নীড়ভাঙ্গা ভালবাসা পর্ব-১০

0
274

#পর্ব_১০
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

রাতের খাওয়া শেষ করে রান্নাঘর গোছায় রেখে এসে দেখি নীড় বেডে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আমি ওর পাশে বসে দেখলাম ও জয়েনিং মেইল লিখছে। মেইল লেখা শেষ করে গেম খেলা শুরু করলে আমি বললাম,
– ডাক্তার কি বলেছে মনে আছে তোমার?
– হুম।
– চলো তাহলে শুয়ে পড়ি।
– তুমি শুয়ে পড়ো। আমার লেট হবে।
– আমি একা শুতে পারবো না। আর লাইট অফ করে আসো শুতে।
ও চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো। আচ্ছা ওর রাগ কেন পড়েনা? মানুষের হাজবেন্ডদের মতো ভায়োলেন্ট হয় না সে, কিন্তু এইভাবে মনো ব্রত আর কতদিন পালন করবে? ভাবতে ভাবতে আমি আস্তে আস্তে ওর বুকের মধ্যে ঢুকে গেলাম। সে উল্টাপাল্টা কিছু বলেনি আর আমাকে সরিয়েও দেয়নি দেখে আমি আস্তে আস্তে উঠে ওকে কিস করতে গেলাম। ও চোখ বুজে থাকায় বুঝতে পারেনি। তাই সুযোগটা কাজে লাগালাম। কিছুক্ষণ পর আমি আরও কিছু চাই বুঝে সে বললো, ডাক্তারের নিষেধ আছে না! চুপচাপ ঘুমায় পরো। তার কথায় ভাবলাম যাক রাগটা মনে হয় পড়ে গেছে। ডাক্তার ১৫ দিন আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে বলছে তাই এমন করছে ভেবে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ফজরের নামায পড়ে আমি একবারে রান্না করতে গেলাম আর নীড় আবার শুয়ে পড়লো। খুলনায় ট্রাফিক নেই বললেই চলে তাই ৮.৩০ টায় রওনা দিলেই ও টাইমলি অফিসে যেতে পারবে। আমি সকালের নাস্তা বানিয়ে একবারে দুপুরের রান্নাও শেষ করলাম। তারপর ওকে উঠিয়ে গোসলে পাঠিয়ে ওর নাস্তা রেডি করে বক্সে লাঞ্চটাও রেডি করে ফেললাম। ও খেয়ে বেরোনোর সময় ওকে বললাম,
– শোনো, একটু তাড়াতাড়ি আসার ট্রাই করো। আমার একা একা ভালো লাগবে না।
– ডিভোর্স হয়ে গেলে একাই থাকবা সো অভ্যাস করো।

বলেই সে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। বেয়াদপ বেটা তোর রাতের কথা শুনে মনে হলো তুই সব ভূলে গেছিস কিন্তু না খোটা দেওয়ার সময় সব মনে থাকে। বাসায় লেট করে ফিরলে তোর খবর আছে।
সারাটাদিন আমার কোনো খোঁজই নিলো না, আমি খেলাম কি খেলাম না সেটার খোঁজও নিলো না। আব্বু আম্মু কবে ফিরবে সেটাও জানিনা। একা একা সারাদিন শুয়ে শুয়েই কাটালাম। দিন পেরিয়ে রাত হলো। তার বাসায় ফেরার কোনো খোজ নেই৷ তখন আমি একটু ফেসবুকে ঢু মারতেই আমাদের একটা কমন ফ্রেন্ডের ওয়ালের পোস্ট দেখে মাথা গরম হয়ে গেলো৷ ৫টায় অফিস শেষ বাট তার এত রাত হওয়ার কারণটা এখন বুঝলাম। কতক্ষণ কাদলাম জানিনা কিন্তু কলিং বেলের শব্দ শুনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১১.৩০ বাজে। চুপচাপ দরজা খুলে আমি রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কাপড় ছাড়তে ছাড়তে ও বললো,
– আমি খেয়ে এসেছি। তুমি না খেয়ে থাকলে, খেয়ে ঘুমায় পড়ো।

