দোটানা ২ পর্ব-২২+২৩

0
450

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২২

তুমি ঠিক আছো আরুশি?

হুম,ঠিক আছি।আপনি কেনো এসেছিলেন?

ওই বলতে এসেছিলাম তুমি কিছু খাও নি,আর যে ঘুমের মাত্রা আমি তোমার দেখেছিলাম ভাবলাম না আবার না খেয়ে ঘুমিয়ে যাও।

ধন্যবাদ আমার এতোটা খেয়াল রাখার জন্য। আপনি ফ্রেস হয়ে খেতে আসেন আমিও আসছি।

সায়ান সোজা গেলো তার বাবার কাছে।বুকের ভিতরে আবারও অশান্তির ছড়াছড়ি তার।বাবার পাশে গিয়ে অস্থির কন্ঠে জানতে চাইলো সায়ান।

ড্যাড আরুশির সাথে আমার বিয়ে ভাঙা হলো কেনো?

তুমি আরুশির যোগ্য না তাই।

প্রথমে বিয়ে ঠিক করার সময় তো যোগ্যতা যাচাই করো নি।তবে এখন এমনটা কেনো করলে?

কারন প্রথমে তোমাকে আমি একটা সুযোগ দিয়ে দেখেছিলাম,আর তুমি সে সুযোগের অপব্যবহার করেছো তাই আরুশিকে আর যাই হোক তোমার সাথে বিয়ে দেওয়া যাবে না।

আমাকে কি আর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না বাবা।

এই প্রথম সায়ান নিরবকে বাবা ডাকলো,উক্ত দিক প্রমাণ করছে সায়ান প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব জীবনে কমিয়ে বাংলা সংস্কৃতিকে বুকে টানছে।ওর মধ্যে হঠাৎ করে এতো বড় বড় পরিবর্তন তো আর এমনি আসছে না।ভাবনাটা গ্রাস করলো নিরবকে।তবে উক্ত ভাবনাকে একপাশ করে স্বাভাবিক স্বরে জবাব দিলো নিরব।

সুযোগ আমার কাছে চাওয়াটা একদম অনর্থক সায়ান। কারন আরুশিকে নিহান নিধী এডপ্ট করেছে।তাই ওকে নিয়ে কোনো কিছুর ডিসিশন নেওয়া এখন ওদের অধিকার।তুমি ওদের সাথে কথা বলো।ওরা এ বিষয়ে যা চাইবে তাই হবে।

সায়ান আর না দাঁড়িয়ে চলে গেলো সেখান থেকে।বাবার রুম থেকে যাওয়ার সময় নিচের দিকে চোখ পরলে দেখতে পেলো আয়ান আরুশি পাশাপাশি বসে খাচ্ছে,এমনকি একে ওপরের সাথে গল্পও করছে খাওয়ার মধ্যে।সায়ান নিজেকে সামলে চলে গেলো নিজ কক্ষে।

আরোহী পানি পান করতে বাইরে এলে দেখতে পেলো আয়ান আরুশিকে। অসহ্য রাগ মাথায় চেপে বসলো ওর।মনে মনে বলতে লাগলো।

আমার দিকে তো তাকায়ই না আর ওই আরুশির দিকে কিভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে গল্প করছে।
আমার অল্প পাশে আসাটাও বিরক্তির মনে হয় না আয়ান তোমার কাছে।আর ওই আরুশির সাথে সারাদিন ঘোরাফেরা করো এমনকি খাবারটাও সাথে বসেই খাচ্ছো।কিন্তু তোমার মুখে বিরক্তির কোনো ছাঁপই নেই।তবে এটা মনে রেখো আয়ান তোমার আমার মধ্যে যেই আসবে তাকে রাস্তা নাপতে তো হবেই।

সায়ান আরুশির একটা ছোট্ট ফ্রোক হাতে নিয়ে বসে আছে।অটল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওটার দিকে।এই ফ্রোকটা আরুশির খুব পছন্দের ছিলো।তাই ও হারিয়ে যাবার পর সায়ান লুকিয়ে ওটা ওর কাছে নিয়ে আসে।মাঝে মাঝে ওটার গ্রাণ নিয়ে আরুশিকে অনুভবে নিতে চায়।ওটার সাথে গল্প করে আরুশির স্মৃতিতে মগ্ন হয়ে। আজকেও তার ব্যাতীক্রম কিছু ঘটছে না।

