নীলচে তারার আলো পর্ব-২৮+২৯

0
951

#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_২৮

” আমার হাত থেকে পড়েগেছে। সরি……”, আর বলার আগেই শুভ্র হিয়ার ঠোঁটের সামনে আঙ্গুল ধরে বললো,” একদম চুপ। আর কাদবে না তুমি।”

হিয়া বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো শুভ্রের দিকে। শুভ্র কি তার উপর রাগ করেনি? যে কিনা নিজের রুমে কারোর আসা পছন্দ করে না আর আজ তার প্রিয় জিনিস ভেঙে ফেলায় সে এতো স্বাভাবিক আছে কি করে? হিয়া কিছু বলতে যাচ্ছিল তখনই ঘরে মোহনা আসতেই হিয়া ফট করে শুভ্রের কাছ থেকে সরে এলো। শুভ্র হিয়ার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে নিতে বলল,” চোখের পানি মুছো।”

হিয়া চোখের পানি মুছতেই মোহনা হিয়ার পাশে এসে বসলো চিন্তিত স্বরে বললো,” ঠিক আছো?”

হিয়া হ্যা সূচক মাথা নাড়লো। শুভ্র উঠে পড়লো। যাক কান্না থামিয়েছে এই বাঁদরটা। তারপর শার্টের হাতা নীচে নামাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।

মোহনা শুভ্রের দিয়ে ঈশারা করে কোনো শব্দ ছাড়া ঠোঁট নেড়ে জিজ্ঞেস করলো,” বেশী বকেছে?”
হিয়া মোহনার দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়লো। না উক্তটি শুনে সুমনা ভ্রু কুঁচকে ফেললো।

এ কোন শুভ্র! ভাবতেই অবাক লাগছে। এই পিচ্চি মেয়েটাকে এতো ভালোবাসে তার ভাই। মোহনা ঝেড়ে কাসলো তারপর বললো,” আচ্ছা চলো। তোমাকে রুমে দিয়ে আসি।” চলে যাওয়ার কথা শুনে শুভ্র আড় চোখে হিয়ার দিকে একবার তাকালো তারপর বললো,” পাকনামি করে হাতের ব্যান্ডেজ খোলার একদম চেষ্টা করবে না।” রীতিমত যেনো হুকুম দিচ্ছে এমনভাবে বললো শুভ্র।

মোহনা ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো,” আরে, আমি আছি তো। বউয়ের জন্যে এতো চিন্তা করতে হবে না।” মোহনার এমন রসিকতায় হিয়া লজ্জা পেয়ে গেলেও শুভ্র তা কানেই নিলো না। নিজের কাজে সে ব্যাস্ত।

মোহনা যেতে যেতে হিয়ার কানে কানে বললো,” ওর প্রিয় জিনিসটা ভেঙে ফেলেছ যে সরি বলেছো?”

হিয়া মাথা নিচু করে আবারো হা সূচক মাথা নাড়ল। মোহনা ফিসফিসিয়ে বলল,” শুধু সরি বললে কি হবে? একটু জরিয়ে ধরে বলতে পারলে না।”

হিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” উনি তো আমাকে গায়ে পড়া ভাববেন।”

” ধুর, নিজের বউ একটু গায়ে পরা হলে বররা খুশিই হয়।”, বলেই মোহনা ঠোঁট চেপে হাসলো।

হিয়া নির্বুদ্ধির মতো তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ব্যাপারটা ভাবতেই কেমন জানি গা শিউরে উঠছে কিন্তু শয়তান মন তো বলছে জড়িয়ে ধরা যায়। মোহনা হিয়াকে আরো অনেক কিছু বললো। সেসব শুনে হিয়ার মস্তিষ্ক যেনো উল্টা পাল্টা চলতে শুরু করলো। মোহনা দুষ্টু হাসি দিয়ে হিয়ার ঘর থেকে বের হলো। বের হয়ে শুভ্রের ঘরের সামনে এসে রহস্যময় হাসি দিতেই শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

মোহনা একগাল হাসি দিয়ে বললো,” তুই তো দেখি একে বারে প্রেমের সাগরে তলিয়ে গেছিস।”

শুভ্র কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো। মোহনা আরো বললো,” এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? হিয়াকে কি তোর রুমে শিফট করে দিবে?”

