দেওয়া নেওয়া সানাই পর্ব-০১

0
511

#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব:সূচনা
#লেখিকা_Nusrat_sheikh

কবুল বলার কয়েক মুহূর্ত আগে যখন আমার 10বছরের ভালোবাসার মানুষটি আমাকে বলল সে এই বিয়ে করতে পারবেনা।তখন সবাই যেন অবাক হতে বাধ্য হলো।
কেন বিয়ে করতে পারবেনা?(ঐশানী)

আমি আমার 10বছরের ভালোবাসার জন্য একটি মেয়েকে অন্ধকার এ রেখে দিতে পারিনা ঐশানী।(ফারাজ)

এই প্রথম ফারাজ আমাকে জান এর বদলে ঐশানী বলে সম্বোধন করলো।
কোন মেয়ের কথা বলছো তুমি ফারাজ?(ঐশানী)

জেবা।আসলে আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি যে ঐশানী।এ অন্যায় এর ক্ষমা হয়না।আমি চাইছিলাম এই দুইদিন এই ঘটনাটা তোমাকে বলতে।কিন্ত আমি সিদ্ধান্ত হিনতায় ভুগছিলাম।কিন্ত এই মুহূর্তে আমি আর অন্যায় টাকে চেপে রেখে আরেটা অন্যায় করতে চাইছিনা।(ফারাজ)

কি অন্যায় করেছ তুমি?(ঐশানী)

ব্যাচেলর পার্টির দিন আমি জেবার সাথে (থেমে)।আমি ভুল করেছি তাই আমি ভুলটা সুধরে নিতে চাই।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।আজ জদি আমি তোমাকে বিয়ে করি ঐ মেয়েটার উপর বড্ড অন্যায় হয়ে যাবে।(ফারাজ)

_____

প্লিজ স্যার আমার বাবার মায়ের সম্মান রক্ষার জন্য হলেও আমাকে বিয়ে করুন।আপনি ভুল ভাববেন না আমাকে?আসলে সবটাইতো দেখলেন।আর যেহেতু আপনি আমার জন্য আগেও একটা বড় সেক্রিফাইজ করেছেন আর একটা উপকার করে দিন।আমি আপনার পায়ে ধরছি স্যার প্লিজ আমাকে বিয়েটা করুন।(ঐশানী)

আমার ফেমিলি আছে মিস ঐশানী।আমার বাবা মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি বিয়ে করতে পারবনা।আর বিয়ে কোন ছেলে খেলা না যে একজন বিয়ে করেনি বলে আমার মতো অচেনা কাউকে আপনি বিয়ে করবেন।বিয়ের মতো পবিত্র একটা বন্ধন বললেই হয়না।আর আমি আপনার রিকোয়েস্ট এ বিয়ে খেতে আসছি বিয়ে করতেনা।(ইফরাজ)

সরি স্যার আমার এই ভুল আমি নিজের অবস্থান এর দিকে না দেখেই আপনার কাছে রিকোয়েস্ট করতে চলে এসেছি।মাফ করবেন স্যার। আপনি আসতে পারেন।(ঐশানী)

আমি আমার আব্বু আর মামমাম কে কল করে আসতে বলি তারা আগে আপনার ফেমিলির সাথে কথা বলুক তারপর দেখছি কি করা যায়।তবে হ্যা আপনার আশা হত হওয়ার দরকার নেই।বিয়ে আজ হোক বা কাল আপনার বিয়ে হবে।তবে একটা কথা বলি মিস ঐশানী বিয়ের মতো এত্ত সুন্দর একটা সম্পর্ক চাইলেই তো হবেনা।অনেক গুলো ফ্যামিলি ,ইমোশন,ভালোবাসা,শ্রদ্ধা জড়িয়ে আছে এর সাথে। বিয়ে ভাঙ্গল বলে আপনি কিন্ত অপাত্রে দ্বান করবার পাত্রী নন।আপনি অমূল্য ছিলেন আছেন থাকবেন।আর হ্যা যাইহোক ভেঙ্গে পড়বেন না।আমি আপনার পাশে থাকব আজীবন একজন বন্ধু হিসাবে।এখন চলুন তো এখানে বসে কান্না না করে আপনার আব্বু আম্মুর সাথে একটু কথা বলে নেই।(ইফরাজ )

____

দেখুন যা হয়েছে তা একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছে। হয়তো উনি চাইছিল ঐশানী আমার ছেলের বউ হোক।নাহলে কি আর আমার ছেলের বউ এর জন্য করা লেহেনগার জন্য ঐশানী এত্ত আকুল হয়ে যায়।যাইহোক আল্লাহর উপর আমার ভরসা আছে।আমি আশা করছি ঐশানী তার অতীত ভুলে বর্তমান কে মেনে নিবে।তাইতো মামনী?(তুবা বেগম)

আমি চেষ্টা করব আন্টি। (ঐশানী)

