দেওয়া নেওয়া সানাই পর্ব-০২

0
369

#দেওয়া_নেওয়া_সানাই
পর্ব:2
#লেখিকা_Nusrat_sheikh

তোমার আমার বিয়ে আর সবার মত হয়নি ঐশানী।আর হঠাৎই বিয়ে করাতে চাচি রাগটা তোমার উপর ঝেড়েছেন।আসলে আমার বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকলেও আমাকে বিয়ে করার লোকের অভাব ছিল না।তার মধ্যেই একজন আমার চাচাতো বোন।এখন জদি সেই কারণে চাচি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তার জন্য অবশ্যই আমি আছি।আর হ্যা বিয়ে যেভাবেই হোক আমি আমার স্ত্রীর অসম্মান হতে দিতে পারিনা।সব মেহমান যাক আমি চাচির সাথে কথা বলব।প্লিজ তাও রাগ করনা।আমি চাচির হয়ে মাফ চাইছি।(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)

আমি খুব খারাপ মেয়ে ইফরাজ তাই আমার বিয়ে ভেঙ্গে ছিল বলুন এটাকি সত্যি?(কান্না করে ঐশানী)

না ঐশানী।আমার দেখা তুমি সবচেয়ে ভাল একজন মেয়ে।আর তার থেকেও বড় কথা তুমি আমার অর্ধাংগিনী।আমার স্ত্রীর বিয়ে ভাঙ্গল বলে সে খারাপ এমন না।তার নেওয়া ডিসিশন টাই অযোগ্য।প্লিজ নিজেকে দোষ দিওনা।চলো নিচে যাই আঙ্কেল আন্টিরা অপেক্ষা করছে।(ইফরাজ)

আপনি এত্তটা ভাল কেন ইফরাজ?(কান্না করে ঐশানী)

জানিনা আমি কত্তটুকু ভাল?আর না জানতে চাই।আমি শুধু জানি আমার স্ত্রীর জন্য আমার দ্বায়িত্ব কর্তব্য সর্বদাই পালন করতে হবে।তার অসম্মান হোক এমন কিছু করা আমার কাছে অন্যায়ের সমান।আর তাই পৃথিবীর বুকে তোমাকে সম্মান করা আমার একান্ত কর্তব্য।(ইফরাজ)

_______

আজকে আমাদের বৌভাতের অনুষ্ঠান উপলক্ষে ইফরাজ এর ফ্যামিলির ও আমার ফ্যামিলির অনেক এই একসাথে উপস্থিত হয়েছে।বাড়ির পাশেই একটা কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়েছে।আমি ইফরাজ এর দেওয়া একটা শাড়ি পড়ে পার্লার থেকে সেজে সেখানে উপস্থিত হয়ে ছিলাম।কিছুক্ষণ পর চাচির আগমন ঘটে আমার সামনে।(ঐশানী)

ইফরাজ তুমি একটু তোমার চাচার কাছে যাও উনি তোমাকে ডাকছে।(চাচি)

আচ্ছা চাচি।ঐশানী তুমি চাচির সাথে গল্প করো আমি আসছি।(ইফরাজ)

জ্বি। (ঐশানী)

তোমাদের মতো মেয়েদের তো ম*রে যাওয়া উচিত ছিল। বিয়ের দিন বর বিয়ে ভাঙ্গল আর অমনি আমাদের রাজপুত্র কে কেড়ে নিলে।তোমার ধারণা আছে ওর কাছে বিয়ে করানোর জন্য মেয়ের বাবাদের লাইন লেগে থাকে।আর সেই জায়গাতে তোমার মতো এমন একটা মেয়েকে ইফরাজ কিভাবে বিয়ে করে তা আমার বোধগম্য হয়না।থার্ড ক্লাস মেয়ে মানুষ। (চাচি)

চাচি আপনি মেহমান বলে কিছু বললাম না।কিন্ত নেক্সট টাইম আমার বউ এর থেকে দূরে থাকবেন।(ইফরাজ)

ইফরাজ আমার হাত ধরেই কমিউনিটি সেন্টার এর দুই তালায় নিয়ে আসে।তারপর অনেকক্ষন বোঝানোর পর আমি শান্ত হয়ে যাই।
–কথায় আছে সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে
–আবার অনেকেই বলে সংসার সুখের হয় মোটা ইনকামে।
–কিন্ত বাস্তবে সংসার সুখের হয় স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের উপর শ্রদ্ধা,বিশ্বাস ও ভালোবাসার মিলবন্ধনে।স্বামী জদি সৎ হয় শ্রদ্ধা করে তাহলে সব কষ্ট এই যেন খুব তুচ্ছ মনে হয়।(ঐশানী)

