নাম না জানা পাখি পর্ব-১০

0
581

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_১০

দিন যতো যেতে লাগে মাহির খুশির সম্পর্ক আরও গভির হতে থাকে, দুই জন দুইজনকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু কেউ কাউকে বলেনি। রোজ রোজ খুশি মাহিরকে নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায়। মাহিরেরও অনেক ভালো লাগে খুশির সঙ্গে সময় কাটাতে।কিন্তু কেউ একজন খুশি আর মাহিরের এমন ঘনিষ্ঠতা দেখে খুব বিরক্ত। মাহির আজও খুশির সঙ্গে নদীর পারে এসেছে,, নদীর পারে বসে দুই জনে গল্প করতে থাকে।

“তুমি পড়াশোনা শেষ করে কি হতে চাও?

খুশির প্রশ্নে মাহির মুচকি হেসে জবাব দেয়।

” সিঙ্গার! আমি গান অনেক ভালোবাসি আর আমি একদিন অনেক বড় সিঙ্গার হয়ে দেখাবো।

“ওয়াও অনেক ভালো তো, তুমি গান গায়তে পারো এতো দিন বলো নি তো?

” বলা হয়ে উঠেনি এখম বললাম।

“আমাকে একটা গান শুনাও প্লিজ প্লিজ।

” শুনবে তুমি আমার গান?

“অবশ্যই তুমি গাও।

মাহির খুশির দিকে তাকিয়ে গান ধরে।

আজ এক নাম না জানা কোনো পাখি ,
ডাক দিলো ঠোঁটে নিয়ে খড়কুটো।
আজ এলো কোন অজানা বিকেল ,
গান দিলো গোধূলী এক দু মুঠো।

তুমি যাবে কি ? বলো যাবে কি?
দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ।
তুমি পাবে কি ? পা পাবে কি ?
সামনে বেপরোয়া ঢেউ।

ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই ,
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যাই।(২বার)

আজ এক নাম না জানা কোনো হাওয়া ,
চোখ বুজে ভাবছে বেয়াদব ধুলো।
টুপটাপ বৃষ্টি ফোটা গেলো থেমে ,
ভেজা ভেজা খিড়কি দরজা তুমি খোলো।

তুমি যাবে কি ? বলো যাবে কি?
দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ।
তুমি পাবে কি ? পা পাবে কি ?
সামনে বেপরোয়া ঢেউ।

ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই ,
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যাই।(২বার)

আজ যদি গল্প হয় , চুপচাপ রূপকথার,
লাল নীল কমলা রোদ ক্যানভাসে . . ।
আজ যদি বৃষ্টি হয় , যেন প্রানপনে ভিজবো খুব,
রামধনু উঠবে ঠিক ,ফ্যান্টাসি.. ।

তুমি যাবে কি ? বলো যাবে কি?
দেখো ডাকছে ডাকলো কেউ।
তুমি পাবে কি ? পা পাবে কি ?
সামনে বেপরোয়া ঢেউ।

ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই ,
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যাই।
ছুঁয়ে দিলে সোনাকাঠি খুঁজে পাই ,
যদি যাই ভেসে এমনি ভেসে যাই। – [ ২ বার ]

মুগ্ধ নয়নে খুশি মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে, মাহির যে এতো ভালো গান পারে খুশি ভাবতেও পারেনি। মাহির খুশিকে বলে।

“কি গান ভালো লেগেছে?

” ভালো লেগেছে মানে অসাধারণ তুমি গান গাও। তোমাকে বড়ো সিংগার হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।

“সবাই সেটা বুঝে না। (মাহির মন খারাপ করে বলে)

” কে বুঝে না?

