নিরালায় ভালোবাসি পর্ব-১০+১১

0
270

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১০ .

ক্যাম্পাসের মাঠে আর সকলের মতো ইচ্ছেও এক ধারে বসে রয়েছে। একেবারে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকায় এই শীতের মধ্যেও টুপ টাপ করে এক দুই ফোঁটা ঘাম গড়িয়ে পরছে ওর মাথা থেকে। কিন্তু তাও ইচ্ছে ওই ভাবেই বসে রয়েছে। দৃষ্টি 60 ডিগ্রি কোণে হেলে থাকা সূর্যের দিকেই। আমরা তো কেবল রাতের আঁধারে চাঁদের দিকেই পলকহীন তাকিয়ে থাকি। কিন্তু কেউ কী কখনো সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে? থাকেনা। কারণ সূর্যের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। কিন্তু সূর্যের তেজ যখন একটু কম থাকে তখন সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলে অসম্ভব একটা ভালো লাগে। কিন্তু সূর্যদেব এই মুহূর্তে মধ্যগগনে বেশ উত্তপ্ত হয়েই রয়েছে ঠিক নীরবের মতো। ইচ্ছেও নীরবের মতো আকাশের সূর্যের দিকে যতক্ষণ তাকাতে পারছে তাকাচ্ছে পরক্ষণেই চোখ বন্ধ করছে। আবারও চোখ খুলে সূর্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এতে ঠিক ও সূর্যকে দেখতে পারছে না। মাঝে মাঝেই ইচ্ছের মনে হচ্ছে ওর চোখের সামনে ছায়া এসে পড়ছে, কালো ছায়া। কিন্তু তা তো নয়। কোনো ছায়াই পড়ছে না। পুরোটাই এতো আলোর মধ্যে দৃষ্টি রাখার জন্যে হচ্ছে।

ইচ্ছের মনটা এই কদিন খুব খারাপ। নীরব ওর সঙ্গে আগের মতো কথা বলছে না। ইচ্ছেকে আগের মতো খুশি করতে কোনো উটকো কান্ড কারখানাও সে করছে না। ইচ্ছে জানে সেই দিন ইপশিদের বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই নীরব ওর উপর রেগে আছে। ইচ্ছের সঙ্গে সরাসরি কথা নীরব বলে না। ইরাকে শুনিয়ে শুনিয়ে নীরব ইচ্ছেকে কোনো কিছু বলে। ইচ্ছের খুব খারাপ লাগে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবে, নীরব যে ওকে এতো ভালো রেখেছে এটাই তো অনেক ওর জন্যে। ওর আর কি চাই। সামান্য মাথা গোঁজার মতো একটু ঠাঁই। একবার তো ওর জন্যে পরিবারের কতো কথা শুনতে হয়েছে। আবারও শুনুক তা চায় না ইচ্ছে।

ইচ্ছের ঠিক সামনে বসে থাকা নিতু অনেকক্ষণ ধরে বকেই চলেছে। যার কোনো কথাতেই ইচ্ছের হুশ নেই। নিতু ইচ্ছের সিনিয়র, একই ডিপার্টমেন্ট। ক্লাস শুরুর এক মাস পর থেকে ইচ্ছে এই সবে কলেজ আসছে।
সত্যি বলতে ওর এই একসপ্তাহে তেমন কোনো বন্ধুই হয়নি। এই নিতু আর রক্তিমা ছাড়া। রক্তিমা , ইচ্ছের ক্লাসমেট। কিন্তু আজ সে আসেনি, ওর দিদির বিয়ে ছিল গতকাল। এলে সেই দুই দিন পর।

– ” ইচ্ছে, এই ইচ্ছে তোর কী হয়েছে বলতো? এই দুইদিন দেখছি আগের থেকেও বেশ চুপচাপ, কী হয়েছে বল তো?”

