দৃষ্টির অগোচরে সে পর্ব-২৬

0
500

#দৃষ্টির_অগোচরে_সে
#কলামে_লাবণ্য_ইয়াসমিন
#পর্ব_২৬

হৃদয় বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছে আর পড়ে গিয়ে হাতেও অনেক ব্যাথা পেয়েছে। ও ঘুমিয়ে পড়তেই হৃদীতা ওর পাশে এসে বসলো। হৃদীতা ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ওর কাছে মানুষটাকে অন্যরকম লেগেছে । যার চোখে ও নিজের জন্য ভালোবাসা এবং রাগ দুটোই দেখেছে। হৃদীতা জানে ভালো না বাসলে কখনও কারো উপরে অধিকার দেখানো যায় না। ভালোবাসে বলেই না রাগ করতে পারে। এতো চেনা চেনা লাগে তবুও অচেনা। সুর আর তাল সব কিছু ঠিক আছে তবুও কোথায় একটা গড়মিল আর একটা বিষাদের গন্ধ। হৃদীতা সব কিছু জানতে চাই কি হয়েছিল আর কি হচ্ছে এখন। বাকি রাতটা ওর হৃদয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই পার হলো। চারদিকে আলো ফুটতেই হৃদয়ের ঘুম ভেঙে গেলো ও চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো হৃদীতা খাটের সাথে হেলান দিয়ে ওর মাথার কাছে ঘুমিয়ে আছে। হৃদয় তাড়াতাড়ি উঠে বসলো। হৃদীতাকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে। ও ভাবছে সত্যি পুরী বুঝি এমনি হয়। আগে মনে হতো ও পুরীর মতো সুন্দর কিন্তু এখন বলতে হবে ও সত্যিকারের পরী এটাই তফাৎ। হৃদয়ের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো ওকে এমন করে ঘুমাতে দেখে। হৃদয় জানে হৃদীতা বাকী রাত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বসে ছিল। তবে এটা ভালো লক্ষণ। হয়তো ওর মনে আমার জন্য কিছু একটা ভাবনার জাগরণ ঘটেছে। হৃদয় কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই নিজের হাতটা ওর মুখে রাখলো। হঠাৎ মুখে কারও ছোয়া পেয়ে হৃদীতা জেগে গেলো ও তাড়াতাড়ি উঠে বসলো। ওকে উঠে বসতে দেখে হৃদয় দ্রুত নিজের হাতটা নিজের দিকে টেনে নিলো।।হৃদীতা ওর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভাবে বলল,

> আপনি পাথর ভাঙেন কথাটা আগে বলেন নাই কেনো ?

> মানে? (ভ্রু কুচকে)

> আপনার হাত এতো শক্ত কেনো শুনি? মনে হয় পাথর ভাঙার কাজ করেন তাইনা? (হাসি মুখে)

> একদম বাজে বকবে না। আমার এই হাতে হাত রাখার জন্য কতো মেয়ে পাগল তুমি জানো? (ভাব নিয়ে )

> হু খুব জানি। যে যেমন তার পেছনে তো তেমন মেয়েই ঘুরবে। (কটাক্ষ করে)

> কি বলতে চাইছো আমি খারাপ?( রেগে)

> এই রাগ করবেন না আমি আপনাকে খারাপ কোথায় বললাম? আমি তো বলেছি আপনার হাত যেমন তাদের হাত ও তেমনি। আপনি একটু বেশি বুঝেন আর কি। (হাসি মুখে)

> আর তোমার মাথায় যে দুষ্ট বুদ্ধি ঘুরছে তার বেলায়?

> কিছুনা। এই চলুনতো প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে আমার। গতকাল সকালে খেয়েছি আর খাওয়া হয়নি। রাতে খাবার দিয়েছিলেন? নিজেও খেলেন না আবার আমাকে ও দিলেন না। (মুখ ভার করে)

> সরি। তুমি ফ্রেস হয়ে নাও আমি দেখছি আম্মুকে বলে। (উঠতে উঠতে)

> হুম।

হৃদীতা কথা বলতে বলতে বাথরুমে চলে গেলো। ও চলে যেতেই হূদয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরে আসলো। ওর জানা আছে এই খাবার নিয়ে আবারও ঝামেলা হবে। ফ্যামিলি ড্রামা ওর পছন্দ হয়না। স্টার জলসা সিরিয়ালের মতো অসহ্য লাগে।

