নীড় পর্ব-৩১+৩২

0
328

নীড়
রেশমী রফিক
৩১।।
শারারের ঘরটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর। খুবই অন্যরকম। এ ধরনের ঘর তুবা আগে কখনো দেখেনি। অবশ্য এতক্ষণে শারারদের বাড়িটা সম্পর্কে তার মোটামুটি ধারণা হয়েছে। বসার ঘর আর বারান্দা দেখলেই বুঝা যায় বাড়ির অন্য ঘরগুলো কেমন হবে। বসার ঘর থেকে বের হয়ে শারারের শোবার ঘর পর্যন্ত যতটুকু দেখেছে, পুরোটাই হা হয়ে ছিল ওর মুখ। ঘরের ভেতর ঢুকতেই মুখে হাত চাপা দিল সে। সিলিঙয়ে পুরোটাই মহাকাশ। নীল-বেগুণী রঙের বুকে কতশত তারা রুপালী বিন্দুর মতো ফুটে আছে। দেয়ালগুলো গাঢ় নীল। আসবাবপত্রগুলো সাদা। ঘরের ভেতর খুব বেশি কিছু নেই। একটা খাট, একটা আলমারি আর একটা ড্রয়ার। পাশে দেয়াল জুড়ে প্রায় ছয় ফিট লম্বা আয়না, রুপালী ফ্রেমের।
অভূতপুর্ব কিছু নয়, কিন্তু তুবা হতবাক হয়ে রইল। শারার ততক্ষণে ওয়াশরুমে গেছে। সেখান থেকে বের হয়ে তুবাকে বলল,
– ওয়াশরুমে যাবে? গেলে যাও। হাত-মুখ ধুয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নাও। খুব বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে তোমাকে।
তুবা কিছু বলল না। শারার ওর সামনেই পরনের শার্ট পাল্টাল। তারপর ঘরের দরজা খুলে ফিসফিস করে বলল,
– তুমি ফ্রেশ হও। আমি একটু পর আসছি।
– কোথায় যাচ্ছেন?
– আসছি। জলদি আসব।
বলেই বের হয়ে গেল। তুবা ধীরেসুস্থে ওয়াশরুমে গেল। শারারের কথামতো হাত-মুখ ধুয়ে নিল। বেসিনের পাশেই তোয়ালে ঝুলানো। তাতে মুখ মুছল। তারপর চারপাশটা ভালো করে তাকিয়ে দেখল। ঘরটা যেমন ছবির মতো দেখতে, ওয়াশরুমটাও। ঘরের সমান অত বড় নয়। তবে ওয়াশরুম হিসেবে বেশ বড়। তুবাদের বাসায় ওয়াশরুমের যে সাইজ, তার দ্বিগুণ তো হবেই এটা। সবথেকে বেশি ভালো লাগল যেটা, তা হলো পুরো ওয়াশরুমে অদ্ভুত সুন্দর ঘ্রাণ। নাম-না-জানা কোনো এক ফুলের। একটা জানালা আছে। পাল্লাটা অল্প একটু খোলা। এর সামনেই ছোট একটা ফুলদানিতে হালকা বেগুণি রঙের কিছু ফুল রাখা। তাজা নাকি প্লাস্টিকের, কে জানে। তুবার খুব ইচ্ছে করছিল একটু ছুঁয়ে দেখতে। গেল না সেদিকে। শরীর কাহিল হয়ে আছে খুব। হাত-পায়ে চিনচিন ব্যাথা করছে। আজ সারাদিনে খুব ধকল গেছে। এমনিতেও গরম ছিল খুব। চারদিক অন্ধকার হবার সাথে-সাথে গরমের প্রতাপ খানিক কমেছে। বিকেলের দিকে আকাশে মেঘ করেছিল সন্ধ্যায় ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। এখনো অল্পসল্প পড়ছে বোধহয়। প্রকৃতি এখন স্নিগ্ধ-শান্ত। হালকা মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।
শারারের এই ঘর লাগোয়া বারান্দাও আছে। বারান্দার সাথে বড় জানালা। পাল্লাগুলো সব খোলা। পর্দাগুলো অবশ্য টেনে দেয়া। বাতাসে হালকা উড়ছে। ঘরটা খুব ঠান্ডা হয়ে আছে। বিছানার দিকে তাকাতেই তুবার হাত-পা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যাবার জোগাড়। এত আরামদায়ক লাগছে চোখে। ইচ্ছে করছে এখনই শাড়ি-টাড়ি সব খুলে সটান শুয়ে পড়তে। আচ্ছা, আজ কি এই ঘরেই ঘুমুবে? এই বিছানায়? কী যেন শুনল, শারার চাইছে না ওকে বাসায় ফেরত পাঠাতে। তবে কি এখন থেকে এখানেই থাকবে সে? এই বাড়িতে? খুব ভালো হয় তাহলে।