সূর্যের দিক থেকে চোখ নামিয়ে সামনে থাকা নিতুর দিকে তাকালো ইচ্ছে। কিন্তু ওই যে চোখটা বড্ড ঝাপসা হয়ে রয়েছে। কিছুতেই নিতুর মুখটা ইচ্ছের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। হাত দিয়ে চোখ রগড়ে কোনো মতে নিতুর দিকে তাকালো ইচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে বুঝতে চাইলো কী বলতে চাইছে নিতু।

– ” এই তোর বর বুঝি খুব খারাপ? তোকে কি কিছু বলেছে যার জন্যে তোর মন খারাপ?” ইচ্ছে মনে মনে বললো, খারপই তো, নীরবের জন্যে। এইদিকে ইচ্ছেকে চুপ করে থাকতে দেখে নিতু তারাহুরো করে ইচ্ছের পাশে সরে গিয়ে ইচ্ছেকে ভালো করে দেখে বললো, ” এই ইচ্ছে তোকে কি মারধর করে? ” ইচ্ছে হাঁ করে নিতুর দিকে তাকিয়ে রইল। কী বলে এই মেয়ে! না হয় ক্রাইম পেট্রোল এর পোকা নিতু, তা বলে সব ক্ষেত্রে ও এই কথাই বলে। নিতুর সঙ্গে ইচ্ছের আলাপ অনেক আগেই। একই টিচারের কাছে ওরা আগে পড়েছে। সেখানেই একবার পিকনিকে গিয়েছিল ওরা। সিনিয়র আর জুনিয়র মিলে।

ইচ্ছে কিছু বলবে তার আগেই ইচ্ছের ফোনটায় নতুন একটা হার্টবিট সাউন্ড বেজে উঠলো। একমাত্র নীরব ফোন করলেই এই হার্টের সাউন্ডটা বেজে ওঠে। এই মিউজিকের গানটা ইচ্ছের খুব ভালো লাগে, হার পল ইহা জি ভর জিয়ো, জো হে সমা কাল হো না হো। শারুখ খানের মুভি ‘কাল হো না হো’। নীরবই এটা রিংটোন হিসেবে সেট করে দিয়েছিল। সেই সময় এটাও বলেছিল, ” শোন ইচ্ছে, আমরা যেহেতু স্বামী স্ত্রী তাই আমরা একে অপরের হার্ট।

ইচ্ছের আগেই ফোনটা ধরে নিতু। ওপাশে নীরব রাগী গলায় ইচ্ছেকে কিছু বলতে ফোন করেছিল। কিন্তু নীরবের কিছু বলার আগেই নিতু বলে, ” এই কেমন মানুষ আপনি আমার বন্ধুকে নির্ঘাত আপনি টর্চার করেন তাইনা। তাই তো ভাবি ইচ্ছে তো এমনিতেই চুপচাপ থাকে। কিন্তু ইদানিং যে কোন খেয়ালে থাকে কে জানে? নিশ্চয়ই আপনি কিছু করেছেন?”

– ” কে বলছেন আপনি?” নিতু হয়তো এই প্রশ্নে নিজের নামটাই উচ্চারণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু নীরবই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ” আমার জন্যে আপনার বন্ধু চুপচাপ না। সে নিজের কারণেই চুপ। ওকে জিজ্ঞেস করুন তো বিয়ের পর আমার দিকে তাকিয়ে একবারও হেসেছে কিনা! সবসময় মুখ ফুলিয়ে বসে রয়েছে। যত সব আলতু ফালতু কাজ করে। নিজের তো এতটুকুও খেয়াল রাখে না। আগের উড়ন চণ্ডী দেখি বেশি ভালো ছিল। এখনকার ইচ্ছে কে ঠেলা মেরে ফেলে দিলেও কিছু বলবে না। ”
নীরব নিজের মতো ইচ্ছের নামে যা পারে নালিশ করার মুহূর্তে নিতু তো হেসেই চলেছে। আর ইচ্ছে, সে তো নিতুর থেকে ফোন নেবার চেষ্টা করছে। দূর থেকে যে নিতুর ক্লাসমেট ওকে ডাকছে সেই দিকে নিতুর হুশ নেই। ইচ্ছের থেকে কোনো মতে একটু বেঁচে নিতু ধীরে সুস্থে বললো , ” খুব ভালোবাসেন না! নাহলে তো ওর নামে এতো কথা বলতেন না!”

