দ্বিতীয় পুরুষ পর্ব-২১+২২

0
250

#দ্বিতীয় পুরুষ
পর্ব ২১+২২
নীলাভ্র জহির

বিয়ের আগে একটা মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে পুরো সমাজ তাকে কোণঠাসা করে ফেলবে সেই ভয়ে সে আত্মহত্যা করতে চায়। অথচ যেই ছেলেটার কারণেই সে অন্তঃসত্ত্বা হল সেই ছেলেটি দিব্যি এই সমাজে মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়ায়। কারন সে ছেলে। তার চরিত্রে কোন কলঙ্ক লাগেনা। সমস্ত কলঙ্ক কেবল একটি মেয়ের। আনমনে সেসব কথা ভাবছিল চিত্রা। এমন সময় রুবিনার প্রেমিক শিমুলকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখল। দাওয়ায় সাইকেলটা হেলান দিয়ে রেখে সে ভেতরে এসে জিজ্ঞেস করল কেমন আছেন ভাবী?
শিমুলের চোখমুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে এখনো ঘটনার আগা মাথা কিছুই জানেনা।
চিত্রা ঠান্ডা মাথায় বললো, ভালো আছি। বসেন ।
বাড়ির ভেতর এক বড় আম গাছ আছে। সেই আম গাছের নিচের একটা চেয়ার নিয়ে এসে দিল চিত্রা। চেয়ারে বসতে বলে দিল শিমুলকে।
শিমুল বেশ ভালো করেই জানে ভাবি তাকে জরুরী কোন কথা বলবেন। তাই সে তার মুখভঙ্গি সিরিয়াস করে রেখেছে। কিছুটা দুশ্চিন্তার ছাপও রয়েছে তার চোখে-মুখে।
শিমুল বলল, ভাবি আমি বেশিক্ষণ বসবো না। আপনে তাড়াতাড়ি বলেন।
এত তাড়া করলে তো হইব না। সম্পর্ক যখন করছেন, ধৈর্য তো থাকতে হইব ভাই।
জি ভাবি।বলেন ।

শিমুল চেয়ারের উপর বসে পড়ল। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে রুবিনা। রুবিনার সঙ্গে এখনো তার কোনো কথা হয়নি। কেবল চোখাচোখি হয়েছে। রুবিনাকে দেখে মনে হচ্ছে খুব আহত অবস্থায় রয়েছে সে।
চিত্রা বলল, রুবিনার ঘর কোনটা চিনেন?
এই প্রশ্নের কোন কারন বুঝতে না পেরে শিমুল একটু ইতস্তত বোধ করলো।
চিত্রা জিজ্ঞেস করল, চিনেন না?
শিমুল মাথা ঝাকালো।
চিত্রা বলল, ওর ঘরের বেড়ার দিকে দেখেন। দেইখা কি মনে হইতেছে? দা দিয়া কুপাইয়া কাইটা ফেলছি। কেন কাটছি বলেনতো?
শিমুল এবারও কিছু বুঝতে পারল না। কৌতুহলী চোখের রুবিনার দিকে তাকালো।
চিত্রা বলল, সে গলায় দড়ি দিছিল। আমি ঘরের বেড়া কাইটা তারে বাঁচাইছি।
চমকে উঠল শিমুল। তার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল। অবিশ্বাস্য চেহারা নিয়ে সে তাকাল রুবিনার দিকে।
চিত্রা বলল, সে গলায় দড়ি দিয়া মরলে তার দায় কিন্তু আপনারেও নিতে হইত। সম্পর্ক করছেন ভালো কথা। এত গভীরে যাওয়ার তো কোনো দরকার আছিল না। বাড়িতে প্রস্তাব দিলেই তো বিয়া দিয়া দিত।
শিমুল এতক্ষণে বুঝে গেছে আসল ঘটনাটা কি? তাই রীতিমত ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। বিষয়টা বুঝতে পেরে চিত্রা ঠান্ডা গলায় বলল, মাথা গরম কইরেন না। আমি কি কই সেইটা ভালো কইরা শুনেন। রুবিনার পেটে আপনার বাচ্চা আইছে । এই বাচ্চার দায় আপনি এড়াইতে পারবেন না। সব দোষ রুবিনার ঘাড়ে চাপায়া দিতে পারবেন না। যা করছেন আপনারা দুইজন মিইলা করছেন।

দিশেহারা ভঙ্গিতে শিমুল একবার রুবিনার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার চিত্রার দিকে। এই মুহূর্তে তাকে দেখে খুবই অসহায় বলে মনে হচ্ছে চিত্রার। চিত্রা আরো কাছাকাছি এসে দাঁড়াল শিমুলের। নরম গলায় বলল ভাই তোমার একখান কথা কই। তোমরা দুইজন যে কামটা করছ এইটা ঠিক করো নাই। এখন যদি এই কথা আর কেউ জানে তাইলে মান-সম্মান সব নষ্ট হইয়া যাইবো। তোমার আর তোমার বাপ মায়ের মান সন্মান যাইবো লগে আমাদেরও যাইবো। গ্রামবাসী মুখে চুনকালি মাইখা দিবো। তখন শুধুই রুবিনা না আমাদের সবারই মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকব না। তুমি নিজে একবার ভাইবা দেখো। যে গ্রামে ছোট থাইকা বড় হইছো সেই গ্রামের মানুষ যদি তোমার মুখে চুনকালি মাখাইয়া দেয় মানুষের সামনে আর মুখ দেখাইবা ক্যামনে?

