দুই হৃদয়ে সন্ধি পর্ব-১২+১৩

0
159

#দুই_হৃদয়ে_সন্ধি
#পর্ব_১২
#Nova_Rahman

আকাশেরে ঐ গোল চাঁদের স্নিগ্ধ রশ্মি ভূপৃষ্ঠের চরণকে যেনো আরো বিমোহিত করেছে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় কলা বাগানের গাছগুলো যেনো আজ বধূ সেজেছে। পাশের ঝোপঝাড় থেকে ভেসে আসছে খেঁক শেয়ালের হাঁক ডাক। কী নিস্তব্ধ নিশুতি রাতের সেই প্রকৃতি। ভারী ভয়ানকও!

কোমর ছুঁই ছুঁই এলোমেলো ভাবে বেড়ে উঠা লম্বা চুল গুলো হাতের সাহায্যে আরো এলোমেলো করে বসে আছে মেহু। জানালা খুলে তার এক পাশে মাথা হেলান দিয়ে বসলো। চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় গায়ের সেই কালসিটে দাগগুলো আঁকাবাঁকা রশ্মির মতো জ্বলজ্বল করছে। যেনো পরিক্ষার খাতাই লিখা ভুল গুলো লাল খালি দিয়ে মার্ক করার চিহ্ন মাত্র।

মেহু একমনে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে। মেহু দেখলো আকাশের মস্ত বড়ো একটা চাঁদ উঠেছে। মেহু আনমনা হয়ে বলতে লাগলো__ শোনো চাঁদ, তোমার আকাশে তুমি একা আর আমার আকাশে আমি। আমাদের দু’জনের এই একটা জায়গায় মিল। আর বাকি সব দিকে অমিল। তোমাকে দেখে সবাই মুগ্ধ হলেও আমাকে দেখে সবাই নারাজ হয়। তুমি চাঁদের গায়ে লাগা কলঙ্ক আমি। কি ভ’য়ং’ক’র মেয়ে আমি ভাবা যায়।

___মেহু কিছু একটা ভেবে পাগলের মতো হাসতে হাসতে নিজের গায়ের ক্ষত স্থান গুলোতে হাত বুলাতে লাগলো। ক্ষত স্থানে রাখা মাত্রই মেহু চট করে হাত সরিয়ে নিলো। বড্ড জ্বালা করছে। চোখ দিয়ে টুপটাপ পানি পড়ছে। সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। হুট করেই শব্দ করে কান্না করতে লাগলো মেহু। কান্না করতে করতে হেঁচকি উঠে গেছে। পরক্ষণেই কিছু একটা মনে পড়ডেই ঠোঁট কামড়ে কান্না নিবারণ করার চেষ্টা করলো। না পারলো না কান্না থামাতে। ভিতর থেকে কান্না গুলো যেনো সংঘবদ্ধভাবে ধেয়ে আসছে।

“এই তো কিছুক্ষণ আগে মেহুর সৎ ভাই মাহির ক্ষত স্থানে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে গেলো। এই বাড়িতে এই একজন মানুষ যে মেহুকে একটু ভালোবাসে। বাকিরা সব ভালোবাসার নামে অত্যাচার করে। মেহু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগলো তার অতীতের কথা। মেহুর অতীতটা বড্ড সুন্দর ছিল। কিন্তু হুট করেই সুন্দর অতীতটা ভ/য়ং/ক/র হয়ে উঠলো।___”

’আদিলপুর গ্রামের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ছিল মেহুর মা মিতিলা বিনতে মায়া। নামের মতোই মায়া বিবি ছিলেন অটুট মায়ার অধিকারীনি। মায়া বিবির মুখশ্রীর দিকে তাকালে যে কেউ জীবদ্দশায় একরাশ মায়া খুঁজে পাবে। মায়া বিবির আঁখিদ্বয়ে ছিল একরাশ মুগ্ধতায় ভরা। যে মুগ্ধতায় যে কেউ মায়ায় পড়তে বাধ্য ছিল। তেমন করেই মায়া বিবির মায়ায় আটকা পড়েছিলেন মাস্টারমশাই মুহিত সাহেব। ’

__সদ্য চাকরি পাওয়ার আনন্দে সংবাদ নিয়ে গ্রামে আসেন মাস্টারমশাই মুহিত। গ্রামে আসা মাত্রই হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায় সবার মধ্যে। গ্রামের সনামধন্য ব্যবসায়ী হারুন সাহেবের ছেলে মুহিত মস্টার হয়েছে। সে সবার মধ্যে কি আনন্দ। মিষ্টি বিতরন করা হয় পুরো গ্রামে। সব কাজ শেষে বিকেল বেলায় মুহিত তার বন্ধু জাফরকে নিয়ে হাটতে বের হয়। পড়ন্ত বিকেলে আম গাছের নিচে একদল কিশোরী মেয়ের মাঝে চোখ আটকে যায় মুহিতের। চঞ্চল কিশোরীদের মধ্যেমনি ছিল তার মায়াবতী। __

“হাঁটু ছুঁই ছুঁই এলোমেলো চুলগুলো খুলে দিয়ে লম্বা দঁড়ির উপর দিয়ে লাফাচ্ছে মায়া। খিলখিল করে হেঁসে খেলে মায়াকে এইভাবে লাফাতে দেখে মুহিত তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই কিছু একটা মনে হতেই তারাতাড়ি পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। ”

__এইভাবে করে প্রতিদিন বিকালে মুহিত তার বন্ধু জাফরকে নিয়ে দাড়িয়ে থাকতো আম বাগানে। প্রতিদিন মায়ার পথ আঁটকে দাড়াতো মুহিত। প্রথম সাক্ষাৎতে ভয় পেলেও পরে আর ভয় থাকলো না মায়ার। মায়ায় যেনো এখন এইসবে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বরং একদিন মুহিতকে না দেখলে, মায়ার চোখ দুটো চাতক পাখির মতো এদিক সেদিক তার মাস্টারমশাইকে খুঁজে বেড়ায়। __

