দীর্ঘ রজনী পর্ব-০৬

0
338

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৬
,
,
,
,
,

সাজি ভ*য়ে ভ*য়ে পেছনে তাকাতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে কারো চি*ৎ*কা*র শুনলো। ভ*য়ে কেঁ*পে উঠলো সাজি। কেউ হয়তো আ*ঘা*ত পেয়েছে তাই ব্যা*থ্যা*য় কাতর কন্ঠে চি*ৎ*কা*র করছে।
সাজি কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে চেনা পরিচিত গলা শোনা গেলো,, মুখ না চালিয়ে পা চালা। তা না হলে কাঁধে করে নিতে হবে।

গলার স্বর শুনেই বুকটা ধ*ড়া*স করে উঠল।ভ*য় দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে উঠলো। আজ সাদ ভাই নামক ব্যাক্তির হাত থেকে কে বাঁ*চা*বে তাকে! ভাবতে ভাবতে ভ*য়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।

সাদ সাজির দুপাশে হাত ছড়িয়ে দিয়ে সাজিকে সবার ধা*ক্কা থেকে প্রোটেক্ট করছে।
রা*গে পুরো শরীর টগবগ করছে সাদের। ইচ্ছে করছে এই দু আঙুলে মেয়েকে দুইটা আ*ছা*ড় দিতে। তবে এতে নিজের সব চেয়ে বড় ক্ষ*তি হবে ভেবেই চুপ করে আছে। সময় মত না এলে কি যে হতো ভেবেই ফে*টে পড়ছে সাদ।

সাজি যখন গেইটের বাইরে বের হয়ে মানুষের জটলায় দাঁড়ালো তখনই বি*প*ত্তি শুরু হয়েছে। একটা ছেলে বারবার সাজিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। সাদ তখন ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকছিলো কেবল। সাদ জানতো মেয়েটা একটা না একটা গ*ন্ড*গো*ল ঠিকই পাকাবে। তাইতো এই ভিড়ের মধ্যে ডুকে পড়লো তাকে খুঁজতে। ছেলেটা যখন সাজির কোমর হাত ছোঁয়াতে যাবে তখনই সাদ সাজিকে আগলে নিয়ে ছেলেটার পায়ে স্বজোরে লা*থি দেয়। এতেই ছেলেটা চি*ৎ*কা*র করে উঠে। আশেপাশের পরিস্থিতি এমন না হলে আজ ছেলেটাকে জানে মে*রে দিতো সে।

ভীড় পেরুতেই সাজির হাত ধরে গাড়ি ওবদি নিয়ে গেলো। সাজিও লক্ষী মেয়ের মতো সাজের সঙ্গ দিচ্ছে। গাড়িতে উঠে বসতেই টাইয়ের বাঁধন আলগা করে পেছনের সিটে ছু*ড়ে ফেললো। সিটে শরীর এলিয়ে চোখ বুজে নিলো। সাজি ভ*য়ে ভ*য়ে সাদের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।

সাদ চোখ বুজে নিরেট স্বরে সুধালো,, পরীক্ষা কেমন হয়েছে?

এই স্বরে কথা বলা মানেই মহাবিপদ সেটা সাজি ভালো করেই জানে। তাইতো কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। কথা সব গলায় দ*লা পাকিয়ে গেছে। আর এই দ্বিধা সংকোচ নিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু বলে দেওয়া মানেই দুই গালে থা*প্প*ড় খাওয়ার ডিল ফাইনাল করা।
আগে পিছে সবটাতেই বি*প*দ দেখে দুইহাত দুইগালে চে*পে চোখ মুখ খিচে ফেললো। যাক বিপদ সব মাথার উপর দিয়ে যাক। গালে না পড়লেই হবে।

সাজির সাড়া শব্দ না পেয়ে চোখ মেলে তাকালো সাদ। সাজিকে এই অবস্থায় দেখে রা*গ*বে না হাসবে বুঝতে পারছে না। তবে রা*গ টিকলো না বেশিক্ষন। বাইরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসলো সাদ। সাদ ভেবে পায় না ,এতোই যখন ভ*য় পায় তাহলে উল্টো পাল্টা কাজ করে কেন? মেয়েটা বড্ডো বেশি বেখেয়ালী। ভাবতেই অবাক লাগে এই বেখেয়ালি মেয়েটাকেই ভালোবেসে বসে আছে সে।

_____

কাল অর্থনীতি পরীক্ষা। আর আজ সকাল থেকে খাটে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁ*দ*ছে সাজি। পুরো বইটাকেই অপরিচিত লাগছে তার। সেঁজুতি হাসান দুইবার এসে মেয়েকে দেখে গেছেন। অনেক বুঝিয়ে বলেছেন কিন্তু সাজি সেই বই বুকে জড়িয়ে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁ*দ*ছে।
এতেও খান্ত হয়নি সাজি। বাবাকে কল দিয়ে বলে দিয়েছে সে ফেল করবে শিওর। কেউ যেন তার পাশের আশা না করে।
বইয়ের চিত্র থেকে শুরু করে সবটাতে তালগোল পাকিয়ে গেছে। এমন এক সময় টিচার ওবদি খুঁজে পাওয়া দু*ষ্ক*র। সাজির ইচ্ছে করছে চি*ৎ*কা”র করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিতে। এতে যদি ক*ষ্ট কিছু কম হয়। আপাতত বই বুকে নিয়ে সুয়ে আছে।

