পরাণ দিয়ে ছুঁই পর্ব-২+৩

0
213

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ২
#Jhorna_Islam

ইয়ানূর চোখের পানি মুছতে মুছতে বাস থেকে নামে।যতো মুছার চেষ্টা করছে চোখ দিয়ে ততোই পানি ঝড়ে চলেছে। চোখ দুটো যেনো আজ প্রতিযোগিতা করে চলেছে কতোটুকু পানি ঝড়াতে পারে। হাত দিয়ে না মুছে এবার ওড়নার এক কোণা দিয়ে মুছে চলেছে।

ইসরাত এতো সময় সামনে থেকে বকবক করে এগিয়ে চলেছে। ইয়ানূর যে তার কথার এক টা শব্দ ও কানে নেয় নি সেই দিকে মেয়েটার হুঁশ কোথায়।

এরমধ্যে নাক টানার শব্দে নিজের কথা থামিয়ে ব্রু কোচকে পিছনের দিকে তাকায়। তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। তার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী কেঁদে কেটে নাক,মুখ,চোখ লাল বানিয়ে ফেলেছে।

আল্লাহ নূর তোর কি হয়েছে? ব্যাথা পেয়েছিস? পড়ে যাস নি তো আবার?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

এই ছেমরি কথা বলছিস না কেন?

“আমি ম্যানার্সলেস গার্ল?”

“কোন হা/লায় তোরে এই কথা বলছে? তুই ম্যানার্সলেস হতে যাবি কোন সুখে? থু’রি দুঃখে? যে বলছে সে ম্যানার্স লেস।তার চৌদ্দ গুষ্ঠি ম্যানার্সলেস। হা/লার ঘরের হা,,,, ইয়ানূরের দিকে তাকিয়ে না মানে বলছিলাম কতো বড় সাহস।”

ইসরাতের কথায় ইয়ানূর কান্না থামিয়ে নাক মুখ কোচকে ফেলে। এই মেয়েটা কোনো দিন ও নিজের ভাষা সংযত করতে পারবে না। কতো করে বলেছে ইয়ানূর এমন ভাবে কথা না বলতে কিন্তু মেয়ে টা শুনে কই?

ইশু তুই আগে তোর ভাষা ঠিক কর।ছিঃ মুখের কি ভাষা।ইয়াক।

এমন ভাবে বলছিস কেন? তোর কান্না দেখে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। তাই আমি না চাইতে ও মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে। এসব বাদ দে এখন বল কান্না করছিলি কেন? আর কে তোকে ম্যানার্সলেস বলেছে শুনি?

পরে বলবো এখন ভিতরে চল।রোদে আমার ভালো লাগছে না। ফ্রেশ হওয়া দরকার।

আচ্ছা চল বলেই দুজন রিসোর্টের ভিতর ঢুকে পড়ে। ইয়ানূর অবশ্য চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখে চলেছে। রিসোর্ট টা বেশ সুন্দর। ইয়ানূরের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই ভালো লাগে। মন চায় হারিয়ে যেতে।কৃত্রিম পরিবেশ তাকে ততোটা আকৃষ্ট করতে পারে না।

রিসোর্টে ঢুকে যে যার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে যায়। এক রুমে তিনজন করে থাকবে। ইয়ানূর ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ইসরাত বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে মরার মতো পরে আছে। ফ্রেশ হওয়ার কোনো নাম গন্ধ নেই।

ইয়ানূর গিয়ে ইসরাত কে ডাক দেয়।
“ইশু,,,,এই ইশু,,ফ্রেশ হয়ে নে। তোর শরীরে কতো জীবানু এখন জানিস? এসব নিয়ে তুই বিছানায় শুয়ে আছিস কেন? ”

“উহু”

উঠ।

ইসরাত নড়েচড়ে ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে, দোস্ত একটু ঘুমাতে দে।বাসে নেচে হাত পা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার।তার উপর সেই ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হয়েছে।

