ধ্রুবতারা পর্ব-০৮

0
372

#ধ্রুবতারা
#পর্ব_৮
#পুষ্পিতা_প্রিমা

অবশেষে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এল। মেহেদী সন্ধ্যা গিয়ে তখন ভোররাত। ছোটোখাটো ব্যাগটাতে কয়েকটা সেলোয়ার কামিজ আর কিছু নাশতা পানি। কয়েকহাজার টাকা গুঁজে দিয়ে রাহাকে বাড়ি থেকে পালাতে সাহায্য করল তাননা আর নোহা। রাহার গায়ে হলুদ খয়েরী গায়ে হলুদের শাড়ি। এদিক-ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে আসলো রাহা। বাড়ি থেকে বের হতেই আবার তাননাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল
‘ আপু আমি যাব না। রোয়েন ভাইয়ার অসম্মানি হবে। না না যাব না।
তাননা তুলে রাহাকে। শক্ত গলায় বলল
‘ যে তোর কথা ভাবছেনা তুই তার কথা কেন ভাববি? ভাববি না একদম। অসম্মানি হোক। দেখ রাহা মুননা একটুখানি চোখ বন্ধ করে শুয়েছে মনে হয় এক্ষুণি উঠে যাবে। বিয়ের স্টেইজ সাজানোর লোক চলে আসবে। উঠোনে রান্নার আয়োজন শুরু হবে। বোন আমার যেভাবে শিখিয়ে দিয়েছি সেভাবে যেতে পারবি?
রাহা মাথা ঝাঁকিয়ে কেঁদে বলল
‘ হ্যা।
তাননা বলল
‘ রূপসা গ্রামে সোজা খন্দকার বাড়িতে কাছে গিয়ে উঠবি। যেহেতু তোর নান নানু আর সাদিদরা এখানে চলে এসেছে। সেহেতু ওখানে গিয়ে লাভ নেই। সোজা খন্দকার বাড়িতে উঠবি। আর যা শিখিয়ে দিয়েছি তা বলবি, যে কাগজটা দেখাতে বলেছি সেটা দেখাবি। শোন রাহা, যে অবহেলা করে তাকে অবহেলাটা ফিরিয়ে দিতে শিখ। তোর জন্য যদি সামান্য টুকু ভালোবাসা ওর মনে থাকে তাহলে তা দেখা যাবে। কিন্তু সবটা এভাবে শেষ করে দিতে পারিস না তুই। যাহ। ভালো থাকিস।
রাহা এক পা এগোয়। পিছু ফিরে নোহাকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে। দৌড়ে এসে আবার নোহাকে জড়িয়ে ধরে রাহা। নোহা হু হু করে কেঁদে দেয়। রাহা চুপটি মেরে থাকে। নোহা বলল
‘ তুমি ভালো থাকো আপু।
রাহা কেঁদে যেতে নিলে তাননা ছাড়িয়ে নেয়। রাহার গাল মুছে নিয়ে সাহস দিয়ে বলে
‘ যাহ। ভোঙে পড়বি না একদম। আজ যদি আম্মা থাকতো তোর সাথে অন্যায়টা হতে দিতনা। আব্বা তো একদম না। যদিও তারা ওই ওই আকাশের ধ্রুবতারা আর শুকতারা হয় দেখতে আসে আমাদের। দেখে কিন্তু কিছু বলতে পারেনা। আমি জানি মুননুর উপর খুব রেগে আছে তারা। খুব।
বলতে না বলতেই গাল মুছলো তাননা। বলল
‘ তোর কোনো সমস্যা হবেনা রাহা। আমি তোর ভাইয়াকে বলে রাখবো, যাতে ট্রেনে তোর কোনো প্রকার অসুবিধা না হয়। সিট খুঁজতে ও কোনোপ্রকার অসুবিধা হবেনা তোর। আর ফোন যেটা দিয়েছি, সিমটা নতুন। এই নাম্বারটা শুধু আমার আর তোর ঈশান ভাইয়ার কাছে আছে। মুননার কাছে নেই। চিন্তা নেই বোন। যাহ।
রাহা এগোলো। কুয়াশার আড়ালে নিমেষেই মিশে গেল সে। কনকনে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। গায়ের শাড়ি ভালো করে পেঁচিয়ে নিয়ে দৌড় লাগালো রাহা। পাঁচটার ট্রেন। খুব ভয় লাগছে তার। এভাবে একা কোথাও যায়নি সে। আব্বা নিশ্চয়ই খুব কষ্ট পাবে। আম্মা খুব কাঁদবে। আর রোয়েন ভাইয়া?
রাহা দৌড় লাগালো দ্রুত। তাকে তাড়াতাড়ি স্টেশনে পৌঁছাতেই হবে।

