নেশাক্ত ভালোবাসা ২ পর্ব-১৮

0
1344

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ১৮ {বোনাস ❤️}

‘আজ নিয়ে চারদিন হয়ে এলো বলে। এর মাঝে আইরাতের কোন খবর নেই। পুলিশ অফিসার রা কি সবাই গরুর ঘাস কাটতে গিয়েছে। পুলিশ স্টেশনে গেলে বলে এভাবে রোজ রোজ আসতে হবে না। কোন খোঁজ-খবর পেলে আমরাই আপনাকে ফোন করে জানাবো। এভাবে হাতের ওপর হাত রেখে বসে থাকা যায়। এভাবে আর কতো আর কতো দিন। না জানি কি হালে আছে আইরাত কি করছে।’

কথা গুলো একনাগারে চিল্লিয়ে বলে ওঠে অবনি। সামনেই নিলয়, তৌফিক আর দিয়া সবাই বসে আছে। অনামিকার শরীর প্রচন্ড রকমের খারাপ করেছে মেয়ের চিন্তায়। পুলিশ রা এই ব্যাপার টাকে খুব হালকার ওপরে নিয়ে রেখে দিয়েছে। কেননা আব্রাহাম তাদের মুখে মোটা অংকের টাকা ছুড়ে মেরেছে। আর যেহেতু আইরাত তারই কাছে ছিলো সেখানে চিন্তার কোন কারণই নেই। সবাই একরাশ চিন্তা মাখা মুখ নিয়ে বসে আছে হলরুমে। তখনই রুমের ভেতরে আইরাত দৌড়িয়ে আসে। আর এসেই থ। সবার নজর যায় বাড়ির দরজাতে আইরাতের দিকে। সবাই যেনো ভুত দেখার মতো করে চমকে যায়। এখন এই মূহুর্তে যে আইরাতকে দেখতে পাবে তা কেউ ভাবেই নি। অনামিকা উঠে ভালোভাবে বসে। কাদো কাদো মুখ। সবাই ছুটে আইরাতের কাছে চলে যায়। চারিপাশ থেকে ঘিড়ে ফেলে। প্রথমেই অনামিকা দৌড়ে গিয়ে কেঁদে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। মুখে হাজারো চুমু দিয়ে বলে ওঠে…

অনামিকা;; কোথায়, কোথায় গিয়েছিলি তুই আমাকে একা রেখে। জানিস না তুই ছাড়া আমার কেউ নেই। এভাবে না বলে কয়েই কোথায় গিয়েছিলি। আমার কথা একটাবারও ভাবলি না। জানিস কত্তো কত্তো জায়গায় খুঁজেছি তোকে। পুলিশে কমপ্লেইনও করেছি। কোথায় ছিলি তুই এতোটা দিন।

অবনি;; তুই ফোন রেখে গিয়েছিস বাসায়, তোর রুমের জানালার কাচ ভাঙা ছিলো। আর পেয়েছি কি একটা লেটার। কে লিখেছে, কে নিয়ে গেলো তোকে কিচ্ছু জানলাম না বুঝলাম না।

তৌফিক;; অন্য কারো ফোন দিয়ে ফোন করে একটা বার বলতি যে কোথায় আছিস তুই, কেমন আছিস। এদিক দিয়ে আমাদের সবার জান যায় যায় অবস্থা জানিস।

দিয়া;; কে নিয়ে গিয়েছিলো তোকে আর কেনো?

নিলয়;; আর এখনই বা কোথা থেকে এলি? কে দিয়ে গেলো? মামিকে তো আর একটু হলেই হস্পিটালে নিয়ে যেতে হতো।

অবনি;; কিরে কিছু বল।

আইরাত;; চুপ করো একটু সবাই।

আইরাত দুহাত দিয়ে সোজা নিজের মাথা চেপে ধরেছে। এত্তো গুলো প্রশ্ন আর নিতে পারছে না। যদিও সবাই তাদের জায়গায় স্বাভাবিক। ঠিকই আছে, এতোদিন পর বাড়ির মেয়ে বাড়ি ফিরলে এতোগুলো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসাবাদ করা টাই স্বাভাবিক৷ তবে এখন আইরাত এদের কি জবাব টা দিবে তাই ভাবছে। সে গিয়ে সোফাতে দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বসে পরে। আর বাকি সবাই তার পাশে এসেই বসে।

অনামিকা;; কিছু বলিস না কেনো কোথায় ছিলি এতোদিন তুই?

