নিরবতায় হৃদয় কোনে পর্ব-১০

0
209

#নিরবতায়_হৃদয়_কোনে
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১০

মধ্যাহ্ন ভোজের সময়। সূর্য উপর থেকে খাঁড়াভাবে কিরণ দিচ্ছে। মাথার উপর ত্রিমাত্রিক যন্ত্রটি গটগট আওয়াজ তুলে কার্য সম্পাদন করে চলেছে।
ঘন্টার আওয়াজ পেতেই শিক্ষার্থীরা ছুটে চললো টিফিন করতে। ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু এগোতেই সামনে নির্ভীক দাঁড়ালো। বলল,
-“চল, খিদে পেয়েছে।”

মিতালী সোজাসাপটা উত্তর দিলো,
-“তুই খেয়ে আয়, আমি এখন খাবোনা।”

ভ্রু জোড়া নিমেষেই কুঞ্চিত হয়ে এলো। তীক্ষ্ণ চোখে পরোখ করে নির্ভীক বলল,
-“একা একা খাবার খাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। এখন চল, বিয়ের পর জামাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে আমার টাকা সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিবি।”

মিতালী তো বোঝাতে চায়নি তার কাছে টাকা নেই। তবুও ছেলেটা কিভাবে যেন বুঝে গেলো। এই মুহূর্তে নির্ভীক তাকে না নিয়ে খেতে যাবেনা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলল,
-“চল।”

স্কুলের পাশেই একটা হোটেলের মতো জায়গায় গিয়ে বসলো দুজন। সিঙ্গারা আর চায়ের অর্ডার দিয়ে মিতালীর পাশের চেয়ারে ধপ করে বসলো নির্ভীক। ফোন ঘেঁটে সেদিনের তোলা একটা ছবি বের করে মিতালীর সামনে ধরলো। মিটিমিটি হেসে রগড় করে বলল,
-“দেখ আমার সাথে এক পেঁচা মুখো মহিলা গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।”

মিতালীর নজর পড়তেই থা*বা বসালো ফোনে। নির্ভীক ফোন সমেত হাত সরিয়ে নিলো। অল্প শব্দে হেসে বলল,
-“পারবি আমার সাথে?”

মিতালী ক্ষে*পে গেলো। বি*দ্রু*প করে বলল,
-“আমাকে পেঁচা মুখো বলেছিস না? দেখবো তোর বউ কেমন হয়।”

নির্ভীক রে*গে গেলো। মিতালীকে সাবধান করে বলল,
-“বউ নিয়ে কথা বলবিনা খবরদার! আর যাইহোক আমার বউ পেঁচা মুখো হবেনা। সে হবে আমার চোখে সেরা সুন্দরী।”

ভেংচি কাটলো মিতালী। বলল,
-“তুই একটা বিরক্তিকর পারসন। এই বিরক্তির বস্তাকে কোনো মেয়ে সহ্য করবেনা।”

নির্ভীক কুটিল হেসে বলল,
-“তোর গলায় ঝুলে যাই, কী বলিস?”

আৎকে ওঠা গলায় মৃদু চেঁচালো মিতালী। বলল,
-“নাহ্! একদমই না।তোর সাথে থেকে এমনিতেই আমার অর্ধেক চুল পড়ে গিয়েছে। আমার গলায় ঝুলে পড়লে দেখা যাবে ছিলা চান্দি নিয়ে ঘুরতে হবে আমাকে।”

নির্ভীক চোখেমুখে বিশেষজ্ঞ ভাব নিলো। গলা পরিষ্কার করে ইশারায় কাছে ডাকলো মিতালীকে। বলল,
-“কাছে আয়।”

এই বলে নিজেই মাথা ঝুঁকিয়ে মিতালীর কাছাকাছি গেলো। ফিসফিস করে বলল,
-“আমার থুতু দিলে চুল পড়া কমে যায়।”