সেঁজুতি হাসান মেয়ের এমন কান্ডে হা হুতাশ করছে। রেনু কাল থেকে সাজিকে দেখছে গড়াগড়ি কাঁ*দ*তে আর আজ সেঁজুতিকে দেখছে।যদিও সেঁজুতি গড়াগড়ি করছে না। তবে তা করতেও দেরি নেই বলে ধারণা করছে রেনু।

সেঁজুতি মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে।

রেনু পা টিপে টিপে সেঁজুতির পাশে বসে মিনমিনে গলায় বললো,, খালাম্মা আমার মনে হয় আপনার সমস্যার সমাধান সাদ ভাইয়া দিতে পারবে।

সেঁজুতি হাসান মাথা থেকে হাত সরিয়ে কয়েক সেকেন্ড রেনুর দিকে তাকিয়ে তড়িৎ গতিতে জড়িয়ে ধরলো।

সেঁজুতির এহেন কান্ডে চমকে উঠলো রেনু। ভাবছে খালাম্মার মাথায় সমস্যা দেখা দিলো নাকি!

সেঁজুতি জড়িয়ে ধরে চপলা কন্ঠে বলে উঠলো,, রেনুরে তোর এই বুদ্ধি আরো আগে দিলে কি হতো বলতো! পড়া লেখা করলে তুই এতোদিনে উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে যেতি। সে যাইহোক! তুই আমার জন্য কড়া করে এক কাপ চা করতো। আমি কথা বলে আসছি। এর পর আমি আর তুই চা খাবো।

রেনু বে*কু*বে*র মত তাকিয়ে আছে আর ভাবছে।
,, উপদেষ্টা আবার কি? এইটা দিয়ে কি হয় ?
এই ভাবতে ভাবতে কিচেনে চলে গেল।

সেঁজুতি এতক্ষণে A to Z সব কিছু সাদকে বলে দিলো। সাদ আসছে বলে কল কেটে দেয়।

সাদের আজ একটা মিটিং আছে তাও AK গ্ৰুপের সাথে। কিন্তু ছোট মামুনীর কল আসাতেই বি*পা*কে পড়েছে। এই ডিলটা ফাইনাল হলে কোম্পানির জন্য সাফল্য বয়ে আনবে বলে ধারনা করা যায়।

সাদ তার পিএ রায়হান কে কল দিয়ে কেবিনে আসতে বললো ।

রায়হান ডোর নক করতেই, ভেতরে আসতে বলে।

,, রায়হান! আজকের মিটিংটা ক্যানসেল করে দাও। কাল এগারোটায় টাইম ফিক্সড করো।

সাদের কথা কর্ণগোচর হতেই ললাট কুঁচকে এলো রায়হানের।

সাদ ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলল,, এনি প্রবলেম রায়হান?

রায়হান ইতস্তত বোধ করে বললো,, স্যার এতে সমস্যা হয়ে যাবে। তারা চাইছে অতিসত্বর মিটিং রাখতে। কিন্তু আপনি বলছেন আরো দেরী করতে।

সাদ মুচকি হেসে বলল,, তাড়াতাড়ির কাজ স*য়*তা*নে*র হয় রায়হান। তুমি এই নিয়ে ভেবো না। যা বলছি তাই করো। তারা যদি আমাদের কম্পানির সাথে collaborate করতে না চায়,, তো বাদ দিয়ে দাও। বাইদা ওয়ে, কম্পানির ডিটেইলস আমাকে মেইল করে দিও। ইচ এন্ড এভরিথিং রায়হান কিছুই যেন বাদ না পড়ে।

~ ঠিক আছে স্যার।কিন্তু চেয়ারম্যানকে কি জবাব দিবেন। উনি হঠাৎ AK কম্পানির সব কিছুর উপরই ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে। ইভেন মিটিং কবে হচ্ছে,কি ভাবে হচ্ছে এই বিষয়ে ম্যানেজার থেকে খোঁজ খবর নিচ্ছে। এমডি কে টপকে ম্যানেজার থেকে খবর নিচ্ছে ব্যাপারটা ঘোলাটে লাগছে আমার কাছে।

,,সেই নিয়ে ভেবো না। আমি ম্যানেজ করে নিবো।তবে এইটাই ভাববার বিষয় যে আমাকে টপকে ম্যানেজার থেকে খোঁজ খবর নিচ্ছে কেন!
রায়হান তুমি বরং আমি যা বলেছি তা করো। আমি কাল একেবারে মিটিংএ উপস্থিত হবো।

,, ঠিক আছে স্যার। আপনি যান আমি সবটা সামলে নিবো।

সাদ মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। চেয়ারম্যান হঠাৎ এইসব করছে কেন সেটাই বুঝতে পারছেনা সাদ। আপাতত সব চিন্তা বাদ দিয়ে সাজির চিন্তা করছে সাদ। মেয়েটা কেঁ*দে কেঁ*দে না জানি কি অবস্থা করছে। এই বিষয়টাকে এতো ভ*য় পায় কেন কে জানে! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে গাড়িতে উঠে পড়লো।

এইদিকে রায়হান কুটিল দৃষ্টিতে ম্যানেজারকে পরখ করছে। মনে মনে ভেবে রেখেছে সাদ স্যারকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু বললেই, রাতের আঁধারে নর্দমার পানিতে ফে*লে দিবে এই দুই মুখো সা*প*কে।
———-

মাথা বিছানার বাইরে ঝু*লি*য়ে দিয়ে চিৎপটাং হয়ে ঘুমিয়ে আছে সাজি। তার আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে বইখাতা। সব মিলিয়ে এলোমেলো অবস্থা।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,,