নীড়ভাঙ্গা ভালবাসা পর্ব-১১+১২

0
322

#পর্ব_১১
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

রাতে নীল বাসায় ফিরলে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
– তানের কি হয়েছে তুমি জানো?
– ওর আবার কি হবে?
বলেই কেমন জানি আমার থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। আমার একটু খটকা লাগলো। তারপর আমাকে ওই অবস্থায় জড়িয়ে ধরে গালে কিস করতে করতে বললো,
– তুমি শুধু আমার বেবির খেয়াল রাখবা আর কাউকে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। বাকিসব ভাবনা শুধু আমার।

ও আমাকে আরও এটা বলে আশ্বস্ত করলো যে, তানের কাছে জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে ওর! আমিও চুপচাপ মেনে নিলাম কারণ লেট টুয়েন্টিতে ফার্স্ট বেবি নেওয়া একটু রিস্কি। আর তানের কিছু হলে তা নীড়ের থেকে বেশি ভালো করে কেউ সামলাতে পারবে না।

২ মাস পর,
নীড়ের আম্মু ছাড়া সংসারের বাকিসব ঠিকঠাক চলতে লাগলো। আমার বাবা মা এখনও আমার সাথে কথা বলেনি। কিন্তু নীড় আমাকে এটা বলে সান্ত্বনা দেয় যে একবার নাতির মুখ দেখলে তাদের রাগ গলে যাবে। এরপর একদিন নীড়ের নানী আসলো আমাকে দেখতে। আমি তার জন্য রান্না করলাম দুপুরে। তারপর খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে যেয়ে দেখি নীড়কে তার কোলে শুইয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলছেন,
– ও ভাইয়া, তুই ইডা কি বিয়ে করলি! খাটো, গায়ের রংও তো আমাদের মতো না। এ তুই কি বউ আনলি?
– আরও একটা জিনিস নাই, আমার বউয়ের স্বাস্থ্যও ভালো না বললে না সেটা! তোমাদের হাতের সমান কোমরও আমার বউ এখনও অর্জন করতে পারলো না ৫ মাসের প্রেগন্যান্ট হয়ে সেটা খেয়াল না করলে হবে!
– হয়, গায় এতোটুকু চর্বি নেই। এরে তুই কি দেখে বিয়ে করলি সবার বিরুদ্ধে যায়ে?
– তোমাদের মতো ভুটকি গুলোর জন্য এই বাসার সব দরজা ছোটো হয়ে গেছে তাই নতুন করে আর কোনো ভুটকি এনে খরচ বাড়াবো না তাই ওকে বিয়ে করছি৷ আর আমার বউয়ের ফিগার দেখছো? নেহাত প্রেগন্যান্ট, নাহলে আমার বউকে কখনো বিছানা থেকে উঠতেই দিতাম না নানি!
– বিয়ে করে লাজ শরম খাইছিস! বেলজ্জিতে একটা। বাচ্চাটা হয়ে গেলে তোর আম্মুর কথা শুনে তালাক দে ভাইয়া। তোরে পরীর মতোন এট্টা বউ আনে দেবো।
– আমার বউ পরীর চেয়ে কম কোথায়!
– শুদু ঢক দিয়ে পানি খাবি? তোর ৬ ফুটে শরীরে ওই ৫ ফুটে বউ দিয়ে হয় নাকি!