“সেদিন ছিল গোধূলির তৃতীয় প্রহর। সাঁঝ বেলায় পৃথিবী আঁধার হবে হবে অবস্থা। হাতে একগুচ্ছ রজনীগন্ধা নিয়ে মুহিত তার মনের কথাখানি খুলে বলল মায়ার কাছে। মায়া লজ্জায় মরিমরি অবস্থা। তারপরেও সব জড়ত্ব কাটিয়ে মুহিতের হ্যাঁ তে হ্যাঁ বলে দিলো মায়া। পাশে থেকে জাফরের মনের ভিতর যেনো আগুন জ্বলে উঠলো। সে তো মায়াকে অনেকদিন থেকেই ভালোবাসে। মায়ার কাছে কতবার সে তার মনের কথা খুলে বলেছে। জাফর জানতো মায়াও থাকে ভালোবাসে। কিন্তু কোনো এক কারণে মায়া থাকে বার বার রিজেক্ট করে দিচ্ছে। একবার তো পায়ে ধরেও আকুতি মিনতি করলো জাফর। তারপরেও মায়া তার সিদ্ধান্তে অটুট থাকলো।”

’জাফরের মনে যেনো আজ কষ্টের পাশাপাশি মায়ার জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য এক প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠলো। কিন্তু জাফর তা বহিঃপ্রকাশ করলো না।’

‘দিনটা ছিল ২ রা মে। মুহিত আর মায়া লুকিয়ে বিয়ে করে শান্তিনিকেতন আসলো। শান্তিনিকেতন হলো মুহিতদের বাড়ির নাম। মায়া ছিল হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে। বাবা মরা মেয়ে মায়াকে নিয়ে আমেনা খাতুন খুব কষ্টে দিন পার করেছেন। মেয়ের এমন পালিয়ে বিয়ে করারটা মেনে নিতে পারেননি আমেনা খাতুন। হারুন সাহেব হলেন একজন সনামধন্য ব্যবসায়ী। তার ছেলে এমন হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেছেন দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো হারুন সাহেব। তার মানসম্মান সব যেনো মায়ার জন্য জলে ডুবে গেলো। তিনি কোনো কিছু না ভেবেই মুহিতকে ত্যাজ্য পুত্র বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বললেন।’

‘মুহিত বাবাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু মুহিত বরাবরই ব্যর্থ। মুহিত আর কিছু না ভেবে মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে আসে শান্তিনিকেতন থেকে। মায়া এসে দাঁড়ালো মা আমেনা খাতুনের দুয়ারে। তার এখন মায়ের বাড়ি ছাড়া যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। মা মেয়েকে কখনো ফেলে দিতে পারে না। মেয়ে যতোই ভুল কাজ করুক। আমেনা খাতুনের ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই।’

__দিন গেলো মাস পেরিয়ে বছরের মাথায় মুহিত আর মায়ার ঘর আলো করে মেহুর জন্ম হলো। দেখতে দেখতে অনেক গুলো বছর কেটে গেলো। মেহু ক্লাস ফাইভে এবার এ প্লাস পেয়েছে। এই খুশিতে মুহিত সাহেব মেয়ের জন্য মিষ্টি কিনতে শহরের বাজারে গেলেন। মিষ্টি কিনে ফিরবার সময় ট্রাকের সাথে ইজিবাইকের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মুহিত সাহেবের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় মায়া অনেক বেশি ভেঙ্গে পড়ে। স্বামী হারা বিধবা মায়া মেয়েকে নিয়ে সমাজে বেচে থাকাটা যেনো তার জন্য বহুত কঠিন হয়ে পড়লো।__

‘সদ্য স্ত্রী মরা জাফর যেনো মায়াকে পাওয়ার আরেকটা সুযোগ পেয়ে গেলো। কালবিলম্ব না করে মায়ার মা আমেনা খাতুনের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো জাফর। বিধবা মেয়ে আর নাতনিকে নিয়ে সমাজে জীবনযাপন করা আমেনা খাতুনের কাছে দুষ্কর হয়ে পড়ে। তাই তিনি জাফরের এক কথায় বিয়েতে রাজি হয়ে পড়েন। মায়াকে বিয়ের কথা বললে মায়া সরাসরি তা নাকচ করে দেয়। আমেনা খাতুন রেগে গিয়ে মায়াকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। আমেনা খাতুন সার্ব্য অসার্ব্য ভাষায় গালি গালাজ করতে থাকেন মায়াকে।’

“মায়া মুখ চেপে কান্না করতে থাকলো। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তার জানা ছিল না।”

আমেনা খাতুন কপাল চাপড়ে আহাজারি করতে করতে বলল, আগের বার আমার অমতে গিয়ে বিয়ে করে নিজের কপাল পুড়িয়েছিস। এখন আর আমার কথা অমান্য করে আমাকে একেবারে শেষ করে দিস না।

মায়ের এমন আহাজারি শুনে মায়া আর বিয়েতে অমত করতে পারেননি।

নিদিষ্ট একদিনে মায়া আর জাফরের বিয়ের আয়োজন করা হয়। মেহু শুধু তাকিয়ে দেখলো বধূবেসে তার মাকে কি সুন্দর লাগছে। মেহুর গাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো মাটিতে। ইস! তার মা আজকে চলে যাবে অন্য লোকের ঘরে।

মেহু নিজেই নিজেকে উদ্দেশ্য করে বলল, আচ্ছা আজকে বাবা বেঁচে থাকলে কী তার ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য কারো বিয়ে হওয়ার দৃশ্যটা সহ্য করতে পারতো। পারতো না তো। আমিও তো পারছিনা। আমার ভিতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে আব্বু। তুমি কেনো এইভাবে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে। আমাদের সুখের সংসারে কার নজর পড়লো বাবা। মেহু এবার হাঁটু ভাজ করে বসে পড়ে নিচে। পায়ে মাথা ঠেকিয়ে কান্না করতে করতে মেহুর হেঁচকি উঠে গেছে।

__এবার কন্যা বিদায়ের পালা। আমেনা খাতুন এবার মায়াকে তুলে দিলো জাফরের হাতে। জাফর আমেনা খাতুনকে আশ্বাস দিয়ে বলল, চিন্তা করবেন না আপনি। আমি মায়াকে দেখে রাখবো সব সময়। মায়াকে গাড়িতে তুলে জাফর এগিয়ে আসলো আমেনা খাতুনের কাছে। আমেনা খাতুনকে উদ্দেশ্য করে বলল,আমি মেহুকেও নিয়ে যাবো সাথে করে। আমেনা খাতুন যেনো হাতে চাঁদ পেয়ে গেলো। সে কালবিলম্ব না করে মেহুকে নিয়ে আসে গাড়ির কাছে। মায়ের সাথে মেহুকেও তুলে দেয় গাড়িতে। __

