দ্বিধা চক্র পর্ব-০৮

0
188

#দ্বিধা_চক্র
পর্ব ৮

রাতে খেতে বসে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কথা বলতে শুরু করল নিলয়।
রাশেদ সাহেব অবাক হলেও নিলয়ের মা শিউলি খুব খুশি হলেন। ছেলেটাকে এমন উৎফুল্ল হতে আগে কখনো দেখেন নি। আজ দেখতেও কি সুন্দর লাগছে! মায়ের নজর না লাগে। এক হাতে ছেলের গালে হাত বুলিয়ে দিলেন।
মায়ের আহ্লাদ দেখে নদী ফিক করে হেসে বলল, ভাইয়া, কেরামত মোল্লার পানি পড়া খাবি নাকি? একটা না একটা পাত্রী জুটে যাবে কপালে। বেশি দেরী হয়ে গেছে রে…বউয়ের অভাবে তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস।
অন্যসময় হলে নিলয় ক্ষেপে যেত। আজ জিতে যাওয়া ভঙ্গিতে দাঁত বের করে হাসছে।
ঘটনা জমলো না বলে নদী আরো সচেষ্ট হলো। ভাইয়া, এতো দেখাদেখি বাদ দে। বরং সবকটা পাত্রীর ছবি রেখে টিয়া পাখি দিয়ে বাছাই শেষে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করে ফেল। আমাদের আর্শিবাদ সদা তোর সাথে আছে।
নিলয় আবার হাসলো। এবার সজোরে।
রাশেদ সাহেব সরু চোখে বললেন, আজ কারো সাথে তোর দেখা হয়েছিল কি?
নদী চোখ গোল করে বলল, বাবা, একেবারে সঠিক কথা বলেছো । আজ নিশ্চয়ই ভাইয়া আকাশ থেকে নেমে আসা পরীর সাথে ধাক্কা খেয়েছে। তাই তো কেমন পাগল পাগল লাগছে।
নিলয় ঠোঁট টিপে হাসলো। রাশেদ সাহেব ব্যাপারটা খেয়াল করলেন।
– তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস, ভাইয়া? অবাক কাণ্ড তো!
রাশেদ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন , ঘটক তোকে কল করেছিল নাকি?
নিলয় খেতে খেতে বলল, না তো, কেন?
ঘটনা চেপে রাশেদ সাহেব বললেন, না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
নদী আবার খোঁচাল, পরীটা কি ধড়াম করে তোর মাথার উপর পড়েছিল? তখন থেকে পাগলের মতো দাঁত বের করে হাসছিস কেন?
নিলয় খাওয়া শেষ করে বলল, শোন, পরী এসেছিল ছাতা মাথায় নিয়ে। আমার সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর সবুজ পাহাড়ে আমাকে নিয়ে কিছুক্ষণ ওড়াউড়ি করে আবার নামিয়ে দিয়ে গেল। খুশি এবার?
-কি বলিস আবোলতাবোল! নদী হতবাক হয়ে বলল।
-যা জানতে চেয়েছিস তাই বললাম। নিলয় নিজের রুমে ঢুকে গেল। নদী পেছনে ছুটে দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো। ভাইয়া, তুই প্রেমে পড়েছিস নাকি? নাম কি বল? সপ্তর্ষী হলে আমি তোর পরীর ছাতা দিয়েই তোকে পেটাবো।
নিলয় নিজ রুমে বসে গলা উঁচিয়ে বলে, সপ্তর্ষী নামের কাউকে চিনি না আমি। তুই নিশ্চিত থাক।
নদীর মনে কত প্রশ্ন কিন্তু কোনো উত্তরই ঠিকঠাক না পেয়ে চলে গেল। রাশেদ সাহেব বুঝলেন ঘটক সত্য কথাই বলেছে। তবে কার সাথে নিলয় ছিল সেটা জানায় নি। উনার নিজেরই জেনে নেয়া উচিত ছিল। অবশ্য সেটা নিয়ে খুব একটা চিন্তা নেই । নিলয় স্বভাবে অস্থির ছেলে, দুইদিন বাদে নিজেই গড়গড়িয়ে পছন্দের পাত্রীর সন্ধান দেবে।
নিলয় বিছানায় হেলান দিয়ে চুপ হয়ে বসে আছে। মনের মাঝে নানান রঙের আতশবাজি ফুটেছে। অবনির সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোয় বার বার চোখের সামনে ভাসছে। ভালোবাসা এতো মজার অনুভূতি আগে জানলে আরো আগেই প্রেম করতো। সেটা অবশ্যই অবনির সাথে। ইশ! এতোটা বছর বরবাদ হয়ে গেল।
অবনি এই পরিবারে বউ রূপে আসবে নিলয় ধরেই নিল। নানান স্বপ্নে বিভোর হয়ে রাত কেটে গেল।
___________

তুই কি প্রেম করছিস কারো সাথে? শিরিন প্রশ্ন করলো অবনিকে।
অবনি কলেজের জন্য তৈরি হচ্ছিল। মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে অবাক চোখে তাকালো। আমি? প্রেম করবো কার সাথে?
শিরিন বলল, ঘটক তোকে কার সাথে দেখেছে যেন। তোর বাবার কাছে বিচার দিয়েছে।
অবনি আয়নায় তাকিয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল, আমাকে নিলয় সাহেবের সাথে দেখেছে হয়তো।
-কোন নিলয়?
– যাকে পাত্র হিসাবে পছন্দ নয় বলে মানা করেছি, সে।
– মানা করে তার সাথে আবার কথা বলতে গেলি কেন?
– মা, কোথাও কি নিয়ম আছে, একজনকে মানা করে দিলে তার মুখ দেখাও ঘোরতর অপরাধ?
– শুধু মুখ দেখলে কেউ বলতো না তুই প্রেম করছিস।
– উনার সাথে চলতি পথে দেখা হয়েছে, আমরা হেসে একে অন্যকে হাই হ্যালো করেছি। এরচেয়ে বেশি কিছু নয়। ঘটক বেটা বেশি বুঝে। আমার যদি ছেলেটাকে পছন্দই হতো তাহলে তো বিয়েই করতাম, তাই না?
শিরিনের পছন্দ হলো না অবনির হাবভাব। তবে তিনি ঘাটালেন না। বেশি চালাক মেয়েটা! মাথায় কি ঘুরে শিরিন কোনোদিন ধরতে পারে না। ভালো যে প্রেমটেম কোনোদিন করেনি। করলে শিরিন জীবনেও টের পেত না। বিয়ের কথা বলায় নিজেই বলল, পাত্র দেখো, আমার সমস্যা নেই। তারপর এতো পাত্র দেখা হলো একটাও তার পছন্দ হলো না। মেয়েটা যে কি চায় আল্লাহ জানে।

চলবে।