– না হলে বাচ্চাটা কি আকাশের থেকে পড়ছে? তুমি কি জানো বিয়ের পরে ওকে কখনোই ছাড়িনি আমি স্বামীর অধিকার আদায় করা থেকে! যেখানে সুযোগ পেয়েছি সেখানেই ও আমাকে তুষ্ট করেছে আর এই প্রেগন্যান্ট অবস্থায়ও ডাক্তারের বারণ ছাড়া আমরা সেপারেট থাকিনা৷ মানে নিশ্চয়ই বোঝো তুমি!
– চুপ কর। ফাজিল!
আমি দরজায় দাড়িয়েই লজ্জায় লাল হতে থাকলাম আর ভাবতে লাগলাম, কি ফাজিল লোক রে বাবা! এইভাবে প্রাইভেট কথা কেউ পাবলিক করে! মনে পড়ে গেলো প্রথম মিলনের সেই ক্ষণের কথা। সেদিন আব্বু আম্মু কেউ বাসায় ছিলো না তাই বিয়ের পর বাসর রাত আমাদের ওর রুমেই হয়েছিলো৷ সায়শা আমাকে পিংক কালারের একটা নেটের শাড়ি পরিয়ে রুমে বসায় রেখে চলে গেছিলো৷ নীড় রুমে এসে আমাকে দেখতেই ওর চোখে সেদিন এমন মাদকতা দেখেছিলাম যে ওখানেই আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম। এর আগেও আমাদের মাঝে রোমান্টিক অনেক কিছু হলেও সীমা লংঘন করার মতো কিছু কখনো ঘটেনি। প্রথম সেদিন ওর সামনে এতো খোলামেলা পোশাকে নিজেরই খুব লজ্জা করতে লাগলো। আর নীড়তো আমাকে দেখেই সে রাতে পাগল হয়ে গিয়েছিলো৷ কতবার যে আমার উপর অধিকার ফলিয়েছিলো আমার মনে নেই কিন্তু যতক্ষণ না আমি ব্যাথায় কান্না করে দিয়েছিলাম ততক্ষণ তার ভালবাসার অত্যাচার চলেছিলো। শেষমেষ আমি আর ওকে গ্রহণ করার মতো পরিস্থিতিতে ছিলাম না৷ তারপর সে আমাকে ছাড়ে ভোররাতের দিক। বিয়ের প্রথমদিন থেকেই জানি স্বামীকে আমার তৃপ্ত করা সহজ কাজ না। আর দেখতে নম্র ভদ্র লোকটা বেডরুমে আসলেই মহাফাজিল। কিন্তু তাই বলে সে এইভাবে এই বয়স্ক মহিলার সামনে আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের কথা ঢোল পিটায় জানাবে!
নীড় আমাকে দরজায় দাড়ানো দেখে কাছে ডেকে নিয়ে নানীকে বললো,
– বউ আমার একটাই। ৮ বছরের মাঝে সামান্যতম ইন্টারেস্ট তার প্রতি আমার কমেনি আর কমবেও না। আম্মু যে তোমাকে কেনো ডাকছে আমি খুব ভালো করে জানি৷ কিন্তু আম্মুকে বলে দিও আমার বউয়ের থেকে আর সে আমাকে আলাদা রাখতে পারবে না। আর আমার বউও কোনো নরম দূর্বল মেয়ে না যে তোমার আর আম্মুর ব্যবহারে ভয় পেয়ে আমায় ছেড়ে চলে যাবে। কি তাইতো বউ!
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালে, সে আমার হাত ধরে ওর পাশে বসালে, নানী মুখ কালো করে বেরিয়ে যেতেই নীড় আমাকে বললো,
– বার বার বলেছিলাম এনার জন্য কষ্ট করে রান্না করা লাগবে না। বুয়া যা পারে করুক। তোমাকে কে এতো ভালো হতে বলেছে? আমার ফ্যামিলির মানুষের মন কেউ ভরাতে পারবে না। চলো যা যা রানছো সব আমাকে আর আব্বুকে খাওয়াবা আর যারা আমার বউকে নিয়ে বাজে কথা বলবে সবাই বুয়ার রান্না খাবে।

