নীড়ভাঙ্গা ভালবাসা পর্ব-১৩+১৪

0
313

#পর্ব_১৩
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

আমরা বেবি শপে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা নামলো। এই কমাসে বাচ্চার জন্য ওর বেতন থেকে কিছু কিছু টাকা আলাদা করে রাখছি। কিছুই কেনা হয়নি এখনও বাবুর জন্য। বেবি শপে ঢুকে ও আমার হাত ধরে ধরে আস্তে আস্তে আমরা প্রোডাক্ট বাছতে লাগলাম। আজ শুধু বেবির কাপড় চোপড় কিনবো। আমি জেন্ডার নিউট্রাল কাপড় বেছে বেছে ট্রে তে রাখতে থাকলাম আর সে দৌড়ায় দৌড়ায় মেয়ে বেবিদের কিউট কিউট ড্রেস তুলতে থাকলো। ২ জোড়া মেয়ে বেবির ব্যালেরিনা খুজে নিয়ে আসলো নীড়। কি বলবো এতো সুন্দর! কিন্তু বিল পেমেন্টের সময় আমি ওকে চোখ গরম দিয়ে বললাম,
– এতো ফালতু খরচ করা যাবে না। আমাদের বেবির জেন্ডার আমরা জানিনা। সো ছেলে হলে কি তুমি আমার ছেলেকে এই মেয়েদের ফ্রক, জুতা পরাবা! যাও সব রেখে আসো।
– না। আমার বেবির জন্য কোনো কিপটামি করবা না। আজ আমার টাকা নাই কাল হবে। তাই বলে আমার বেবি আসার আগেই তার আম্মুর কিপটামির শিকার হতে দেবো না।

তারপর আস্তে করে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
– আর এখন ছেলে হলেও সমস্যা নাই। বড়জোর ৬মাস টাইম পাবা তারপর আমাকে মেয়ে দিতে হবে। না হলে মেয়ে না হওয়া পর্যন্ত যতগুলা ছেলে হবে হোক৷ I don’t have any problem.
– i have so many problems. It’s my body.
– আমাকে বিয়ে করার আগেই কথাটা ভাবা উচিত ছিলো।

বলেই ড্যাম কেয়ার ভাব দেখিয়ে বিল দিতে আমার সামনে যেয়ে দাড়ালো।
– অসভ্য!!!
বেবিশপ থেকে সিটিইন একদম কাছে বলেই আমরা ব্যাগগুলো সব গাড়িতে রেখে ডিনার করতে সিটি ইনে ঢুকে কর্ণারে একটা কাপল টেবিলে বসলাম। নীড় আমার হাতটা ধরে অনেক গল্প করতে থাকলো৷ সেই প্রথম প্রথম প্রেম করার মত ফিলিংস হতে লাগলো। কত পথ পেরিয়ে আজ আমরা এখানে পৌঁছেছি। বাবা মা হতে যাচ্ছি প্রথমবারের মতো। এত কঠিন পথ অনেক কষ্ট করে পাড়ি দিয়ে আসতে হয়েছে। এখনও অনেক বাধা পেরোনো বাকি আমাদের৷

নীড় আমাকে ওভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হঠাৎ বললো,
– আজ তোমাকে নিয়ে বাইরে আসার একটা খুব স্পেশাল কারণ আছে।
– কি কারণ?
– গেস করো!
– জ্বালিয়ো না প্লিজ বলো।
– তোমার ইউনিভার্সিটির লেকচারারের জবটা হয়ে গেছে।
– সত্যি!!!
– হ্যা বাবা সত্যি।
আমি আনন্দে কেঁদে ফেললাম। নীড় চেয়ার ছেড়ে উঠে হাটু গেড়ে আমার সামনে বসে আমার চোখের পানি মুছে দিতে থাকলে আমি খেয়াল করলাম আমার বরটা হাটু গেড়ে বসলেও আমার চেয়ে লম্বা।
– এই তোমাকে এতো লম্বা হতে কে বলছে! সারাদিন তোমার নানীর মুখে আমি খাটু এই কথা শুনতে শুনতে আমার কান পচে যাচ্ছে!
নীড় হাসতে হাসতে বললো,
– আমাদের বাচ্চাগুলো যেন ব্যালান্সড হাইটের হয় তাই।

