ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে পর্ব-০৭

0
214

#_ধরো_যদি_হঠাৎ_সন্ধ্যে
#_পর্বঃ০৭
#_আরজু_আরমানী

একটা সপ্তাহ কেটে গেছে। কয়েকটা পরীক্ষা দিয়েছি। দুটোর রেজাল্ট পেয়েছি। একটা কলেজে চান্স হয়েছে। আরেকটাতে ওয়েটিংয়ে আছি। ওখানে ভর্তি হওয়ার তারিখ পরেছে। আগামী সপ্তাহে ওখানে গিয়ে ভর্তি হবো। এই এক সপ্তাহে সব টিউশনি বন্ধ রেখেছিলাম। তিনটা টিউশনির একটা ছুটছে। আর বাকি দুটো আছে। আজ যাবো পড়াতে। এখন সন্ধ্যার পরপরই বাসায় ফিরতে পারবো। নিজের পড়াশোনাটাও ভালোভাবে চালাতে পারবো। রেডি হওয়া শেষ। রাস্তায় জ্যামের কারনে একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরবো। ড্রয়িং রুমে আসতেই মা ধমকে উঠলেন। আমি তার এসব ধমকে এখন আর ভয় পাইনা। নিজের খরচ নিজে চালাই। কারো উপর ডিপেন্ডেড নই আমি। ধমকের স্বরে তিনি বললেন,

” আগামী শুক্রবার তোমার বিয়ে। সেদিন বাসায় থেকো।”

আমি চমকালাম। আজ বুধবার। তারমানে মাত্র দুদিন পর। না এটা আমি মেনে নিতে পারবো না। আমি খুব ভালোভাবে তাকে জবাব দিলাম,

” আরো একমাস পর আমার আঠারো বছর পূর্ণ হবে। তার আগে বিয়ে হলে সেটা বাল্যবিবাহ হিসেবে গন্য হবে। আবার পুলিশি ঝামেলা হবে। কি দরকার এতো ঝামেলার বলুন? ”

বাসা থেকে নেমে পরলাম। আমি নিশ্চিত বিয়ের কথা আর সামনে এগুবে না। এখানেই স্টপ। তিশাকে ফোন করে বললাম,

” তিহা কই রে?”

” বাসায়। ”

” ওরে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দে। ওখানে যা যা কথা হবে সব ভালোভাবে শুনতে বলবি। ”

আর কোনো প্রশ্ন করতে সুযোগ দেইনি ওকে। ফোন কেটে দিয়েছি। বাস চলে এসেছে। সবার সাথে বাসে চড়ে বসলাম। খানিকক্ষণ পরেই বাস ছাড়লো।

————————-

নেহাকে কাল ফোন করে জানিয়েছি যে আজ পড়াতে আসবো। কিন্তু এসে দেখি ওর অনেক জ্বর। ওর মা বসে বসে মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন। আমি চলে আসতে নিলেই তিনি আমাকে ডাকলেন। নিজের পাশে বসিয়ে বললেন,

” আমি তোমাকে মেয়ের মতো ভালোবাসি। এখন তুমি বাইরে যেওনা। আমি জানি এখন তুমি হয়তো কোনো রেস্টুরেন্টে বসে থাকবে। তার চেয়ে ভালো হয়, যদি তুমি আমার বাসাতেই থাকো। দিন কাল তো আর ভালো না।”

ওনার প্রস্তাবটা আমার ভীষন ভালো লাগলো। আমি কিছুক্ষন থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। মিস শিখা কত আদর করে নেহাকে জলপট্টি দিচ্ছেন। থার্মোমিটার দিয়ে বারবার জ্বর মাপছেন। মুখে তুলে খাবার খাইয়ে দিলেন। আমি এসব দেখে কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। আজা আমার মা থেকেও নেই। যারা এতিম তাদের কোনো কষ্ট থাকেনা। কিন্তু বাবা- মা থাকার পরেও যারা এতিম সেই অনুভূতিটা বড্ড কষ্ট দেয়। তারা চোখের সামনে থেকেও নেই। তাদের দেখা যায় কিন্তু ভালোবেসে ছোয়া যায়না। সাদ এসে আমায় বললেন,

” রাত্রি কেমন আছো? ”

” জি ভালো।”

” আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করো।”

আমি একটু হেয়ালি করে তাকে বললাম,

” আপনি বললেই তো হয়। আমাকে আর কষ্ট করে জিজ্ঞেস করতে হয়না।”

