দ্বিতীয় পুরুষ পর্ব-২৭+২৮

0
256

#দ্বিতীয় পুরুষ
পর্ব ২৭+২৮
নীলাভ্র জহির

আজ রুপক ভরসন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেই চিত্রার হাত ধরে ঘরের ভেতরে টেনে নিয়ে আসলো। মুখোমুখি দাড়িয়ে জানতে চাইল, একটা সত্যি কথা কইবা?
কোন কিছু বুঝতে না পেরে চিত্রা থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইল। ঘাড় বেঁকিয়ে বলল, কি কথা?
তোমার কি আগেও একবার বিয়ে হইছিল?
প্রশ্নটা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো চিত্রা। নিজেকে সামলে নিতে পারল না। মনে হচ্ছে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। সমস্ত পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে তার। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। কথা বলার মতো অবস্থায় রইল না সে।
রূপক আবারো জানতে চাইলো, চুপ করে রইছো কেন? কও তোমার কি আগে একবার বিয়ে হইছিল?
চিত্রা বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করল। মৃদুস্বরে শুধু বললো,, এই কথা আপনার কে কইলো।
কে কইছে সেইডা তোমার শুনতে হইবো না। তুমি শুধু কইবা কথাটা সত্য নাকি মিথ্যা। আমি আর কিছুই শুনতে চাইতেছি না। তোমার আগে একবার বিয়ে হইছিল? কথাটা সইত্য। নাকি মিথ্যা শুধু সেইডা কইবা।

ভীষণ দোটানায় পড়ে গেল চিত্রা। বুঝতেই পারলো না এই মুহুর্তে তার কি করা উচিত। এত বড় সত্য কিছুতেই সে চাইলে লুকিয়ে যেতে পারবে না। যেখানে রূপকের কান পর্যন্ত কথাটা পৌঁছে গেছে সেখানে এখন আর লুকিয়ে রাখার কোন মানেও হয়না।
চিত্রা মাথা নিচু করে ফেলল। উপর নিচে মাথা ঝাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল সত্য। কিন্তু আমার সব কথা আপনাদের শুনতে হইবো। সব কিছু না শুইনা আপনি কিছু করতে পারবেন না।
মুহূর্তেই যেন রূপকের চেহারায় অন্য কেউ এসে ভর করল। চোখ দুটো বিস্ফোরিত হয়ে জ্বলে উঠলো তার। মনে হল তার বুকটা বোধহয় যন্ত্রনায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। বুক চেপে ধরে চৌকির উপর বসে পড়ল। মৃদু স্বরে বলল, শেষ পর্যন্ত আমার জানের দোস্ত আমারে ঠকাইলো। সবাই আমারে ঠকাইলো। যারে আমি এত ভালোবাসলাম সেও ঠকাইলো আমারে। তুমি কেমনে পারলে আমারে ঠকাইতে?
কথাগুলো যেন চিত্রার কান দিয়ে নয় বুক ফুঁড়ে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। কি উত্তর দিবে বুঝতে না পেরে দিশেহারা হয়ে তাকিয়ে রইল চিত্রা। তার বুকের ভেতর ক্রমাগত যে আর্তনাদ হচ্ছে তা কীভাবে সে রূপক কে দেখাবে? রূপকের হতাশ মুখ দেখে ভীষণ কষ্ট হতে লাগল তার।
চিত্রা রুপকের কাঁধে হাত রেখে বলল, আপনি আমার কথাগুলো শুনেন। না শুইনা কাউরে দোষ দিয়েন না।
কাউরে তো দোষ দিতেছি না। দোষ আমার ভাগ্যের। ভাগ্যে ছিল বইলাই আমার দোস্ত আমার লগে বেইমানি করছে। তার বইনের বিয়া হইছে সেই কথা আমার লগে লুকাইয়া তারে আবার আমার লগে বিয়া দিছে। বেইমানি করছে আমার দোস্তের পরিবার। বেইমানি করছো তুমি। তুমি এমন ভাবে আমার লগে অভিনয় করছ যেন আমি তোমার জীবনে প্রথম পুরুষ। সবাই বেইমান।
চিত্রার চোখ ফেটে জল চলে এলো। কিছু বলতে পারলো না। কথা বলতে গিয়ে বুঝতে পারলো তার গলা ধরে এসেছে। চোখ বেয়ে টলটল করে জল গড়িয়ে পড়ল মাটিতে।
রুপক বলল, একটা কথা মনে রাইখো। সত্য কখনো চাপা থাকেনা। যতই চেষ্টা করো সেটা কোন না কোনদিন প্রকাশ পায়বই। এত বড় সত্য লুকাইয়া তোমরা কামডা ঠিক করো নাই। আজ কেমনে তুমি আমার বিশ্বাস ভাইঙ্গা দিছো আর কোনদিনও তোমার উপরে আমার বিশ্বাস আইবো না।