______

আজকে আমাদের সাথে চলো বাবা এটাইতো নিয়ম।(আফজাল আহসান)

আমার ও যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল আঙ্কেল। কিন্ত কালকেই আমার আরেকটা শোরুম ওপেন এর ডেইট।গতো একমাস ধরে এটার উপরে অনেক কাজ করেছি।এখন জদি আপনার বাড়ি যাই কিভাবে হয় বলুন?আমি জাবো তবে দুইদিন পর প্লিজ আঙ্কেল। (ইফরাজ)

তাহলে ঐশানী কে কি নিয়ে যাব?(মমতা আহসান)

না আন্টি।কালকে যেহেতু ওপেনিং ওকে আমার সাথে নিয়ে যাব।ইভেন আপনাদের ও আসতে হবে।প্লিজ না করবেন না।(ইফরাজ মুচকি হেসে)

ঠিক আছে।তবে কথা দাও কাজ শেষ হলেই ঐশানীকে নিয়ে বেড়াতে যাবে?(আফজাল আহসান)

অবশ্যই শশুর বাড়ির আদর মিস করার মতো মানুষ আমিনা।(ইফরাজ)

এ কথা শুনে সবাই সজোরে হেসে উঠলেন।

______

ঐশানী ঐশানী শুনে যাও।(হালকা চিৎকার করে ইফরাজ)

জ্বি বলুন।(ঐশানী দৌড়ে এসে)

কি করো?(ইফরাজ)

কফি বানাচ্ছিলাম।কেন?(ঐশানী)

আমার সাথে যাবে রেডি হবে কখন?(ইফরাজ ঘড়ির দিকে দেখে)

না গেলে হয়না?(ঐশানী)

না হয়না।আমার বউকে রেখে একটাও শুভ কাজ আমি করতে চাইনা।বিয়ের আগের কথা বাদ।এখন আমার সব কিছুতে তোমাকে পাশে চাই।কফি খেতে খেতে রেডি হয়ে নাও।আর একটাও কথা আমি শুনতে চাইনা।(ইফরাজ)

সব সময়ই জেদ করে শুধু।বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই তার কত্ত যে বাহানা।এই ছেলে এমন কেন?বিয়েটা অস্বাভাবিক হলেও ওনার মধ্যেই কোন হেলদোল নেই।এমন যে উনি নিজেই আমাকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন।যদিও আমরা দুইজন দুই রুমে ঘুমাই।কিন্ত সারাদিন এত্ত কেয়ার করে যা বলার মতোনা।না বলতেই সব বুঝে যায়।কখন কিসের দরকার সবটাই যেন উনি জানেন।কখন ও মুখ ফুটে বলা লাগেনা।উনি বুঝে যায়।উনি এমন একজন মানুষ যাকে নিয়ে আমি বলতে বাধ্য ওনার মতো স্বামী সব মেয়েরা আশা করেন।বিরবির করে এসব এই বলছি।(ঐশানী)

এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার?কোথায় খেয়াল থাকে?এখনিতো একটা অঘটন ঘটে যেতো।(ইফরাজ চিৎকার করে)

সরি আমি বুঝতে পারি নাই।(ঐশানী)

সরি টা বলার জন্য এখন তুমি এই জদি না থাকতে তাহলে কেমন হতো?তুমি ছোট্ট বাচ্চা না ঐশানী যে নিজের খেয়াল রাখতে জানোনা।এখন তোমার কিছু হলে আমি কি করে (থেমে)।আঙ্কেল আন্টির কাছে কিভাবে বলতাম আপনার মেয়ে সামান্য কফি বানাতে এসে নিজের ওরনাতে আগুন ধরিয়ে পুড়ে গেছে।এখন নাহয় আমি ছিলাম। জদি আমি না থাকতাম তখন কি হতো?উত্তর দাও।এভাবে কান্না করলে হবেনা।আমার কথার উত্তর ও দিতে হবে।(ইফরাজ ঐশানীর হাত ধরেই)

সরি বললাম তো।আর কত্ত বকবেন?(কান্না করে ঐশানী)

