নীড়ভাঙ্গা ভালবাসা পর্ব-০৯

0
301

#পর্ব_৯
#নীড়ভাঙ্গা_ভালবাসা
#লেখকঃমুহাম্মদ_রাফি

– তুমি কি এভাবেই রেগে থাকবে? কার রাগ কে করে!

ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফেরার পথেও সে আমার সাথে দরকারি কথা ছাড়া আর কোনো কথা বলেনি। তখন অপারগ হয়ে আমিই কথা শুরু করলাম।

– রাগ কেনো করবো?
– রাতের বিহেভের জন্য!
– you are not enjoying my touch & its ok. Thanks for letting me know your feelings.
– জানো,
মহানবী সা: বলেছেন “ তিন ব্যক্তির নামাজ তাঁদের মাথা অতিক্রম করেনা অর্থাৎ কবুল হয়না । তন্মধ্যে একজন হলেন অবাধ্য স্ত্রী , যে স্বামীর ডাকে সাঁড়া দেয়না এবং স্বামী রাগান্বিত অবস্হায় ঘুমায় ।”
আমি জেনেবুঝেও তোমাকে সারারাত আমার উপর রাগ করে নিচে ঘুমাতে দিয়েছি। যতই আমি সঠিক হই, এটা গুনাহ। কিন্তু যতদিন ডিভোর্স না হচ্ছে আমি আর তোমাকে বাধা দেবো না তোমার স্বামীর অধিকার থেকে।
– তার মানে ডিভোর্সটা তুমি সত্যিই দেবে?
– হ্যা। দেখো নীড় আমরা যতই ভালবাসি, তোমার আম্মুর মত evil মহিলা আমি খুব কম দেখেছি। তুমি তার জন্যই ঘরে বিয়ে করা বউ থাকতেও হাজারটা মেয়েকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে দেখে গেছো৷ Thats very unfair to me. I was so insecured all that time যে কখন না জানি তোমার ওর মধ্যে থেকে কোনো মেয়ে পছন্দ হয়ে যায় আর তুমি আমাকে বাদ দিয়ে তাকে বেছে নাও। But now i am ging to be a mother. So আমাকে ভালবাসার বাইরেও আমার বেবির সিকিউরিটি আগে দেখতে হবে। সেও তোমাকে নিয়ে এমন insecurity তে ভুগুক মা হয়ে i will never want that. আর আমি আমার বাচ্চাকে তোমার আম্মু থাকতে ঐ বাসায় সেফ ফিল করবো না কখনই। আমি জানি তুমি অসম্ভব ভালো একজন মানুষ। স্বামী হিসাবেও অসাধারণ কিন্তু তুমি কখনোই তোমার মায়ের থেকে আমাকে save করতে পারোনি৷ same situation এ আমার বাচ্চাটাও পড়বে।
– তুমি কি এটা চাও যে আমি আম্মুকে বাসা থেকে বের করে দেই? ওর আলাদা বাসায় উঠি? ঢাকায় যেখানে ছিলাম সেখানেও যেতে পারি!
– নো, আই নেভার ওয়ান্ট দ্যাট। সে এখন সব জেনে গেছে পাতালে গেলেও শান্তি দিবে না আমাকে। দ্যাটস why i want divorce.
– ok. Done. I will not force you. But একটা সময় তুমি বলেছিলে যত ঝড় আসুক আমার হাতটা তুমি ছাড়বে না৷ আর আজ এত সহজে হার মেনে গেলে? কখনও ভেবে দেখেছো আম্মুর কাছ থেকে আমাকে কি কি টর্চার নিতে হয় তোমাকে ভালবাসার জন্য!
– I am going to be a mother, বাবু। আমি হাজার বার চাইলেও সেলফিস হতে পারবো না৷ না তোমাকে তোমার মায়ের থেকে দূর করতে পারব, না তার সাথে সুখে থাকতে পারবো। so middle ground টাই বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমার।
আর কোনো কথা হলো না আমাদের মাঝে। বাসায় ফিরে বুয়া জানালো শ্বশুর শাশুড়ি নাকি বাইরে কোথায় গেছে। তাই আমরা যেন অপেক্ষা না করে খেয়ে নেই৷ আজ বিকালে আবার ঐ বাড়ি যাবো তাই আমি গোসল করে খাবার বেড়ে ওকে ডাকতে গেলাম। দেখি সে গোসল সেরে শুয়ে পড়ছে মাথায় হাত দিয়ে৷ অনেক বিষন্ন দেখাচ্ছে ওকে। খুব মায়া লাগলো। ও আসলে ওর আম্মু ও আমাকে দুজনকেই অসম্ভব ভালবাসে। খেই হারায় ফেলে দুজনের মধ্যে ব্যালান্স করতে যেয়ে। আমি তো জানতাম আমার শাশুড়ি এমন দজ্জাল। তাহলে কেনো এত রেগে গেলাম! ডিভোর্স কি এতই সহজ! ভালবাসি আমি ওকে৷ কথা দিয়েছিলাম কখনো ওর হাতটা ছেড়ে দেবো না৷ আজ কি শুধু বাচ্চাটাই আমার সব! যে আমাকে পৃথিবীর সব থেকে বড় গিফট টা দিলো তার একটা ভুলের কারণে তার সব ভালবাসা ভুলে যাবো? না এত সহজে আমি আমার ভালবাসাকে ছেড়ে দেব না৷ এই দজ্জাল শাশুড়ীকে আমিই সোজা করবো। নিজের রাগ ভুলে ওর মাথায় হাত বুলাতেই চোখ মেলে তাকালো,
– ভাত খাবে চলো
আমার হাত সরিয়ে দিয়ে সে উঠে পড়লো।