পিঠে থা*প্প*ড় পড়তেই সোজা ভদ্র হয়ে বসে নির্ভীক। তার ভাব উধাও হয়ে গেলো। প্লেট থেকে একটা সিঙ্গারা তুলে মিতালীর দিকে বাড়িয়ে দিলো।
ওর হাত থেকে সিঙ্গারা নিলোনা মিতালী। প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল,
-” তোর থুতুর বিজ্ঞাপন অন্য কোথাও দিস। ভালো ইনকাম হবে। ”

নির্ভীক দাঁত কেলিয়ে হাসলো।

★★★

সময়টা বিকেলের মধ্যভাগ। তেজস্বী সূর্যের ম্লান হয়ে আসা রক্তিমা আভা। একটুপরই পশ্চিমে হে*লে পড়বে জলধারার কোল ঘেঁ*ষে।
সকালের ঝকঝকে মসৃণ চেহারা আর নেই। বেলার সাথে পাল্লা দিয়ে চামড়ায় রুক্ষতা আর ক্লান্তি ভাব হা*না দিয়েছে। স্কুল ছুটি হতেই দুজনে একসাথে বের হলো। অর্ধেক পথ এগোতেই ইশরাকের দেখা মিললো। বন্ধুদের সাথেই বেরিয়েছে। চাকরির অফার আসলেও সে ঠিক করলো কিছুদিন ঘোরাফেরা করবে। নির্ভীক আর মিতালীর সাথে দেখা হতেই বন্ধুদের বিদায় জানিয়ে এগিয়ে এলো সে।
নির্ভীক বলল,
-“ভাইয়া কোনদিকে যাচ্ছিলে?”

-“বন্ধুদের সাথেই এসেছিলাম। তোদের সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাড়ি যাওয়া যাবে।”

মিতালী দ্বিধান্বিত কন্ঠে বলল,
-“নির্ভীক থাক তাহলে। আমার তো টিউশন আছে।”

ইশারক অবাক হয়ে বলল,
-“সে কি? আমি ভাবলাম একসাথে তিনজনে কিছুক্ষণ সময় কাটাবো।”

নির্ভীক বলল,
-“সাড়ে চারটা থেকেই ওর টিউশন আছে। আর মাত্র পনেরো মিনিট বাকি।”

কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হলেও অধর প্রসারিত করে ইশরাক বলল,
-“চলো, তোমায় পৌঁছে দিয়ে আসি।”

মিতালী বাঁধ সাধলো।
-“না না ভাইয়া। আমি যেতে পারবো। আপনারা বাসায় চলে যান।”

নির্ভীক বলল,
-“ভাইয়া তুমি বরং বাড়ি যাও, আমি মিতালীকে পৌঁছে তারপর বাড়ি যাবো।”

-“ঠিক আছে।”
এই বলে ইশরাক বাড়ির পথে রওনা দিলো। একবার পেছন ঘুরে মিতালীকে পরোখ করে মৃদু হাসলো। মাথা দুদিকে ঝাঁকিয়ে আর দাঁড়ালোনা।

★★★

পুরো বাড়িতে মা- বাবা আর মাহা ছাড়া কেউ নেই। গতকালের বি*চা*র*টা মাহবুবের আত্মসম্মানে লেগেছে। তাই সে বাড়ি ছেড়ে বাজারের একটা কলোনিতে উঠেছে।
এতে মিতালীর খুব একটা যায় আসেনা। তাদের ইচ্ছে হলেই নিজেদের জন্য বরাদ্দ অংশে এসে থাকতে পারে। গোসল সেরে আসতেই মা ভাত দিলেন। খেতে খেতেই মাহার পড়ালেখার ব্যাপারে খোঁজখবর নিলো।দুদিন যাবত মেয়েটার পড়ায় মন নেই। মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে।
মিতালী জিজ্ঞেস করলো,
-“খাওয়াদাওয়া, পড়ালেখা সব ঠিকমতো করিস?”

মাহার কান পর্যন্ত হয়তো কথাটি পৌঁছালোনা। সে আনমনে প্রশ্ন করলো,
-“আচ্ছা আপু, কেউ কি কারো মনে বাস করতে পারে?”

