দুই হৃদয়ের সন্ধি পর্ব-১০

0
267

#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ১০(ধামাকাদার_পর্ব)
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মুসকান কূজনকে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কূজন অসহায় চাহনিতে তাকায়। মুসকানের ভীষণ কান্না পাচ্ছিল। অনেক কষ্টে সেই সেই কান্না চেপে রেখে শক্ত গলায় বলে,
“এখন আমি বিবাহিত কূজন ভাইয়া। আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরার রাইট তোমার নেই।”

কূজন মলিন হেসে বলে,
“অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই মুসকান। অনেক বুঝদারও হয়ে গেছিস।”

মুসকান মনে মনে বলল,
“আমি বড় হতে চাই নি কূজন ভাইয়া। আমি যে তোমার সেই অবুঝ মুসকানই হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম আজীবন। কিন্তু তুমি যে আমাকে সেই সুযোগটাই দিলে না।”

কূজন মুসকানকে কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে দেখল। মুসকান বিব্রতবোধ করছিল। দূরে তাকিয়ে আরিফকে দেখে সে বলে,
“ভাইয়া তোমার যদি কিছু বলার থাকে তাহলে জলদি বলো। আমাকে যেতে হবে।”

কূজন মুসকানের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে,
“তুই কেন আমার সাথে যোগাযোগ করা একেবারে বন্ধ করে দিলি রে মুসকান। আমি তোর সাথে কথা বলার কত চেষ্টা করেছি, কতোটা ছটফট করেছি সেটা তুই দেখিস নি!”

মুসকান বেশ শক্ত গলায় জবাব দেয়,
“আমি কিভাবে তোমার সাথে যোগাযোগ করতাম কূজন ভাইয়া? তুমি তো নিজেই আমার সাথে যোগাযোগ করার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছিলে।”

“সেইসময় তুই সবে ক্লাস এইটে পড়তি মুসকান। আর আমি ক্লাস টেনে। আমরা তখনো ইমম্যাচিউর ছিলাম। সেই সময় তুই আমার থেকে কি আশা করছিলি? আমি কিভাবে সেইসময় তোর সাথে কোন সম্পর্কে যেতাম। আমি মুখে যাই বলি না কেন তুই কি আমার মনের কথা কখনো বুঝতে পারিস নি মুসকান?”

হঠাৎ করেই মুসকানের সর্ব শরীর কেপে ওঠে। মুসকান কূজনের দিকে হতবাক নয়নে তাকিয়ে রয় কিছু পলক। অতঃপর কাপা কাপা গলায় বলে,
“তার মানে তুমি কি বলতে চাইছ কূজন ভাইয়া? তুমি আমায়..আমায় ভালোবাসতে?”

“ভালোবাসতাম কি রে পাগলী! আমি এখনো তোকে আর শুধুমাত্র তোকেই ভালোবাসি।”

“কূজন ভাইয়া! আমি বিবাহিতা।”

কূজনের হঠাৎ করেই রূঢ় বাস্তবের কথা মনে পড়ে যায়। তার মুসকান পরি যে আর তার নেই। কথাটা মনে আসতেই বুকের বা পাশে সূক্ষ্ম ব্যাথা অনুভূত হয়। চোখ দিয়ে অশ্রু টপটপ করে গড়িয়ে পড়ে আপনাআপনি। মুসকানেরও কান্না পায় ভীষণ।

কূজন নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করে। মুসকানের দিকে কিছু পলক তাকিয়ে নিজের বন্ধু আরিফের দিকে তাকায়। অতঃপর বিবেচকের মতো বলে,
“হ্যাঁ মুসকান ঠিক বলেছিস তুই। এখন তুই অন্য কারো স্ত্রী। আমার সাথে তোর সম্পর্ক কাজিনেই সীমাবদ্ধ। এর থেকে বেশি কিছু নেই আমাদের মধ্যে। আমি মেনে নিলাম বাস্তবতাটাকে। তোকে ভুলে যাওয়া কঠিন জেনেও যথাসাধ্য চেষ্টা করব তোকে ভোলার। তুই নিজের সংসারে মন দে। পারলে আমাকে ভুলে যাস।”

মুসকান ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে কূজনের পানে তাকিয়ে বলে,
“কিভাবে ভুলবো তোমায় কূজন ভাইয়া? এমনিতে তো তোমায় ভুলে থাকাএ চেষ্টা করতাম আমি। কিন্তু আজ তুমি যেভাবে আমার কাছে স্বীকারোক্তি করলে তারপর আমি চাইলেও পারব না তোমায় ভুলতে। যেই ব্যক্তিকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসেছি ছোট থেকে যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি সেই ব্যক্তিটাও আমাকে ভালোবাসে অথচ আমরা আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন পথের পথিক। এটা যে আমি মেনে নিতে পারছি না।”

বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল মুসকান। কূজন মুসকানকে এভাবে কাঁদতে দেখে আরো বেশি দূর্বল হতে লাগল। কিন্তু সে চায়না নিজের ব্যক্তিত্বের বাইরে গিয়ে কোন কাজ করতে। তাই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। দূর থেকে মুসকানকে কাঁদতে দেখে আরিফ এগিয়ে আসলো এদিক পানে। মুসকানের কাছে এসে তাকে শুধালো,
“এই মুসকান আপনি কাঁদছেন কেন?”

