ধ্রুবতারা পর্ব-০৯

0
382

#ধ্রুবতারা
#পর্ব_৯
#পুষ্পিতা_প্রিমা

মাগরিবের আযান পড়ছে চারপাশে। ঠিক সেই সময় নেয়ে ঘেমে বাড়িতে আসলো রোয়েন। সোরা পাগলের মতো হন্য হয়ে দৌড়ে গেল। রোয়েনকে ঝাঁকিয়ে বলল
‘ রাহা? রাহা কোথায়? কোথায় মুননা ?
রোয়েন দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ করে রাখলো। নাহিল এসে জিজ্ঞেস করল
‘ মুননা রাহা কোথায়? খোঁজ পাওয়া যায়নি?
রোয়েন বলল
‘ তাননা কোথায়? তাননা? নোহা?

নোহা তড়িঘড়ি করে দৌড়ে এল তাননার রুম থেকে। বলল
‘ জ্বি ভাইয়া।
‘ রাহার কাছে ফোন ছিল?
‘ জ্বি।
‘ তাননাকে বলো ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে রাহা কোথায় আছে? তাড়াতাড়ি।
নোহা কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কাঁদোকাঁদো গলায় বলল
‘ রাহাপুকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা ভাইয়া। আসলে,
রোয়েন গর্জন করল
‘ আসলে মানে কি? কোথায় রাহা? কোথায় পাঠিয়েছ? আমার সামনে থেকে যাও। যাও বলছি।
নোহা দৌড়ে চলে গেল। রিহান আর জুনিত একপাশে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সালেহা বেগম মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। সারাক্ষণ খ্যাঁক খ্যাঁক করা নাতাশার চিন্তা ধরলো এবার নাতনির জন্য। কোথায় গেল বজ্জাতটা?

জাহেদা আনহা আর জায়িদ তখুনি আসে। জাহেদা রোয়েনকে দেখে দৌড়ে আসে। মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বলে
‘ ভাই, রাহা ফিরবে। তুই বোধহয় কিছু খাসনি। কিছু খেয়ে তারপর রাহার খোঁজে,,
রোয়েন জাহেদার হাত নামিয়ে দিল। জায়িদ এগিয়ে আসলো। বলল
‘ মুননা বিহনপুর স্টেশনে পুলিশ দিয়েছি। ওখানকার যাত্রীরা বলছে রাহা ট্রেন থেকে নেমে গিয়েছে, কিন্তু টিকেট কাটা ছিল রূপসা গ্রামের জন্য। তারমানে বিহনপুরের আশেপাশে রাহা আছে। রোয়েন বলল
‘ তুমি সিউর?
জায়িদ বলল
‘ হ্যা, আমার মনে হয় ঈশান ভালো জানবে এই ব্যাপারে। ওর তো সব জায়গার খোঁজ থাকে।
রোয়েন বলল
‘ ঈশান ভাইকে ডাকো।
নাহিল গিয়ে ডেকে আনলো। ঈশান এসে জায়িদকে বলল
‘ আমার টিমকে বলে দিয়েছি মামা। বিহনপুর জায়গাটা খুব একটা ভালো নয়, ওখানে নানান ধরণের অপকর্ম চলে। তাছাড়া ওখানে মানুষের বসতি খুব কম।
সোরার কান্নার আওয়াজ জোড়ালো হয়। নাহিল গিয়ে সোরাকে ধরে বলে।
বলে
‘ সোরা দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার ও তো চিন্তা হচ্ছে। এভাবে কেঁদোনা।
সোরার পাশে এসে বসে সালমা বেগম। সামাদ মিয়া বলে
‘ বইন গ্রামে কি জন্য যাইবো? আমরা তো এহানে আছি।
নাহিল বলল
‘ হয়তো খন্দকার বাড়িতে উঠবে ভেবেছে। ওখানে মহিলা সংঘের কাছে।
সোরা চোখ পাকিয়ে তাকালো।
নাহিল চোখ সরিয়ে নিল। বলল
‘ রাতুল খন্দকারের বাড়িতেই যাচ্ছিল রাহা। নিজ বাবার বাসস্থানে।
জায়িদ বলল
‘ আরেহ থাম না নাহিল। এখন কি এসব কথা বলার সময়? রাহা তো ওখানে যায় নি।
সোরা ফুঁপিয়ে উঠলো। নাহিল সরে গেল।