ফ্রেশ হয়ে নে আগে।

ইসরাত আর কোনো সাড়া ই দেয় নি।

ইয়ানূর অগত্যা আর ডাক দেয় না। জানে টেনে হিচড়ে ও কোনো লাভ নেই। তাই ফোন টা নিজের সাইড ব্যাগ থেকে বের করে বারান্দায় পা বাড়ায়।

বারান্দায় গিয়ে ইয়ানূরের চোখ জোড়া শীতল হয়ে যায়। একরাশ মুগ্ধতা এসে ভর করে। বাতাস এসে নিজের শরীর টা ছুঁয়ে দিয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে ইয়ানূর নিশ্বাস নেয়। বারান্দা থেকে পাহাড় দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর দৃশ্য। ইয়ানূর কিছু সময় পরিবেশ টা উপভোগ করে। তারপর বাড়িতে ফোন করে। বাবা,মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। মনটা কেমন আনচান করছে। ওদের রেখে ইয়ানূর এতো দূরে কখনো আসেনি।

ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করতেই ইয়ানূর উৎসাহের সাথে বলে উঠে,, আসসালামু আলাইকুম আব্বু।

ওয়ালাইকুম আসসালাম আমার আম্মাজান।

আম্মাজান ডাকটা শুনে ইয়ানূর চোখ বন্ধ করে ফেলে।এই ডাকটা শুনলে তার প্রাণ জুড়িয়ে যায়।

পৌঁছে গেছেন আম্মাজান?

“হ্যা আব্বু মাত্র এসে পৌঁছেছি।”

“সেকি কথা আম্মাজান? আগে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিবেন তা না করে। ”

ফ্রেশ হয়েছি আব্বু। ফ্রেশ হয়েই তোমাকে কল করেছি। আর তোমাদের না জানিয়ে আমি কি শান্তিতে রেস্ট নিতে পারতাম? তোমাদের ও তো টেনশন হচ্ছিল।

এবার গিয়ে রেস্ট নিন।এখন পড়াশোনা করার দরকার নেই। ঠিক সময়ে খেয়ে নিবেন।আর সাবধানে থাকবেন।

হুম আব্বু। আম্মু কোথায়?

আপনার আম্মু বাড়িতে আছে।আমি একটু চা খেতে বাইরে এসেছি। পরে কথা বলে নিয়েন।

আচ্ছা আব্বু। আম্মু কে বলে দিও আমি ঠিক আছি।

আচ্ছা।

আর চায়ে কিন্তু একদম চিনি দিতে বলবে না। তোমার কিন্তু চিনি খাওয়া বারণ।

হুম আম্মাজান।

আল্লাহ হাফেজ আব্বু।

আল্লাহ হাফেজ।

ইয়ানূর তার বাবার সাথে কথা বলে রুমে ঢুকে। তারপর এক সাইডে গিয়ে শুয়ে পরে। ইসরাত পাশেই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।

———————————–
সেই কখন থেকে তালহা হেঁসে চলেছে। তালহার দিকে কটমট দৃষ্টিতে কিছু সময় পরপর তাকাচ্ছে সৌন্দর্য । কিন্তু তালহা তাতে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। সে কিছুতেই তার হাসি থামাতে পারছে না।

তোর এই ভয়ংকর হাসি থামাবি তুই? সৌন্দর্য তালহার দিকে রা’গী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।

“একদম আমার হাসি কে ভয়ংকর বলবি না বেটা। তবে বলতে পারিস যদি ভয়ংকরের সাথে সুন্দর শব্দ টা এড করে নিস তো।”

সুন্দর আর তোর হাসি? ভাগ্যিস রিসোর্টের রুম গুলো সাউন্ড প্রোফ নয়তো রাতের বেলা কোনো ভূত প্রেতের হাসি ভেবে পালিয়ে যেতো লোকজন।

অপমান করা বাদ দে বেটা। তোর গাল আর ঘাড় দেখলে কিছুতেই আমার হাসি থামছে না। আমি কি করবো বলতো? এতো সুন্দর চেহারায় মনে হচ্ছে কেউ সি’ল মেরে দিয়েছে।