এই আরুশি কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?হ্যাঁ তুই চলে যাবার পর আমি অনেক খারাপ হয়ে গেছি।এমন কোনো খারাপ জিনিস নেই যা আমি করি নি।তবে হ্যাঁ কখনো তোর জায়গায় কাউকে বসাতে পারি নি।মেয়েদের শরীর নিয়ে খেলা করলেও কারো প্রতি কোনো টান অনুভব করি নি কখনো।মনে যে তোর বসবাস। সে জায়গা আমি কখনোই কাউকে দিতে পারি না।আমি সেটাতে ব্যার্থ।তবে আজ এমনটা হচ্ছে আমার সাথে!কেনো আরুশির প্রতি আমি টান অনুভব করছি?ওর পাশে গেলে মনে হয় যেনো তুই আমার পাশে আছিস।ওর প্রতি সেই টান অনুভব করি যেটা তোকে নিয়ে করি।ওকে কারো পাশে দেখলে বিশেষ করে আয়ানের পাশে দেখলে আমার সেই হিংসে হয় যেটা তখন তোর ক্ষেত্রে ঘটতো।এসব কি হচ্ছে বল?আমি কোথাও জবাবটা খুঁজে পাচ্ছি না রে।আর তুই তো সে জবাব দিতেও পারিস না।জীবনটা যে নিরাশতায় ভরে গেছে রে আরুশি।

সকালে সবাই নাস্তা করছে তখন হঠাৎ আয়ানের উদ্দেশ্যে নিরব বললো।

আয়ান আর কতো?বয়স তো আর কম হয় নি।তুমি জীবনে অনেক সফলতা তো অর্জন করে নিয়েছি এবার তোমার বিয়ের বিষয়ে ভাবাটাও আমার কাছে জরুরি মনে হচ্ছে।

বাবা আমি আগেই বলেছি।আমি বিয়ে করবো না।

আয়ান একটা সফল জীবনের জন্য একজন পরিপূরক এর প্রয়োজন আছে।এভাবে একা জীবন পার করা সহজ নয়।

আমিও জীবন একা পার করতে চাই না বাবা।তবে সেদিনই জীবনে এগুবো যেদিন সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটা চলে আসবে।

কথাটা বলে নাস্তা না করেই আয়ান অনেকটা রেগে উঠে বেড়িয়ে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে।যাওয়ার আগে বললো।

আরুশি খাওয়া শেষ করে জলদি এসো দেরি হচ্ছে। আমি গাড়িতে অপেক্ষা করবো।

আরুশি ঝটপট খেয়ে বেড়িয়ে গেলো।সায়ানের হজম হলো না বিষয়টা মোটেও।মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিয়েছে সে।

মি.এ্যরোগেন্ট বিয়ে কেনো করবেন না?আরে কি গ্যারান্টি আছে আরুশি এখনও বিয়ে করে নি বা ওর জীবনে কেউ আসে নি এখনও?এমনও তো হতে পারে ও নিজের জীবনে অনেক এগিয়ে গেছে।আপনি শুধু শুধু ওর অপেক্ষায় কেনো বসে আছেন?

কথাটা শুনেই আয়ান হুট করে ব্রেক কষলো সজোরে।তারপর গাড়ি থেকে নেমে হনহনিয়ে আরুশির পাশে এসে ওকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে একটা খালি জায়গায় মাঠের মতো স্থানে এনে ছিটকিয়ে ছেড়ে দিলো,আরুশি পরতে পরতে নিজেকে সামলালো।আয়ান এবার ওর দিকে তেড়ে এসে ওর দুই হাতের বাজু নিজের দুই হাতে চেঁপে ধরে বর্জ্য কন্ঠে চেঁচিয়ে বললো।

