নীড় হারা পাখি পর্ব-১৯+২০

0
296

#নীড়_হারা_পাখি
#১৯তম_পর্ব

বিগত সপ্তাহ দুয়েক ঘর থেকে বের হওয়া বারণ করে দিয়েছে মা। ধিঙ্গি মেয়ে রাস্তায় বের হয় ব্যাপারটি তার পছন্দ নয়। এদিকে ঘরের ভেতর ও যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে। যেন অবাধ গগনে উড়তে থাকা কোনো বিহঙ্গিনীকে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়েছে চার দেওয়ালের খাঁচায়। সে শ্বাস নিচ্ছে ঠিক ই, কিন্তু কোথাও যেনো দম আটকে আসছে। এর মাঝেই ছোট্ট কুকুরের ঘেউ ঘেউ কানে আসলো। তুলিকা নিচে তাকাতেই দেখলো সেদিনের এই কুকুরটি বারান্দার দিকে মুখ তুলে তাকে ডাকছে। তার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে রোদ্দুর। সাদা একটি হুডি জ্যাকেট পরে আছে সে। তুলিকা তার দিকে তাকাতেই সে হাতের ইশারা করলো। তুলিকা বুঝলো না প্রথমে। কিছু সময় বাদে বুঝলো তাকে নিচে নামার কথা বলছে সে। হতবিহ্বল তুলিকা কিছুসময় তাকিয়ে রইলো রোদ্দুরের হাস্যজ্জ্বল মুখখানার দিকে। সদা ব্যস্ত পাড়ার মোড়ের কোলাহল, আড্ডার স্বর, পড়ন্ত বিকেলের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য সব ই যেনো ঝাপসা ঠেকলো তার কাছে। নিরীহ চোখজোড়া চেয়ে রইলো সুদর্শন পুরুষটির দিকে। সে হাসছে, পুরুষের হাসিও বুঝি এতো সুন্দর হয়! হ্য বোধ হয়, তুলিকা জানে না। তবে রোদ্দুর নামক পুরুষটির হাসি সর্বদাই সুন্দর। রোদ্দুর ইশারায় শুধালো,
“নামবে না?”

তুলিকা উত্তর দিলো না। তবে অবুঝ মনটা মায়ের বাঁধা না মেয়েই ছুটলো রোদ্দুরের কাছে। দরজাটা হাট করে খোলাই রইলো।

তুলিকা নিচে নামতেই ছোট কুকুরটি তার কাছে এসে ঘেউ ঘেউ করলো। কি মায়া ভরা চোখ! তুলিকা তার লোমশ গায়ে আলতো হাত বুলালো। ধীর স্বরে শুধালো,
“ওকে পেলে কোথায়?”
“বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম”
“তোমার বাড়ি?”
“হ্যা। বাড়ি বলতে তো আমার বাড়ি ই বোঝায়”
“তোমার মা ঠাঁই দিলো?”
“আমার মাকে কি নির্দয় মনে হয় তোমায়?”

প্রশ্নটা শুনতেই হাত থেমে গেলো তুলিকার। মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো, গাঢ় কালো পলকহীন নয়ন জোড়া তাকে দেখছে। রোদ্দুরের শ্যাম মুখশ্রী খুব নিকটে চলে এসেছে। দূরত্বটা নিরাপদ নয়। তুলিকা মাথা নামিয়ে নিলো। অপ্রস্তুর স্বরে বললো,
“আমি তো বলি নি সে নির্দয়”
“হ্যা, তবে খ’চ্চ’র বলেছিলে”

তুলিকা চুপ করে রইলো। রোদ্দুর এখনো তাকে দেখছে। তার ঠোঁটের কোনে দুষ্টুহাসি। মেয়েটিকে বিব্রত করতে মন্দ লাগছে না। পড়ন্ত বিকেলের কমলা আলোয় তার রক্তিম মুখখানা হৃদয়ে কম্পন তৈরি করছে ক্রমশ। উড়ন্ত অবাধ্য চুলগুলো একবার ছুয়ে দেবার ইচ্ছে কোথাও না কোথাও ঠিক উঁকি দিচ্ছে। বেপরোয়া নয়নজোড়া আটকে আছে নিষ্পাপ গোলাপের পাঁপড়ির ন্যায় অধরজোড়ায়। হৃদয়ের কম্পন বাড়ছে। একটা সময় প্রেম নামক শব্দটি নিয়ে বেশ খিল্লি উড়াতো রোদ্দুর। বন্ধুদের প্রেমে অন্ধ হওয়াটাকে নিয়ে মজা নিতো নিষ্ঠুর ভাবেই। বন্ধু তো সই, রবিন ভাইও ছাড় পায় নি। তানি আপুর ফোন পেলেই সে সব ছেড়ে ছুড়ে ফোন আলিঙ্গন করতেন। ফলে নিতান্ত কাজপ্রেমী মানুষটিও হয়ে উঠতো বেখেয়ালী রোমিও। রোদ্দুর এই নিয়ে বেশ মজা নিতো। বলতো,
“এক কাজ করলেই পারো তানি আপুর ওড়নায় নিজেকে বেঁধে রাখো, নয়তো নিজের পকেটে তানি আপুকে পুরে রাখো। দিন দিন প্রেমিকা চিপকু হয়ে যাচ্ছো কিন্তু, ব্যাপারটা বিপজ্জনক”

রবিন ভাই এর ঠোঁটে হাসির জোয়ার উঠতো, হাসতে হাসতে বলতেন, “বাছা! প্রেম তো করো নি। একবার করে দেখোই না, সেদিন আমিও দেখবো কে কার চিপকু হয়”

আজ অস্থিমজ্জাও টের পাচ্ছে কথাটির মর্মার্থ। সত্যি ই তো অগোচরে একটি কোমলহৃদয়ী মেয়ে হা’না দিলো অবাধ্য হৃদয়ে। শুধু হৃদয়ে ঘাপটি মেরে থাকলে তো হতোই, সে সর্বত্রে নিজের বিস্তার ঘটিয়েছে। রাজত্ব করে নিয়েছে একলা চিত্তে। রোদ্দুর ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“মুখে কুলুপ আটলে যে”
“বলেছি বেশ করেছি, আমি তার সাথে সংসার করবো নাকি?”
“তাই বুঝি?”

তুলিকার জেদী উত্তরে গা কাঁপিয়ে হাসলো রোদ্দুর। মেয়েটিকে এতো ভালো লাগে কেনো! কেনো দম বন্ধ হয়ে যায় তার একঝলক না দেখলে। তুলিকা তুলতুলকে আদর করছে। সময়ের প্রবাহ গতিশীল। একটু বাদেই বেলার অন্ত ঘটবে। ঝুম সন্ধ্যা ধীর পায়ে থামবে ধরণীর বুকে। বেহায়া হৃদয়টা যে মানছে না। তাই বিনা ভনীতায় বলে উঠলো,
“আমার সাথে ঘুরতে যাবে তুলিকা?”
“কোথায় যাবো?”
“ধারে কাছেই যাবো, শুধু একটু নিরিবিলি চাই”
“মা বকবে”
“আমি সামলে নিবো, যাবে?”