খাওয়ার মাঝে সে বললো,
– কাল আমার জয়েনিং।
– কয়টায়?
– ৯টায়।
– কোন ব্রাঞ্চে?
– ডাকবাংলা।
– ওকে।
খাওয়া শেষে দুইজন দুইদিকে শুয়ে পড়লাম। ও আমার থেকে এমন দূরে দূরে কেনো থাকছে! কথাও কেনো বলছে না! আচ্ছা ও রাগ কেনো দেখাচ্ছে!ও আমাকে টাচ্ কেনো করছে না? আমি কি ওকে বলবো, রাতে যদি ওকে আদর করতে দিতাম তাহলে ওর উপর থেকে আমার রাগ সব পড়ে যেত বলেই এমন করছি! আমি একটু রাগ করলেই ওর সব মেনে নিতে হবে? কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গেছে ও। আচ্ছা আম্মু আবার ওকে ঝামেলায় ফেলেনি তো! কাল রাতে খাওয়ার আগে ওর মায়ের সামনে কান্নাই বা কেনো করছিলো? বিয়েটাই বা ও করতে রাজি কেনো হয়েছিলো?
ও আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলো কেন তখন শুনলাম না! ধূর রাগের মাথায় এসব কিছুতে যে একটা খটকা আছে বুঝতেই পারিনি। আচ্ছা দেখি ও আমাকে বলে কিনা! ভেবেই আস্তে আস্তে আগায় ওর বুকের ওপর মাথা রাখতেই ও কেমন জানি tensed হয়ে গেলো। আমি বুকে হাত বুলাতে বুলাতে বললাম,
– আচ্ছা আম্মু তোমায় কি বলেছিলো যে জন্য তুমি বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে?
ও কথা বলছে না দেখে আবার চাপ দিয়ে বললাম,
– স্ত্রীকে জানাতে হয় জানো!
– যে স্ত্রী স্বামীর পক্ষ না জেনেই তাকে ভুল বোঝে আবার জানতেও চায় না কেন সে এমন করতে বাধ্য হয়েছে তার না জানাই ভালো। আর যখন সে ডিসিশন নিয়েই নিয়েছে সে ডিভোর্স দিবে তখন আর তাকে বেধে রেখে লাভ কি!
– আমি তো রেগে বলছি।
– যেভাবেই বলো বারবার বলেছো মানে ডিভোর্স দিলেই তুমি হ্যাপি।
– প্লিজ বলো। আমি কান ধরছি আর না জেনে তোমাকে ভূল বুঝবো না।
– একটু পর তোমার বাপের বাসায় যাবো৷ আমার চিন্তা বাদ দিয়ে ভাবো তুমি ওখানে থাকবে না এখানে থাকবে? তাহলে তোমার বাসায় সেইভাবে কথা বলবো।
– তুমি যেখানে থাকবে সেখানে থাকবো।
– এই কথায় আমি আর ভূলবো না। সোজা বাংলায় বলো।
– এখানে থাকবো।
– ঠিক আছে এখন শুয়ে পড়ো। আমরা ৫টার দিক যাবো।
– তুমি কি আমার দিকটা একবার ভেবে দেখছো? আমার রাগ করাটা কি স্বাভাবিক না! তুমি আমাকে সব জানাও। কেনো জানালে না যে বিয়েও ঠিক করে ফেলেছে!
– তোমার দিকটা ভেবেছিলাম বলেই তোমার অনেক কটু কথা আমি ধরিনি৷ যার স্বামী অন্য মেয়ে বিয়ে করতে চায় তার বিহেভ কি আমার বিহেভের মতো হয়! হাতে যেহেতু আমার অপশন ছিলো সো কেন আমি তোমার বিহেভ টলারেট করেছি? আর যে বিয়েটা আমি ইজিলি ভেঙ্গে দিতাম সেটার কথা তোমাকে জানিয়ে স্ট্রেস দিয়ে আমার বাচ্চার হেলথ নিয়ে রিস্ক নিতে চাইনি।
– আমায় মাফ করে দাও।
– ঘুমাও।
সে আবার অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়লো। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম কি করে তার রাগ ভাঙ্গাবো? ও রাগলে অনেকদিন পর্যন্ত ওমন থাকবে। আমাকে খুঁজে বের করতে হবে সব কিছুর কারণ৷ আজ ঐ বাসায় যাই, তানকে সব বলবো। দেখি ও কিছু জানে কিনা।