দরজা খুলে গটগট করে ঘর থেকে বেরিয়ে রূপক বাড়ির বাইরে চলে গেল। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল চিত্রা। রূপকের সঙ্গে তার কথা বলা দরকার। সবকিছু খুলে বলা দরকার তাকে। চিত্রা দৌড়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এলো। ততক্ষনে অন্ধকারে আড়াল হয়ে গেছে রূপক। কোথায় গেলো কে জানে?
চিত্রা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইল মূর্তির মতন। যে ভয়টা বিয়ের প্রথম দিন থেকেই সে পাচ্ছিল আজকে সেটা ফলে গেল। রূপকের চোখে সে একজন বেইমান। সবকিছু খুলে বলার পরও হয়তো সম্পর্কটা আর কখনো স্বাভাবিক হবে না। বেইমান হয়ে থাকতে হবে তাকে। কি করবে চিত্রা এখন? তার খুব পাগল পাগল লাগছে।
চিত্রা নিজের পেটে হাত রাখল। তার গর্ভে রূপকের সন্তান। তার তার ভবিষ্যৎ কি হবে? সে আপন মনে বলল, বাবারে তোর অসহায় মা এখন কই যাবে? যারে জীবনে প্রথম ভালোবাসিলাম সে আমারে বেইমান বলল। কেমনে বুঝাবো আমি তারে? সে যদি আমারে ভুল বুঝে, আমারে ছাইড়া চইলা যায়। তোরে লইয়া আমি কই গিয়ে দাঁড়ামু।
পথে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো চিত্রা। তার কান্নার শব্দে জোসনা বেগম এসে দাঁড়ালেন। জানতে চাইলেন কি হইছে? রূপকরে দেখলাম বাড়িতে আইছিল। কিছু কইছে তোমারে?
কথা বলতে পারল না চিত্রা। পথের মাঝখানে পড়ে বসে পড়ল। জোসনা বেগম আর্তনাদ করে উঠলেন, ও বউ। এখানে বইলা কেন? কি হইছে আমারে কও?
চিত্রা জোসনা বেগমের পা জড়িয়ে ধরে বলল আমার সব শেষ হইয়া গেছে আম্মা।
জোসনা বেগম নিজেও চিত্রার পাশে বসলেন। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন, কি হইছে আমারে কও। রুপক তোমারে কী কইছে।
সব শেষ হইয়া গেছে আম্মা।
আরে কইবা তো।
চিত্রা কোন কথা বলল না। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। তার গগনবিদারী কান্না আকাশ পাতাল ফুঁড়ে যেন সপ্ত আসমানে চলে যাচ্ছে। এমন অসহায় এভাবে কখনো কাউকে কাঁদতে দেখেননি জোসনা বেগম। পাছে গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে যায় এই ভয়ে তিনি চিত্রাকে টানতে টানতে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন। ঘরে গিয়েও চিত্রার কান্না থামল না।
ধীরে ধীরে রাত বাড়তে লাগল। বাড়ি ফিরল না রূপক। অর্ধমৃতের মত বিছানায় পড়ে আছে চিত্রা। চোখ দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে গরম জল। সেই জলে ভিজে যাচ্ছে বালিশ। কিন্তু মুখে তার কোন শব্দ নেই। সবকিছু যেন থমকে গেছে হঠাৎ।

অনেক রাত হয়ে গেলে বাড়ি ফিরে আসলো রূপক। তবে ঘরে প্রবেশ করল না। মাকে ডেকে ভাত দিতে বলে দিল। জোসনা বেগম কোন প্রশ্ন না করে ছেলেকে ভাত খেতে দিলেন। দরজার আড়াল থেকে তাকিয়ে রইল চিত্রা। রূপক স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ভাত খাচ্ছে। জোসনা বেগম মৃদুস্বরে জানতে চাইলেন, বউরে কিছু কই ছিলি নাকি?
রূপক শুধু চোখ তুলে একবার মায়ের দিকে তাকালো। কোন উত্তর দিল না।
জোসনা বেগম কি বুঝলেন কে জানে। মৃদু স্বরে বললেন, খুব কান্নাকাটি করতাছে সন্ধ্যা থাইকা। তুই মনে হয় খারাপ আচরণ করছস। কিছু কইস না। পোয়াতি মাইয়া। এত কান্নাকাটি করোন ভালো না।

রূপক একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ওর কথা বাদ দাও।

কষ্টে বুকটা ফেটে যেতে লাগল চিত্রার। তার কথা রূপক বাদ দিতে বলছে। অথচ এই রূপক দুদিন আগেও মায়ের কাছে তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতো। ভালোবাসার নিবিড় বন্ধনে আগলে রাখত তাকে। এক কালবৈশাখী ঝড় সবকিছু নিমিষেই তছনছ করে দিয়ে গেল। এখন কি নিয়ে বাঁচবে সে?

