নীল সীমানার শেষপ্রান্তে পর্ব-১৩ (বোনাস পার্ট)

0
5529

#নীল_সীমানার_শেষপ্রান্তে
#Writer_Mahfuza_Akter
||পর্ব_১৩ (বোনাস পার্ট)||
;
;
;

—“আরে ভাবী, তুমি এতো সিরিয়াস কেন বলো তো? আমি কি ক্লাস টু এর বাচ্চা যে আমায় নিয়ে যেতে হবে।”
বলে গাল মুখ ফুলিয়ে বসে পড়লাম। আজ আমার রেজাল্ট দিবে তাই অদ্রি ভাবীও আমার সাথে ভার্সিটিতে যাবে। ঐ ঘটনার পর থেকে নাকি আমাকে ভার্সিটিতে একা ছাড়া যায় না!!

—“তোর কোনো কথাই আমি শুনছি না। ঐ হিম নাকি ডিম, ঐ ছেলে যদি এখন জেলে থাকতো, তাহলে একটা কথা ছিল। কিন্তু না, এখন সে নিরুদ্দেশ। আবার যদি এমন হয়, তোকে আজ আবার এসে অ্যাটাক করে, তখন?”

আমারও তো এই একই ভয় করছে। তোমাকে তো আর বলতে পারবো না সেটা। তাও বললাম,
—“আরে, ওখানে তো আমার ফ্রেন্ডসরাও থাকবে, তাই না?”

—“থাকলে থাকুক। আমি তোর সাথেই যাবো এন্ড এটাই ফাইনাল। ”
বলেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিচে নামলো। নিচে নেমে দেখি বাবা পেপার পড়ছে, জায়েদ ভাইয়া আর জুনায়েদ ব্রেকফাস্ট করছে, মা বসে বসে টিভি দেখছে। জয় অনেক আগেই অফিসে চলে গেছে। ইদানীং ওনি অফিসেই বেশি থাকে, সাথে ভাইয়াও।

আমাকে আর অদ্রি ভাবীকে একসাথে রেডি হয়ে কোথাও যেতে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি একটা সাদা রঙের কুর্তি, সাথে নীল হিজাব পড়েছি। আর ভাবী লাল রঙের একটা গাউন ও সোনালি কালারের হিজাব পড়েছে। অদ্রি ভাবী এমনিতেই অনেক সুন্দর, তারওপর আজ এমন গেট-আপে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।

জায়েদ খাবার শেষ করে টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে অদ্রির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অদ্রির পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে সে। অদ্রি আশে পাশে একবার তাকিয়ে দেখলো সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই জায়েদের চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
—“এই যে মশাই, আমাদের পথ আটকে এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমাদের যেতে দাও আর জুনায়েদকে স্কুলে ড্রপ করে দিও।”

জায়েদ অপ্রকৃতস্থ থেকে স্বাভাবিক হয়ে বললো,
—“এভাবে সেজেগুজে কি আমার জন্য চার-পাঁচটা সতীন আনতে যাচ্ছো নাকি? ”

জায়েদের কথা শুনে জাহিদ আর আয়েশা জোরে হেসে দিলো। সার্ভেন্টরাও মুখ চেপে হাসছে।

এদিকে আমার পেটের ভেতর হাসি গুলো শুধু এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। শেষে আমিও সবার সাথে তাল মেলালাম।

অদ্রি চোখ গরম করে বললো,
—“একশো টা সতীন আনবো, কোনো সমস্যা? সারাক্ষণ আমার লেগ পুল না করলে চলে না তোমার, তাই না? ”

জায়েদ ভাব নিয়ে বললো,
—“আমি কখন তোমার লেগ পুল করলাম? তোমার পা তো পায়ের জায়গায়ই আছে, আর আমার হাত হাতের জায়গায় (হাত দুটো উঁচু করে দেখিয়ে)। আমিও ভাবছি আরো তিনটা বিয়ে করবো। অফিসে পাঁচ জন নতুন সুন্দরী এমপ্লয়ি এপয়েন্ট করা হয়েছে, ওদের মধ্যে থেকে সিলেক্ট করলেই ভালো হবে। কী বলিস, বোনু(আমি)?”

অদ্রি রেগে জায়েদের কলার চেপে ধরে বললো,
—“কী বললে? আরো তিনটে বিয়ে করবে?”

জায়েদ নিজের হাত দুটো পেছনে নিয়ে নিল। সবাই তো নিজের কলার থেকে অন্যের হাত ছাড়ায় আর এ দেখি আরো ভালো করে চেপে ধরার সুযোগ করে দেয়!

জায়েদ একটা ডোন্ট কেয়ার মুড নিয়ে বললো,
—“তিনটা করতে বাধ্য হচ্ছি, আর কি। ছেলেদের তো একসাথে চারটার বেশি বউ থাকা জায়েজ না, তাই। নয়তো ঐ পাঁচ জনকেই বিয়ে করতে পারতাম।”
বলেই স্যাড রিয়েকশন দিলো।

—“তোমার যে কী হাল করবো!! ইউ জাস্ট কান্ট ইমেজিন নাও। খালি একবার বাড়িতে ফিরি তারপর দেখো।”
অদ্রি দাঁতে দাঁত চেপে বললো কথা গুলো।

এদের কাহিনী দেখে আয়েশা হাসতে হাসতে বললেন,
—“কী লাগিয়েছিস তোরা বলতো? আর তুই (জায়েদের কান টেনে) আমার বড় মেয়েটাকে এতো জ্বালাস কেন বল তো?”