“আমার আব্বু গান পছন্দ করে না,, তার ইচ্ছা আমি পড়াশোনা শেষ করে তার বিজনেসে জইন হয়। কিন্তু আমি সেটা চাই না আমি আব্বু কে বড়ো সিংগার হয়ে দেখাবো। তুমি দেখবে খুশি একদিন আমার সত সত ফ্যান ফলোয়ার থাকবে। আমি সবার চোখের মধ্যমনি হয়ে উঠবো তখন আমার আব্বু কে দেখিয়ে দিবো আমিও পারি।

” আমি দোয়া করি তুমি তোমার কাজে সাফল্য অর্জন করো। (খুশি)

খুশির কথায় মাহির মুচকি হাসে। খুশি আবার বলে,,

“তুমি যদি সত্যি বড়ো সিংগার হয়ে যাও,, সেলিব্রিটি হয়ে যাও তখন কি আমাকে চিনতে পারবে না?

খুশির কথায় শব্দ করেই হেসে দেই মাহির।

” এভাবে হাসির কি আছে অনেকেই তো আছে সেলিব্রিটি হয়ে পুরানদের ভুলে যায়। (মন খারাপ করে বলে খুশি)

“আরে বাবা ভুলবো না তোমার কি আমাকে এমন ভাবো।

” আচ্ছা।

তার পরে দুই জনে আবার চুপ নদীর গভির পানির দিকে তাকিয়ে আছে দুই জনে। কেউ কোন কথা বলছে না, অনেকখন চুপ করে থেকে মাহির বলে উঠে।

“আগামী পরশু সকালে আমি কলকাতা চলে যাচ্ছি।

মাহিরের চলে যাওয়ার কথা শুনে খুশির বুক ছ্যাত করে উঠে। চোখ ভরতি পানি ও চলে আসে,, খুশি মাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে মাহির দুরের নদীর পানির দিকে তাকিয়ে। পাসে ফিরে দেখছেও না তার পাসেই কারো চোখে সমুদ্র তৈরি হয়েছে। খুশির কোন সারা শব্দ না পেয়ে খুশির দিকে তাকায় মাহির দেখেই অবাক হয়ে যায়।

” আরে তুমি কান্না করছো কেনো?

“তুমি চলে যাবে? আর কনদিন আসবে না?(কান্না করে)

মাহির বুঝতে পারে খুশি ও মাহিরকে ভালোবেসে ফেলেছে। মাহির খুশিকে বুকে টেনে নিয়ে বলে।

” আমি আবার আসবো তো।

মাহিরের বুকে জায়গা পেয়ে খুশি আরও জরে কান্না করতে লাগে আজ খুশির কান্না যেনো থামবেই না।

“আমি কি আমার পিচ্ছিরে রেখে বেশি দিন থাকতে পারবো বলো? তুমি এইচ এস সি শেষ করো আমিও পড়া শেষ করে তোমাকে নিতে আসবো পাক্কা।

” সেতো অনেক দেরি ওতো দিন তোমাকে না দেখে থাকবো?(কান্না করে)

মাহিরের নিজের ও অনেক খারাপ লাগছে তার ও কান্না পাচ্ছে। এবার রামপুর এসে এই পিচ্ছির ওপর আটকে পরবে ভাবে নি মাহির। মাহির বলে।

“মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবো।

” সত্যি তো?

“হ্যাঁ সত্যি এবার কান্না থামাও।

।।

মাহির চলে যাবে আগামি কাল ভোরে। তাই খুশিকে ডেকেছে নদীর পারে মাহির শেষ বারের মতো দেখা করার জন্য। খুশি আগে থেকে এসেই দাঁড়িয়ে আছে নদীর পারে মাহিরের সঙ্গে দেখা করবে তাই। খুশির মন খুব খারাপ এতো দিন মাহিরের সঙ্গে এতো মিশেছে যে এখন আলাদা হওয়ার কথা ভাবতেই বুক মুচরে কান্না আসছে।

