দৃষ্টিনন্দনে তুমি পর্ব-০৩

0
361

#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৩

রফিক হৈমন্তীর সঙ্গে আবিরের বিয়েটা মানতে নারাজ। অকথ্য ভাষায় সবাইকে গালি গালাজ করছে। বাড়ির লোকজন যে ওকে ভালোবাসে না এটা নাকি তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ। ওকে খোঁজার জন্য বিয়েটা একদিন পিছিয়ে দিতে পারতো কিন্তু না দিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলো। নিজের পছন্দের মেয়েকে নিজের ভাইয়ের বউ হিসেবে মানতে ওর অসুবিধা হচ্ছে। কাজী বাড়িতে বউদের বেশ সম্মান আছে। রফিককে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘরে পাঠানো হলো। এখনো হৈমন্তীকে বরণ করা হয়নি। আবির বিরক্ত হচ্ছে বসে থাকতে থাকতে। ওদের দুজন কে ডাইনিং রুমের সোফায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। ঘোমটার ফাঁক দিয়ে হৈমন্তীর দৃষ্টি আশেপাশে ঘুরছে। এখনো বরের মুখ দেখা হয়নি। ওর ভয়ের চাইতে কৌতূহল বেশি। আসার সময় ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হননি। আরাফাত ওর সঙ্গে রাগ করেছে বিষয়টা নিয়ে ও চিন্তিত। কিভাবে ভাইয়ের রাগ ভাঙানো যায় সেই চিন্তা ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। বিপদের দিনের বন্ধু হচ্ছে ভাইয়া।হৈমী যখনই কোনো ঝামেলা পাকিয়ে উদ্ধার হতে পারে না তখনই আরাফাত এসে ঝড়ের গতিতে ওকে উদ্ধার করে। হৈমন্তীর ধ‍্যান ভাঙলো পাশ থেকে আসা আওয়াজ শুনে।

> তোমরা উঠে আসো।

হৈমন্ত মন্ত্রমুগ্ধের ন‍্যায় দাঁড়িয়ে পড়লো। ভদ্রমহিলা ওদের নিয়ে গিয়ে বরণ করে হৈমন্তীকে সকলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলো। হৈমন্তী একটা বিষয় লক্ষ্য করলো এই বাড়ির মেয়ে বউদের কারো মুখেই হাসি নেই। সকলেই গম্ভীর। তবে ছেলেদের সবাই স্বাভাবিক বেশ কথাবার্তা বলছে। মেয়েদের দিকে তাঁকালে মনে হচ্ছে মানুষের মতো দেখতে কোনো রোবট। দরকার ছাড়া একটা কথাও উচ্চারণ করছে না। হৈমন্তীর এবার ভয় করছে। ও তো বেশ কথা বলে। এই পরিবেশের সঙ্গে কিভাবে মানিয়ে চলবে মাথায় আসছে না। আবির বরণের সঙ্গে সঙ্গেই কোথায় একটা চলে গেছে। হৈমন্তীকে বাইরে বসিয়ে রাখা হলো। হৈমন্তীর শাশুড়ির মুখটা স্বাভাবিক কিন্তু চাচি শাশুড়ির মুখে বিরক্ত। ভ্রু জোড়া কুচকে রেখেছে। হৈমন্তী অবাক চোখে লুকিয়ে লুকিয়ে সেসব খেয়াল করলো। বেশ কিছুক্ষণ পরে ওকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেওয়া হলো। রুমটাবেশ পরিপাটি করে সাজানো তবে কোনো ফুলের বাসর নেই। কয়েকটা ফুলদানিতে রজনী গন্ধা ফুলের সঙ্গে গোলাপ রাখা আছে। বিয়ে বাড়ির সঙ্গে এই বাড়ির কোনো মিল নেই। হৈমন্তী ভয়টা দ্বিগুন হচ্ছে। কিছু একটা ভেবে বিছানা থেকে নামার জন্য পা বাড়াতেই দরজা খুঁলে গেলো। হৈমন্তী পা গুছিয়ে নিয়ে পূর্বের মতোই জড়সড় হয়ে বসলো। আবির এক ঝলক মেয়েটার দিকে তাঁকিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো। হৈমন্তী সেদিনের তাঁকিয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকটা বেরিয়ে আসলো। আবির সোফায় বসতে বসতে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
> কি নাম তোমার?
হৈমন্তী ভয়ে কেঁপে উঠলো। ঢোক গিলে বলল,
> হৈমন্তী।
আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> আগেপিছে কিছু নেই?
> জ্বী আছে মির্জা, হৈমন্তী মির্জা।
> কোন ক্লাসে পড়ো? দেখে তো মনে হচ্ছে ক্লাস নাইন।