রোয়েন বলল
‘ ঈশান ভাই তুমি আমার সাথে যাবে?
ঈশান বলল
‘ অবশ্যই, এটা আমার ডিউটি।
জায়িদ বলল
‘ রাহাকে পাওয়া যাবে। চিন্তা নেই। পুলিশ আর গুপ্তচরেরা লেগে পড়েছে। সোরা আর কেঁদোনা। কাঁদলে সমাধান পাওয়া যাবেনা।

সোরা কিছুটা শান্ত হয়। আবার ভেঙে পড়ে। রোয়েন সোরার কাছে গিয়ে বলল
‘ মামুনি তোমার মেয়ের এই দশা আমার জন্য হয়েছে তো, তোমাকে কথা দিচ্ছি আমি রাহাকে নিয়েই ফিরবো আমি। নয়তো ঘরে ফিরবো না।
সোরা আর ও জোরে কাঁদলো। আনহা গিয়ে ধরলো তাকে। বলল
‘ এভাবে কেন কাঁদছিস সোরা? সব ঠিক হয়ে যাবে।
রোয়েন বলল
‘ আমি রুমে যাচ্ছি। ড্রেস চেন্জ করতে হবে।
ঈশান বলল
‘ আচ্ছা এসো।
রোয়েন গায়ের শার্ট চেন্জ করলো। মুখ হাত ধুয়ে গায়ে শার্ট চড়াতেই জাহেদা হাজির। হাতে একটা প্লেট। পেছন পেছন আনহা। জাহেদা প্লেটের ভাত মাখতে মাখতে বলল
‘ ভাইরে দুটো খাহ। কিছু খাসনি তুই। দুর্বল হয়ে পড়বি। দুর্বল হলে রাহাকে খুঁজবি কি করে?
রোয়েন বলল
‘ জোর করবেনা নানু।
আনহা গ্লাসে পানি ঢেলে বলল
‘ এমন কেন করছো আব্বা। কিছু খাওনি।
জাহেদা বিলাপ শুরু করে।
‘ আজ যদি তোর মা বাপ থাকতো? মেরে মেরে খাওয়াতো। আমি তো কেউ না। কেউ না আমি। আমার কথা শুনবি কেন?
রোয়েন বিরক্ত হলো। হাতের কব্জিতে ঘড়ি লাগাতে বলল
‘ বন্ধ করো এসব। ভালো লাগছেনা।
জাহেদা এগিয়ে আসে। রোয়েনের মুখের কাছে ভাতের লোকমা তুলে ধরে বলে
‘ ফিরিয়ে দিতে নেই ভাই। ভালো হয়না।
রোয়েন বিরক্ত চোখে অনিচ্ছা নিয়ে গালে নিল। জাহেদা একের পর এক লোকমা তুলে দেয়। রোয়েন শেষমেশ বিরক্ত হয়ে বলে
‘ তুমি হ্যান্ড ওয়াশ করেছ নানু?
জাহেদা বলল
‘ নাহ, গু ঘেটে সেই হাত দিয়ে খাওয়াচ্ছি।
রোয়েন নাকমুখ কুঁচকে ফেলে বলল
‘ ছিঃ। জাহেদা ঠোঁট টিপে হেসে ফেলল।
আনহা বলল
‘ আম্মা তুমি ও পারো।
জাহেদা বলল
‘ আমার হাতে ছোটবেলা থেকে খেয়ে এসেছে, এখন বড় হয়ে সেই হাত ওয়াশ করেছে কিনা করেনি জিজ্ঞেস করছে আবার।
রোয়েন বলল
‘ কথা টানবে না। তোমাদের কথা টেনে লম্বা না করলে চলেনা?
জাহেদা তাকে পানি খাওয়ায়। বলে
‘ উফফ শান্তি পাইছি ভাই। এবার আমি নিশ্চিন্তে থাকবো। এবার যাহ, নিজের হবু বউকে খুঁজে নিয়ে আয়। এবার তোকেই বিয়ে করতে হবে।
গটমট পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল রোয়েন। রাহাকে একবার পাক সে! মজা দেখাবে।