জোসনা বেগম বলেন, তোর বউরে ডাক। ভাত খাইতে ক। না, খাইয়া রইছে। পোয়াতি মানুষ না খাইয়া থাকুন ভালো না।
আমার খাওয়া হইয়া গেলে তারে ডাইকা ভাত খাওয়াইয়া দিও।
চিত্রার বুকের ভেতর যেন উত্তাল স্রোত ধাক্কা দিল। তার স্বামী এই প্রথম তাকে রেখে খাবার খাচ্ছে। আর বলছে তার খাওয়া হয়ে গেলে যেন তাকে খাইয়ে দেয়া হয়। সে অভিমানে না খেয়ে রয়েছে এতে তার কিছুই যায় আসে না। অবশ্য কেনইবা যায় আসবে। তার চোখে সে একজন বেইমান।

চিত্রা কাঁপতে কাঁপতে বিছানায় এসে বসলো। চোখ মুছে মনে মনে ভাবল, এত ভেঙে পড়লে চলবে না। তাকে শক্ত হতে হবে। জীবনের সঙ্গে যা ঘটে গেছে তাকে চাইলেই মানুষ কখনো এড়িয়ে যেতে পারে না। সেই সত্যগুলো সারাজীবন ঘুরেফিরে মানুষের সামনে আসবেই। সেগুলোকে সামাল দিতে হবে। একদিন না একদিন এই সত্যের মুখোমুখি তাকে হতেই হত। চিত্রা নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করলো। রূপকের মুখোমুখি হয়ে তাকে সবকিছু জানাতে হবে। তার জীবনের কঠিন অতীতের কথা জানলে নিশ্চয়ই তাকে ক্ষমা করে দিবে রূপক।

রূপক ভাত খেয়ে ঘরে এসে ঢুকলো। চিত্রার সঙ্গে কোনো কথা না বলে শুয়ে পড়ল বিছানায়। কিছুক্ষণ পর কথা বলল চিত্রা, আপনে আমার কথা শুনবেন না?
কোন উত্তর নেই রূপকের। চিত্রার কান্না এলো। এভাবে কখনও তার সঙ্গে রূপক রাগ করে থাকেনি। তার প্রিয় রূপক তার সঙ্গে কথা বলছে না। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে?
চিত্রা বলল, কথাগুলান আপনার শুনতে হইবো। না শুইনা আপনি আমারে দোষারোপ করতে পারবেন না। হ আমি বেইমান। আমি আগের বিয়ের কথা আপনার কাছে লুকাইছি। কিন্তু ক্যান লুকাইছি সেইটা আপনার শোনা দরকার।
বিয়া মনে হইয়া থাকুক আর যেমনেই ভাইঙ্গা দিয়া থাকুক। সত্য হইতাছে তোমার আগে বিয়ে হইছিল। তার চাইতে বড় সত্য হইতাছে যে বন্ধুরে আমি আমার আপন মানুষ মনে করতাম সে নিজেও এই সত্যটা লুকাইয়া তোমারে বিয়া দিয়ে দিছে। এর চাইতে বড় কষ্ট আর কিছু নাই।
আমার জায়গায় আপনি থাকলে আপনে ও ওইটাই করতেন। সব কথা আপনার শোনা লাগবো। আমি মাইনা নিসি যে আমিও ভুল করছি। এই সত্যটা গোপন কইরা বিয়া দেওয়াটা উচিত হয় নাই। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেন আমি মানুষটা খারাপ না। আমারে অন্তত বিশ্বাস করেন।
আমার কারো উপর বিশ্বাস নাই।
রূপক অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। চিত্রা বলল, বিশ্বাস না হওন স্বাভাবিক। আপনি এই পাশে ফিরেন। আমার অনেক কথা কওনের আছে আপনারে।
তোমার কথা শোনার কোন টাইম আমার নাই। কোন ইচ্ছাও নাই। জীবনে মনে হয় অনেক পাপ করছিলাম। সেই জন্য মানুষের কাছ থাইকা আমার শুনতে হয় আমার বউয়ের আগে বিয়ে হইছিল। মানুষের কাছে আমার ছোট হইতে হয়। হাসির পাত্র হইতে হয়। কোন পাপের শাস্তি পাইতাছি আল্লাই জানে।