আইরাত;; মা আমি..

সাবিলা;; কিরে আইরাত এসেছিস বাড়ি অবশেষে তুই!

সবাই তাকিয়ে দেখে সাবিলা ভেতরে আসছে। আইরাত এমনিতেই টেনশনে বাঁচছে না যে এদের কি জবাব দিবে এখন তার ওপর এই কুটনি মার্কা ফুপি। বিরক্তি লেভেল হাই। সাবিলা এসে সোফাতে বসে।

সাবিলা;; এই এতোগুলো মানুষ কে হয়রানিতে রেখে কোথা থেকে এসেছিস বল। জীবনে যা করতে হয় নি তা এখন তোর জন্য সবাই কে করতে হচ্ছে। জানিস পুলিশ স্টেশনে যেতে হয়েছে।

আইরাতের রাগ উঠে যায়।

আইরাত;; তো গিয়েছো কেনো? আমি যেতে বলেছিলাম তোমাদের।

সাবিলা;; দেখো দেখো কীভাবে কথা বলে।

নিলয়;; মা

নিলয় ইশারাতে সাবিলা কে চুপ করে যেতে বলে। সাবিলাও চুপ হয়ে বসে। দিয়া এবার আইরাতের পাশে গিয়ে বসে শান্ত সুরে বলে…

দিয়া;; দেখ আইরু কোথায় ছিলি এতোদিন বল।

আইরাত;; কি বলবো আমি এখন (মনেমনে)

অনামিকা;; আইরাত, এখন যদি তুই কিছু না বলিস ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় খাবি।

আইরাত;; আমি কিছু কাজে শহরের বাইরে গিয়েছিলাম।

তৌফিক;; কি, কি বলিস এগুলো।

অবনি;; তোর এমন কি কাজ পরে গেলো যার জন্য তোকে শহরের বাইরে যেতে হলো তাও আবার ফোন বাসায় রেখে কাউকে না জানিয়েই।

দিয়া;; তুই যদি শহরের বাইরে গিয়েই থাকিস তাহলে লেটার টা কে লিখেছে।

অনামিকা;; আইরাত সত্যি করে বল।

অনামিকা এবার আইরাত কে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে।

অনামিকা;; আর তুই আগে বল তো আমায় যে তুই কি কাউকে ভালোবাসিস কিনা?

আইরাত;; না মা কাউকেই না। বিশ্বাস করো। আমি নিঃশ্বাস নিলেও তোমাকে জানিয়ে নি আর তুমি বলছো আমি একজন কে ভালোবাসবো আর তা তোমাকে বলবো না। মা কাউকেই ভালোবাসি না আমি।

অনামিকা;; তাহলে ওই চিঠি টা কে লিখেছে?

আইরাত;; কোন চিঠির কথা বলছো তোমরা?

অনামিকা;; তোর রুম থেকে একটা চিঠি পেয়েছি। আর সেখানে আমাকে শাশুড়ী মা বলেছে।

আইরাতের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে চিঠিটা আর কেউ না বরং আব্রাহাম-ই লিখেছে। আইরাত সেই কথা টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলে..

আইরাত;; ন না মা আমি কোন চিঠির কথা বলতে পারবো না। আমি জানি না।

নিলয়;; এখন তুই বল কোথায় গিয়েছিলি?