সে তার কথা সত্যি প্রমাণ করতে সেবেলা, আম্মু ও নানী কাউকেই আমার রান্নাগুলো খাইতে দিলো না। আব্বু আর নীড় তাদের দেখিয়ে দেখিয়ে খেলো। রাতেও সেম কাজ করলো। আমি একটু রেগেই রাতে শোয়ার সময় বললাম,
– এতো ছোটোলোকি করলে কেনো খাবার টেবিলে! আর লজ্জা শরম সব কিছুর মাথা খেয়ে আমার সাথে কি করোনা করো তা তোমার নানীকে কেন বললে? আহ্
ব্যাথায় ককিয়ে উঠলাম হঠাৎ।
– কি হলো তোমার? কোথায় লাগছে?
আমি নীড়ের হাতটা নিয়ে তলপেটে ছোঁয়ালাম। ও প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে নিজের বাচ্চার প্রথম কিক খেয়ে পুরো হতভম্ব হয়ে গেলো। আমাকে আর কোনোভাবেই ছাড়লো না। সারারাত ওভাবে কান পেতে থাকল আমার পেটে, যদি আরো কিছু ফিল করতে পারে৷ বাচ্চার ঔ
আগমনীবার্তাটা এতদিন আমি বুঝলেও নীড় এই প্রথম তার বাচ্চার অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়ে কেমন একটা ঘোরের মাঝে চলে গেলো।
তারপর থেকে প্রতিদিন শুরু হলো তার ভালবাসার অত্যাচার। বাসায় থাকলে তো কিছুক্ষণ পরপর আমার পেটে হাত দিয়ে তার বেবিকে আদর করা লাগবে। আর অফিসে গেলে বারবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবে সে অফিসে গেছে বলে বেবিটা রাগ করে বেশি উথাল পাথাল করছে নাকি! এমনকি ফিজিক্যাল হওয়ার সময় ও এত সাবধানতা অবলম্বন করে যে আমি অবাক হয়ে যাই৷ বেডরুমের ওয়াইল্ড লোকটা এত মাইল্ড হয়ে গেলো কিভাবে? স্বামী হিসাবে যতই ভালো হোক না কেনো ইন্টিমেট হওয়ার সময় ওর কোনো হুশ থাকতো না৷ আর আমি ওর ওয়াইল্ডনেসের সাথেই অভ্যস্ত। রাতে ইন্টিমেট হওয়ার সময় এই লোকটাকে আমার খুব অচেনা লাগে৷ বাচ্চা হয়তো এমনই একটা জিনিস যার জন্য মানুষ তার সব সুখ ত্যাগ করতে পারে! নীড়ের মতো লোককে এখন ডাক্তার যদি বলে যে বউয়ের কাছে ঘেষা যাবে না, বাচ্চার ক্ষতি হবে। আমি নিশ্চিত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ও আমাকে ছুয়েও দেখবে না৷ অথচ ও আমাকে ছাড়া থাকতেই পারে না৷ কিন্তু বাচ্চার জন্য পুরাই পাগল হয়ে গেছে।
তার এই একটা ধারণা হয়েছে যে তার মেয়ে হবে বলেই সে পেটে হাত রাখলেই তার মেয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়। আর দূরে থাকলেই আমাকে জ্বালায়। আমি শুধু ভাবি এইলোকের ছেলে হলে তার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ সামলাব কিভাবে!