‘বিয়ে’ শব্দটার সাথে তুবা কমবেশি পরিচিত। প্রায়ই কারও না কারও বিয়েতে গেছে। কদিন আগে নিজের আপন বোনেরই বিয়ে হলো। কত আনন্দ করেছে। এই আনন্দে পড়াশুনা সব লাটে উঠেছিল। সব আত্মীয়স্বজন আর কাজিনরা মিলে রাত জেগেছে। সাতটা দিন যেন ঈদের চেয়েও আরও বেশি খুশির জোয়ারে ভেসে গেছে। তাই বলে কখনো নিজের বিয়ের কথা মাথায় আসেনি। বিয়েতে কী হয়, সে জানে। বিয়ে কীভাবে পড়ানো হয়, তাও জানে। কিন্তু বিয়ের পর একটা মেয়ের জীবনে কীরকম পরিবর্তন আসে, তা কখনো ভাবায়নি ওকে। এই যেমন, দিবা আপু এখন শ্বশুরবাড়িতে থাকে। সাইফুল ভাইয়ের ঘরে। তার জীবনটা কি এখন আগের মতোই আছে? অবশ্যই না। আগে ছিল বাবার আদুরে কন্যা। ঘুম থেকে উঠেই বেড-টি পেয়ে যেত চোখের সামনে। তারপর টেবিলে এসে দেখত নাশতা তৈরি। ঘরসংসারের কোনো কাজে হাত দিত না। কেবল পড়া আর কলেজ। কখনো বন্ধুমহল। এটাই ছিল তার দুনিয়া। অথচ এখন সে ঘুম থেকে উঠেই বেড-টি পায় না। সেদিন আক্ষেপ করে বলছিল, এখন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয় তাকে। সাইফুল ভাই অফিসে যাবে। তার জন্য সকালের নাশতা, দুপুরের খাবারসমেত টিফিন বাক্স তৈরি করতে হয়। কেবল সাইফুল ভাইয়ের কাজগুলোই। বাকিটুকু না করলেও চলে। বাসায় কাজের মানুষ আছে। সায়রা আপু নিজের কাজ নিজেই করে।
এই পরিবর্তন তুবা নিজ চোখে দেখলেও কখনো মনের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেনি। এখন টের পাচ্ছে। এই ‘হোক সুন্দর তবু অপরিচিত’ ঘরটায় আজীবন থাকার কথা ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। এই মুহূর্তে বিছানাটা ওকে চুম্বকের মতো টানলেও প্রতিদিন এই বিছানার ঘুমুবার কথা মনে হলেই গায়ে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এসে যাচ্ছে। আর এই বাড়ি? এখানে সে থাকতেই পারবে না পুরো একটা দিন। বাড়িটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর। হয়তো যে কোনো মেয়েই চাইবে এই বাড়ির বউ হতে। সেও চায়, এরকম একটা বাড়ি তার নিজের থাকুক। কিন্তু মনের ভেতর কোথাও যেন একটু খচখচ করছে। বাড়িটাকে আপন ভাবতে পারছে না কোনোভাবেই। আর বাড়ির মানুষগুলো? শারারের বাবা রাশভারী স্বভাবের। খুব দূরের মানুষ যেন। ওর নিজের বাবার মতো সহজ নয়। আর শারারের মা? ও মাগো, ওই মহিলার সাথে এক ছাদের নিচে থাকার কথা ভাবলেই হাত-পা সেঁধিয়ে যাচ্ছে পেটের ভেতর। মহিলা যেন চোখ দিয়েই ওকে ঝলসে দেয়। কী ভয়ঙ্কর চাহনি! রইল বাকি শারার ভাই। তার সাথে কিছুদিন ধরে দেখাসাক্ষাৎ হলেও প্রতিদিন এক ঘরে, প্রতি রাতে এক বিছানায় ঘুমুনো অসম্ভব। রাতে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমুনোর অভ্যেস ওর। তাছাড়া পাশে কেউ থাকলে ঘুমের ঘোরে তার গায়ে হাত-পা তুলে দেবার বদভ্যেসও আছে। দিবা যতদিন ওর সাথে ঘুমিয়েছে, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খ্যাচর-ম্যাচর করেছে। ওর কারণে তার ঘুম হয় না রাতে। শারার ভাইও খ্যাচখ্যাচ করবে। তার আগে সবথেকে বড় কথা হচ্ছে, তার গায়ে সে হাত-পা তুলে দিতে পারবেই না।