তোমার সাহস হলো কি করে আরুশি এমনটা বলার?আমার আরুশি শুধু আমার।ও কখনোই অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না।অন্য কাউকে নিজের জীবনে জায়গা দিতে পারে না।আর যদি ওর জীবনে কেউ থেকেও থাকে তবে আই ডোন্ট কেয়ার।ও আমার।আর ওকে আমার কাছে রাখতে আমি সব অসাধ্য সাধন করতে রাজি।ওকে কাছে রাখার ক্ষেত্রে ন্যায়–অন্যায়, পাপ–পুণ্য আমি কখনো দেখি নি আর দেখবোও না।অতঃপর আয়ান আরুশিকে ছেড়ে সেখান থেকে চলে এলো আবার গাড়িতে। আরুশি ভাবলেশহীন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো অল্পক্ষণ।আয়ানের চোখে আজ ও যে আগুন আর ভালোবাসা দেখেছে তা ভাষায় বোঝানোর মতো না।এই আগুন হলো আরুশিকে হারিয়ে যাওয়ার আগুন।ওকে না পাওয়ার ব্যার্থতার আগুন,যাতে যে কেউ পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে নিমিষেই। আর সেই ভালোবাসার পরিমাণের কোনো সীমা নেই।এতোটা ভালোবাসা যা ফুরানোর মতো কোনো সময়সীমা নেই।

একটু পর আরুশি এসে গাড়িতে বসলে আয়ান ওর দিকে না তাকিয়ে আর কিছু না বলেই গাড়ি ছাড়লো।

রাত হয়ে আসলো।আরুশি ছাঁদের এক প্রান্তে বসে আছে চুল ছেড়ে।অনেক বাতাস বইছে সেখানে।আরুশির চুলগুলো মুক্ত বিহঙ্গে দুলছে।আরুশি শান্ত মনে প্রকৃতির দ্বিধার করছে ঠিক তখন পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করলো,ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে পেলো সায়ান এসে পাশে বসেছে ওর।আরুশি কোনো প্রতিক্রিয়া না করে আবারও প্রকৃতিতে মন বসালো।সায়ান নরম স্বরে বললো।

আজকের আবহাওয়াটা খুব সুন্দর না আরুশি?

হুম,তা তুমি কবে থেকে এসব সুন্দর আবহাওয়া উপভোগ করতে শুরু করলে শুনতে পারি?

জানিনা,তবে আজকাল বেশ ভালোই লাগে।

আরুশি কোনো উত্তর দিলো না।অল্পক্ষণ পর সায়ান আবারও বললো।

আমি কিন্তু ক্লাব আর মেয়েদের নেশা ছেড়ে দিয়েছি।

হুম জানি সেটা আজকে টিনা, রিনা,জুলি,রিতা,বিউটি,মিলি আর পিংকির মাধ্যমে জানলাম।

এরা কারা?

আমার ছুটোবেলার বান্ধবী সব….যত্তোসব।তুমি কি বলোতো সায়ান? এতোটা মেয়ের সাথে প্রেম করে বেড়াতে পারো অথচ তাদের নাম মনে থাকে না তোমার?

নাম আর ঠিকানা দিয়ে কি হবে আর?

হ্যাঁ আমিও তো ভুলে গেছি তোমার আসল চাহিদা অন্য কিছু মেয়েদের থেকে।

আমি ওসব ছেড়ে দিয়েছি আরুশি।

চোর যতোই টুপি পরে মাওলানা সাজুক থাকবে তো সে চোরই সায়ান।

মন থেকে চাইলে সে চোরও কখনো ধর্মে ফিরতে পারে আরুশি।বাদ দাও এসব,এটা বলো তুমি ওদের কোথায় পেলে?

আর কোথায় সব কটা বাড়ি এসেছিলো আজ সকালে তোমার খোঁজে,তুমি নাকি কদিন থেকে কারো সাথেই যোগাযোগ করছো না তাই। কোনো ক্লাবেই কেউ না কি তোমায় খোঁজে পায় না।

বলো কি ওরা বাড়ি এসেছিলো!
আশ্চর্য হয়ে বললো সায়ান।

আরে সায়ান এতো প্যারা নিও না তো আমি ওদের বলে দিয়েছি তুমি বিয়ে করে সংসার করছো আর তোমার বউ সন্তান সম্ভবা তাই তুমি সব ধরনের কুপথ থেকে সরে এসেছো।কথাটা শুনে সে কি ন্যাকা কান্না ওরা,তাও তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বিদায় করেছি।

হোয়াট!তুমি এসব বলেছো ওদের?