তাননা আর নোহা বাড়িতে ঢুকতেই মুখোমুখি হয় রোয়েনের সাথে। ঘুম কম হওয়ায় চোখ ফোলা। মাথার চুল এলোমেলো। গায়ের ঢিলেঢালা শার্টের হাত গুটাতে গুটাতে বাইরে আসতেই তাননা আর রাহাকে দেখে বলল
‘ এত সকাল সকাল? রাহা ঘুমিয়েছে?
নোহা তোতলাতে তোতলাতে বলল
‘ হ্যা। খুব ভালো করে ঘুমিয়েছে।
তাননা কিছু বলল না। রোয়েন কথা বলতে চাইলো। কিন্তু বলতে পারলোনা। তাননা চলে গেল হনহনিয়ে।
নিজের ঘরে ঢুকে দেখলো জিশান ঘুমিয়েছে। ঈশান বিছানায় নেই। তবে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার আগেই পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে ফেলল ঈশান। কানের কাছে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল
‘ আপনার কাজ শেষ?
তাননা চুপটি মেরে দাঁড়িয়ে থেকে বলল।
‘ জ্বি, এখন আপনার কাজ শুরু।
ঈশান বলল
‘ ঠিক আছে। বউয়ের হুকুম।
হাসার চেষ্টা করলো তাননা। পরক্ষণে মুখে অন্ধকার নামিয়ে বলল
‘ মুননার সাথে কথা বলবেন না।
ঈশান বলল
‘ কেন?
‘ আমি বলেছি তাই।
ঈশান হেসে সামনের দিকে ফিরালো তাননাকে। সামনের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে কপাল ছুঁয়ে দিয়ে বলল
‘ অন্যায় আবদার করতে নেই উকিল ম্যাডাম।
নাক ফুলালো তাননা। নাকের ডগায় টুপ করে চুমু খেয়ে বসলো ঈশান। তাননা নাক মুছে দূরে সরে গিয়ে বলল
‘ সকাল সকাল কি শুরু করেছেন?
মুখ কালো করে ফেলল ঈশান। তাননা বলল
‘ ওমা কি বলেছি?
গটগট পায়ে হেঁটে বের হয়ে গেল ঈশান। তাননা বের হলো পিছুপিছু। এদিকওদিক তাকিয়ে পেছন থেকে ধরে ফেলল ঈশানকে। পিঠে মুখ ঢলতে ঢলতে বলল
‘ আহা, জিশু ও অত রাগ করেনা। এগুলো কি গোয়েন্দা সাহেব?
ঈশান ফিরলো না। বলল
‘ ছাড়েন। লজ্জা শরম নেই আপনার? ছাড়েন।
তাননা ছাড়লো না। বলল
‘ আমার লজ্জাশরম নেই।
ঈশান ছাড়াছাড়ির চেষ্টা করতে লাগলো। তাননা তার সামনে ফিরে হাসলো। ঈশানের কপাল নামিয়ে মিলালো তার কপালে। কিছু মুহূর্ত পার হওয়ার পর আলতোভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলল
‘ মশাই রাগ কমেছে?
ঈশান গম্ভীর স্বরে বলল
‘ নাহ। কমবেনা।
হাসলো তাননা। শক্ত করে দুহাত দিয়ে ঈশানকে আগলে ধরে বুকে মাথা রেখে দুমদুম মাথা দিয়ে মারতে মারতে বলল
‘ তাড়াতাড়ি রাগ কমান। বেশিক্ষণ এভাবে থাকতে পারবো না। এটা বিয়েবাড়ি।
ঈশান হাসলো তবে তা তাননার অগোচরেই রয়ে গেল।

