নিরবতায় হৃদয় কোনে পর্ব-০৯

0
210

#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০৯

অঝোর ধারায় তুমুল বৃষ্টি, ভারী বাতাসের সাথে টিনের চালে ঝুমঝুম বৃষ্টির ছন্দ। প্রকৃতিতে শীত শীত ভাব।
উত্তেজিত মাহবুব আ*ক্রো*শ ফে*টে পড়ে। মুখেমুখে ত*র্ক করা মাহাকে পায়ের জুতা খুলে ছুঁড়ে মা*রে।
আচমকা আক্রমণে অনেকটা ব্যথা পেলো মাহা। এবার খেঁকিয়ে উঠলেন মতিন সাহেব। বাবা – ছেলের মাঝে পিয়ালী যোগ হলো। আর স্থির থাকতে পারলোনা মিতালী। মানুষের ধৈর্যের একটা সীমা থাকে। সেই সীমা যখন অতিক্রম হয়ে যায়, তখন চুপ থাকা যায়না। পিয়ালীর সাথে এক কথা দু’কথা করে হাতাহাতি লেগে গেলো। মাহবুব দু’বোনের গায়েই হাত তু*ল*লো। রোজী বেগম ধরতে আসলে তাকেও ছাড় দিলোনা। স*জো*রে ধা*ক্কা মে*রে দূরে সরিয়ে দিলো। সি*ট*কে পড়লো রোজী বেগম। পুরো বাড়িতে হাহাকার, শো*কে*র ছায়া। এমন পরিস্থিতিতে বুকে ব্যথা উঠলো মতিন সাহেবের। বুক চা*প*ড়ে পড়ে গে*লে*ন।

ভারী বর্ষনের ঝুমঝুমি শব্দে বাড়ির বাইরে পর্যন্ত শব্দ গেলোনা। এক পর্যায়ে থামলো নি*র্ম*ম অত্যা*চার। সবাই ব্যস্ত হলো মতিন সাহেবকে নিয়ে।

★★★

গাছের ফাঁকফোকর গলে সূর্যের টুকরো আলো ঝলমলিয়ে পড়লো ধরণিতলে। গতরাতের বৃষ্টির পানি ঝপাৎ করে শুষে নিলো বালুযুক্ত মাটি। নাস্তা সে*রে*ই বাড়ি থেকে বের হলো মিতালী। আজ শুক্রবার হওয়ায় স্কুল যাওয়ার তাড়া নেই। চরণ জোড়া চেয়ারম্যান বাড়ির চৌকাঠ মাড়ালো। সবাই নাস্তার টেবিলে। সবার আগে নির্ভীকের চোখ পড়লো।
হঠাৎ মিতালীকে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
-“কিরে, তুই এখন?”

নির্ভীকের কথায় একে একে সবার দৃষ্টি মিতালীর উপর পড়লো। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,
-“আরে মিতালী, আসো আসো।”

মিতালী হালকা হেসে ভেতরে প্রবেশ করলো। বলল,
-“আপনার কাছেই এসেছি চাচা। কথা ছিলো।”

ইশরাকের মা বললেন,
-“বসো, সবার লগে নাস্তা করো।”

মিতালী বলল,
-“আমি নাস্তা করেই বেরিয়েছি, চাচি।”

ইশরাক খানিক অবাক হলো। মেয়েটাকে কত ছোট দেখে গিয়েছিলো। নির্ভীকের সাথেই স্কুলে যেতে দেখতো। অথচ সেই কিশোরী মেয়ে এখন পরিণত এক যুবতী। কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজের দেখা মেলে। আলতো হেসে জিজ্ঞেস করলো,
-“এটা সেই পিচ্চি মিতালী না? কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে নির্ভীকের জন্য এসে দাঁড়িয়ে থাকতো!”