তুলিকা পিটপিট চোখে কিছু সময় চাইলো। তারপর কি ভেবে বলল,
“যাবো”

রোদ্দুরের হাসি প্রসস্থ হলো। বুকের মধ্যিখানে বয়ে গেলো শান্তির লহর___________

*****

মাগরিবের আযান কানে আসছে, কিন্তু এখনো বিছানাতেই সুরভী। শরীরটা ভালো লাগছে না। ক্লান্তি যেনো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে তাকে। এ অবশ্য নতুন নয়। বেশ কিছুদিন যাবৎ ই এই ঝামেলাটি দেখছে সে। বার্ধক্য কি তবে চলে এলো? নাহ! তা হবে কেনো, এখনো তো ত্রিশে পৌছানো হলো না। মাথাটা ঝিমঝিম করে, অরুচি বাড়ছে খাবারে। বিরক্তি কাটতে চায় না। সকাল থেকেই নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে। অভিলাষা বেঁচারীর শরীরটাও যে খুব ভালো তা নয়। তাইতো আজ ঘরের ভার হিমা বেগম ই নিলেন। শ্বাশুড়ি তাকে বড্ড স্নেহ করে, অভিলাষার প্রতি অভিমানের পাহাড়টি কমছে ধীরে ধীরে। এতে সুরভীর আনন্দ বেড়েছে বই কমে নি, সে কখনো অভিলাষাকে হিংসে করে না। তবে আফসোস হয়, আফসোসটি নিজের বর্বর ভাগ্যের উপর। যে জিনিসগুলো জীবনে অধিক চাইতো সেটুকুই নসিবে জুটে নি। পড়াশোনা করার ইচ্ছে ইহজনমে ছিলো না সুরভীর। অনেক নারী হয়, যাদের উচ্চাকাঙ্খা থাকে না। সুরভী তেমন ই নারী। তার স্বপ্নটি ছিলো সংসার। একটি সুখে মোড়া সংসার। যেখানে স্বামীর প্রণয়, সন্তানের আহ্লাদ আর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ, দেবরের স্নেহে থাকবে টুইটুম্বর। নিজের সবকিছু দিয়ে আগলে রাখবে সে সেই সংসারকে। তুরানের সাথে বিয়ের সময় ও এমন স্বপ্ন দেখেছিলো সে। বাবা যখন বলেছিলো,
“মা অনেক বড় পরিবার, বড় বউ তুমি। দায়িত্বের ভার বইতে পারবে?”

সুরভী কেবল হেসেছিলো। সে আত্মবিশ্বাসী ছিলো, সে পারবে। কিছুটা অংশ পেরেছেও কিন্তু বাকিটা ঝাপসা হয়ে আছে। স্বামী নামক প্রহেলিকার সমাধান সে পায় নি। আফসোসটুকু এটাই। এতো বছরের সংসারে এখনো সে পথ হারা পথিক, নীড় হারা পাখি। তবুও এখানে পড়ে আছে। দাঁত কামড়ে, কষ্টটুকু গিলে পড়ে আছে এই ভাঙ্গা সংসারে। কারণ ওই স্বামী নামক মানুষটাকেই সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসেছে। হয়তো এই ভালোবাসাই তাকে স্বর্বসান্ত করবে।

দরজায় কড়া নাড়ছে কেউ। তীব্র মাথা যন্ত্রণা সহ্য করেই উঠে বসলো সুরভী। ব্যাথাতুর কন্ঠে বললো,
“কে?”
“ভাবী আমি, তিমির”

শালটা দিয়ে ঠিক মতো নিজেকে পেচিয়ে নিলো সুরভী। তারপর বললো,
“আসো”

দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো তিমির। বিনা সংকোচেই ভাবীর বিছানায় বসলো সে। সুরভী উঠে বসে হেলান দিলো। তিমির বললো,
“ঘুমাচ্ছিলে?”
“চোখ লেগে এসেছিলো, ভালো হয়েছে ডেকেছো। নয়তো নামায কাজা হতো”
“আমি তাহলে পড়ে আসি?”
“দরকারী কিছু?”

তিমির ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,
“একটা পরামর্শ লাগবে”
“আমার মতো মানুষ কি পরামর্শ দিবো! তুমি বরং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করো”
“সাহসে কুলোচ্ছে না, তুমি তো জানোই ভাইয়া আমার উপর রেগে আছে খুব”

বলেই মাথা নামিয়ে নিলো তিমির। সুরভীও দ্বিতীয়বার শুধালো না। তুরানের সাথে ভাই বোনদের সম্পর্কটি পিতা সন্তানের। তাদের শাসন করে সে, তাদের ছোট ছোট আবদারের খোঁজ থাকে সর্বপ্রথম। অথচ বন্ধু হবার বেলায় সে হয়ে যায় শেষ বেঞ্চে বসা নিরব ছাত্র। ভাই বোনগুলোও তিমিরের নাম শুনলেই শিটিয়ে যায়। সুরভীকে নিজের অন্তরঙ্গ বন্ধু ভাবলেও বড় ভাইটিকে জমের মতো ভয় পায়। সুরভী নিঃশব্দে হাসলো। শান্ত গলায় বললো,
“বলো, কি পরামর্শ চাও”
“আমি একটা বিশ্রী চোরাবালিতে ফেঁসে গেছি। আমি বের হতে চাই, কিন্তু সবকিছু ধোঁয়াশা লাগছে”

তিমিরের কন্ঠে অসহায়ত্বের ছাপ। যা মূহুর্তেই উদ্বিগ্ন করে তুললো সুরভীকে। অস্থির হয়ে বললো,
“কি হয়েছে?”

********

দরজায় বিশ্রী ভাবে কলিংবেলের শব্দ বিরক্ত করে তুললো অভিলাষাকে। এতো হিংস্র অত্যাচার চলছে মনে হচ্ছে কলিংবেলটি খুলে ফেলবেন। যে এই অত্যাচার করছেন সে কি ভুলে গেছে এই বাড়িতে মানুষ থাকে, রোবট নয়। এতো দ্রুত ছুটে যেয়ে কি করে দরজা খুলবে তারা। তিতিরটা পড়ছে, তুলিকা ঘরের ভেতর, ভাবীর শরীর ভালো নেই, আর মা আজ ঘরের কাজ করে ক্লান্ত। আর অভিলাষা? ভারী পেটটা নিয়ে ধুম করে উঠতে পারে না সে। সময় লাগে। বাবা অবশ্য বাহিরে নামায পড়তে গিয়েছেন। কিন্তু তার আসতে আসতে যে আটটা বাজবে। তবে কে এই ভোর সন্ধ্যায় অত্যাচার করছে! পেটে হাত দিয়ে উঠে বসলো অভিলাষা। শালটা কোনো মতে পেচালো। তারপর ধীর পায়ে সদর দরজার দিকে পা বাড়ালো। দরজা খুলতেই কপালে চোখ তুললো। রোদ্দুরের মা শেফালী বেগম রুদ্রমূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন। অভিলাষা অপ্রস্তুত স্বরে বলল,
“আন্টি আপনি? এই সময়?”
“তোমার পাগল ননদ কোথায় অভিলাষা?”