চল মামনী তোমার নতুন বাড়ির উদ্দেশ্য।অনেক রাত হতে চলল যে।(ইমতিয়াজ খান)

জ্বি। (ঐশানী)

সবার থেকে বিদায় নিয়ে আমি গাড়িতে উঠলাম। এক অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্য পাড়ি জমিয়েছি।এ যেন নতুন এক অধ্যায় শুরু হলো আমার জীবনে।বাবা মায়ের একমাত্র মেয়েটা তাদের বুঝিয়ে দীর্ঘ 10 বছরের ভালোবাসার জন্য কত্ত কিছু বিসর্জন দিতে চাইছিল। কিন্ত ঐ সুখ যে আমার কপালে ছিল না তা আমার অবগত হলোনা।
আমার নাম ঐশানী আহসান।বাবা মায়ের একমাত্র কন্যা সন্তান আমি।ক্লাস নাইন এ থাকতেই ফারাজ এর সাথে আমার প্রেম ও পনয়ের অধ্যায় শুরু হয়।ধীরে ধীরে ভালোবাসা বাড়তে থাকে।ও তখন ইন্টার এর পড়ুয়া স্টুডেন্ট।ভালোবাসার গল্প অজানা থাকলেও বাবা মায়ের মনে আমার জন্য ছিল অগাদ চিন্তা।অল্প বয়সের ভুল যে ভয়ানক সেই ভেবেই ভয় পেত।মাস্টার্স শেষ করার আরো ছয়মাস বাকি থাকা সত্ত্বেও আমি ফারাজ এর জন্য পড়ালেখা ছেড়ে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাই।ওর ফ্যামিলির থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে।সবাই খুশি মনে মেনে নেয়।কিন্ত ভাগ্য আমার ফারাজ ছিল না।ছিল এই আগুন্তক ইফরাজ। সে আমার অল্প পরিচিত দের মধ্যেই একজন। এই কাহিনী আরেক দিন বলি।এসব ভাবনার মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম। সাততলা ভবন এর সামনে গাড়ি থামানো হয়েছে।আন্টি আমার হাত ধরেই আমাকে নামালেন।লেহেনগার ভার এ কোমর ব্যাথা করছে।কোন এক কারণে এই লেহেনগার জন্য আমার ইফরাজ এর সাথে পরিচয় হয়।ইফরাজ এক হাতে গাড়ির দরজা আটকে আরেক হাতে আমার লেহেনগা উঁচু করলেন।বেশ ইতস্তবোধ করছি এই মুহূর্তে।(ঐশানী)

______

মামমাম বলল ড্রেস পাল্টে নিচে যেতে।(ইফরাজ)

আমি চেঞ্জ করে নিব এখন?(ঐশানী)

হ্যা।এত্ত ভারী লেহেনগা পড়ে বসে থাকতে হবেনা।পাল্টে চল আমার সাথে।(ইফরাজ)

কিছুক্ষণ পর

আপনারা আলাদা ফ্লাটে থাকেন কেনো?(ঐশানী)

দুইটা বেডরুম একটা ফ্লাটে।আমার কাজের জন্য অনেক জায়গার দরকার হয় তাই আমি এই ফ্লোর এ থাকি।নিচের ফ্লোর এ ফ্লাট খালি ছিল না।নাহলে দুইটাই কিনে নিতাম পাশাপশি।আচ্ছা শোন যেহেতু বিয়ে হয়েছে সেই হিসাব করলে আমরা এখন থেকে স্বামী স্ত্রী।কিন্ত আমার পক্ষে এখন বিয়ের ইচ্ছে ছিল না এটা তুমি জানো তাইতো?(ইফরাজ)

জ্বি। (ঐশানী)

তাও বিয়ে করেছি যখন আমার দ্বায়িত্ব কর্তব্য সব পালন করব।তবে হ্যা আমি তোমার ও আমার ভবিষ্যত এর জন্য হলেও এখন দুইজন কেই সময় দিতে চাই।বুঝলে?(ইফরাজ)

মানে?(ঐশানী)

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে অনেক কিছু থাকে তার মধ্যে ভালোবাসা সবচেয়ে উপর স্থান এ অবস্থানরত।এখন সেটাতো এক ঘন্টার ব্যাপার না যে বললেই হবে।সময় লাগবে তাই বলছি দুইজন কেই সময় দিতে হবে।আর বাকি সব কিছু স্বাভাবিক এই থাকবে।এখন তাহলে চলো মামমাম কল করছে নিচে যাওয়ার জন্য। (ইফরাজ)

জ্বি ।(ঐশানী)

________

বাদল দিনের প্রথম
কদম ফুল
আমায় করেছ দান,
আমি তো দিয়েছি ভরে
শ্রাবণের
মেঘমলার গান।(রবীন্দ্রনাথ)

ঐশানী কিছু ভাবছো?(ইফরাজ

নাতো।(ঐশানী)

এখানে বসে আছ যে?মামমাম ডাকছে খাওয়ার জন্য। (ইফরাজ)