শিমুলকে হয়তো বোঝানো গেছে। সে গম্ভীরভাবে মাথা নিচু করে রেখেছে। চিন্তিত দেখাচ্ছে ওকে। অসহায়ের মত বললো ভাবী আমি এখন কি করমু? আপনি আমাগোরে কি করতে কন? বাসায় বিয়ের কথা ও কওন যাইবো না। আর এই কথা না কইলে বাড়ি থাইকা বিয়াও দিব না।
– ভুল তো কইরা ফেলসেন ভাই। এখন একটা উপায়ই খোলা আছে। বিয়া কইরা ফালাইতে হইব। বিয়ার কয়েকদিন পরে মানুষজনরে জানাইবেন আপনাগো ঘরে নতুন অতিথি আইবো। কেউ কিছু মনে করব না। মানুষের বাচ্চা আট মাসেও হইয়া যায়। সেইটা কোনো সমস্যা হইবো না। কিন্তু সমস্যা হইতাছে এখন তোমরা কি করবা? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়া কইরা ফালাইতে হইব।
– কিন্তু ভাবি আমারে তো এখন বাড়ি থেকে বিয়েতে রাজী হইবো না। বাড়িতে আমি বিয়ের কথা কইতে পারমু না। আপনি কি আমাদের পলাইয়া বিয়ে করতে কইতাছেন?
– পলাইয়া বিয়া করলেও মান সম্মান থাকব না। গ্রামের নানান মানুষ নানান কথা কইব। সে সব এখন চিন্তা কইরা লাভ নাই। আগে অন্য উপায়ে বাসায় বিয়ের কথা কইতে হইবো। যদি বাড়ি থাইকা রাজি না হয় তখন তোমরা পলাইয়া বিয়া করবা।
রুবিনা এতখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিল কথাগুলো। এবার কাছে এসে চিত্রার হাত চেপে ধরে বলল এটা কী কইলে ভাবী। আমি পলাইয়া বিয়ে করবো?
– পলাইয়া পেট বাইধা ফেলছো। আর কইতাছ পলাইয়া বিয়া করতে পারবা না। এই কাম করার আগে একবারও মনে হয় নাই যে তোমরা বিয়ে করো নাই?
রুবিনা চুপ হয়ে রইল। তার চোখ টলটল করছে পানিতে।
চিত্রা বলল, কাইন্দ না। আমি তোমাগো একটা বুদ্ধি দিতাছি। এই বুদ্ধিতে কাম না হইলে পলাইয়া যাইতে হইবো।
– কি বুদ্ধি? জানতে চাইল শিমুল।
এই মুহূর্তে যে কোন কঠিন কাজ সে করতে পারবে। পরিবার ও নিজেদের মান সম্মান বাঁচানোর জন্য সেই কাজটা করতেই হবে তাকে।
চিত্রা দুইজনকে কাছাকাছি ডেকে নিয়ে এলো। তারপর বলল, শিমুল ভাই কাজটা আপনারে করতে হইবো। কারণ রুবিনা এই কাম করতে পারবোনা। আপনি বাড়িতে কইবেন আপনে রুবিনারে বিয়া করবেন। রুবিনারে ছাড়া আপনি বাঁচবেন না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রুবিনার লগে যেন আপনার বিয়ে দেয়। বিয়ে না দিলে আপনি বাড়ি ছাইড়া চইলা যাইবেন
– এইডা কি কন ভাবি? এই কথা কেমনে আমি আমার বাপ মায়েরে কমু।
– বাপ মায়েরে কইতে না পারলে ভাবি, দুলাভাইরে কইবেন। বাড়ির আশে পাশে যারা আছে তাদেরকে কইবেন। মোটকথা আপনি যে রুবিনার জন্য পাগল হইয়া গেছেন এইটা সবাইরে বুঝাইতে হইবো। একটু পাগলামি করলেই দেখবেন কয় দিনের মধ্যে আপনার বিয়া পরাইয়া দিবো। পোলায় যখন বিয়া করনের লাইগা পাগল হইয়া থাকে বাপ মায়ে চায় তাড়াতাড়ি পোলার বিয়া দিতে। তারা নিজেরাই রুবিনার লাইগা প্রস্তাব নিয়ে এই বাড়িতে আইবো। বাকিটা সবাইরে আমি এদিকে সামাল দিমু। সবাই বলতে রুবিনার বড় ভাই যদি রাজি থাকে কেউ আর বিয়া ঠেকাইতে পারব না। কিন্তু তার আগের পাগলামিটা আপনারেই করতে হইবো শিমুল ভাই।
শিমুল হতচকিত হয়ে চিত্রার দিকে তাকিয়ে আছে। সে বেকার ছেলে হতে পারে কিন্তু পরিবারে তার একটা সম্মান তো আছে। হুট করে তো কাউকে বিয়ে করার জন্য পাগলামি শুরু করে দেয়া যায় না।
শিমুল বলল, যদি আমার বাপ মায় আমারে বাড়ি থেকে বাইর কইরা দেয়? যদি কয় নিজের পায়ে না দাঁড়াইলে আমারে বিয়া দিব না?
– যদি আপনার নিজের পায়ে দাঁড়াইতে হয় তাহলে দাঁড়াইবেন। দু’একদিনের মধ্যে যেখান থেকে পারবেন একটা কাম জোগাড় কইরা ফেলবেন। আপনার বাপ মায়ে যখন দেখব আপনি একটা কাম করতাছেন তখন তারা ঠিকই বিয়ে দিতে রাজি হইব। আর যদি বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দেয় তাইলে তো কিছুই করার নাই। তখন আপনি রুবিনারে নিয়া যেদিকে মন চায় সেদিকে চইলা যাইবেন। পলাইয়া বিয়া করন ছাড়া তো আর উপায় দেখতেছি না।
– পলাইয়া বিয়া করুম সেটাই মনে হয় ভালো হইবো ভাবি।
– এইডা কোন কথা কইলেন আপনে। মরদ মানুষের কথা তো এমন হওয়ার কথা না। আপনি কেমন মরদ? মাইয়া মানুষের মত কথা কইতাছেন। বাপ-মায়ের ভয়ে কইতাছেন পলাইয়া বিয়া করবেন।
– ভাবি তাইলে কি করুম কন আপনে। আমার জায়গায় একবার নিজেরে চিন্তা কইরা দেখেন। একটা ছেলে এমনে বাড়িতে হঠাৎ কইরা বিয়ের জন্য পাগলামি কইরা উতলা হইয়া উঠব?
– একটা ছেলে এই আকাম কুকাম করার আগে তার মাথায় এই চিন্তা আসে নাই? এখন এত বড় বড় কথা কইয়া লাভ আছে?
– কিন্তু বাড়িতে আমি কেমনে কমু বিয়ার কথা। বড় ভাই শুনলে আমারে থাপ্পর দিব।
– আর আপনি যদি না শুনেন আমরা আপনাদের থাপ্পড় দিমু। আমার বইনের যদি কিছু হইয়া যায় আপনারে কিন্তু আমরা ছাইড়া দিমু না মনে রাইখেন।
শিমুল রুবিনার দিকে তাকালো। তার দৃষ্টি দেখে মোটেও বিশ্বাসঘাতক মনে হলো না। সেই দৃষ্টি অসহায় হলেও তাতে কিঞ্চিত ভরসা রয়েছে। সে হয়তো রুবিনাকে বলতে চাচ্ছে আমার ওপর বিশ্বাস রাখো।
রুবিনা চিত্রা কে বলল, ভাবি আমরা পালায়া বিয়ে করি। সেইটাই ভালো হইবো।
– পলাইয়া বিয়া করলে তোমরা কই যাইবা? কি খাইবা? থাকবা কোনখানে। বিয়া করার লগে লগে তো বাড়িতে উঠতে দিবে না। সহজে মাইনা নিব না।
রুবিনা বলল, ভাবি আমরা ঢাকা শহরে পলাইয়া যাই। ওইখানে অনেক রকম কাম আছে। গ্রামের কত ছেলেমেয়ে ঢাকা শহরে গিয়ে কাম করতাছে চাকরি-বাকরি করতেছে। কোন কাম না পাইলে গার্মেন্টসে চাকরি করুম।
– তাইলে একখান কাম করো। শিমুল ভাইরে কও ঢাকায় যাইতে। ঢাকায় গিয়া দু-একদিনের মধ্যে একটা কাম নিতে কও। কাম একটা পাইয়া গেলে সে বাড়িতে কইব সে বিয়ে করতে চায়।
– কিন্তু সেটা তো অনেক সময়ের ব্যাপার ভাবি। ততদিনে গ্রামের মানুষ জাইনা যাইবো সবকিছু। আমি লুকাইয়া রাখতে পারুম না।
– তোমার পেট বাইর হইতে আরো মেলা দেরি আছে। চার মাসের আগে পেট বাইর হইব না। আর বমি-টমি তো সবার হয় না। তুমি সারাদিন ঘরের মধ্যে থাকবা। বাইরে যাইবানা। তাইলে কেউ কিছু জানতে পারবো না। দিন পনেরোর মধ্যে সে তোমারে বিয়া করব। শিমুলরে কও এইডা ওয়াদা কইরা যাইতে। সে ঢাকায় গিয়া দুই-একদিনের মধ্যে একটা চাকরি নিয়া যেমনে পারে তেমনে তোমারে বিয়া করব। পরেরটা পরে দেখা যাইব।
রুবিনা স্থির চোখে তাকালো শিমুলের দিকে। তার দৃষ্টিতে অবিশ্বাস। এই দৃষ্টি বলে দিচ্ছে যদি শিমুল ঢাকায় গিয়ে তাকে ভুলে যায়। এই গ্রাম থেকে বাইরে যাওয়া মানেই শিমুল রুবিনার হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়া। তখন কোনভাবেই আর তাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না। ছেলে মানুষরা সাধারণত এই ধরনের ঝামেলা থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারলেই বেঁচে যায়। মেয়েটার কি হয় সেই কথা তারা ভাবতেও চায়না।