প্লিজ বারবার সরি বলে আমার রাগ বাড়াবেনা।বোঝনা তুমি তোমাকে ঘিরে কত্ত মানুষ বেঁচে আছে।একজন এর জন্য 10টা বছর নাহয় শেষ করেছ।তাই বলে তার কথা ভেবে বর্তমান কেও অবহেলা করবে?(ইফরাজ)

আন্দাজে কথা বলেন কেন?(ঐশানী হেচকি তুলে)

আমি আন্দাজে কথা বলছি তাইনা?তাহলে বলো কার কথা ভাবতে ভাবতে ওরণাতে আগুন লাগল।(ইফরাজ চিৎকার করে)

বলবনা।বলতে বাধ্য না।আরেকবার বাঁচিয়ে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।এখন কাজে যান আমার জন্য আপনার দেরি হোক তা আমি চাইনা।(ঐশানী)

তোমার ভাগ্য ভাল আমি নারীদের সম্মান করি।আর সেই দিকথেকে তুমি আমার বউ।তাই আজকে কিছু বললাম না।তবে মনে রাখবা বিয়ে আমার সাথে হয়েছে তাই ভাবনাতেও আমাকে রাখবে।অন্য কাউকে না তোমার জীবনে এলাউ করব না তোমার ভাবনাতে।(ইফরাজ বলেই চলে গেল)

এত্ত শ্রদ্ধা পেয়েছি তোমার থেকে
দুষ্টু মন চায় আরো বেশি পেতে
কি জানে তোমার মধ্যে কি আছে
মন চায় আরো কাছে পেতে।যদিও পুরনো ভালোবাসা ভুলা কঠিন কিন্ত অসম্ভব নয়।কিন্ত তাও পবিত্র এই ভালোবাসার কাছে সেসব এখন তুচ্ছ।(ঐশানী)

কি হলো রেডি হতে আসো।এক কথা কত্তবার বলব।(ইফরাজ)

যা
আর বলতে দেয়নি হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসছে।আর হাতে একটা গাউন ধরিয়ে পড়তে বলে ওয়াশরুম চলে গেছে।আমি গাউন বেডের উপর রেখে অন্য রুমে এসে গেট লক করে বসে পড়লাম।
যাবোনা আমি দেখি কিভাবে নাও আমাকে?আমাকে রাগ দেখাও।চেনতো না এই ঐশানী কি জিনিস?(বিরবির করে ঐশানী)

______

ঐশানী রেডি হতে আসো মামনী অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে যে।(তুবা বেগম)

কিরকমের অসভ্য লোক। নিজে না এসে আন্টি কে দ্বায়িত্ব দিয়েছে আমাকে ডাকার।আমি নিরুপায় হয়ে বেরিয়ে আসলাম। তারপর আন্টি আমাকে ধরে ইফরাজ এর রুমে নিয়ে গেল।ড্রেস হাতে দিয়ে পড়ার জন্য বলল।আমি ড্রেস হাতে নিয়ে বের হচ্ছি এমন সময়ই। (ঐশানী)

ওপেনিং এর পর বাড়ি ফিরে তোমার খবর জদি না করি আমার নাম ও ইফরাজ খান না মিসেস ঐশানী ইফরাজ খান।(ইফরাজ)

কচু করবেন।
বলেই আমি অন্য রুমে রেডি হতে গেলাম। অনেকক্ষণ লাগল রেডি হতে।গাউন এর সাথে মানান সই সাজ দিলাম।অনেক তাড়া দিচ্ছে ইফরাজ। আমি সাজ শেষ করে ইফরাজ এর রুমে আসলাম।
আমি রেডি।(ঐশানী)

মাসাআল্লাহ আমার মামনী টাকে তো পুরাই পুতুল লাগছে।কারো নজর না লাগুক। (তুবা বেগম ঐশানীর মুখে হাত দিয়ে)

অলরেডি লেগে গেছে মামমাম।আমি এই প্রথম পুরুষ যে নিজের বউ এর উপর নজর দিচ্ছে।আমি মোহিত হয়ে গেছি আমার স্ত্রীর জন্য।
ঐশানী টাইটা বেধে দেও।(ইফরাজ)

হুম। (ঐশানী)

তোমরা রেডি হয়ে আসো।আমিও ঠিকঠাক হয়ে নেই তাহলে।(তুবা বেগম)

আচ্ছা মামমাম। (ইফরাজ)

আমি পারবনা টাই বাধতে।(ঐশানী)