শো শো করে শব্দ করে ধূলো উড়িয়ে গাড়ি এসে থামলো চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে। মায়া তার মেয়ে মেহুকে সাথে নিয়ে নামতেই সামনে এসে দাড়ালো জাফরের প্রথম স্ত্রীর ছেলে মাহির। তার মায়ের সাজানো সংসারে নতুন কারো আগমন মাহির মেনে নিতে পারছেনা। মাহির মায়াকে পছন্দ না করলেও মেহুকে দেখে তার চোখে পানি চলে আসলো। তারও তো মেহু মতো একটা বোন ছিল। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। মা আর বোন একসাথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলো। তখন থেকেই মাহির একা হয়ে পড়লো।

রাত এক’টা বাজে ঘোমটা টেনে জাফরের ঘরে বধূ সেজে বসে আছে মায়া। চোখ দিয়ে অনবরত নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। তার ভাগ্যের উপর হাসি পাচ্ছে খুব। যে লোকটা কে সে বার বার রিজেক্ট করছে। আজকে সে তার বিয়ে করা বউ।

“জাফর রুমে আসে মাতাল হয়ে। জাফরকে দেখে মায়া কিছুটা পিছিয়ে গেলো। জাফর তার রক্তচক্ষু নিয়ে এগিয়ে গেলো মায়ার দিকে। হেঁচকা টানে মায়াকে খাট থেকে নামিয়ে একটা রোড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটাতে থাকে। জাফর তার পোষে রাখা এতোদিনের রাগ সব মায়ার উপর দিয়ে উসুল করছে।”

__ বাহির থেকে মাকে এমনভাবে মার খেতে দেখে মেহু ভয়ে কুঁকড়ে গেলো। মাহির দ্রুত এসে মেহুকে তার সাথে নিয়ে গেলো। মাহির এবার মেহুকে উদ্দেশ্য করে বলল, এটা রোজকার ঘটনা। উনি আমার মাকেও এমন মারধর করতেন। এখন তোমার মায়ের পালা। এইভাবেই তোমার বাকিটা জীবন কাটাতে হবে। নিজের চোখের সামনে মাকে মার খেতে দেখতে দেখতে। অভ্যস করে নাও।

মাঝখানে দিয়ে কেটে গেলো দুইটা বছর। মেহু এখন ক্লাস এইটে পড়ে। মেহু ক্লাস এইটে পড়াকালীন তার মা মায়ার এক কঠিন রোগ ধরা পড়ে। মেহুর পরিক্ষা চলাকালীন খবর আসে মায়া তার সব মায়া ত্যাগ করে চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে। মেহুর পৃথিবী যেনো ঐদিন থমকে গিয়েছিল। মেহু কান্না করতেও ভুলে গিয়েছিল।
সেদিন তরু আর তেজ মিলে মেহুকে অনেক কষ্টে সামলিয়ে ছিল।
মায়ার মৃত্যুর চল্লিশদিন পেরুতে না পেরুতেই জাফর আবার তৃতীয় বিয়ে করে রেনু বিবিকে। মাহির শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেহু তাকিয়ে রইলো রেনুবিবির দিকে। তার মা’য়ের মতোই বধূ সেজেছে নতুন মা।
মেহু এবার তাকাল জাফরের দিকে। মায়ার মৃত্যুতে যেনো তার ভিতরে এক বিন্দুও শোকের ছায়া দেখা যাচ্ছে না। দেখা গেলে কি সে চল্লিশ দিন পেরুতে না পেরুতেই নতুন বউ ঘরে তুলতো।

মেহু কিছু বললো না। শুধু দুচোখ ভরে দেখে গেলো জাফর আর তার নতুন বউকে। জাফর তো আর তার নিজের বাবা না।
বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে আসলেই বা মেহুর কি আসে যায়। মেহুও উঠে চলে গেলো নিজের রুমে। মেহু কি আর জানতো। বধূসেজে আসা নতুন মা তার জীবনকে নরক বানিয়ে দিবে। ইস! মেহুর এখন খুব ইচ্ছে করে তার মায়ের কাছে চলে যেতে। কিন্তু মেহু সাহস হয়ে উঠে না আত্মহত্যার মতো এতো বড়ো পাপ করতে।
তাই তো মেহু আজও বেচে আছে মরার মতো।

‘মোবাইলের কর্কশ শব্দে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো মেহু। মেহু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ হাতড়ে মোবাইল টা হাতে নিলো। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে তেজের নামটা। মেহু আলতো হেসে কলটা রিসিভ করলো। কল রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে ভেসে এলো এক পরিচিত কন্ঠস্বর। মেহুর এখানেই শান্তি। তেজ আর তরুর সাথে কথা বললেই মেহুর সকল দুঃখ নিমিষেই চলে যায়। মেহুর ভালো তাকার মেডিসিন তরু আর তেজ। ’

“কিরে আমাকে তো একবারও দেখতে আসলি না। তেজের কথায় হুঁশ ফিরল মেহুর। মেহু তাড়াহুড়ো করে উত্তর দিলো ব্যস্ত ছিলাম। অপর পাশ থেকে শোনা গেলো তেজের অভিমানী কন্ঠস্বর। ইস! আমার বেলায় তোর যতো ব্যস্ততা। আসতে হবে না। মরে গেলে তরুর মতো একবারে চল্লিশা খেতে আসিস। আমার বাপ আবার কিপ্টা না। অনেক বড় করে চল্লিশার আয়োজন করবে। তার একমাত্র ছেলের চল্লিশা বলে কথা।
তেজ নিতান্তই মজার ছলে কথাগুলো বললেও মেহুর ভিতরে মোচড় দিয়ে উঠে। ”
‘মেহু এবার তেজকে শাসিয়ে বলল, এমন বলিস না। আমার কষ্ট হয় তেজ। আমি সত্যি ব্যস্ত ছিলাম। মেহু খুব সুন্দর ভাবে এড়িয়ে গেলো সত্যটা। সত্যটা শুনলে হয়তো তেজ সেটা সহ্য করতে পারবে না।’

‘মেহুকে এতো উতলা হতে দেখে তেজ ঠোঁট টিপে হাসলো।’
‘কাল আসিস মেহু। তোর জন্য অপেক্ষা করবো। তেজ কল কেটে দিতেই মেহু আকাশ পানে তাকিয়ে উত্তর দিলো। আসবো তেজ তোর কাছে খুব তাড়াতাড়ি আসবো।’

চলবে_____ইনশাআল্লাহ

#দুই_হৃদয়ে_সন্ধি
#পর্বঃ১৩
#Nova_Rahman

ঈদ ঈদ আমেজ শেষ হতে না হতেই রিক হাওলাদার একটা মেসেজ পাঠায় তাতান চৌধুরীর কাছে। তাতান চৌধুরী মেসেজটা পেয়ে বেশ খুশি হলেন। দ্রুত পা ফেলে স্ত্রী জাহানারা চৌধুরীর কাছে এসে দাঁড়ালেন। স্বামীকে এতো খুশি দেখে জাহানারা চৌধুরী ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো __
‘কি হয়েছে, হঠাৎ আপনাকে এতো খুশি লাগছে যে। কোনো খুশির সংবাদ আছে নাকি?’