শিমুল অনেকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে কাছে এগিয়ে এসে বলল, ঠিক আছে ভাবি। আপনি যা কইছেন তাই করমু। আইজ রাইতে আমি ঢাকা শহরে যামু। কাম না পাইলেও আমি বাড়িতে কমু আমার কাম হইছে। তারপর মায়েরে কমু রুবিনার লাইগা আমি ঢাকা শহরে আইছি। আমারে জানি রুবিনার দিয়ে বিয়ে দেয়।
– সব কিন্তু তারাতাড়ি করতে হইবো। দেরি করলে হইবো না।
রুবিনা শিমুলের হাত চেপে ধরে বলল, তুমি ঢাকায় গিয়া যদি আর আমার খোঁজ না রাখো? যদি পলাইয়া যাও।
চিত্রা বলল, তার লগে যখন পিরিত করছিলা তখন কি এই ভয়টা মনের মধ্যে আছিল? তখন তো ঠিকই ভাবছিলা তারে লইয়া সুখে সংসার করবা। আজ এই ভয় পাইতেছ কেন? তারে একটা সুযোগ দাও।
রুবিনা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ভাবী আপনি যা কইতাছেন সেটা যদি না হয়। তখন আমার মরা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না।
এবার চিত্রা গম্ভীর এবং দৃঢ় গলায় বলল, তাইলে আমিও আজ একটা ওয়াদা করতাছি। যদি শিমুল পলাইয়া যায়। যদি সে তার কথা মত কাম করতে না পারে। এক সপ্তাহ পরে রুবিনারে নিয়া আমি শিমুলের বাড়িতে গিয়ে উঠবো। আমি শিমুলের বাপ-মায়েরে কমু যে আমার বইনেরে শিমুল পোয়াতি করছে। রুবিনা ওই বাড়িতে থাইকা যাইবো। ওর বাপ-মায়ে যেমনে পারে পোলারে খুইজা তার লগে বিয়া দিব। তোমরা কি বুঝতে পারছ আমি কি কইছি?
চিত্রার কথায় ভয় পেয়ে গেল শিমুল। ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ চিত্রা যখন কথাগুলো বলেছে তখন সে আর আগের মত সেই সহজ-সরল চিত্রা ছিল না। তার কণ্ঠে যেমন ছিল কাঠিন্য তেমনি চোখে-মুখে নমনীয়তার বদলে ফুটে উঠেছিল এক দৃঢ় মনোভাব। এই চিত্রা একেবারেই তাদের কাছে অজানা, অচেনা। রুবিনা তার ভাবীর এ কথায় ভরসা পেয়ে গেল। মরে যাওয়ার চেয়ে এটা অন্তত ভালো। নিজের দাবী নিজে আদায় করে নেয়া। কারন সে শুধু একাই দোষী নয়। শিমুল নিজেও তার দোষে দোষী। সান্তনা পেল রুবিনা। সে শিমুলের হাত ছেড়ে দিল। কঠিন মুখে বলল, ভাবি যা কইছে টগিক কইছে। তুমি যোগাযোগ না করলে আমি তোমার বাড়ি গিয়া উঠব । মরতে হইলে তোমার বাড়িতে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরবো। মান সম্মান যদি না থাকে বাইচা থাইকা কি হইব?