আমি হাসতে হাসতে আবার কেদে ফেললে ও আমার হাতটা ধরে বললো,
– ইন-শা-আল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে এবার দেখো সোনাপাখি। আমাদের সব স্ট্রাগলের সমাপ্তি ঘটবে দেখো।
– সত্যি বাবু, আমি অনেক ক্লান্ত। সংসারের ঝামেলা যে কবে শেষ হবে!
– ইন-শা-আল্লাহ শীঘ্রই সুদিন আসবে দেখো।
বাসায় ফিরতে ফিরতে আমাদের একটু লেট হয়ে গেলো। ভিতরে ঢুকে দেখি সবাই ড্রইংয়ে বসে আছে। আব্বু আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– এতো রাত করে কেন ফিরলে মা! এখন তোমার একটু সাবধানে থাকতে হবে বোঝোইতো। আর এমন রাত করবা না।
– স্যরি আব্বু। আর কখনো এমন হবে না। আপনারা রাতে খেয়েছেন?
– হ্যা আমরা খেয়েছি। তুমি আর নীড় খেয়ে নাও।
– আমরা খেয়ে এসেছি আব্বু।
– তাহলে যাও দ্রুত ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ো।
– জ্বি আচ্ছা।
আমরা ভেতরে ঢুকে ব্যাগগুলো সব ভিতরে রেখে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। ও আমার পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
– কাল ঐ বাড়ি যাব খেয়াল আছে তো?
– হ্যা
– তোমার বাবা মা কি মানবেন?
– জানিনা। ভয় লাগছে।
– কেন?
– বাবা খুব জেদী আর রাগী। সেদিন যেভাবে বের করে দিলো কাল কি করবে বুঝতেছিনা।
– আচ্ছা কাল দেখা যাবে। যদি ও বাড়ি না থাকতে পারো আমি আলাদা বাসা নিয়ে নিবো। কিন্তু তোমাকে এ কয়দিন একা বাসায় রেখে আমি শান্তি পাবো না। তুমি একটু শোও দেখি আব্বুকে বলে আসি তোমার ও বাড়ি যাওয়ার কথা।