চিত্রা বলল, আমি আপনার সব কথা শুনমু। তার আগে আপনার আমার কথাগুলো শুনতে হইবো।
কি কথা কইবা তুমি? যার লগে তোমার বিয়ে হইছিল সে নিশ্চয়ই অনেক খারাপ আছিল এইটা কইবা? তোমারে অনেক নির্যাতন করছে। তাই তার লাগে তোমার ছাড়াছাড়ি হইয়া গেছে। তোমার এখানে কোন দোষ নাই। তুমি, তোমার বাপ, তোমার চৌদ্দগুষ্টি ধোয়া তুলসী পাতা। সব দোষ আমার। আমার পরিবারের। কারণ আমরা ভালোমানুষি দেখাইছি। আমার দোস্ত কইছে আর আমি কোন ভাল-মন্দ খোঁজখবর না লইয়াই চোখ বন্ধ কইরা তোমারে বিয়া কইরা ফেলছি। মানুষে বিয়ে করার আগ মাইয়ার বংশ দেখে। পরিবারের সব খোজ-খবর শুইনা তারপরে বিয়ে করে। আর আমি আমার বন্ধুরে বিশ্বাস কইরা ছাগলের বাচ্চার মত বিয়া কইরা ফেলছি।

চিত্রা দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো হজম করলো। সে অসহায়। আজ না হলেও দুদিন পর তাকে এই কথাগুলো শুনতে হবে। তার কপালটা এতটাই খারাপ যে সারাজীবন কথা শুনে এসেছে। বাকি জীবনটাও তাকে কথা শুনেই কাটিয়ে দিতে হবে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চিত্রা বলল, আমার স্বামী আমারে নির্যাতন করে নাই। যেটা করছে সেটা শুনলে আপনের বিশ্বাস হইবো না।
তোমার স্বামী না? এমন কইরা কইতাছো। থাক আমি আর মুখটা খারাপ করলাম না। ভাবতে ঘেন্না লাগতেছে আমি তোমার জীবনে দ্বিতীয় পুরুষ।
আমার জীবনে প্রথম পুরুষ দ্বিতীয় পুরুষ বইলা কিছু নাই। আমি আমার জীবনে আপনেরে প্রথম ভালোবাসছি। সব উজার কইরা ভালোবাসছি। আমার শরীরে আপনি প্রথম হাত দিছেন। আপনার আগে কোন পুরুষ আমারে ছুঁইতেও পারে নাই।
কেন? তোমার আগের স্বামী তোমার এমনি এমনি ছাইড়া দিছে? ছুঁইয়া দেখেনাই?
না, ছুঁইয়া দেখেনাই। আমি ছুঁইয়া দেখতে দেই নাই। এইজন্য কইতাছি আপনি আমার কথাগুলো শুনেন।
কি শুনতাম? আবার কোন নাটক বানাইয়া বানাইয়া আমার একটু শুনাইবা। মাইয়া মানুষ রে আমি ভালোমতো চিনি। সুযোগ পাইলে তারা যেমন চোখের জল দিয়া পুরুষ মানুষকে বশ মানাইতে পারে। তেমনি যখন তখন মনগড়া নাটক বানাইয়া মানুষ রে বোকাও বানাইতে পারে।
আমি কোন নাটক বানানোর মত মাইয়া না। সেইটা আপনি ভালো কইরাই জানেন।
হ কিন্তু ভুল জানছি। তো সত্যটা আমারে জানাও। একটা পুরুষ মানষের লগে তোমার বিয়ে হয়েছে অথচ সেই তোমারে ছুঁইয়া দেখেনাই। তার লগে তুমি হুদাহুদি সংসার করছো।
তার লগে আমার কোন সংসারও হয় নাই। বিয়ের রাইতে আমি পলাইয়া আছি।
বিয়ার রাতে পলাইছো? শেষ পর্যন্ত আমার এইডা শোনা লাগলো। কি এমন ঘটছিল যে তোমারে বিয়া রাইতে পলাইতে হইল?
চিত্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। রূপক কঠিন চোখে তার দিকে চেয়ে আছে।