আমার কথা শুনে মিস শিখা হেসে ফেললেন। আমি মুচকি হাসলাম। সাদ একটু ভড়কে গেলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

” তুমি মেয়েটা খুব একটা স্বাভাবিক না।”

” হ্যাঁ। সেটা আমিও জানি।”

সাদ উঠে চলে গেলেন। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। আমি আন্টির থেকে বিদায় নিয়ে ওনাদের বাসা থেকে নেমে পরলাম। কতটুকু হেটে একটা রিক্সা নিলাম। এখান থেকে আরেকটা বাসা খুব দূর নয়। হেটে যাওয়া যায়। তবুও একটা রিক্সা নিলাম। আজ ভাগ্যটাই খারাপ। এ বাসার মেয়েটা আবার বান্ধবীর বার্থডে পার্টিতে যাচ্ছে। কি আর করা। বাসায় ফিরবো বলে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। ব্যাগে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো। আমি দ্রুত ফোন রিসিভ করলাম।

” ম্যাম আপনি আমাদের ফ্রিল্যান্সিং কোর্সের ফ্রি ক্লাস করেছেন। আপনাকে স্কলারশিপ দেয়া হয়েছে। আপনি কি ভর্তি হবেন?”

আমার মনে পরলো কাল রাতে এক ঘন্টার ফ্রিল্যান্সিং ক্লাস করেছি। তার থেকেই ফোন এসেছে। আমি তাকে বলে দিলাম,

” হ্যাঁ। ”

” আপনি কখন ভর্তি হবেন?”

” একটু পরেই।”

” ওকে ম্যাম।”

উনি কল কেটে দিলেন। আমি ওনাদের দেয়া লিংকে গিয়ে অনলাইন কোর্সে ভতি হলাম। প্রতিদিন রাতে ক্লাস করতে হবে। সময় দুই ঘন্টা। সাতটা ক্লাসেই নাকি কোর্স শেষ। জানিনা কতটুকু সত্যি। তবুও ভর্তি হয়ে থাকলাম। আবার ফোনে কল এলো। উফ এই ফোনটা বড্ড জ্বালাচ্ছে। রাগী কন্ঠে বললাম,

” কে আপনি? ”

” সাদ।”

মাথাটা পুরো রকমে গরম হলো। উনি কেন বারবার কল দিবে? কি দরকার এতো ওনার?

” কি দরকার?”

” এভাবে রেগে কথা বলছো কেন?”

তার কন্ঠস্বর হালকা। সুন্দর ভাষায় তিনি কথা বলছেন আমার সঙ্গে। তাই আর তার সাথে রাগ না দেখিয়ে বললাম,

” কোনো দরকার ছিলো কি?”

তিনি চুপ করে আছেন। কোনো কথা বলছেন না। একটু পর তিনি বললেন,

” তোমার বাসার পাশের প্লে গ্রাউন্ডে আসো। ”

আমার বাসার পাশে যে প্লে গ্রাউন্ড আছে এটাও সে জানে। অর্ডার করছে যেনো আমার স্বামী।

” আমি এখনো বাসায় ফিরিনি।”

” কোথায় আছো?”

” জাহান্নামে। ”

ফোনটা কেটে দিলাম। আবার রাগ হচ্ছে। এতো কৈফিয়ত জীবনেও কাউকে দিলাম না। আজ তা দিতে হচ্ছে। কেন ভাই কে আমি আপনার? আর আপনিই বা আমার কে? বাসার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠলাম। তবে বাসায় না গিয়ে কোনো এক অজানা কারনে প্লে গ্রাউন্ডে চলে এলাম। এসে সাদকে ফোন করলাম,

” কোথায়? ”

” বাসায়। ”

মাথাটা এবার তার রাগ কন্ট্রোল করতে ব্যার্থ হলো। রাগী কন্ঠে চেঁচিয়ে বললাম,

” ফাইজলামি করেন। আমাকে এখানে আসতে বলে নিজে বাসায় ঘুমাচ্ছেন। ”

আমার কথার প্রেক্ষিতে তিনি আর কিছুই বললেন না। তবে ফোনও কাটলেন না। সামনে তাকিয়ে দেখি ধীর পায়ে হেঁটে আসছেন তিনি আমার দিকে। মুখে ভুবন ভোলানো হাসি। হলুদাভ একটা টি-শার্ট পরা। কানে ভেসে এলো কয়েকটা শব্দ,

” রাগ কমেছে?”

