। অনেক বলেছেন।চোর চুরি করে ধরা পরার পর বলবেই আমি চুরি করিনি।তাই আপনার ওসব মন ভুলানো কথায় আমি মানছি না।আপনি যখন এতোই ভালো মানুষ, তাহলে এগুলো কি?

মোবাইল বের করে একটা ভিডিও দেখালো তাসিনকে।এটা রাফির মৃত্যুর ভিডিও। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাসিন ওকে গুলি করেছে।সেই ভিডিও আজ সকালে পুষ্পর কাছে একটা আননোন নাম্বার থেকে দেয়া হয়েছে। সকালের দিকে একটা আননোন নাম্বার থেকে একটা ছেলে তাসিনের নামে অনেক কিছু বলে।কিন্তু পুষ্প বিশ্বাস করে না।তাই ছেলেটা এই ভিডিও পাঠায়।তারপরি ঐ নাম্বারটা বন্ধ হয়ে যায়।পুষ্প ভিডিও টা দেখে পুরো পৃথিবী অন্ধকার দেখা শুরু করে।সারাটা দিন ওর কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়।তারপর বিকালে তাসিনকে কল করে ইমিডিয়েটলি নদীর পাড়ে আসতে বলে।ভিডিওটা দেখে তাসিন চুপ হয়ে যায়।কি বলবে সে?এখানে যা আছে তাতো সত্যি।

পুষ্পঃ আপনাকে বিশ্বাস করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি।তবে যেই বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার আমি হয়েছি তাতে মনে হয় না আর কোন ছেলেকে আমি জীবনে বিশ্বাস করতে পারবো।ভালোবাসা নামক শব্দটার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে। আমি আপনার কোন প্রয়োজন ছিলাম।তাই আমাকে ব্যবহার করেছেন। ভালোবাসা দিয়ে তোর_রঙে_রাঙাবো বলে স্বপ্ন দেখিয়েছেন।সেই স্বপ্নগুলো আমার চুর চুর করে কাচের মতো ভেঙে গেছে। চাইলেও আর জোড়া লাগবে না।
(কাঁদতে কাঁদতে)

তাসিনঃ আমাকে একটা বলার সুযোগ দেও তুমি।আমি সবসময় এই ভয়টাই পেতাম।তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে ভেবেই আমি তোমাকে কিছু বলিনি।আমার সবসময় ভয় হতো তোমাকে হারিয়ে ফেলার।কিন্তু এখন দেখছি আমি ভুল করেছি।তোমাকে আগে জানিয়ে দিলে ভালো হতো।

পুষ্পঃ হুম, খুব ভালো করেছেন।আমি একটা খুনীকে ভালোবেসেছি।নিজের সবটুকু দিয়ে তাকে চেয়েছি।আমি তো একজন ভালো ছেলের প্রেমে পড়েছিলাম।কিন্তু কখনো ভাবিনি তার ভালো মানুষির পেছনে এরকম একটা নোংরা, কালো রূপ আছে।

তাসিনঃ তুমি আমাকে আপনি কেন বলছো পুষ্প?তোমাকে নিশ্চয়ই কেউ মিথ্যে বলে ভুল বুঝিয়েছে।

পুষ্পঃ তুমি বলার অধিকার আপনি হারিয়ে ফেলেছেন মিস্টার আহনাফ আবেদিন তাসিন।আর আমাকে কেউ ভুল বোঝায় নি।বরং চোখে আঙুল দিয়ে সঠিকটা দেখিয়ে দিয়েছে।এখন তো আমার নিজের ওপর ঘৃণা হচ্ছে। এমন একটা মানুষের সাথে আমি নিজের সারাটা জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম।আল্লাহ, যদি সঠিক সময় আমাকে আপনার আসল রূপটা না দেখাতো তাহলে আমি অনেক বড় ভুল করতাম।যার মাশুল আমাকে সারাজীবন দিতে হতো।