(গতকাল সিরিয়াল দেখার সময় বুঝেছি পাঠকদের কতো কষ্ট হয় পর্ব গল্প পড়তে। পরবর্তী পর্বের জন্য ধৈর্য নিয়ে বসে থাকা আসলেই অনেক কঠিন তবুও থাকেন এই জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।)

হৃদয় ভাবতে ভাবতে ধীরপায়ে নিচে নেমে আসলো। দীলারা বেগম তনুজার সাথে বসে কিছু একটা নিয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে আর হাসাহাসি করছে। হৃদয় নিচে নামতেই ওর দিকে একবার তাকিয়ে ওরা আবার নিজের কাজে মন দিলো। হৃদয় কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে চিৎকার করে কুসুম কে ডাকলো,

> এই কুসুম সকালের নাস্তাটা আমার রুমে নিয়ে আই আমি অপেক্ষা করছি।

হৃদয়ের চিৎকার শুনে দীলারা বেগম তনুজাকে বলল,

> তনু ওকে বলে দে সকালে বাড়িতে নাস্তার ব্যবস্থা হবে না। সবাই বাইরে থেকে খাবে। যারযার ব্যবস্থা সে যেনো করে নেই।

হৃদয় খুব ভালো করেই বুঝেছে ওকে শুনিয়ে বলা হয়েছে কথাটা। হৃদয় রাগ করে কিচেনে চলে আসলো। তারপর ফ্রিজ খুলে দেখলো কোনো খাবার আছে কিনা কিন্তু কিছুই নেই। তবে কয়েক পেকেট নুডুলস আর অনেক গুলো ডিম আছে।এটা দেখে ও কিছুটা নিশ্চিন্ত হলো। হৃদয় ভেবে নিয়েছে ও নুডুলস রান্না করবে। ভাবনা অনুযায়ী ও অনেক কষ্টে ভিডিও দেখে রান্নাটা শেষ করে উপরে নিয়ে চলে আসলো। ওকে রান্না করতে দেখে তনুজা ছলছল চোখে শুধু তাঁকিয়ে থেকেছে। হৃদয় রান্না ঘরে কখনও উকি দিয়েও দেখেনি সেই হৃদয় এখন নিজের চা নিজে তৈরি করে এমনকি আজ নুডুলস ও রান্না করছে। যা করছে সবটা তো ভালোবেসেই করছে। ওকে এমন মন খারাপ করতে দেখে দিলারা বেগম ওকে বোঝালো হৃদীতাকে উনি এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবেন। হৃদয়ের সাথে আজকেই কথা বলে বোঝাবেন।

এদিকে হৃদয় খাবার নিয়ে রুমে আসতেই হৃদীতা বিছানার থেকে নেমে ওর হাতের জিনিস গুলো ধরতে সাহায্য করলো। হৃদীতা খাবার গুলো নিয়ে সোফায় বসে পড়লো। হৃদয় মুখ গম্ভীর করে বসে আছে ওকে এমন করতে দেখে হৃদীতা মিষ্টি করে হেসে ওর হাত টা ধরে পোড়া জায়গায় হাত বুলিয়ে দিলো আর নিমিষে ওটা ভালো হয়ে গেলো। হৃদীতা এবার হাতটা সরিয়ে নিয়ে খাবার গুলো প্লেটে রাখতে রাখতে মলিন মুখে বলল,

> আমার জন্য আপনাকে কতো কষ্ট করতে হলো। অনেক টা পুড়িয়ে ও ফেলেছেন দেখলাম।

> দুবছর ধরে যে কষ্টটা করেছি এটা তার কাছে কিছুই না। তুমি কি জানো মানুষের শারীরিক কষ্টের থেকে মনের কষ্ট অধিক ভয়ানক? শারীরিক কষ্ট মানুষ কে দেখানো যায় কিন্তু মনের কষ্ট কখনও কাউকে দেখানো যায় না। নিজের কষ্টে নিজেকেই তীলে তীলে যন্ত্রণা পেয়ে মরতে হয়। কেউ চাইলেও সাহায্য করতে পারেনা।