আমার রাগ কমেনি তবে বেরেছে। ইচ্ছে করছে এই আজব লোকটাকো ধরে পুড়িয়ে ফেলি। ফোনটা কান থেকে নামিয়ে ব্যাগে রাখলাম। তিনি আমার সামনে এসে বললেন,

” সারপ্রাইজ।”

” কেন ডেকেছেন? ”

আমার এই প্রশ্ন তিনি মানতে পারলেন না। শেষ বিকালে সূর্য তার লাল আভা ছড়াচ্ছে। আমার নাকের ডগায় এসে সূর্যের ক্ষীন আলো পরলো। একটু সাইডে সরে দাড়ালাম আমি। তিনি আমাকে বললেন,

” জাস্ট পাঁচটা প্রশ্ন করবো। সবকটার ঠিক ঠিক জবাব দিবে। ”

কেন আমি কেন ওনার সব প্রশ্নের জবাব দিবো? না দেবোনা। এই যে তার প্রশ্নের জবাব দিতে চাইনা তা আর বলা হলো না। বলে ফেললাম অন্য কথা,

” হুম।”

তিনি তার প্রথম প্রশ্নটা করলেন,

” বয়স খুবই কম তোমার। এই বয়সে এতো কষ্ট করে টিউশনি করাচ্ছো কেন?”

আমি ঠিক উত্তরটা পেয়েই গেলাম। তাকে বলবো কি বলবো না। সেটাই ভাবছি। তবে আমি মিথ্যা কাউকে বলিনি। আর বাকি জীবনেও বলতে চাইনা। তাকে সত্যিটাই বললাম,

” বিয়ে ঠেকানোর জন্য। ”

তিনি আমার পানে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন কতক্ষণ। তার হয়তো বিশ্বাস হলোনা আমার কথাটা। তার দ্বিতীয় প্রশ্ন,

” এতিম তুমি?”

হাসলাম তার কথা শুনে। বুকে চাপা কষ্টকর অনুভুতি হলো। একটা নিশ্বাস ছেড়লাম।

” সবাই আছে আমার। তবুও আমি এতিম। কেউ নেই আমার।”

আমার এই রহস্যময় কথার মানে তিনি বুঝলেন না। তিনি আমাকে বললেন, ” বাকি প্রশ্ন অন্য কোনো সময় জিজ্ঞেস করে উত্তর জেনে নিবো। এখন তোমার বাসায় ফেরা উচিত। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ”

চারদিকে আবছা আলো। অন্ধকার একটু একটু করে দিনের সমস্ত আলো শুষে নিচ্ছ তার নিজস্ব তিমির অস্তিত্বে। আমি বাসায় ফিরে এলাম। আমাকে এই সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে দেখে চমকে গেলেন বাবা। আমি তার দিকে ভালোভাবে তাকালাম। অতঃপর তাকে বললাম,

” আপনার সাথে খুব জরুরী বিষয়ে কথা বলার আছে। আমার রুমে একটু আসবেন প্লিজ। ”

তার উত্তরের অপেক্ষা করলাম না। নিজের রুমে এসে পরেছি। জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। আজ ভীষন গরম পরেছে। হয়তো আকাশ কাঁপিয়ে ঝড় উঠবে। তাছাড়া কয়েকদিন থেকে আবহাওয়া অফিস আসন্ন ঝড়ের বার্তা দিয়েছে।

———————————

” ডি এন এ রিপোর্ট চাই আপনার। ”

আমার বাবা রায়হান রেদোয়ান অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমার কথা তার বোধগম্য হলোনা। তিনি অনেকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন। তবুও আমার দৃষ্টি স্হির। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। তিনি অদ্ভুত স্বরে বললেন,

” অবিশ্বাস করো তুমি আমায়? ”

আমি হাসলাম। তাকে বিশ্বাস করার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। যে মানুষটা কখনো তার মেয়েকে প্রোটেক্ট করতে পারেনা। তাকে বিশ্বাস করে আমি আমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে পারিনা। আমি শুধু বলেছি,

” বিশ্বাসও করতে পারছি না। ”

তিনি আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। বললেন,

” আমি নিয়ে আসবো রিপোর্ট। তুমি বাবা- মায়ের ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না। তাহিরা ঠিকই বলেছে। ”