প্রায় অনেকক্ষন যাবত দাঁড়িয়ে আছে খুশি মাহির এখনো আসছে না। খুশি নদীর একেবারে ধারে দাঁড়িয়ে আছে হটাৎ কারো পায়ের শব্দ পাই খুশি। খুশি ভাবে মাহির এসেছে তাই ঘুরে তাকাবার আগেই দুটো হাত ধাক্কা দিয়ে খুশিকে নদীতে ফেলে দেয়। নদীর পানির জোয়ার অনেক খুশি সাতার জানলেও এখন পারছে না। এতো পানির মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে খুশি। খুশি ভেবেই নিলো আজ তার শেষ দিন মাহিরের সঙ্গে আর দেখা হবে না তার।

মাহির এসে খুশিকে নদীর পারে না দেখে অবাক হয়। মাহির নিজেই তো লেইট করে এসেছে মাহির তো ভাবছিলো খুশি তার জন্য ওয়েট করছে। কিন্তু খুশি তো আসেই নি,, মাহির এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে লাগে তখন তার চোখে পরে খুশির ওড়না। মাহির খুশির ওড়না দেখে সেদিকে যায় অড়না হাতে নিয়ে বলে।

“খুশি ওড়না না? খুশি কি তাহলে এসেছিলো আমার দেড়ি দেখে চলে গেছে কিন্তু গেলে ওড়না ফেলে যাবে কেনো?

মাহির খুশির নাম ধরে দুই একবার চিৎকার করে ডাকে নেই খুশি। তখনি মাহিরের চোখে পরে পানিতে খুশির জুতা,, মাহিরের মনে এবার ভয় ঢুকে যায়। মাহির পানিতে ঝাপ দেয় খুশিকে উদ্ধার করতে। খুশি পানি পরার কিছুক্ষন পরেই মাহির এসেছিলো তাই খুশি তলিয়ে যায় নি পানিতে। কিছুখন খুঁজার পরে পেয়ে যায় খুশিকে মাহির। খুশি সেন্স হারিয়ে ফেলেছে,, মাহির ওপরে উঠে খুশিকে শুয়ে দিয়ে জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না,, পেট চাপ দিয়ে পানি বের করে মাহির কিন্তু খুশির জ্ঞান ফিরানো যাচ্ছে না। মাহির আর কোনো উপায় না পেয়ে খুশির মুখে মুখ দিয়ে শ্বাস দিতে লাগে। বেশ অনেক সময় পরে খুশির জ্ঞান ফিরে আসে কিন্তু চোখ খুলে তাকানোর বা উঠে দাড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না।

মাহির খুশিকে বাঁচানোর দৃশ্য দেখে গ্রামের কিছু লোক দূর থেকে ভেবে নেয় মাহির খুশির সঙ্গে খারাপ কাজ করছে। লোক গুলো এসে মাহিরকে ধরে আর কিছু লোক অন্য লোকদের খবর দিতে পাঠায় যে জমিদারের নাতি গ্রামের একটা মেয়ের সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে।

মাহির এতো লোক দেধে অবাক হয় কিছু বলতে যাবে তখনি কিছু লোক বলে উঠে।

” ছিহ ছিহ ছিহ, জমিদারের নাতি হয়ে এই কাজ করতে তোমার লজ্জা লাগলো না। শহর থেইক্কা আইছো বলে কি যা নয় তাই করবা।

মাহির এদের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। কি করেছে সে আর এমন কথায় কেনো বলছে। আরেকটা লোক বলে উঠে।

“এই ছ্যারা রে এই মাইয়ার লগে অনেক ঢলাষলি দেখছি, এই কাজ করানোর জন্যই এই মাইয়ার পিছু ঘুরঘুর করছিলো।

মাহির এবার বুঝতে পারছে এরা ঠিক কি মিন করেছে। মাহির বলে,,

” দেখুন আপনারা ভুল ভাবছেন এমন কিছুই (মাহিরকে থামিয়ে আরেকটা লোক বলে)

“আমরা ভুল না আমরা হকলে নিজের চোখে দেখছি তোমার কুকাজ। এই ভরসন্ধ্যায় মাইয়াডারে একা পাইয়া ছিহ ছিহ ছিহ।