আব্বুর সাথে কি কথা হলো আমি জানতে পারলাম না কারণ আমি ও ফিরে আসার আাগেই ঘুমায় গিয়েছিলাম। আর ফজরের নামাজ পড়ে ও আবার ঘুমাতে গেলো বলে আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি। সকালে সবাই একসাথে নাস্তা করার সময় আম্মু নীড়কে জিজ্ঞেস করলো,
– আব্বু, তুমি নাকি এই মেয়েটাকে ওর বাপের বাড়ি রেখে আসছো?
– আম্মু প্লিজ with due respect she is my wife. তুমি যদি সেটা বলতে না চাও ওর একটা নাম আছে সেই নামটা ধরেও কথা বলো যদি ওর সম্পর্কে কিছু বলতে চাও! আর আমি শুধু ওকে রেখে আসবো না সাথেও যাবো। আমি নিশ্চয়ই আমার ৭ মাসের প্রেগন্যান্ট বউকে অন্যকারো ভরসায় ছেড়ে দেবো না!
– এ বাসায় কি সমস্যা হচ্ছে তোমার বউয়ের!
– তুমি আমাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করছো? Isn’t it funny ammu!
– কেনো আমি ফান করার মতো কি বললাম!
– তুমি তোমার আম্মুকে দিয়ে আমার বউ আর বাচ্চার ক্ষতি করার চেষ্টাটা অস্বীকার করবে?
– আমি তোমার বাচ্চার ক্ষতি চাইতে পারি!
– বাচ্চার মায়ের ক্ষতি যে চাইতে পারে সে আমার বাচ্চার ক্ষতিও চাইতে পারে।
আম্মু তখন আমার দিকে চেয়ে বললো,
– শোনো মেয়ে, আমার ছেলে তোমার সাথে কোথাও যাবে না। না তোমার বাপের বাড়ি না কোনো ভাড়াবাড়িতে। ও ওর নিজের বাড়িতেই থাকবে। তুমি যদি বাপের বাড়ি যেতে চাও তাহলে বাচ্চা হওয়ার পর তুমি আমাদের বাচ্চা আমাদের দিয়ে বাপের বাড়ি চলে যেও।
– আপনাদের বাচ্চা কবে থেকে! ও শুধু আমার আর নীড়ের। আপনার তো দুইটা বাচ্চা, সো জানেন বাচ্চা হওয়া কত কষ্টের। তারপরও কখনও খোঁজ নিয়েছেন আমি সারাদিন একা ঘরে বসে করি! খেয়েছি কিনা! কখনও ভালো মুখে দুটো কথা বলেছেন! সারাদিন মনমরা হয়ে থাকলে সে খোজ রেখেছেন!
আপনি আপনার ইগো ধরে বসে আছেন। কই একটা মেয়ে হয়ে তো যখন সারা বাসা হাটাহাটি করি অস্বস্তিতে খোজ নিয়েছেন একবারও! সবসময় আমাকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে চলে গেছেন। আর আপনার মায়ের কথা আর নাইবা বললাম, ভদ্রমহিলা তো আমার সন্তান নষ্ট করার মতো ঘৃণ্য পথও বেছে নিয়েছিলেন। জানার পর আপনি তাকে কিছু বলেছেন! দিব্যি তাকে এই বাসায় রেখে আদর যত্ন করছেন। আর আমার বাচ্চা থেকে আমাকে আলাদা করার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না। আমি যেখানে যাব আমার বাচ্চাও সেখানেই যাবে।

শাশুড়ী কোনো কথা না বলে তার মাকে নিয়ে ঘরে চলে গেলেন। তার প্রায় ঘন্টাখানেক পর আশ্চর্য হয়ে দেখলাম ড্রাইভার নানীর লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর নানীও ড্রাইভারের পিছু পিছু বেরিয়ে গেলো। তারপর শাশুড়ী নীড়কে ডেকে বললো,
– আব্বু, তোমার আর তোমার বউয়ের আম্মাকে নিয়ে সমস্যা ছিলো সে চলে গেছে। এই বংশের প্রথম সন্তান যেন তার নিজের বাসা ছেড়ে কখনও কোথাও না যায়। তোমার বউকে আমি কোনোদিন মেনে নিবো না কিন্তু তাই বলে আমার পোতা তার ঘরছাড়া হবে এটাও মেনে নেবো না। আর কখনও যেনো বাসা ছাড়ার কথা না শুনি তোমাদের মুখে।

তাদের মা ছেলের কথাশুনে আমি অবাক হয়ে ভাবতে থাকলাম সত্যিই কি আমার দজ্জাল শাশুড়ী আমার সন্তানকে মেনে নেবে নাকি নিজের একমাত্র ছেলেকে কাছে রাখার নতুন কোনে চাল এটা!

চলবে?

#পর্ব_১৪
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

সেদিনের পর থেকে আর একবারও বাবার বাসায় যাওয়ার নাম নেয়নি নীড়। আর শাশুড়ীও সম্পূর্ণ বদলে গেলো রাতারাতি। আমাকে পারলে চোখে হারায়। নীড়ের হয়তো নিজের মাকে সন্দেহ হয়না। সে হয়তো মাতৃস্নেহে অন্ধ হয়ে ভেবেই নিয়েছে ২দিন আগেও যে আমাকে দেখতে পারতনা তার এখন আমার সেবাযত্ন করাটা স্বাভাবিক। কিন্তু ঘরপোড়া গরুতো সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়। তাই আমি নীড়ের আম্মুকে একবারেই বিশ্বাস করতে পারলাম না। উল্টা তার সেবাযত্ন আমার কাছে খারাপ কিছু হওয়ার পূর্বাভাস মনে হতে থাকে।