এভাবে স্বামী শ্বশুরের ভালবাসা আর শাশুড়ী আর নানীর ঠেসে দিন কাটতে লাগলো। ঐ দুজন তো রোজ রোজ আমাকে অপদস্ত করার ধান্দায় থাকে। শাশুড়ী তাও ভালো ছিলো, অন্তত আম্মার বাচ্চার ক্ষতি সে এতদিন করার কথা ভাবেনি কিন্তু নানী তো আরও কয়েকধাপ উপরে। সে মনে হয় কোনোভাবে আম্মুর কানে বাচ্চা নষ্ট করার বুদ্ধি দিয়েছে। কারণ ইদানিং আমি রান্না করে রেখে রুমে আসলে খাবার কেমন জানি অন্যরকম দেখতে লাগে। নীড়কে বললে অশান্তি করবে বলে কথাটা ওকে বলিনি। কিন্তু আমি রান্না করেই আমার খাবারটা উঠায় রুমে নিয়ে চলে আসি। নীড় আর আব্বুর দুপুরের খাবার ড্রাইভার দিয়ে পাঠিয়ে দেই এখন।

হঠাৎ একদিন শুক্রবার দুপুরে খেতে বসছি সবাই৷ নীড় আগে গোশ নিয়ে মুখে দেয়। কিন্তু আমি যেই গোশ নিতে যাবো সাথে সাথে ও আমার হাত ধরে ফেললো।
– মন কই থাকে তোমার?
– কেনো! কোনো সমস্যা হয়েছে? খাওয়া যাচ্ছে না!
নানী আর আম্মুকে দেখলাম মুখ নীচু করে হাসছে, নীড় আমাকে বকা দেওয়াতে। আমি বুঝলাম না ওর হঠাৎ কি হলো!
– গোশের মধ্যে পেপে আর ধনেপাতা দিয়েছো কেনো?
– নানী বললো তার এই রান্নাটা খুব পছন্দ। আজ খেতে ইচ্ছা করছে তার।
– তুমি বলদ হয়ে গেছো?
– কেনো?
– যে তোমাকে দেখতে পারেনা সে তোমার কাছে পছন্দের খাবার খেতে চাইলেই তুমি সরল মনে মেনে নিবা!
– আমি বুঝতে পারছি না তোমার কথা।
– প্রেগন্যান্ট অবস্থায় পেপে, ধনেপাতা খাওয়া নিষেধ তুমি জানো না!
– আমি কিভাবে জানবো! আমার কি ১০ টা বেবি হয়েছে?
– নানী, আমার বাচ্চার কোনো ক্ষতি যদি হয়, তোমাকে আমি দেখে নেবো৷
বলেই খাওয়া রেখে আমার হাত ধরে উঠায় নিয়ে আগে আমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো। তারপর ডক্টর ওর সন্দেহ সত্যি প্রমাণ করে কিছু টেস্টের রেজাল্ট দেখে জানালো যে খুব মাইল্ড ক্ষতিকারক সাবস্ট্যান্স পাওয়া গেছে আমার ব্লাডে। আরও কিছুদিন এভাবে চলতে থাকলে আমার বেবির সিভিয়ার ক্ষতি হয়ে যেতো। এখন থেকে অনেক সাবধান থাকতে বললেন৷
বাসায় ফেরার পথে নীড়কে দেখে আমার অনেক ভয় করতে লাগলো৷ ও এত রেগে গেছে যে কি আর বলবো! আমার উপর সারাপথ রাগ ঝারলো আমার বোকামির জন্য। বাসায় এসে তো নানী আর আম্মুকে থ্রেট দিলো যে যদি আর এমন কিছু হয় তাহলে, ও আমাকে নিয়ে সারাজীবনের জন্য বাসা ছেড়ে চলে যাবে। আব্বু আমার শাশুড়িকে বললো, তার আমার উপর রাগটা আব্বু মেনে নিলেও আমার বাচ্চার যদি কোনো ক্ষতি তারা করে তাহলে আম্মুকে ডিভোর্স দেবে এই বুড়ো বয়সে। এত এত থ্রেট শুনে তারা হয়তো সাময়িক ঠান্ডা হয়ে গেলো।

এভাবে আরও ২ মাস কেটে গেলে আমার প্রেগন্যান্সির ৭ মাস চলে এমন সময় বাসায় হুট করে একদিন অসম্ভব রকম সুন্দর একটা মেয়ে আসলো। পরে শুনলাম সে নীড়ের ছোটো মামার মেয়ে ফারাহ্, ওর সাথেও নাকি নীড়কে বিয়ে দেওয়ার জন্য আগে অনেক চাপাচাপি করছে। ঐ মেয়ে নাকি ছোটোবেলা থেকে নীড়ের পিছনে লেগে আছে। আমার অনেক ভয় হতে লাগলো, কে জানে আবার কি ঝড় আসতে চলেছে!

চলবে?