” দিদি তোর কাজ নেই?”, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো শুভ্র।

” ভালোর জন্য বলছি তো ভালো লাগছে না?”, ভ্রু কুঁচকে বললো মোহনা।

” প্লীজ আমার তোর জন্যে ভাবতে হবে না। আই ক্যান ডিল উইথ ম্যাই প্রবলেম। যত্তসব আজগুবি চিন্তা ভাবনা তোর।”,

মোহনা হেসে উঠে বললো,” হেহে, আর তুই কি করছিস? মনে আছে আমি একটা টিয়া পুষতাম। তোর তো সেইসব একদম পছন্দ ছিলো না। সেদিন তো তুই সুযোগ বুঝে পাখিটা ছেড়ে দিয়েছিস। আর এখন তো বাড়িতে কুকুরছানাও নিয়ে এসেছ।” বলেই ইউভির দিকে তাকালো।

ইউভি যে এতক্ষণ ধরে শুভ্রের ঘরে পায়চারি করছিলো শুভ্র সেটা ঠিক খেয়াল করেনি, অন্যমনস্ক হয়ে ছিলো। ইউভির জন্যে এত কিছুর মুখোমুখি হতে হবে কে জানতো। শুভ্র আর কিছু বললো না। টিয়া পাখিটা বড়ই বিরক্তিকর ছিলো সারাদিন কথা বলতো। তাই সে ছেড়ে দিয়েছিলো আর তার খোঁটা এখন শুনতে হচ্ছে।

শুভ্রের চুপ করে থাকায় বেশ মজা পেলো মোহনা তারপর যেতে বললো,” সেদিন এমন করেছিলি বলেই আজ শুনতে হচ্ছে।”

শুভ্র একরাশ বিরক্তি নিয়ে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেললো। এরা সবাই জোট বেধে তার পিছু লেগেছে।

রাতে হিয়া ডান হাতে ইউভির বিছানা করে দিলো। ইউভির মনে হয় ঘুম পায় নি। খালি লাফাচ্ছে এদিক সেদিক।

মোহনার কথা গুলো এখনো হিয়ার মাথায় ঘুরছে। হাতের ব্যান্ডেজটার উপরে রক্ত ভেসে উঠছে। বদলাতে পারলে ভালো হতো। হিয়া আর ভাবলো না, ঘুম পাচ্ছে অনেক। হিয়া সবে ঘুমাতে যাবে এই সময়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো শুভ্র দাড়িয়ে আছে দরজার কাছে। হিয়া মাথা নুইয়ে রাখলো, এতো রাতে শুভ্র তার ঘরে কেনো?

শুভ্র হিয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই হিয়া পিছাতে লাগলো। শুভ্র শান্ত গলায় বললো,” খাটে বসো।”

হিয়া চোখ তুলে একটু তাকাতেই দেখলো শুভ্র স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। হিয়া চুপচাপ বসে পড়লো বিছানায়। শুভ্র শান্ত ভঙ্গিতে হিয়ার সামনে বসে মুষ্টিবদ্ধ হিয়ার হাতটা সামনে আনলো তারপর ব্যান্ডেজটা খুলতে খুলতে বললো,” ব্যাথা করছে ?”