স্ত্রীর প্রশ্নের বিপরীতে তাতান চৌধুরী হসে উত্তর দিলেন__
খুশি তো লাগবেই বিবিজান। মেয়ের শ্বশুড় বাড়িত থেকে ঈদ উপলক্ষে আমাদের সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। এটা কি খুশির সংবাদ না।

স্বামীর কথায় জাহানারা চৌধুরী কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,
তা আপনি কি তাদের দাওয়াত দিয়েছেন। এতো যে দাওয়াত পেয়ে হেহেহে করছেন। লজ্জা করছে না। আমার তো লজ্জা করছে। মেয়ের শ্বশুড় বাড়ির লোক আগে দাওয়াত দিলো। অথচ আপনি এখনও হেহেই করে যাচ্ছেন।

স্ত্রীর কথা শোনে তাতান চৌধুরী নাক মুখ কুঁচকে তাকাল তার দিকে,
আরে চিন্তা করছো কেনো? আমরা যখন তাদের বাসায় যাবো। তখন সামনা সামনি দাওয়াত দিয়ে আসবো। জাহানারা চৌধুরী যেনো এতে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করলেন। তারপরও মনের ভিতরে কেমন কচকচ করছে। জাহানারা চৌধুরী আর কিছু না বলে মুচকি হেসে নিজের কাজে মনযোগী হলেন।

স্ত্রীকে কাজ করতে দেখে তাতান চৌধুরীও আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলেন তেজের রুমে। তেজ এখন পুরোপুরি সুস্থ। তেজ এখন নিজের কাজ নিজেই করতে পারে।
তাতান চৌধুরী দীপ্ত পায়ে হেঁটে তেজের কামরার সামনে এসে দাঁড়াল। বার কয়েক ঠোকা দিলো কাঠের দরজাটায়।

স্টাডি টেবিলে বসে ল্যাপটপের মাধ্যমে কোনো এক ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস করছিলো তেজ। পিছন থেকে আসা শব্দের উৎস অনুসরণ করে হুড়মুড়িয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াল। বাবাকে এই অসময়ে দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। দ্রুত পা ফেলে বাবার সামনে এসে দাড়াল তেজ।

বাবাকে তেজ জিজ্ঞেস করলো _
কি হয়েছে আব্বু। হঠাৎ আমার রুমে যে? বাহিরে দাড়িয়ে আছো কেনো। ভিতরে আসলো। কিছু বলবে? বলো।
এক সাথে এতোগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে তাতান চৌধুরী হতভম্ব হয়ে উত্তর দিতে ভুলে গেছেন। এক সাথে এতোগুলা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাতান চৌধুরীকে বেশ বেগ পোহাতে হলো। তিনি হাতের ইশারায় তেজকে থামিয়ে দিয়ে বলল__

আরে থামো তেজ, থামো। এক সাথে এতো প্রশ্ন করলে আমি কোনটার উত্তর দিবো আগে। বাবার কথায় তেজ কিছুটা লজ্জা পেলো।
ছেলেকে লজ্জা পেতে দেখে তাতান চৌধুরী হেঁসে বলল_
আরে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই তেজ। তোমার প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক। তুমি প্রশ্ন করতেই পারো। তবে সেটা আস্তেধীরে। না হলে অপর পাশের ব্যাক্তিটি তোমার কথা বুঝতে অসুবিধা হবে। কেমন।
বাবার কথায় তেজ হ্যাঁ সূচক মাথা দোলায়।

আর শোনো,
যে কারনে আমি তোমার কাছে এসেছিলাম।আমারা সবাই আজকে রাতে হাওলাদার বাড়িতে যাবো। হাওলাদার বাড়িতে আজকে দাওয়াত আছে আমাদের। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে যাও।

বাবার কথায় তেজের মাথায় যেনো একটা নতুন প্রজাতির কোনো বোমা বিস্ফোরণ হলো। তেজ শুকনো একটা ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো__
আব্বায়য়য়য়া ক্যান্সেল করে দিন এই দাওয়াত। আমি যাবো না। এই নি/র্ল/জ্জ আহনাফ হাওলাদার রোদের বাড়িতে আমি কিছুতেই যাবো না। তেজের বিরবির করে বলা কথাগুলো তার আশেপাশেই সীমাবদ্ধ ছিলো। শব্দদ্বয় যেনো দূরত্ব ভেঙ্গে তাতান চৌধুরীর কাছে গিয়ে পৌঁছাতে পারলো না।

তেজ হতাশ খুবিই হতাশ। তেজ হতাশ কন্ঠে নিজেই শুধালো__
তেজ তুই এই আহনাফ হাওলাদার রোদের থেকে সবসময় দূরে দুরে থাকবি। এই নি/র্ল/জ্জ ছেলের সাথে দেখা হলেই মানসম্মান নিয়ে টানাটানি পড়ে যাওয়া ব্যাপার স্যাপার কাজ করে। নি/র্ল/জ্জ/তা আর আহনাফ হাওলাদার রোদের মধ্যে বড়ো একটা কানেকশন আছে। তাই তো সবসময় ভুজুংভাজুং কথা বের হয় রোদের মুখ দিয়ে।

তেজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো রেডি হতে।

আলমারি থেকে একগাদা জামা কাপড় বের করে খাটের উপর একটা স্তুপ তৈরি করেছে তরু। তরু সেই কখন থেকে একটার পর একটা জামা ট্রায়াল দিয়ে দেখছে। কিন্তু তার কোনো জামাই পছন্দ হচ্ছে না। কি সাংঘাতিক ব্যাপার। তরু হতাশ হয়ে বলল, না এমন হলে হবে না। তাকে সুন্দর দেখাতে হবে। রোদের একমাত্র বউ বলে কথা। এই প্রথম সে শ্বশুড় বাড়ি যাচ্ছে। তাকে একটু সুন্দর না দেখালে চলে কি। রোদের সামনে থাকে সবচেয়ে সুন্দর দেখাতে হবে।