হৈমন্তীর বেশ রাগ হলো লোকটার কথা শুনে।তবে ভয়ও পাচ্ছে। পড়াশোনার কথা জিঞ্জাসা করতেই ওর মনে হলো ওতো প্রথম সাময়িক পরীক্ষাতে দুটো সাবজেক্টে ফেল করেছে। এখন যদি লোকটা জেনে যায় কি হবে? না না বলা যাবে না। তাছাড়া ওতো প্রথমেই ভেবেছিল মাধ্যমিক ফেল ছেলের সঙ্গে বিয়ে হলে পড়াশোনার কথা আর জিঞ্জাসা করবে না। ঝামেলা হবে না। কে জানতো পাত্র পাল্টে যাবে। আগে জানলে বিয়েটা ও করতোই না। আবির ওকে চুপচাপ দেখে বলল,

> যাওয়া ফ্রেস হয়ে এসে ঘুমাও। বাচ্চাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে আমার বিরক্ত লাগে।

হৈমন্তী ঘোমটার উচু করে একবার লোকটার মুখটা দেখে নিলো। লোকটা দেখতে সুদর্শন তাতে সন্দেহ নেই কিন্তু মুখের হাসির বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। এরা হাসে না ক‍্যান এই প্রশ্নই ওর মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। হৈমন্তী চুপচাপ ফ্রেস হয়ে আসলো। শাড়ি চেঞ্জ করে থ্রি পিচ পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বেরিয়ে আসলো। আবির একবার দরজা খোলার শব্দ শুনে মাথা তুলতেই দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেলো। আবিরের কাছে মেয়েটা নেহায়েত বাচ্চা ছাড়া কিছুই না। এইটুকু একট মেয়ের বিয়ে কিভাবে দিতে পারে ওর ভাবনার বাইরে। বাপ চাচাকে মনে মনে ইচ্ছা মতো ধুয়ে দিলো। হৈমন্তী চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বিছানা জড়সড় হয়ে শুয়ে পড়লো। সারাদিনব্যাপী যে ধকল গিয়েছে তার ফলাফল হিসেবে শুতেই ঘুমিয়ে পড়লো। ফোন হাতে বসে আছে আবির। কিছুক্ষণ আগে একটা টেক্সট এসেছে। এটা নিয়ে বেশ চিন্তিত কিছু না ভেবে বাইরে বেরিয়ে পড়লো।
☆☆☆☆
সকালবেলায় কারো স্পর্শ পেয়ে হৈমন্তীর ঘুম ভাঙলো। চোখ খুঁলে দেখলো পাশে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। মেয়েটার চোখেমুখে হাসির আভা। হৈমন্তী ধড়ফড় করে উঠে বসতেই মেয়েটা বলে উঠলো,

> ভয় পাচ্ছো কেনো? ভয়ের কিছু নেই। তোমার ভাইয়া এসেছে তোমাকে নিতে। যাবে না?

খুশীতে হৈমন্তীর চোখ চকচক করে উঠলো। বাড়িতে ফিরবে এখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। হৈমন্তী তাড়াতাড়ি উঠে বসলো। হঠাৎ ঘুম ভাঙার জন্য শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে। মেয়েটা মলিন মুখ নিয়ে ওর সামনে বসে পড়লো। হৈমন্তীকে চুপচাপ দেখে বলল,

> ভাইয়া চলে গিয়েছে তোমার জন্য একটা চিঠি রেখে গেছে। ভাইয়াকে ভূল বুঝো না। আজকের মধ্যেই ওকে যেতে হলো নয়তো ফ্লাইট মিস করতো। তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া ফিরে আসবে।

মেয়েটা কথা শেষ করে ওর হাতের মুঠোয় একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে গেলো।হৈমন্তীর চোখ বড়বড় করে তাঁকালো। মেয়েটা যেমন এসেছিল তেমনিভাবে চলে যেতেই ঝড়ের গতিতে রাজীব ভেতরে ঢুকে হৈমন্তীর হাত ধরে বলল,

> বাড়ি চল হৈমী। এখানে তোকে আর থাকতে হবে না। খুব ভূল করে ফেলেছি তোকে এদের বাড়িতে বিয়ে দিয়ে।

হৈমন্তী বিস্মিত হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

> কেনো ভাইয়া?