হিয়া অন্যমনস্ক হয়ে মোহনার কথাগুলো ভাবছিল। শুভ্রের কথাগুলো শুনতে পেলো না। শুভ্র উত্তর না পেয়ে আবার হিয়ার দিকে তাকালো তারপর শুভ্রের চোখে চোখ পড়তে, হিয়ার হুস ফিরল। হিয়া একটা ঢোক গিলতেই শুভ্র ভ্রু কুচকে বললো,” কি ভাবছো এতো? ব্যাথা করছে কিনা জিজ্ঞেস করেছি।”

হিয়া ঘন ঘন দুবার না সূচক মাথা নাড়ল। শুভ্র ব্যান্ডেজ টা বদলাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো। হিয়া পলকহীন দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রের সামনের চুলগুলো কপালে এসে বিধেছে। চোখে চশমাতে চোখ আবদ্ধ হয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর পর লালচে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিচ্ছে সে। মুগ্ধতা নিয়ে হিয়া তাকিয়ে আছে।

শুভ্র ব্যান্ডেজ শেষে হিয়ার দিকে তাকাতেই হিয়ার পলকহীন দৃষ্টি চোখে পড়লো তার। শুভ্র চোখে হাসতেই, হিয়া দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। লজ্জায় লাল বর্ন ধারণ করেছে সমস্ত চেহারা।

শুভ্র নীচের ঠোঁট কামড়ে কিছু বলতে গিয়েও বললো না। থাক এমনিতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেছে পরে আবার কিছু বললে নীল হয়ে যাবে। শুভ্র উঠে দাড়ালো,চলে যেতেই হিয়া কিছু একটা বলবে বলে সেও উঠে দাড়ালো। শুভ্র সেটা খেয়াল করে পিছিয়ে এসে হিয়ার সামনে দাড়ালো। তারপর একটা ভ্রু তুলে জিজ্ঞেস করলো,” কিছু বলবে?”

হিয়া ঘন ঘন মাথা নেরে বললো,” হুম্ ”

শুভ্র পকেটে হাত ভরে বললো,” আচ্ছা, বলো।”

হিয়া অনেক সময় চুপ করে রইলো, তারপর শুভ্রকে অবাক করে দিয়ে শুভ্রের বুকে মাথা রেখে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরেই চোখ বন্ধ করে বললো,” সরি।”

শুভ্র যতটাই অবাক হয়েছে ততটাই খুশি হয়েছে। হিয়া আর তার সম্পর্কটা হয়তো ঠিক হচ্ছে। শুভ্র কখনোই জোর করে কাছে পেতে চায় নি হিয়াকে। কারণ সে নিজে থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল তাই তাকে মেনে নেওয়ার সময়ও দিয়েছে হিয়াকে। শুভ্র পকেট থেকে হাত বের করে হিয়ার মাথায় রাখার আগেই হিয়া ফট করে কি যেনো ভেবে সরে এসে দাঁড়ালো।

সে কি করলো এটা? কেনো করলো? ভেবেই ইচ্ছে করছে গর্ত খুঁড়ে মাটিয়ে লুকিয়ে পরে। লজ্জায় শুভ্রের চেহারার দিকে আর তাকালো না হিয়া। তার জন্যেই হয়তো শুভ্রের ঠোঁটের কোনায় হাসিটা তার দেখা হলো না।

শুভ্র যাওয়ার সময় হিয়ার সামনের চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দিয়ে গেলো। বাঁদরটা লজ্জায় একদম টমেটো হয়ে গেছে। শুভ্র চলে যেতেই হিয়া লাইট অফ করে চাঁদর মুড়িয়ে শুয়ে পড়লো। লজ্জায় নিজের মুখ নিজেরও দেখতে ইচ্ছে করছে না। যত্তসব উল্টা পাল্টা চিন্তা তার মাথায় কেনো আসে। এই লোকটা কি ভাবলো তাকে?

🌟 দিবা সারাদিন একা একা থাকে। কোথাও একা একা গিয়েও কোনো লাভ নেই কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তাই আজ ধরে বেধে হিয়াকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। হাঁটতে হাঁটতে অনেক জায়গা ঘুরেছে তারা। হটাৎ করে দিবা ইভানকে দেখতে পেলো। সঙ্গে আরেকটি ছেলে মিলে কোথায় যেনো যাচ্ছে।

হিয়া ভেলপুরি খাচ্ছিল দিবা হিয়াকে টেনে নিয়ে এলো। হিয়া মুখের খাবার শেষ করে বললো,” এমন করেছিস কেনো?”