শিমুল বলল, তোমার এইসব উল্টাপাল্টা কাম করতে হইব না। আমার উপর বিশ্বাস আছে তো নাকি? আমি আজ ঢাকা যাইতাছি এইটা ফাইনাল। আমার মায় আমারে খুব ভাল বাসে। তারে যদি আমি কই আমি তোমার লাইগা ঢাকা শহরে আইসি, আমার মা ঠিকই তোমারে আমার বউ কইরা নিয়া আসবো। বিয়েটা কইরা তোমারে নিয়া আমি ঢাকায় চইলা যাব।
– ঠিক আছে। রুবিনা শিমুলের হাত শক্ত করে ধরল। পরক্ষণে হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, তুমি এখন যাও। আমার মা আইসা পড়বো।
সাইকেলটা নিয়ে দ্রুত উঠে পড়ল শিমুল। দ্রুত সাইকেলে টান দিয়ে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো। এই ভরদুপুরের কাঠফাটা রোদ, রৌদ্রোজ্জ্বল সোনালী দিন সবকিছুই কেমন যেন ম্লান হয়ে গেল চিত্রা ও রুবিনার আছে। কে জানে সামনে তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে? সবকিছু কি তাদের পরিকল্পনা মত হবে? নাকি ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে তাদের জন্য?

