নাম না জানা পাখি পর্ব-০৯

0
509

#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_৯

খুশি রেডি হয়ে এক আম গাছের নিচে মাহিরের জন্য ওয়েট করছে। সকাল ৮ টাই আসতে বলেছে মাহিরকে খুশি। বাট তার এখনো খবর নেই। খুশি অনেক বিরক্ত হচ্ছে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে। চলে যাবে মনে করে পিছু ফিরতেই দেখে মাহির আসছে। খুশি বলে,

“আজ না আসলেই পারতেন কাল আসতেন একা একা ঘুরতেন কারণ কাল আমি আর আপনার সাথে যেতাম না।

” সরি সরি একটু লেইট হয়ে গেলো প্লিজ রাগ করো না।

মাহির কান ধরে কিউট করে সরি বলে। খুশি ও আর রাগ করে থাকতে পারে না তবুও মুখে গাম্ভীর্যভাব বজায় রেখে বলে।

“চলুন।

” তুমি আবার আমাকে আপনি করে বলছো কেনো?

“ওহ সরি আর বলবো না এখন আসো।

” এখন আমরা কোথায় যাবো আর কিসে করে যাবো? (মাহির)

“ট্যাক্সি করে যাবো আর প্রথমে রামপুরের ‘Raza library’ তে যাবো।

মাহির খুশির দিকে তাকিয়ে দেখে খুশি একটা সাদা কালারের লং ড্রেস পরেছে। মুখে কোনো মেক আপ নেই, চোখে কাজল আর ঠোটে হালকা লিপস্টিক। খুব সুন্দর লাগছে খুশিকে।

খুশি মাহির একটা ট্যাক্সিতে বসে পরে।ট্যাক্সি করেই ঘুরবে,প্রথমে যাবে ‘রাজা লাইব্রেরি ‘।

খুশি মাহির রাজা লাইব্রেরির সামনে এসে থামে। গাড়ি থেকে দুই জনে বের হয়ে আসে রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছে বড় তাজমহলের মতো রাজা লাইব্রেরি,সোনালি কালারের। মাহির দেখেই ওয়াও বলে উঠে। খুশি বলে,,

” ভিতরে আরও অনেক সুন্দর আর অনেক ঐতিহাসিক কাহিনি লুকিয়ে আছে।

“চলো ভিতরে যাই।

মাহির খুশি ভিতরে যাওয়ার জন্য যায় কিন্তু ভাগ্য খারাপ যে লাইব্রেরি বন্ধ কাউকে ভিতরে যেতে দিবে না। মাহিরের মন খারাপ হয়ে যায়। খুশি আগেও দেখেছে কিন্তু মাহিরের জন্য খারাপ লাগছে। এতো বলেও ভিতরে যেতে দিচ্ছে না। খুশি মাহিরকে বলে।

” ভিতরে গিয়ে অন্য একদিন দেখাবো আজ আমি এই রাজা লাইব্রেরির কাহিনি শুনাই আর কি কি আছে সেটা বলি। তাহলে পরের বার দেখলে সব বুঝতে পারবে ওকে?

“আচ্ছা বলো শুনি।(মাহির)

খুশি বড়ো একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে।

” এই লাইব্রেরির প্রথম নবাব ‘ফেয়জুল্লা খান’ ১৭৭৪ এ তৈরি করেছিলো। দ্বিতীয় নবাব এখানে অনেক পান্ডুলিপি ও বই এনেছিলেন,, আর এখানে অনেক পান্ডুলিপি আছে যেগুলোই মোগল বাদশাদের মোহরের ছাপ আছে। এখানে বিভিন্ন ভাষার ১৫ হাজার পান্ডুলিপি আর ৭০ হাজার বই আছে। (পান্ডুলিপি মানে, নাটকের লিখিত রূপকে পান্ডুলিপি বলে ।)।

এই টুকু বলে থামে খুশি, মাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে মাহির আগে আরও জানার জন্য খুশির দিকে তাকিয়ে আছে, খুশি আবার বলা শুরু করে।