এতোক্ষনে সবার কানে চলে গেছে মাহির একটা মেয়ের সঙ্গে খারাপ কাজ করেছে,, খুশির বাড়িতেও খবর গেছে। গ্রামের সবাই মাহিরকে জমিদারের কাছে নিয়ে যায় খুশির অবস্থা খারাপ তাই কিছু মহিলা তাকে বাড়িতে রেখে আসে। খুশি অসুস্থ কিন্তু সেটা গ্রামবাসী উল্টো ভাবে নিচ্ছে। জমিদারের মাথা কাটা যায় অপমানে এই গ্রামে তার কতো নাম ডাক সম্মান আর তার নাতি কি না সব শেষ করে দিলো।

খুশির আব্বু মানিক আহমেদ আর বড়ো আব্বু আরমান আহমেদ জমিদারের প্রতি পুরনো কিছু সত্রুতা আছে তাদের এবার সুযোগ পেয়ে অপমান করতে পিছু পা হয়না।
মাহির এতো করে বলার চেস্টা করছে ব্যাপার টা তেমন না কিন্তু কেউ কিছুই শুনতে রাজি না। মাহিরের এখন খুব প্রয়োজন খুশিকে এক মাত্র খুশিই সব সত্যি বলতে পারবে। মাহির বলে।

” দাদু গ্রামের সবাই আমাকে ভুল ভাবছে আমি এমন কিছুই করিনি।

মাহিরের আব্বু মাহিরকে থাপ্পড় দিয়ে বলে

“চুপ কর তুই যা করার তাো করে দিয়েছিস এখন চুপ কর।

” আমি চুপ কেন করবো যে কাজ আমি করিনি সেটা আমার ওপর চাপাচ্ছে। খুশি নদীতে পরে গেছিলো আমি অকে বাচিয়েছি। সেটা গ্রামের কিছু লোক দেখে উল্টো ভাবছে।

খুশির বড়ো আব্বু বলে।

“মিথ্যে বলছো তুমি খুশি আমাদের বলেছে তুমি ওর সঙ্গে খারাপ ব্যাবহার করেছো,, ভয় দেখিয়েছো পানিতে ফেলে দেওয়ার।

মাহির অবাক হয় খুব অবাক খুশি এমন বলতে পারে মাহির বিশ্বাসই করতে পারছে না। মাহির বলে।

” খুশিকে ডাকুন আপনি ও এই কথা সবার সামনে বলুক।

“খুশি তোমার মুখ ও দেখতে চায় না। (খুশির আব্বু)

মাহির খুব করে চাইছে খুশি যাতে এখানে আসে,, খুশি ছাড়া কেউ এই অপমান অপবাদ থেকে বাচাতে পারবে না কিন্তু না খুশি আসে না। গ্রামের সবার কথায় মাহির ও মাহিরের আব্বু আম্মু কে রাতেই গ্রাম ছাড়া করে অপমান করে। কেউ কেউ তো ঢিল ছুরে মেরেছে মাহিরের গায়ে।

অপমানে রাগে মাহিরের খুশির প্রতি ঘৃনা জন্ম নেয়। সেদিনই ভাবে খুশিকে উচিত শিক্ষা দিবে মাহির। মাহিরের আব্বু স্ট্রোক করে। রাতেই কলকাতা চলে আসে মাহির। তারপর থেকে কোনো যোগাযোগ করেনি মাহির খুশির সঙ্গে,রামপুরেও আর যায়নি। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যস্ত হয়ে পরে। এক বছর আগে খুশিকে রাস্তায় দেখে মাহির। দেখেই চিনে ফেলে, তিন বছর আগের ক্ষত আবার ব্যাথা দিয়ে উঠে। তখন থেকেই মাথায় ঘুরঘুর করছে খুশিকে শাস্তি দিবে কি করে খুশির

জীবন নরকে পরিনত করবে।

বর্তমানে।

চলবে?