মাহার কথায় ভারি চমকালো মিতালী। বোনের উড়ুউড়ু মন কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে বুঝতে সময় লাগলোনা তার। সরাসরি কোনো জিজ্ঞাসাবাদে না গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
-“মনে বাস করতে হলেও একটা পর্যায় লাগে। আগে নিজেকে উপযুক্ত পর্যায়ে নিতে হবে। আর সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে পড়াশোনা সবার আগে জরুরি। আমি চাই আপাতত পড়াশোনায় মন দে।”

মাহা অতটা ও অবুঝ নয়। সুক্ষ্ম ইঙ্গিতে সে অনেক কিছুই বুঝলো। সত্যিই তো, পড়ালেখা না করলে ওরকম একটা শিক্ষিত মানুষ তাকে কেন পছন্দ করবে? পড়ার টেবিল ছেড়ে আপুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মাহা। টুপ করে চুমু খেয়ে বলল,
-“এজন্যই তোমায় এত ভালোবাসি আপু। আমার সব রকম স*ম*স্যা*র কি সুন্দর সমাধান করে দাও।”

মিতালী মৃদু হেসে বলল,
-“খুব ভালো অবস্থান না হলে এ সমাজ তোমাকে পাত্তা দেবেনা। আজ যারা অ*ব*হে*লা করবে, তোমার শক্ত পজিশন দেখে তারাই তোমার পাশে ঘুরঘুর করবে। তুই খুব বেশি ছোট না। নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে চলাফেরা করবি।”

মাহা আর অপেক্ষা করলোনা। একছুটে পড়ার টেবিলে চলে গেলো। ভালো কিছু করতে হলে, বাবা- মায়ের দুঃখ দূর করতে হলে তার পড়াশোনা প্রয়োজন।
তাছাড়া মানুষটাকে তার লাগবে। এটা জীবন-ম*র*ণের ব্যাপার।
★★★

সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে সামনে এগোতেই একটা রিকশা এসে থামলো। রিকশাচালক লোকটি বললেন,
-“আম্মাজান যাইবেন?”

মিতালী মৃদু হেসে বলল,
-“না চাচা, আমি হেঁটেই যাবো।”

লোকটি কপালের ঘাম মুছে বললেন,
-“এদিকে আর ভাঁড়া পামুনা। আপনে উইঠা পড়েন, কই যাইবেন নামাই দিয়া আসি।”

মিতালী সংকোচ করে বলল,
-“না চাচা, আপনি কষ্ট করে গাড়ি চালাবেন। আমি চড়ব, অথচ আপনার পারিশ্রমিক দিতে পারবোনা।”

লোকটি এবার হাসলেন। বললেন,
-“আরেকদিন দেহা ওইলে দিয়া দিয়েন।”

জোরাজোরিতে মিতালী রিকশায় চড়ে বসলো।
তখনই পেছন থেকে ডাক পড়লো। ইশরাক হাত উঁচিয়ে ডাক দিলো,
-“এই রিকশা যাবেন?”

এগিয়ে এসে মিতালীকে না দেখার ভান করে বলল,
-“ওহ্ মিতালী উঠেছো! আমি দেখিনি। রিকশা পাচ্ছিলাম না বলে এসেছি। আচ্ছা তুমি যাও।”

মিতালী বলল,
-“আপনি যান রিকশায় করে। আমি হেঁটে চলে যাবো।”

অতঃপর রিকশাচালককে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“উনাকে নিয়ে যান চাচা। আপনার ভাড়াটা ও পেয়ে যাবেন।”

ইশরাক বাঁধ সাধলো।
-“না না, তুমিই যাও। আমি পরে আসছি।”

রিকশাচালক একবার ইশরাকের দিকে তাকালেন, ফের মিতালীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“দুইজনেই দ্যাখতাছি দুইজনরে চেনেন। তয় এক লগে যাইতে সমিস্যা কী?”
ইশরাককে বললেন,
-“ওডেন মামা। দুইজনরেই নামাইয়া দিমু।”

ইশারাক মিতালীর দিক থেকে ক্লিয়ার হওয়ার জন্য বলল,
-“আমি পাশে বসলে তোমার কোন সমস্যা হবে না তো?”

