দীর্ঘ রজনী পর্ব-০৫

0
374

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৫
,
,
,
,
,
পরীক্ষার টেনশন, এই দিকে সাদের এহেন ব্যাবহার দুইটা মিলেই ভ*য়ে ভ*য়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে সাজির।
সাদ সবটা বুঝতে পেরে সাজির হাত জোড়া নিজের হাতের আজলে নিয়ে নিলো। পিটপিট করে তাকালো সাজিঁ। নাকের ডগা ঘামতে শুরু করলো। গালের দুপাশে লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে।

সাজির উত্তরের অপেক্ষা করলো না সাদ।টেনে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,, একদম ভ*য় পাবি না । এইটা আর পাঁচটা পরীক্ষার মতোই তো। শুধু পার্থক্য একটাই পরীক্ষা তোর কলেজে হচ্ছে না। তবে এনিয়ে ঘা*ব*ড়ে যাওয়ার কিছু নেই। পরীক্ষা যেখানেই হোক প্রিপারেশন ঠিক থাকলে অবশ্যই ভালো হবে। আর আমি যতটুকু জানি, আমার সাজঁবাতি দু*ষ্টু*মি আর পড়ালেখার সবার আগে। কি তাইতো?

সাজি বো*বা চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো।

সাদ ভ্রু কুঁচকে বললো, তাহলে পরীক্ষা ইনশাআল্লাহ ভালো হবে।শোন! প্রথমত, কাগজ দেয়ার পর ধীরস্থির ভাবে ওয়েমার পূরন করবি। একদম তা*ড়া*হু*ড়ো করবি না। তা*ড়া*হু*ড়ো মানেই ভু*ল করে ফেলা। দ্বিতীয়ত, প্রশ্ন দেয়ার পর ঠান্ডা মাথায় প্রশ্ন পড়বি। যা কমন আসে সেটাই প্রথমে লিখে ফেলবি। না পারা গুলো নিয়ে বসে থাকবি না। ঠিক আছে?

সাজি মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বললো, ঠিক আছে।

সাদ পেছনের সিট থেকে একটা প্যাকেট নিয়ে ভেতর থেকে একটা কলম বের করে সাজির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,, এইটা তোর জন্য।গোল্ডেন পেন আমার তরফ থেকে।

সাজি এই কলমটার মতোই কলম সাদের বুক পকেটে দেখতো সব সময়।কলমটা দারুন পছন্দ তার। ফুপ্পির সাথে যতবারই মার্কেটে যেতো ততবারই বুক স্টোর গুলোতে এমন কলম খুজতো সে। কিন্তু এই ওবদি দেখা মেলেনি। আজ সাদ দিচ্ছে ভেবেই খুশির চোটে একপ্রকার ছি*নি*য়ে নিলো।

সাজির উ*চ্ছা*স দেখে মৃদু হাসলো সাদ।সাজির যে এই গোল্ডেন পেনটা খুব পছন্দ তা জানতো সে। মায়ের কাছে অনেকবার শুনেছে এই কথা। তাইতো কলমটা সাজিকে দিয়ে দিলো। তার পছন্দের সব কিছুই সাজির পছন্দ এই ভেবে ভেবেই প্র*গা*ঢ় হাসলো সাদ।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সময় হয়ে এসেছে। গাড়ির দরজা খুলে নিজে নেমে পড়লো সাদ।
সাজির পাশের দরজা খুলে নামতে বলে আবার থামিয়ে দিলো। হিজাব ভেদ করে ছোট ছোট চুল গুলো বেরিয়ে কপালের উপর পড়ছে। এতে করে সাজিকে ভীষণ মিষ্টি লাগছে। সাদ বুঝে পায় না মেয়েটাকে এতো আদুরে লাগে কেন।

সাজি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। তাকে নামতে না দেওয়ার কারন কি সেটাই ভাবছে।

সাদ কিছুটা ঝুঁ*কে সাজির হিজাব ঠিক করে হাত ধরে নামালো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অনেক মানুষ। অভিভাবকের চেয়ে ছেলেপেলে বেশি। সাদ ঠোঁট কা*ম*ড়ে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে সাজিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, পরীক্ষা শেষ হলে একপাশে দাড়িয়ে থাকবি। সবাই বের হলে প্রয়োজনে তখন বের হবি। এতো মানুষের ভী*ড় ঠে*লে বের হওয়ার দরকার নেই। আমি গাড়ি নিয়ে এইখানেই থাকবো। ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা চলে আসবি ।

~~ ঠিক আছে। এইবার যাই?