শুধু তোর জন্য আমার গালে আর গলায় স্পট হয়ে গেছে। তোর জোরাজোরি তে আমি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি। তাও চেয়েছিলাম আমার গাড়ি নিয়ে আসতে কিন্তু তুই,,,

আমার কি দোষ? আর এটা তো একটা এক্সিডেন্ট। তারপর দুষ্টু হেসে বলে,,
যদিও লোকে অন্য কিছু ভাববে।

সৌন্দর্য তালহা কে তাড়া করে বলে, বের হো তুই আমার রুম থেকে।

ভাই ভাবা যায় দা গ্রেট সৌন্দর্য ওয়াহিদের গালে আর গলায় মেয়ে মানুষের খা’মচি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ব্রেকিং নিউজ টা বন্ধুমহলে জানিয়ে দিবো নাকি? বলেই চোখ মারে তালহা।

সৌন্দর্য এবার নিজের পায়ের জোতা খুলে ছুরে মারে তালহার দিকে। কিন্তু তালহা ততক্ষণে রুম থেকে বের হয়ে গেছে।

সৌন্দর্য গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজের গাল আর ঘারে চোখ বুলিয়ে নেয় একবার।

—————————
ভোরের আলো ফোটতেই সকলকে এসে ডেকে দিয়ে যায় ম্যামরা। অবশ্য ইয়ানূর কে ডাকতে হয়নি। সে ভোর রাত থেকে উঠেই বই নিয়ে বসেছে। কিছু সময় সিলেটের সকালের সৌন্দর্য বারান্দা থেকে দেখে এসেছে। ফুরফুরে মনে আছে সে।মায়ের সাথে ও কথা বলে নিয়েছে।

সকলে গিয়ে একসাথে খাবার খেয়েছে। তালহার উপর আর আরেকটা ম্যামের উপর ইয়ানূরদের দেখাশোনা ও গাইড করার দায়িত্ব পরেছে।

সকলেই জাফলং যাবে।সেই অনুযায়ী ওখানে গিয়ে পৌঁছায়।

এইবার বাসে তালহার সাথে লোকটা ছিলো না। ইয়ানূর মনে মনে খুজেছে একটা স’রি বলার জন্য। কিন্তু কোথাও দেখতে পায়নি। এটা নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি সে।

সেখানে পৌঁছে সকলেই যে যার মতো ঘুরছে।অবশ্য বলে দেওয়া হয়েছে বেশি দূর যাওয়া যাবে না একা একা।

এর মধ্যে ইসরাত এসে বলে,,দোস্ত দেখ পরা,,, হায় হায় কি সুন্দর পরা।

ইয়ানূর বোঝার চেষ্টা করে। পরা মানে? কিসের পরা?

আরে সামনে তাকিয়ে দেখ তালহা স্যারের সাথে ঐ স্যার টা। আহা কি সুন্দর দেখতেরে।

উনি স্যার হলো কিভাবে? আর পরা কি?

তালহা আমাদের কি হয়? স্যার।আর স্যারের বন্ধু তো স্যার ই।

হুম বুঝলাম। তাহলে পরা কি?

আরে পরির মেইল ভার্সন কি জানি না। লোকটা কতো সুন্দর তাই পরা বললাম।

ইয়ানূর ইসরাতের কথায় মাথা ঘামায় না।ইসরাত কে তার সাথে আসতে বলে, লোকটার দিকে এগিয়ে যায়। সরি বলবে বলে।

কিন্তু তালহা আর সৌন্দর্যের কাছে পৌঁছেই আরেক বিপত্তি ঘটে। পাথরের সাথে হোঁচট খেয়ে সৌন্দর্যের উপর গিয়ে পরে ইয়ানূর।নিজেকে বাঁচাতে সৌন্দর্যের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে। যার দরুন ইয়ানূরের নখ গুলো সৌন্দর্যের বু’কে গিয়ে বিধে।

সৌন্দর্য মিনিটের মাঝে ইয়ানূর কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে শার্ট ঠিক করতে করতে তালহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

“স্পেশাল চাইল্ডদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিতে পারিস না? ”

#চলবে,,,,

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই
#পর্বঃ৩
#Jhorna_Islam

“তুমি নারী নাকি পরী?”