(চলবে)

নীড়
রেশমী রফিক
৩২।।
তুবা আপনমনে কীসব ভাবছে। চোখমুখে তখনো মুগ্ধতা ঝরে পড়ছে। হঠাৎই শারার হন্তদন্ত ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকল। ঘরের দরজা আটকে দিল। তুবা ওসব খেয়াল করল না। মুগ্ধতা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। নিজের বাসায়, নিজের ঘর আর বিছানায় আজীবন ঘুমুবার চিন্তাও মাথায় ঘুরছে। শারার প্রথমে থমকে দাঁড়াল। আয়নার সামনে স্তব্ধ ভঙ্গিতে দাঁড়ানো তুবা। চোখজোড়া স্থির। একবার দেখেই সে বুঝে গেল, ওটা ফাঁকা দৃষ্টি। ধীর পায়ে তুবার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল সে। আয়নায় তার প্রতিবিম্ব দেখা গেল। কিন্তু তুবা স্থির। শারারের উপস্থিতি তার নজরেই আসেনি। ওর দুই কাঁধে আলতো করে হাত রাখল শারার। তারপর দুই বাহু চেপে ধরল আলতো ভঙ্গিতে। চিবুকটা নামিয়ে আনল কাঁধের উপর। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,
– কী ভাবছ, তুবামনি?
তুবার সংবিৎ ফিরল। তবু নড়ল না সে। কেবল আয়নার ভেতর দিয়ে শারারের দিকে তাকাল। বলল,
– আমি বাসায় যাব, শারার ভাই। আমার ভালো লাগছে না। আমি এখানে থাকব না। প্লিজ, আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসুন।
লম্বা দম নিল শারার। তুবাকে নিজের দিকে ঘোরাল। তারপর আজলা ভঙ্গিতে ওর মুখটা তুলে ধরল। খুব কাছে এসে আগের মতোই ফিসফিস করে বলল,
– তুমি আমাকে ভালোবাসো?
তুবা মাথা নাড়ল ডানে-বায়ে। মুখে বলল,
– না।
– কখনো ভালোবাসবে?
– না, না। এইসব ভালোবাসাবাসির মধ্যে আমি নাই। আম্মা জানতে পারলে আমাকে কেটে টুকরো-টুকরো করবে। আমাকে আগেই কড়া করে নিষেধ করে দিয়েছে। কোনো প্রেম-ট্রেম করা চলবে না।
– আচ্ছা। তাহলে বলো, আমাকে ভালো লাগে তোমার?
চোখ তুলে তাকাল তুবা। শারারের চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মুখ নামিয়ে ফেলল। বলল,
– হ্যাঁ।
– কতটুকু?
– কতটুকু মানে কী?
– মানে কতটুকু ভালো লাগে আমাকে? অনেক বেশি নাকি একটুখানি।
– আমি জানি না। কিন্তু আপনি আমাকে এগুলো জিজ্ঞেস করছেন কেন? আপনি তো অন্য কাউকে পছন্দ করেন।
– কাকে?
– সেটা আমি কী করে জানব? আজকে অ্যালবাম ঘেঁটে ওই মেয়েটাকে চেনার কথা ছিল। কিন্তু অ্যালবাম তো নাই। হারিয়ে গেছে। ওই ব্যাগের মধ্যে ছিল…
তুবার ঠোঁটে আলতো করে আঙুল রাখল শারার। বলল,
– ওসব পুরনো কথা। ওগুলো এখন বলে লাভ নেই। কখন কাকে পছন্দ করেছি, কাকে খুঁজেছি, সবকিছু এখন অর্থহীন।
– কেন?
