#নাম_না_জানা_পাখি
#নূর_নাফিসা_খুশি
#পর্ব_১৪
আজ অনন্ত খুশিকে ডিনারে নিয়ে এসেছে যদিও খুশি আসতে চাইনি। কিন্তু খুশির আম্মু জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে। কলকাতা শহরের বড়ো একটা রেস্টুরেন্টে খুশিকে নিয়ে এসেছে অনন্ত। খুশি অনেক নার্ভাস তা তার ফেইস দেখেই বুঝা যাচ্ছে। অনন্ত খুশির পছন্দের সব খাবার নিয়েছে কিন্তু খুশি খেতেই পারছে না খুশি। অনন্ত বলে,,
“তুমি কিছু খাচ্ছো না কেনো খুশি?
” এই তো খাচ্ছি আপনি খান।
অনন্ত খেতে শুরু করে, খুশি দেখেই বুঝলো অনন্ত খেতে খুব পছন্দ করে। খুশি ও খাওয়া শুরু করলো। এতোখন দুরের টেবিল থেকে অগ্নি দৃষ্টি তে তাকিয়ে দেখছিলো মাহির। রাগে তার শরীর কেপে কেপে উঠছে,, মাহির মাস্ক পরে থাকায় কেউ অকে চিনতে পারেনি খুশি ও না। মাহির বাইরে বের হলেই হুডি ওলা জেকেট আর মাস্ক পরে বের হয়। জারা মাহিরকে ফোন করে ডেকেছে কি একটা কথা বলার জন্য কিন্তু মাহির তার আগেই খুশিকে এখানে অন্য একটা ছেলের সঙ্গে দেখে রেগে আগুন হয়ে গেছে। খুশির ঠোঁটের পাসে আইস ক্রিম লেগে যায় সেটা অনন্ত হাত দিয়ে মুছে দেয়। এটা মাহিরের চোখে এরায় না আরও বেশি রেগে যায় খুশিকে ওখানেই মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে মাহিরের। মাহির কিছু করতে পারছে না এখানে অনেক লোক কোনো ভাবে যদি কেউ চিনে ফেলে তো নিউজ হতে দেরি লাগবে না। হাত মুঠি বদ্ধ করে সহ্য করছে সব মাহির।
অনন্ত খুশির খাওয়া শেষে কিছুখন গল্প করে বেরিয়ে যায় খুশি অনন্তর সঙ্গে। মাহির জারা কে কিছু না বকেই উঠে দাঁড়ায় এতোখন যে জারা কথা বলেই যাচ্ছিলো তার একটা কথাও শুনে নি মাহির। মাহির হুট করে চলে যাওয়ায় জারা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো। খুশি অনন্ত রেস্টুরেন্টের বাইরে আসে অনন্ত বলে।
“তুমি এখানে দাঁড়াও আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।
” ঠিক আছে।
অনন্ত চলে যায়, অনন্ত যাওয়া মাত্র মাহির খুশির হাত ধরে ফাকা একটা যায়গায় নিয়ে আসে। খুশি অনেক ভয় পেয়ে যায় হুট করে এমন হওয়ায় পরে মাহির কে দেখে একটু সান্ত হয়। মাহির বলে,,
“কে ছেলেটা?(রেগে)
” আপনাকে সব বলতে হবে নাকি?
খুশির এমন উত্তরে মাহির রেগে খুশির হাত শক্ত করে ধরে এতে খুশি অনেক ব্যাথা পায়।
“আহহ ব্যাথা পাচ্ছি ছারুন।
” কে ছেলেটা?
“আমার হনে ওলা জামাই।
কথাটা খুশি মজার ছলে বলে কিন্তু মাহির রেগে আগুন, রেগে বলে।
” আমি কে তাহলে?