> এরা ভালো মানুষ না। তুই লাগেজ গুছিয়ে নে। এখুনি বের হবো।

হৈমন্তী চেঞ্জ করলো না। লাগেজ নিয়ে ভাইয়ের পেছনে পেছনে বের হলো। ডাইনিং রুমে বড়সড় একটা ঝামেলা হচ্ছে। এ বাড়ি থেকে মির্জ বাড়ির নামে অভিযোগ করা হয়েছে। বোনের বিয়ে ওরা কৌশলে কাজী বাড়ির ডাক্তার ছেলের সঙ্গে দিতে রফিককে আটকে রেখেছিল। রাজীব প্রতিবাদ করেছে। এমন হলে আগেই ও বিয়ে ভেঙে দিতে পারতো। রাজীবকে থ্রেট করা হয়েছে নির্বাচন থেকে সরে আসতে। তাছাড়া জামাই বিয়ের রাতেই বিদেশ পাড়ি দিয়েছে সেখানে বোন কিভাবে সুখে থাকবে এটা নিয়ে চিন্তিত রাজীব। অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করেছে এই বাড়িতে বোনকে রাখবে না। দরকার নেই দু পক্ষের মিলমিশের। এরা মানুষ না।কাজী বাড়ির ছেলেদের ডিভোর্স হয়না তবে স্ত্রী মারা গেলে বিয়ে করার নিয়ম আছে। রাজীব জানেনা এই ভুলভাল নিয়ম কে সৃষ্টি করেছে। আনোয়ার কাজী ভাইয়ের জন্য বউমাকে খুন করে গুম করে দিতেও পিছপা হবে না। ভরসা করার মতো এখানে কেউ নেই। রাজীব ওকে নিয়ে দরজা দিয়ে বের হওয়ার সময় কোথায় থেকে হৈমন্তীর শাশুড়ি আসমা বেগম এসে হাজির হলেন। উনি ছলছল চোখে হৈমন্তীর হাতে বালা পরিয়ে দিয়ে বললেন,

> তোমার সঙ্গে তেমন কথাবার্তা বলতে পারিনি। তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। প্রথমে রাগ হয়েছিল ভেবেছিলাম ডাক্তার ছেলের সঙ্গে ডাক্তার বউ নিয়ে আসবো। তোমার মুখটা দেখেই কেমন মায়া হলো। পথ চেয়ে থাকবো তুমি আবার ফিরবে আসবে আমার বাড়িতে।

হৈমন্তীর বেশ মায়া হলো। কিন্তু ওর তো কিছু করার নেই। রাজীব গম্ভীর কন্ঠে বলল,

> আন্টি বোনকে রেখে যাওয়ার মতো ভরসা পাচ্ছি না।বিয়ের রাতে বউ ফেলে জামাই চলে যেতে দেখেছেন কখনও? তাছাড়া আমাদের নামে জঘণ্য রকম অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। আপনার ছেলে যদি আসে তখন দেখা যাবে।