এই গান তো মেয়েদের জন্য গাওয়া হয়েছে। তাই আমি আপনার জন্য গাইলাম।কতো কষ্ট করে মাথা খাটিয়ে বের করেছি বলেন তো।

“আপনি পুরুষ নাকি পরা?”

সৌন্দর্য আর তালহা চোখ মুখ কোচকে ফেলে ইসরাতের কথা শুনে। এই মেয়েটার নির্ঘাত মাথায় সমস্যা আছে। নয়তো কিসব আবোল তাবোল বলে চলেছে।

নূর আর সহ্য করতে পারলো না ইসরাতের কথা।নিজের বান্ধবী কে স্পেশাল চাইল্ড বলে সম্বোধন করেছে সেই দিকে খেয়াল ও দিলো না। আর পড়ে যেতে নিয়েছে একবার জিজ্ঞেস ও করলো না ঠিক আছে কি না। যদি ইসরাত ধরতো ও পড়ে যায় সময় তাহলে কি লোকটা এই কথা বলে ওকে অপমান করতে পারতো? মন থেকে যেনো উত্তর এলো উহু কখনো না। মুহূর্তের মধ্যে মনটা খারাপ হয়ে যায়। সরি বলার কথাটা ভুলে গিয়ে ইসরাতের উপর অভিমান করে সেখান থেকে চলে যায়।

ইসরাতের কথায় তালহা একটু রা’গী স্বরে বলে, এই মেয়ে কি বলছো মাথা ঠিক আছে তোমার? আর আমি তোমার কি হই?

— কেনো স্যার হোন।

তাহলে স্যারের সামনে এসব কি করে বলছো তুমি? পরাণে ভয় ডর বলতে কি কিছু নেই? ঠাটিয়ে কানের নিচে একটা দিলে পরী,পরা, জিন,ভূত সব ছুটে যাবে।

যাও এখান থেকে।

ইসরাত মুখ ভেংচি কাটে।যেতে যেতে বলে,,, নিজে তো আমায় পাত্তা দেয় না। এখন অন্য কাউকে পটাবো তার সুযোগটা ও দেয় না। বা’জে লোক একটা।আরো নানান কথা বলতে বলতে সেখান থেকে চলে যায়।

সৌন্দর্য তালহার দিকে তাকিয়ে বলে,,

কিরে বেটা তোর পাখি দেখি অন্য ডালে বাসা বাঁধতে চায়। সময় থাকতে নিজের খাঁচায় বন্দী করে ফেল।নয়তো উড়ে গিয়ে অন্যের খাঁচায় বন্দী হবে আর তুই তখন বসে বসে আঙুল চু’ষ’বি।

ছিঃ সৌন্দর্য এসব কি বলছিস তুই? ও আমার ছাত্রী। আর ছাত্রী আর স্যারের সম্পর্ক টা তো তুই জানিসই। আর কিছু তালহা বলার আগেই সৌন্দর্য থামিয়ে দেয়।

প্লিজ ভাই অফ যা বস্তা পঁচা ডায়লগ মারিস না।

আচ্ছা মারলাম না যা। তুই এটা বল আমায়,,নূর কে তুই স্পেশাল চাইল্ড বললি কেন?

“যে যেটা তাকে সেটা বলবো না?”

কোন দিক দিয়ে ওরে তোর স্পেশাল চাইল্ড মনে হয় বলতো?