এক ঘন্টা ট্রায়াল দেওয়ার পর একটা পিঙ্ক কালারের গাউন জামা পছন্দ হয় তরুর। তরু আর কিছু ন দেখে এটাই পড়ে নেই। ড্রেসের সাথে মিল রেখে হালকা মেকআপ করলো মুখে। সাজুগুজু শেষ করে আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে তরু। না কোনো দিক দিয়ে ত্রুটি নেই। তরু নিজেই নিজেকে উদ্দেশ্য করে বলল__
তরুরে তরু আজকে তোকে দেখে তো মিস্টার রোদ এক্কেবারে পাগল হয়ে যাবে। তখন কি হবে?
তখন কি হবে আবার। পাবনা হসপিটালে একটা সিট বুকিং হবে। তরু নিজের বলা কথায় নিজেই হেসে খুটিখুটি।

তরু নিজেই নিজেকে কথাগুলো বলে, এখন নিজেই বেশ লজ্জা পাচ্ছে। তরু নিজের কপালে একটা চাপর মেরে, নিজের এমন আজগুবি কান্ডের জন্য ঠোঁট টিপে হাসছে।
তেজ পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে তরুর রুমের সামনে এসে দাড়াল। কয়েক বার দরজায় ঠোকা দিয়ে তরুকে ডাকলো। তেজের কন্ঠস্বর শোনা মাত্রই তরু ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো। এদিক সেদিক না তাকিয়ে মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে চটজলদি বেড়িয়ে আসলো রুম থেকে।

তেজ হাতা গোটানো শেষ করে তরুর দিকে চোখ ফিরালো। তরুকে দেখে তেজের চোখ যেনো বেরিয়ে আসার উপক্রম। তেজ বার কয়েক নিজেট চোখ ঝাপটালো। তরুকে অবাক হয়ে দেখলো আর বলল, তরুরে তোকে তো আজকে পুরাই বার্বিডল লাগছে। এইভাবে রোদ ভাইয়া তোকে দেখে, সে তো এক্কেবারে শেষ শেষ শেষ!

তেজের কথা শোনে তরু কিছুটা লজ্জা পেলো। কিন্তু তা বহিঃপ্রকাশ করলো না। তরু কপাট রাগ দেখিয়ে বলল, তেজ আমি তোর বোন হয়।
তরুর কথা শোনে তেজ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। তেজ এখন বুঝতে পারলো সে আবেগে কি বলে ফেলেছে। মাথা চুলকে তেজ কিছুটা লজ্জা পেয়ে কান ধরে তরুকে সরি বলল। তরু একটু ভাব নিয়েহাত নাড়িয়ে বলল,
ঠিক আছে ঠিক আছে। এতে লজ্জা পেতে হবে না।

তরু এবার তেজকে উদ্দেশ্য করে নিচে যাওয়ার কথা বলল,
চল এবার নিচে যায়।
তেজ আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত পা ফেলে নিচে আসলো বাবা মার কাছে। তরুও গেলো তেজের পিছন পিছন।

জাহানারা চৌধুরী সেই কখন থেকে ডয়িং রুমে বসে ছেলে মেয়ে দুইটার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু তার ছেলে মেয়ে দুইটার সাজগোছ যেনো শেষেই হচ্ছে না। জাহানারা চৌধুরী এবার হতাশ হয়ে সোফায় বসে পড়লো। তেজকে আসতে দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালেন জাহানারা চৌধুরী। দু পা এগিয়ে গেলো তেজের কাছে। গালে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাল তেজের দিকে। ছেলেকে আজকে পাঞ্জাবি পড়তে দেখে জাহানারা চৌধুরী অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো__

কি ব্যাপার তেজ। আজকে তুমি পাঞ্জাবি পড়লে যে? কোথাও কি কোনো স্পেশাল কেউ আছে নাকি? মায়ের কথায় তেজ মাথা চুলকে বলল, আরে তেমন কিছু না আম্মু। ঐ যে যাবো না রোদ ভাইয়াদের বাসায়। এই জন্য আরকি পাঞ্জাবি পড়লাম। তেজের কথার বিপরীতে জাহানারা চৌধুরী মাথা দুলিয়ে বলল, হুম বুঝলাম।

মা ছেলের কথার মাঝেই সিঁড়ি বেয়ে আস্তেধীরে নিচে নেমে আসলো তরু। পরনের গাউনটা উঁচু করে ধরে, এক পা দু পা করে এগিয়ে গিয়ে জাহানারা চৌধুরীর সামনে এসে দাড়ালো।
তরু তার জামাটা গুড়িয়ে ফিরিয়ে জাহানারা চৌধুরীকে দেখিয়ে বলল__
দেখতো আম্মু আমাকে কেমন লাগছে?
মেয়েকে এই রূপে দেখে জাহানারা চৌধুরীর মুখ থেকে আপনা আপনি বেরিয়ে আসে __মাশা-আল্লাহ। কারো নজর না লাগুক।

মায়ের মুখে নিজের এতো প্রসংশা শুনে তরু খুশি অবস্থায় আরো খুশি হয়ে পড়ে। আনন্দে নেচে উঠে মনটা।

মেয়েকে এতো খুশি দেখে জাহানারা চৌধুরী তরুকে উদ্দেশ্য করে বলল,
তরু এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই। তোমার খুশি হয়ে আমাকে টেনশনে ফেলে দিয়েছো। মায়ের এমন কথা শোনে তরু ভ্রু কুঁচকে তাকাল মায়ের দিকে। মেয়েকে এইভাবে তাকাতে দেখে জাহানারা চৌধুরী বলল__
এইভাবে তাকিয়ো না তরু। এইযে দুই ভাই বোন মিলে এতো সুন্দর সেজেছো, এতে করে যদি কারো নজর লেগে যায়। তখন কি হবে? শুনি।

মায়ের এমন কথা শোনে তরু ফিক করে হেসে ফেলে। মেয়েকে হাসতে দেখে জাহানারা চৌধুরীও তাতে তাল মিলালো।

তাতান চৌধুরী অনেক্ক্ষণ ধরে গাড়িতে বসে সবার অপেক্ষা করছে। কিন্তু তার ছেলে মেয়ে বউয়ের আসার নাম গন্ধই নেই। তাতান চৌধুরী এবার বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে ডয়িং রুমে আসে। ডয়িং রুমে সবাইকে হেলেদুলে গল্প করতে দেখে তাতান চৌধুরী রেগে বোম হয়ে যায়। তিনি পিছন থেকে গলা বাড়িয়ে ডাক দিলেন__