রাজীব কথাটা শেষ করে অপেক্ষা করলো না। হৈমন্তীক টেনে বের হয়ে আসলো। আরাফাত এসেছে বোনকে নিতে। ডাইনিং রুমে রফিকের সঙ্গে ওর তর্কাতর্কি চলছে। আরাফাতকে ও দোষারোপ করছে। বিয়ের রাতে রফিক বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেয়ে বাড়িতে ফিরছিল তখন কেউ ওর মুখ বেধে কিডন‍্যাপ করে। রফিক সোজাসুজি আরাফাতকে দোষী করছে। ছেলেটার রাগ বেশি। অযথা ওকে দোষ দেওয়াই রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দুম করে রফিকের মুখের মধ্যে ঘুষি বসিয়ে দিলো। ঝামেলা আরও বাড়লো। হাতাহাতি হলো। বহুকষ্টে আরাফাতকে ওখান থেকে বের করা হলো। মির্জা বাড়িতে ফিরে এলো হৈমন্তী। বিয়েটা নিয়ে ওর অনেক কৌতূহল ছিল সব মিটে গেলো। এক রাতের ব‍্যবধানে আবিরের মুখটা পযর্ন্ত মনে পড়ছে না। আমেনা বেগম ছেলেদের উপরে রুষ্ট হয়েছেন। মেয়েটার সংসার হলো না এই ছেলেদের জন্য। উনি হম্বিতম্বি করছেন। রাজীব রাগ করে বোনকে ঢাকাই খালার বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। আমেনা বেগমের সামনে থাকলেই ঝামেলা হবে
জেলা শহর থেকে রাজধানীতে পৌঁছে গেছে হৈমন্তী। নতুন শহর নতুন পরিবেশ। আরাফাত ওকে ভালো একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গেল। মোটামুটি দিনকাল ভালো যাচ্ছে। হৈমন্তীর খালা রাহেলা হকের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে রাকিব ডাক্তারি পাশ করে স্থানীয় হাসপাতালে চাকরি করছে আর মেয়ে ছোঁয়া হৈমন্তীর দুই বছরের সিনিয়র। এদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে হৈমন্তী হিমশিম। হৈমন্তীকে এরা তেমন পাত্তা দেয়না। তবে খালার সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক। রাহেলা হক বোনের মেয়েকে পেয়ে বেজায় খুশী।
গ্রীষ্মকাল পেরিয়ে বর্ষা এলো আবার চলেও গেলো। হৈমন্তী একটা বছর খালার বাড়িতে আছে। আরাফাত মাঝেমাঝে ওকে দেখতে আসে। রাজীব নির্বাচনে পাশ করেছে তবে কাজীদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। কাজীরা ভূলেই গেছে মির্জা বাড়ির সঙ্গে ওদের একটা সম্পর্ক আছে। হৈমন্তীর এক দিনের সংসার। এক বছরে হৈমন্তীর অনেক উন্নতি হয়েছে। পড়াশোনার প্রতি ভালো মনোযোগ এসেছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সামনে। মন দিয়ে পড়ছে।
_____________
প্রতিদিনকার মতো বই নিয়ে বের হলো হৈমন্তী। খাবার টেবিলে গিয়ে বসতেই ছোঁয়া ফিসফিস করে ওর ভাইকে বলল,
> ভাইয়া জানো হৈমী বিবাহিত। বাসর রাতে বর পালিয়েছে বিষয়টা কেমন না? বেচারা বউয়ের মুখ দেখেই পালিয়ে গেছে আর ফিরে আসেনি।

ছোঁয়ার কথা শেষ হলো না রাহেলা হক ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন। হৈমী মাথা নিচু করে খাবার মুখে দিতে গিয়েও থেমে গেল। রাকিব বিস্মিত হয়ে হৈমন্তীর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী । পরিবারের অবস্থাও খারাপ না বরং বেশ ভালো তাহলে বর কেনো পালিয়ে গেল হজম হচ্ছে না। তারপর ভাবলো ছেলের হয়তো আলাদা পছন্দ আছে। কথাটা ভেবে ও দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল। এক বছর ধরে মেয়েটাকে দেখছে। তেমন কথাবার্তা না হলেও লুকোচুরি করে দেখা হয়েছে শতাধিক বার। আগে বিরক্ত লাগত তবে এখন আর লাগে না। বেশ ভালো লাগে। হৈমন্তী খাবার রেখে উঠে পড়লো। মলিন হেসে বলল,

> খালামনি সময় হয়ে যাচ্ছে। আমি বাইরে থেকে খেয়ে নিব।

রাহেলা হক ওকে আটকনোর চেষ্টা করলেন কিন্তু হলো না। হৈমন্তী চলে গেছে। রাকিব বিরক্ত হয়ে ছোঁয়াকে বলল,

> হিংসা ভালো তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়। আমার মাথাতেই আসছে না ওকে দেখে তোর হিংসা কেনো হয়। আরাফাত জানলে জান্ত দাফন করবে।

রাকিব উঠে আসলো। ছোঁয়া রাগে ফুলছে। আরাফাতকে ও পছন্দ করে না, একদম করে না। ছেলেটা ওকে বেশ কয়েকবার অপমান করেছে সেই রাগ গিয়ে পড়েছে হৈমন্তীর উপরে। ওরা বোনকে এতো ভালোবাসে তাহলে এতদিন পরের বাড়িতে রেখে গেছে কেনো এটাই ওর মাথায় আসে না। রাকিব দ্রুতগতিতে বেরিয়ে পড়লো। রাস্তায় হৈমন্তী রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। রাকিব ওর সামনে গাড়ি থামিয়ে দরজা খুঁলে দিয়ে বলল,

> চলে এসো আমি কলেজের সামনে নামিয়ে দিব।
হৈমন্তী কিছু একটা ভেবে গাড়িতে উঠে আসলো। রাকিব সামনের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

> ফিরবে কখন?