________

ঠান্ডা লাগছে। শাঁ শাঁ বাতাস ও বইছে। এই ঝাড়জঙ্গলের ভেতর আবার বাড়িঘর হয় নাকি? বটগাছকে ঘিরে লতাপাতা দিয়ে ঘেরা প্রাসাদের মতো। কতকষ্ট করে ডুকতে হয়। বাপরে বাপ।
ভয় করলো রাহার। লোকটা ডাকলো রাহাকে
‘ তাড়াতাড়ি পা চালাও। এসে পড়েছি।
রাহা পা চালালো। বলল
‘ আমার ভয় লাগছে আঙ্কেল।
লোকটা কিছু বলল না। কিছুক্ষণের মধ্যে লতাপাতায় ঘেরা একটি বিরাট বাড়ির মধ্যে রাহাকে নিয়ে যাওয়া হলো। মনে হচ্ছে অনেক পুরোনো বাড়ি। রাহার গা ছমছম করে উঠলো ভয়ে। সে বাড়িটাতে পা রাখার সাথে সাথে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। কয়েকজন লোক এসে দরজা বন্ধ করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রাহা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল
‘ আঙ্কেল এটা কার বাড়ি?
লোকটা যেতে যেতে বলল
‘ আমাদের।
রাহা বলল
‘ আমার ভয় লাগছে। আমি চলে যাব। বাড়ি চলে যাব। সবাই আমার জন্য টেনশন করছে নিশ্চয়ই।
এরশাদ আলম ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। হাসলো। একজন মহিলাকে ডাকতেই মহিলা ছুঁটে আসলো। বিশ্রী ধরণের পোশাক গায়ে মহিলাটির। রাহা নিজে নিজে বিড়বিড় করল
‘ ছিহঃ।
মহিলাটি তেজি গলায় হাঁক ছাড়লো।
‘ এই মালটা কোথা থেকে আনছো?
এরশাদ আলম বলল
‘ পাখি নিজ থেকে খাঁচায় এসে ডুকছে। একদম নতুন।
রাহা এদের কথা কিছু বুঝে ফেলোনা। তবে বুঝলো সে মহাবিপদে পড়ে গেছে। ব্যাগটা শক্ত করে ধরে দৌড় লাগালো রাহা। আটকে ফেলল দুইতিনজন লোক এসে। ভয়ংকর বিশ্রী চাহনি লোকগুলোর। রাহা চিৎকার করলো। মেরে ফেলব সবাইকে। আমার আব্বা জানতে পারলে খবর আছে।
এরশাদ আলম হেসে বলল
‘ আহা কেঁদোনা মেয়ে। ভালো থাকবে এখানে। রাতের রানী হয়ে থাকবে, ব্যস এটুকু।
রাহা কথাটা বুঝার চেষ্টা করলো। যখন বুঝে উঠলো গগণ কাঁপানো চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে বসে পড়লো রাহা৷
‘ নাহ নাহ ছেড়ে দিন আমায়। দরকার হলে মেরে ফেলুন। কিন্তু আমি এসব কাজ করতে পারবো না। আল্লাহ আমায় বাঁচাও।
মহিলাটি এসে ব্যাগটা কেড়ে নিল রাহার কাছ থেকে। চুলের মুঠি ধরে বলল
‘ থাম হারামজাদি। আরেকবার চেঁচালে একদম মুখে সেলাই করে দেব।
রাহা চুপ হয়ে গেল। বিড়বিড় করল
‘ নাহ সেলাই করবেন না। ছেড়ে দিন আমায়। সবাই চিন্তা করছে আমার জন্য। আল্লাহ!
মহিলাটি কষে চড় বসালো রাহার গায়ে। বলল
‘ আমার কথা শোন মন দিয়ে। তোকে টাকা দেব। শুধু আমাদের কথামতো কাজ করবি
বুঝেছিস?
রাহা কাঁদতে কাঁদতে লাগলো। দলে দলে কয়েকটা মেয়ে ডুকলো বাড়িটার গোপন ফটক দিয়ে। রাহার দিকে বিরক্তিসূচক দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে চলে গেল আবার। বিশ্রী ধরণের কাপড় চোপড় গায়ে। রাহা বুঝে উঠতে পারলো সে পতিতাপল্লিতে পা রেখেছে। আল্লাহ এ কোন জাহান্নামে ফেলল তাকে?