চিত্রা বললো, আমার সওয়ামী আমারে বিয়ের রাইতে বেইচ্যা দিছিলো। বিশ্বাস হয়?
এতক্ষণ পর মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল রূপক। না, তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না। চিত্রা বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বলল, অহন কইলে তো বিশ্বাস করবেন না। ওই লোক আমারে টাকার জন্য বিয়া করছিল। আমার সহজ সরল বাপটা সেটা বুঝে নাই। আমার বাপের পিছেপিছে ঘুরছিল আমারে বিয়া করার লাইগা। বাজারের একটা শুটকির দোকান দেখাইয়া কইছিল এইটা তার দোকান। আমার বাপ তো খুব বোকা, পাগলা মানুষ। অত কিছু খোঁজ খবর নেয় নাই। ভাবছে ভালো একটা পোলা পাইছি মাইয়াডারে বিয়া দিয়া দেই। দু চারজন পরিচিত মানুষজনকে লইয়া বিয়া পরাইয়া দিছিল। আমার আত্মীয়-স্বজন বলতে এক ফুপুই আছে। ফুপুরে আব্বা কিছু জানায়ও নাই। বিয়ে পড়ানোর পর ওই লোক আমারে নিয়া একটা বাড়িতে আইসা ওঠে। আমি ভাবছিলাম আমার শশুর বাড়ি। বাড়ি তো না, খালি একখান ঘর। আর কোন মানুষজন আছিল না। আব্বার কাছে শুনছিলাম পোলা একা। ঘরে একখান চৌকি আছিল। ঐখানে আমি বইসা ছিলাম। অপেক্ষা করতেছিলাম আমার সোয়ামি কখন ঘরে আইব। অপেক্ষার পর যে লোকটা ঘরে ঢুকছিল সে আমার সওয়ামী ছিল না। ভয়ংকর দেখতে এক লোক আইছিল। বিশ্বাস হয়?

রূপক চোখ বড় বড় করে চিত্রার দিকে তাকিয়ে আছে। সত্যি বলতে তার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। তার প্রিয়তম চিত্রাএ সঙ্গে এমন ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে গিয়েছে ভেবে শিউরে উঠল গা।
চিত্রা বলল, এখন আমি যদি সত্যিটা কই আপনে বিশ্বাস করবেন না। ভাববেন যার কাছে বিয়া দিছে সে আমারে শেষ কইরা দিছে। সে যে আমারে শেষ করে নাউ এটা আপনি ভালো কইরাই জানেন। আপনার লগে বিয়ের রাতে কি হয়েছিল আপনি তো সবই জানেন। রাইতে আপনি সোহাগ করার পরে বিছানার চাদর রক্তে ভাইসা গেছিল। আমি মাইয়াডা যে কুমারী ছিলাম এটার প্রমাণ পাইয়া গেছেন। ওই রাইতে ওই লোকটার লগে দুই চারটা কথা কইয়া তারে ধুলা দিয়া আমি পলাই আইসি। সারাটা রাত এক জায়গায় বইসা কাটাইয়া দিছিলাম। সকাল হইতে গিয়া উঠছি আমার ফুফুর বাড়িতে। সব শুইনা ফুপু আমারে আর ঘর থাইকা বাইর হইতে দেয়নাই। ওই ঘটনার পর আমি আর আমার বাপের বাড়িত যাইনাই কখনো। যে লোক আমারে কিনা লইছে সে নিশ্চয়ই আমার পিছু ছাড়বো না। সেই ভয়ে আমি আর আমার বাপের কাছেও যাই নাই। আমার ফুপাতো ভাইরা চাইছিল আমার একটা ভালো পোলার লগে বিয়ে দিয়ে দিতে। তাদের কাছে আমি মাইয়াটা তো ভালো। মাইয়ার আগে ও বিয়ে হইছিল সেই কথা কইলে কেউ আর ভালো মনে করব না। আমাগো সমাজের মানুষ মনে করে আগে বিয়া হইলে সেই মাইয়া খারাপ। যেমন আপনি মনে করতেছেন। আমি আপনারে ঠকাইছি, আমি বেইমান। কত বড় বিপদ থাইকা আমি বাইচা আইসি সেটা যদি আপনি একবার বুঝতে পারতেন? আমার জায়গায় নিজেরে একবার কল্পনা কইরা দেখেন। নিজের বিবেক দিয়ে একটু ভাইবা দেখেন। তারপর কন আমার জায়গায় থাকলে আপনি কি করতেন? যে মাইয়ার বাপ নাই মা নাই। অসহায় একটা মাইয়া। ফুফাতো ভাইগো ঘাড়ে বইসা রইছি। তারা নিজেদের দায়িত্বে নিজেদের খরচে যদি একটা পোলার লগে আমার বিয়া দিয়া দেয়, আর আমি যদি সেই পোলারে কই আমি আগেও বিয়ে করছি। তাইলে কি আমার বিয়ে হইত? নাকি আমার সংসারটা টিকতো? আপনি কন। আমার জায়গায় থাকলে আপনে কি করতেন?