হৈমন্তী অবাক হচ্ছে ভাইয়ের কথা শুনে। হৈমন্তীকে চুপচাপ ভাবতে দেখে রাকিব বিড়বিড় করে বলল,

> কিছু জিঞ্জাসা করেছি উত্তর দাও। সারাদিন বাড়িতে তো খুব বকবক করো শুনেছি।

হৈমন্তী বিস্মিত হয়ে উত্তর দিল,

> ক্লাস শেষে ফিরবো। প্রাইভেট আছে ফিরতে বিকেলে হয়ে যাবে।

> ও আচ্ছা।

সারা রাস্তায় ওদের আর কথা হলো না। হৈমন্তী অবাক হচ্ছে কারণ লোকটার সঙ্গে ওর আজকেই প্রথম কথা হচ্ছে। নিজে যেচে ওকে পৌঁছে দিচ্ছে হজম হচ্ছে না। রাকিব ওকে কলেজের সামনে ওকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। হৈমন্তী আর পেছনে তাকালো না। মহিলা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষদের নজরে পড়ার কোনো মানে হয়না।

রাকিবের অবচেতন মনে হৈমন্তী জন্য একটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। মেয়েটার ভবিষ্যত নিয়ে ওর চিন্তা হচ্ছে। আরাফাতের সঙ্গে কথা বলবে। মেয়েটার দায়িত্ব নিতে ওর অসুবিধা নেই কিন্তু ও কি জানে কাজী বাড়ির বউয়ের দিকে নজর দেওয়ার অপরাধ কতটা ভয়ানক হবে। কাজীরা মির্জা বাড়িতে সারা বছর হুমকি ধামকী দিয়ে আসছে ওদের বাড়ির বউকে ফিরিয়ে দিতে কিন্তু রাজীব কিছুতেই মানছে না। ওর ধারণা বোনকে নিয়ে গিয়েই ওরা মেরে ফেলবে। তাই এই লুকোচুরি।।
☆☆☆☆
সারাদিন না খেয়ে ক্লাস শেষ করে বের হলো হৈমন্তী। বেশ কিছু মেয়ের সঙ্গে ওর ভালো সম্পর্ক হয়েছে। ওদের থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো রিকশার জন্য। প্রচণ্ড গরম পড়ছে। খাঁখাঁ রৌদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে একটা রিকশা পেয়েও গেলো। কিন্তু রাস্তার পেরিয়ে গিয়ে উঠতে হবে। হৈমন্তী অপেক্ষা করলো না দ্রুত এগিয়ে গেলো। কর্মব্যস্ত শহর হাজারো যানবাহন চলছে। হৈমন্তী দৃষ্টি রিকশার দিকে। এর মধ্যেই একটা গাড়ি এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে দিলো। লোকটা হয়তো গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। হৈমন্তী ততক্ষণে পড়ে গেছে। হাত পায়ে বেশ চোট লেগেছে। একজন মেয়ে এগিয়ে এসে ওকে ধরলো। হৈমন্তী যন্ত্রণায় ছটফট করছে। গাড়ির মালিককে লোকজন আচ্ছা করে বকছে। লোকটা কাচুমাচু হয়ে সবাইকে বুঝিয়ে হৈমন্তীকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে নিলেন। ভদ্রলোক হৈমন্তীকে পাশের একটা ভালো ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দিলেন। গাড়িতে উঠার সময় হৈমন্তী জ্ঞান থাকলে বেশিক্ষণ চোখ খুলে রাখতে পারলো না। হাতের তালুতে বেশ লেগেছে রক্ত ঝরছে। পায়ের অবস্থাও ভালো না। জ্ঞান হারালো
☆☆☆☆
গম্ভীর হয়ে বসে আছে আবির। মন মেজাজ ঠিক নেই। বাড়িতে প্রচুর অশান্তি করে এসেছে। বাবা চাচার উপরে ও বিরক্ত। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে প‍্যাচালো বুদ্ধি বাড়ছে। আবির কিছুদিন আগেই বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে। বাড়ির অবস্থা আগের মতো নেই। বাবা চাচারা মিলে বেশ খিচুড়ি পাকিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বাড়ি গড়ের মঠ হয়ে উঠবে। সবাইকে বুঝিয়েছে কিন্তু কেউ বুঝতে চাইছে না। রফিক রাজনীতিতে নেমেছে। এই ছেলেটাই হচ্ছে যত নষ্টের মূল। বাবা চাচকে ভুলভাল বুঝিয়ে মির্জাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছে। আবির বিরক্ত হয়ে বাড়ি ছেড়েছে। হঠাৎ ফোনের শব্দে ওর ধ‍্যান ভাঙলো। হাসপাতালের নাম্বার থেকে কল এসেছে দেখে দ্রুত রিসিভ করলো। রোগী এসেছে ওকে যেতে হবে শুনে আর অপেক্ষা করলো না দ্রুত বেরিয়ে পড়লো।

চলবে