দিন যায় রাত যায় কোথায় যেনো একটা ছন্দ কেটে গেছে মনে হয়। নীড় এখন অফিস থেকে এসে কাপড় চোপড় ছেড়েই তার মায়ের রুমে চলে যায়। সেখানে সে, ফারাহ্ আর আম্মু বসে কি আড্ডা দেয় জানিনা। হাসির শব্দটাই শুধু শুনতে পাই। ভালবাসা দিয়ে আসলে সবকিছু জয় করা সম্ভব না। আমি কখনো পারবো না তাদের মা ছেলের সম্পর্কের উর্ধ্বে যেতে। আমিও কিছুদিন পর মা হবো তাই এখন তাদের নাড়ির টানটা কিছুটা হলেও বোঝার চেষ্টা করি৷ তাই আমি কিছু বলিনা নীড়কে সে আমার কাছে না থেকে তার মায়ের কাছে সময় কাটায় বলে।

– তুমি তো আমার আছো তাইনা পুচকো! তোমার আব্বু থাকুক তার আম্মুর কাছে৷ তুমি তোমার আম্মুর কাছে থাকবা। তোমার আব্বুর সবকিছু ম্যানেজ করতে হয় তাই সে আমাদের সময় দিতে পারেনা তাতে কি হয়েছে! তুমি শুধুই আমার। তোমাকে কারো সাথে আমি শেয়ার করবো না। এমনকি তোমার আব্বুর সাথেও না। ওকে!!!

আমার দিন রাত সবই কাটে এভাবে আমার পুচকোটার সাথে কথা বলে বলে। মাঝে মাঝে সে আমাকে খুব জ্বালায়। এমনও দিন যায় সারাদিন পেটের মাঝে এত লাফালাফি করে যে আমার হাফ ধরে যায়। শুধু নীড়ই এখন আর আমাদের সময় দিতে পারে না। সারাদিন ব্যাংকে হাড়ভাঙা খাটুনির পর বাসায় ফিরলে আগে তাও আমি স্বামীসেবা করার সুযোগ পেতাম। এখন সেটিকুও তার মা আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে। সে হাসিমুখে এমনভাবে আমার থেকে সব কেড়ে নিচ্ছে যেটা আর কারও চোখে পড়ছে না। নীড়কে একদিন বলেছিলাম, তোমার খাবারটা তো আমিই করতে পারি কওন্তু সে বললো, তার আম্মু নাকি তাকে বলেছে এই সময়ে আমাকে দিয়ে কিছু না করাতে। সবকিছুই বুয়ার হেল্প নিয়ে সে ম্যানেজ করবে।

ফারাহ মাঝে মাঝে আসে আমার রুমে গল্প করতে কিন্তু আমার এখন আর ভালো লাগে না ওর সাথে কথা বলতে। সেই প্রথমদিকে যেমন এভোয়েড করতাম এখন আবার তাই করি। আমার পুচকো ছাড়া আর কেউ নেই আমার এই সংসারে। যার হাত ধরে সব ছেড়ে এসেছিলাম তার সাথেও এই একমাসের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব। আমি বুঝি ৮ মাসের ভারি পেটওয়ালা বউকে দেখতে, তার সাথে সময় কাটাতে কারোরই ভালো লাগবে না চোখের সামনে ফারাহর মতো সুন্দরী থাকতে। আগের থেকে তাদের আড্ডার সময়, খাবার টেবিলে হাসাহাসি-গল্পের সময় অনেকটা বেড়ে গেছে।