জোসনা বেগম বাড়ি ফিরে দেখলেন তার মেয়ের ঘরের টিনের বেড়া কাটা। ছেলের বিয়ের কিছুদিন আগেই নতুন টিন দিয়ে তিনটা ঘর তুলেছিলেন। ঘরের সামনে লম্বা বারান্দাও ছিল। মেয়ের ঘরের এই দশা দেখে তিনি হাউমাউ করে উঠলেন। দৌড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লেন, হায় আল্লাহ আমার এই সর্বনাশ কে করল? কেমনে হইল এইসব?
চিত্রা ও রুবিনা যেন এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই ছিল। রুবিনার প্রায় প্রতিদিন দুপুর বেলা ঘুমানোর অভ্যাস। সেই অভ্যাসটাকে কাজে লাগিয়ে রুবিনা উত্তর দিল, আম্মা আমি ঘুমাই ছিলাম। হঠাৎ কইরা জোরে জোরে শব্দ শুইনা ঘুম ভাইংগা গেল। দেখি কে জানি আমার ঘরের বেড়া কাটতাছে। আমি একটা চিৎকার দিছি। চিৎকার শুইনা ভাবি পুকুর ঘাট থাইকা দৌড়াইয়া বাড়ি আইছে। আইসা কাউকে দেখে নাই।
হায় আল্লাহ আমার মাইয়া এগুলো কি কয়? ঘরের বেড়ায় কে কাটব। তাও দিন দুপুরে। তুই কি দুয়ার আটকাইয়া ঘুমাইছিলি?
হ মা। আমি দুয়ার আটকাইয়া ঘুমাইছিলাম।
তোর ভাবি পুকুর ঘাটে আছিল?
ভাবী গোসল করতে গেছিল। আমি দরজা আটকাইয়া দিয়া ঘুমাইয়া গেছিলাম। শব্দ শুইনা ঘুম ভাইঙ্গা গেছে।
জোসনা বেগম ছুটে এসে মেয়েকে একবার জড়িয়ে ধরলেন। সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিয়ে তিনি অস্থির হয়ে এদিক সেদিক তাকালেন কয়েকবার। এরপর বিলাপ করতে করতে বললেন, আমার এই সর্বনাশ কে করল? কে আইছিলো বাড়িতে? তাও শব্দ কইরা কোপ দিয়া গেছে।
চিত্রা এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল। এবার সে এগিয়ে এসে বলল, আম্মা সব দোষ আমার। আমার উচিত ছিল রুবিনারে ঘুম থাইকা তুইলা তারপর গোসলে যাওয়া। আমি গোসল কইরা কেবল কাপড় শুকাইতে দিছিলাম। রুবিনার চিৎকার শুইনা বাড়ি আইসা দেখি এই অবস্থা।
– কি সর্বনাশে কথা গো? সর্বনাশটা আমার কেডা করলো? আমার ঘরে জুয়ান মাইয়া, জোয়ান বউ। কোন সর্বনাশের উদ্দেশ্যে কে যে আইছিল?
আঙিনার মাঝখানে বসে জোসনা বেগম বিলাপ করে করে কথাগুলো বলতে লাগলেন। মুহূর্তেই পাশের দুই বাড়ি থেকে ছুটে এলেন বউ-ঝিরা। সবাই ঘটনা শুনে রীতিমত অবাক। তবে অবিশ্বাস করার মত কিছু হয়নি। কিছুদিন আগেই এক বাড়িতে দুপুরবেলা যখন কেউ ছিলনা তখন যুবতী মেয়ের ঘরে ঢুকে পড়েছিল এক বয়স্ক লোক। এরকম মাঝে মাঝেই শোনা যায়। হয়তো রুবিনার সঙ্গে সেরকম কিছু ঘটার কথা ছিল। আরেক পক্ষ বলছে সেটা নাও হতে পারে। সেরকম ইচ্ছা থাকলে নিঃশব্দে তারা ঘরের ভেতর ঢুকতো। শব্দ করে টিনের বেড়া কাটতো না। হতে পারে কেউ একজন রুবিনাকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল। ঘরে যুবতী মেয়ে থাকলে বাবা-মাকে ভয় দেখিয়ে অনেকে মজা পায়। তাছাড়া জোসনা বেগম মনে করেন তার অনেক শত্রু আছে। আড়ালে আবডালে কে কার শত্রু সেটা তো বোঝার উপায় নেই। হতে পারে কেউ শত্রুতা করে ভয় দেখাতে এসেছিল রুবিনাকে। যাতে ভয় দেখিয়ে তাদেরকে এক ঘরে করে দেয়া যায়। জোসনা বেগম কি করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। একজনের মাধ্যমে খবর পাঠালেন দোকানে। মুহূর্তেই বাসায় চলে এলেন তার স্বামী। ঘটনা শুনে তিনি বিহ্বল হয়ে ঘরের বেড়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। কোন শত্রু এই কাজ করতে পারে তিনি ভাবছেন সেটা। অনেক সময় কোনো খারাপ উদ্দেশ্য না থাকলেও কেবলমাত্র ঝগড়া করার জন্য অনেকে এই ধরনের কাজ করতে পারেন।
জোসনা বেগম বলেন, আপনার মনে নাই রায়হানের মা একবার আমার লাউয়ের জাংলার গোরা কাইটা দিছিল। গাছ ভর্তি কইরা লাউ ধরছিল গো। সব বড় হইলে খাইয়া গ্রামবাসীদের দিয়াও মেলা টাকা বিক্রি করতে পারতাম। এইরকম লাউ এই গ্রামে কারো গাছে ধরে নাই। রায়হানের মা আমার গাছের গোড়ায় কাইটা দিছিল। আপনার মনে নাই?
উত্তরে রূপকের বাবা বললেন, আজকাল তো আমাগো সেরকম শত্রু কেউ নাই।
– শত্রু তো আর মুখে কইয়া বেড়াইবো না। বাজারে আমাগো বড় দোকান। আমার পোলায় আবার দোকান বাড়াইয়া দর্জি দোকান দিছে। সংসার ভালোমতো চলতাছে। পোলারে বিয়া দিছি। মাইয়াডা ডাঙ্গর হইছে। ঘরের ধানের ভাত খাইতাছি । জমিজমা বন্ধক লইসি। এখনতো শত্রু লাগবোই। আপনে বুঝতাছেন না?