রূপক কোন উত্তর দিল না। চিত্রার দিকে খানিকক্ষণ স্থির চোখে তাকিয়ে রইল। তারপর নিঃশব্দে নেমে গেল চৌকি থেকে। টেবিলের উপরে রাখা লাইটার, একটা সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে গেল। খানিকক্ষণ পর দরজার হাতল ধরে এসে দাঁড়ায় চিত্রা। দেখতে পায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রূপক সিগারেট টানছে। তার যা বলার ছিল সবটা তো বলেই দিল। বাকিটা সে রূপকের ওপর ছেড়ে দিবে। আর কিছু বলবে না ভেবে মনস্থির করল। তার কপাল যা আছে তাই হবে।

অনেকক্ষণ রূপক ঘরে ফিরল না। চিত্রা খানিকক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ করল। তার শরীরটা ভালো লাগছেনা। প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে। ক্ষুধায় বমিও চলে আসছে।
চিত্রা জোসনা বেগমের গলা শুনতে পেলো, কিগো বউ। ভাত খাইতাছো না কেন? তুমি কি এখনো একলা আছো? আরেকজনের কথা তো তোমার চিন্তা করতে হইবো।
শাশুড়ির কথায় চিত্রা অল্প কিছু ভাত খেয়ে নিল। খাওয়া শেষে ঘরে ঢুকে দেখল রূপক শুয়ে পড়েছে। নিঃশব্দে চিত্রা ও তার পাশে শুয়ে পড়ল। রাতের নিস্তব্ধতায় কেবল দুজনের নিঃশ্বাস পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এছাড়া আর কোনো রকম শব্দ নেই। চিত্রার খুব ইচ্ছে করছিল রূপক তার সঙ্গে দুটো কথা বলুক। হোক সেটা ভালো কিংবা খারাপ। রাগ দেখানোর প্রয়োজন থাকলে রাগ দেখাতে পারে। তবুও যেন তার সঙ্গে কথা বলে রূপক। কিন্তু মধ্য রাত অব্দি রূপকের কোন নড়াচড়া কিংবা সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। একসময় চিত্রার ক্লান্ত দুচোখ কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুম ভাঙলো সকাল বেলা। রূপক কখনো চিত্রার আগে বিছানা ছাড়েনি। এই প্রথম চিত্রা পাশ ফিরে দেখল রুপক তার পাশে নেই। সকালের আলো ফুটেছে। তবুও সাধারণত এত সকালে রূপক ঘুম থেকে উঠে না। আজ হয়তো চিত্রার পাশে শুয়ে থাকতে চায় না বলেই উঠে পড়েছে। চিত্রা চোখ মুখ কচলে বাইরে বেরিয়ে এলো। তার দুচোখ তখন শুধু তাকেই খুঁজে চলেছে। কিন্তু রূপককে কোথাও দেখতে পেল না। লাজ লজ্জা ভুলে সে জোসনা বেগম এর কাছে জানতে চাইল, আপনার পোলা কই গেছে কিছু কইয়া গেছে?
জোসনা বেগম খানিকটা অবাক হলেন। তার মানে ছেলে আর ছেলের বউয়ের মান-অভিমানের পর্ব এখনো চলছে। তিনি তাতে নাক গলাবেন না। কেবল উত্তর দিলেন, মনে হয় দোকানে গেছে।
চিত্রার কষ্ট হতে লাগলো। জীবনের কিছু কষ্ট একান্তই নিজের হয়। যে কষ্টগুলোর ভাগিদার কেউ হয় না। চাইলেও কাউকে ভাগ দেওয়া যায় না। রূপকের ভিতরে যে কষ্টের ঝড় বইছে তার ভাগটা চাইলেও নিতে পারবেনা চিত্রা। একইভাবে চিত্রার বুকে যে যন্ত্রণার দহন, তার ভাগ সে কখনো কাউকে দিতে পারবে না। এই কষ্ট একান্তই তার নিজের কষ্ট। যার ভার বয়ে বেড়াতে হয় আপনাকেই।