থেমে গেলো নীরব। নিতুও ইচ্ছেকে ফোন দিয়ে সেখান থেকে ছুটে বন্ধুদের কাছে গেলো। প্রবীর স্যার এখন ওদের ক্লাসটা নেবে। তার জন্যেই হল টু তে যেতে বলেছে।

অপর দিকে ইচ্ছে কানে ফোনটা ধরতেই নীরব নিজের মনের উত্তর দিয়ে বললো, ” ভালোবাসি কি না এখনও জানিনা। মাঝে মাঝে ভাবি আমি ওকে ভালবাসি না। কিন্তু হুট করেই মন বলে মিথ্যে, তুই ওকে ভালবাসিস। আমি জানিনা আমার সাথে ঠিক কি হয়। তবে দিন শেষে আমি ওকে নিরালায় ভালোবাসতে চাই। কিন্তু আমি ওর মায়ায় পড়েছি, ভালোবাসা হয়তো অনেক দূর। জানিনা ভালোবাসতে পারবো কি …..”

আর বলতে পারলো না নীরব, থেমে গেলো। ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসছে কারোর ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ। নীরব খুব সহজেই বুঝেছে এটা ইচ্ছে। তাই আর সে কথা বাড়ায় না। গলার স্বর শক্ত করে বলে, ” আজ তোকে নিতে যেতে আমার দেরি হবে। তুই কি একা যেতে পারবি? ”

কিছুই বলে না ইচ্ছে। চুপ করে ফোনটা কানে ধরে থাকে। অপর দিকে নীরব হ্যালো, হ্যালো বলেই চলেছে।

– ” তুই এমন কেনো ইচ্ছে। আমার সাথে কথা বললেই কি তোর মুখ খারাপ হয়ে যাবে নাকি। তোকে একবার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম বলে তোর এতো জেদ। আরে আমি তো তোকে ভালোবাসাতো দূর পছন্দও করতাম না। আর এতে আমার দোষটা ঠিক কী আমি নিজেও জানি না। মানুষ হুট করেই কাউকে কোনো কারণ ছাড়াই অপছন্দ করে। আমিও করতাম তোকে। সেটা আমি মানছি। কিন্তু তুই আমাকে ইগনোর করিস। এই যে আমি এতগুলো কথা বলছি তুই তো কিছু বলছিস না। বল কিছু?

ইচ্ছে চুপ করে কানে ফোন নিয়ে বসে রয়েছে। ওদের ডিপার্টমেন্টের একটা মেয়ে ওর পাশ দিয়ে যাবার সময় ওকে দেখে মুখ চেপে হেসে ওর এক বন্ধুকে দেখিয়ে, তার কানে কানে কিছু বলে পুনরায় হেসে দিলো।

ইচ্ছের বিষন্ন দৃষ্টিতে সেইদিকে তাকালো। অপর দিকে ইচ্ছের চুপ থাকা দেখে নীরব বলে উঠলো, ” ছাড় তোকে কিছু বলা মানেই সময় নষ্ট। তোকে একা যেতে হবে না। তুই কলেজেই থাকিস আমি নিয়ে যাব। কথা টুকু বলেই ফোনটা কেটে দিলো নীরব।

কিন্তু ইচ্ছে এখনও ফোন কানে বসে রয়েছে। বিড়বিড় করে কিছু বলে চলেছে। কিন্তু শব্দগুলো প্রকাশিত হচ্ছে না।

( চলবে )

নিরালায় ভালোবাসি
কলমে : তুহিনা পাকিরা
১১ .

এস,কে স্যার এর ক্লাসটা আজ ইচ্ছের কাছে সম্পূর্ণ নতুন। তিনি মাঝে মাঝেই ক্লাস নিতে আসেন। রক্তিমা ইচ্ছেকে আগে থেকেই বলে রেখেছে, এস,কে স্যার ভীষণ রাগী। তবে ইচ্ছের এই 50 মিনিটের ক্লাসে মোটেও স্যারকে রাগী মনে হয়নি। তিনি বেশ ভালোই হেসে হেসে লেকচার দিচ্ছিলেন। কিন্তু ইচ্ছের ভাবনাটা হুট করেই যেনো পরিবর্তন হয়ে গেল।