– কারণ আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন থেকে আমার শুধু তোমাকে ভালো লাগতে হবে। ভালোবাসতে হবে। তোমারও শুধু আমাকেই ভালো লাগতে হবে। ভালোবাসতে হবে।
– কিন্তু আপনার আব্বা-আম্মা তো বললেন অন্য কথা।
– তারা তাদের কথা বলবেই। কিন্তু সংসার তো তারা করবে না। করব আমরা। সো, ডিসিশন আমাদেরকেই নিতে হবে।
– ওহ।
– এখনই।
– কী?
– এখনই যা ডিসিশন নেয়ার, নিতে হবে। আমাদের হাতে সময় নেই।
– কেন? মানে কীসের সময়?
তুবার ঠোঁটে আবারও আঙুল রাখল শারার। বলল,
– আমাকে জাস্ট এটুকু বলো। আমাকে কতটা ভালো লাগে তোমার? অনেক নাকি অল্প একটু?
– অনেক। কিন্তু…
– ব্যস। আর কোনো কথা না। ডিসিশন নেয়া হয়ে গেছে।
– কীসের ডিসিশন?
– এই যে, তুমি আমাকে পছন্দ করো কি না। ভালোবাসো কি না।
– কিন্তু আমি বলি নাই, আপনাকে ভালোবাসি। আমার আম্মা…
তুবার মুখ চেপে ধরল শারার। বলল,
– চুপ। তুমি খুব বেশি কথা বলো, তুবা। আর একটা কথাও বলবে না। আমি যা বলব, সেটাই করবে। ঠিক আছে?
তুবা স্থির ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল। হ্যাঁ-না কিছু বলল না। শারারও তাকিয়ে রইল। তুবার চোখগুলো দেখাচ্ছে পটলচেরা। যেন এখনই কোটর থেকে বের হয়ে আসবে। হয়তো খুব কাছ থেকে দেখছে বলেই এতটা বড় মনে হচ্ছে। নইলে এই ক’দিন তো চোখে পড়েনি। আচমকা শারারের চোখ গেল তুবার ঠোঁটের দিকে। উপরের ঠোঁটের ঠিক ডানপাশের কোণায় খানিকটা ফুলে আছে। দুপুরে গাড়ির ভেতর থাকাকালীন সময়ে ওটাকে কালো তিল মনে হলেও এখন খুব কাছ থেকে দেখে মনে হচ্ছে লাল তিল। পুরোপুরি লালও না। কিছুটা খয়েরি আর কিছুটা লালের মিশেল। তিলের জন্য ঠোঁটের ওই কোণটা ফুলে আছে।
এই তিলটার জন্যই এত কিছু! কেবল তিলটাই খুব কাছ থেকে দেখতে চেয়েছিল। এর জন্য কোথা থেকে কী হয়ে গেল, ভাবতেই পারছে না শারার। আজ দুপুরের ওই মুহূর্তটায় সে ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি, তিল দেখতে চাওয়ার অপরাধে এতটা জুলুম হয়ে যাবে ওর উপর। যেন লঘু পাপে গুরু দন্ড। যদিও এখন এটাকে আর জুলুম মনে হচ্ছে না। ঘুরেফিরে কেবল মনে হচ্ছে, এটাই হবার ছিল। গাড়িতে চড়ে যখন বাসায় ফিরছিল, তুবা ওর পাশে বসা কাচুমাচু ভঙ্গিতে। তখনকার অনুভূতিটা ছিল অন্যরকম। জীবনে প্রথমবারের মতো বউ নিয়ে বাড়ি ফেরা! এখনো অনুভূতিটা রয়ে গেছে। আগের তুলনায় আরও বেশি ডালপালা মেলেছে। এখন মনে হচ্ছে, এতকাল এই ঘরটায় সে একা ছিল। নিজ জগতে একাকি ছিল। এখন থেকে আর একা হবার সুযোগ নেই। এতকাল যা কিছু ছিল একান্তই ওর নিজের, এখন সেখানে ভাগ বসিয়েছে তুবা। সবকিছুতে এখন ওর সমান অধিকার। শারারের কেন যেন ভালো লাগছে খুব। নিজ অধিকার সমান ভাগ হয়ে যাওয়ায়। যেন এতগুলো বছর একাই ভার বহন করেছে। এখন থেকে তুবা অর্ধেকটা ভার বহন করবে।
খুব আলতো করে তুবার ঠোঁটের উপর ওই তিলটায় ঠোঁট ছোঁয়াল। কয়েকটা মুহূর্ত ছুঁয়ে থাকল। তুবার কোনো নড়চড় নেই। বরফের মতো জমে আছে সে। শারার এবারে চুমু দিল ঠোঁটে। একবার নয়, কয়েকবার। ছোট-ছোট চুমু। তারপর তুবার চোখের দিকে তাকাল। তুবাও ওর দিকে তাকিয়ে আছে, অবাক ভঙ্গিতে। শারার ফিসফিস করে বলল,
– ভালোবাসি।
তুবার ঠোঁটের কোণে আবছা হাসি ফুটল। লাজুক ভঙ্গিতে সে বলল,
– আমিও।
– কী?