রাগ দেখতে চাও ঐশানী।কিন্ত আমি চাইনা দেখাতে।প্লিজ টাই টা বেধে দাও।(ইফরাজ শান্ত কন্ঠে )

পাগল হয়ে যাব এই লোকটার কারণে।আমি ওনাকে টাই বাধতে লাগলাম। (ঐশানী)

শোন কাজল চোখের মেয়ে আমার দিবস কাটে বিবশ হয়ে তোমার চোখে চেয়ে।
আজকে তুমি কষ্ট পেলে
কষ্ট পাবো আমি
তোমার মতো কাছের মানুষ
কোথায় পাব আমি
আজকে তুমি রাগ দেখালে
কষ্ট হবে তাতে
কালকে যখন চলে যাব
রাগ দেখাবে কাকে?(ইফরাজ মুখটা নিচু করে )

কবি হওয়ার শখ জেগেছে নাকি?(ঐশানী একটু সরে)

তোমার জন্য সব কিছু হতেও রাজি আমি।স্ত্রীর মনোবাসনা পূর্ণ করা আমার কর্তব্য। (মুচকি হেসে ইফরাজ)

কচু কর্তব্য আপনার। (ঐশানী)

_______

ওপেনিং অনুষ্ঠান সুন্দর ভাবেই সম্পন্ন হয়ে যায়।সারাদিন সেখানেই থাকা হয় আমাদের। রাতের খাবার খাওয়ার পর আমরা বাড়ি ফিরে আসি।আব্বু আম্মুর কথা রাখতেই ইফরাজ আমাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে পরেরদিন।সারাদিন খুব এই ভাল কাটলেও রাতে শুরু হয় বিপত্তি। কারণ ঐ বাড়িতে দুইজন দুই রুমে থাকলেও সমস্যা হয়নি।কিন্ত এখানে আব্বু আম্মুর সামনে তো দুইজন দুই রুমে থাকতে পারিনা।আমাদের বাড়িতে মোট পাঁচটা ঘর আছে।একটাতে আব্বু আম্মু,একটাতে দাদা দিদা,আর একটা আমার। আর দুইটা খালি থাকে।কিন্ত আজকে খালি রুম গুলো আমাদের বহিষ্কার করেছে।আমার রুমেই থাকতে হবে দুইজন কেই।আমার রুমের বেড টা বেশ বড় তাই এই রুমে ডেসিংটেবিল আর আলমিরা ছাড়া কিছুই নেই।তাই আলাদা ঘুমাতে হলে নিচে ঘুমাতে হবে।আর এই বাসাতে ইদুর আছে তাই আমি নিচে কিছুতেই ঘুমাবনা।আর ইফরাজ মেহমান তাকে ও নিচে দেওয়া ঘোর অন্যায়। তাই ভাবলাম বেডে এই ঘুমাব।মাঝ খানে কোল বালিশ দিয়ে আমি এক পাশে শুয়ে পড়লাম। ইফরাজ বসে লেপটপে কাজ করছে।ক্লান্ত থাকার কারণে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।(ঐশানী)

সকালের সোনালি রোদের আলোতে দিনটার শুরু হলেও বিকাল থেকে মুষুলধারে বৃষ্টি পড়ছে।অনেক বারণ এর পর ও ঐশানী ভিজতে ছাদে চলে গেল। আমি ও সাথে গেলাম বটে কিন্ত গেটের সামনে দাড়িয়ে থাকলাম।বেশ কিছুক্ষণ ভেজার পর থরথর করে কাপতে কাপতে আমার কাছে আসল ও।আমি মুচকি হেসে ওর হাত ধরে নিচে নেমে আসলাম।ঘরে ঢুকেই ও টাওয়াল পেচিয়ে দৌড় দিল ওয়াশরুম এ।
আবার জদি বৃষ্টি নামে
আমিই তোমার প্রথম হবো!
লেপটে যাওয়া শাড়ীর মত
অঙ্গে তোমার জড়িয়ে যাবো!(ইফরাজ)

দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন আপনি।(ঐশানী রাগি সুরে)

স্ত্রী হোও হক থেকে বলছি।পরবর্তীতে বৃষ্টির আগে আমার সাথে আলিঙ্গন এর জন্য প্রস্তুত থেক বউ। (ইফরাজ মুচকি হেসে)

অসভ্য পুরুষ মানুষ। (ঐশানী)

*********(চলবে)***********