অনেক রাত করে রূপক ঘরে ফিরল। সাধারণত তার এত রাত হয়না। বাড়ি ফিরেই মাকে ডাকতে ডাকতে হাতমুখ ধুতে গেল সে। জোসনা বেগম দাওয়ায় পাটি বিছিয়ে খাবার প্রস্তুত করলেন। রুপক একা একা বসে খাবারটা খেয়ে নিল। বাড়ির অন্য সদস্যরা খেয়েছে কিনা তা নিয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন করল না। যেন চিত্রা নামে কেউ এ বাড়িতে নেই।
খাবার খেয়ে রূপক খুঁটিতে হেলান দিয়ে বসে থাকল। দখিনা বাতাস শিরশির করে তার গায়ে এসে লাগে। মোবাইল বের করে সে একটা সিনেমা চালিয়ে দেখতে শুরু করলো। অন্ধকারে দাঁড়িয়ে চিত্রা রূপকের দিকে লক্ষ্য করলো। মোবাইলের জ্বলতে থাকা মৃদু আলোয় রূপকের মুখটা দেখা যাচ্ছে। ক্লান্ত ও বিষন্ন মুখে সিনেমা দেখছে রূপক। চিত্রার খুব ইচ্ছে করলো ওই ক্লান্ত মুখখানা আঁচল দিয়ে মুছে দিতে। পাশে বসে দুটো সুখ-দুঃখের কথা কইতে। কিন্তু সাহস হলো না। দূর হতে কেবল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার রইল না তার।

খানিকবাদে জোসনা বেগম ডাক ছাড়লেন, বৌ ও বৌ ভাগ দুইটা খাইয়া লও। দাওয়ায় ভাতের গামলা রাইখা দিছি। কুত্তা আইসা ভাত খাইয়া যাইব আবার। তাড়াতাড়ি ভাত দুইটা খাইয়া লও। মেলা রাইত হইছে। না খাইয়া খাইয়া শইল্টস খারাপ বানাইয়ো না। পোয়াতি মানুষ। একটু বাছবিচার কইরা চলতে হইবো।

জ্যোৎস্না বেগমের কথাতেও যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই রূপকের। সে মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ সরালো না। গান বাজছে। গান শেষ হয়ে আবারো শুরু হল সিনেমা। শাকিব খানের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। মন দিয়ে দেখছে রূপক। চিত্রার ইচ্ছে করলো সে ও তার পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে। তারপর একসঙ্গে হাসতে হাসতে শাকিব খানের সিনেমা দেখতে। কিন্তু পরিস্থিতি কেমন যেন হয়ে গেছে। সংকোচ ও ইতঃস্তত বোধ তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে রেখেছে।

আবারো খেতে ডাকলেন জোসনা বেগম, এই মাইয়া দেখি কথা শুনেনা। কইলাম তাড়াতাড়ি ভাত দুইটা খাইয়া লও। ভাত খাইয়া যা থাকবো পানি ঢাইলা রাইখো। মেলা রাইত হইছে।

ভাতের গামলার পাশে টিমটিম করে জ্বলছে কূপির আলো। জোসনা বেগম একবার বারান্দায় এসে বসলেন। রূপককে বললেন, তোর বউরে ভাত খাইতে ক। তোরা কি শুরু করলি? আমার কিন্তু এইগুলা ভালো লাগতাছে না।
রূপক এই কথার উত্তর না দিয়ে বলল, আইজ রুবিনা কল দিছিলো। ফোন করতে কইছে। কল দিমু। কথা কইবা?
জোসনা বেগম উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এসে বললেন হ, কল দে। মাইয়াডার কথা আজকে সারাদিন বারবার মনে পড়ছে।

রূপক শিমুলের কাছে কল দিয়ে ফোনটা তার মায়ের দিকে এগিয়ে দিল। তারপর উঠে চলে গেল উঠানের অন্ধকারের দিকে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চিত্রা এসে ভাত খেতে বসলো। গলা দিয়ে তার ভাত নামছে না। তবুও বাচ্চার কথা ভেবে তাকে খেতে হচ্ছে। তার খাবার খাওয়ার এক ফাঁকে রূপক এসে দাঁড়াল পাশে। চিত্রার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। ভাবলো ভালো হোক মন্দ হোক লোকটা তাকে কিছু একটা তো বলবে। কিন্তু নিঃশব্দে কুপির আগুনে সিগারেট ধরিয়ে রূপক আবারো চলে গেল অন্ধকারে। কেবল দূর হতে তার সিগারেটের আগুন খানি চোখে পড়ল। ঝিঝি পোকার ডাকে তখন কান ঝালাপালা হওয়ার মত অবস্থা। এই নিস্তব্ধ রাতে চিত্রার বুকের আর্তনাদ বাইরে থেকে শোনার মতো কেউ নেই। হৃদয়ের আর্তনাদ শুনতে হলে হৃদয়ের ভেতর প্রবেশ করতে হয়। তার রুপক এখন তার হৃদয়ের ভেতর নেই। ভীষণ কষ্টের কোন এক ঝড়ের স্রোতে ভেসে গেছে রূপক।