চিত্রা ও রুবিনা এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলল না। তবে রুবিনা এমন একটা ভাব করতে লাগল যেন সে ভয়েই জড়োসড়ো হয়ে গেছে। তবে এই ঘটনা সাজানোর ফলের একটা লাভ হল। বাড়ির সবাই এখন এটা নিয়েই ব্যস্ত। রাত্রিবেলা রূপক বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত রুবিনা চিত্রার ঘরে শুয়ে রইলো। ভাবি ও ননদ মিলে বিড়বিড় করে তারা সুখ-দুঃখের গল্প বলছিল।
চিত্রা একবার জানতে চাইল, তুমি যে কাজটা করছো। তোমার দিলে কি একটু ভয় ডর নাই? তোমার যদি অন্য কারো লগে বিয়া হইয়া যায়। সে যখন তোমার লগে থাকব। তখন তো বুইঝা যাইব।
কি বুইঝা যাইবো ভাবি?
বুঝনা তুমি? সবকিছুই তো বুঝ। এইটা বুঝতাছ না?
না, ভাবি বুঝি নাই।
আমার লগে মজা নিয়ো না রুবিনা। সব কিছু বুইঝাও না বোঝার ভান করোন আমি পছন্দ করিনা। একটা মাইয়ার লগে তার স্বামী শুইলেই বুঝতে পারে মাইয়া কি কুমারী নাকি কুমারী না। বিয়ের প্রথম রাইতে যখন আদর সোহাগ করে তখন মাইয়াগো অনেক কষ্ট হয়। রক্তে বিছানা ভিইজা যায়। আর যে মাইয়া বিয়ার আগেই এসব কাম কইরা ফালায় বিয়ের রাতে তার কষ্ট হয় না। তার জরায়ু থেকে রক্ত বাইর হয় না।
রুবিনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, হাছা কতা কইতাছ ভাবি? এইটা কি আসলেই হয়?
কেনো তুমি জানো না?
না, জানতাম না। আপনারও হইছিল?
হ, প্রথম রাতে মেলা কষ্ট হইছিল। ভোরে ঘুম থেইকা উইঠা আগে বিছানার চাদর ঘাট বিয়া দিছিলা। ছবি তো দেখছো। আবার জিগাইতাছ?
রুবিনা নিশ্চুপ হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না। গম্ভীর হয়ে শুয়ে রইলো। অনেক রাত পর্যন্ত রুবিনা আর কোন কথাই বলল না। রাতের নিস্তব্ধতা তখন চারপাশ ঘিরে ধরল। চোখে ঘুম চলে এসেছিল চিত্রার। হঠাৎ শুনতে পেল রূপকের গলা।
ভাত খেয়ে নিজের ঘরে শুতে এলো রূপক। জোসনা বেগম রুবিনাকে একা শুতে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। তাই আজ রাতে তিনি নিজে ঘুমালেন রুবিনার সঙ্গে।
বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে রূপক বলল, এই কাম কে করছে আমি খুইজা বাইর করমু। তুমি একদম ভয় পাইও না বউ।
আমি আমার লাইগা ভয় পাইতাছি না। ভয় হইতাছে রুবিনার লাইগা। আমার ঘরে কোপ দিলে একটা কথা আছিল। আমার ঘরেও তো দেয় নাই। দিনের বেলা কাইটা ফেলছে রুবিনার ঘরে। চিন্তা হইব না কন?
তোমার এত চিন্তা করতে হইবো না। তুমি এখন চিন্তা একদম করবা না। দুনিয়ার সব বিষয় নিয়ে চিন্তা করার লাইগা আমি আছি আব্বা আম্মা আছে। তুমি নিজের দিকে খেয়াল রাখো।
চিত্রা রূপকের গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর মৃদু স্বরে বলল, আপনারে একখান কথা কই?
কও।
কইতাছি রুবিনা তো বড় হইছে। এখন অর একটা বিয়ের ব্যবস্থা করলে কেমন হয়?
এত তাড়াতাড়ি? আমি আরেকটু আয় উন্নতি করি। কিছু জমিজমা কিনি তারপর।
– জমিজমা দিয়া রুবিনার কাম কি? সে থাকবো শ্বশুরবাড়ি। আপনি আবার ভাইবেন না আমি ননদরে তাড়াইয়া দিবার কইতাছি। বাড়িতে মানুষের নজর পড়ছে। কখন কি হয় কওন যায়? রুবিনার একটা বিয়ের ব্যবস্থা করলে আমার মনে হয় খারাপ হইবো না। ভালোই হইবো।। আপনি একটু চিন্তা ভাবনা কইরা দেইখেন।
– আচ্ছা, দেখবনে। আমার পোলায় কেমন আছে?
– আমি কেমনে কমু? পোলারে জিগান।
রূপক চিত্রার পেটের উপর হাত রেখে বেশ আদুরে গলায় ডাকলো, আব্বাজান ও আব্বা জান। আপনি কেমন আছেন?
চিত্রা বলল, একটা কথা কমু। ভয় করতাছে।
– কইয়া ফালাও। ও আমার আব্বাজান। কেমন আছেন আপনি?
চিত্রা বলল, আপনি খালি আব্বাজান কইতাছেন কেন? সে তো আম্মাজান ও হইতে পারে। আপনার বোধহয় অাব্বাজান নিয়ে অনেক আশা। আম্মাজান হইলে আপনি বোধহয় অনেক কষ্ট পাইবেন।