মহিলার কথার ধরণ বেশ উটকো ধরনের। কোনো সূচনা, উপসংহার নেই, “ভালো আছো?”, “শরীর কেমন?” এসব প্রশ্নের মোটেই ধার ধারে না সে। প্রথমে অবাক করলেও এখন আর অবাক করে না অভিলাষাকে। সে একটু থেমে উত্তর দিলো,
“তুলিকা ঘরে, তিতির পড়ছে। আমার এই দুজন ই ননদ। পাগলী ননদ তো নেই।”

অভিলাষার শানিত বাক্য সহ্য হলো না শেফালী বেগমের। হিনহিনে কন্ঠে বললেন,
“ভুল, তোমার পাগলী ননদ এখন আমার ছেলের মাথা চিবুচ্ছে। তার সাথে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরছে কোথাও”
“কি যাতা বলছেন আন্টি? একটু লাগাম দিন”
“তাহলে ডাকো, আমি ও দেখি কোন ঘরে আছে সে। আমার চোখ কি ভুল!”

শেফালী বেগমের হুক্কা হুয়াতে হিমা বেগমের আগমন ঘটলো। তিমির এবং সুরভীও বেড়িয়ে এলো নিজেদের কথোপকথন শেষে। শুধু তিতির বের হলো না। হিমা বেগম শেফালী বেগমকে দেখে মোলায়েম স্বরে বললেন,
“ভাবী, ভেতরে আসেন”
“রাখেন আদিক্ষেতা, আগে নিজের পাগল মেয়েকে ডাকেন”

নিজের বোনকে এমন সম্মোধন সহ্য হলো না তিমিরের। শীতল স্বরে বললো,
“আন্টি, শ্রদ্ধা জিনিসটা আপেক্ষিক। অনেকে বৃদ্ধ হলেও তা পায় না, অনেকে ছোট থাকতেই পায়। সুতরাং নিজের শ্রদ্ধার জায়গা হারাবেন না”
“সেটা তোমার বোন আসলেই না হয় ঠিক করে নিবো। বেশ ভালোই তো, নিজের পাগলী বোনকে ঠিক ই আমার ছেলের উপর ছেড়ে দিয়েছো। পাগল মেয়ে, বিয়ে হচ্ছে না। ঘাড়ে বসে আছে। একটা ভালো ছেলের ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিলে কেল্লাফতে”

আন্টির কথাগুলো বুঝতে বাকি রইলো না তিমিরের। রোদ্দুর তাহলে নিজের জেদ ছাড়ে নি। সে এখনো তুলিকাকে সুস্থ করার পণ অক্ষত রেখেছে। যদিও তিমির তাকে বার বার বারণ করেছে। তবুও। এই ভয়টাও তিমির পেয়েছিলো। ছেলেটির অযাচিত জিদে তার বোনটিকে পিষতে হবে সমাজের যাতাকলে। তিমির দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
“তুলিকা, তুলিকা”

তুলিকার সাড়া মিললো না। এদিকে নিজ তিতিরের ভেতরটা কাঁপছে। বারবার ফোন করছে রোদ্দুরকে। সে তো জানে না, সদ্য প্রেমে পড়া ছেলেটি এখন মগ্ন তার প্রেয়সীর অবুঝ মুখশ্রীতে। তার ফোনটা বাজলেও কানে যাচ্ছে না। শেফালী বেগমের মুখে ক্রুর হাসি। তিনি বলে উঠলেন,
“কি কোথায় তোমার বোন?”
“আমি দেখছি”

বলেই সুরভী ভেতরে চলে গেলো। পার্টিশন করা ঘরটির দরজা আটকানো। তিতির শব্দ করে পড়ছেও না। সুরভী কড়া নাড়লো বহুবার। দরজা খুললো না কেউ। এরপর কড়া কন্ঠে বলল,
“তিতির দরজা খোল, আমি তিন পর্যন্ত গুনবো”

তিন অবধি গোনার প্রয়োজন হয় নি। তার পুর্বেই ভীত তিতির দরজা খুলে দিলো। সুরভী তাকে শুধালো,
“তুলিকা কোথায়?”

চুপ করে রইলো সে, ইতোমধ্যে সেখানে উপস্থিত হলেন হিমা বেগম। মেয়ের বাহু ঝাকিয়ে বললেন,
“তুলিকা কোথায়?”
“রোদ্দুর ভাই ঘুরতে নিয়ে গেছে”

কথাটি শেষ হবার পূর্বেই অতর্কিতে চ’ড় পড়লো তিতিরের কোমল গালে। ফর্সা গালটা লাল হয়ে উঠলো। চোখে জমলো আঘাতের যন্ত্রণা। হিমা বেগম আবারো মা’র’তে গেলে সুরভী তাকে বাঁধা দিলো। ভুলটা তাদের। মেয়েটি বিকেল থেকে বাড়িতে নেই অথচ একটি মানুষ টেরটি অবধি পায় নি। ভেবেছে হয়তো একাকীত্বে বারান্দায় বসে রয়েছে। তিতিরকে মাঝে হিমা বেগম শুধিয়েছিলেন, সে অকপটে মিথ্যে বলেছিলো,
“আপা ঘুমোচ্ছে”

অথচ মেয়েটি বাড়িতেই নেই। শেফালী বেগম দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। সুরভী যেখানে এলো। তিমির শুধালো,
“তুলিকা কোথায় ভাবী?”
“রোদ্দুরের সাথে ঘুরতে গিয়েছে”

কথাটি শুনতেই শেফালী বেগমের বিদ্রুপখানা হাসিটি প্রসস্থ হলো। তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,
“মিললো তো কথা? তোমার ননদ আমার ছেলেটার মাথা চিবুচ্ছে। কি শিক্ষা দিয়েছো? ছেলে দেখলেই গায়ে উঠে পড়ে”