হঠাৎ আরিফের আগমনে মুসকান থতমত খেয়ে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,
“কিছু না। আমি আসছি।”‘

মুসকান বিদায় নিতেই কূজন আরিফের কাধে হাত রেখে বলে,
“মুসকানকে দেখে রাখিস রে দোস্ত। মেয়েটা অনেক ভালো।”

“মুসকান আমার স্ত্রী। তুই বললেও দেখব না বললেও দেখব। তবে হ্যাঁ, তুই মামাতো ভাই হিসেবে বলতেই পারিস ওর খেয়াল রাখার কথা।”

কূজন আর কথা না বাড়িয়ে চয়ন, আবিরের পাশে গিয়ে বসলো। এদিকে আরিফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল,
“এই কূজন আর মুসকান কি শুধুই মামাতো-ফুফাতো ভাইবোন? নাকি এদের মধ্যে আরো কোন সম্পর্ক আছে? ওদের চোখমুখের অভিব্যক্তি যে আমায় অন্য কিছু বলে দিচ্ছে।”

★★★
কূজনদের ফিরে যাওয়ার সময় এসে উপস্থিত হয়। ফিরে যাওয়ার পূর্বে কূজন মুসকানের সাথে দেখা করে। মুসকানের মুখোমুখি হয়ে সে বলে,
“থাক রে মুসকান। আমি যাচ্ছি।”

“চলেই তো যাবে৷ তুমি তো আমার জীবনে থাকার জন্য আসোনি। তাই বারবার আমার থেকে দূরে চলে যাও।”

কূজন যেন এবার মুসকানের সব ভুল ভাবনা দূর করতে বদ্ধপরিকর হয়। তাই তো সে বলা শুরু করে,
“বিশ্বাস কর, আমি কখনো তোকে দূরে ঠেলে দিতে চাইনি। কিন্তু পরিস্থিতি আমায় বাধ্য করেছে। যখন তুই আমাকে নিজের মনের কথা জানাস তখন আমরা দুজনেই অপ্রাপ্তবয়স্ক আর অবুঝ ছিলাম। তাই আমি কোন ঝুকি নিতে চাইনি। কিন্তু এরপর যখন তুই নিজেকে গুটিয়ে নিলি তখন আমি চেয়েছিলাম সবটা তোকে বুঝিয়ে বলতে। কিন্তু তুই আমাকে সেই সুযোগটাই দিলি না। অভিমান করে নিজের মামার বাড়ি চলে গেলি৷ তারপর তো আমি মেট্রিক পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। মেট্রিক পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই মামির দ্বিতীয় বিয়ের কথা শুনলাম৷ এরপর আবার কলেজে পড়ার জন্য বাইরে আসতে হলো। কলেজ শেষ করে মেডিকেলে এডমিশন দিলাম কিন্তু টিকলাম না। সবকিছু মিলিয়ে ভেঙে পড়েছিলাম। এরপর গুচ্ছতে পরীক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে চলে এলাম৷ এর মাঝে কতবার যে তোর খোঁজ নিয়েছি তুই জানিসও না৷ কিন্তু কোনভাবেই তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি৷ আজ এতদিন পর তোকে দেখলাম তাও এইরূপে নিজের বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন নেওয়ার পরেই আবির,চয়ন, আরিফ ওদের সাথে বন্ধুত্ব হয়।”

মুসকান কিছুক্ষণ কূজনের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের রুমে ছুটে চলে যায়। কূজন উদাস মনে বিদায় নেয়।

★★★
সেদিনের পর দুদিন চলে গেছে। কিন্তু মুসকানের অস্থির চিত্তে শান্তি নেই। সে এখনো ভীষণ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল। মুসকানের মধ্যে দুদিন ধরেই একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আর সেটা হলো তার কি করা উচিৎ এখন। আরিফ তো বাসর রাতেই তাকে বলে দিয়েছে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবে না শুধুমাত্র রুহির দেখাশোনার জন্যই তাকে বিয়ে করেছে। এই সম্পর্কে তো কোন স্বাভাবিকতা নেই। অন্যদিকে কূজন মুসকানের ভালোবাসার মানুষটা যে তাকে ভীষণ ভাবে ভালোবাসে এটা উপলব্ধি করার পর মুসকান আর ঠিক থাকতে পারছে না। মুসকান চিন্তা করে দেখলো,
“আরিফ তো আমায় ভালোবাসেন না৷ বিয়ের সম্পর্কেও তো ওনার বিশ্বাস নেই। তাহলে আমি কেন এই সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাব? তার থেকে তো ভালো হয় যে আমি আরিফের সাথে এই মিথ্যা সম্পর্ক ছিন্ন করে কূজন ভাইয়ার সাথে সংসার করি। তাহলে আমরা দুজন সুখী হতে পারব। আরিফকেও আর এই মিথ্যা সম্পর্ক বয়ে নিয়ে যেতে হবে না৷ উনি তো নিজের ইচ্ছেতে আমায় বিয়ে করেন নি। ম্যাডামের কথাতেই বিয়েটা করেছেন।”

এমন ভাবনা থেকেই মুসকান সিদ্ধান্ত নেয় আরিফকে সব কথা খুলে বলবে৷ তারপর দুজনে বসে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। আর যাইহোক, শুধু শুধু একটা প্রেমহীন সম্পর্ক বয়ে নিয়ে বেরানোর কোন মানে হয়না। এমন যদি হতো যে মুসকান আরিফকে ভালোবাসত তাহলে সে চেষ্টা করত, এই সম্পর্কটা ঠিক করার। কিন্তু মুসকানের মনেও তো অন্য কেউ। এভাবে একজনকে মনে রেখে আরেকজনের সাথে সংসার করাটা ঠিক হবে না। এতে সে যেমন নিজেকে ঠকাবে তেমনি আরিফকেও। তাই মুসকান আরিফের সাথে খোলাখুলি কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