আইরাত;; ভাইয়া বললাম তো কাজের জন্য শহরের বাইরে যেতে হয়েছিলো।

দিয়া;; তো সবাইকে একটা বার বলে গেলে বা ফোনটা সাথে নিয়ে গেলে কি এমন ক্ষতি হতো তোর।

আইরাত;; আমার শরীর টা খুব খারাপ লাগছে। আমার আর ভালো লাগছে না এইসব। প্লিজ তোমরা চুপ করো সবাই। আর প্লিজ কেউ বলো না যে কোথায় ছিলাম। এখন তো বাড়ি এসে পরেছি তাই না এখন তো সব ঠিকই আছে। কেস তুলে নাও আর ভুলে যাও সব।

সাবিলা;; এভবে কীভাবে ভুলে যাবো।

আইরাত;; ফুপি তুমি চুপ করো। আমার একা কিছু সময় দরকার।

এই বলেই আইরাত ওপরে নিজের রুমে চলে যায়। সবাই অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আইরাত রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। জানালার কাছে গিয়ে পর্দা সরিয়ে বাইরে রাস্তার দিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম সেখানে গাড়িতে বসে আছে। সে তার হাত তুলে আইরাতের দিকে বিদায় জানিয়ে চলে আসে। আর আইরাত এক ক্ষীণ দম আছে। সেইদিন টা এভাবেই চলে যায়। এখন সবকিছুই আবার আগের মতো স্বাভাবিক ভাবে চলছে। তার পরেরদিন থেকে আইরাত তার ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা শুরু করে দিয়েছে। আব্রাহাম এমন কোন দিন নেই যে আইরাতের ভার্সিটিতে আসে না বা তাকে দেখতে যায় না। এমনও হয় যে আব্রাহাম হুট করেই আইরাতের ক্লাস রুমে এসে তাকে সোজা ক্লাস থেকে নিজের সাথে করে নিয়ে চলে যায়। ভার্সিটির প্রায় সবাই জেনে গেছে যে আইরাত আর আব্রাহামের মাঝে কিছু না কিছু একটা তো আছেই। এটাই ভার্সিটির টপে আছে। দিয়া আর অবনিও ব্যাপার টা নিয়ে আইরাতের সাথে কথা বলতে চাইলে আইরাত এড়িয়ে যায়। ছেলেরা একশ হাত দূরে থাকে আইরাতের কাছ থেকে। কারণ জীবনের মায়া তো সবারই আছে তাই না। আইরাত যদি নিজে থেকে কিছু কথা বলতে যায় তাহলে উল্টো ভুতের মতো ভয় পেয়ে চলে যায়। এগুলোর জন্য এখন সত্যি আইরাতের কাছে তার নিজেকে এলিয়েন মনে হয়। আস্তে আস্তে এই আব্রাহাম-আইরাতের খবর টা নিলয় জানতে পারে। আর কিছুটা হলেও নিলয় জ্যালাস ফিল করে। কেননা নিলয়ের মনে আইরাতের জন্য সফট কর্ণার আছে অনেক আগে থেকেই। একদিন আইরাত ভার্সিটি শেষে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই কোথা থেকে যেনো নিলয় আসে বাইক নিয়ে।

নিলয়;; কিরে ভার্সিটি শেষ। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছিস? উঠে পর বাড়ি দিয়ে আসি তোকে।

আইরাত;; না না থাক ভাইয়া লাগবে না। আমি নিজেই যেতে পারবো।

নিলয়;; ওহ এখন আমার সাথে যেতে চাচ্ছিস না কিন্তু আব্রাহাম চৌধুরীর সাথে তো ঠিকই যাস।

আইরাত কপাল কুচকে নিলয়ের দিকে তাকায়।

আইরাত;; কি বলছো এইসব?