” বদমাইশটাকে দেখেছি। আয় দেখি তো কোথায় যাচ্ছে।”,বলেই আরো জোরে জোরে হাঁটতে লাগলো দিবা। বাদ্য হয়ে হিয়াকেও হাঁটতে হচ্ছে। হিয়া আর কিছু জিজ্ঞেস করছে না। কারণ দিবার কানে আর কোনো কথা যাবে না, সে তার ইভানকে দেখতেই ব্যাস্ত। কিছুক্ষণ পর পর দিবা গাছের পিছনে গিয়ে লুকাচ্ছে। হিয়াকেও লুকাতে হচ্ছে। কি যন্ত্রণা!

ইভান আর তার সাথের ছেলেটা একটা গেম কোডের মতন জায়গায় ঢুকলো। দিবাও হিয়াকে টেনে টেনে ভিতরে নিয়ে এলো। ভিতরে যদি অসভ্য ছেলেপুলে থাকে তখন? এই প্রশ্নের উত্তরে দিবা বললো আরে এইটা অনেক উন্নত একটা জায়গা মেয়েরাও আসা যাওয়া করে। আর বখাটে ছেলেদের এইখানে ঢুকতে দেয় না। ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দেওয়ার জন্যে আসে সবাই। ভয় পাওয়ার কারণ নেই।

কলেজ ড্রেসে এইখানে ঢুকতে কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে হিয়ার। সবাই তাকিয়ে আছে। গোল গোল করে কেউ গল্প করছে আবার কেউ কেউ খেলছে। এর মাঝেই হটাৎ কেনো জানি মনে হলো হিয়া শুভ্রকে দেখেছে মাত্র। দেখেই আত্তা কেপে উঠলো। হিয়া ফট করে একটা ফুড মেনু মুখের সামনে ধরে দিবাকে টেনে নিজের কাছে এনে বললো,” বাম দিকের শেষের টেবিলে দেখতো ডাক্টারটা বসে আছে নাকি?”

দিবা চোখ বড় বড় করে তাকালো। তারপর খুঁজতে লাগলো, হিয়ার কথাটা সত্যি। শুভ্র ভাইয়ার সঙ্গে অন্তিক আর রুবাইয়া আপুও আছে। কি ভয়াবহ অবস্থা! দেখে নিলেই তো সমস্যা। লুকাবে কি করে? কলেজ ড্রেস দেখলেই তো চিনে যাবে?

[ #চলবে ]

#নীলচে_তারার_আলো
#নবনী_নীলা
#পর্ব_২৯

” চল চলে যাই। দেখে ফেললে তো আমরা শেষ।”, ভয়ার্ত কন্ঠে বললো হিয়া।

দিবা আড় চোখে তাকালো। তারপর বললো,” কিসের এতো ভয়? আমি আছি না। আর দেখলে কি হয়েছে? আমরা কি এইখানে আসতে পারি না?”, বলেই হিয়াকে নিয়ে সামনের দিকে গেলো। ইমনকে খুজতে হবে। আরেকটু সামনে যেতেই সামনে পড়লো আবির ভাইয়া। দিবার বাবার বন্ধুর ছেলে, ছেলে ভালো কিন্তু অনেকদিন তাদের সাথে যোগাযোগ নেই। এতদিন পর দেখা তাও দিবা ভ্রু কুঁচকে ফেললো। দুনিয়ার সব যন্ত্রণার আজই এইখানে আসার প্রয়োজন হলো।

আবির দিবাকে দেখেই সামনে এসে দাড়ালো। হেসে উঠে বললো,” কি ব্যাপার তুমি এইখানে ?” বলেই ঘাড় কাত করে হিয়ার দিকে তাকালো। তারপর আরো বললো,” আচ্ছা ফ্রেন্ডকে সঙ্গে নিয়ে সোজা কলেজ থেকে ঘুরতে চলে এসেছো?”