বেলকনিতে দাড়িয়ে নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন জানি নীড় পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো খেয়ালই করিনি৷ আমি কোনো কথা না বলাতে নিজেই জিজ্ঞেস করলো,
– সারাদিন কি করে কাটালে!
– তোমার আম্মু তোমাকে জানায়নি!
– জানিয়েছে তো।
– তাহলে আমার কাছে জিজ্ঞেস করছো কেনো?
– আমার বউয়ের সাথে সারাদিন কথা হয়নি তো, তাই।
– তোমাকে কেউ নিশ্চয়ই আটকে রাখেনি!
– রাখছে তো, তোমার পুচকো। সে তোমাকে এতো টায়ার্ড করে রাখে যে তোমাকে আমার জন্য খাটাতে কষ্ট লাগে৷
– তাইতো বাসায় ফিরেই দৌড় লাগাও অন্য কোথাও, যেখানে আমি আর আমার পুচকো নেই।
– আমি জানি তুমি রাগ করছো কিন্তু যতই রাগ করো তোমাকে এখন কিছুতেই বলবো না৷ যখন আমার সারপ্রাইজটা পাবে তখন তোমার সব রাগ পানি হয়ে যাবে।
আমি আমার কোমর থেকে ওর হাতটা সরিয়ে দিয়ে রুমে ঢুকে শুতে শুতে বললাম,
– যাওয়ার সময় লাইট অফ করে দিয়ে যেও।
– আমি কোথায় যাবো এতো রাতে?
– রোজ যেখানে যাও!
আমার কথা শুনে কাচুমাচু মুখে আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,
– তুমি কি সবকিছু দেখে ফেলেছো?
– তোমার কুকীর্তি না সুকীর্তি! কোনটা দেখে ফেলার কথা বলছো?
– উল্টাপাল্টা কথা না বলে যা জিজ্ঞেস করছি বলো প্লিজ।
– না আমি কিছুই দেখিনি তুমি লাইট অফ করে যাও।
ও কিছু না বলে লাইট অফ করে আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আর মাত্র কয়েকদিনের কাজ বাকি আছে সোনা, তারপর আমি আবার সম্পূর্ণটাই তোমার।
– তুমি সম্পূর্ণটা আমার কবে ছিলে বলতে পারো? সবসময় আমাকেই সবকিছু ত্যাগ করতে হয়েছে। মানুষ এটলিস্ট ফোনে কথা বলতে পারে, আমি সেটাও পারিনি কোনোদিন তোমাকে ভালবেসে। যখনই ফোন দিতাম তোমার একই উত্তর রেডি থাকতো আম্মু আছে পাশে। এমনকি ডেটিংয়েও মাঝপথে আমাকে ফেলে বাসায় দৌড়িয়েছ তোমার আম্মুর তলবে।
– প্লিজ উত্তেজিত হয়ো না। তোমার শরীর খারাপ করবে।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শোয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু বেয়াদপটা আজ আমার অনেক কাছাকাছি এসে নিজে নিজেই বলতে থাকলো,
– আমি ইচ্ছা করেই একটু দূরে দূরে থাকি তোমার থেকে।
– সেটাই স্বাভাবিক। আলুর বস্তার কাছাকাছি কেউ থাকতে চাইবে কি!
– বেশি বোঝো তুমি। আয়নায় নিজের দিকে চেয়ে দেখেছো একবার!
– হ্যা, পেটে একমণের বস্তাবাধাসহ চোখের নিচের ডার্কসার্কেল নিয়ে কেমন বিশ্রী দেখায় সবই দেখেছি।
– এই তুমি এতো উল্টাপাল্টা কথা বলছো কেনো!
– তুমি আমাকে না ঘাটিয়ে যাও তোমাদের আড্ডায়।