অনেকক্ষণ পর্যন্ত রূপকের কোন কথা শোনা গেল না। কেবল নিঃশ্বাসের শব্দ চিত্রা স্পষ্ট শুনতে পেল। এই শব্দে বুঝতে পারল না আসলেই কন্যা সন্তান হলে রূপক কষ্ট পাবে কিনা।

দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েকটা দিন। এরমধ্যে শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি রুবিনার। ফোনে কথা বলতে গেলে তাকে বাড়ি থেকে বের হতে হবে। কিন্তু সেই সুযোগটা আপাতত পাচ্ছে না। মা সারাক্ষণ রুবিনাকে চোখে চোখে রাখছে। সতর্ক হয়ে আছে পুরো পাড়া। এই মুহূর্তে শিমুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে নিশ্চিত ভাবে কেউ না কেউ বিষয়টা জেনে যাবে। তাই চুপচাপ নিজের মতই আছে রুবিনা। শিমুল যদি তাকে ভালোবেসে থাকে তবে নিজে থেকেই সে যোগাযোগ করবে। তবে প্রত্যেকটা মুহূর্ত কাটছে ভয়াবহ দুশ্চিন্তার মধ্যে দিয়ে। কখন সে ধরা পড়ে যায়, কোন ভয়াবহ দুর্বিসহ যন্ত্রনা নেমে আসে তার জীবনে, তাকে ও তার পুরো পরিবারকে গ্রামের সবার সামনে অপদস্ত হতে হয় কিনা সে সব ভেবে রাত্রি বেলা ঘুম হয়না রুবিনার। দুশ্চিন্তায় সে শুকিয়ে যাচ্ছে। সারাক্ষণ এলোমেলো লাগে তার। জোসনা বেগম ভাবেন আকস্মিক ঘরের বেড়া কাটার মত দুর্ঘটনায় হয়তো তার মেয়ে মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছে। তাই এমন দেখাচ্ছে রুবিনাকে। বিষয়টা নিয়ে তিনি খুব একটা পাত্তা দিলেন না। দিনের বেশিরভাগ সময়ে রুবিনা চিত্রার সঙ্গে কাটায়। এতে করে একটা সুবিধা হয়েছে। তার শারীরিক কোনো অসুবিধার কথা জোসনা বেগমের চোখে পড়ছে না।