“নবাব হামিদ আলি খান এই লাইব্রেরিকে কেল্লাতে রুপ দিয়েছেন। ওই যে বড়ো বড়ো ইমারেত গুলো দেখছেন ওগুলো নবাব হামিদ আলি খান করেছে আর উনি এটার নাম রেখেছিলেন হামিদ মঞ্জিল। তারপরে সময় যেতে লাগে আবার নতুন নবাব আসে, নবাব রাজা আলি খান। তারপর উনি শেষ নাম রেখেছিলেন Raza library যা এখনো আছে। আর হ্যাঁ এই রাযা লাইব্রেরি তে দুটো মূল্যবান জিনিস আছে তা হলো। প্রথম মূল্যবান জিনিসটা হলো হযরত আলির লেখা প্রবিত্র কুরআন শরীফ,,তবে এই কুরআন শুধু রমজান মাসে দেখায়। আর দ্বিতীয় হলো বাল্মিকী রামায়ণ(অর্থাৎ পৃথিবীর প্রথম কাব্য রামায়ণ। তার লেখক বাল্মীকি আদি কবি।)। আর একটা কথা কি জানেন এই বাল্মিকী রামায়ণ বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু হয়। আর এই লাইব্রেরি তে একটা ইমারেত আছে সেখানের নিচে, মসজিদ আছে তার ওপরে চার্চ তার ওপরে গুরুদ্বারা সবার ওপরে মন্দির। আরও অনেক কিছু আছে এখানে পরের বার ভিতরে গিয়ে দেখাবো। (রামপুর Raza library এর সম্পর্কে আমি কিছু জানি আর কিছু তথ্য গুগল মামার থেকে নেওয়া। এখানে ধর্ম টেনে আনবেন না লাইব্রেরিতে যা আছে তাই বলেছি ভুল বলে থাকলে ক্ষমা প্রাপ্তি _লেখিকা)

খুশি এক নাগারে সব বলে থামে মাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে মাহির হা করে খুশির দিকে তাকিয়ে আছে। খুশি বলে,,

” এই যে মাহির বাবু কি দেখছো এমন করে? কাহিনি বুঝেছেন?

“হ্যাঁ খুব বুঝেছি বাট তুমি এই পুচকি মেয়ে এতো কিছু কি করে যজানো হ্যাঁ?

” আমি সব জানি হুহ হুহ। আচ্ছা চলুন আপনাকে হাসমুক চাচার হাসমুক কুলফি খাওয়াই।

“হাসমুক কুলফি?(মাহির)

” হ্যাঁ অনেক ইয়াম্মি। রামপুরে অনেক ইয়াম্মি ইয়াম্মি ডিশ আছে।

খুশি মাহির দুই জনে কুলফি খায়। এদিক সেদিক কিছুক্ষন ঘুরে মাহির বলে।

“এবার কোথায় যাবে?

” রামপুরের জুম্মা মসজিদ। এই মসজিদ তৈরি হয় ১৭৬৬ এ প্রথম নবাব ফায়জুল্লা আলি খান করেছিলেন। তার ১০৪ বছর পরে নবাব খলবে আলি খান এই মসজিদ মডিফাইড করেছিলেন। তুমি মসজিদের ভিতরে গিয়ে নামায পড়ে আসবা আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবো।

“ঠিক আছে।

খুশি মাহির ট্যাক্সি করে মসজিদে চলে যায়। মসজিদের গেটের ওপরে বড় ঘড়ি লাগানো আছে। এই ঘড়ি আমেরিকা থেকে আনা হয়েছিলো। আর এই ঘড়ি বাইরে থেকেও দেখা যাবে আর ভিতর থেকেও দেখা যাবে। মাহির ভিতরে গিয়ে যোহরের নামায পরে আসে। তারপরে দুই জনে রেস্টুরেন্টে যায়। খাওয়া দাওয়া শেষে মাহির বলে এবার কোথায়? খুশি মুচকি হেসে জবাব দেয়।

” গান্ধী সামাধি।(মহাত্মা গান্ধী।)