হ্যাঁ,শুধু এটা নয়, তোমার বউ হিসেবে আরোহীকে দেখিয়ে দিয়েছি। কথাটা বলে আরুশি হাসতে শুরু করলো শব্দ করে।সায়ানের প্রথমে অল্প রাগ হলেও আরুশির হাসি দেখে বিমোহিত হলো ওতে।মুখে সায়ানেরও হাসি ফুঁটে উঠলো।হাসি টাঙানো চেহারার সহিত বলে উঠলো আরুশিকে।

হাসিটা তোমার বরাবরই সুন্দর। কথাটা শুনে আরুশি হাসি থামিয়ে দিলো।উঠে চলে যেতে নিলে সায়ান ওর হাত ধরে নিলো,আরুশি পিছন ফিরে তাকালো ভ্রুকুচকে।সায়ান আলতো স্বরে বললো।

বসো না পাশে একটু।

সে যোগ্যতা তোমার নেই আর না সে ক্ষমতা আমার আছে।

হাত ছাড়িয়ে চলে গেলো আরুশি।

আয়ান ওর রুমের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে দৃষ্টি অটল রেখে তখন পাশে এসে দাঁড়ালো আরুশি।
আয়ান ওকে দেখেও কিছু বললো না।যেনো ও তাকে দেখতেই পায় নি।আরুশি বললো এবার।

সরি।আমি কি জানতাম বিয়ের কথায় আপনি এতো ক্ষেপে যাবেন?আর আরুশিকে আপনি এতোটা ভালোবাসেন?আসলে আজকাল আপনার মতো প্রেমিক খুব কম তাই কথাটা বলতে এতোটা ভাবি নি আমি।এখন তো এমনও হয় যে বউ মরার পরের দিনই স্বামী অন্য বিয়ে করে নেয়।তাই।সরি আমার এমনটা বলা হয়তো একদম ঠিক হয় নি।।

আসলে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতার নিচে সত্য ভালোবাসার অনুভুতিগুলো কেমন যেনো চাঁপা পরে গেছে আরুশি।কজন আর আজ সত্য ভালোবাসতে জানে বলো? তাই তোমার এসব মনে করা বড় কিছু ছিলো না।আমিই অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি।তাই সরি।

বাহ,দ্যা মি.এ্যরোগেন্ট আমায় সরি বললেন।সামান্য রাস্তার মেয়েকে।

নিজেকে ছুটো করা বন্ধ করো আরুশি।তুমি মোটেও রাস্তার মেয়ে না।এমন কথা যেনো আমি আর দ্বিতীয় বার না শুনি।

কিন্তু আগে তো আপনি নিজে থেকেই আমাকে তা বলতেন।তবে আমি বললে দোষ?

আমি এখন তো সেটা আর বলি না আর বলবোও না।আর তুমিও বলতে পারবে না।

চলবে…………..

#দোটানা ২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_২৩

আচ্ছা মি.এ্যরোগেন্ট একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সত্য উত্তর দিবেন তো?

কি বলো?

আপনি গরীব কেনো সহ্য করতে পারেন না?

এমনি।এসবের আলাদা কারন থাকে না কি?

আপনার ক্ষেত্রে আছে আমি জানি।বলেন না।

তেমন কিছু না আরুশি।

হুম মনে হয় এখনও আপনি আমায় রাস্তার মেয়েই মনে করেন তাই নিজের কোনো কথা শেয়ার করতে চান না।ওকে আর বলতে হবে না,মুখ ফুলিয়ে কথাটা বললো আরুশি।তারপর অভিমান করে চলে যেতে নিলে আয়ান বলে উঠলো ।

এমন কিছু নয় আরুশি।আসলে ব্যপারটা আমি কাউকে জানাই নি আর জানাতেও চাই না।

বলেন না….. আমি কাউকেই বলবো না,বিশ্বাস করেন না আমায়?

করি।তবে….

তবে কি?