কি মন্ত্রী মিনিস্টারের দল। আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভা শেষ হলে দয়া করে আসুন। আমি গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছি। বৈঠকখানা যদি এখন তাড়াতাড়ি বন্ধ না করেন। তাহলে আজকে রাত এখানেই শেষ হয়ে যাবে। তাই বিনীতভাবে অনুরোধ করে জানাচ্ছি যে, আপনাদের আলোচনা সভা শেষ করে জলদি আসেন।

তাতান চৌধুরী কথাগুলো বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল। তাতান চৌধুরীকে এইভাবে কথা বলতে দেখে জাহানারা চৌধুরী মুচকি হেসে আঁচলে মুখ ঢাকলো। তাতান চৌধুরী চলে যেতেই, তেজ তরু আর জাহানারা চৌধুরীও গেলো পিছন পিছন। গাড়ির দরজা খুলে বাবার পাশে গিয়ে বসলো তেজ। জাহানারা চৌধুরী মেয়েকে নিয়ে পিছনের সিটে গিয়ে বসলো।

সবাই গাড়িতে উঠে বসতেই তাতার সাহেব গাড়ি স্টার্ট দিলেন। শো শো শব্দ করে ধুলোবালি উড়িয়ে গাড়ি চললো নিজের গন্তব্যে। দীর্ঘ এক ঘন্টার পথ অতিক্রম করে গাড়ি এসে থামলো হাওলাদার বাড়ির সামনে। সবাই একে একে বেড়িয়ে আসলো গাড়ির ভিতর থেকে। পিছনের সিট থেকে মিষ্টির প্যাকেট গুলো বের করে আনলো তেজ। তাতান চৌধুরী কিছু প্যাকেট নিয়ে পা বারালেন সামনের দিকে। অন্যরাও গেলো তাতান চৌধুরীর পিছন পিছন।

দরজার কাছে এসে তেজ মিষ্টির প্যাকেট গুলো নিচে রেখে কলিং বেল বাজালো।
রোদসী ডয়িং রুমে বসে উদয়ের সাথে মেসেজে কথা বলছে। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ শোনে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকাল। দরজা থেকে চোখ সরিয়ে রোদসী এবার রান্নাঘরে দিকে তাকাল। না রান্নাঘরে চৈতালি হাওলাদার নেই। রান্নাঘরের কাজ শেষ করে চৈতালি হাওলাদার উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে। মাকে না পেয়ে রোদসী ফোনটা রেখে উঠে দাঁড়ালো।
এতোক্ষণ ধরে কলিং বেল বাজানোর পর, ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তেজ বিরক্ত হয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকে। বার বার কলিং বেলের শব্দ শোনে রোদসী দৌড়ে যায় দরজা খুলতে। রোদসী দ্রুত এসে এক হেঁচকা টানে দরজা খুলে ফেললো।
অপর পাশে দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা তেজ, আকস্মিক ঘটনায় তাল সামলাতে না পেরে রোদসীর উপর গিয়ে পড়ে। রোদসীও তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলো। অভাবনীয় এমন ঘটনায় রোদসীর মাথা গিয়ে ফ্লোরে সাথে সজোড়ে ভারি খেলো। রোদসী এতে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে।

আকস্মিক এমন হওয়াতে চৌধুরী বাড়ির সাবাই হতভম্ব হয়ে কথা বলতে ভুলে গেছে। ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। হুঁশ ফিরতেই নিজেকে একটু ধাতস্থ করে তাতান চৌধুরী দৌড়ে গিয়ে তেজকে টেনে তুললো রোসীর উপর থেকে। তরু আর জাহানারা চৌধুরীও দ্রুত গিয়ে রোদসীকে নিচ থেকে টেনে তুলে দাড় করালো।
তেজ লজ্জা পেয়ে মাথা নতজানু করে রেখেছে। হঠাৎ করে এমন হশে যাবে তেজের মাথাতেই ছিলো না।

তরু এবার তেজকে চোখের ইশারায় রোদসীকে সরি বলতে বলল_
তরুর কথা তেজ এবার বিনাবাক্যে রোদসীকে সরি বলে দিলো। প্রতিত্তোরে রোদসী শুরু একটু মুচকি হাসলো।

জাহানারা চৌধুরী দ্রুত এসে রোদসীকে বলল,
মা রোদু প্লিজ কিছু মনে করো না। তেজ ইচ্ছে করে তোমার উপর পড়ে যায়নি। ভুল করে হয়ে গেছে। তেজের হয়ে আমিও তোমার কাছে মাফ চাইছি। জাহানারা চৌধুরীকে মাফ চাইতে দেখে রোদসী অবাক হয়ে বলল,
একি করছেন আন্টি। আমি বুঝতে পেরেছি আপনার ছেলে ইচ্ছে করে পড়েনি আমার উপর। তাই বলে আপনি আমাকে সরি বলবেন। রোদসী অভিমান গাল ফোলালো। রোদসীকে অভিমান করতে দেখে জাহানারা চৌধুরী মুচকি হাসলেন।

সবকিছু মিটমাট করে চৌকাঠ পেরিয়ে বাসায় প্রবেশ করলো সবাই। চৈতালি হাওলাদার দ্রুত পা ফেলে নিচে আসলেন। দৌড়ে গিয়ে জাহানারা চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো চৈতালি হাওলাদার। নিচ থেকে হৈ-হোল্লোড়ের শব্দ শোনে রিক হাওলাদারও নিচে আসেন। প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে তিনি বসে পড়েন গল্প করতে। চৈতালি হাওলাদার রান্নাঘরে যায় পানি আনতে। জাহানারা চৌধুরীও গেলো তার পিছন পিছন।

রোদসী আর তরু সোফার অন্য পাশে বসে গল্প করছে। তেজ বাসার এক কোনায় বুকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে রইলো। তার তো আর কোনো ফ্রেন্ড নেই। যে বসে বসে গল্প করবে। তেজ হতাশ হয়ে বাহিরে চলে গেলো মেহুর সাথে কথা বলতে।
রোদসী আর তরুর কথা বলার মাঝখানেই কর্কশ শব্দ করে বেজে উঠলো রোদসী মুঠোফোনটা। ফোনের স্কিনে জ্বলজ্বল করছে উদয়ের নামটা। রোদসী কিছুটা লজ্জা পেয়ে তরুর থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো উদয়ের সাথে কথা বলতে। তরু হাত পা মেলে বসে থাকলো সোফার এক পাশে।
তরুকে এইভাবে একা একা বসে থাকতে দেখে রিক হাওলাদার তরুকে বলল,
আমার মিষ্টি বউমা। একা একা বসে থেকে বোরিং না হয়ে, বরং তুমি রোদের রুমে চলে যাও। উপরের বা দিকের তিন নাম্বার রুমটা রোদের। যাও ঘুরে দেখে এসো।