সকাল আটটা হতে না হতেই সোরার ডাক পড়লো। তাননাকে বলল
‘ রাহাকে ঘুম থেকে তুলো। পার্লারে নিয়ে যেতে হবে।
তাননা বলল
‘ আমি আর নোহা সাজাবো মামুনি।
সোরা বলল
‘ ঠিক আছে। ওকে উঠে ফ্রেশ হতে বলো। কিছু খাইয়ে দাও।
তাননা বলল
‘ আচ্ছা।
সালমা বেগম আর সামাদ মিয়া রাহাকে দেখার জন্য ভীড় করলো। কাল কিভাবে তাদের জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল বোনটা। সাদিদ সোরাকে দেখে বলল
‘ আপা রাহার সাথে কথা বলবে নাকি আম্মা আব্বা।
সোরা বলল
‘ ও ঘুম থেকে উঠেনি বোধহয়। গিয়ে দেখ।
সাদিদ মাথা দুলিয়ে বলল
‘ আচ্ছা, দেখছি।

ঝুমা সাদিদের স্ত্রী। দুই সন্তানের জননী। সোরাকে দেখে থমকে দাঁড়ালো ঝুমা । বলল
‘ আপু আম্মা আব্বাকে দেখছিনা।
সোরা বলল
‘ সবাই রাহার সাথে দেখা করতে ব্যস্ত।। যাও। সামি আর সিহাব কোথায়?
ঝুমা বলল
‘ আছে এখনো ঘুমাচ্ছে।
মাথা নাড়লো সোরা। হাতে বড় নাশতার ট্রে। তার হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে ফেলল নাহিল। গম্ভীর মুখে বলল
‘ তোমাকে বড়মা ডাকছে। দেখোতো।
সোরা শাড়ির আঁচল টেনে মুখ মুছে বলল
‘ হ্যা যাচ্ছি।

তাননা আর নোহা পড়লো মহাবিপদে। এদের কি করে বুঝাবে? নোহা তেজি গলায় সালমা বেগমকে বলল
‘ উফফ নানু রাহাপু ঘুম। আর ও বলেছে কবুল বলার আগে আর কারো সাথে কথা বলবেনা।
সামাদ মিয়া বলল
‘ একটুখানি বোনরে দেখতাম। কাল কিভাবে কাঁদছিল আমারে জড়ায় ধইড়া।
নোহা বলল
‘ নানাভাই বুঝার চেষ্টা করো। রাহাপু আর ও বেশি কাঁদবে, তোমরা কি সেটা চাও?
সাদিদ এসে বলে
‘ আচ্ছা ঠিকাছে। রাহামণি থাক তার মতো। পরে দেখা করব আমরা। তোমরা চলোতো। চলো।
সালমা বেগম বলল
‘ যদি দেখা পাইতাম ভালো হইতো আর কি?
তাননা দরজা বন্ধ করে দেয়। নোহাকে বলে
‘ কি হবে রে? আমার তো বলতে ভয় লাগছে। রাহার ফোন না আসা অব্ধি কাউকে কিছু বলা ও যাবেনা।
নোহা বলল
‘ টেনশন নিওনা আপু। কিচ্ছু হবেনা। আমার তো শুধু রোয়েন ভাইয়াকে ভয় হচ্ছে। আমাকে মারবে না তো? সেই ক্লাস এইটে থাকতে পড়ার টেবিলে মাইর খেয়েছিলাম। ও বাপ কি ভয় করছে আপু? আব্বা আম্মা যদি জানতে পারে আমার ও হাত আছে? আল্লাহ!
তাননা বলল
‘ চুপ থাক একদম। দরজায় খটাখট আওয়াজ হলো। তাননা দরজা একটুখানি খুলে দেখলো রোয়েন। রোয়েনের পাশে দাঁড়ানো আনহা। রোয়েন বলল
‘ রাহা নাকি কাল রাতে ও কিচ্ছু খাইনি? এসব খাইয়ে দে তাননা। ফুপী তুমি যাবে?
আনহা বলল
‘ হ্যা, রাহামণিকে আমি আজ নিজ হাতে খাওয়ায়। তাননা সাইড দাও আম্মা।
তাননা সরলো না। বলল
‘ নাহহহহহ। আমাকে দাও।
আনহা বলল
‘ এমন করছিস কেন?
তাননা বলল
‘ রাহা কারো সামনে পড়বে না বলেছে। তোমরা বুঝো না কেন বলোতো?
আনহা খাবারের প্লেট দিয়ে চলে গেল। রোয়েন সন্দিহান চোখে তাকিয়ে চলে গেল ফোন আসায়।