চিত্রা ভাত খেয়ে অবশিষ্ট ভাতে পানি ঢেলে রান্না ঘরে রেখে এলো। তখন শুনতে পেল জোসনা বেগম ও রুপক কথা বলছে।
রূপক বলল, এলাকায়তো কারেন্ট আইতাছে। কারেন নিমু বাড়িতে।
টাকা পয়সা কেমন লাগবো?
যাই লাগুক নিতে তো হইবো। দোকানে কারেন্ট আলোতে থাকি। বাড়িত আইলে হারিকেনের আলো চোখে ধরে না।
সৌর বিদ্যুৎ নিতে কইছিলাম।
এখন আর নিয়া কি হইব? কারেন্ট আইব শুইনা তো আর সোলার নেই নাই।
এমন সময় চিত্রা এসে দাড়ালো বারান্দায়। জোসনা বেগম চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এই গেরামে আমরা সবার পরথম সৌরবিদ্যুৎ লাগাইছিলাম। বহু আগের কথা। এগারো বৎসর হইয়া গেল। একটা জিনিস আর কদ্দিন টেকে। অনেকদিন থাইকাই চার্জ কইমা যাইত। তোমাগো বিয়ার আগে আগে একেবারেই বন্ধ হইয়া গেছে। পোলায় আমার কপালপোড়া।

রূপক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ঠিকই কইছো মা। আমি সত্যই একটা কপালপোড়া।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রূপক মায়ের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল। কিছু বলার নেই চিত্রার। নিঃশব্দে গুটি গুটি পায়ে সে ঘরে এসে দাঁড়ায়। রূপক আবারও মোবাইলে ছবি চালু করেছে। দেখতে দেখতে শব্দ করে হাসছে। চিত্রার সঙ্গে কোনো রকম কথাবার্তা বলার লক্ষণ পর্যন্ত নেই।
মান অভিমান ভুলে চিত্রা নিজেই কথা বলার চেষ্টা করল, আপনি কি আমার কথাগুলান বিশ্বাস করেন নাই?
রূপকের কোন সাড়া নেই। আবারো প্রশ্ন করল চিত্রা, আমার কথাগুলান কি আপনার বিশ্বাস হয় না?
রূপক উত্তর দিল, এত রাইতে এইগুলা নিয়া কথা কইতে চাইতাছি না। আমি যা জানি তা আমার কাছেই থাকুক। আমার মা বাবারে শুনাইতে চাইতেছি না।
নিজের মনে অশান্তি নিয়ে কয়দিন থাকবেন।
কপালে অশান্তি থাকলে তো আমার কিছু করার নাই।
আপনে অশান্তি টাইনা আনতাছেন। আমারে বিশ্বাস করেন। আমার দোষটা কোথায় একবার বিবেচনা কইরা দেখেন। কে কী কইছে আমারে একটু খুইলা কন।
রূপক কোন উত্তর দিল না। সে সিনেমা দেখায় মগ্ন। চিত্রার মন খারাপ লাগছে। ক্রমাগত বাড়তে লাগল রাত। সিনেমা দেখতে দেখতে এক সময় রূপকের চোখে ঘুম ধরে এল। তবুও সে চিত্রার সঙ্গে কোনো কথা বলল না। যে মানুষটা প্রত্যেক রাতে বাড়ি ফিরে চিত্রাকে আদর সোহাগে মগ্ন হয়ে যায়, ভালবাসার গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে রাখে প্রত্যেকটা রাত। সেই মানুষটা এখন চিত্রার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে চাচ্ছে না। এমনকি আজ একটিবারও চিত্রার দিকে চোখ তুলেও তাকায় নি। এ যেন চিত্রার কাছে আকাশ সম কষ্ট। এই কষ্ট মেনে নিয়ে স্বাভাবিক থাকা তার পক্ষে দুঃসাধ্য। হৃদয়ে ভীষণ আর্তনাদ। তীব্র ঝড়ে তার বুকটা দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে যাচ্ছে। এই কষ্টের কথা সে কার কাছে বলবে?

চলবে..