রিক হাওলাদারের অনুমতি পেয়ে তরু এক দৌড়ে চলে যায় উপরের ফ্লোরে। আসার পর থেকে রোদকে দেখতে না পেয়ে তরুর মনটা কেমন কেমন করছিলো। তরুর বেশ অভিমান হলো রোদের ওপর। সে কখন থেকে আসলো আর এই ছেলেটা একবারও দেখা করতে গেলো না। তরুর অভিমানে চোখ ভিজে আসলো। তরু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ভাগ্যের উপর হাসলো। একটু বেশিই আশা করে ফেলেছে তরু। তরু আর সময় নষ্ট না করে দরজা খুলে রোদের রুমে প্রবেশ করলো।___

রোদের রুমে ঢুকে তরুর চোখ যেনো ছানাবড়া হয়ে গেলো। কি সুন্দর রুমের ভেতরকার পরিবেশ। অথচ বাহির থেকে দেখে বুঝবার উপায় নেই রুমের ভিতরের সৌন্দর্য কতটুকু। তরু গায়ের ওড়নাটা এক পাশে খুলে রেখে, এক লাফ দিয়ে খাটের উপরে উঠে পড়ে। খাটের উপর উঠে তরু ব্যাঙের মতো লাফাতে থাকে। লাফাতে লাফাতে তরু বলতে লাগলো__
আয় হায় ডাক্তারের বিছানা এতো নরম। আমার তো দড়ি লাফ দিতে ইচ্ছে করছে। সাথে করে একটা দড়ি নিয়ে আসলে ভালো হতো। ইস! ভুল হয়ে গেলো।

রোদ একটা কাজে বাজারে গিয়েছিলো। রোদ বাজার থেকে বাসায় ফিরে ডয়িং রুমে তাতান চৌধুরীকে বসে থাকতে দেখে, দ্রুত চলে যায় তার কাছে। তাতান চৌধুরীর সাথে কুশলাদি বিনিময় করে রোদ পা চলালো নিজের রুমের দিকে। রোদ চলে যেতেই আবারও গল্পে মেতে উঠলো দুই বন্ধু।

রোদ দ্রুত পা ফেলে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে তরুর সাথে দেখা করতে যাবে। রোদ দ্রুত পা ফেলে নিজের রুমের সামনে এসে দাড়ালো। দু’হাতে রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো। রুমে প্রবেশ করতেই রোদের চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো। রোদ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো__
আচ্ছা আমি কি ভুল দেখছি? কয় না তো।
বার কয়েক চোখ ঝাপটে রোদ আবার তাকাল বিছানার দিকে। না আমি তো ভুল দেখছি না। এই তো সেই, আমার না হওয়া বধূ।
রোদ অবাক হয়ে বলল, একি তরু কি করছো তুমি। পরিচিতি কন্ঠস্বর কানে আসতেই তরু লাফালাফি থামিয়ে ঘাড় গুড়িয়ে পিছন ফিরে তাকাল। রোদকে দেখা মাত্রই তরু শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে এক চিৎকার দিলো। তরুকে চেঁচাতে দেখে রোদও লাফ দিয়ে খাটের উপর উঠে পড়লো। রোদ দ্রুত এক হাত দিয়ে তরুর কোমর পেচিয়ে অন্য হাত দিয়ে তরুর মুখ চেপে ধরলো।__

রোদকে এতো কাছে দেখে তরুর বুক ধড়ফড় করছে। শ্বাসপ্রশ্বাস থেমে থেমে আসছে। তরুর এমন অবস্থা দেখে রোদ তার হাত সরিয়ে ফেললো। রোদ এবার তরুর দিকে তাকাল, দেখলো আর বলল__
মাই ডিয়ার বধূ। এইভাবে অকারণে চিৎকার চেচামেচি করে, বিয়ে আগে আমার সম্মানে কলঙ্কের দাগ লাগাবেন না। এইভাবে কিছু করার আগেই যদি চেচামেচি করো। তাহলে বিয়ের পর যখন কিছু করবো। তখন কি করবে শুনি?
তরু এখনও সময় আছে, আমার গালটা বাড়িয়ে দিচ্ছি। টপাটপ কয়টা চুমু খেয়ে ফেলো। দেখবে লজ্জা কিছুটা কমে গিয়েছে। বিয়ের পর ইয়াম্মি ইয়াম্মি টাইমে আর লজ্জা পেতে হবে না। দেখলে আমি তোমার জন্য কতটা চিন্তা করি। তেমার তো আমাকে আরো দুইটা বোনাস কিস করা উচিৎ। বলো তাই কিনা?

তরু দাঁত কিড়মিড় করে রোদকে বলল। চুপ করুন অসভ্য লোক। আপনার এমন অসভ্য মার্কা কথা শোনে তো আশেপাশের কুত্তাগুলোও মরে যাবে। আপনি এতো নির্লজ্জ কেনো? আপনার লজ্জা শরম কোথায় রেখে এসেছেন। প্লিজ বলুন। আমি নিজে গিয়ে আপনার লজ্জা শরম খুঁজে এনে দিবো। এমন নির্লজ্জ জামাই নিয়ে আমি সংসার করতে পারবো না।

রোদ একটু ঝুঁকে এসে তরুর কানে ফিসফিস করে বলল,
শুনুন মিসেস হাওলাদার। আপনি চান বা না চান। আপনাকে এই বিশ্ব নির্লজ্জ আহনাফ হাওলাদার রোদকে নিয়েই সংসার করতে হবে।বিয়ের পর তো এই রোদ নির্লজ্জতার সব সীমা অতিক্রম করবে। তখন এই রোদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে, আপনিও চাইবেন রোদ যেনো বার বার অভদ্র হয়ে যায়। আর বাকিটা জীবন তো এই নির্লজ্জ রোদের সাথেই কাটাতে হবে। তখন কি করবেন? হুম।