হৃদয়ের কথা গুলো শুনে হৃদীতার চোখে পানি এসে গেলো। মানুষ টা ওর জন্য কতো কষ্ট পাচ্ছে। ওর জানা নেই আগে কখনও এই মানুটাকে ও ভালোবেসেছিল কিনা যদিও না বেসে থাকে তবে এখন ও এই মানুষটার উপরে প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে। একটা মানুষের হাজার টা গুনের মধ্যে দু একটা খারাপ গুন থাকতেই পারে। হয়তো লোকটা রাগী কিন্তু ভালোবাসতে যে জানে। কথায় বলে যার রাগ বেশি সে ভালোবাসতে জানেও বেশি। হৃদীতা ওর দিকে তাঁকিয়ে কথা গুলো ভাবছে আর ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে নিচে পড়তেই হৃদয় ওটা ধরে ফেলল,

> আরে বাবা তুমি কাঁদছো কেনো? অনেক কষ্টে রান্না করেছি। তোমার চোখের পানিতে নদী বয়ে আমার কষ্টের রান্না গুলো ভেসে গেলে কিন্তু তোমাকে আমি ছাড়বো না বলে রাখলাম। (হুমকি দিয়ে )

> ভাসবে না কখনও।আপনার রান্না আমার ভিষণ পছন্দ হয়েছে। অনেক সুস্বাদু। (চোখ মুছতে মুছতে)

> কখন খেলে? নিয়ে বসো আছো আবার মিথ্যা বলছো?

> গন্ধ পেয়েই বুঝেছি অনেক ভালো হয়েছে। আপনি ও তো খাবেন?

ওদের কথার মধ্যেই তন্ময়া এসে হাজির। ও এসেই সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো। হৃদয় আর হৃদীতা ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। তন্ময়া সেদিকে খেয়াল না করেই বলল,

> ভাইয়া তোমাদের ভাগ থেকে আমাকে কিছু দিবে নাকি? এই সকাল সকাল আমাকে বাইরে দৌড়াতে হবে। প্রচণ্ড ক্ষুধা পেয়েছে আমার। আম্মু কি শুরু করেছে কে জানে। আমার মনে হচ্ছে তনুজাকে বিদায় না করলে এমন চলতেই থাকবে। (বিরক্ত হয়ে)

> তোকে এসব ভাবতে হবে না। তোরা দুজন এগুলো খেয়ে নে আপাতত। আর আমি আরও খাবার অর্ডার দিতেছি।

> ভাইয়া আজ বাইরে থেকে খেয়ে আসবো তিনজন মিলে অনেক মজা হবে। অর্ডার দিতে হবে না। এটা দিয়ে আপাতত চলবে।

ওরা ঠিক করলো এমন করলেই ভালো হবে তাই খাবার গুলো ওরা মিলেমিশে খেয়ে নিলো। আর কথা হলো একটু পরে ওরা বাইরে যাবে খাবার খেতে। হৃদয় এই সুযোগে হৃদীতাকে নিয়ে রিয়াদের বাসাই যাবে। তন্ময়া থাকলে কেউ কিছু বলবে না বাড়িতে। নয়তো দীলারা বেগম চিৎকার চেচামেচি করবে শেষে যাওয়া হবে না।
কথা অনুযায়ী তন্ময়া চলে গেলো রেডি হতে। এদিকে হৃদয় বাথরুমে ঢুকেছে চেঞ্জ করতে কিন্তু হৃদীতা সোফায় বসে আছে হতাশ হয়ে। কারণ পড়বে কি? কিছুই তো নেই। হৃদয় বাথরুম থেকে বাইরে এসে ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হলো এমন মুখ ভার করে থাকার কি আছে ও বুঝতে পারলো না তাই প্রশ্ন করলো,

> যাবার ইচ্ছা নেই?

> খুব আছে কিন্তু পড়বো কি? কিছুই তো নেই। (ছলছল চোখে)

> পরী হয়ে তাহলে লাভটা কি হলো যদি মানুষের মতো সামান্য কাপড় নিয়ে এতো চিন্তা করতেই হয়।?( শার্ট ঠিক করতে করতে)

> পরী বলে কি সব সময় পোশাক নিয়ে ঘুরছি আমি? তাহলে অপেক্ষা করো আমি কোনো শপিংমল থেকে আনছি।

> থাক আর যেতে হবে না। তোমার আগের পোশাক গুলো সব আছে। ওগুলো পড়তে পারো। আশাকরি তোমার হয়ে যাবে।

> তাহলে তো খুবই ভালো হয়। দিন আমাকে। (খুশি হয়ে)