আপনি সুয়ে পড়লেন যে?আপনি খাবেন না?(ঐশানী)

কিছুক্ষণ আগেই দুইকাপ কফি খেয়েছি।এখন খাবনা।বিকালে বের হওয়ার সময় খেয়ে নিবো।।(ইফরাজ)

আজকে বের হবেন?(ঐশানী)

হ্যা আজকে নিউ কিছু কালেক্টেড লেহেনগা ও শাড়ি আসছে।সেগুলো দেখতে হবে।আর আমার বউ এর জন্য যেই লেহেনগা করতে দিয়েছি সেইটার কাজ এ পরিবর্তন আনতে হবে।কারণ অলরেডি আমার বিয়ে হয়ে গেছে।আর শোন সামনের শুক্রবার এ আমার ফ্যামিলির ও তোমার ফ্যামিলির কিছু লোক নিয়ে ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান করতে চাই।তুমি আমাকে তোমার আব্বুর সাথে কথা বলিয়ে দিওতো।(ইফরাজ )

_______

আমার বিয়ের লেহেনগা কেনার দ্বায়িত্ব ফারাজ আমাকেই দিয়েছিল।ওর অফিসের কাজ ও অন্যান্য কাজের চাপে ও আমার সাথে যেতে পারেনি।আমার খুব শখ ছিল আমার বিয়ের লেহেনগা আর সবার থেকে আলাদা হবে।আর যা একটাই পিস থাকবে।অনলাইন অফলাইন সব জায়গাতেই আমি লেহেনগার খোঁজ করতে থাকি।একদিন একটা ফ্রেন্ড ইফরাজ এর লেহেনগার শপ এর খবর আমাকে দেয়।বেশ নামিদামী শোরুম ইফরাজ এর।যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থানরত একটা শোরুম ছিল।আমি সেখানে যাই আর বেশ কিছুক্ষন ঘোরার পর হঠাৎই একটা লেহেনগার উপর আমার চোখ পড়ে।আর আমি ঐটাই নিতে চাই।কিন্ত এইটা ওনারা কিছুতেই বেঁচতে চাইছিল না।ওনাদের এক কথা এটা ইফরাজ স্যার স্পেশাল কারো জন্য তৈরি করেছে।ছয়মাস লেগেছে এইটা তৈরি হতে।আমি অনেক রিকোয়েস্ট করতে থাকি।কিন্ত তাড়া কিছুতেই ঐটা দিবেননা।তারপর আমি ওনাদের ওনার ইফরাজ স্যার কে আসতে বলার জন্য অনুরোধ করি।
উনি আসলে অনেক বার রিকোয়েস্ট করে করে এই লেহেনগাটা শেষে আমি কিনতে সক্ষম হই।তবে এই লেহেনগাটা এখানে ওপেন রাখার কারণে ইফরাজ ওনার স্টাফ দের খুব বকেছেন।আমি তখন একটা কথাই ভাবছি যাকে এখন ও দেখেনি তাকে ভালোবেসে উনি বিয়ের লেহেনগা ও তৈরি করে ফেলেছেন। (ঐশানী)

______

খাবার টেবিলে সবাই খাবার খেতে ব্যাস্ত। আমার খেতে মন চাচ্ছে না তাও আন্টি আমাকে জোর করে খাবার বেড়ে দিচ্ছে।আমি অসহায় ভাবে বসে আছি।(ঐশানী)

মামমাম ওকে আর খাবার দিও না আমার টান পড়ে যাবে।এই ঐশানী এত্ত মাংস তুমি নিয়ে বসে আছো আমাকে দাও।এত্ত খেতে হবেনা মোটা হয়ে যাবে।(ইফরাজ)

উনি কথা গুলো বলে আমার প্লেট প্রায় খালি করে সব নিজের প্লেট এ নিয়ে নিল।আমি বেশ খুশি হলাম ওনার কাজে।(ঐশানী)

কিছুক্ষণ পর

পেট ফুটা হয়ে যাচ্ছে ।এত্ত খাবার কোনদিন খাইনা বুঝলে তাও কত্ত গুলা খেলাম তোমার জন্য। তোমার কি কোন কারণে মন খারাপ ঐশানী?(ইফরাজ)

নাতো।(ঐশানী)

তাহলে খেলে না কেন?(ইফরাজ)

আমিতো খাচ্ছিলাম আপনি এইতো কেড়ে নিলেন।(ঐশানী)

নিজে না খেয়ে খাবার ঘাটছিলা আমি তাই বাচিয়ে দিলাম। আর এখন আমার এই দোষ দিচ্ছ।এই জন্য বলে মানুষের উপকার করতে নেই।(ইফরাজ)

ওনার কথা শুনে আমি মুখ টিপে হাসলাম। সত্যি আমি এত্ত খাবার খেতে পারতাম না।মনে মনে অনেক গুলো ধন্যবাদ ও দিলাম। (ঐশানী)

********(চলবে)********