রাহার সামনে এসে পড়লো কয়েকটা অল্পবয়স্ক লোক। রাহাকে দেখে তৃষ্ণার্ত চোখে তাকালো। রাহা গুটিয়ে নিল নিজেকে। একটা নোংরা লোক তারদিকে এগিয়ে এসে গালে হাত দিল রাহার। গালে চাপড় মেরে বলল
‘ এরে আজ চাই আমার।
রাহা কেঁদে ফেলল। মহিলাটি বলল
‘ এর দ্বিগুণ দাম। নইলে পাবা না।
লোকটা আকুল দৃষ্টিতে রাহার দিকে তাকিয়ে বলল
‘ তিনগুণ দিবো।
রাহা কেঁদে কেঁদে বলল
‘ নাহ নাহ। আল্লাহ আমায় বাঁচাও।
একদফা হাসির ফোয়ারা বয়ে গেল।
মহিলাটি রাহার কাছে এসে বলল
‘ এরে পাওয়ার জন্য সব মাইয়্যা লাইন ধরছে। আর সে তোরে তিনগুন দামে চাইতেছে এটা তোর সাতকপাল।
রাহা ঠাসস করে চড় বসালো দ্র মহিলার গালে। মহিলাটি গালে হাত দিয়ে হা করে থাকলো। রাহা উঠে দাঁড়িয়ে ধাক্কা মারলো মহিলাটিকে। মহিলাটি গিয়ে পড়লো দূরে। কোমরে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে উঠলো। এরশাদ আলম চেঁচিয়ে উঠলো। রাহার গালে চড় বসাতে গেল। রাহা দূরে সরে পড়লো। কিছুক্ষণ আগের লোকটি এসে বলল
‘ এই মেয়ের গায়ে একটা আঁচড় পড়লে ও টাকা পাবিনা।
রাহা থুতু মারলো লোকটাকে। বলল
‘ যাহ, ধুর হ। অন্য কোথাও গিয়ে মর। আমাকে ছুঁতে আসলে খবর আছে। খুন করব।
লোকটা হো হো করে অট্রহাসি দিল। ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসলো রাহার।
দুই জন মহিলা এসে নিয়ে যায় রাহাকে। সুসজ্জিত একটা রুমে নিয়ে গিয়ে লাল শাড়ি ছুঁড়ে মেরে বলে
‘ এই মেয়ে গোসল সেড়ে নে। যাহ। শাড়িটা পড়ে নিবি।
রাহা শাড়িটাতে থুতু ছিটিয়ে বলল
‘ কিছুতেই না।