> আলমারিতে আছে। যা পছন্দ হয় বেছে নাও। আমি একটু আসছি বাইরে থেকে।

হৃদয় ফোন নিয়ে বাইরে চলে আসলো। ও চলে যেতেই হৃদীতা হাসিমুখে আলমারি খুলে দেখতে লাগলো কোথায় কি আছে। খুঁজতে খুঁজতে ওর গোলাপী রঙের একটা শাড়ির দিকে নজর গেলো। হৃদীতা ওটাই বেছে নিয়ে পড়ে ফেলল। ও চুলগুলো খোলা রেখে সুন্দর করে শাড়ি টা পড়ে গহনা গুলো পড়ে নিলো। হৃদীতা ড্রেসিং টেবিলের সামনে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখছে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ওকে শাড়িতে দেখতে। কিন্তু কোথায় একটা খামতি হয়ে গেছে কিছু একটা নেই নেই মনে হচ্ছে। হৃদীতা বুঝতে পারছে না। ও আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবছে কি পড়লে সাজটা পরিপূর্ণ হবে। হৃদয় বাইরে থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে ভেতরে এসে দাঁড়াতেই ওর হঠাৎ হৃদীতার দিকে চোখ গেলো। হৃদয় অজান্তেই বলে উঠল অপূর্ব। হঠাৎ পেছনে হৃদয়ের কন্ঠ পেয়ে হৃদীতা মুখ ভার করে বলল,

> কিছুই হলো না। আপনি কি বলবেন আমার কেনো মনে হচ্ছে কিছু একটা পড়লে ভালো লাগতো?

হৃদীতার কথায় ও নড়ে উঠলো তারপর ড্রয়ার খুলে হৃদীতার চুড়ি গুলো নিয়ে এসে চুপ করে ওর সামনে বসে দুহাতে ওগুলো পড়িয়ে দিয়ে বলল,

> এবার কি ঠিকঠাক হয়েছে?

> একদম, আপনি বুঝলেন কেমন করে এটাই বাকি ছিল?

> হৃদীতা প্রেয়সীর হাতের চুড়ির ঝঙ্কার প্রেমিকের হৃদয়ে ভালোবাসার অনুভূতি জাগিয়ে তুলে আর আমি একজন প্রেমিক হয়ে এইটুকু বুঝবো না এমন কি হতে পারে? না বুঝলে কেমন প্রেমিক আমি?

> বাহ দারুণ বলেছেন। আচ্ছা এইগুলা কার ছিল। আপনি কি আমার জন্য এনেছেন?

> এগুলো সব তোমার ছিল আর ভবিষ্যতে ও থাকবে আমি শুধু গুছিয়ে রেখেছি।। যাইহোক দ্রুত বাইরে চলো তন্ময়া দাঁড়িয়ে আছে বাইরে।

> আমার হয়ে গেছে। চলুন যাওয়া যাক।

হৃদয় ওকে নিয়ে বাইরে আসতেই তন্ময়ার সাথে দেখা। তন্ময়া বেশ খুশি ওকে আগের বেশে দেখে। ওরা তিনজন বাইরে আসতেই তনুজা ওদের কে জিঙ্গাসা করলো ওরা কোথায় যাচ্ছে কিন্তু হৃদয় ওকে বললো না বরং ইগনোর করে চলে আসলো। ওরা বাইরে যেতেই তনুজা গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে ওর বুদ্ধি টা একদম বাজে কাজ করেছে। ও চেয়েছিল হৃদীতাকে খাবার না দিলে অপমান করলে হয়তো চলে যাবে কিন্তু সবটা ওর বিপরীতে হলো। আরও বরং ওদের ভালো হলো। সবাই কেমন সেজেগুজে বাইরে চলে গেলো। তনুজাকে এমন ভাবতে দেখে দীলারা বেগম এসে ওকে জিঙ্গাসা করলো,

> কিরে তনু এমন করে কি ভাবছিস?