নিচে ঝামেলা হলো স্টেইজের ফুল নিয়ে। রোয়েনের মতে এসব বাসি ফুল। বাজে গন্ধ ছড়াচ্ছে। নাহিল বলল
‘ থাক না। ঝামেলার দরকার নেই।
রোয়েন বলল
‘ বিয়ে একবার হচ্ছে বাবাই। বারবার হবেনা।
নাহিল চলে গেল। রোয়েনের উপর তার তীব্র অভিমান। রোয়েন অন্যায় করছে তার মেয়ের সাথে। মেয়ের সামনাসামনি দাঁড়াতে পারেনা সে। কাল মেহেদী সন্ধ্যায় নাহিল ছিলনা। বউসাজে রাহাকে রোয়েনের সাথে দেখতে চেয়েছিল নাহিল। মনভাঙার কষ্ট, প্রিয় মানুষকে হারানোর কষ্ট বুঝে নাহিল। তবে এই বিয়ে টিয়ের কোনো ব্যাপারেই সে নেই। সব দায়িত্ব রোয়েনের।
নতুন করে ফুল আনতে হলো আবার। ফুলগুলো হাত দিয়ে ধরে ধরে দেখলো রোয়েন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো সব সাজ।

অতঃপর শুভক্ষণ চলে আসলো। তাননা ভাবলো বরপক্ষ চলে আসার আগে নাহিল আর জায়িদকে সব জানানো দরকার। তাই করলো তাননা। রুমের দরজা খোলা রেখে নাহিলের খোঁজে বের হলো। শাড়ি গহনার মাঝখানে বসে আছে নোহা। গহনা নিজের গলায় পড়ে বসে থাকলো সে। শাড়িটা কোনোমতে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে পড়ে ফেলল। মাথায় ঘোমটা টানতেই দরজার বাইরে ডাক শুনলো রোয়েনের।
‘ তাননা?
নোহা পড়লো বিপাকে। মাথার উপর ঘোমটা টেনে নিয়ে চুপটি করে বসে থাকলো। রোয়েন ঘোমটা টানা বধূটিকে দেখে এগোতে চাইলো না। বলল
‘ তাননা নেই? নোহা?
নোহা কথা বলে ফেলল ভয়ের চোটে।
‘ জ্বি ভাইয়া?
রোয়েন কথা বলতে গিয়ে থেমে গেল। রুমে একটুখানি উঁকি দিয়ে বলল
‘ কোথায় তুমি? নোহা?
নোহা ঘোমটা আরও টেনে কাঁচুমাচু হয়ে বসে রইলো। রোয়েন ডাকলো
‘ নোহা?
নোহা আঁতকে উঠলো। রোয়েনের সন্দেহ বাড়লো। সে রুমে ডুকে এপাশ-ওপাশ তাকাতে তাকাতে ডাকলো
‘ রাহা?
নোহা হাঁসফাঁস করতে লাগলো। রোয়েন বলল
‘ রাহা? কথা বলো।
নোহা তরতর করে কাঁপতে লাগলো। রোয়েন বজ্রগম্ভীর স্বরে বলল
‘ নোহা কোথায়?
বলতে না বলতেই নোহার সামনে গিয়ে হাজির হয় রোয়েন। ঘোমটা টেনে সরিয়ে দিতেই হু হু করে কেঁদে ফেলল নোহা। কান ধরে উঠবস করতে করতে বলল
‘ সরি সরি ভাইয়া। সো সরি। আপু তুমি কোথায়? আমাকে বাঁচাও। আপু?
রোয়েন মাথায় হাত দিল। কপাল ঘেমে উঠলো দ্রুত। লম্বা লম্বা পা ফেলে সে বের হয়ে গেল। নিচে নেমে জায়িদকে ডেকে বলল
‘ রাহা নেই বাড়িতে। কোথায় রাহা?
নাহিল এসে বলল
‘ কি হয়েছে?
‘ রাহা পালিয়েছে।