– ভালোবাসি।
– তোমার আম্মা জানলে মেরে ফেলবে না তোমাকে?
তুবার চোখমুখে আতঙ্ক ফিরল। শঙ্কার সুরে বলল,
– ওহ, ভালো কথা মনে করেছেন। আম্মা এই খবর শুনলে আমাকে খালি মেরেই ফেলবে না। কেটে টুকরো-টুকরো করবে। তারপর নদিতে ভাসিয়ে দেবে। আগেই বলে রেখেছে। না বাবা, থাক। আমার এতসব ভালোবাসাবাসিতে দরকার নেই। আমি বাসায় যাব।
শারার ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইল,
– বাসায় গেলেই কি সাতখুন মাফ? তোমার আম্মা তো আজকের খবর জানবেনই।
– জানবে না।
– তুমি শিউর?
– হ্যাঁ, দিবাপুর পা ধরলেই সব ম্যানেজ হয়ে যাবে। আম্মা কোনোদিনই জানতে পারবে না আজকের কাহিনি।
– তাই? আচ্ছা, যদি আমি নিজে তোমার আম্মাকে বলে দেই?
তুবার আতঙ্ক বাড়ল। কপালে চোখ তুলে প্রায় চেঁচিয়ে সে বলল,
– আপনি এত খারাপ কেন, শারার ভাই? আমি কয়েকদিন ধরে আপনার জন্য এত দৌড়াদৌড়ি করলাম। কাউকে না জানিয়ে চুপেচাপে আপনার সাথে দেখা করলাম। আপনার পছন্দের মেয়েকে খুঁজে বের করার জন্য অ্যালবাম চুরি করলাম। আর আজকের কাহিনি তো আপনার জন্যই হলো। আমি গেছিলাম কর্ণফুলী সিটিতে। আপনিই ওখান থেকে আমাকে বের করে আনলেন। বললেন, ওইখানে নাকি গরমে টেকা যাচ্ছে না। কিন্তু আংকেলের কাছে আমার নামটা ফাঁস করলেন। আমি নাকি আপনাকে বলছি রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়াতে হবে! হ্যাঁহ! আপনি কী মনে করছেন আমাকে? আমি ছোঁচা? আমার মানসম্মান নাই যে সামনে যাকে পাব, তাকেই বলব আমাকে খাওয়াতে হবে? নাকি আমার বাসায় আমাকে খাইতে দেয় না? ছিঃ আপনি দুনিয়ার খারাপ। আপনাকে হেল্প করাই উচিত হয় নাই আমার।
শারার মিটমিট করে হাসছে। বলল,
– আর এই খারাপ মানুষটাকে তুমি ভালোবাস।
– কে বলল?
– কেন? তুমিই তো একটু আগে বলেছ। বলো নি?
– ওটা কিছু না। মুখ ফস্কে বের হয়ে গেছে।
– কিন্তু মুখ ফস্কে বের হোক। আর মন থেকে বের হোক। কথা তো সত্যি। তুমি ভালোবাস আমাকে।
– তা সত্যি। কিন্তু আম্মা…
– কোনো কিন্তু না। আমি যা বলব, তাই শুনবা। শাড়ি খুলো।
– অ্যা? কী বললেন?
– অ্যা মানে কী? কানে শুনতে পাও না? নাকি মাইক আনতে হবে এখন? শাড়ি খোল। তালব্য শ আকার শা, ড় হ্রস্ব ই-কার ড়ি। শা-ড়ি। খুলতে বলেছি। কুইক! হাতে একদম সময় নেই। (চলবে)