তো সব মিলিয়ে রোদের বউ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। আর মাত্র কয়টা দিন। তারপর আপনি পুরোপুরি আমার হয়ে যাবেন। তারপর আপনার সাথে কি হবে মিস তরু? ভাবতে পারছেন। না পারলে ভানতে থাকুন। আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসি।

তরুকে ছেড়ে রোদ দরজার পাশে চলে যায়। পাশেই রাখা আলমারির ড্রয়ার থেকে একটা চাবি নিয়ে দরজায় তালা লাগিয়ে দিলো। রোদকে দরজায় তালা দিতে দেখে তরু উদ্বিগ্ন কন্ঠে রোদকে জিজ্ঞেস করলো__
একি আপনি দরজায় তালা লাগালেন কেনো? আমি বাহিরে যাবো কি করে। আপনি তত্তাড়ি দরজা খুলে দিন। আমি এক্ষুনি বাহিরে যাবো।
তরুকে এতো উতলা হতে দেখে রোদ শ’য়’তা’নি হেসে তরুকে চোখ টিপ মেরে বলল,
তরু বেইবি, তুমি এতো উতলা হচ্ছো কেনো? আমি বেশি কিছু করবো না। জাস্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আলোচনা করবো। ভবিষ্যতে বাচ্চা খাচ্চা কিভাবে নিতে হবে সেই প্রসেসিং সম্পর্কে তোমাকে বুঝিয়ে বলবো। তুমি চাইলে আমি প্রেক্টিকেলি ক্লাস করেও দেখাতে পারি। যদি তুমি চেচামেচি না করো।

আর শোনো,
চেচামেচি করে এনার্জি নষ্ট করো না। আমার রুম থেকে কোনো শব্দ বাহিরে যায় না। চেচামেচি করে কোনো লাভ নেই। তো তুমি বরং বসো। আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে এসে তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি।

রোদ আর কথা না বাড়িয়ে বাথরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। রোদ চলে যেতেই তরু ইমেজিং করছে। রোদ বাথরুম থেকে বেরিয়ে কি করবে তার সাথে। একটুখানি ভাবতেই তরুর চোখ মুখ লজ্জায় লালা হয়ে গেলো। তরু মাছি তাড়ানোর মতো করে মুখের সামনে বার কয়েক হাত নাড়ালো। তরু তার দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে নিজেকে একটু স্বাভাবিক করলো।
তরু এবার দু-হাতে নিজের কোমর ধরে, রোদকে উদ্দেশ্য করে বলল,__
ডাক্তার সাহেব ভুল করেও আপনি আমার কাছে আসবেন না। সত্যি সত্যি লুচ্চামি করার চেষ্টা করলে, আমি আজকে ঘুষি মেরে আপনার নাক ফাটিয়ে দিবো। দরকার হলে আমি আপনাকে ভালোবাসি এই কথা কিচ্ছুক্ষণের জন্য ভুলে যাবো। তারপরেও আপনার থেকে নিজেকে রক্ষা করবো। হুম!

তরুর কথার মাঝখানেই রোদ বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসলো। তরুকে একা বিরবির করতে দেখে, রোদ হাতের গামছাটা রেখে তরুর দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলো। রোদকে নিজের দিকে এগোতে দেখে তরু ভয়ে পিছাতে শুরু করলো। পিছাতে পিছাতে তরুর পিঠ গিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেকে গেলো। রোদ একটু ঝুঁকে এসে দু’হাত দেয়ালে ভর দিয়ে দাড়ালো। রোদের গরম নিশ্বাস গিয়ে আঁচড়ে পরছে তরুর মুখে। রোদকে আবার এতো কাছে দেখে তরু এবার ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তরুকে কাঁপতে দেখে রোদ মুচকি হেসে দ্রুত সরে আসলো।

পাশে থাকা গিটারটা হাতে নিয়ে রোদ এবার তরুকে বলল,
ভয় পেয়ো না মেয়ে। আমি কিছু করবো না। চলো বেলকনিতে যায়। আকাশে অনেক সুন্দর চাঁদ উঠেছে। আমি প্রতিদিন ঐ আকাশের বুকে ভেসে বেড়ানো চাঁদকে গান শোনায়। আমি না হয় আজকে আকাশের চাঁদকে বাদ দিয়ে, আমার চাঁদকে পাশে বসিয়ে গান শোনাবো। শোনবে কি?

রোদের কথা শোনে তরু হতভম্ব হয়ে কথা বলতে ভুলে গেছে। তরু বুঝতে পারছে না। এই ছেলের কয়টা রূপ। গিরগিটির মতো রং পাল্টায়। গিরগিটিও তো এর কাছে এসে লজ্জা পাবে। কি সাংঘাতিক।
তবে যায় হোক। তার ডাক্তার সাহেব লোকটা খারাপ না। রোদের কথার বিপরীতে তরু এবার মুচকিহেসে সম্মতি জানালো।

রোদ এবার তরুর হাতটা ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেলো। বেলকনির লাইট অন করতেই তরু যেনো আরেক দফা অবাক হলো। কি সুন্দর করে বেলকনিটাও ডেকোরেশন করে রেখেছে। বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছের মধ্যে ফুল ফুটেছে। কি মনোমুগ্ধকর লাগছে দেখতে।
রোদ একটা চেয়ার এগিয়ে দিলো তরুর দিকে।। অন্য একটা চেয়ার নিয়ে সে নিজেও বসলো তরুর পাশে। রোদ এবার গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলে গান গায়তে লাগলো__

“তোমার জন্য নীলচে তারার একটুখানি আলো”
“ ভোরের রং রাতে মিশে কালো ”
“কাঠ গোলাপের সাদার মায়া”
“মিশিয়ে দিয়ে ভাবি”….
“আবছা নীল তোমার লাগে ভালো”

রোদের বেলকনিটা দখিন দিকে। দখিনার মিষ্টি বাতাস এসে মুহূর্তটাকে আরো সুন্দর করে তুলছে। দখিনা বাতাসে তরুর ছোট ছোট চুল গুলো একটু পর পর মুখের মধ্যে আঁচড়ে পড়ছে। তরু বিরক্ত হয়ে বার বার হাত দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দিচ্ছে। রোদ খুব অদ্ভুত ভাবে তরুর দিকে তাকিয়ে, তরুকে দেখে যাচ্ছে। যেনো হাজার বছরের তৃষ্ণা চোখে। রোদের এমন চাহনি তরুর কাছ বড্ড অদ্ভুত ঠেকলো। কিন্তু তা মুখে প্রকাশ করলো না।

চলবে__ইনশাআল্লাহ