“ওমা আপনি কে তা আপনি জানেন না? ভুলে গেছেন আচ্ছা মনে করিয়ে দিচ্ছি আপনি হচ্ছেন নাম করা বড়ো সিংগার সেলিব্রিটি মানুষ।
” খুশি বেশি হয়ে যাচ্ছে এবার।
“ছারুন উনি আমকে খুঁজবে আমি বাড়ি যাবো।
” আমার উত্তর না পেলে আমি যাবো না আর তোমাকও যেতে দিবো না।
“ওনার সঙ্গে আমার বিয়ে ঠিক করেছে আমার আম্মু কিছু দিন পর বিয়ে আমাদের।
” ভুলে যাচ্ছো তুমি আগে থেকেই বিবাহিত।
“ওহ কার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে আমার? মনে পরছে না তো।
” আমার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তোমার। (দাঁতে দাত চেপে বলে মাহির)
“ওহ আপনার সঙ্গে? আপনি কারো স্বামী হওয়ার যোগ্য রাখেন? যে বিবাহিত হওয়ার শর্তেও অন্য মেয়ের সঙ্গে রাত কাটাতে পারে সে কিসের স্বামী। আমি এই বিয়ে মানি না কিছু দিন পরে অনন্তর সঙ্গে আমার বিয়ে । দাওয়াত চলে যাবে আসবেন।
এই বলে খুশি মাহিরের হাত ছারিয়ে চলে যেতে নেয় মাহির আবার ধরে কাছে আনে। বলে,
” তুমি আমাকে চিনো না খুশি আমি কি করতে পারি। তোমার এই ভুলের জন্য কি রকমের শাস্তি পাবে তুমি ভাবতেও পারছো না। (রেগে বলে মাহির)
“আপনি নিচে নামতে নামতে এতো টাই নিচে নেমে গেছেন যে আমি আপনার নাগালের বাইরে চলে গেছি। প্লিজ আর কিছু করবেন না আমি আমার আম্মুকে কষ্ট দিতে পারবো না ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবেন সাইন করে দিবো।
বলেই খুশি আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যায় মাহির খুশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে অনেক খন। অনন্ত খুশিকে না পেয়ে ফোন দেয় খুশি ফোন দিয়ে বলে কথায় আছে। অনন্ত খুশির কাছে গাড়ি নিয়ে আসে খুশি পিছনে একবার তাকিয়ে দেখে মাহির কে দেখা যাচ্ছে না অন্ধকারে জন্য কিন্তু মাহির খুশিকে দেখতে পেলো। খুশি অনন্তর গাড়িতে চেপে চলে যায়।
মাহিরের খুব রাগ লাগছে খুশির ওপর পারলে এখনি তুলে নিয়ে আসতে পারবে মাহির। কিন্তু মাহির তা করবে না খুশির বিয়ের দিন ই যাব খুশির কাছে,, দেখবে মাহির খুশি কি করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে।
মাহির নিজের ফ্লাটে ফিরে যায় গিয়ে দেখে তার আব্বু আম্মু বসে আছে। মাহির তাদের দেখে তাদের কাছে গিয়ে বলে।
” তোমরা এখানে?
“আমরাও এখানে থাকবো আজ থেকে। (আম্মু)
” মানে কি আম্মু বড়ো বাড়ি রেখে তুমি ফ্লাটে কেনো থাকবা?
“তুমি থাকতে পারলে আমরা কেনো পারবো না?(আব্বু)
” আমি কিছু দিন পরেই যেতাম একেবারের জন্য।
মাহিরের কথা শুনে আম্মু আব্বু দুই জনে অবাক হয়ে তাকায়। যে ছেলেকে এতো বলেও বাড়ি নিয়ে যেতে পারেনি সে বলে একেবারে যাবে। মাহিরের আম্মু খুশি হয়ে বলে।
“সত্যি?