অভিলাষা কিছু বলতে যাবার আগেই সুরভী হেসে বলল,
“হ্যা, মিললো বটে। তবে একটা জিনিস কি আন্টি আমাদের মেয়ে কিন্তু একটু মানসিক ভাবে অসুস্থ; অথচ রোদ্দুর একজন সুস্থ মানুষ। সে একটি মেয়েকে নিয়ে কোন আক্কেলে ঘুরতে গিয়েছে? এখানে আপনার চড়াও হওয়াটা কি খাটে? রোদ্দুর কি বাচ্চা মানুষ? তার যে খারাপ কোনো মতলব নেই তার কি ভরসা? একটা জোয়ান ছেলে একটি যুবতী মেয়েকে বিনা অনুমতিতে বাহিরে নিয়ে গেছে। সে কাউকে শুধিয়েছে? নাহ। এখনও কিন্তু তারা বাড়ি ফিরে নি। হ্যা, আমার দোষ আছে, মেয়েটিকে দেখে রাখি নি। কিন্তু আপনার ছেলে সে ধোঁয়া তুলসি পাতাটি নয়। তাহলে আমাদের মেয়ের গায়ে কলঙ্ক ছোড়ার পূর্বে নিজের জমিন দেখে নিয়েন। আর একটা কথা, নিজের ছেলেকে ফোন করে জানিয়ে দিন, আমার ননদ আটটার আগে যেনো বাড়ি ফিরে। সুস্থ ভাবে। নয়তো পুলিশের কাছে যেতে আমি সময় নিবো না”

সুরভীর কথায় হাসিটুকু মিলিয়ে গেলো শেফালী বেগমের। তার মুখে জমলো আষাঢ়ের মেঘ মেদুর। বেশ লজ্জিত ও হলেন। চেয়েছিলেন পরিবারকে শাষাতে। কিন্তু নিজেই বোকা বনে গেলেন। এক মিনিট না দাঁড়িয়ে হনহন করে বেড়িয়ে গেলেন তিনি। সুরভী চিন্তিত স্বরে বলল,
“রোদ্দুরকে একটা ফোন দাও তিমির, আমার ভয় হচ্ছে”

******

রাতের কালো আকাশে টিমটিমে তারার মাঝে পূর্ণচন্দ্রমা। হলদেটে চাঁদটি মেঘেদের চাঁদর সরিয়ে নিজের সৌন্দর্য্য প্রকাশে ব্যস্ত। কিন্তু সেই প্রকাশ ও ফিঁকে ঠেকছে নিজের কাছে থাকা চাঁদটির সামনে। রোদ্দুর এখনো তার প্রেয়সীর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। তুলিকা তেঁতুলের আঁচারটা খেতে খেতে বললো,
“কি দেখছো?”

হীম বাতাসে মেয়েটির ঠোঁট কাঁপছে। নাক হয়ে গেছে লাল। অবাধ্য চুল গুলো মুখের সামনে পড়ছে। এতে অবশয় কিঞ্চিত বিরক্ত হচ্ছে সে। বার বার হাতের উলটো পাশ দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। রোদ্দুর মৃদু হাসলো। আলতো হাতের ছোয়ায় চুলগুলো কানের পেছনে ঠেলে দিয়ে ঘোরলাগা কন্ঠে বলল,
“আমার এক ফালি জ্যোৎস্নাকে দেখছি”

তুলিকার অবুঝ নয়ন কিছুসময় তাকিয়ে রইলো। তারপর দৃষ্টি নামিয়ে বলল,
“বুঝি নি”
“বোঝা লাগবে না, বাড়ি চলো। ঠান্ডা পড়েছে। দেখেছো হাত বরফ হয়ে আছে”
“বাড়ি, আমার বাড়ি যেতে ভালো লাগে না। নিজেকে কয়েদি কয়েদি লাগে। দমবন্ধ হয়ে আসে। তুমি আমাকে একটা মুক্ত আকাশ দিবে ডাক্তারবাবু? আমার যে উড়তে ইচ্ছে করে”

তুলিকার কন্ঠে বিষাদের ছোয়া। অবাদ্ধ হৃদয়ের হাহাকারটি ঠিক ই শুনলো রোদ্দুর। কিন্তু উত্তর দিলো না। তুলিকার শীতল হাতটি নিজ জ্যাকেটের পকেটে পুরলো। তারপর পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। তুলিকাও বাঁধা দিলো না। মন্দ লাগে না এই পুরুষটির স্পর্শ_______

*******

সিএনজি থামলো তুলিকার বাড়ির সামনে। সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে দিতে দিতেই দেখলো তিমির দাঁড়িয়ে আছে কেঁচি গেটের কাছে। তুলিকাকে দেখেই ধীর কন্ঠে বলল,
“তুলি, ভেতরে যা”

তুলিকাও বাধ্য মেয়ের মতো ভীত পায়ে প্রবেশ করলো বাড়িতে। রোদ্দুর কিছু বলতে গেলেই রুদ্র কন্ঠে বলল,
“তোমাকে নিষেধ করেছিলাম। কি চাইছো বলোতো রোদ্দুর ভাই? আমাদের শান্তি কেড়ে নিচ্ছো কেনো?”
“মানে?”
“মানে তোমার মা এসেছিলেন। আমার বোনকে ইচ্ছেমতো কথা শোনাতে। তাকে না পেয়ে আমাদের শুনিয়েছেন। কত ফোন দিয়েছি। ধরো নি তুমি। চিন্তা হচ্ছিলো আমার বোনের জন্য। কি আক্কেল তোমার, অসুস্থ মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলে। যদি কিছু হতো?”

মায়ের কথাটি শুনতেই স্তদ্ধ হয়ে গেলো রোদ্দুর। আঁচ করতে পারলো কি ঘটেছে। মোবাইলটা বের করলো। ১১৭টা মিসড কল। কখন যে সাইলেন্ট হয়ে গেছে টের পায় নি। তিমিরের কথাটির যুতসই উত্তর দেবার আগেই সে আবারো নিয়ন্ত্রণ হারালো। রুদ্র স্বরে বললো,
“এই বার করেছো, ব্যাস আর নয়। আমার বোন থেকে দূরে থাকবে। আচ্ছা রোগীর অভাব তোমার? শুনেছি খুব ভালো ডাক্তার। তাদের সুস্থ করো না তুমি, আমার বোনকে সুস্থ করার তাল কেনো তুলছো?”
“কারণ সবাই আমার তুলিকা নয় তিমির…………

চলবে

#নীড়_হারা_পাখি
#২০তম_পর্ব

মায়ের কথাটি শুনতেই স্তদ্ধ হয়ে গেলো রোদ্দুর। আঁচ করতে পারলো কি ঘটেছে। মোবাইলটা বের করলো। ১১৭টা মিসড কল। কখন যে সাইলেন্ট হয়ে গেছে টের পায় নি। তিমিরের কথাটির যুতসই উত্তর দেবার আগেই সে আবারো নিয়ন্ত্রণ হারালো। রুদ্র স্বরে বললো,
“এই বার করেছো, ব্যাস আর নয়। আমার বোন থেকে দূরে থাকবে। আচ্ছা রোগীর অভাব তোমার? শুনেছি খুব ভালো ডাক্তার। তাদের সুস্থ করো না তুমি, আমার বোনকে সুস্থ করার তাল কেনো তুলছো?”
“কারণ সবাই আমার তুলিকা নয় তিমির”