জাহিদ পেপার রেখে বললেন,
—“জ্বালানোর কী দেখলে? তোমরা মেয়েরাই তো আমাদের একটওু সময় দাও না। সারাক্ষণ খালি এই-সেই করতে থাকো। আমাদেরও যে মন বলে কিছু আছে বোঝো তোমরা?”

আমি বাবার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছি। ও মাই আল্লাহ!! এই বয়সে মন!! ভাবা যায়!!

আয়েশা লজ্জায় পড়ে গিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো,
—“বলি তোমার কি লজ্জা-শরম বলতে কিছু নেই নাকি?? এই বুড়ো বয়সে ভীমরতি ধরেছে সেটা কি এখন সবাইকে জানাতে হবে? ”

জাহিদ ভাব নিয়ে বললো,
—“আমি বুড়ো হয়েছি তো কি হয়েছে, দিল আভি বি নওজাওয়ান হ্যায়।”

মা আর কথা বাড়ালেন না। আমার সামনে এসে দাড়িয়ে বললেন,
—“এখন বল তো মা, এই সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”

আমি মায়ের দু হাত ধরে বললাম,
—“মা, আজ আমার রেজাল্ট দিবে। এটা আমার সারাজীবনের সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট একটা পরীক্ষার রেজাল্ট। আমার জন্য দোয়া করো, যেন এবারের রেজাল্টও বরাবরের মতো ভালো হয়।”

মা আমার দু গালে হাত রেখে বললো,
—“শুধু ভালোই হবে না, অনেক ভালো হবে। আমার মেয়ের ওপর আমার বিশ্বাস আছে।”

আমি মাকে ছেড়ে বাবার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললাম,
—“বাবা, আমার জন্য দোয়া করবে না?”

বাবা আমার কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
—“করবো না মানে? আমার দোয়া সবসময় তোর সাথে আছে। তুই তোর জীবনের প্রতিটা পরীক্ষা আর সংগ্রামে সফল হবি, ইনশাআল্লাহ। ”
বাবার কথা শুনে আমার নিজের বাবার কথা মনে পড়ছে খুব। তিনি ও আমায় এমন ভাবেই বুকে জড়িয়ে দোয়া করতেন। বাবাকেও ফোন দিয়ে জানাতে হবে।

জায়েদ ভাইয়া আমায় বললো,
—“বোনু, তুই একাই যা না!! ওকে (অদ্রি) নিয়ে গেলে যদি তোর রেজাল্ট খারাপ হয়??”

ভাবী আবার রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি আটকে দিয়ে বললাম,
—“ওফ ভাইয়া, সেই কখন থেকে শুরু করেছো। এবার থামো।”
অবশেষে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমার ভার্সিটিতে চলে এলাম।

আমি আমাদের আড্ডা দেওয়ার একমাত্র জায়গা, বড় মেহগনি গাছ তলায় গেলাম। সেখানে যেতেই দেখলাম অনিতা, রুহি, রাদিফ আর অর্ণব একলাইনে বসে আছে। আমাকে দেখেই সবগুলো একসাথে ছুটে আসলো। আমি ভাবীর সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। অদ্রি ভাবীও অনেক মিশুক, সবার সাথে এমন ভাবে কথা বলছে যেন কতোদিনের পরিচয়। সত্যি কথা বলতে, এই ফ্যামিলির সবাই অনেক ভালো। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি এখানকার একজন অতিথি মাত্র।

অডিটোরিয়ামে বসে আছি। অনেক জোরদার ডেকোরেশন করা হয়েছে। হবেই বা না কেন? প্রতি বছরই হয়, অনার্স ফাইনাল এক্সামের রেজাল্ট এনাউন্সমেন্ট বলে কথা। আমার ভেতর আজ যেন দুনিয়ার সকল চিন্তা এসে ভর করেছে। পরীক্ষা আমি যতোই ভালো দেই না কেন, চিন্তা আমার হবেই। এটা একেবারে ধরা কথা।

যিনি চিফ গেস্ট হয়ে এসেছেন, তিনি স্পিকারে এনাউন্স করলেন,
—“এবছর অনার্স ফাইনাল এক্সামে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছে,,,,,, ”
বলেই সবার দিকে একবার তাকালেন। এদিকে আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম, সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভারি মুশকিল তো!! সবাই এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন, আমার নাম এনাউন্সড হয়েছে। আমি আমার পাশে বসা রাদিফকে বললাম,
—“ওই, সব খালি আমার দিকে তাকাচ্ছে কেন? আমার বড্ড অস্বস্তি লাগছে। ”

রাদিফ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—“শোন বইন, হক্কলে জানে যে তুইই প্রথম হবি। তাই তাকাইয়া আছে। আর অস্বস্তির কিছু নাই , একটু পরে যখন স্টেজে উঠবি, তখন সবাই এমনেই চাইয়া থাকবো।”

এদের সাথে কথা বলে লাভ নেই, তারচেয়ে ঢেড় ভালো এটা হবে যে আমি চুপ করে বসে থাকি।

কিছুক্ষণ পর,,,

—“জয়, তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। অনেক বড় অঘটন ঘটে গেছে। ”

-চলবে………..