ইশরাক ভাইয়ের কথায় খানিক লজ্জা পেলো মিতালী। হাসলো লজ্জিত ভঙ্গিতে। ইশরাক খানিক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজেও হাসলো। নাস্তা শেষ করে চেয়ারম্যান সাহেব মিতালীর মুখোমুখি বসলেন। সেখানে মোটামুটি সবাই উপস্থিত ছিলো। তিনি বললেন,
-“কী কথা বলবে? বলো।”

মিতালী সময় নিয়ে কথাগুলো গুছিয়ে নিলো। সর্বপ্রথম নিজের হাত বাড়িয়ে লম্বা হাতা গুটিয়ে নিলো। কালছে দাগ দেখিয়ে গতরাতের ঘটনা বিবৃতি করলো। শেষে বলল,
-“আমি এর উচিত বিচার চাই চাচা। আমি মানি এমনকি এই গ্রামের সকলেই জানেন আপনার বিচার সম্পর্কে। সবার মতামত আর ভোটের ভিত্তিতেই আপনি আজ বিচারকের আসনে আছেন। আমার বিশ্বাস আমিও ন্যায়বিচার পাবো।”

ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলো যেন। চেয়ারম্যান সাহেব প্রচন্ড ক্ষু*ব্ধ হলেন। এই ছেলে বে*য়া*দ*বি*র সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করে বসেছে। এবার এর উপযুক্ত বিচার করা প্রয়োজন। এতদিন তাকে সুযোগ দেওয়া হলেও এবার আর নয়। বাবা মায়ের সাথে অ*স*ৎ আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। আজ যদি তিনি ন্যায় বিচার না দেন, তবে অদূর ভবিষ্যতে নিজেও অ*বি*চা*রে*র শি*কা*র হবেন বলে মনে করেন। মিতালীকে আস্বস্ত করে বললেন,
-“শীঘ্রই তুমি বিচার পাবে।”

মিতালী শীতল অথচ দৃঢ় কন্ঠে বলল,
-“শীঘ্রই নয় চাচা, আমি আজই বি*চা*র চাই। আপনি হয়তো নির্ভীকের কাছে শুনেছেন আমার চাকরির ব্যাপারে। তাই অন্যদিন আমার সময় হবেনা।”

মিতালীর কথায় সম্মত হলেন চেয়ারম্যান সাহেব। বললেন,
-“আমি বিকেলেই তোমাদের বাড়িতে যাবো।”

মিতালী প্রসন্ন কন্ঠে বলল,
-“এখন তবে উঠি চাচা।”

নির্ভীক মামার সামনে নিজের জ্ব*ল*ন্ত রা*গ সংবরণ করে রাখলো। মিতালীর উদ্দেশ্যে বলল,
-“আমিও বের হবো, চল একসাথে যাওয়া যাক।”

সায় দিলো মিতালী। দুজন যখন রাস্তায় নামলো তখনই তরতর করে রা*গ ঝরে পড়লো। হড়বড়িয়ে বলল নির্ভীক,
-“মিতা, এবার কিন্তু ওই মাহবুবকে আমি মে*রেই ফেলবো। অ*স*ভ্য লোক পেয়েছেটা কী?”

মিতালী ঠান্ডা গলায় বলল,
-“শান্ত হ। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

অস্থির হয়ে পড়লো নির্ভীক। দিকবিদিকশুন্য হয়ে মিতালীর হাত টে*নে ধরলো। চক্ষু সম্মুখে মা*রে*র দা*গ স্পষ্ট। ব্যথাতুর কন্ঠে উগ্রতা। লালে রঞ্জিত চোখের সফেদ অংশ। হুংকার ছেড়ে বলল,
-“তোর গা*য়ে হাত তুলেছে। আর তুই আমাকে শান্ত থাকতে বলছিস?”

-“কেন এত ডেস্পারেট হচ্ছিস? আমি বলছি তো সব ঠিক হয়ে যাবে।”

নির্ভীক কান দিলোনা মিতালীর কথায়। আলতো হাতে মিতালীর হাত মুঠোয় পুরে নিলো। একবার আদুরে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল,
-“খুব কি ব্যথা করছে?”