তাসিনঃ আমি তোমাকে সবটা খুলে বলছি।তুমি মাথাটা একটু ঠান্ডা করো।

তাসিন এগিয়ে এসে পুষ্পর হাত ধরতে নিলে পুষ্প ঝাড়া মেরে ওর হাত সরিয়ে দিলো।

পুষ্পঃ ডোন্ট টাচ মি,ওকে।আমি কি বলেছি শুনতে পারেন নি।ডোন্ট টাচ মি।(রেগে চিৎকার করে)

তাসিনঃ পুষ্প প্লিজ এমন করো না। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি আমার জীবন।

পুষ্পঃ গো টু হেল।আমার দেখার বিষয় নয়।আপনার ঐ অপবিত্র মুখে ভালোবাসা নামক পবিত্র শব্দটা আর উচ্চারণ করেন না।আপনার সাথে বিয়ে ক্যান্সেল।আমি কিছুতেই কোন খুনীর সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবো না। আমি এখুনি বাসায় গিয়ে আপনার এই কালো রূপটার কথা সবাইকে বলে দিবো।করবো না আপনাকে বিয়ে।সারাজীবন কুমারী থাকবো।তারপরেও আপনার মতো ছেলেকে বিয়ে করবো না।

পুষ্পর কথা শুনে তাসিনের চোখ দুটো দপ করে জ্বলে উঠলো। পুষ্প ওকে বিয়ে করার জন্য মানা করে দিয়েছে। এটা শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।এগিয়ে এসে ঠাস করে পর পর দুই গালে দুটো চড় মারলো।তারপর এক হাতে পুষ্পর মুখ চেপে ধরলো। আরেক হাতে গলা।গলা আর মুখ এতটা শক্ত করে ধরেছে যে পুষ্প নিশ্বাস নিতে পারছে না।তাসিন লাল টুকটুকে চোখ দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

তাসিনঃ আমি যেরকমি হই বিয়ে তুই আমাকেই করবি।আমি বেঁচে থাকতে তোকে অন্য কারো হতে দিবো না।চুপচাপ বিয়েটা হতে দে।নয়তো তোর ভাই,বোন, বাবা-মা এক কথায় পুরো পরিবার শেষ করে দিবো।ভালো ছেলের মতো চুপচাপ তোর কথা শুনছি বলে যে তোকে কিছু বলবো না। তা ভাবলি কি করে? নিজের পরিবারকে বাঁচাতে চাইলে আগামী শুক্রবার বিয়েটা করে নিস।নয়তো তোর পরিবারের সবাইকে কবরে পাবি।আর আমার কথা কাউকে বলতে পারবি না।যদি তোর পরিবারের কেউ জানে আমি মাফিয়া। তাহলে সেটা তোর বা তোর পরিবারের জন্য অনেক খারাপ হয়ে যাবে।ভালো মতো কথাগুলো মাথায় ঢুকিয়ে নে।বিয়েতে কোনরকম ঝামেলা হলে তার মাশুল তোকে দিতে হবে।বিয়েটা আমার সাথে হচ্ছে তোর।তাও আগামী শুক্রবার। ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুই তা করতে দিলি না।এখন জোর করে তোকে নিজের করে ছাড়বো।তবুও অন্য কারো হতে পারবি না। এবার দেখবি আমার হিংস্র রূপ।পালানোর কথা মাথাও আনিস না।তাহলে তোর পরিবার শেষ। আজ থেকে বিয়ের দিন পর্যন্ত তুই আমার নজরবন্দি হয়ে থাকবি। আর যদি সুসাইড করার কথা ভাবিস তাহলে তার আগে নিজের পরিবারের কথাটাও ভেবে মরিস।

কথাগুলো বলে তাসিন তার দুই হাত ছাড়িয়ে হনহন করে সেখান থেকে চলে গেল। পুষ্পর চোখ, মুখ লাল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে এখনো পানি পরছে। দুই হাতে গলা ধরে রেখেছে। এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছে আজ বোধহয় ও মারাই যাবে।তাসিনের কথায় পুষ্প ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।নদীর পাড়ে বসে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠলো।এখন চাইলেও সে এই বিয়ে আটকাতে পারবে না। তাহলে তাসিন সত্যিই ওর পরিবারকে শেষ করে দিবে।সব পথ বন্ধ ওর।এখন তাসিনকে বিয়ে করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।

#চলবে