সবার মাথায় হাত পড়লো। এই কথা শীঘ্রই ছড়াছড়ি হলো সবখানে। তাননা এসে বলল
‘ আমি বলতেই আসছিলাম।
রোয়েন বলল
‘ তুই করেছিস এমনটা? তুই?
তাননা বলল
‘ হ্যা।
কষে চড় বসালো রোয়েন। গর্জে বলল
‘ যাহ আমার চোখের সামনে থেকে। দূর হ। যাহ।
তাননা গড়গড় করে কেঁদে ফেলল। ঈশান দৌড়ে এসে ধরলো তাননাকে। হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ চলুন, কাঁদবেন না প্লিজ। আমার রাগ লাগে। আসুন।
তাননা আওয়াজ করে কেঁদে কেঁদে বলল
‘ মৃত্যু হোক তোর পাষাণ হৃদয়টার। মৃত্যু হোক।
রোয়েন অগ্নিবর্ণ চোখে চেয়ে থাকে। নাহিলকে বলে
‘ রাহার এত সাহস হয় কি করে? কোথায় গিয়েছে ও?
তাননা যেতে যেতে বলল
‘ বলব না তোকে।
নোহা নেমে আসে নিচে। জায়িদ ধমক দিতেই নোহা বলল
‘ রাহাপুকে তাননা আপু রূপসা গ্রামে যেতে বলেছে। আর কিছু জানিনা আব্বা।
সোরা এসে রোয়েনকে ঝাঁকিয়ে কেঁদে উঠে বলল
‘ এটা কি করেছ মুননা? কি করেছ? ওর যদি কোনো বিপদআপদ হয়?
সোরা নেতিয়ে পড়ে মুননার কাছে। মুননা সোরাকে জড়িয়ে ধরে। সান্ত্বনা দিয়ে বলে
‘ রাহাকে আমি নিয়ে আসবো। আর কেঁদোনা মামুনি।
নাহিল বলল
‘ তার আর দরকার নেই। যেখানে যাওয়ার যাক রাহা। বিয়েটা তো আর হবেনা। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া মেয়েকে ওরা বউ করবেনা। থাক রাহা।
রোয়েন বলল
‘ তাই নাকি? তোমার ও হাত আছে এতে? তোমার ও?
নাহিল বলল
‘ থাকা উচিত ছিল মনে করছি।

রোয়েন উপরে শক্ত থাকলে ভেতরে ভেতরে ভয়ে কাতর। রাহার যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। সে তো রাহার ভালোই চেয়েছিল। কি হবে এখন?
ফোন করে বরপক্ষকে সব বলে দিল জায়িদ। সে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সবটা ধামাচাপা দিতে। পুলিশ মানুষ সবাই একটু সমীহ করে। নোহাকে কয়েকটা চড় ও বসালো আনহা। এত পাকনামি করতে কে বলেছে। অন্যদিকে তাননার কান্না থামেনা। ছোটবেলায় মুননু কত মারতো তাকে। কিন্তু সে মারগুলোতে ভালোবাসা, স্নেহ, আদর ছিল। আজ রাগ করে মেরেছে। জীবনে ও কথা বলবেনা সে। ঈশান সান্ত্বনা দিয়ে কূল পায়না। শেষমেশ রেগে বলে
‘ আপনি কাঁদতে থাকুন জিন্নাত। আমি চলে যাই।
তাননা কেঁদে কেঁদে বলে
‘ নাহ, যাবেন না।
জিশান মাকে কাঁদতে দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ে।
‘ পাপা আম্মা কাঁদে কেন? আমার ও কান্না পাই।
ঈশান বলল
‘ আচ্ছা। দুজনই কাঁদেন। আর আমার মাথা খান। খান।

