দুই হৃদয়ের সন্ধি পর্ব-০২

0
361

#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মুসকান বাসর ঘরে বসে বসে গাণ্ডেপিণ্ডে গিলেই চলেছে! বেলকনিতে রুহিকে ঘুম পাড়াতে ব্যস্ত আরিফ মুসকানকে এমন রাক্ষসের মতো গিলতে দেখে চোখ বড়বড় করে তাকালো। মুসকানের সেদিকে কোন হাপিত্যেশ নেই। একটু আগেই আতিকা চৌধুরী তাকে এক থালা ভর্তি করে বিরিয়ানি, মাটন, চিকেন কাবাব দিয়ে গেছে। বিয়ে করবেনা বলে আমরণ অনশনে বসেছিল বেচারি মেয়েটা। তাই পেটে সূচোয় ডন বৈঠক মা’রছিল। খাবার পেতেই তারা যেন দলবল পাকিয়ে বলে ওঠে,
“যা মুসকান যা ঝাপিয়ে পড় ঐ খাবারের উপর।”

আরিফ মুসকানকে এমন বিভৎস ভাবে খেতে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,
“আম্মু এ কোন বকরাক্ষসীর সাথে বিয়ে দিল আমার? এ তো ফেসবুকের তো ফুড ব্লগারের থেকে কম নয়।”

মুসকান খেতে খেতেই বারংবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে থাকে। আতিকা চৌধুরী তাকে খাবার খেতে দিয়েই নিচে চলে গেছেন। তাই মুসকান এত নিশ্চিন্তে নিজের মতো খেতে পারছে। কিন্তু সে তো আর জানত না যে, আরিফ তার সব কীর্তিই দেখছে।

খাওয়া শেষ করে জোরে শব্দ করে একটা ঢেকুর তুলল মুসকান। যার শব্দে পুরো ঘরটাই যেন কেপে উঠল। আরিফ রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“অসহ্য মেয়ে কোথাকার।”

মুসকান খাওয়া শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে। বিছানা গুছিয়ে শুয়ে পড়তে যাবে এমন সময় আরিফ এসে তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে বলল,
“এই ফুডি গার্ল, আপনি আমার বিছানায় শুতে চাচ্ছেন কেন?”

মুসকান হাতের বালিশটা শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
“এই রুমে তো আর কোন বিছানা নেই। তো এই বিছানায় না শুলে আমি কোথায় শোবো আপনার মাথায়?”

“জানি না আমি। কিন্তু আমার বিছানা আমি কারো সাথে ভাগাভাগি করব না। কথা শেষ।”

আরিফের কথা শুনে মুসকান এবার বালিশটা ছু’ড়ে মা’রতে চাইল তার পানে। কিন্তু তার কোলে শুয়ে থাকা সদ্য ঘুমানো রুহির মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল আরিফ। বালিশ ছুড়ে মা”রার বদলে চোখের গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“শুনুন মিস্টার বদরাগী আপনি এমন করতে পারেন না। আইনত এবং ধর্মীয় মতে এখন আমি আপনার স্ত্রী। তাই আপনার বিছানার উপর আমারও অধিকার রয়েছে।”

“নট এট অল। আমার জিনিসে আমি আর কারো অধিকার সহ্য করবো না।”

আরিফের ত্যাড়ামো দেখে রাগে মুসকানের কান দিয়ে যেন অগ্নিবর্ষণ হতে লাগল। মুসকান কোমড়ে শাড়ির আঁচল শক্ত করে পেঁচিয়ে নিল। অতঃপর আরিফের বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
“এই যে আমি শুয়ে পড়লাম আপনার বিছানায় পারলে আমায় তুলে দেখান।”