“সবদিক দিয়েই।যদিও বা ভালো না দেখিনি।” কিন্তু তুই আমাকে দেখতে পারিস।প্রথমে মুখ আর ঘার।আর এখন ডিরেক্ট বুকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে সৌন্দর্য। ”

এটা এক্সিডেন্ট ছিলো সৌন্দর্য। ও তো আর ইচ্ছে করে করেনি। আর তুই ভালো করে না দেখে ভুল করেছিস।বাদ দিলাম সে সব কথা। তুই কি জানিস আমাদের কলেজের সবচেয়ে ব্রাইট স্টুডেন্ট হলো নূর। এইবার আমি সিউর দিয়ে বলতে পারি রেকর্ড করবে সে। তোর রেজাল্টের রেকর্ড টা ভাঙবে।ভেবেছিলাম তুই মনে হয় একটা পড়াকু এলিয়েন,যে সব সময় বইয়ের ভিতর মুখ লুকিয়ে থাকতো। কিন্তু না ভাই তোর মতো আরেকটার সন্ধান পেয়েছি। আর এমন করে বলিস না মেয়ে টা অনেক সহজ, সরল ও নরম মনের মানুষ। তারপর বিরবির করে বলে,, শুধু যার সাথে চলে সে ছাড়া।

—————————-
নূর একা একা ঘুরে চলেছে। পিছন পিছন ইসরাত কখন থেকে সরি বলে চলেছে তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।

দোস্ত তুই রেগে আছিস কেন বলতো?

নূর আশেপাশে চোখ বোলাতে বোলাতে বলে,,আমি কি একবার ও বলেছি আমি রে’গে আছি?

তোর বলতে হবে কেন? আমি এমনিতেই বুঝতে পারি।
বলনা দোস্ত।

আমি ঐ গম্ভীর মুখু লোকটা কে সরি বলতে গিয়েছিলাম। গাড়িতে হয়ে যাওয়া ঐ ঘটনার জন্য। কিন্তু সরি বলতে গিয়ে আরেক বিপত্তি ঘটিয়ে ফেললাম। আমার ইচ্ছে করছে আমার হাত গুলো কে একটা কঠোর শাস্তি দিতে।

এতে তোর তো কোনো দোষ দেখছি না। পরে সরি৷ বলে দিস।

লোকটা আমাকে খারাপ ভাবছে ইশু। ঐসময় বাসে ম্যানার্সলেস বলেছে। আর তখন স্পেশাল চাইল্ড বলেই মুখটা কে ছোট করে করুন দৃষ্টিতে তাকায় ইসরাতের দিকে। আমি এখন লোকটার সামনে গিয়ে সরি বলতে৷ ও পারবো না।

কেন?

দেখিস না লোকটার কাছে গেলেই কিসব কান্ড ঘটে। জীবনে যেগুলো হয়নি সেগুলোই হয়।

এতো মন খারাপ করিস না দোস্ত। আমি একটা বুদ্ধি দেই?

কি? কিন্তু কোনো শ/য়তানি বুদ্ধি দিবি না আগেই বলে দিচ্ছি।

আরে আগে শোন আমার কথা। না শুনেই কেন তুই কমপ্লিমেন্ট দিয়ে দিচ্ছিস।

“আচ্ছা বল শুনি।”

ঐ পাকা তালের কাছে বলে দে।ঐ বেটা গিয়ে বলে দিবে সিম্পল।

ছিঃ ইশু। উনি তোর স্যার হয়।এমনিতেই তুই লোকটা কে প্রচুর জ্বালাস। তার উপর উনার সুন্দর নাম টা কে কেনো বিকৃতি করছিস?

আরে রাখ।উনি তো আর শুনতে পাচ্ছে না। এসব রেখে এবার বল আইডিয়া টা কেমন দিলাম?

মন্দ বলিস নি।আমি তাহলে তালহা ভা,,, না মানে স্যারকে বলে দিবো আমার সরি টা যেনো ঐ লোক টা কে দিয়ে দেয়। এই প্রথম তুই একটা ভালো আইডিয়া দিলি।

আমি সব সময়ই তোকে ভালো আইডিয়া দেই।তুই আমার গুরুত্ব বুঝিস না মন খারাপ করে বলে ইসরাত।

নূর কিছু বলতে নিবে তার আগেই,,, ওদের সামনে রিতা আর তার সঙ্গী সাথীরা ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়।

কিরে সুন্দরী রমনীরা কি নিয়ে আলাপ চলছে শুনি?