নিলয়;; না বোঝার ভান ধরিস না অযথা। সবই জানি বুঝি আমি। তোর আর আব্রাহাম চৌধুরীর ব্যাপার টা এখন তুঙ্গে। সবাই জানে।

আইরাত;; সবার জানা জানি বা কে কি ভাবলো কে কি বললো তা আমার জানার প্রয়োজন নেই। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’। খারাপ ভাবা বা খারাপ বলা/সমালোচনা করা এগুলো মানুষ করবেই। কিছু ফালতু মানুষের কাজই এমন তাই বলে আমি কেনো গুটিয়ে চলবো।

নিলয়;; এখন কি তুই আমার সাথে যাবি।

আইরাত;; না।

নিলয়;; আরে মেরি মা রাগ করিস না। এভাবে রোদে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে ভালো আয় ড্রপ করে দি তোকে।

আইরাত;; হুম।

নিলয় আইরাত কে বাইকে করে নিয়ে চলে যায়। বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয়।

আইরাত;; ভেতরে আসবে না।

নিলয়;; না এখন আর না। আমি যাই আর শোন

আইরাত;; হ্যাঁ

নিলয়;; এই আব্রাহাম চৌধুরীর কাছ থেকে কিছুটা দূরে দূরেই থাকবি বুঝলি।

আইরাত নিলয় কে কিছু না বলে বাড়ির ভেতরে চলে যায়। আর নিলয়ও সেখান থেকে চলে যায়। আইরাত ভেতরে গিয়ে দেখে অনামিকা দুহাত দিয়ে কোমড় ধরে রেখেছে। আর একজন লোক চেয়ারের ওপরে ওঠে হলরুমে থাকা ফ্যানে কি যেন একটা করছে।

আইরাত;; কি হচ্ছে?

অনামিকা;; ফ্যান টা হঠাৎ ঘুরছে না। তাই ঠিক করে দেখছে।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।

অনামিকা;; শোন আমার না তোর সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।

আইরাত;; হ্যাঁ বলো।

অনামিকা;; আমি ঠিক জানি না যে তুই এই কথা টা শুনলে রাগ করবি নাকি কি করবি। তবে আমার মনে হলো যে একবার বলা দরকার আমার তাই।

আইরাত;; আরে এতে এতো ভাবাভাবির কি আছে বলে দাও না।

অনামিকা;; বাইরে থেকে এসেছিস। আগে ফ্রেশ হ খা কিছু তারপর না হয় আস্তে ধীরে বলা যাবে।

আইরাত;; হুম আচ্ছা।

আইরাত ভেতরে চলে যায় তখনই নিজের ফোন বেজে ওঠে।

আইরাত;; হ্যালো।

আব্রাহাম;; এই কই তুমি?

আইরাত;; আপনি?

আব্রাহাম;; না তো কে থাকবে ওই নিলয়!

আইরাত;; আমার কাজিন ও।

আব্রাহাম;; ওহ আচ্ছা আমি জানতাম না, খুব উপকার হইলো।

আইরাত;; কথা না ঘুরিয়ে কি বলবেন বলুন।

আব্রাহাম;; নিলয়ের সাথে কেনো গেলে তুমি?

আইরাত;; আরে মানে আম…

আব্রাহাম;; কেনো গেলে? (চিল্লিয়ে)

আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন এমনিতেই আমাকে নিয়ে আর আপনাকে নিয়ে চারিপাশে নানা কথা হচ্ছে। আমি চাই না এই আজগুবি কথা গুলো আরো বাড়ুক। সো প্লিজ…

আব্রাহাম;; আজগুবি না সত্যি।

আইরাত;; কি সত্যি?

আব্রাহাম;; এইযে তোমার আর আমার ব্যাপার টা এগুলো তো সম্পূর্ণই সত্য তাই না।

আইরাত;; আম আমি রাখি।

আব্রাহাম;; বিকেল ঠিক ৪;৩০ এ আমার এক গার্ড তোমাকে নিয়ে আসতে যাবে চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো চলে আসবে। নয়তো বাড়ি থেকে কীভাবে তুলে নিয়ে যেতে হয় তা আমার বেশ ভালোই জানা আছে।