জড়তাবিহীন কন্ঠে কথাটা বললো রোদ্দুর। তার দৃষ্টি স্থির, মুখশ্রী অবিচলিত। তিমিরের ভ্রু কুঞ্চিত হলো। কথাটার মর্মার্থ বুঝতে সময় লাগলো তার। কিছুসময় তাকিয়ে রইলো সে রোদ্দুরের কঠিন মুখশ্রীর দিকে। নিজের মস্তিষ্কে ঝড় তোলা প্রশ্নগুলোর উত্তর নিশ্চিত হতে পুনরায় শুধালো,
“তোমার তুলিকা? মাথা টাথা ঠিক আছে তো? যতদূর জানি নেশা টেশা করো না। তাহলে এই প্রেম প্রেম কথাগুলো কি ঝড়ো হাওয়ায় আম ফেলার মতো বকছো শুধু। রোগীর চিকিৎসার উপায় না পেয়ে প্রেমের জাল বিছানো। জানো তুলিকার দূর্বল স্থানটা এই অনুভূতিগুলো ঘিরেই। শুনেছি যে ডাক্তার যত রোগীর চিকিৎসা করে, তার নাকি অভিজ্ঞতা বাড়ে। এসব নাকি তোমাদের ডিগ্রি ফিগ্রি পেতে সাহায্য করে। তোমার তো দেশে থাকারও পরিকল্পনা নেই, রাহাত আংকেলের মতো দেশান্তর হবার পরিকল্পনা। তাহলে কি ধরে নিবো তোমার পরীক্ষার গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহৃত করার জন্য এতো সাজানো পরিকল্পনা?”

তিমিরের কন্ঠের রোষের ছাপ স্পষ্ট। তবে রোদ্দুর এখনো নীরব, তার তেমন কোনো ভাবের পরিবর্তন হলো না। বা হাত দিয়ে জ্যাকেটের হুডিটা নামিয়ে একটু মাথাটা চুলকে নিলো। তারপর স্মিত কন্ঠে বললো,
“আমার ডিগ্রির জন্য কাউকে গিনিপিগ বানানোর প্রয়োজন নেই, সেটা আমি না বললেও তুমি জানো। তুলিকা কোনো ডিফারেন্ট কেস নয়, এমন না হলেও সিমিলার কেস হরহামেশাই আমি পাই। সুতরাং সংখ্যায় একজন বৃদ্ধি করলেও খুব একটা পার্থক্য হবে না। বাকি রইলো প্রেম প্রেম কথার, আমি ভনীতা করে কথা বলতে জানি না। সোজাসাপটা কথা বলাই আমার স্বভাব। মনে যা আসে বিনা সংকোচে বলি। তুলিকার ব্যাপারটিতে অন্যথা কেনো হবে? আমি তুলিকাকে পছন্দ করি। বিয়ে করতে চাই। ওর সুস্থতা নিয়ে আগে মাথা ব্যাথা থাকলেও এখন সেটা আপাতত ঝেড়ে ফেলেছি। ভবিষ্যতে চিন্তা করবো। যদি কখনো ওর ক্ষত বিক্ষত হৃদয়কে আগলাতে পারি তবে নাহয় চেষ্টা করে দেখবো। আপাতত ওকে একটা মুক্ত আকাশ দেবার অভিযানে নেমেছি। সেটাতেই মনোস্থির। বাঁধা তুমি দিতেই পারো, প্রেয়সীর ভাইদের অন্যতম কাজ প্রেমিকের প্রেমে ব্যাঘাত ঘটানো। তুমি যদি সেটা না করো তবে লোক তোমাকে ধিক্কার জানাবে। তুমি তোমার কাজ নির্বিঘ্নে করো”
“ফাজলামি ভালো লাগছে না রোদ্দুর ভাই”

দাঁতে দাঁত পিষে কথাটা বললো তিমির। তার দৃষ্টির প্রখরতা বাড়লো আরোও। রোদ্দুর স্মিত হাসলো। গাঢ় কন্ঠে বললো,
“যেদিন সম্পর্কটা ফাজলামির হবে সেদিন না হয় করবো। এখন বাড়ি যাও। আমার কাল কাজ আছে, তুরান ভাইয়ের সাথেও কথা আছে। তাই আমাকে আটকে রেখো না। আর তুলিকাকে কিছু বলো না, দোষ ওর নয়। আমার”
“সে সব ই বুঝলাম, তা যার জীবনে অনুপ্রবেশের এতো প্রচেষ্টা সে তোমাকে অনুমতি দিয়েছে তো? যদি তার থেকেই সম্মতি না আসে তাহলে ভাইয়ার সাথে দেখা করা বৃথা প্রচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। আমার বোন সবার মতো নয়, কিন্তু ভাইয়ার কাছে তার আবদার, ইচ্ছের মূল্য কিন্তু কম নয়। তাই নিজেকে উপন্যাসের নায়ক না ভেবে বাস্তবে আসো”

তিমির দাঁড়ালো না। দ্রুত গতিতে বাড়িতে প্রবেশ করলো। রোদ্দুর কিছু সময় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই। মাথাটা তুলে কৃষ্ণ আকাশের নিজের মহীমা প্রদর্শিত দাম্ভিক চাঁদটির দিকে চাইলো। মনে মনে হাসলো। নিজেকে সেই বামনটির মতো লাগছে যে কিনা চাঁদ পাবার স্বপ্নে বিভোর ছিলো। কখনো ভেবেও দেখে নি, চাঁদ পাওয়া কি এতোই সহজলভ্য? তাই যদি হতো তবে মজনু কিংবা দেবদাস আখ্যাটির জন্ম হতো না____________

********

রয়ে সয়েই ঘরে প্রবেশ করলো তুলিকা। ঘোলাটে চোখজোড়ায় তখন ত্রাস এবং ভয়ের বাস। বুকটা কাঁপছে। জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিলো শুষ্ক ঠোঁট। ঘরে প্রবেশ করতেই ভয়ের গাঢ়ত্ব বাড়লো। মায়ের ক্রোধে রক্তিম মুখখানা দেখেই শিটিয়ে গেলো যুবতী। চোখ নামিয়ে দিলো। খামচে ধরলো জামাটি। মাকে বরাবর ভয় পায় তুলিকা। তার মতে মায়ের মুখখানাই রাগী রাগী। দেখলেই ভয় করে। আজ তো আরোও ভয় লাগছে কারণ তার বারণ না মেনে বাহিরে গিয়েছে তুলিকা। তুলিকা নিচু গলায় বললো,
“ও আমাকে নিয়ে যেতে চেয়েছে, আমি ইচ্ছে করে যাই নি”

কথাটি শেষ হবার পূর্বেই হিমার বেগমের আক্রোশের শিকার হতে হলো নিরীহ মেয়েটিকে। শেফালী বেগমের প্রতিটি অপমান প্রহারের রুপে বর্ষিত হলো জীর্ণ শরীরে। অকথ্য ভাষার প্রয়োগ ও করলেন। এদিকে ভীত মেয়েটি শিটিয়ে গেলো। ব্যাথাতুর কাতর স্বরে বলতে লাগলো,
“মা, আর হবে না”