মিতালী স্পষ্ট ব্যথা দেখতে পেলো নির্ভীকের চোখে। কাতরতা উপছে পড়ছে তার চোয়ালে। মিষ্টি করে হাসলো মিতালী। আশ্বস্ত করে বলল,
-“ব্যথা করছেনা। এত চিন্তা করিসনা।”

-“চল তোকে ঔষধ কিনে দিই।”

মিতালী এবার শব্দ করেই হাসলো। বলল,
-“এটুকু আ*ঘা*তে কিছু হবেনা। তারচেয়ে বরং তুই একটা কবিতা শোনা।”

অন্য সময় হলে খুশিতে গদগদ হয়ে কবিতার আসর জমিয়ে ফেলতো নির্ভীক। কিন্তু আজ বিষন্ন মনকাননে কবিতা সুর পেলোনা। মুখ ভার করে বলল,
-“এখন ভালোলাগছেনা।”

আর ঘাটালোনা মিতালী।

★★★

সেদিন মাহবুব যেমন বি*চা*র ডাকার পর মিতালীকে সংবাদ দিয়েছিলো, ঠিক তেমনিভাবে মাহবুবকে আজ বি*চা*র সভায় আমন্ত্রণ জানালো মিতালী। মাহার শরীরে জ্বর আসলো। বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেনা মেয়েটা। মাহবুবের ভেতরটা মো*চ*ড় দিয়ে উঠলো। গতকাল অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে গভীর আ*ঘা*ত করে বসেছে মেয়ে দুটোকে। মিতালীকে যতটুকু চেনা আছে, তাতে বোঝা গেলো তার কপালে খা*রা*প কিছু লিখা আছে।
বাড়ির উঠান সদৃশ জায়গায় আজও চেয়ার পাতা হলো। এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত আছেন। চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে তার ছেলে ইশরাক আর ভাগ্নে নির্ভীক ও উপস্থিত আছে।
চেয়ারম্যান চাচা গলা পরিষ্কার করে বিচার কার্য আরম্ভ করলেন।
মাহবুবকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“তোমার নামে আজ বিশাল অভিযোগ এসেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এখানে উপস্থিত হওয়া। সমস্যা সম্পর্কে তুমি কি অবগত? না-কি আমাকে কিছু বলতে হবে।”

অবুঝ বালকের মতোই না বোঝার ভান ধরলো মাহবুব। অজানা ভঙ্গিতে বলল,
-“আমি কিছুই বুঝতাছিনা। আপনে কী কইতাছেন, পরিষ্কার কইরা কন।”

চেয়ারম্যান সাহেব দুর্বোধ্য হাসলেন। মাহবুবকে অবগত করার ভঙ্গিতে বললে,
-“গতরাতে তুমি নাকি বাবা- মায়ের সাথে খা*রা*প আচরণ করেছ? এতটুকুতেই সমস্যা সীমাবদ্ধ নয়, তুমি যুবতী মেয়ে দুটোর গায়ে ও হাত তু*লে*ছো। এই অভিযোগ কি সত্য? আমরা তোমার মতামত জানতে চাই।”

মাহবুব কূ*ট*কৌ*শ*লে বলল,
-“কি বইলা আপনের কান ভারী করছে সেইটা আমার জানা নাই। আমার জানামতে আব্বা- আম্মার লগে খা*রা*প ব্যবহার করছি, এমন কিছু মনে পড়েনা।
বাকি রইলো ওগো গায়ে হাত তো*ল*ন। ওরা কি করছিলো? আমি যে বড় ভাই, আমারে পর্যন্ত রেহাই দেয় নাই। আমার গালে থা*প্প*ড় উঠাইছে মিতালী।”

সবার মুখেমুখে গুঞ্জন পড়ে গেলো। মাইয়া মানুষের এত বাড় ভালানা। সবার কথা কর্ণধারে পৌঁছাতেই কুটিল হাসলো মাহবুব। মিতালীর ভাবভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন দেখা গেলোনা।
চেয়ারম্যান চাচা গম্ভীর স্বরে বলল,
-“মিতালী, তুমি কি বড় ভাইয়ের গায়ে হাত তু*লে*ছো?”