কিছুনা,ওকে শুনো,আজ থেকে প্রায় ২ বছর আগে আমি আর সায়ান তখন পড়ালেখা শেষ করে মাত্র দেশে ফিরেছিলাম লন্ডন থেকে।এসেই আমি বিজনেস জয়েন করি।আমার গরীবদের সাহায্য করতে ভালোই লাগতো।সবাই বলে আমি রাগ আর গম্ভীরতার দিকটা বাবার পেলেও আমার মনটা না কি মায়ের মতোই।আসলেই আমি কখনো কোনো গরীব দুঃখীর কষ্ট সহ্য করতে পারতাম না। সবাইকে সাহায্য করতাম,তখন আমাদের অফিসে একটা মেয়ে কাজ করতো ক্লিনিং কর্মকর্তা ছিলো ও।একদিন ওকে কান্না করতে দেখি আমি অফিসের এক পাশে বসে,তখন মনের কৌতুহলে ওকে কারন জিজ্ঞেস করলে জানতে পারলাম ওর বাবা নেই,মা খুব অসুস্থ, মায়ের চিকিৎসা আর ভাইয়ের পড়ালেখার জন্য অনেক টাকা চাই ওর।ওর কথামতো আমি ওর বিষয়ে খোঁজ নিলে জানতে পারি ও সত্যি বলছে তখন আমি ওকে অনেকগুলো টাকা দেই, আর ওর মাকে ভালো হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেই।উনার সুস্থতার দায় ভার নিজের কাধে নেই।তারপর থেকে ওর সাথে আমার প্রায়ই কথা হতো অফিসে বা ও কখনো কখনো ফোন করতো আমায় ওর মায়ের খবর দিতে কারন আমিই বলেছিলাম ওর মায়ের খবর আমায় দিতে থাকতে। ওর মায়ের সুস্থতার দায়িত্ব আমিই যে নিয়েছিলাম।বেশ কিছুদিন পর ওর মা সুস্থ হয়ে যান।আমি তখন অনেক টাকা দেই ওদের,আর বলি কোনো প্রয়োজন হলে আমাকে বলতে।তারপর থেকে ওর সাথে আমার কথা বলা কম হয়ে যায় কারন ওর মায়ের খোঁজ নেওয়ার আর প্রয়োজন ছিলো না।কিন্তু ও আমাকে ঘনঘন ফোন করতে শুরু করে বিনা কারনেই,অফিসে আমার সাথে কেমন জানি অস্বাভাবিক আচরন করতো, সবাইকে যেনো এটা দেখাতে চাইতো যে আমার সাথে ওর আলাদা কোনো সম্পর্ক আছে। আমার ব্যাপারটা কেমনজানি লাগতো তাই ওর সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম হটাৎ একদিন ও ওর মাকে দিয়ে ফোন করে আমাকে ওদের বাড়ি ডাকালো,ওর মায়ের রিকুয়েষ্ট ফেলতে না পারায় গেলাম সেখানে,উনি আমার জন্য অনেক রান্না করেছিলেন না খেয়ে আসতে দিচ্ছিলেন না,তাই খেতে হলো আমায়,কিন্তু খাওয়ার পরপরই আমার মাথা ঘুরতে শুরু হলো তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।জ্ঞান ফিরলে নিজেকে ওদের একটা বিছানায় পেলাম।ওদের জিজ্ঞেস করলে ওরা জানালো আমি নাকি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম তারপর ওখানে থাকি নি আমি চলে আসি।কিন্তু পরদিন হুট করে ও আমার কেবিনে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমার পাশে আসে।আমাকে বলে ও আমাকে ভালোবাসে আমাকে বিয়ে করতে চায়,ও গরীব বলে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না তবে আসল কথা এটা যে আমি ওকে ভালোবাসতাম না,কারন আমি আরুশিকে ছাড়া কখনো কারো কথা কল্পনাও করতে পারি না,কথাটা আমি ওকে স্বাভাবিকভাবে জানালে ও আমাকে জোর করে, বলতে থাকে ওকে আমার ভালোবাসতেই হবে,আমার মাথায় তাতে রাগ চাপলে গর্জে উঠে ওকে চলে যেতে বলি।ওকে জব থেকেও বের করে দিবো এটা জানাই।তখন ও আমার সামনে কিছু ছবি টাঙিয়ে ধরে নিজের ফোনে।ও আমার খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে শুয়ে আছে,আমার গায়ে শার্ট নেই আমি শুয়ে আছি আর পাশে ও শুয়ে আছে এমন কয়েকটা সেল্ফি, আমি বুঝতে পারলাম সেদিন খাবারে ও কিছু মিশিয়ে আমাকে খাইয়ে তারপর এসব করেছে,অজ্ঞান অবস্থায় আমার সাথে এসব ছবি নিয়েছে।যাতে আমি ওর কথায় না আসলে ও আমাকে ব্লেকমেইল করতে পারে।তখন আমি নির্ধিদায় বললাম যে এসব ছবি দিয়ে ও কিছুই করতে পারবে না কারন আমি এমন না, না তো আমার পরিবার তা বিশ্বাস করবে আর না তো পৃথিবীর অন্য কাউকে ওর বিশ্বাস করানোর ক্ষমতা আছে।কিন্তু ও আমাকে চ্যালেন্জ করে গেলো যে সব কিছু ও এতো ভেবে চিন্তে করেছে যে আমার পালানোর কোনো পথ নেই।আমার ওকেই বিয়ে করতে হবে।আমি আর ওকে কিছু বললাম না।ওর ধমকিতে ভয় পেলাম না,তাই ও খেপে গিয়ে ছবিগুলো অনেক জায়গায় ভাইরাল করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো ও আমাকে বদনাম করতে গিয়ে নিজের সম্মান ঢুবিয়ে দিলো।অবশ্য কথাটা আমি আমার পরিবার অব্দি পৌঁছাতে দেই নাই কিন্তু ওর জন্য খুব খারাপ অবস্থা হয়ে উঠেছিলো,লোক ওকে নিয়েই নানা কথা তুলতে শুরু করে।অবশেষে ওদের বাড়ি থেকে মেরে বের করে দেয় এলাকার কিছু লোক বিষয়টা শুনে আমার খারাপ লাগে তাই কয়েকজন লোক পাঠিয়ে ওদের এক রাতের জন্য থাকার একটা জায়গা করে দেই আর এটাও বলাই যে পরেরদিন থেকে যেনো ওর আর ওর পরিবারের ছায়াও আমি দেখতে না পাই।জানিনা সে রাতে ওর মনে কি চলছিলো, সে রাতেই ও আত্নহত্যা করে মারা যায়।অনেক খারাপ লাগে আমার বিষয়টা শুনে কিন্তু তারপর থেকেই গরীবদের প্রতি কেমন জানি একটা ঘৃণা সৃষ্টি হয়।