দিবার চোখ তো ইভানের দিকে কিন্তু আবির ভাইয়ার বক বক কে শুনবে। দিবা সৌজন্যমুলক হাসলো তারপর বললো,” ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার ছিলো।” এতটুকু বলেই দেখলো ইভান তার ফ্রেন্ডের সাথে সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে যাচ্ছে।

দিবা ব্যাস্ত হয়ে বললো,” ভাইয়া আপনি আমার ফ্রেন্ড হিয়ার সাথে কথা বলুন আমি এক্ষুনি আসছি।” বলেই করুন দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকালো। হিয়া বুঝতে পারলো দিবার জন্য তাকে এই লোকটার সাথে বক বক করতে হবে। হিয়া একবার চোখের পলক ফেলে আশ্বাস দিতেই দিবা কেটে পড়লো। হিয়ার চিন্তা শুধু বদমাইশ ডাক্টারটাকে নিয়ে। যদিও এইখান থেকে শুভ্রকে দেখা যাচ্ছে না।

দিবা চলে যেতেই আবির জিজ্ঞেস করলো,” কোথায় গেলো ও?”

হিয়া একটু কেশে বললো,” আমাদের একটা ফ্রেন্ড আশার কথা ছিলো। ওকেই হয়তো দেখতে পেয়ে ডাকতে গেছে।”

” আচ্ছা! তোমার নাম কি?”, প্রশ্ন করলো আবির। কতক্ষন এই লোকটার সাথে কথা বলতে হবে কে জানে? দিবারে জলদি আয়।

শুভ্র ভ্রু কুচকে ক্রিসমাস ট্রির অপরপাশে কলেজ ড্রেসে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে লক্ষ্য করছে। মেয়েটার বরাবর একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে যার কারণে চেহারা স্পষ্ট নয়। কিন্তু শুভ্রের কেনো জানি মনে হচ্ছে মেয়েটা হিয়া। অন্তিক আর রুবাইদা কথা বলছিলো। শুভ্রের অন্যমনস্কতা খেয়াল করতেই আন্তিক বললো,” কি ব্যাপার কোন দিকে তাকিয়ে আছিস?”

” নাহ্, তেমন কিছু না। আমি একটু আসি।”, বলে উঠে দাড়ালো শুভ্র। এর মাঝেই রুবাইদা বললো,” আচ্ছা যাচ্ছিস যখন দেখিস কলেজ ড্রেসে দুটো মেয়ে এখন আছে কিনা?”

শুভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,”কেনো?”

” মনে হলো প্রভার বোনকে দেখলাম। প্রভা কোথায় সেটা ওর বোনকে জিজ্ঞেস করতাম। এমনিতেও মহারানী আমাদের কল ধরছে না। “, এতটুকু শুনেই শুভ্রর বুঝতে বাকি রইলো না যে তার ধারণাই ঠিক।

সকালে কলেজে আসার সময় মোহনা আর হিয়ার কথাবার্তার অংশবিশেষ শুনেছে শুভ্র। শুভ্র তখন পাশেই ছিলো।

মোহন হিয়াকে জ্বালাতে বলেছিলো,” তোমার বর না তোমার একদম খেয়াল রাখে না। একটু কলেজেও দিয়ে আসে না।”

উত্তরের হিয়া মুখ কালো করে বলেছিলো,” উনাকে আমি বর আমি মানি না। সারাদিন তুমি বর বর করো কেনো?” কথাটা শুভ্র স্পষ্ট শুনেছে। হিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই হিয়া মুখ ঘুরিয়ে চলে গেছে।

মোহনা নিজে থেকেই বানিয়ে কিছু কথা শুভ্রের কানেও দিয়েছে। কিছু কথাগুলো এমন যে বউকে এভাবে ছেড়ে দিয়েছো যদি উড়ে কোথাও চলে যায়। এমনিতেও হিয়া তোর মাঝে জামাই জামাই ভাবটা খুঁজে পায় না। জামাইরা তো বউকে আগলে রাখে, যত্ন নেয় অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট এতটা ভালোবাসে। তোর মধ্যে সব আছে কিন্তু শেষেরটা নেই।