রোল কলের সময় সবাই নিজের অ্যাটেনডেন্স দিলেও একমাত্র বাদ যায় ইচ্ছে। নিজের নাম পেরোতেই সে উঠে দাঁড়িয়েছিল। সেই মুহূর্তে ও পাশের মেয়েটিকে ইশারা করলেও সে স্যার কে জানায়নি যে 10 রোলের মেয়েটি এখানে অ্যাটেন্ড রয়েছে। ইচ্ছের মনে আছে প্রথম দিনের ক্লাসে রক্তিমা সেই দিনের প্রতিটা ক্লাসে ইচ্ছের সমস্যার কথা স্যারদের বলেছিল। তারপর থেকে প্রতিটা ক্লাসে স্যার নিজেই ইচ্ছের অ্যাটেনডেন্স দিয়ে দেয়। কিন্তু এস, কে স্যার সম্পূর্ণ নতুন ইচ্ছের কাছে। দুজনেই দুজনকে চেনে না। আর পাশের মেয়েটাও কিছু না বলায় ইচ্ছে উঠে দাঁড়ায়। ততক্ষনে এস, কে স্যার অ্যাটেনডেন্স এর খাতা টা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছেকে দেখে তিনি বুঝতে পারলেন যে মেয়েটি অ্যাটেনডেন্স দিতে ভুলে গেছে । তাই তিনি ধমক দিয়ে বললেন, ” আমি সবাই কে প্রথম দিনই জানিয়েছি, যে আমার ক্লাস মানে মনোযোগটা আমার পড়ানোর দিকেই থাকবে। কিন্তু তোমার দেখি উল্টো। মন কোথায় ছিল, বাড়িতে?

প্রতিটা ধমকেই কেঁপে উঠলো ইচ্ছে। ইচ্ছের মাথার সিঁদুর দেখে স্যার বুঝলেন যে ইচ্ছে বিবাহিত।

– ” ও তোমার মন তবে সংসারে রেখে এসেছ না। পড়াশোনা করতে না চাইলে করবে না। কিন্তু ক্লাসে ডিস্টার্ব আমি একদম পছন্দ করি না। এইবারের মতো মাফ করছি। নেক্সট টাইম থেকে যখন ক্লাসে এন্ট্রি নেবে আশা করি ক্লাসটা সুষ্ঠু ভাবে করতেই আসবে। ”

ইচ্ছে মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। সব থেকে বেশি খারাপ লাগলো এটা দেখে যে ক্লাসের 26 টা ছেলে মেয়ে কেউ কিছু বললো না। সবাই যে যার মতো বসে বসে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিন্তু কিছুই বললো না। হয়তো এই পরিস্থিতিতে ওদের বেশ আনন্দ লাগছে ওকে দেখে।

-” নাম কি ? ”

বলতে পারলো না। কিছুক্ষণ আগেই গুছিয়ে রাখা খাতাটা ব্যাগ থেকে বের করে পেনটা বের করতে যেতেই স্যার ধমকে উঠলেন।

– ” নিজেকে কী ভাবো? ভাব নিচ্ছো আমার সামনে! বললাম না তোমার নাম কী? বাংলা বোঝো না? ”

ইচ্ছে পেন দিয়ে খাতায় কিছু একটা লিখতে গেলো। স্যার পুনরায় রেগে গেলেন। ইচ্ছের কাছে এগিয়ে গিয়ে হাত থেকে খাতাটা কেঁড়ে নিয়ে বললেন, “গেট লস্ট। তোমাকে এখানে আমি দেখতে চাইছি না। ”

তখনই বোধ হয় পাশের মেয়েটি একটু সদয় হলো। তাই অবশেষে স্যার কে বললো, ” স্যার ওর নাম ইচ্ছে। ”

– ” বাহ্ ইচ্ছে। তো ইচ্ছে নামটা বাবা মা শখ করে ইচ্ছে রেখেছে বলে নিজে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছো। খুব ভালো। তবে নিজের মন মর্জি চলতে চাইলে অন্য কোথাও চলো। আমার ক্লাসে এই সব আমি চাই না। আন্ডারস্ট্যান্ড? ”
ঘাঁড় নাড়ে ইচ্ছে। স্যারের মনে ইচ্ছেকে একটু অন্যরকম লাগলো। মেয়েটিকে দেখে তার মনে হচ্ছে যে এই মেয়েটি তাকে ভয় পাচ্ছে। কিংবা ভয় পাওয়া তার স্বভাব। কিন্তু মেয়েটি এমন কথা না শোনার মতো বিহেবিয়র করছে কেনো? কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি আর কিছু বলতে চাইলেন না। ইচ্ছের ঘাঁড় নাড়া দেখে ওকে পুনরায় সাবধান করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল।