শ্বাশুড়ি মায়ের রুদ্ররুপে স্তব্ধ হয়ে গেলো অভিলাষা এবং সুরভী। সুরভী সময় নষ্ট না করে বাঁধা দিলো শ্বাশুড়িকে। জড়িয়ে ধরলো ভীত মেয়েটিকে। ফলে কিছু প্রহারের শিকার সেও হলো। থেমে থেমে কেঁপে ওঠা তুলিকার সহ্য হলো না নিষ্ঠুরতা। আশ্রয়ের আসার ভাবীর বুকে ঠাঁই নিলো। মুখ লুকালো সে। অভিলাষা এসে শ্বাশুড়ির হাত ধরলো। অস্থির স্বরে বলল,
“কি করছেন মা?”
“ছাড় আমাকে। কি পাপ করেছিলাম সে আল্লাহ এমন মেয়ে ঘরে দিলো। সব খুঁইয়ে আমাদের স্বর্বশান্ত করেও ক্ষান্ত হয় নি। প্রতিদিন কিছু না কিছু। প্রতিদিন ওর জন্য মানসম্মান নিয়ে টানাপোড়েন। শোন নি শেফালী ভাবীর কথা। এক একটা কথা কানে বিষের মতো লাগছিলো। এই মেয়ের জন্য এই পাড়াও ছাড়তে হবে”
“তাই বলে মারবেন ওকে? ও কি পশু নাকি? যে মারলেই সমাধান হবে? আর এখানে ওর দোষ নেই। বাইরের মানুষের জন্য নিজের মেয়েকে মারবেন আপনি?”
“তো কি করবো? সব ওর ই দোষ, ওর দোষ। আজ ওর জন্য আমাদের এই দশা। একটা ছেলেকে গিলে শান্ত হয় নি, এবার মা-বাপ একটাকে গিলে যদি শান্ত হয়। এখন তো মনে হয় সেদিন শাফিনের বদলে এই মেয়েটা মরলে ভালো হতো। অন্তত একটা মায়ের কোল তো খালি হতো না। গলার কাঁটা হয়ে গেছে, গিলতে পারছি না উগরাতেও পারছি না। আগে জানলে সেদিন নিজ হাতেই গ/লা টি/পে মে/রে দিতাম”

হিমা বেগম সিক্ত কন্ঠে কথাগুলো বললেন। তার চোখজোড়া অশ্রুসিক্ত। নীরব মেয়েটি কানে হাত দিয়ে সুরভীর বুকে মুখ লুকিয়ে আছে। তবে শ্বাশুড়ির শেষ কথাটিতে সুরভীর ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গলো। শ্বাশুড়ি মায়ের ধারালো কথায় সে অভ্যস্ত হলেও শেষ কথাটি সহ্য হলো না। ক্রদ্ধ কন্ঠে বললো,
“মা, অনেক হয়েছে এবার ভেতরে যান। সন্ধ্যা থেকে নাটক দেখছি শুধু। আর ধৈর্য্য কুলোচ্ছে না। ভেতরে যান”

বলেই তুলিকাকে ভেতরে নিয়ে গেলো সে। তিতিরও ভীত পায়ে ভাবীর পিছু নিলো। ততসময়ে তিমিরের উপস্থিতি ঘটলো। মা কাঁদছেন। তার হাত লাল হয়ে গেছে ক্রুর প্রহারে। অভিলাষা পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। শান্ত কন্ঠে বলল,
“তুলিকাকে মেরে কি লাভটা হলো মা? ভুলে যাচ্ছেন, সেও মানুষ। তারও অনুভূতি আছে। আপনি না মা, মেয়েকে এমন কথা বলার সময় বুকে কামড় পড়ে নি? আমার মাঝেও একটি সন্তান বেড়ে উঠছে। এই সময়ের কষ্টগুলো আমি জানি। বুঝতে পেরেছি আপনার ঐ মহিলার কথাগুলোয় মেজাজ খারাপ হয়েছে। কিন্তু আমাদের মেয়েতো সবার মতো নয়। এই সমাজ অকে অবহেলা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মা হয়ে যদি আপনিও করেন তাহলে ও কার কাছে আশ্রয় চাইবে?”

হিমা বেগম উত্তর দিলেন না। শুধু নিজের হাতের দিকে চেয়ে রইলেন। হাতটা জ্বলছে। না জানি মেয়েটি কতটা ব্যাথা পেয়েছে___________

*******

রাতের গভীরত্বের সাথে শীতের নিষ্ঠুরতা বাড়ছে। জানালার ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করছে হীম শীতল বায়ু। ফলে বদ্ধ ঘরটি হয়ে গেলো কনকনে শীতের সাইবেরিয়ার তুষার জমি। এই শীতেই জবুথবু হয়ে শুয়ে রয়েছে সুরভী। শালটি কাঁথার মতো সারা গায়ে বিছিয়ে আছে। কিন্তু শীত কি মানে? কম্বল হলে অবশ্য ভালো হতো। কিন্তু ঘুমের অত্যাচারে সেটি নেওয়া হলো না। তুলিকাকে সামলিয়ে যখন ঘরে ফিরলো মনে হচ্ছিলো সারা শরীরে ক্লান্তির বেড়াজাল ছড়িয়ে গেছে। শরীরটা যেনো একটু বিশ্রাম চাইছে। সন্ধ্যা থেকেই একের পর এক ঝামেলায় মাথার দমে থাকা যন্ত্রণাটি প্রখর হয়েছে। চোখ, কপাল, মাথার তালুতে যেন কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে এমনটা বোধ হতে লাগলো। তাই বিলম্ব না করে শুয়ে পড়লো সে। কম্বলটি আর নেওয়া হলো না। শীতের তান্ডবে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে বটে, কিন্তু নড়তে ইচ্ছে করছে না। এমন সময় একটি শীতল হাতের স্পর্শ কপালে ছুঁয়ে দিতেই সারা শরীর কাঁপুনি দিলো। তড়াক করে চোখ মেললো। দৃষ্টি এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু গাঢ় পুরুষালী কন্ঠটি সন্দেহ ধোঁয়ায় মিলিয়ে দিলো। নিস্পৃহ কন্ঠে বললো,
“জ্বর নেই”

সুরভী উঠে বসলো না। অনিমেষ চোখে দেখলো চিন্তিত পুরুষের মুখখানা। কপালে ভাঁজ পড়েছে, দৃষ্টি বিচলিত। শীতল হাতটি এখনো কপালে। সুরভীকে চোখ মেলতে দেখে চিন্তিত স্বরে বললো,
“তুমি কি অসুস্থ সুরভী? এমন নির্জীব লাগছে কেনো তোমায়?”