মিতালী দ্বিধা নিয়ে একটু চেপে বসলো। ইশরাক পাশে বসলো। চুলের ভাঁজে আঙ্গুল চালিয়ে বলল,
-“চলুন চাচা।”

-“কোথায় নামবে?”

-“হু? এইতো একটু সামনে একটা টিউশন আছে।”
পরপরই মিতালী ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করলো,
-” আপনি কোথায় নামবেন?”

-“আমি? কোথাও না তো!”

মিতালী বুঝতে না পেরে দ্বিধান্বিত চোখে তাকালো। বলল,
-“সরি? বুঝলাম না।”

নিজের জবাবে নিজেই ভড়কে গেলো ইশরাক। একটু হেসে বলল,
-“মজা করলাম। বন্ধুর সাথে দেখা করার আছে।”

মিতালী আর কোনো কথা বললোনা। উনার সাথে কখনো তেমন ভাবে কথা বলা হয়নি। তাই সহজ হতে পারছেনা। ইশরাক উশখুশ করছে। কথা বলতে চাইছে, কিন্তু কী বলবে বুঝতে পারছেনা।
হুট করেই এক অযাচিত প্রশ্ন করে বসলো,
-“প্রেম-ট্রেম কর?”

মিতালী কপাল কুঁচকে তাকালো। এমন প্রশ্নে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।
ইশরাক ভ্রু উঁচিয়ে আবারও জানতে চাইলো।
প্রতিত্তোরে মিতালী ঘাড় নাড়িয়ে ‘ না’ বোধক উত্তর দিলো।

-“গুড গার্ল।”

-“জি?”

ইশারাক বলল,
-“এসব নিয়ে এখন চা*প নিও না। পড়াশোনা কর।”

এবার একটু নয়, অনেকটাই বিরক্ত হলো মিতালী। তখন থেকে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন সাথে একগাদা জ্ঞান দিচ্ছে। চোখেমুখে বিরক্তির আঁচ লক্ষ করে ইশারাক মিটিমিটি হাসলো। বলল,
-“বাহ্, বিরক্ত হলেও দেখছি তোমায় ম*ন্দ দোখায় না।”

নিজের গন্তব্য এসে যেতেই মিতালী নেমে পড়লো। ইশারাকের দিকে না ফিরেই বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো। রিকশা কয়েক মিটার সামনে যেতেই ইশরাক বলল,
-“চাচা, আর যেতে হবেনা। এখানেই থামুন।”

পকেট থেকে দুজনের ভাড়া মিটিয়ে কৃতজ্ঞতা সূচক হেসে বলল,
-“ধন্যবাদ চাচা।”

লোকটি একগাল হেসে বললেন,
-“আপনে গো মনমালিন্য হইছে। আমি তো শুধু নিজের ভাড়াটাই নিছি।”

ইশারাক ঝাঁকড়া চুলে ঝাঁকুনি দিয়ে হাসলো। লোকটিকে কিছু বললোনা। লোকটিও আর বোঝার চেষ্টা করলেন না। বড়লোকের ব্যাপার, তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছেন এটাই ঢের।
উনি এই এলাকার নন। জীবিকার তাগিদে অনেকেই অনেক জায়গায় গিয়ে কাজ করে। এতে সুবিধা হলো উনি দুজনের কাউকেই চিনলেননা। লোকটিকে ইশরাক আগে থেকেই কিছু একটা বুঝিয়ে সামনে পাঠিয়েছিলো।

★★★

বান্ধবীর বাড়ি থেকে ফেরার পথে ইশরাকের মুখোমুখি হলো মাহা। হুট করে তার পা জোড়া থমকে গেলো। মৃদু কম্পনের জোর ধরে আর সামনে এগোতে পারলোনা। ধকধক করে উঠলো হৃৎপিণ্ড। আড়চোখে তাকে দেখার তৃষ্ণা মেটালো। ইশরাক জোরালো গলায় ডাকলো,
-“আরে মাহা, কোথাও গিয়েছো?”