ওর মা ভাইয়ের কি হলো?

এর পর থেকে আমি ওদের দায় ভার নিয়েছি।ওরা ভালো আছে।

হুম,বুঝতে পারলাম। অনেক খারাপ হয়েছে জিনিসটা।তবে সবাই তো একরকম হয় না স্যার।একজনের জন্য তো পুরো গরীব জাতি খারাপ হতে পারে না।মানুষ ভালো খারাপ হতে পারে তাই বলে গরীবরাই শুধু খারাপ হবে এমনটা তো নয়।

হুম,জিনিসটা এখন আমিও মানি?

হটাৎ করে চিন্তাধারায় পরিবর্তন আসার কারন জানতে পারি?

এই তো একজনের জন্য গবীর জাতির উপর ঘৃণা চলে আসলো আর এখন অন্য একজনের জন্য আবারও তা চলে গেলো।

সে কে?

সে তো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে।

ঘোরলাগা নয়নে আরুশির দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো আয়ান।আরুশি আয়ানের চোখে চোখ রাখলে কেমন জানি এক অস্বাভাবিক অনুভুতি খেলা করতে শুরু হয় তার মনে তাই সেখানে না দাঁড়িয়ে চলে যায়।

সকাল সকাল আরুশি এসে সায়ানকে ঘুম থেকে ডেকে দেয়,সাত সকালে চোখ খুলেই আরুশির দ্বিধার করতে পেরে যেনো আকাশ সমতুল্য পাওয়া হাতে পেলো ও।ঠোঁটে ফুঁটলো প্রশান্তির হাসি।আলতো হেসে জিজ্ঞেস করলো ওকে।

আজ যে সাত সকালে নিজের দ্বিধার করালে?

কেনো ডাকতে আসতে পারি না বুঝি?মা বললেন ডেকে দিতে আজ নাকি তুমিই বলেছিলে উনাকে খুব ভোরে তোমায় ডাকতে তাই মা আমায় পাঠালেন।

শুধু ছুটো মায়ের কথায় এসেছো?