– ও বাবা এতো রাগ করেছে আমার মিষ্টি বউটা! সেকি জানে তার এই রূপে আমি পাগল হয়ে যাই বলেই দূরে দূরে থাকি! যতদিন যাচ্ছে তুমি ততবেশি মোহনীয় হচ্ছো জানো সেটা! আমার তো নিশ্চিত মেয়ে হবে দেখো। নইলে এতো রূপবতী তুমি এই অবস্থায় কেনো হবা বলো! আমি বাসায় এসে তোমাকে দেখার সাথে সাথেই পাগল হয়ে যাই মনে হয়। তোমার গায়ের গন্ধটাও এতো মাতাল করে কি আর বলবো। কিন্তু কিছুই করার নেই ডাক্তার আমাকে স্ট্রিক্টলি নিষেধ করে দিয়েছে তোমার কাছে যেতে। বলেছে এই ২ মাস কিছুই করা যাবে না। আর বেবি হওয়ার পর ১.৫ মাস। বলো তুমি এইটা কিছু হইলো! এতদিন বউ সামনে থাকতেও তাকে কাছে পাবো না সেটা কি মেনে নেওয়া যায় বলো! তাইতো দূরে দূরে থাকি যেনো নিয়ন্ত্রন না হারিয়ে ফেলি। আমার বাচ্চাকে এই পৃথিবীতে আনতে তুমি এতো কষ্ট করছো আর আমি এটুকু পারবো না!
কথা শেষকরেই সে আমাকে এলোপাতাড়ি চুমু খেতে লাগলো।
– এই ছাড়ো আমাকে। ডাক্তার না তোমাকে মানা করেছে!
– তুমিই রাগ দেখিয়ে ঘুমন্ত সিংহকে জাগিয়ে তুলেছো। এখন তোমাকেই তার ফল ভোগ করতে হবে।
– প্লিজ ছাড়ো কাতুকুতু লাগেতো।
– আজ আর ছাড়ছি না তোমাকে।
নীড়ের সাথে খুনসুটি করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছিলাম জানিনা। হঠাৎ ঘুম ভেঙে হাত বাড়িয়ে দেখি নীড় পাশে নেই। ফোন হাতড়ে সময় দেখলাম ৩টা বাজে। এইসময় আবার কোথায় গেলো! রাতে শোয়ার পরে তো ও সাধারণত বের হয়না আমায় একা রেখে! নানাচিন্তা করতে করতে ওয়াশরুম, বেলকনি চেক করে দেখি সেখানেও নেই। তারপর আস্তে আস্তে দরজা খুলে ড্রইংয়ে চেক করার জন্য বেরোতে দেখি আমাদের পাশের ফাকা রুমটায় লাইট অন করা কিন্তু দরজা ভিতর থেকে লক করা। আমি দরজা ধাক্কাতে বেশ কিছুসময় পর নীড় এসে দরজা খুলে আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। সাথে সাথে ও বেরিয়ে দরজা অফ করে আমার হাত ধরে বললো,
– তুমি উঠলে কেনো? শরীর খারাপ করবে তো। চলো ঘুমাতে চলো।
– তুমি এঘরে কি করছো?
– তেমন কিছুনা তুমি রুমে চলো।
ভিতর থেকে একটা মেয়ে কন্ঠে নীড়কে ডাকতে শুনলে, আমি নীড়কে সরিয়ে দরজা খুলে ফারাহ্কে দেখতেই আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। আমি সাথে সাথে ওখানে দাড়িয়েই হড়বড় করে বমি করে দিলাম। আমার আর কোনো হুশ থাকলো না। নীড় হয়তো আমাকে ধরে রেখেছিলো পিছন থেকে। বারবার শুধু এই কথাটাই বলতে থাকলো, তুমি যা ভাবছ তেমন কিছুনা। কিন্তু আমার সবকিছু ফ্রিজড হয়ে গেলো। কিছুই আর ভাবতে পারলাম না। আমার অ্যাংজাইটি হতে থাকলো যেটা বেবির জন্য খুব ক্ষতিকর। কিন্তু আমি কোনোভাবেই আমার অ্যাড্রেনালিন কন্ট্রোল করতে পারলাম না। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার নিচ দিয়ে তরল কিছু বয়ে যাচ্ছে। আর বুঝতে বাকি রইলো না আমার শেষ সম্বলটুকুও হয়তো আমি হারাতে যাচ্ছি। তারপর আর কিছুই মনে নেই সবকিছু ব্ল্যাকআউট হয়ে গেলো…

চলবে?