মাহির বলে,,

“গান্ধী সামাধি তো দিল্লিতে করেছিলো ।

” দিল্লি তে প্রথম সামাধি রামপুরে দ্বিতীয়।, ১১ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ এ গান্ধী জির অস্থি( হিন্দুদের মৃত্যুর পর পুরানো হয় সেই ছাই থাকে সেটা) রাযা আলি খান গান্ধীজির পরিবার থেকে নিয়ে এসেছিলো। তার মধ্যে এক ভাগ চাঁদির কলসে করে রামপুরে সামাধি তৈরি করেছেন।

মাহির খুশি গান্ধী সমাধি দেখে তারপরে যায় হাফিজ সাহ জামাল উল্লাহর দারগা। খুশি মাথায় সুন্দর করে ওরনা বেধে নেয়,মাহির টুপি পরে ভিতরে যায়। দুই জনেই দোয়া করে। দারগা থেকে বের হয়ে খুশি বলে।

“এবার বাড়ি ফিরতে হবে নয়তো দেরি হয়ে যাবে।

” আচ্ছা চলো।

খুশি মাহির হেটে ট্যাক্সির কাছে আসছিলো তখন খুশি কে কেউ ডাক দেয়।

“হেই খুশি।

খুশি তাকিয়ে দেখে তার এক বান্ধবী। খুশি গিয়ে জড়িয়ে ধরে মেয়েটা কে আর হিন্দিতে বলে কারণ মেয়েটা বাংলা বুঝে না।

” হেই প্রিতি ক্যাসে হো। (হেই প্রিতি কেমন আছো)

“একদাম মাস্ত ওর তুম? (একদম ঝাক্কাস আর তুমি?)

“মে ভি। (আমিও)

” ওর বাতাও ইয়ে লারকা কোন হে? (এবার বলো এই ছেলেটা কে?)

“ফ্রেন্ড!

” ফ্রেন্ড ইয়া বয়ফ্রেন্ড সাব সামাজতি হু মেইন।বহুত কিউট হে ইয়ার। (ফ্রেন্ড নাকি বয়ফ্রেন্ড সব বুঝি আমি,, অনেক কিউট আছে ইয়ার)

“প্রিতি কি বাচ্চি চাল ভাগ! বাই।

” ওকে বাই।

প্রিতি চলে যাই।খুশি ভেবেছে মাহির এসব কিছু বুঝেনি তারা হিন্দি তে কথা বলেছে তাই হাফ ছেড়ে বাচলো। যদি বাংলায় বলতো বয়ফ্রেন্ড ব্যাপারটা! খুশি লজ্জায় শেষ। মাহির বলে।

“বয়ফ্রেন্ড হলে ক্ষতি নেই কিন্তু।

মাহিরের কথায় চোখ বড় করে তাকায় খুশি আর বলে।

” আপনি হিন্দি বুঝেন?

মাহির দুস্টু হেসে বলে।

“হিন্দুস্থানে বাস করছি ম্যাডাম আর হিন্দি বুঝবো না।

খুশি মনে মনে বলে।

” আমিও কি বোকা। দূর ভাল্লাগে না। (মনে মনে)

“আচ্ছা চলো যাওয়া যাক। (মাহির)

খুশি মাহির ট্যাক্সিতে বসে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মাহির খুশি কে কিছু কিনে দিতে চাইছে কিন্তু খুশি নেয়নি। খুশি ট্যাক্সিতে বসে মাহিরকে বলে।

” জানেন এই রামপুরে একটা রাজমহল আছে আমি ঠিক জানি না চিনি ও না শুনেছি জাস্ট। সেই রাজমহলের রাজার নাকি ১০০ টা রানী ছিলো। সব চেয়ে ছোট রানী ছিলো ভুবন ভুলানো সুন্দরি।

মাহির অবাক হয়ে বলে।

“১০০ টা রানী? বাহ রাজার তো মজাই মজা ছিলো। (বলে হেসে দেয় মাহির)

দুইজনে গল্প করতে করতে বাড়িতে আসতে লাগে। দুই জনের মধ্যে এতো ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে যে কেউ বলতেই পারবে না এরা দুই দিনের পরিচিত। মাহির খুশিকে নিজের মনে অলরেডী যায়গা দিয়ে দিয়েছে। খুশির ফিলিংস এখনো বুঝা যায়নি।

চলবে?