~ গেইট ওবদি আমি দিয়ে আসবো। এইখানে অনেক ভী*ড় ওই ওবদি পৌঁছাতে পারবি না।

সাজি তাকিয়ে দেখে আসলেই ভী*ড়। কেমন গা ঘেঁ*ষে দাঁড়িয়ে আছে সবাই।

সাদ সাজির হাত ধরে সামনে এগিয়ে গেলো। ভীড় ঠে*লে সাজিকে সবার স্প*র্শ থেকে বাঁ*চি*য়ে গেইট ওবদি দিয়ে আসলো। সাজি গেইটের ভেতরে গিয়ে পেছন ফিরে সাদের দিকে একবার তাকালো।
সাদ মুচকি হেসে ইশারায় ভেতরে যেতে বললো।

সাজি মৃদু হেসে পা বাড়ালো। আজ সাদকে অন্যরকম লাগছে। তার প্রতিটা কার্যক্রমে অ*দ্ভু*ত এক ভাব প্রকাশিত হচ্ছে। সব ভেবে মূহুর্তে সকল জড়তা কে*টে গেছে। সকল ভয় যেন মূহুর্তে গায়েব হয়ে গেছে। প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে হলে ডু*কে গেল।

সাজি হল আর সিট খুঁজে পেতে অ*সু*বি*ধা হলোনা। সাদ না থাকলে আর সবার মতো হল আর সিট খুঁজতে খুঁজতে পা*গ*ল হয়ে যেতো শিওর।
,
,
সাদ বেশ কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা অফিসে চলে গেলো। দুইটা মিটিং আছে, সে গুলো শে*ষ করতে হবে তাড়াতাড়ি। তা না হলে সাজির কলেজে যেতে দেরী হবে। এই ভেবে ফাষ্ট ড্রাইভ করে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

********

পরীক্ষা খুব বেশিই ভালো হয়েছে।তাই মনটাও বেশ ফুরফুরে। রিমির হাত ধরে হেলে দুলে হাঁটছে সাজিঁ।
রিমি সাজিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, কিরে তোকে কে নিবে?

সামনে এগোতে এগোতে সোজা জবাব দিলো,
~ সাদ ভাই আসবে নিতে।

রিমি লাফিয়ে উঠে বললো,,
~ সাজিরে আমার মনে হয় সাদ ভাই তোকে পছন্দ করে।

রিমির কথায় সাজি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রিমির পিঠে ধু*ম করে এক ঘু*সি বসিয়ে দিলো।

~ এমন অ*লু*ক্ষু*নে কথা বললে আরেকটা দিবো। আজিবন কুঁ*জো হয়ে হাঁটতে হবে তখন।

রিমি ব্যাথ্যায় চোখ মুখ কুঁচকে পিঠ ডলতে ডলতে বললো,, খুব ব্যা*থ্যা পেয়েছি।

~ এমন কথা বলার কি দরকার যেখানে ব্যা*থ্যা*ই পেতে হয়। বে*য়া*দ*ব মেয়ে! আমাকে কি দেখে অন্যের সংসারে আ*গু*ন লাগানো মহিলা মনে হয়?

~ তা হবে কেন ইয়ার। কিন্তু আমার যা মনে হলো তাইতো বললাম। তবে যাই বলিস তোর সাদ ভাই প্রচুর হট। তাকালেই ছ্যা*ত করে উঠে। আহা এমন একটা ফুফাতো ভাই থাকলে গলায় বা*ন*রে*র মত ঝু*লে প*ড়*তা*ম। জাদু করে নিজের রূপের জালে ফাঁ*সি*য়ে মা*ম*লা বিয়ে ওবদি নিয়ে যেতাম।

~ ওরেব্বাস! তুই তো মেলা খা*রা*প? দুরে যা তোকে বান্ধুবী হিসেবে পরিচয় দিতেই লজ্জা লাগছে।

রিমি মুখ ফুলিয়ে বললো,, আমি তো ভালা না ভালা হ*ট সাদ ভাই লইয়াই থাইকো। গেলাম আমি।

সাজিঁ দাঁতে দাঁত চে*পে বললো,, দূরে গিয়ে ম*র বে*য়া*দ*ব।

রিমি চলে যেতেই। সাজিও দ্রুত পায়ে হেঁটে গেইটের সামনে চলে গেলো। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে গেইট পেরিয়ে যেতেই মানুষের জটলায় ফেঁ*সে গেছে।
এতক্ষণে হুঁশ ফিরলো সাজির। সাদের বলা কথা মাথায় আসতেই ঠোঁট ফুলিয়ে ফেললো। নিজেই নিজেকে গা*লি দিতে লাগল,, সাদ ভাইয়ের কথা মনে রাখা উচিৎ ছিলো। এখন এই জ*ট*লা থেকে বের হবো কি করে! আল্লাহ আমাকে সু বুদ্ধি দাও। আল্লাহ আল্লাহ করে বের হতে পারলেই বাঁ*চি।

সাজি চার দিকে তাকিয়ে দেখে মহিলার চাইতে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। একজন একজনের সাথে ঘেঁ*ষে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ হয়তো ছেলে-মেয়ের জন্য এসেছে , কেউ হয়তো ভাই-বোনের জন্য এসেছে। সাজি ভী*ড় ঠে*লে বের হতে নিবে এমন সময় একজোড়া হাত দুই দিক থেকে তাকে আবদ্ধ করে নিলো।

চমকে উঠলো সাজি। ভ*য়ে আর অস্বস্তিতে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,,