যে সিটে রাহা বসেছে। তারপাশের সিটটা একটা লোকের। বেয়াদব লোক। রাহার গা ঘেঁষে বসেছে একদম। রাহার পড়নে
গায়ে হলুদের শাড়ি দেখে আঁড়চোখে দেখছে সবাই। রাহা চেঁচিয়ে উঠে বলল
‘ আরেহ সরে বসেন। সরে বসেন চাচা। গা ঘেঁষে বসেছেন কেন? সরেন সরেন।
আশপাশের লোকজন দেখলো। একজন বলে উঠলো

‘ সুন্দরী মেয়ে দেখলেই লুচ্চামি করতে মন চায় না? সরে বসেন।

লোকটা তড়িৎ গতিতে সামলে বসলো। রাহা মোটা ব্যাগ দিয়ে রাখলো মাঝখানে। তারপর মাথা এলিয়ে দিল। বেশিদূর পৌঁছেই তাননাকে কল দিল রাহা । তাননা কল তুললেই রাহা বলল
‘ চিন্তা নেই আপু। আমি সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে যাব গ্রামে।
তাননা হাঁফ ছাড়লো। সোরা বেশি কান্নাকাটি করায় জায়িদ বলল
‘ কাঁদছ কেন সোরা? আমি প্রত্যেকটা স্টেশনে পুলিশ দিয়েছি। রাহার খোঁজ পাওয়া যাবে শীঘ্রই। কেঁদোনা আর। নাহিল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। মেয়ে তার ভালো কাজ করেছে।
রোয়েনের খোঁজ নিতেই দেখলো রোয়েন বেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। কোথায় গিয়েছে বলে যায়নি। জাহেদা মাথা চাপড়ে বলল
‘ হায়হায় কি হলো এটা? এই পুঁচকিটার এত সাহস কখন হলো?
নাতাশা নাকমুখ ছিটকে বলল
‘ একদম ত্যাড়া এই মেয়ে।
নাহিল বলল
‘ মাহহ?
নাতাশা চুপ হয়ে গেল।

ট্রেন থামলো বিহন স্টেশনে। পুলিশ ঢুকে পড়লো দলেদলে। সবার হাতে রাহার ছবি। রাহার বুক কেঁপে উঠলো। সে ধরা পড়ে গেল শেষমেশ? কি হবে এখন? রাহা ট্রেন থেকে নিচে নেমে পড়লো। একটা ছোট্ট সরু রাস্তা দেখলো। প্রাণপণে ছুটলো সেই রাস্তা ধরে। দৌড়াতে দৌড়াতে হোঁচট খেল। মুখ থুবড়ে পড়লো। কেউ একজন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ উঠো উঠো । এত বড় মেয়ে হোঁচট খায় আবার? আহা!
রাহা হাতটা ধরলো না। দেখলো বাবার বয়সী একজন লোক। রাহা উঠে দাঁড়িয়ে বলল
‘ আঙ্কেল আমায় বাঁচান। বাঁচান। পুলিশ ধরবে আমায়।
এরশাদ আলম চেয়ে থাকে। বলে
‘ আমার ঘরে যাবে? একটা বান্ধবী পাবে। আমার মেয়ে। তুমি কি পালিয়েছ বাড়ি থেকে? বয়ফ্রেন্ডের সাথে?
রাহা কেঁদে উঠে বলল
‘ আঙ্কেল পরে বলবো। আগে আমাকে বাঁচান।
এরশাদ আলম বললেন
‘ আচ্ছা চলো চলো। আমার বাড়ি বেশিদূরে নয়। এদিকেই। আসো মা।

চলবে