> ফুপি আমার বুদ্ধি টা একদম কাজ করেনাই।
তুমি ওদের খাবার বাড়িতেই খেতে বলবে। ওরা দেখলে খাবারের নাম করে বাইরে ঘুরতে গেলো।

> তোর কোনো বুদ্ধিই আমার ছেলের কাছে টিকবে না এটা আমি জানি তবুও তোর ইচ্ছা হয়েছিল বলে রাজী হয়েছিলাম। যাইহোক এবার আমি কিছু একটা করতে চলেছি।

> হুম।

হৃদয় ওদেরকে নিয়ে একটা ভালো রেস্টুরেন্টে এসে কিছু খেয়ে নিয়ে রিয়াদের বাসার উদ্দেশ্য বের হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা পৌঁছে গেলো ওদের বাসাই কিন্তু সমস্যা হলো ওরা এখানে কেউ থাকে না। রিয়ার বিয়ে হয়েছে ও শশুর বাড়িতে থাকে আর ওর বাবা মা ব্যবসার কাজের সুবিধার জন্য অন্য শহরে বাড়ি করেছে ওরা সেখানেই থাকে। গেটে তালা লাগিয়ে রাখা আছে। হৃদয় পড়লো মহাবিপদে যার জন্য আসা তাইতো হলো না। তাই বাধ্য হয়ে ওদেরকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসলো। হৃদীতা বেশ ভয় পাচ্ছে কি হবে ওর জানা নেই। আদো কিছু মনে পড়বে কি ওর জানা নেই। হৃদয় তো ওকে যা পাচ্ছে তাই দেখিয়ে চলেছে মনে করানোর জন্য। কিন্তু ওর মনে পড়ছে না। হৃদয় ও এবার আশা ছেড়ে দিলো। এর মধ্যেই একদিন পার হয়ে গেছে। সময় আছে মাত্র একদিন মানে রাতে ওকে ফিরতে হবে। হৃদয় সোফায় চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। অন্যদিকে হৃদীতা জানালা ধরে দাঁড়িয়ে ভাবছে ওকে ফিরে যেতে হবে আজ রাতে। কিন্তু যদি ও না যায় কি হবে? ওর ভাবনার অবসান হলো বাইরে থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দে। কুসুম চিৎকার করে ডাকছে.

> হৃদয় ভাইজান আপনাদের দুজন কে বাইরে ডাকছে। হৃদীতা ভাবির বাবা মা এসেছে।

হৃদীতা তাড়াতাড়ি এসে দরজা খুলে দিলো। হৃদয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হৃদীতার কোন বাবা মা এসেছে ও বুঝতে পারছে না। তাই ও তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হলো। হৃদীতা ওর আগেই চলে গেছে বাবা মা এসেছে কথাটা শুনেই। হৃদয় সিড়ির কাছে এসে সামনে তাকিয়ে দেখলো অসম্ভব সুন্দরী একটা মহিলা আর একজন ভদ্রলোক সোফায় বসে ওর মায়ের সাথে করা বলছে। ভদ্রমহিলার বয়স ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। কারণ বয়সের ছাপ উনার চেহারায় একটুও প্রভাব ফেলতে পারেনি। হৃদয় বুঝলো এরা কেউ মানুষ নয়। তবুও ও জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে ওদের সামনে গিয়ে সালাম দিলো। ওকে দেখে ওরা যে খুব একটা খুশি নয় তা ওদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হৃদীতা ওর মায়ের পাশে বসে আছে।হৃদয় গিয়ে ওদের পাশে বসলো। দিলীরা বেগম রাগের সাথে ওর বাবা মাকে প্রশ্ন করছে,

> আপনার মেয়েকে আপনারা হঠাৎ কেমন করে ফিরে পেলেন? আর আপনারা এমন খানদানী পরিবারের লোক হয়ে নিজের বাচ্চা কে ফেলে দিয়েছিলেন কেনো জানতে পারি?

> আপনি ভুল বলছেন কেনো? আমাদের মেয়েকে আমরা হারিয়ে বা ফেলে কেনো দিবো? ঠিক কি বলতে চাইছেন বলুন তো?

> আপনার মেয়ে এতোদিন কোথায় ছিল? শুনেছি আপনারা ওকে ফেলে দিয়েছিলেন।

> আপনার ভুল হচ্ছে। আমার মেয়ে আমাদের কাছেই ছিল। আপনারা হয়তো অন্যকারো কথা বলছেন। সামনে মাসে আমার মেয়ের বিবাহ আর হঠাৎ আপনার ছেলে ওকে জোর করে তুলে এনেছে।

> আপনার মেয়ের বিয়ে মানে কি? এই আপনারা আবার কোন মতলবে ঘুরছেন বলুনতো? আমার ছেলের মাথাটা আপনার মেয়ে একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে এখন আপনারাও লেগেছেন?

> আমারা ওকে নিতে এসেছি।

চলবে।