এই বানিয়ে বলা কথা গুলোর মধ্যে শুধু একটা কথা বলেছে হিয়া সেটাও মোহনাকে চুপ করাতে। সেগুলো যে সুধে আসলে শুভ্রের কানে তোলা হবে কে জানতো। কথাগুলো শুভ্র দিদির বানানো বলে ধারণা করলেও হিয়ার মুখ থেকেই সে একবার শুনেছে এমন কথা। তাই একটু হলেও খটকা আছে। অবশ্য সবই তার দিদির সঙ্গদোষে হয়েছে বলেও ধারণা ছিল তার।

হিয়া আবিরের সাথে কথা বলছিলো। হটাৎ মনে হলো শুভ্র তার দিকে আসছে। কিছুটা আন্দাজ করে হিয়া একদম ক্রিসমাস ট্রির সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে পড়লো। আবির হিয়ার হাত ধরে সরিয়ে আনলো আরেকটু হলেই ইলেকট্রিক তারের সাথে জড়িয়ে যেতো। হিয়াকে সরিয়ে আনতেই শুভ্র স্পষ্ট হিয়াকে দেখতে পেলো। শুভ্রের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গেলো আবিরের দিকে। কে এই ছেলে? আবার হাত ধরেছে হিয়ার।

হিয়ার চুলেও গাছের ময়লা লেগেছিল। আবির সেগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে বললো,” আরেকটু হলেই তো সর্বনাশ হয়ে যেতো। আমার ছোট বোনটাও তোমার মতন। কোনদিকে তাকায় না। দিবা কোথায় গেলো বলো তো? আসার নাম নেই।”

” এসে পড়বে। আপনার কোনো জরুরি দরকার ছিলো?”, একটা ঢোক গিলে বললো হিয়া।

” হ্যা “,বাকিটা বলার আগেই শুভ্র এসে হিয়ার হাত ধরে এক টান দিয়ে হিয়াকে পিছনে এনে ছেলেটার সামনে দাড়াতেই দুজনেই চমকে গেলো। হিয়ার বুকের ভিতরটা ধুক ধুক করছে। আবির ভীষণ অবাক হয়ে তাকালো। কিছু বলার আগেই হিয়ার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করলো,” কে এই ছেলে? কলেজ শেষে এইখানে কি করছো তুমি?”

আবির ঘটনাটা আন্দাজ করে বললো,” আই থিঙ্ক কোনো মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে।”

সঙ্গে সঙ্গে শুভ্র বিস্ফোরিত কণ্ঠে বললো,” ডিড আই আস্ক ইউ? জাস্ট কিপ ইউর মাউথ শাট।”

হিয়ার ভীষন ভয় লাগছে। মোহনার কথায় এই কয়েকদিন সে শুভ্রকে অকারনেই ইগনোর করেছে। তারপর আজেবাজে যা শিখিয়েছে সব বলেছে। এরপর এই লোকের সাথে দেখে আবার কি না কি ভেবেছে। ভয়ে আত্তা কাপছে হিয়ার।

আবির কিছু বলার আগেই শুভ্র হিয়ার হাত ধরে টেনে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নিয়ে এলো। সিড়ি দিয়ে নামতেই নিচে সবগুলো গাড়ি দেখতে পেলো হিয়া। জায়গাটা আবদ্ধ করা, হয়তো গাড়ি পার্কিং এর জন্যে এই জায়গা। শুভ্রের রাগ হিয়ার জানা আছে। শুধু শুধু তাকে আরো রাগিয়ে দিয়ে লাভ নেই। হিয়া শুভ্রকে থামাতে বললো,” আমার কথা একবার শুনুন।”, বলতে বলতে শুভ্র গাড়ির সামনে এসে দাড়ালো। তারপর একটা তপ্ত নিশ্বাস ফেলে হিয়ার হাত ছেড়ে গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে কড়া চোখে হিয়ার দিকে তাকালো। পুরো ঘটনাটা শুভ্রের কাছে পরিষ্কার।