চিত্রা সাহস করে পাশের বাড়ির সাবিনার মোবাইল থেকে শিমুলের কাছে কল করলো। ভেবেছিল কলটা হয়তো রিসিভ হবে না। কিন্তু তাকে আশ্চর্য করে দিয়ে রিসিভ করল শিমুল। চিত্রা ফিসফিস করে বলল, আমি তোমার ভাবি কইতাছি। চিনবার পারছ?
হ, ভাবি। কেমন আছেন? রুবিনা কেমন আছে?
– ভালোই আছে।
– সাবিনা আপার ফোনে কয়েকদিন কল দিছিলাম। আপা কইল রুবিনা নাকি বাড়ি থাইকা বাইর হয় না। কে নাকি ঘরে টিনের বেড়া কাইটা দিয়া গেছে।
– তুমি তো সবই জানো।
– হট ভাবি। সেজন্য আমিও আর চেষ্টা করি নাই।
– চেষ্টা করো নাই মানে। তুমি অহন কই আছো?
– আমি তো ঢাকায় আইছি।
– আম্মা সারাক্ষণ রুবিনা রে চোখে চোখে রাখে। সেই জন্য বেচারি তোমারে ফোন করতে পারেনাই।
– আমি সাবিনা আপার আছে শুনছি। ভাবি শুনেন। আমার এখনো কোন কাম হয় নাই। ঢাকা শহরে কাম পাওয়ার এত সহজ কথা নয়। পরিচিত ভাই বেরাদার থাকতে হয়। এইখানে আমার কেউ নাই। আমার এক দোস্তরে কইছি। কাম যোগাড় কইরা দিব। কিন্তু সময় লাগবো কিছুদিন।
– ভাই তুমি তো সবই বুঝো। বাড়ির পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ। এখন আর কেমনে সময় নিবা? যা করার তাড়াতাড়ি করতে হইবো।
– আমারে কি করতে কন ভাবি? ঢাকায় আইসি কয়টা দিন হইল। এখনো কোন কাম যোগাড় করতে পারি নাই। এর মধ্যে কেমনে বাড়িতে বিয়ার কথা কমু?
– তুমি কি কইছিলা মনে নাই? কাম না হইলেও তুমি বিয়ার কথা কইবা। এছাড়া আর কোন উপায় নাই। মান-ইজ্জত সবার আগে। মান ইজ্জত বাচাইতে দুই-চারটা মিথ্যা কথা কইলে কিছু হইব না। তুমি বাড়িতে কল কইরা তোমার মায়েরে কইবা তুমি রুবিনারে বিয়া করতে চাও। রুবিনা লাইগা তুমি ঢাকা শহরে গেছে। এইডাও কইবা যেদিন তুমি ঢাকায় গেছো ঐদিন রুবিনার বাড়িতে একটা ঝামেলা হইছে। কে জানি রুবিনার ঘরে দা দিয়া কোপাইয়া টিনের বেড়া কাইটা ফেলছে। এখন রুবিনার ভাই ওরে তাড়াতাড়ি অন্য জায়গায় বিয়া দিতে চায়। তুমি ওরে নিয়া ভয় পাইতাছ। তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাও। বিয়া কইরা তুমি ওরে নিজের কাছে নিয়ে যাইবা। আজকের মধ্যেই কথাটা তুমি তোমার মায়েরে জানাও। আমি কি কইছি বুঝছ?
শিমুল কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। চিত্রা বলল, ভাই তুমি তো সবই বুঝো। রুবিনা খুব বিপদের মধ্যে আছে। আমরা সবাই খুব বিপদের মধ্যে আছি। যত তাড়াতাড়ি পারো এটার ফয়সালা কইরা ফেলো।
– ঠিক আছে ভাবি। আমারে দুইটা দিন সময় দেন।
– সময় দিতে পারুম না। রুবিনার শইলটা ভাল না। শইল খারাপ হইয়া গেলে আম্মা বুইঝা ফেলবো। তুমি আর দেরী কইরো না। তুমি আজকেই বাড়িতে কথাটা জানাইয়া দাও। তোমার এই বইনের অনুরোধ টা রাখ। তোমার পায়ে পড়ি ভাই। আমাগো মান-ইজ্জতের কথা একটু চিন্তা করো।
– এমন কইরা কইয়েন না ভাবি। আমার নিজেরও তো মান ইজ্জত আছে। ঘটনা যে এমনে ঘইটা যাইব আমিতো সেটা জানতাম না। চিন্তা কইরেন না। আপনি আমারে ভাই ডাকছেন। আমি দেখতাছি।
– দেখতাছি কইলে হইব না। সত্যি সত্যি দেখতে হইবো। ভালো থাইকো। সুযোগ পাইলে কাইল আবার তোমারে কল দিমু।

চিত্রা বাড়ি ফিরে এল। তার চিন্তা হচ্ছে রুবিনার জন্য। শিমুলের কথায় যথেষ্ট ভরসা পেলেও তার দুশ্চিন্তা কমছে না। শিমুলের পরিবার বিয়ে দিতে রাজি হবে কী না সেটাই আসল কথা। এত সহজে কোনো মা বাবা ছেলের বিয়ে দিতে রাজি হয় না।

চলবে..