” আপনিও বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। আপনি একজন কাপুরুষ। সারাজীবন বউয়ের আঁচলে লুকিয়ে থাকা লোাক। ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে আপনি কখনো পারবেন না। অন্য মেয়েদের সাথে দেহ লীলায় মেতে উঠেছিলেন আপনি। হারিয়েছেন নিজের সমস্ত অস্তিত্ব। হারিয়েছেন নিজের পৌরষত্ব। নারীর কথা ছাড়া পা ফেলতে পারেন না কোথাও। তার কথা ছাড়া নিজের সন্তানকে ভালোবাসতে পারেন না আপনি। আপনার জন্য মাঝে মাঝে আমার করুনা হয়। কিভাবে থাকেন অন্যের গলগ্রহ হয়ে? লজ্জা হয়না আপনার?”

কথাগুলো চেচিয়ে বলে ফেললাম। রাগ চড়ে বসেছে মাথায়। তিনি কি আমাকে কখনো ভালোবেসেছেন? না। তবে তার এতো কথা বলার কোনো অধিকার নাই। না তিনি না তার বউ। কেউ ভালোবাসা না আমাকে।

বাবার দিকে তাকালাম না আর। তিনি কোনো কথা না বলেই চলে গেলেন। আমি রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম। যখন আমি ছোট ছিলাম। তখন বাবা তার এক কলিগের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। তাদের সেই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে মা তাদের ধরে ফেলেন। তারপর থেকে বাবা তার সমস্ত কিছু হারিয়ে ফেলেছে। মা তাকে নিজের সাথে রেখেছেন ঠিকই তবে ভেড়ার মতো। সেদিন তাহমিদ ভাইয়াকে তার বাবা- মার কাহিনী বলার পর ফুপি এসে নিজ দায়িত্বে আমার বাবার কৃতি- কলাপ বলে গেছেন। এমনিতেই আমি তাকে তেমন পছন্দ করিনা। তার উপর এসব শুনে সেদিন থেকেই ঘৃনা জমেছে বাবার উপর। অনেকদিন নিজের এই ঘৃনাগুলো বাক্সবন্দি করে রেখেছি। আজ নিজের বাঁধ ভাঙলো।।

————————-

রাত দুটো বেজে সাইত্রিশ মিনিট। বারান্দায় বসে আছি। বাসায় এখন কেউ নেই। সবাই হাসপাতালে গিয়েছে বাবাকে নিয়ে। তিনি হার্ট স্ট্রোক করেছেন। হয়তো আজ আমার কথাগুলো তাকে ভীষনভাবে হিট করেছে। তাই জন্য তার এ্যাটাকটা হলো। তাসকিনও চলে গেছে সবার সাথে। কিন্তু আমি যাইনি। যার জন্য মন থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়না, তার বিপদে লোক দেখিয়ে সাহায্য করার মানুষ আমি নই। কাজী নজরুল বলেছেন,

” মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে সত্য বলার সাহস থাকা ভালো।”

তাকে এতোভাবে এভোয়েড করার পরও তার জন্য বুকে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে। কেন হচ্ছে এমন? এমন তো হওয়ার কথা নয়। তবে এটা কি সেই গভীর সম্পর্ক যা জন্মের আগে থেকেই সৃষ্টি হয়? যা সৃষ্টিকর্তা আমাদের মনের গহীনে লুকায়িত করে রেখেছেন। হবে হয়তো। আমি সঠিক জানিনা। আমার চোখ ভেঙে ঘুম আসছে। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে গেলে পুরো রাতে আর ঘুম হয়না আমার। কিন্তু আজ আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। আমার সাধারনত দুটো কারনে ঘুম আসে। প্রথমত, কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করলে। দ্বিতীয়ত, স্যাররা যখন পড়া বুঝিয়ে দেয়। এইজন্য কোনো স্যারের কাছে আমি তিন দিনের বেশি পড়তে পারিনি। তিন দিন যেতে না যেতেই তিনি আমাকে বের করে দিতেন। একবার পরীক্ষার হলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। আর এখন ঘুম পাচ্ছে বাবাকে নিয়ে ভাবার জন্য। এখান থেকে উঠে আবার বিছানায় যেতে ইচ্ছে করছে না। এখানেই ঘুমিয়ে পড়লাম

চলবে…………