রুক্ষ্ণ হাতটি এবার ছুলো সুরভীর কোমল গাল। বৃদ্ধাঙ্গুলিটি ক্রমশ ছুঁয়ে যাচ্ছে সুরভীর ক্লান্ত চোখজোড়া। এই স্পর্শে কি জানে ছিলো! হৃদয়ের ভেতরের ছাই চাঁপা আগুনটা ধিক ধিক করে জ্বলে উঠলো। আবেশে চোখ বুজে এলো। স্থির দৃষ্টি এখনো দেখছে ক্লান্ত মুখশ্রী। অবিন্যস্ত চুল গুলোকে অন্য হাতে কানের পেছনে গুজলো। সুরভী উঠলে চাইলে বাঁধা দিলো। কঠিন স্বরে বললো,
“কাল ডাক্তারের কাছে যাবো। তৈরি থেকো”
“কাল যাবো না”
“কেনো”
“ভুলে গেছো, কাল তুলিকাকে নিয়ে একটু বের হবো”
“এই শরীরে?”
“আমি তো ভালোই আছি, কে বলেছে আমি অসুস্থ”
“আমি কি অন্ধ?”

তুরানের কন্ঠের কাঠিন্য বাড়লো। সুপ্ত রাগের ছাপ প্রকাশ পেলো। সুরভী মাঝে মাঝে অবাক হয়। মানুষটি তার উপর জোর করে, আধিপত্য খাটায়। তারপর কারণ শুধালে দায়িত্ব নামক শব্দটির উপর বন্দুক রেখে গুলি চালায়। সুরভী উঠে বসলো। নিভু কন্ঠে বললো,
“তুমি অন্ধ নও, তাই তো শুধু দৃষ্টির অগোচরের খোঁজ রাখো না”

তুরান কথা বাড়ালো না। কিছু সময় চুপ থেকে বললো,
“তাহলে পরশু যাচ্ছি”
“বললাম তো, আমার কিছু হয় নি। ক্লান্ত একটু। বিশ্রাম ঠিক হয়ে যাবে”
“না হলে তো ভালোই, তাহলে ডাক্তার দেখাতে সমস্যা কোথায়?”
“শুধু শুধু টাকা নষ্ট”
“আমাকে কি অকর্মন্য ভাবো? নিজের বউ এর চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা নেই আমার?”

তুরানের ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলা কথাটায় স্তদ্ধ হলো সুরভী। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। তুরানের মুখে “বউ” শব্দটি হৃদয়ের মাঝে জমে থাকা অভিমানের বরফগুলো গলাতে লাগলো। এই ধারা জমলো চোখে কোনে। অজান্তেই গাল বেয়ে নামলো অশ্রুধারা। তুরান ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“কাঁদছো কেনো? কষ্ট হচ্ছে কোথাও?”
“না”

ছোট করে উত্তর দিলো সুরভী। তুরান এখনো প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সন্দিহান কন্ঠে বললো,
“শিওর?”
“হুম, একটা আবদার করবো? রাখবে?”

সুরভীর বহুকাল পরে আবদার শব্দটি শুনে একটু নড়ে চড়ে উঠলো তুরান। মেয়েটি তার কাছে একটি আবদার ই করেছিলো, যা সে পূরণ করে নি। এর পর থেকে সে আর কোনোদিন আবদার করে নি। গাঢ় প্রতীক্ষিত চোখে তাকিয়ে রয়েছে সুরভী। মেয়েটির এই মায়াবী দৃষ্টি বারেবার কঠিন হৃদয়কে কাবু করে তোলে। যতই মুখে বলুক, “সে পাথর”। সত্যি তো এটাই তার ও অনুভূতি রয়েছে। তাই ফিরিয়ে দিতে পারলো না, সামনে বসে থাকা নারীর করুন আবদার। শান্ত গলায় বললো,
“বলো, কি আবদার?”

সুরভীর ঠোঁট চিরে হাসিটি প্রসস্থ হলো। নিভু, ক্লান্ত চোখে ছড়িয়ে পড়লো প্রসন্নতার কুসুম আভা। তুরান স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার দিকে। বুকের ভেতরটায় যন্ত্রণা হচ্ছে। তীক্ষ্ণ অসহনীয় যন্ত্রণা।

******

বাতাসে শিশিরের মিহি গন্ধ। তেজহীন রোদেও লোমকুপ কেঁপে উঠছে হীম শীতল সমীরের নিষ্ঠুরতায়। বরফ ঠান্ডা হাতজোড়া ঘষছে তিতির। কিন্তু গরম হচ্ছে না। কুয়াশার চাঁদর এখনো কাটে নি। তবে শহরের কোলাহল অক্ষত। তবে কলেজের গেট পার হতেই হীম পরিবেশ মিলিয়ে যেতে লাগলো। যৌবনের কুজকাওয়াজে উত্তপ্ত কলেজের প্রাঙ্গন। এক পাশে যুবকের দল জটলা পাকিয়ে আড্ডায় মত্ত, গিটারের সুর ও মিশে আছে বাতাসে। হাসির রোল পড়ছে ক্ষণে ক্ষণে। তবে তিতিরের পছন্দের স্থান লাইব্রেরি। শান্ত, নিস্তদ্ধ লাইব্রেরি। সেখানে শুধু পড়াশোনার গুঞ্জন শোনা যায়। বদ্ধ বই এর গুমোট গন্ধ, থেমে থেমে হতে থাকা ছাত্রছাত্রী গুনগুন তাকে স্বস্তি দেয়। সামনে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা তিতিরের, আজ আসা ইসহাক স্যারের প্রাক্টিক্যাল ক্লাস করার জন্য। অন্য স্যারদের প্রাকটিক্যালের তাড়া না থাকলেও ইসহাক স্যার বেশ দায়িত্ববান। তার কথা “মুলো ঝুলিয়ে দেওয়া গাধার মতো যদি শেষ রাতে প্রাকটিক্যাল খাতা রেডি করতে হয় তবে পড়াশোনা ছেড়ে দেও। আমার বিষয়ের প্রাকটিক্যাল খাতা হবে সবার আগে প্রস্তুত”

কিন্তু বিপদ হলো প্রাকটিক্যাল ক্লাসটি একটু দেরিতে শুরু হবে। তাই তো এই ফাঁকা সময়টা এই লাইব্রেরিতেই কাটানোই সমীচীন ভাবলো তিতির। নিরিবিলি একটু পড়াও হয়ে যাবে। কিন্তু তার চিন্তার উপর পানি পড়ে গেলো। যখন গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ কানে এলো,
“তোমার গালে কি হয়েছে? কেউ মেরেছে?”

সৌভিকের গম্ভীর কন্ঠ শুনতেই চমকে উঠলো তিতির। অবাক দৃষ্টিতে তাকালো সামনে ভুতের মতো দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটির দিকে। সে ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। স্থির, কঠিন দৃষ্টি। তিতির কিছুটা বিরক্ত হলো। শান্তির খোঁজে আসার লাইব্রেরিতেও শান্তি নেই। বিরক্তমাখা স্বরে বললো,
“তা দিয়ে আপনি কি করবেন?”
“শোনো মেয়ে, বেয়াদবি করবে না। এটা না কলেজ। আর এখানে আমি তোমার সিনিয়র। তাই যা জিজ্ঞেস করেছি উত্তর দাও। গালে কি হয়েছে? লাল হয়ে আছে কেনো?”