হিয়া শুভ্রের সেই দৃষ্টিতে জমে বরফ হয়ে গেছে। হিয়া আমতা আমতা করে বলল,” দেখুন উনি দিবার পরিচিত আমি ওনাকে চিনি না। আমি দিবার সাথে এসেছিলাম পরে দিবা ওর ফ্রেন্ডের কাছে গেলো………… তাই আমি ওনার সাথে কথা বলছিলাম।” শুভ্রের মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে সবটাই জানে। হিয়া বোকা হয়ে তাকালো। লোকটা কোনো কথাও বলছে না। কি করে বুঝবে শুভ্রের মনে কি চলছে। হিয়া আরেকটু এগিয়ে এসে ভয়ার্ত বললো,” আপনি কি রাগ করেছেন?”

শুভ্র উত্তরে কিছু বললো না। দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে খুব রেগে আছে। শুভ্র হাত বাড়িয়ে এক হাতে হিয়ার কোমড় জড়িয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। হিয়ার হৃদ কম্পন বেড়ে গেলো। শুভ্র অন্য হাত হিয়ার গালে ডুবিয়ে দিয়েই শরীরে এক শীতল শিহরণ বয়ে গেলো তার। শুভ্র এগিয়ে এসে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে গভীর ভাবে কিস করলো। হিয়া শুভ্রের হটাৎ এমন কাণ্ডে হকচকিয়ে উঠে কাধের শার্টের অংশ শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেললো। মুহূর্তেই দুজনের মধ্যকার সব দুরত্ব চলে গেলো।

অনেক্ষন পর শুভ্র সরে এলো কিন্তু কোমড় জড়িয়ে এখনো হিয়াকে নিজের কাছে রেখেছে। এমন একটা জায়গায় শুভ্র তাকে এইভাবে…… ভেবেই রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে হিয়ার সারা মুখে। আরেকটু হলেই দম আটকে মারা যেতো সে। অথচ শুভ্রের চোখে মুখ স্বাভাবিক। শুভ্র একদৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” হুম্, নাও অ্যাম ফিলিং বেটার। কি বলছিলে এইবার বলো।”

হিয়া মাথা নিচু করে রইলো। নাও অ্যাম ফিলিং বেটার মানে কি? এমন একটা জায়গায় এইসব করে খুব ভালো লাগছে উনার। নিলজ্জ একটা লোক, তার মুখটা বন্ধ করে বলছে এইবার বলো।

হিয়াকে চুপ কর থাকতে দেখে শুভ্র বললো,” আমার সাথে এইসব ট্রিকস খেলার বুদ্ধি তো তোমার মাথায় নেই। এইসব তো দিদির কথায় করেছো তাই না?”

হিয়া কিছু বললো না তবে একটু সস্থি পেলো যে লোকটা তাকে বুঝেছে। শুভ্র পরক্ষণেই বললো,” ডোন্ট বি হ্যাপি। দিদি বললে কি হবে? কাজগুলো তো তুমি করেছো। আমাকে ইগনোর করেছো। আজ সকালেই তো বললে যে আমাকে তুমি বর মানো না। ওকে তাহলে আজ থেকে তুমি তোমার পথে আর আমি আমার। এমনিতেও এই কয়দিনে তুমি যা করেছো তার জন্যে এতো সহজে তো তোমাকে আমি ক্ষমা করছি না।” বলেই হিয়ার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে, সরে দাঁড়ালো। ইগনোর কি জিনিস এইবার হিয়া বুঝবে।

কথাগুলো শুনে হিয়া চমকে তাকালো। ক্ষমা করছে না মানে? আবার বললো আজ থেকে আলাদা আলাদা পথে…. মানে? শুভ্রের এমন রাগের সাথে তো হিয়ার পরিচয় নেই। তাহলে কি তাকে এইবার শুভ্রের এই রাগ ভাঙাতে হবে?

[ #চলবে ]