আরিফের মাথায় যেন জেদ চেপে বসল। বরাবরই জেদি আর ঘাড়ত্যাড়া স্বভাবের জন্য স্কুল, কলেজ এমনকি বর্তমানে ইউনিভার্সিটিতে বেশ বদনাম তার। আরিফ নিজের জেদ দেখানোর জন্য প্রথমে রুহিকে আলতো করে দোলনার মধ্যে শুইয়ে দিলো। যত্ন সহকারে তার শরীরে টেনে দিল কাঁথা। অতঃপর মুসকানের হাত ধরে তাকে টানতে লাগল। মুসকানও বিছানা শক্ত করে খামচে ধরে রাখল। তাদের মধ্যে যেন কাবাডি কাবাডি খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে।

মুসকান একটু গোলগাল চেহারা ও ভারী স্বাস্থ্যের অধিকারী। বলা বাহুল্য, ভোজনরসিক হওয়ার কারণেই তার এই দশা। যদিও ইদানীং ডায়েট করে বেশ খানিকটা ওজন কমিয়েছে। তবুও তার শরীরের ভার খুব একটা কমেনি।

বিপরীত দিকে আরিফ হ্যাংলা পাতলা চেহারার অধিকারী। ২০ বছর বয়সী মুসকানের দৈহিক আকারের সাথে তুলনা করলে বছর ২২ এর আরিফ বলতে গেলে কিছুই না। একেই তো তালপাতার শিপাই তার উপর শারীরিক কসরত না করায় কিছুতেই মুসকানের সাথে পেরে ওঠে না আরিফ। মুসকানকে টেনে তুলতে গিয়ে প্রায় নাস্তানাবুদ অবস্থা তার।

শেষে ক্লান্ত হয় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। তাতেই মুসকানের মুখে বিজয়ী হাসি ফুটে ওঠে। যা এমনিতেই যথেষ্ট ছিল আরিফকে জ্বলিয়ে দেওয়ার জন্য। তার উপর আবার মুসকান আরিফকে টিটকারি করে বলে,
“কি হলো মিস্টার বদরাগী। আপনার হাওয়া কি ফুউউউস হয়ে গেল।”

আরিফ দ্বিগুণ তেজ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তেজি সিংহের মতো এগিয়ে গিয়ে মুসকানের হাত ধরে সর্বশক্তি দিয়ে টান মারে। মুসকানও ছিটকে আরিফের কোলে চলে আসে। অতঃপর দুজনই তাল সামলাতে না পেরে একসাথে বিছানার মধ্যে পড়ে যায়।

চারিদিকে বেশ একটা রোম্যান্টিক মৌসুমের সৃষ্টি হয়। দুটো মানব মানবী একে অপরের এত পাশে। দুজনেরই হৃদস্পন্দন দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকে। একে অপরের চোখের দিকে তাকায় তারা। যেন ঐ চোখেই হারিয়ে যাবে।

“পুউউউউউত”

হঠাৎ করে বিকট শব্দে কেপে ওঠে মুসকান ও আরিফ দুজনেই। শব্দটা কিসের সেটা আঁচ করতে বেশি বেগ পেতে হলো না আরিফের। কারণ শব্দটা হওয়ার সাথে সাথেই পুরো ঘরজুড়ে বিশ্রী একটা দূর্গন্ধ ছড়িয়ে গেল।

আরিফের রাগী চোখে মুসকানের দিকে তাকিয়ে নাকে হাত দিয়ে তার উপর থেকে উঠে পড়ে। এদিকে লজ্জায় আড়ষ্ঠতায় মুসকান কোলবালিশ টেনে নিয়ে মুখ লুকায়।

আরিফ মুসকানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনার কি মিনিমাম লজ্জা শরম নেই? এভাবে বায়ুদূষণ করে দিলেন! ছি। আমার বমি চলে আসছে।”

মুসকানের জোরে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করল,
“বেশ করেছি পে*দেছি, প্রয়োজন পড়লে আরো পা**দব। আপনার মুখের সামনে গিয়েও পা**দব। তাতে আপনার কি? পা*দ কি নিয়ন্ত্রণ করা যায় নাকি?”