ইসরাত একটু সামনে এগিয়ে এসে বলে তোকে বলবো কেন? আর অবশেষে স্বীকার করলি আমরা সুন্দরী। এবার না হয় নিজের অহংকার টা একটু কমিয়ে করিস ঠিক আছে?

তোর মুখ টা একটু বেশিই চলে ইসরাত।

কি করবো বল রিতা কিছু কিছু মানুষ কে দেখলে আমার মুখ টা কনট্রোল হারা হয়ে যায়।

তা সারাদিনই তো দুইটা তালহা স্যারের পিছনে পরে থাকিস। এখন নতুন জনকে দেখে যেমন আরেকটু বেশি আদিখ্যেতা করছিস। ভুলেও ন’জর দিবি না। সৌন্দর্য স্যারের উপর আমার ন’জর পরেছে। সো তাকালে ও দুলাভাই নজরে তাকাবি বুঝলি? রিতা বলে।

ইসরাত কিছু বলতে নিবে তার আগেই নূর ইসরাতের হাত আকড়ে ধরে। মাথা নাড়িয়ে ইশারায় কিছু না বলতে বলে। এসব ঝামেলা নূরের একদম ভালো লাগে না। তার উপর রিতা যা মেয়ে কি না কি বলে বা করে বসে।

দুইজন ই অন্যদিকে চলে যায়।

সৌন্দর্য ঘুরে ঘুরে সবকিছুর ছবি আর ভিডিও করছে।যদিও বা এসব তার কাছে নতুন কিছু না। অনেকবার এসেছে।কিন্তু বাড়িতে তো একজন আছে না আসতে পেরে অর্ডার দিয়ে দিয়েছে সবকিছু যেনো ভিডিও করে সেন্ড করে।

ইসরাত একের পর এক সেলফি ক্লিক করে চলেছে। মাঝে মাঝে নূর কে ও ডাকছে আসার জন্য। একসাথে তুলবে। নূর একটা তুলেই সরে গেছে।

চারিপাশ টা ঘুরে ঘুরে দেখে উপভোগ করছে। মাঝে মাঝে নিজের সাইড ব্যাগ টা থেকে মিনি ডায়রী বের করে কি যেনো লিখছে।

এইইই নূর আয় না দোস্ত। এখানে পিছনের ভিউ টা অনেক সুন্দর। দেখ সেলফি সুন্দর আসছে। কিছু টা জোরেই বলে ইসরাত।

তুই তোল তোর সেলফি। আমি এমনিতেই উপভোগ করছি।এসবের চক্করে আসল জিনিস মিস করছিস তুই। এসব স্মৃতি মোবাইলে না রেখে নিজের মনে গেঁথে রাখ। যখন মন খারাপ হবে চোখের সামনে ভেসে উঠবে।কৃত্তিমত্তা ছেড়ে নিজের চোখ আর মন জুরিয়ে নে।

সৌন্দর্য পাশেই ছিলো কথা গুলো শুনতে পায়।নিজের ফোন টা কি যেনো ভেবে পকেটে ঢুকিয়ে অন্য দিকে চলে যায়।

———————————
ঘুরাঘুরি করে সকলেই রিসোর্টে ফিরে এসেছে। আগামীকাল তারা রওনা দিবে।সকলেই খাবার খেয়ে যে যার রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে।

তালহা সৌন্দর্যের রুমে এসেছে। সকলের সাথে গ্রুপ কলে কথা বলবে। সৌন্দর্য ফোনের কাছে নিজের মুখটা নিতেই তার এক বন্ধু বলে উঠে,,,

“কিরে চাঁদের গায়ে কলঙ্ক লাগিয়েছে কে?”

#চলবে,,,,,,