______

জায়িদ আর ঈশান জঙ্গলে ডুকে পড়লো। রোয়েন স্টেশনের আশেপাশে অনেক খোঁজাখুঁজি করলো। সরু রাস্তাটা ধরে হাঁটা ধরলো। জায়িদের সাথে ফোনে কানেক্ট আছে। রাস্তাটা ধরে জঙ্গলের ভেতর ডুকতেই মনে হলো পেছন পেছন কেউ ফলো করছে। রোয়েন পিছু ফিরে ডাক দিল
‘ কে? মামা? ঈশান ভাই?
কারো উত্তর এলোনা। রোয়েন আবার হাঁটা ধরলো। কাঁটা জাতীয় গাছের সাথে লেগে হাতের বাহু ছিলে গেল। শার্ট ছিঁড়ে গেল। সামান্য রক্ত বের হলো। তবে নিচে দেখলো একটি ফুলের গাজরা। এটি তো রাহার। কাল রাহার মাথায় পড়া ছিল। বেশ কিছুদূর যেতেই একটি পায়ের নুপুর পেল রোয়েন। তুলে নিল রোয়েন। দৌড়ে সেই পথ ধরে চলে গেল । এদিকে কেউ তো আসার নয়। তাহলে? গাছগাছালির জন্য তো পথ ও চেনা মুশকিল। রোয়েন লতাপাতাগুলো হাত দিয়ে ছুঁতেই ফারাক হয়ে গেল। সে দেখলো এগুলো কৃত্রিম ভাবে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে কেউ পথ না চিনতে পারে। তবে বিরাট বটগাছটির কারণে বুঝা ও যাচ্ছেনা। কোনোমতে ঠেলেঠুলে রোয়েন ডুকে পড়ল। দেখলো পুরোনো জং ধরা একটা বাড়ি। লতাপাতায় আচ্ছাদন চারপাশে। মনে হচ্ছেনা কেউ থাকে এখানে।
রোয়েন আর ও ভেতরে যেতেই স্পষ্ট পায়ের আওয়াজ শুনলো। তবে পেছনে ফিরার আগেই মাথায় জোরে লাঠির আঘাত পড়লো। ঢলে পড়লো রোয়েন। নিভু নিভু চোখে দেখলো মধ্যবয়স্ক ঘৃণ্যভাবে হাসতে থাকা কয়েকজন লোককে। রোয়েন বলল
‘ পানি। পানি।
তারা নেশাজাতীয় কিছু একটা খাইয়ে দিল রোয়েনকে। সাথেসাথে মূর্ছা গেল রোয়েন। শুয়ে পড়লো জঙ্গলের মাটিতে। লোকগুলো হাঁটুগেড়ে বসে বলল
‘ নিশ্চয়ই পুলিশের লোক। বেশ সুদর্শন আছে শালা। এরে নিয়ে যাহ। ভালো জমবে ব্যবসা।
বলেই অট্রহাসি দিল লোকগুলো। জায়িদ ফোন দিল রোয়েনকে। ফোন বাজলো জঙ্গলের মাটিতে। জায়িদ টেনশনে পড়ে গেল। লোকগুলো ফোনটা পা দিয়ে পিষে ফেলল যেন।

জায়িদ আর ঈশান খুঁজল কিন্তু রোয়েনকে পেল না। পুলিশ দলে দলে জঙ্গলের চারপাশে খুঁজতে খুঁজতে বলল
‘ স্যার, রোয়েন এখানে আশেপাশেই আছে।
জায়িদ বলল
‘ খুঁজো তাড়াতাড়ি। সাবধানে থেকো। এখানে ভয়ানক প্রাণী থাকতে পারে। সাপ বিচ্ছু থেকে ও সাবধান।
‘ জ্বি স্যার।

__________

রোয়েন যখন চোখ খুললো তখন নিজেকে সুসজ্জিত সাজানো একটি বিছানায় দেখতে পেল। মাথা ভার ভার। মাথা তুলতে পারলোনা রোয়েন। না চোখ খুলতে পারলো ভালোভাবে। তবে এটুকু বুঝলো সে কোথাও বন্দী হয়েছে। তখন রাত এগারোটার দিকে। চিরপরিচিত এক কান্নার গলা ভেসে আসছে। কে সে?
রোয়েন উঠে দাঁড়াতে পারলোনা। দরজা খুলে ঘরে ডুকে পড়লো একটি ছিমছাম গড়নের মেয়ে। রোয়েনের কাছাকাছি এসে বিরক্ত হলো। হনহনে পায়ে বের হয়ে গিয়ে ডলি নামল মহিলাটিকে গিয়ে বলল
‘ ছেলেটাতো চোখই খুলতে পারছেনা। হবে না এইটা।
ডলি বলল
‘ আচ্ছা, আচ্ছা দেখছি। চিৎকার করোনা।