#পর্ব_১২
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#মুহাম্মদ_রাফি
ফারাহ এর সাথে হাই হ্যালো ছাড়া তেমন কোন কথা হলো না। নীড় অফিসে চলে গেলে মেয়েটা আসলো তাই ওর সাথেও দেখা হলো না। ওকে আমার নানী শাশুড়ি যে আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এবাসায় আসতে বলেছে সেটা আমি বেশ ভালো করে বুঝতে পারছি কারণ ওর যে নীড়কে পছন্দ সে কথা এখন বলে তো আর কোন লাভ নেই। শুধু আমাকে হার্ট করতেই কথাগুলো যে বলা, সে কাণ্ডজ্ঞান আমার আছে।
কিন্তু নানী যখন কথাগুলো বলছিলো তখন মেয়েটা কেমন জানি খুব সংকোচ বোধ করছিলো। আমার থেকে বেশ ছোটো হবে বয়সে। তানের থেকেও একটু ছোটো হওয়ার কথা। কি যে মিষ্টি দেখতে। চেহারায় খুব মায়া মায়া একটা ভাব আছে। তাই হয়ত নিজের স্বামীকে পছন্দ করা মেয়েটাকে আমি ঘৃণা করতে পারলাম না। কিন্তু খারাপ লাগলো ওর আগমনে। তাই ওকে এড়িয়ে চলার ডিসিশন নিলাম।
দুপুরে খাওয়ার পর একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য শুইলাম কিন্তু খুব অস্থির লাগতে থাকলো। আগে আমার যখন খুব শরীর খারাপ লাগত তখন নীড়ের সাথে কথা বলতাম। খুব অদ্ভুত ভাবে ওর সাথে কথা বললেই নর্মাল শরীর খারাপ ভালো হয়ে যেত। তাই ভাবলাম অনেকদিন ফোনে কথা বলা হয়না আজ একটু ফোন দেই।
– হ্যালো।
– হ্যালো, সোনাপাখি। আজ হঠাৎ ফোন দিলে কেন? শরীর খারাপ লাগছে?
– কেমন জানি অস্থির লাগছে। তুমি একটু সকাল সকাল আসতে পারবা?
– ডাক্তারের সিরিয়াল দিবো? আমি এসে নিয়ে যাব!
– না ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মত কিছু হয়নি। এমনিই তোমাকে খুব মিস করছিলাম।
– আচ্ছা আমি দেখি দ্রুত আসতে পারি কিনা। বোঝোইতো নতুন চাকরি, তারপর বেবির জন্য আমি অগ্রিম ১ মাস ছুটি চেয়ে বসে আছি। তুমি টেনশন নিয়ো না আমি হাতের কাজ সেরেই আসছি।
আমি কথা শেষ করে আস্তে আস্তে উঠে ড্রয়িংয়ে বসে টিভি দেখতে থাকলাম কিছুক্ষন। হঠাৎ দেখি ফারাহ এসে আমার পাশে বসে আছে। আমি একটু চমকে গেলাম কারণ ওর আসার শব্দ একদমই শুনতে পাইনি। আমি রিমোটটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
– তুমি দেখো কি দেখবা। আমি এখন একটু রেস্ট নেব।
বলে আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করতে ও আমার হাত ধরে বললো,
– ভাবি, একটু বসো দুজন গল্প করি। আসার পর থেকে তোমার সাথে তো কথাই হলো না। তুমি কি আমাকে এড়িয়ে চলছো?
– না না, এড়িয়ে যাবো কেনো! এমনি এই শরীরে বেশির ভাগ সময়ই শুতে মন চায় তাই তোমার সাথে ওইভাবে কথা বলার সুযোগ হয়নি।
– তোমাকে একটা কথা বলি? রাগ করবে নাতো!
– রাগ করার মত কথা না হলে কেন রাগ করবো?
– তোমার মতো এত সুন্দর বউ আমি দেখিনি।
– আমাকে দেখতে বউ বউ লাগে নাকি!
– হ্যা, তুমি জানো না! যেদিন প্রথম নীড় ভাইয়া তোমার কথা আমাকে বললো সেদিনই বলেছিলো, তুই দেখলেই বুঝবি যে ও শুধু আমার বউ হওয়ার জন্য জন্মেছে। এবং বিলিভ মি ভাবি তোমাকে নীড় ভাইয়ার বউ ছাড়া অন্য কোন রোলে মানাতো না। আল্লাহ্‌ তোমাদের একদম দুজনের জন্যেই পাঠিয়েছে।
– তোমার কি দেখে তা মনে হলো?
– তোমার গালের টোল।
– আমার গালের টোলে কি আছে?
– ধুর তুমি নিজেকে আয়নায় দেখনি? এত সুন্দর করে কারো গালে টোল পড়ে নাকি!
– তার সাথে তোমার ভাইয়ার কি সম্পর্ক?
– বোকা ভাবি, ভাইয়ার ডান গালে টোল পড়ে আর তোমার বাম গালে।