” হ্যাঁ তবে আমি একা না তোমাদের বউমা ও যাবে।
এবার মাহিরের আব্বু আম্মু আকাশ থেকে পরে বউমা যাবে শুনে।
“তুই বিয়ে করে নিয়েছিস?(আব্বু)
” হুম তবে…. (মাহির সব কিছু খুলে বলে তার আম্মু আব্বুকে গ্রামের ঘটনার সঙ্গে জড়িত যে খুশি সেটাও বলে)
সব কিছু শুনে মাহিরের আব্বু আম্মু বলে।
“এটা ঠিক করিস নি তুই মেয়েটার এখানে কোনো দোশ নেই। হয়তো সেদিন তাকে কেউ আসতে দেয়নি বা সে এই ব্যাপারে কিছু জানেই না। (আম্মু)
” সেটা ওর কাছেই শুনবো। আম্মু তুমি রেডি থেকো কিছু দিনের মধ্যেই নিয়ে আসবো তোমাদের বউমা কে।
ছেলে বিয়ে করেছে শুনে খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িতে চলে গেলেন মাহিরের আব্বু আম্মু। কত্তো দিন থেকে বলছে বিয়ে করতে কিন্তু কথায় শুনতো না মাহির এতো দিনে একটা কাজের কাজ করেছে। জলদি বাড়ি তাদের অনেক কাজ। এই দিকে মাহির ভাবতে লাগে কি করা যায়,, নিজে নিজে বলে।
“অন্য কাউকে বিয়ে করার সাদ তোমাকে হারে হারে টের পেতে হবে মিস ওহ সরি মিসেস খুশি।
খুশি অনন্ত বিয়ের শপিং করতে বেরিয়েছে, সঙ্গে অনন্তর দুটো বোন আছে খুশি শপিং করতে মটেও ইচ্ছে করছে না তবুও আসতে হয়েছে। অনন্তর বোন ভাবি ভাবি করে অনেক কথায় বলছে খুশি শুধু হু হ্যাঁ দিচ্ছে। শপিংমলে এসে বিয়ের শাড়ি দেখতে লাগে তাড়া। এতো গুলো বিয়ের শাড়ি দেখলো একটাও পছন্দ হচ্ছে না খুশির তখন একটা কর্মচারী এসে বলে।
” ম্যাম এই শাড়ি টা নিতে পারেন আপনাকে অনেক মানাবে।
অনন্ত খুশি দেখলো শাড়ি টা, অনন্ত বলে।
“বাহ সত্যিই শাড়ি টা অনেক সুন্দর এটাই নিবো কি বলো খুশি।
খুশি হ্যাঁ সূচক মাথা নারায় কিন্তু তার মন কেনো জানি বলছে এটা মাহিরের পছন্দের শাড়ি। এখানেই কথাও মাহির আছে, খুশি এদিক ওদিক তাকিয়ে অনেকখন খুঁজলো কিন্তু পেলো না। কিছুখন শপিং করার পর খুশি দেখলো শপিংমলের প্রায় সবাই দৌড়ে যাচ্ছে ওপরের। কিছুই বুঝলো না খুশি কি এমন আছে ওপরে ফ্রী তে জিনিস দিচ্ছে নাকি। খুশি একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করে।
” কথায় যাচ্ছো তোমরা এভাবে?
“কলকাতার ফেমাস সিংগার শাহরিয়ার মাহির এসেছে ওকেই দেখতে যাচ্ছি।
বলেই মেয়েটা চলে গেলো, মাহিরের কথা শুনে অনন্তর বোন দুটো লাফিয়ে উঠে বলে।
” মাহির ওয়ও আমার ক্রাশ। আমিও যাবো আমিও দেখবো।
খুশির কেনো জানি ব্যাপার টা ভালো লাগছে না। খুশি বলে।
“আমার শরীর খারাপ লাগছে বাড়ি যাবো।
অনন্ত কিছু বলে না উল্টো একটু খুশি হয় অনন্ত কারণ অন্য মেয়েদের মতো খুশি মাহিরকে নিয়ে লাফালাফি করলো না দেখে। অনন্ত কি জানে এই মাহির টাই খুশির জামাই জানলে অনন্তর কি হবে?
আরও কিছু কেনা কাটা করে বাড়ি ফিরে যায় সবাই। খুশি ঠিক ভেবেছিলো ওটা মাহিরের পছন্দের শাড়ি আর মাহির যে ওখানে ছিলো সেটাও ঠিক।
চলবে?