না তোমার ভালোবাসার টানে সাত সকালে তোমায় দেখতে এসেছি।হা হাহা, তুমিও না সায়ান অফকোর্স মায়ের কথায়ই এসেছি,এবার উঠো তো কুম্ভকর্ণের মতো শুইয়ো না।

কথাটা বলে আরুশি সায়ানের হাত ধরে টেনে ওকে উঠালো,সায়ানের ভালোই লাগছে আরুশির হাতে জব্দ হওয়া।মুগ্ধ হয়ে তাকাচ্ছে আরুশির দিকে তবে সেদিকে খেয়াল নেই আরুশির সায়ানকে উঠিয়ে দিয়ে চলে গেলো সে।

এদিকে আয়ানের আজ অফিসে দেরি হয়ে যাওয়ায় টাই গলায় ঝুলিয়েই বেড়িয়ে গেলো, খেয়াল নেই সেদিকে ওর হঠাৎ গাড়িতে উঠার পর আরুশির চোখ পরলো তাতে।

আরে মি.এ্যরোগেন্ট আপনি জানেন না টাই গলায় ঝুলিয়ে রাখে না বাঁধেও।

ও শিট খেয়াল নেই।দাঁড়াও বাঁধছি।

আরে প্যারা নট,আমি আছি না।কথাটা বলেই আরুশি আয়ানের টাই বাধতে শুরু করে,আয়ানের মনে ভালোলাগার এক আলাদা শিহরণ দোলিয়ে দিতে শুরু করে,এদিকে সায়ান অফিসে বের হওয়ার সময় পাশেই চলন্ত মুহুর্তে ওর নজর যায়।রাগ মাথায় অল্পতেই চরে বসে।দাঁত দাঁত চেপে বলে।

এর একটা বিহীত আজ আমি করেই ছাড়বো।

রাতে খাওয়া পরে সবাই বসার ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছে, আয়ান সায়ান কখনোই এসব আড্ডায় থাকে না আজ এই প্রথম দুজনও তাতে আছে হয়তো দুজনের একটাই কারন আর তা হলো আরুশি।গল্প গুজবের এক পর্যায়ে সায়ান বলে উঠলো।

আমি আরুশিকে বিয়ে করতে চাই ছুটো বাবা মা।আমাকে আরেকটা সুযোগ দিন।কথাটা শুনে সবাই যেনো আকাশ থেকে পরলো।তখনি আয়ান গর্জে বললো।

তোর সাহস হয় কি করে এতো কিছুর পরও আরুশিকে বিয়ে করার সপ্ন দেখিস?

তোর সাহস হয় কি করে আমার জীবনে হস্তক্ষেপ করার?আমি ছোটো বাবা মায়ের সাথে কথা বলছি তোর সাথে না।সো দূরে থাক এসবের মধ্যে থেকে।

আর যদি না থাকি তবে কি করবি?

দেখতে চাস?

দেখতেও চাই আর দেখাতেও।

অতঃপর দুজনে আবারও ধস্তাধস্তি লেগে গেলো।কেউ ওদের ছাড়াতে পারছে না।অতিরিক্ত লড়াইয়ে লিপ্ত দুজন। আর সহ্য করতে পারলো না আরুশি স্টপ ইট বলে চিৎকার করে উঠলো সজোরে,আরুশির চিৎকারে দুজন থেমে গেলো।তারপর সবাই ওদের দুজনকে টেনে আলাদা করলো,আরুশি দুজনের উদ্দেশ্য চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলো।

কি পেয়েছেন আপনারা দুজন?আমি খেলনা যখন তখন আমাকে নিয়ে টানাটানি করবেন আপনারা?শুনে রাখেন মি.সায়ান আমার জন্য আপনি যদি পৃথিবীর সর্বশেষ ছেলেও হয়ে থাকেন তবুও আমি আপনাকে বিয়ে করবো না,আর মি.আয়ান আপনাকেও আমাকে নিয়ে মাথা ব্যাথা দেখাতে হবে না।আমি নিজেই নিজেকে আগলে রাখতে জানি।আর আজ থেকে দুজনই আমার সাথে কোনো কথা বলবেন না,আমার আপনাদের দুজনকেই বর্তমানে অসহ্য লাগছে।কথাটা বলে সেখান থেকে চলে যায় আরুশি।

তোমরা কখনো শোধরাবেনা আয়ান সায়ান তা তো আমার খুব ভালো করেই জানা আছে।অন্ততো নিজেদের ঝগড়ার কারন ওই বেচারি মেয়েকে বানিয়ে রেখো না।বিরক্তি নিয়ে কথাটা বলে চলে গেলো নিরব।এরপর নিহান বললো।

সায়ান আরুশি তোমাকে বিয়ে করতে চায় না তাই তোমার সাথে ওর বিয়ের প্রশ্নই আসে না আর আয়ান তোমাকেও আরুশিকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না,ওর জন্য ওর বাবা মা হিসেবে আমরা আছি।

চলবে……..