রাহার কান্নার আওয়াজে বিরক্ত হয়ে ডলি চেঁচিয়ে উঠলো। বলল
‘ এই মেয়ে তাড়াতাড়ি ওই ঘরে যাহ।
রাহা বলল
‘ মরে গেলে ও যাব না।
‘ তাহলে মুক্তি পাবি না।
রাহা বলল
‘ চাইনা এমন মুক্তি। মেরে ফেলো আমায়।
দ্র মহিলা বললেন
‘ গায়ে হাত তুলতে বাধ্য করবিনা একদম।
রাহা কেঁদে ফেললো। মহিলা ধারালো চকচকে ছুরি বের করে বলল
‘ গলা কাটবো। যাহ তাড়াতাড়ি। যাহ।
রাহা কেঁদে ফেলল ভয়ে। ডলি গলায় ছুরি ধরে বলল
‘ যাহ। তাড়াতাড়ি যাহ। দেরী হলে আমার বিরাট ক্ষতি করবি তুই। তাড়াতাড়ি যাহ।
রাহা দৌড়ে গেল। দরজার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। গেলোনা ভেতরে। আল্লাহ আল্লাহ জপতে লাগলো। গুনগুন করে কান্না করার একপর্যায়ে ছিমছাম গড়নের মেয়েটি এসে হাজির হয়। গায়ে পাতলা শাড়ি। বক্ষস্থল বেশিরভাগ উন্মুক্ত। রাহাকে বলল
‘ তুই যাবি না?
রাহা মাথা নাড়ালো। মেয়েটি বলল
‘ তোকে তিনগুণ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে।
রাহা বলল
‘ নাহ নাহ। আমি যাব না।
মেয়েটি বলল
‘ তাহলে ওই ঘরে যাহ। ছেলেটা তোর কোনো ক্ষতি করবেনা। নেশায় বুদ হয়ে আছে। এই নেহ ছুরি এটা দিয়ে শেষ করে দিস। যাহ।
রাহা কাঁপা-কাঁপা হাতে ছুরি তুলে নিল। বললল
‘ মারবো?
মেয়েটি বলল
‘ হ্যা। মেরে দিস। যাহ। আমি এই ঘরে যাই। টা টা।
রাহা বলল
‘ ছিঃ, এত জঘন্য বেয়াদব মেয়ে মানুষ।
রাহা দৌড়ে চলে গেল। সামান্য দরজা লাগানো ঘরটিতে ডুকে পড়লো। দরজা লাগিয়ে দিয়ে দেখলো বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে একটি ছেলে। পড়নে ছাইরঙা শার্ট। পারফিউমের গন্ধটা চেনা রাহার। হাতের ছুরিটা শক্ত করে ধরলো রাহা। এই পশুগুলোর সাথে কার তুলনা করছে সে? মেরে ফেলবে একদম । পিঠের উপর ডুকিয়ে দেবে এই ছুরি। হিংস্র বাঘিনীর মতো এগিয়ে গেল রাহা। চোখ জোড়া অসম্ভব লাল। বুকে এক আকাশ আত্মবিশ্বাস। সে একটি পাপীকে দুনিয়া ছাড়াবেই আজ। বিশ্বজয়ের হাসি যেন ঝুলছে রাহার ঠোঁটে। রক্ত গরম হয়ে যেন ফুটছে টগবগ করে। বাইরে তুমুল চেঁচামেচি। রাহা কান দিলোনা। যাইহোক না কেন সে মেরেই যাবে। হাতের ছুরিটা উপরে তুলে নিচে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ছেলেটার পিঠ বরাবর।

চলবে।