মিতালী প্রশ্নের জবাব দিলোনা। উল্টো বলে বসলো,
-“চাচা, মহামান্য ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করুণ আমাদের নিয়ে আর কিছু বলার আছে কি-না? কারণ একটুপর আর তার বলার মুখ থাকবেনা।”

মিতালীর উপর তাচ্ছিল্য হাসলো মাহবুব। বলল,
-“কইলে তো শ্যাষ ওইবোনা। যা কর্মকাণ্ড আমার চোখে পড়ে। ছিঃ! ছিঃ! ছিঃ!”

নির্ভীকের শরীরে র*ক্ত টগবগ করে উঠলো। তাগড়া যুবকদের র*ক্ত গরম থাকে। এরা নিজের সম্পর্কে কোনো মি*থ্যা আরোপ সহ্য করতে পারেনা। আর যদি সে মি*থ্যে আরোপ প্রিয় মানুষকে নিয়ে হয়, তবে একদমই সহ্য করেনা। ইশরাক হাত চেপে ধরলো নির্ভীকের। ধীর স্বরে বলল,
-“শান্ত হ। দেখতে থাক মেয়েটার কতটুকু জো*র আছে ভেতরে। মনে রাখিস সবসময় কিন্তু বি*প*দে ওর খুঁটি হয়ে দাঁড়াবার মতো কেউ থাকবেনা। মেয়েদের আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত।”

ভাইয়ের কথাটা ভীষণ মনে ধরলো নির্ভীকের। মুহূর্তেই শান্ত হলো সে।
মিতালী ফোন ঘেঁটে গতরাতের রেকর্ড করা অডিও ক্লিপ অন করলো। যেখানে স্পষ্টতই সবার কথোপকথন শোনা যাচ্ছে। মাহার প্রতিবাদী কন্ঠ, পিয়ালী- মাহবুবের বি*শ্রী গা*লি*গা*লা*জ, মতিন সাহেবের হাঁক-ডাক। যেখানে স্পষ্ট শোনা গেলো বাবাকে খাবার খোঁটা দিচ্ছে মাহবুব। আকস্মিক আ*ঘা*তে*র শব্দ হতেই শব্দ করে কেঁদে উঠলো মাহা। পরপরই মা*র*ধ*রে*র শব্দ হলো।

সবাই যখন মাহবুবের দিকে দৃষ্টি ফেললো। তখন সে চো*রা ভঙ্গিতে কাচুমাচু দৃষ্টি লুকাতে ব্যস্ত। দল যখন মিতালীর দিকে ভারী হলো তখন আরও একটি মি*থ্যার আশ্রয় নিলো। বলল,
-“মিতালী যে আমারে চ*ড় মারলো? পিয়ালীর গা*য়ে হাত তু*ল*লো? সেই বিচার করবেন না?”

মিতালী মাহবুবের মুখোমুখি হলো। ঠান্ডা গলায় শুধালো,
-“খুব শক্ত চ*ড় দিয়েছিলাম বুঝি?”

আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল মাহবুব,
-“মা*রি*স নি?”

মিতালী সবার উদ্দেশ্য বলল,
-“আমি কোনো সাধু মেয়ে নই। এই লোকের স্ত্রীর গায়ে আমি হাত তু*লে*ছি আত্মরক্ষার জন্য। সেটা আমি স্বীকার করি। সে ও কিন্তু আমাদের ছেড়ে দেয়নি।
কিন্তু এই কু*রুচি*পূর্ণ লোকের গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটা আমার মস্তিস্ক ভাবতে পারেনি। বাকি যাচাই-বাচাই প্রমাণের জন্য উনার মেয়ে মাহবুবাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। নিষ্পাপ বাচ্চা নিশ্চয়ই মি*থ্যা বলবেনা।”

ভড়কে গেলো মাহবুব। ক্রু*দ্ধ স্বরে বলল,
-“আমার বাইচ্চা মাইয়ারে এসবে জড়াইবিনা, কইয়া দিলাম।”