“আলাদা আলাদা তাইতো তোমরা অপূর্ণ,
আর একসাথে হলে সম্পূর্ণ।“
বলেই পাগল মেয়েটা বলে কিনা হাতে তালি দিতে।
– কেনো তালি দেওয়ার কি হয়েছে?
– আজিব এত চমৎকার একটা ছন্দ বললাম তোমাদের নিয়ে তাই হাততালি তো ডিসারভই করি। তাইনা!
এই মেয়ে পাগল ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমার প্রতি ওর কোন হিংসা কাজ করছে না এটা খেয়াল করলাম। কত সাবলীলভাবে নিজের পছন্দের মানুষের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে কথা বলছে দেখে আমি নিজেই অবাক হলাম।
– ভাবি চা খাওয়াবে আমাকে এককাপ? আমি জানি তোমাকে এই অবস্থায় আমার কাজে বলা উচিত না কিন্তু আমি না পারিনা চা করতে। তুমি জাস্ট দাড়িয়ে থেকে আমাকে একটু দেখিয়ে দিও আমি বানিয়ে নেবো।এবাসার বুয়া খুব জঘন্য চা বানায়।
– আচ্ছা চলো।
ও নিজেই আমাকে ধরে ধরে আস্তে আস্তে উঠালো। তারপর আমি কিচেনে যেয়ে ওকে চা বানিয়ে দিলাম, আর নীড়ের জন্য চা বানিয়ে ফ্লাস্কে রেখে দিলাম। আবার ফারাহর বকবকানি শুরু হল। কোনোভাবেই মেয়েটাকে থামানো যাচ্ছে না। যদিও এ বাসায় একটা কথা বলার মানুষ পেয়ে আমার মন্দ লাগছে না। তবুও ওকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আমি বলে উঠলাম,
– আমার না এখন একটু খারাপ লাগছে। আমি একটু শুবো।
– ওকে চলো তোমাদের বেডরুমে যাই, তুমি শুয়ে থেকো আমি বসে গল্প করবো।
– আচ্ছা চলো।
আমরা রুমে এসে গল্প করতে করতে নীড় চলে আসলো। ফারাহকে দেখে ও খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– বদ বাহিনী এখন আমার আর আমার বউয়ের মাঝে ঝামেলা লাগানোর জন্য তোকে আমদানি করলো?
– তুমি এমন কেনো ভাইয়া?
– কেমন?
– আমাকে দেখে ভালমন্দ জিজ্ঞেস না করে এসেই আমাকে দেখে বকা শুরু করে দিয়েছো?
– তা তুই আসছিস কেন? শোন ফারাহ আমার বাচ্চার ডেলিভারি আর ২মাস পরে। আমি কিন্তু একদম রিস্ক নেবো না কোনোকিছু নিয়ে। তোর যদি খারাপ কোন ইন্টেনশন থাকে তুই মার খাওয়ার আগে চলে যা।
আমি ধমক দিয়ে নীড়কে থামিয়ে বললাম,
– অফিস থেকে এসেই কি শুরু করছ? মেয়েটা দুইদিন ঘুরতে এসেছে, তুমি এমন করে কথা বোলো না।
– ভাবি আমি এখন আসি, কাল খাটাস ভাই গেলে আমি আসবো।
– আচ্ছা।
বলে ফারাহ চলে গেলে, আমি নীড়ের টাই খুলে দিতে দিতে বললাম,
– এই যে মেয়ের বাপ, এত রাগ করতে আছে! বাচ্চা একটা মেয়ে আবেগের বসে হয়তো ক্রাশ খেয়েছিল তাই বলে এতবছর পরও এত রুঢ় ব্যবহার করবে?
– দাড়াও কাল নানীসহ এইটাকেও তাড়াবো। আমার আর ভালো লাগছে না। তুমি বুঝতেস না এখন কত ক্রিটিকাল সময়। তোমার এখানে থাকা সেফ না।
– কোথায় যাব?
– কাল একবার চলো ও বাড়ি যাই। দেখি এই ২ মাস আব্বু রাগ ভুলে থাকতে দেয় কিনা। তোমাকে নিয়ে সারাদিন টেনশনে কাটে আমার। এবাসায় কেউ নেই তোমাকে দেখার। এতদিন তুমি একাই নিজেকে সামলাতে পারলেও এখন এত ভারি হয়ে গেছো যে একা একা উঠতে বসতেও পারোনা। এ বাড়ির কারো কাছে তোমাকে রেখে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারি না।
– আচ্ছা, কাল তোমার ছুটি আছে চলো যেয়ে দেখি।
নীড়ের শার্ট খুলে দিয়ে হাতে টাওয়েল আর চেঞ্জ করার কাপড় দিয়ে ওকে গোসলে পাঠিয়ে দিয়ে আমি ওর নাস্তা আর চা নিয়ে আসলাম। ও নাস্তা করতে করতে বললো,
– তুমি রেডি হও। চলো একটু বেবিশপে যাই। বেবির রুম সাজাতে হবে না!
– তোমারইতো সময় হয়না।
– আজ হয়েছে। কুইক রেডি হও।
চলবে?