আইরাত;; কি? এই না না…

আইরাতের আর কিছু বলার আগেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়।

আইরাত;; যাহ ফোনই কেটে দিলো।

আইরাত আবার আব্রাহাম কে ফোন করে। কয়েক সেকেন্ড পর রিসিভ করে।

আব্রাহাম;; বলো।

আইরাত;; আজ আমার বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। আমি আজ বাইরে দেখা করতে যেতে পারবো না। বিকেলে অন্য এক জায়গায় যেতে হবে।

আব্রাহাম;; ঠিকআছে।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। আর আইরাত বিছানাতে বসে পরে। চোখ তুলে টেবিলের ওপর তাকায়। একটা ছবি নজরে পরে তাতে ছোট্ট আইরাত আর তার বাবা-মা রয়েছে। আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে বিকেল হয়।

অনামিকা;; তুই কি অনাথ আশ্রমে যাবি?

আইরাত;; যেতে তো চাইছি। সাথে নাকি দিয়াও যাবে। তাই ভাবছি যে ওকে নিয়েই যাবো।

অনামিকা;; আচ্ছা যা তাহলে তোরা দুজন।

আইরাত;; আচ্ছা।

অনামিকা;; দিয়া কখন আসবে?

দিয়া;; এইতো এসে গেছি।

আইরাত;; আরে আয় আয় ভেতরে আয়। তোকে না আরো আগে আসতে বলেছিলাম।

দিয়া;; রাস্তায় জ্যাম প্রচুর রে।

আইরাত;; আচ্ছা বোস।

দিয়া এসে বসে পরে। বেশ সময় অনামিকার সাথে খোশগল্প করে তারপর আইরাত আর সে বের হয়ে পরে। একটা অনাথ আশ্রম আছে। বেশ চেনা-পরিচিত একটা জায়গা আইরাতের কাছে। সে ছোট থেকেই এখানে আসে। এই অনাথ আশ্রম যেখানে আছে সেই জমি টা মূলত এককালে আইরাতের বাবারই ছিলো। এখানে ছোট্ট একটা স্কুল আছে। এখানকার বাচ্চারা ওই স্কুলেই পড়ে। আইরাত বা অনামিকা প্রতিবছরই অর্থাৎ আইরাতের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী তে এখানে আসে। আজ আইরাত আর দিয়া এসেছে। আইরাত অনাথ আশ্রমে আসার সাথে সাথেই বাচ্চারা দৌড়ে গিয়ে আইরাত কে জড়িয়ে ধরে। দিয়াও সবার কে অনেক আদর করছে। আইরাত নিজের সাথে বাচ্চাদের জন্য অনেকগুলো জিনিস/গিফট এনেছে। এগুলো পেয়ে বাচ্চাদের খুশি দেখে কে। সবার সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটিয়ে আইরাত বিদায় জানিয়ে এসে পরে। তবে এখন আইরাত আর দিয়াকে আলাদা আলাদা পথে যেতে হবে।

দিয়া;; কিরে আকাশের অবস্থা তো ভালো না মোটেও। এখন তোকেও আলাদা পথে যেতে হবে আর আমাকেও। একা যেতে পারবি তো!