কিন্তু এসব কথা কি আর বলা যায় নাকি? মুসকান বিভিন্ন উপায়ে শুধু নিজের মুখ লুকাতে ব্যস্ত। এভাবে যে কখনো কারো সামনে অপমানিত হতে হবে তা কস্মিনকালেও ভাবে নি সে। এখন নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে। কেন ওমন রাক্ষ*সের মতো গাণ্ডেপিণ্ডে গিলতে গেল।

★★★
আরিফ কিছুক্ষণের জন্য বাইরে এলো। ঘরে তো বিশ্রী গন্ধে শ্বাস নেওয়ার জো নেই। তাই একটু মুক্ত হাওয়া বাতাসের আশায় বাড়ির বাইরে এসেছিল। কিন্তু বাইরে এসেও রক্ষে নেই। বাসর রাতের দিন আরিফকে বাইরে আসতে দেখে তাদের পাশের বাসার মোকলেছ আঙ্কেল বলে উঠলেন,
“আরে আরিফ না। শুনলাম আজ নাকি তুমি বিয়ে করে নিয়েছ। তা তুমি তো ভালোই কিপটা আছো। দাওয়াত দেওয়ার ভয়ে চুপিচুপি বিয়ে করে নিলে! আমরা কি গিফট ছাড়া দাওয়াত খেতে যেতাম নাকি?”

মোকলেছ আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি হাসার চেষ্টা করে আরিফ। এই লোকটাকে তার একদম সহ্য হয়না। গোটা এলাকায় সবাই এনাকে এক নামে চেনে। চায়ের দোকানে বসে এর মেয়ে কার সাথে প্রেম করছে, ওর ছেলে কোথায় ঢলাঢলি করছে এসব গীবত করে বেড়ানোই লোকটার কাজ। আরিফ ঠোঁটে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বলল,
“সময় হলে ঠিকই দাওয়াত দেব।”

“সেই সময় যে কবে হবে আল্লাহ মালুম। সেসব বাদ দাও গা। এত রাতে তুমি বাইরে কি করছ? আজ না তোমার বাসর রাত।”

আরিফ ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল লোকটার কথায়। এই লোকের মুখে কি কিছুই আটকায় না? আরিফ অধৈর্য হয়ে উঠতে লাগল। কি উত্তর দেবে সেই নিয়ে কিছুক্ষণ মনে মনে গবেষণা করে বলেই ফেললো,
“একটু হাওয়া বাতাস খাইতে বের হইছিলাম আঙ্কেল।”

“আমার কাছে লজ্জা পেয়ো না। তোমার মতো বয়স তো আমারও ছিল। তোমার তো তাও একটা বিয়ে আমার তো তিন তিনটা বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু তিন বউকেই সুখী করতে পেরেছি। আর এখনকার ছেলেরা তো একটা বউকেই…”

আরিফ বুঝতে পারল এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে এই বদলোক এমন কিছু কথা বলবে যা শুনলে লজ্জায় তার মাথা কা’টা যাবে। তাই আরিফ বেশ ভদ্রতার সাথে বলল,
“আঙ্কেল আমার মনে হয় আমার ওয়াইফ আমার জন্য ওয়েট করছে। এখন আমার যাওয়া উচিৎ।”

আরিফ চলে যেতে নিলেই মোকলেছ আঙ্কেল আবার তাকে পিছু ডাকে। পিছু ডেকে বলে,
“কোন সমস্যা হলে আমায় বলতে পারো। আমার এক বন্ধু আছে যে হারবাল ঔষধ বিক্রি করে। আমি সেখান থেকে তোমায় এনে দিতে পারব। একবার ব্যবহার করলেই দেখবা শক্তি কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।”

আরিফের ইচ্ছে করল চিৎকার করে বলতে,
“ধরণী তুমি আমাকে তলিয়ে নাও।”
চলবে ইনশাআল্লাহ