ভড়কে গেলো মাহা। জবাব দিতে কন্ঠ নালি ঈষৎ
কেঁপে উঠলো। আড়ষ্ট ভঙ্গিতে উত্তর করলো,
-“বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিলাম।”

-“এখন শরীর ঠিক আছে?”

মাহার মন ফুঁপিয়ে উঠে বলতে চাইলো “আপনি কেন আমায় নিয়ে ভাবছেন? ভাববেন না, একদম ভাববেন না আমায় নিয়ে। নিজেকে প্রস্তুত করতে দিন। আমি একদিন আপনার সামনে নিজেকে হাজির করে হুট করেই আপনাকে চেয়ে বসবো। ”
কিন্তু বলতে পারলোনা। শব্দগুচ্ছ তুমুল অবরোধ ঘোষণা করলো। মিইয়ে যাওয়া স্বরে জবাব দিলো,
-“জি ঠিক আছি।”

মাহা আর দাঁড়ালোনা। সে প্রস্থান করতেই কপালে ঢেউ খেলানো ভাঁজের সৃষ্টি হলো। মেয়েটা তাকে দেখে কি ভ*য় পেলো, নাকি লজ্জা?
না না, শা*লিদের হতে হয় প্রাণখোলা। শা*লিকে হাত করতে পারলেই বউয়ের মন পাওয়া যাবে। তাকে সহজ হতে হবে।

★★★

ভিড়ভাট্টাহীন সন্ধ্যের নির্জন, শান্ত প্রকৃতির গা ছুঁয়ে পাশাপাশি হাঁটছে দুজন মানব-মানবী। মাঝপথে থেমে পড়লো মিতালী। নির্ভীককে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“চা খাওয়াবি?”

নির্ভীক পা থামিয়ে আশেপাশে তাকালো। সন্ধ্যার সময় অনেক দোকানই বন্ধ থাকে। অদূরে একটা টং দোকানে মিটিমিটি আলো জ্বলতে দেখে বলল,
-“আয় আমায় সাথে।”

মিতালী পিছুপিছু গেলো। দুটো চা নিয়ে ফের রাস্তায় নামলো। চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
-“চা ঠিক জমছেনা। সাথে কিছু হলে ভালো হতো।”

-“বিস্কিট নিবি?”

-“উঁহু, কবিতা নেবো।”

নির্ভীক অল্প শব্দ করে হাসলো। বলল,
-“কবে থেকে আমার গলায় কবিতা এতটা পছন্দ করা শুরু করেছিস?”

মিতালী অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
-“আমি কখন বললাম তোর গলায় কবিতা আমার পছন্দ! শুধু চা টুকু জমছিলো না,তাই কবিতা চাইলাম।”

নির্ভীক আবার ও হাসলো।

“বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অর্থ-পদ চায়
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণসিংহাসন
জয়ের শিরোপা আর খ্যাতির সম্মান,
কে চায় সোনার খনি তোমার বুকের এই স্বর্ণচাঁপা পেলে?
তোমার স্বীকৃতি পেলে কে চায় মঞ্চের মালা
কে চায় তাহলে আর মানপত্র তোমার হাতের চিঠি পেলে,
তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বলো কে চায় বৃক্ষের ছায়া
তোমার শুশ্রূষা পেলে কে চায় সুস্থতার ছাড়পত্র বলো,
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ চায় শ্রেষ্ঠ পদ
কে চায় তাহলে বলো স্বীকৃতি বা মিথ্যা সমর্থন,
তোমার প্রশ্রয় পেলে কে চায় লোকের করুণা
বলো কে চায় তোমাকে ফেলে স্বর্ণমুদ্রা কিংবা রাজ্যপাট?
বলো না তোমাকে পেলে কোন মূর্খ অন্য কিছু চায়,
কে আর তোমার বুকে স্থান পেলে অন্যখানে যায়!”

——মহাদেব সাহা।

আবৃত্তি করতে গিয়ে বিশাল এক ঘোরে ডুবে গেলো নির্ভীক। সর্বদা তার দৃষ্টি ছিলো পাশে থাকা নমনীয় রমণীর পানে।

#চলবে…….