আমি কোনো কথা বললাম না৷ কিছুক্ষণ পর সে আমার সামনে এসে বললো,
– খেয়েছো?
– সারাদিন খোজ নাওনি এখন আর খোজ নিয়ে কি হবে?
– কাজের চাপ ছিলো তো।
– হ্যা প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর সাথে ডিনার কেমন কাটলো?
– আর বলো না আমি জানতাম না নুসরাত ও ওখানেই জব করে। তো আজ আমার ফার্স্ট ডে বলে ও অফিস শেষে ট্রিট দিলো।
– গুড। তোমার কাজ হলে লাইট অফ করে দিও। ঘুমাবো আমি।
– কি হলো আবার! সকালে তো মিউ মিউ করছিলে এখন আবার ভাব নিচ্ছো?
– আমার কি ভাব নেওয়ার সময়! দিন দিন বাচ্চা পেটে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমার চেহারার ঔজ্জ্বল্য কমতে থাকবে আর তুমি তো শুধু নামের বাপ হবে। নিজের হ্যান্ডসাম ভাব বাড়া ছাড়া তো আর একটুও কমবে না। ওমন সিঙ্গেল বান্ধবীর সাথে ডিনার তো রেগুলার হবে৷ প্রেগনেন্ট বউ যে সারাদিন পথ চেয়ে বসে থাকবে সে কথা কি আর মাথায় থাকবে!
– কিছু একটা পোড়ার গন্ধ পাচ্ছি। যে রোজ ডিভোর্স দিতে চায় তার এমন বিহেভ মানায় না। ডিভোর্সের পর কি আমি সিঙ্গেল থাকবো? আগেভাগেই পাত্রী রেডি করি!
ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। ও কিছুটা ভড়কে যেয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে বললো,
– যা পারবা না বাহাদুরি দেখায়,তা বলতে যাও কেনো? আর আমি তো জোক করছিলাম তুমি প্লিজ এভাবে কেঁদো না। আচ্ছা কাল একদম অফিস শেষেই চলে আসবো। আর কখনো তোমায় রেখে বাইরে টাইম স্পেন্ড করবো না।

হুদাই কান্না পাচ্ছে আজকাল। আমি তো জানি নুসরাত আমাদের ব্যাপারে সব জানে তারপরও কেনো রিঅ্যাক্ট করলাম! ধ্যাত আমি যে এই বেটার প্রতি কতো দূর্বল বেটা তা সহজেই বুঝে যায় সবসময়।

কিছুক্ষণ পর ওর গুতাগুতিতে উঠতে বাধ্য হলাম। দেখলাম খাবার নিয়ে বসে আছে। আমাকে উঠায় আদর করে খাওয়ায় দিতে থাকলো। আর সাথে বলতে থাকলো নুসরাতের সাথে কি কি বিষয়ে কথা হলো।নুসরাতের বিয়ে ঠিক হয়েছে, ওর হবু বরকে নিয়ে বাসায় বেড়াতে আসতে বলছে, আমার প্রেগনেন্সির ব্যাপারেও বলছে ইত্যাদি। এইসব কথা বলতে বলতে কখন রাত হয়ে গেছিলো বুঝতে পারেনি৷ ও আর এমন কখনো করবে না প্রমিস ও করলো।
আজ সে নিজে থেকেই কাছে টানলো আর বললো, ফার্দার যদি তাকে ভূল বুঝছি তাহলে আর আমাকে ক্ষমা করবে না। সে আমার মাথায় হাত বুলায় দিতে দিতে আর কপালে চুমু একে দিতে দিতে আমায় ঘুম পাড়ায় দিলো।

তারপর থেকে মোটামুটি সব ঠিকঠাকই চলতে থাকলো৷ আমার বাবা মা এখনও মেনে না নিলেও শাশুড়ী নীরব হয়ে গেলো আর শ্বশুর তো আমি বলতে অজ্ঞান। সংসারটা ঠিকমতো করতে থাকলাম। শাশুড়ী তার মতো থাকে, আমি আমার মতো থাকি। আমি অনেকবার নত হয়ে তার সাথে সবকিছু ঠিকঠাক করতে গেছি কিন্তু সে আমাকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে কোনোদিন ছেলের বউ হিসাবে আমাকে মেনে নেবে না। আমিও এই সত্য মেনে নিয়ে সংসার করতে থাকলাম। স্বামীর ভালবাসা থাকলে আর কি চাই! নাবিল আর সায়শা মাঝে মাঝে আসে৷ কিন্তু তান একবারও আর এবাড়ি আসলো না। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হলেও আমার প্রাণোচ্ছল ভাইটা জানি কোথায় হারিয়ে গেছে! আমি ও বাড়ি যে যাব তারও উপায় নেই৷ সারাদিন শরীর খারাপ লাগে মনে হয়না ঘর ছেড়ে কোথাও বেরোই৷ নীড় আসলে জিজ্ঞেস করবো ও কিছু জানে কিনা!

চলবে?