বাবা মা কোনোভাবেই আমাদের কোনো কথা শুনতে রাজি হলো না৷ যখন জানলো ৪ বছর হয়ে গেছ বিয়ের তখন এটা বলে আমাদের বাসা থেকে বের করে দিলো যে বাপ মা ছাড়া বিয়ে করতে পারছি, সংসার করতে তো আর তাদের লাগবে না৷ সো তাদের বিশ্বাস যখন আমি ভাঙ্গছি তখন আর তারা আমাকে বিশ্বাস করবে না। নীড় বাচ্চার কথা জানাতে চাইলে আমি ওকে মানা করলাম। কারণ এই মুহুর্তে তারা অনেক রেগে আছে এখন আমার বাচ্চা কে নিয়ে বাজে কথা বললে আমি সইতে পারবো না৷ তারা এক এক লরে আমার সবকিছু বাসার বাইরে ফেলে দিলো৷ আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া বাকি সব ফেলে রেখে আমি কাদতে কাদতে নীড়ের সাথে চলে আসলাম। সারাপথ নীড় আমাকে বোঝাতে লাগলো যে হঠাৎ শুনে তাদের খারাপ লাগছে তাই এমন করেছে৷ কিছুদিন পর তাদের রাগ ঠান্ডা হলে আবার আমাকে নিয়ে যাবে ও বাসায়।

রাতেও বাসায় আমরা শুধু একা। বুয়াটা ছুটি নিয়ে গেছে নীড়ের থেকে। রান্না বান্না আমিই করলাম নীড়ের পছন্দমতো। তবুও জনাবের রাগ ভাঙ্গলো না। বাবা মা কে অনেকবার ফোন করলাম তারা ফোন ধরলো না। সবাই আমার উপর রেগে আছে!

চলবে?