চেয়ারম্যান সাহেব মাহবুবের কথা অগ্রাহ্য করে মাহবুবাকে ডাকলেন। পিটপিট করে নরম চোখে তাকালো মেয়েটি। যেন ফুলের আদলে গড়ে ওঠা চেহারা। তার মধ্যে ভীতি লক্ষ করে কন্ঠের ভীত নরম করে কোমল স্বরে কাছে ডাকলেন চেয়ারম্যান সাহেব। জিজ্ঞেস করলেন,
-“তেমার ফুফি কি বাবাকে চ*ড় মে*রে*ছে?”

মাহবুবা তটস্থ দৃষ্টিতে একবার বাবার অভিমুখে চাইলো। রাঙানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে শাঁসালো মাহবুব। চেয়ারম্যান সাহেব ব্যাপারটা লক্ষ করেই বললেন,
-“মেয়েকে শাঁসিয়ে লাভ নেই।”
মাহবুবাকে বললেন,
-“তুমি বলো দাদুভাই।”

মাহবুবা আরও একবার বাবাকে দেখলো, ফের ফুফির দিকে দৃষ্টি দিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। “না” ভঙ্গিতে দু’পাশে মাথা নাড়ালো।
সব পরিষ্কার হয়ে যেতেই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন চেয়ারম্যান সাহেব। ঘৃ*ণি*ত দৃষ্টিতে একবার মাহবুবকে দেখে পূণরায় পিয়ালীর দিকে নজর দিলেন। তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“বাড়ির বউদের আচরণ হতে হয় নমনীয়। নিষ্ঠার সাথে পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে হয়। আফসোস! তোমার মুখের ভাষাটাই ঠিক নেই। নিজেকে শুধরে নাও, আবার ও বলছি নিজের ব্যবহার মার্জিত কর।”

নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইলো পিয়ালী। এবারে মাহবুবের শা*স্তির ব্যাপারে কথা হলো। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো
মাহবুবের মুখে কালি মেখে গলায় জুতার মালা আর কলসি বেঁধে পুরো গ্রাম চত্ত্বর দেওয়ানো হবে।
আৎকে উঠলো মাহবুব, পিয়ালী।
চেয়ারম্যান সাহেব জোরালো কন্ঠে বললেন,

-“এখানে যতজন যুবক, মধ্যবয়স্ক উপস্থিত আছেন সবার উদ্দেশ্যে কথাটি। শুধু মাহবুব নয়, এরপর থেকে যিনিই বাবা-মায়ের সথে অ*স*ৎ আচরণ করবেন, তার পরিণামই এমন হবে।”

ভেতরে ভেতরে অনেকেই সতর্ক হয়ে গেলো। হাসিতামাশার সাথে জুতার মালা প্রস্তুত হলো। মাহবুবের গলায় ঝুলিয়ে সর্বপ্রথম বাবা – মায়ের পায়ে ফেললো তাকে। গ্রামের ছোট-বড় সকল কিশোর-যুবক হৈহৈ করতে করতে মাহবুবের পেছনে ছুটলো। অনেকেই মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করলো। এর গতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গিয়ে স্থির হবে।
মুখ নিচু মাহবুবের। আজকের পর থেকে মিতালীর প্রতি তার দশগুণ ক্ষো*ভ জন্ম নিলো।
অপরদিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখলো অন্য এক পুরুষ। তার মনে সূক্ষ্ম ভালোলাগার বীজ বপন হলো। চোখের পরতে পরতে মুগ্ধতা। অন্তঃকরণে শুরু হলো প্রলয়ঙ্কারী উচাটন। সে তো এমন নারীই পছন্দ করে।
ইশরাক নির্নিমেষ চেয়ে থেকে অস্ফুট স্বরে আওড়ালো,
-“বিধ্বংসী।”

না বুঝেই প্রশ্ন করলো নির্ভীক,”কিছু বললে?”

ইশরাকের ঘোরলাগা উত্তর,”হুঁ?”

#চলবে……..