আইরাত;; আরে হ্যাঁ হ্যাঁ যেতে পারবো। আর বৃষ্টি আসলেও খারাপ কি, ভিজবো।

দিয়া;; জানতাম। আচ্ছা তাহলে ভালোভাবে চলে যাস তুই কেমন আমি যাই।

আইরাত;; হ্যাঁ হ্যাঁ আচ্ছা।

দিয়া চলে যায়। আর তার চলে যাওয়ার পরপরই আকাশে বিদুৎ চমক দিয়ে ওঠে। অন্যদিকে আব্রাহামের কিছু কাজ আছে। যার ফলে তাকে হাইওয়ে রোড ক্রস করে তারপর যেতে হচ্ছে। কোন রিকশা-গাড়ি কিছুই পাচ্ছিলো না আর আকাশে মেঘের গর্জন তাই একটা ছাউনির নিচে আইরাত দাঁড়িয়ে ছিলো। তবে পরমূহুর্তেই আকাশ কাঁপিয়ে বর্ষণ শুরু হয়। বার কয়েক বর্জ্য পরে। তারপর আরো জোরে বৃষ্টি। এই বৃষ্টি দেখে আইরাত আর নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারলো না। দৌড়িয়ে গিয়ে বৃষ্টিতে নেমে পরে। কয়েক মিনিটেই পা থেকে মাথা অব্দি ভিজে চুবুচুবু হয়ে যায়। বৃষ্টির বেগ অতিরিক্ত দেখে গাড়ি আর সামনে না এগোনোই শ্রেয় ভাবলো আব্রাহাম। তাই একটা সাইডে এসে গাড়ি টা থামিয়ে ভেতরে বসে থাকে। উইন্ড টা খুলে দেয়। তবে কারো হালকা চেচানোর শব্দ আর খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ শুনতে পেরে আব্রাহাম বাইরে কপাল কুচকে তাকায়। আশেপাশে চোখ বুলাতেই কিছুটা দূরে একজন কে চোখে পরে আব্রাহামের। দেখে কেউ একজন বৃষ্টিতে ইচ্ছে মতো ভিজছে। ভিজছে বলতে গেলে লাফাচ্ছে। একটা মেয়ে। মেয়েটা এদিকে ঘুরতেই আব্রাহাম অবাক হয়ে তাকায়। আইরাত। তার চুলগুলো ভিজে গলা পিঠের সাথে লেগে গিয়েছে। শেষাংশ ভিজে টুপটুপ করে পানি পরছে। মুখে ছিটেফোঁটা পানিবিন্দু লেগে রয়েছে আর লাগামহীন হাসি। আব্রাহাম তার সানগ্লাস খুলে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। আইরাত এখনো খেয়ালই করে নি যে গাড়ি থেকে কেউ একজন তাকে দু”নয়ন ভরে দেখছে। সে আর মতো করেই বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। আইরাত বৃষ্টিতে ভিজে প্রচন্ডভাবে খুশি আর আব্রাহাম দূর থেকে তাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে খুশি। এভাবে ঠিক কতোক্ষণ আব্রাহাম আইরাত কে দেখেছে মনে নেই। হঠাৎ একটা সময় বৃষ্টির বেগ কমে আসে। আর আইরাত বৃষ্টির শেষ সময় টুকু নিজের দু’হাত দুপাশে মেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে উপভোগ করে। বৃষ্টি অনেকটাই কমে আসে। তারপর একটা রিকশা নিয়ে আইরাত চলে যায়। রিকশার হুড টাও তোলে নি বৃষ্টির ছিটে গায়ে নিবে বলে। আব্রাহাম দেখে আইরাত চলে যাচ্ছে তবুও কিছুই বলে না শুধু মুচকি হাসি দেওয়া ছাড়া। বৃষ্টি আসলে ময়ূর যেমন নিজেদের পাখনা মেলে দিয়ে বৃষ্টিতে মনভরে ভিজে ভিজে উপভোগ করে ঠিক তেমন টাই হয়েছে। কিছু সময়ের জন্য আইরাতকে দেখেও ময়ূরই মনে হচ্ছিলো। আইরাত চলে গেলে আব্রাহামও সেখান থেকে চলে আসে। আইরাত বাসায় এসে দেখে অনামিকা বসে আছে। আইরাত কে ভিজে টইটম্বুর অবস্থায় দেখে অনামিকা দ্রুত আইরাত কে একটা টাওয়াল দেয়। আইরাত তা দিয়ে নিজের মাথা মুছতে মুছতে নিজের রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়। তার কিছুক্ষণ পর অনামিকা আইরাতের রুমে আসে। আর এসেই তার না বলা কথা গুলো বলা শুরু করে দেয়। তবে অনামিকার পুরো কথা শুনে যেনো আইরাতের বলতি বন্ধ হয়ে যায় অটোমেটিকলি।





চলবে~~