সেই মুহূর্তে কেউ কেউ ইচ্ছেকে দেখে হাসলো। তো কেউবা স্যার কে সত্যিটা বলতে পারলো না বলে মনে কষ্ট লাগলো। এই ক্লাসের প্রতিটা ছেলে মেয়ে এই স্যারকে ভালোই ভয় পায়।

সবার সামনে নিজেকে আর হাসির পাত্র করতে পারলো না ইচ্ছে। ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলো। আগেই ও নীরবকে টেক্সট করে জানিয়ে দিয়েছে যে ও একা বাড়ি ফিরতে পারবে। সেই মতোই ইচ্ছে বেরিয়ে গেলো। ক্যাম্পাসের বাইরে আসতেই টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হলো। কিন্তু ইচ্ছে বৃষ্টির মধ্যেই হাঁটা দিলো। আজকের অপমানটা খুব কষ্ট লাগছে। আগেও খারাপ লাগতো। একটু আগেই নীরবের বলা কথা তারপর ক্লাসের ঘটনা কিচ্ছু ভালো লাগছে না। কিচ্ছু না।

ইচ্ছে যখন বাড়িতে গেল তখন বৃষ্টি তে ভালোই ভিজে গেছে ও। একে শীতকাল, তার উপর বৃষ্টি সব মিলিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়িতে ফিরেছে ইচ্ছে। কিন্তু বাড়িতে এসেই একটা পোঁড়া গন্ধ নাকে এসে লাগলো ইচ্ছেই। বাড়িতে একেই রুমা দেবী নেই। তার উপর আজ আশাও কাজে আসেনি। তাহলে কী পুড়ছে? কথাটা ভেবেই ইচ্ছে রান্না ঘরে ছুটলো। ঠিক তখনই নীরব উপর থেকে ছুটে নেমে এলো। ইচ্ছে গিয়ে দেখে নুডলস্ পুড়ে কিচ্ছু নেই। পুরো কালো হয়ে গেছে। নীরব ছুটে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ আগেই ও নুডলস্ টা ওভেনে বসিয়ে উপরে গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বসের কল। কয়েক দিন একটা নিউ প্রজেক্টে ওরা ব্যস্ত থাকলেও আজ প্রজেক্টটা সাবমিট করে দিয়েছে নীরব। তার জন্যেই অফিস নীরবের অফ কয়েকদিন। বিয়ের ছুটিটা তখন নীরব পাইনি, তাই এখনই ওর ছুটিটা অফিস থেকে গ দেওয়া হয়েছে। ওই কথা বলা শেষে নীরবের নাকে উটকো গন্ধ টা এসে লাগে।

ইচ্ছে ততক্ষনে ওভেন থেকে কড়াই নামিয়ে সব নতুন করে আবার বসিয়ে দিয়েছে। ও বুঝতে পেরেছে নীরবের হয়তো খিদে পেয়েছে। নীরব চুপ করে ইচ্ছের দিকেই তাকিয়ে রইলো। কিন্তু ইচ্ছেকে দেখেই বুঝতে পেরেছে যে এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। তাই কথা না বাড়িয়ে ওকে জোর করে ঘরে নিয়ে গেল।

– ” যা আগে গিয়ে চেঞ্জ কর। শরীর খারাপ করবে।”
ইচ্ছেও চুপচাপ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো। নীচে গিয়ে ইচ্ছে এক দিকে নুডলস্ বানাচ্ছে। অপর দিকে নীরব চা করতে লাগলো। নুডলস্ এর সাথে চা খেতে ওর বেশ ভালো লাগে।

বিকেলের শেষ আলোয় দুজনে মিলে বারান্দায় বসে বসে নুডলস্ আর চা খাওয়ার ছলে নীরব ইচ্ছেকে আজ রাগিয়ে ইচ্ছের ভাগের নুডলস্ খেতে চাইলেও সেই কাজে সফল সে হয়নি। কারণ ইচ্ছে নুডলস্ ছুঁয়েও দেখছে না। ফাঁকা চায়ের কাপেই চুমুক দিয়ে চলেছে সেই কখন থেকে। কোন খেয়ালে সে আছে কে জানে?

(চলবে)