তিতিরের বিরক্তি বাড়লো। চোখ মুখে খিঁচিয়ে তাকালো সে সৌভিকের দিকে। কিন্তু সৌভিক ভাবলেশহীন। সে প্রখর দৃষ্টিতে এখনো তার গালের দিকেই চেয়ে রয়েছে। গতকালের মায়ের মারের দাগটা এখনো সুস্পষ্ট হয়ে নিজেকে জাহির করছে। কিন্তু এটা তো বলা যাবে না, মা মেরেছে। সামনে তার বান্ধবী লাবন্য ও রয়েছে। কথাটি বললে বান্ধবীদের সামনে মান সম্মান থাকবে না। তাই বিরক্তি বজায় রেখেই তিতির বললো,
“আপনার খেয়ে কাজ নেই? আমার গালে মশা কামড়াক না হাতি দাপাক তাতে আপনার কি? থাকুন না নিজের মতো, আমাকেও নিজের মতো থাকতে দিন। আর এই সিনিয়রিটি না নিজের কাছে রাখুন। আমি ইন্টারে পড়ি, আর আপনি অনার্সে। তাই এই সিনিয়রগিরি আমার উপরে দেখাবেন না।”

বলেই বই গুছিয়ে নিলো। দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলো। সৌভিক বাঁধা দিলো না। শুধু দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা বাড়লো। তিতির যখন লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো তখন লাবন্য পাশ থেকে বললো,
“আমার মনে হয় সৌভিক ভাই তোকে পছন্দ করে রে। তুই একটু নরম হলেই পারিস। লোকটা কত কেয়ার করছে তোর জন্য”
“অফ যা তো। এই ফেসবুকের গল্প পড়া বন্ধ কর। পছন্দ করে? পছন্দ কি হাতের মোয়া নাকি?”

তিতিরের ক্রুর বাক্যে চুপসে গেলো লাবন্য। তিতির ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। সৌভিক এখনো সেই টেবিলের পাশেই দাঁড়ানো। দৃষ্টি এখনো তার মাঝেই নিবদ্ধ_______

******

মধ্যাহ্নের শেষভাগে সূর্যটি হয়ে উঠে তেজী। নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতার প্রদর্শণ করে। বাতাসের উত্তাপ ছড়িয়ে আছে। ফলে থাই গ্লাসটি আরোও উত্তপ্ত হয়ে আছে। তুলিকার অবুঝ দৃষ্টি সেই উত্তাপ উপেক্ষা করে তাকিয়ে আছে মুক্ত আকাশটির দিকে। নীল আকাশ, উন্মুক্ত শুভ্র মেঘেদের বিচরণ সেখানে। কি চমৎকার স্বাধীনতা! কিন্তু নিষ্পাপ মেয়েটির জীবনে স্বাধীনতা নেই। মায়ের কথাগুলো এখনো কানে ভাসছে, নিজের উপর কিঞ্চিত রাগ ও হলো তার। কি দরকার ছিলো বেহায়ার মতো ওই পুরুষটির সাথে যাওয়া। ঘোরে ছেদ পড়লো সুরভীর কন্ঠে,
“কফি খাবি?”
“না”

ছোট করে উত্তর দিলো তুলিকা। দৃষ্টি এখনো বাহিরের খোলা নীলাম্বরে। ভাবী তাকে একটি অদ্ভুত জায়গায় নিয়ে এসেছে। বাসায় বলেছিলো সে একটু দোকানে যাবে। দরকারি কিছু শুকনো বাজার করবে। কিন্তু এই জায়গাটা তো দোকান নয়। তুলিকার কাছে জায়গাটি অপরিচিত ঠেকে নি। এটা একটা হাসপাতাল, আরোও ব্যাখ্যা করলে বলতে হয় পাগলের হাসপাতাল। তুলিকার মন মিয়ে গেছে। তার এই হাসপাতাল নামক জিনিসটি সহ্য হয় না। ভয় করে। যদিও তাকে কারেন্টের শক দেয়, পাগলদের তো তাই করে। কিন্তু ভাবীকে কিছু বলতে পারে নি সে। তাই তো নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্বাধীনতার দিকে। ঠিক সেই মূহুর্তেই একটি পরিচিত কন্ঠে কর্ণকুহরে ঝংকার তুলে।
“বেশি সময় বসিয়ে রাখলাম নাকি ভাবী?”

দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো সামনের দিকে। সাদা এপ্রোন গায়ে রোদ্দুর দাঁড়িয়ে আছে। ভাবী স্মিত কন্ঠে বললো,
“না, বেশিক্ষণ হয় নি”
“আমার কেবিনে চলুন”
“হ্যা। চলো”

বলেই উঠে দাঁড়ালো সুরভী। তুলিকা এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রোদ্দুরের দিকে। রোদ্দুর এখানে কেনো? তবে কি এই হাসপাতালের ডাক্তারবাবু সে। রোদ্দুর হেসে মিহি স্বরে বললো,
“তুমি যাবে না তুলিকা?”
“তুমি কি পাগলের ডাক্তার?”

রোদ্দুর হাসলো। অবাক স্বরে বললো,
“জানতে না?”

তুলিকা মাথা দোলালো। সে সত্যি ই জানতো না। সুরভীর দিকে তাকিয়ে বিনীত কন্ঠে রোদ্দুর বললো,
“ভাবী আমি একটু একান্তে কথা বলতে চাই তুলিকার সাথে। যদি কিছু মনে না করেন তবে কি আমার কেবিনে একটু বসবেন”

সুরভী অবাক হলো না, সে যেনো জানতোই রোদ্দুরের আবদার। শুধু বললো,
“কেবিনটি কোথায়?”

********

থাই গ্লাসে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তুলিকা। স্থির বাহিরের দিকে। রোদ্দুর তাকে কিছু বলবে। কিন্তু পাঁচ মিনিট যাবৎ চুপ করেই আছে। তুলিকা শান্ত স্বরে বললো,
“কি বলবে, বললে না তো”

বুক চিরে জমায়িত দীর্ঘশ্বাসটি ফোঁস করে বের করে গাঢ় স্বরে বললো,
“আমি তোমাকে মুক্ত আকাশ দিতে চাই তুলিকা। কিন্তু সেই অধিকারটা আমার নেই। তোমার কাছে সেই অধিকারটি চাই। দিবে আমায়?”
“কেনো?”

নিস্পৃহ কন্ঠে প্রশ্নটি করলো তুলিকা। তার শান্ত দৃষ্টিতে এখনো রোদ্দুরের প্রতিচ্ছবি। রোদ্দুর ম্লান কন্ঠে বলল,
“আমি যে তোমায় ভালোবাসি”…………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি